প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তর প্রদেশের কানপুরে প্রায় ৪৭,৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন
Posted On:
30 MAY 2025 4:37PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ৩০ মে ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তর প্রদেশের কানপুরে প্রায় ৪৭,৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন। উপস্থিত জনসমূহকে সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার ফলে ২৪শে এপ্রিল ২০২৫-এ তাঁর কানপুর সফর বাতিল করতে হয়েছিল। তিনি কানপুরের সুপুত্র শ্রী শুভম দ্বিবেদীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান, যিনি এই বর্বর আক্রমের শিকার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে তিনি সারা দেশের বোন ও মেয়েদের রাগ এবং মিলিত যন্ত্রণাকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করেন। তিনি বলেন যে, অপারেশন সিন্দুরের সময় সারা বিশ্ব এই সামগ্রিক আক্রোশকে দেখেছে। তিনি অপারেশন সিন্দুরের সাফল্যের কথা বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের ঠিকানাগুলি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পাকিস্তানী সেনা সংঘর্ষ সমাপ্ত করার আর্ত-অনুরোধ জানাতে বাধ্য হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের সশস্ত্র সেনাদলগুলির বীরত্বকে সেলাম জানিয়ে জোর দিয়ে বলেন, তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ভূমিতে দাঁড়িয়ে সেনার সাহসকে প্রণাম জানাচ্ছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, অপারেশন সিন্দুরের সময় দয়ার ভিক্ষা চাওয়া শত্রুদের কোনও ভ্রম নিয়ে থাকা উচিত নয়, কারণ অপারেশন সিন্দুর এখনও শেষ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের তিনটি স্পষ্ট সিদ্ধান্তকে তুলে ধরেন। প্রথমটি, ভারত প্রত্যেক সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের যোগ্য জবাব দেবে। এই জবাবের সময় এর পদ্ধতি ও শর্তগুলি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় সশস্ত্র সেনাদলগুলি ঠিক করবে। দ্বিতীয়ত, ভারত এখন পরমাণু বিপদ নিয়ে ভয় পাবে না। আর এরকম কোন সাবধানবাণীর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে না। তৃতীয়ত, ভারত সন্ত্রাসবাদের মূল ষড়যন্ত্রকারী এবং তাদের আশ্রয়দানকারী সরকারগুলিকেও একই দৃষ্টিতে দেখবে। পাকিস্তানের সরকারি এবং বেসরকারি ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে কোন পার্থক্য এখন স্বীকার করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেন যে, শত্রু যেখানেই থাকুক তাকে মেরে ফেলা হবে।
শ্রী মোদী বলেন, “অপারেশন সিন্দুর ভারতের স্বদেশী প্রতিরক্ষা ক্ষমতা এবং মেক ইন ইন্ডিয়ার শক্তিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে”। তিনি বলেন, ব্রহ্মোস মিসাইল সহ ভারতের স্বদেশী হাতিয়ারগুলি যথাযথ লক্ষ্যে সঠিক ভাবে আঘাত করেছে, শত্রুর এলাকা ধ্বংস করেছে। এই ক্ষমতা আত্মনির্ভর ভারতের প্রতি দেশের দায়বদ্ধতার প্রত্যক্ষ পরিণাম। একটা সময় ছিল যখন ভারত তার প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রয়োজন মেটাতে বিভিন্ন দেশের ওপর নির্ভর ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এই আত্মনির্ভরতা শুধু আমাদের অর্থ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, রাষ্ট্রগৌরব বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয়। শ্রী মোদী আরও বলেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধিতে উত্তরপ্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, সে জন্য তিনি গর্বিত। সম্প্রতি কানপুরের ঐতিহাসিক অস্ত্র কারখানার মতো দেশের সাতটি অস্ত্র কারখানাকে উন্নত প্রতিরক্ষা উৎপাদন ইউনিটে বদলে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঐতিহ্যগত শিল্প একবার স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। যেমন আমেথিতে AK-203 রাইফেল উৎপাদন আগে থেকে শুরু হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে অপারেশন সিঁন্দুরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ব্রহ্মোস মিশাইল উৎপাদনের জন্য এখন উত্তরপ্রদেশে একটি নতুন ঠিকানা পাওয়া গেছে, যা প্রতিরক্ষা উৎপাদনে রাজ্যের ক্রমবর্ধমান অগ্রাধিকারকে স্পষ্ট করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ভবিষ্যতে কানপুর তথা উত্তরপ্রদেশ ভারতের একটি প্রধান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানিকারক হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে যাবে। আরও নতুন নতুন কারখানা স্থাপন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ আসবে এবং হাজার হাজার স্থানীয় যুবক-যুবতী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।
উত্তরপ্রদেশ তথা কানপুরের উন্নয়নকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের অগ্রাধিকার, এই বক্তব্যে জোর দিয়ে শ্রী মোদী বলেন যে এই উন্নয়ন শিল্পের মাধ্যমে ত্বরান্বিত হবে। বিগত সরকারগুলি আধুনিক শিল্পোদ্যোগের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করেছে, পরিবারবাদ নিয়ে সরকারগুলি ব্যস্ত ছিল। এজন্য কানপুর তথা সমস্ত উত্তরপ্রদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, রাজ্যের শিল্পোন্নয়নের জন্য দুটি প্রয়োজনীয় স্তম্ভ হল শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা। প্রথমত, স্থিতিশীল বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ সুনিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, শক্তিশালী বুনিয়াদি পরিকাঠামো এবং সংযোগ। তিনি ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পনকি পাওয়ার প্ল্যান্ট, ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নেওয়েলি পাওয়ার প্ল্যান্ট, ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জওহরপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট, ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ওব্রা-সি পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন খুরজা পাওয়ার প্ল্যান্ট সহ বেশ কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্টের উদ্বোধন ঘোষণা করে বলেন যে এগুলি উত্তরপ্রদেশের শক্তির প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে এক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি একথাও বলেন, ৪৭,০০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ বিনিয়োগে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলির উদঘাটন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে সেগুলি রাজ্য তথা দেশের অগ্রগতির প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচায়ক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বয়স্ক নাগরিকদের ‘আয়ুষ্মান বয়:-বন্দনা কার্ড’ বিতরণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৭০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সুনিশ্চিত হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নের স্বার্থে এমন অনেক বুনিয়াদি পরিকাঠামো ও পরিষেবা এই রাজ্যের কানপুরের মতো শহরগুলিতেও চালু করা হয়েছে যা আগে শুধু দেশের প্রধান মেট্রো শহরগুলিতে সীমাবদ্ধ ছিল। যেমন কানপুর শহরে প্রথম মেট্রো পরিষেবা। আজ এর অরেঞ্জ লাইন কানপুর সেন্ট্রাল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। শুরুতে যে মেট্রো নেটওয়ার্ক, এলিভেটেড রূপে শুরু হয়েছিল তা এখন শহরের প্রধান এলাকাগুলিতে অবাধ যাতায়াতের স্বার্থে মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কানপুরকে একটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র রূপে গড়ে তুলতে এই মেট্রো পরিষেবা ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের জন্য নবীন মার্কেট এবং বড়া চৌরাহা পর্যন্ত যাত্রাপথকে মসৃণ করবে, আইআইটি কানপুরের ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ মানুষের জন্য সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছোতে অনেক সময় সাশ্রয় হবে। শ্রী মোদী বলেন যে একটি শহরের গতি তার অগ্রগতি নির্ধারণ করে এবং এভাবেই যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন উত্তর প্রদেশের উন্নয়নকে একটি নতুন ও আধুনিক রূপ দিচ্ছে। গোটা উত্তরপ্রদেশ এখন গর্তে ভরা সড়কের সেই বিভীষিকাময় দিন পেরিয়ে এসেছে। এখন উত্তর প্রদেশের পরিচয় গড়ে উঠছে এক্সপ্রেসওয়ের ব্যাপক নেটওয়ার্কের জন্য। যে রাজ্যে আগে মানুষ সন্ধ্যার পরে বাইরে বেরোতে ভয় পেতো, সেখানকার রাজপথে এখন ২৪ ঘন্টা মানুষের সমাগম ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে দ্রুত কানপুর-লক্ষ্ণৌ এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মাত্র ৪০-৪৫ মিনিটে লক্ষ্ণৌ পৌঁছে যাওয়া যাবে। তাছাড়া লক্ষ্ণৌ এবং পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করা হবে, আর কানপুর-লক্ষ্ণৌ এক্সপ্রেসওয়েকে গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। তিনি স্বীকার করেন যে ফরুখাবাদ-আনোয়ারগঞ্জ সেকশনে সিঙ্গল লাইন রেলপথ থাকায় কানপুরবাসীকে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ১৮টি রেলক্রসিং থাকার ফলে যাত্রীদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী এই এলাকায় এলিভেটেড রেল করিডোর নির্মাণের জন্য ১,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করেন। শ্রী মোদী কানপুর রেল স্টেশনের পুনর্নবীকরণ প্রকল্পের প্রশংসা করে বলেন যে, এর ফলে কানপুর আন্তর্জাতিক মানের স্টেশনে পরিণত হবে। নানা আধুনিক পরিষেবা ও পরিকাঠামো পরিবর্তনের ফলে কিছু দিনের মধ্যে এটিকে দেখতে বিমান বন্দরের মতো মনে হবে।
উত্তর প্রদেশে বিনিয়োগের জন্য একটি অভূতপূর্ব এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরির উপর জোর দিয়ে শ্রী মোদী বলেন, দরিদ্রদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করে। তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন যে প্রশাসন তাদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ঘোষণা করেন যে এই বছরের বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত করা হয়েছে, যা লক্ষ লক্ষ মধ্যবিত্ত পরিবারকে নতুন আত্মবিশ্বাস এবং আর্থিক শক্তি প্রদান করেছে। প্রধানমন্ত্রী পুনরায় বলেন যে সরকার সেবা ও উন্নয়নের প্রতি তার অঙ্গীকার নিয়ে পূর্ণ গতিতে এগিয়ে যাবে এবং দেশ ও উত্তরপ্রদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও প্রচেষ্টা বাকি রাখবে না।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য এবং শ্রী ব্রজেশ পাঠক সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
SC/SB/AS
(Release ID: 2133087)
Read this release in:
Punjabi
,
Odia
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Assamese
,
Gujarati
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam