প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

কেরলে ৮,৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভিজহিনজাম আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী

Posted On: 02 MAY 2025 1:16PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২ মে, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ কেরলের তিরুবনন্তপুরমে ৮,৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বহু উদ্দেশ্যসাধক ভিজহিনজাম আন্তর্জাতিক গভীর সমুদ্র বন্দর জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। ভগবান আদি শঙ্করাচার্যের জন্মবার্ষিকীতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩ বছর আগে আদি শঙ্করাচার্যের জন্মস্থান দর্শন করার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছিল। তাঁর সংসদীয় কেন্দ্র কাশিতে বিশ্বনাথধাম চত্ত্বরে আদি শঙ্করাচার্যের এক সুবিশাল মূর্তি স্থাপিত হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বিপুল আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও শিক্ষা আদি শঙ্করাচার্য দিয়ে গেছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওই মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের পবিত্র কেদারনাথ ধামেও আদি শঙ্করাচার্যের একটি মূর্তির আবরণ উন্মোচন করার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজই কেদারনাথ মন্দিরের দরজা পুণ্যার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেরলের ভূমিপুত্র আদি শঙ্করাচার্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মঠ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের বিবেককে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর প্রয়াস এক ঐক্যবদ্ধ ও আধ্যাত্মিক আলোয় উদ্ভাসিত ভারতের ভিত্তি স্থাপন করেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে অসীম সম্ভাবনাপূর্ণ সুবিশাল সমুদ্র, অন্যদিকে প্রকৃতির অসামান্য সৌন্দর্য্য- এর মাঝে দাঁড়িয়ে ভিজহিনজাম গভীর সমুদ্র বন্দর নতুন যুগের বিকাশের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই অসামান্য সাফল্যের জন্য তিনি কেরলের মানুষ এবং সমগ্র জাতিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। 

শ্রী মোদী বলেন, ৮,৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা এই গভীর সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা আগামী দিনে ৩ গুণ বাড়বে, বিশ্বের বড় বড় পণ্যবাহী জাহাজ এখানে আসবে। এর আগে ভারতের জাহাজবাহী পণ্য চলাচলের ৭৫ শতাংশই বিদেশের বন্দরগুলিতে হতো। ফলে দেশের রাজস্বের বিপুল ক্ষতি হয়ে এসেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতির বদল ঘটছে। ভারতের অর্থ এখন ভারতের কাজেই ব্যবহৃত হবে। যে অর্থ এতদিন দেশের বাইরে চলে যেত, তা এখন কেরল ও ভিজহিনজামের মানুষের সামনে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঔপনিবেশিক শাসনের আগে বহু শতাব্দী ধরে ভারত সমৃদ্ধির শিখরে ছিল। এক সময়ে বিশ্বের জিডিপি-তে ভারতের সিংহভাগ অংশ থাকতো। সমুদ্র বাণিজ্যে সক্ষমতা এবং বন্দর শহরগুলির অর্থনৈতিক ব্যস্ততা ভারতকে পৃথিবীর অন্য দেশগুলির থেকে স্বতন্ত্র করেছিল। এক্ষেত্রে কেরলের একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। সামুদ্রিক বাণিজ্যে কেরলের ঐতিহাসিক ভূমিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরব সাগরের মাধ্যমে সেইসময়ে একাধিক দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। কেরলের জাহাজগুলি বিভিন্ন দেশে পণ্য পরিবহন করে নিয়ে যেত, ভারত বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের অন্যতম মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। আজ ভারত সরকার অর্থনৈতিক শক্তির সেই ধারার পুনরুজ্জীবনে আগ্রহী। ভারতের উপকূলীয় রাজ্য ও বন্দর শহরগুলি উন্নত ভারতের বিকাশের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং সহজে ব্যবসা করার পরিবেশের বিকাশ একসঙ্গে হলে তবেই বন্দর অর্থনীতি তার সম্ভাবনার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে পারে। গত ১০ বছর ধরে এই ভাবনাকে মাথায় রেখেই সরকার তার বন্দর ও জলপথ নীতির খসড়া তৈরি করেছে। রাজ্যগুলির সার্বিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সাগরমালা প্রকল্পের আওতায় রাজ্যগুলির সহায়তায় বন্দর পরিকাঠামো ও বন্দর সংযোগের উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। সহজ সংযোগের জন্য পিএম গতিশক্তির আওতায় জলপথ, রেলপথ, মহাসড়ক ও বিমান পথের মধ্যে সংযুক্তি স্থাপন করা হচ্ছে। সমুদ্র বাণিজ্যের বিভিন্ন বিধিনিয়মের সংস্কার সাধন করা হয়েছে। ২০১৪ সালের আগে সমুদ্রপথে ভারতীয় যাতায়াতকারীর সংখ্যা ছিল ১.২৫ লক্ষের নিচে। আজ তা বেড়ে ৩.২৫ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। সমুদ্র যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভারত আজ বিশ্বের প্রথম তিনটি দেশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দশক আগে জাহাজগুলিকে পণ্য খালাস করার জন্য বন্দরে দীর্ঘ সময় কাটাতে হতো। এই শ্লথতা ব্যবসা, শিল্প এবং সার্বিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলতো। গত ১০ বছরে ছবিটা পুরো পাল্টে গেছে। ভারতের প্রধান বন্দরগুলিতে জাহাজের অপেক্ষা করার সময় ৩০ শতাংশ কমেছে। বন্দরগুলির দক্ষতা বাড়ায় ভারত বর্তমানে অনেক বেশি পরিমাণে পণ্য ওঠাতে-নামাতে সক্ষম। এতে ভারতের লজিস্টিক্স ও বাণিজ্য সম্ভাবনা অনেক বেড়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের এই সামুদ্রিক সাফল্য গত এক দশকের চিন্তা-ভাবনা ও পরিশ্রমের ফল। গত ১০ বছরে বন্দরগুলির সক্ষমতা দ্বিগুণ বেড়েছে। জাতীয় জলপথের দৈর্ঘ্য বেড়েছে ৮ গুণ। বর্তমানে দুটি ভারতীয় বন্দর বিশ্বের প্রথম ৩০টি বন্দরের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। লজিস্টিক্স পারফরমেন্স সূচকে ভারতের অবস্থানের উন্নতি হয়েছে। জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারত বর্তমানে বিশ্বের প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে উঠে এসেছে। দেশের মৌলিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন সাধনের পর এখন বিশ্ব বাণিজ্যের ভারতের কৌশলগত অবস্থান উন্নত করার দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। সামুদ্রিক অমৃতকাল দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ করা হয়েছে। এতে উন্নত ভারত গঠনের ক্ষেত্রে সামুদ্রিক কৌশলের বর্ণনা রয়েছে। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সম্মেলনে ভারত বিশ্বের বৃহৎ দেশগুলির সঙ্গে একযোগে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর গঠনের কাজে হাত লাগায়, এক্ষেত্রে কেরলেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। 

ভারতের সামুদ্রিক বাণিজ্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বেসরকারি ক্ষেত্রের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে গত ১০ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই সহযোগিতার ফলে শুধু যে ভারতীয় বন্দরগুলি বিশ্বমানে উন্নীতি হয়েছে তাই নয়, সেগুলি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠেছে। বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশগ্রহণ উদ্ভাবনকে গতি দিয়েছে এবং দক্ষতা বাড়িয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। 

প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারত কোচিতে একটি জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত সংক্রান্ত শিল্পগুচ্ছ গড়ে তুলতে চলেছে। এই কাজ সম্পন্ন হলে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কেরলের যুব সম্প্রদায় তাদের বিকাশের নতুন মঞ্চ খুঁজে পাবে। এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে ভারতে বড় জাহাজ নির্মাণকে উৎসাহ দিতে নতুন নীতির ঘোষণা করা হয়েছে। এরফলে উৎপাদন ক্ষেত্রের ব্যাপক উন্নতি হবে। বিশেষত এমএসএমইগুলি এর সুবিধা ভোগ করবে। দেশ জুড়ে কর্মসংস্থান ও উদ্যোগ স্থাপনে জোয়ার আসবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিকাঠামো তৈরি হলে, বাণিজ্যের প্রসার হলে এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হলে তাকেই প্রকৃত উন্নয়ন বলে। কেরলের মানুষ গত ১০ বছরে বন্দর পরিকাঠামো, মহাসড়ক, রেলপথ ও বিমান বন্দরের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতির সাক্ষী থেকেছেন। কোল্লাম বাইপাস, আলাপ্পুজা বাইপাসের মতো যেসব প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে থমকে ছিল, সেগুলি বর্তমান সরকারের আমলে গতি পেয়েছে। কেরলে আধুনিক বন্দে ভারত ট্রেন দেওয়া হয়েছে। এর জেরে রাজ্যের পরিবহন নেটওয়ার্ক ও সংযোগের উন্নতি হয়েছে। 

শ্রী মোদী বলেন, কেরলের উন্নয়ন ভারতের সার্বিক বিকাশের জন্য জরুরি বলে ভারত সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সরকার গত এক দশক ধরে জল জীবন মিশন, উজ্জ্বলা যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত, প্রধানমন্ত্রী সূর্যঘর বিনামূল্যে বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বিভিন্ন সামাজিক মাপকাঠিতে কেরলের উন্নয়নে সাহায্য করে চলেছে। 

মৎস্যজীবীদের কল্যাণের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীল বিপ্লব ও প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার আওতায় কেরলের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পোন্নামি ও পুথিয়াপ্পা সহ বিভিন্ন মৎস্য বন্দরের আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। কেরলের হাজার হাজার মৎস্যজীবীকে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অর্থ সাহায্য করা হয়েছে বলে তিনি জানান। 

কেরলকে সৌভ্রাতৃত্ব ও সহিষ্ণুতার চিরকালীন ভূমি হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকশো বছর আগে বিশ্বের প্রাচীনতম সেন্ট টমাস গীর্জা এখানেই স্থাপিত হয়েছিল। কয়েকদিন আগে পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। পোপের শেষকৃত্যে ভারতের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু উপস্থিত থেকে জাতির হয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী পোপের প্রয়াণে তাঁর শোক পুনর্ব্যক্ত করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব চিরকাল পোপ ফ্রান্সিসের অবদান মনে রাখবে। পোপের সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, যখনই পোপের সঙ্গে দেখা হয়েছে তখনই তিনি বিশেষ উষ্ণতার স্পর্শ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মানবতা, সেবা ও শান্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা আজও তাঁকে অনুপ্রেরণা যোগায়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার কেরলকে বিশ্ব সমুদ্র বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করতে চায়। এরফলে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভারত সরকার এই লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে। কেরলের মানুষের সক্ষমতার ওপর আস্থা পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সমুদ্রক্ষেত্র যে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করবে তা নিয়ে তাঁর মনে কোনও সন্দেহ নেই।

কেরলের রাজ্যপাল শ্রী রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ আরলেকর, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী পিনারায় বিজয়ন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী সুরেশ প্রভু, শ্রী জর্জ কুরিয়েন প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।   

 


SC/SD/NS…


(Release ID: 2126222) Visitor Counter : 14