নতুন দিল্লি, ০৩ জুন, ২০২৫

ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ায় একাদশ ব্রিকস যোগাযোগ মন্ত্রীস্তরীয় সম্মেলনে ভারত অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুস্থিত ও ভবিষ্যৎমুখী ডিজিটাল উন্নয়নের প্রতি নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। ব্রাজিলের পৌরোহিত্যে ব্রিকসের এই সম্মেলনের মূল ভাবনা ছিল – সর্বজনীন ও অর্থপূর্ণ সংযোগস্থাপন, মহাকাশ সুস্থিতি, পরিবেশ সংরক্ষণ ও ডিজিটাল পরিমণ্ডল। এই সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন যোগাযোগ ও গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ডঃ পেম্মাসানি চন্দ্র শেখর।

ভারতের পক্ষে বক্তব্য রাখতে উঠে ডঃ চন্দ্র শেখর বিশ্বমানের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও রূপান্তরধর্মী ডিজিটাল শাসনের নিদর্শন হিসেবে ভারতের ডিজিটাল জনপরিকাঠামোকে তুলে ধরেন। এই প্রসঙ্গে আধার ও ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস ইউপিআই-এর ভূমিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আধার ৯৫ কোটিরও বেশি ভারতীয় নাগরিককে সুরক্ষিত ডিজিটাল পরিচয়পত্র দিয়েছে। এর সুবাদে তারা বিভিন্ন অত্যাবশ্যক সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবার নাগাল পাচ্ছেন। ইউপিআই ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের মোট ডিজিটাল লেনদেনের ৪৬ শতাংশই ভারতে হয়।

অভূতপূর্ব এই ডিজিটাল অগ্রগতির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে দিয়ে ডঃ চন্দ্র শেখর বলেন তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্যই ভারত এই অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রাণবন্ত ডিজিটাল পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে, যা আজ বিশ্বের বহু দেশকে উদ্বুদ্ধ করছে।

ডঃ চন্দ্র শেখর ডিজিটাল জনপরিকাঠামোর সুফল গ্রহণের জন্য ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সহযোগিতা আরও সুগভীর করার আহ্বান জানান। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ, সুশাসন ও ডিজিটাল উদ্ভাবনের অনুঘটক হিসেবে ভারতের ডিজিটাল জনপরিকাঠামো মডেলকে তুলে ধরেন তিনি।

ভারতের প্রাণবন্ত স্টার্টআপ পরিমণ্ডল, সুদৃঢ় ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়ন প্রয়াস এবং টেলিযোগাযোগ আইন, ডেটা সুরক্ষা আইনের মতো প্রগতিশীল আইনের উল্লেখ করে ডঃ চন্দ্র শেখর ডিজিটাল যুগে আস্থা ও ব্যবহারকারীর সুরক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। 

টেলিকম জালিয়াতির মোকাবিলায় ভারতের সঞ্চার সাথী প্রয়াসের উল্লেখ করে ডঃ চন্দ্র শেখর সাইবার সুরক্ষা, ডেটা সুরক্ষা ও ডিজিটাল আস্থা গঠনে ব্রিকস দেশগোষ্ঠীর মধ্যে আরও নিবিড় সহযোগিতার আহ্বান জানান। 

ডঃ চন্দ্র শেখর বলেন, ডিজিটাল বিভাজন থেকে যাত্রা শুরু করে ভারত আজ ডিজিটাল নেতৃত্বদানের জায়গায় এসে পৌঁছেছে। ডিজিটাল ভারতনিধি কর্মসূচির আওতায় ভারত নেট-এর মতো প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে। এতে ২ লক্ষ ১৮ হাজারেরও বেশি গ্রাম পরিষদকে অপ্টিকাল ফাইবারের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। ভারতের জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশের বেশি মানুষের কাছে ফোর-জি পরিষেবা পৌঁছে গেছে, ফাইভ-জি পরিষেবা ব্যবহার করছেন ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ। এখানকার ডেটার খরচও বিশ্বের মধ্যে সব থেকে কম – প্রতি গিগাবাইটে মাত্র ১২ সেন্ট।

ডঃ চন্দ্র শেখর বলেন, মহাকাশ আজ আর সুদূর নয়, তা আজ আধুনিক ডিজিটাল পরিকাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ভারত এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেছে - স্যাটকম বিধি সহজ করা হয়েছে, লাইসেন্সিং কাঠামোর প্রসার ঘটিয়ে মোবাইল ও আইওটি উপগ্রহ পরিষেবাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কক্ষপথের সাম্য, স্পেকট্রাম শাসন, মহাকাশ পরিবহণ ব্যবস্থাপনার মতো বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বজনীন আলোচনায় নেতৃত্ব দিতে ব্রিকস দেশগোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ডিজিটাল বিস্তারের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন ও ই-বর্জ্যের বিপদ স্বীকার করে নিয়ে ডঃ চন্দ্র শেখর বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৮২ বিলিয়ন কিলোগ্রাম ই-বর্জ্য জমা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মোকাবিলায় ভারত দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে স্বাক্ষরিত গ্রিন ডেভলপমেন্ট প্যাক্ট এবং কপ-২৬ –এ ঘোষিত পঞ্চামৃত অঙ্গীকারের মতো বিভিন্ন প্রয়াসে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে তিনি জানান। ব্রিকস সদস্য দেশগুলিকে বৃত্তাকার অর্থনীতির মডেল গ্রহণ করতে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরিকাঠামোয় দূষণমুক্ত জ্বালানী ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি।

সম্মেলনে চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র গ্রহণকে স্বাগত জানিয়ে ডঃ চন্দ্র শেখর ব্রিকস দেশগুলির সহযোগিতামূলক চেতনার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভারত মনে করে ব্রিকস নিছক যোগাযোগের একটি মঞ্চ নয়, ডিজিটাল সাম্য ও চেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহমনোভাবাপন্ন দেশগুলির কর্মস্থল। আয়োজক হিসেবে ব্রাজিলের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি।

২০২৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ ব্রিকস যোগাযোগ মন্ত্রীস্তরীয় সম্মেলনে ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত সব দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ডঃ চন্দ্র শেখর বলেন, ভারতের সুপ্রাচীন মূল্যবোধ হল বসুধৈব কুটুম্বকম – সারা বিশ্ব এক পরিবার। এক পৃথিবী এক পরিবার এক ভবিষ্যতের অভিন্ন ভাবনাই বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল সহযোগিতার দিশা নির্দেশক হয়ে থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

SC/SD/SKD