প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘‘মন কি বাত’’ (১২১ তম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ
Posted On:
27 APR 2025 11:47AM by PIB Kolkata
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ যখন আমি আপনাদের সঙ্গে 'মন কি বাত' এ কথা বলছি তখন মনের মধ্যে রয়েছে গভীর এক যন্ত্রণা। ২২শে এপ্রিল পহলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হানা দেশের প্রত্যেক নাগরিককে ব্যথিত করেছে। নিহতদের পরিবারের প্রতি প্রত্যেক ভারতীয়ের মনে গভীর সমবেদনা রয়েছে। তিনি যে রাজ্যেরই হোন, যে ভাষাই বলুন না কেন, তিনি ওইসব মানুষদের যন্ত্রণা অনুভব করছেন, যাঁরা এই হামলায় নিজেদের পরিজনদের হারিয়েছেন। আমি উপলব্ধি করতে পারছি, প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত সন্ত্রাসবাদী হামলার ছবি দেখে ফুটছে। পহলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া এই হামলা, সন্ত্রাসের কাণ্ডারীদের হতাশাকে স্পষ্ট করে তোলে, তাঁদের কাপুরুষতার প্রদর্শন করে। এমন একটা সময় যখন শান্তি ফিরছিল কাশ্মীরে, স্কুল-কলেজে একটা উৎসাহ ছিল, নির্মাণ কাজে অভূতপূর্ব গতি এসেছিল, গণতন্ত্র সুদৃঢ় হচ্ছিল, পর্যটকদের সংখ্যায় রেকর্ড বৃদ্ধি হচ্ছিল, মানুষের উপার্জন বাড়ছিল, তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছিল – সেটা দেশের শত্রু, জম্মু-কাশ্মীরের শত্রুদের সহ্য হল না। সন্ত্রাসবাদ আর সন্ত্রাসবাদীদের অভিভাবকরা চান যে কাশ্মীর ফের ধ্বংস হোক আর তাই এত বড় ষড়যন্ত্রকে রূপায়িত করল। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে দেশের একতা, ১৪০ কোটি ভারতীয়ের ঐক্য, আমাদের সবথেকে বড় বল। এই ঐক্য, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের চূড়ান্ত লড়াইয়ের ভিত্তি। দেশের সামনে উপস্থিত এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য নিজেদের সঙ্কল্পকে দৃঢ় করতে হবে আমাদের। এক রাষ্ট্রের রূপে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির প্রদর্শন করতে হবে আমাদের। আজ বিশ্ব দেখছে, সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে গোটা দেশ এক স্বরে কথা বলছে।
সাথী, ভারতের অধিবাসীদের মধ্যে যে আক্রোশ রয়েছে, সেই আক্রোশ রয়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। এই সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে গোটা বিশ্ব থেকে ক্রমাগত সমবেদনার বার্তা আসছে। আমাকেও বিশ্বের নেতৃবৃন্দ ফোন করেছেন, চিঠি লিখেছেন, বার্তা পাঠিয়েছেন। জঘন্যভাবে সংগঠিত এই সন্ত্রাসবাদী হামলার কঠোর নিন্দা করেছেন সবাই। তাঁরা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন। গোটা বিশ্ব, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে, ১৪০ কোটি ভারতীয়ের পাশে রয়েছেন। আমি নিহতদের পরিবারবর্গকে আবার আশ্বাস দিতে চাই যে বিচার পাবেন তাঁরা, বিচার না-পাওয়া অবধি থামা নেই। এই হামলায় দোষী এবং ষড়যন্ত্র রচনাকারীদের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
বন্ধুরা, দু'দিন আগে আমরা দেশের মহান বৈজ্ঞানিক ডক্টর কে.কস্তুরীরঙ্গনজিকে হারিয়েছি। যখনই কস্তুরীরঙ্গনজির সঙ্গে সাক্ষাৎ হত, আমরা ভারতের তরুণ প্রজন্মের ট্যালেন্ট, আধুনিক শিক্ষা, স্পেস সায়েন্স ইত্যাদি বিষয়ে অনেক আলোচনা করতাম। বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং ভারতের মহাকাশ সংক্রান্ত কার্যকলাপকে এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান সব সময় স্মরণ করা হবে। তাঁর নেতৃত্বে ইসরো এক নতুন পরিচয় পেয়েছে। তার দেখানো পথে যে যে স্পেস প্রোগ্রাম অগ্রসর হয়েছে, সেগুলিতে ভারতের প্রয়াস বিশ্বব্যপী মান্যতা লাভ করেছে। আজ ভারত যে স্যাটেলাইটগুলি ব্যবহার করে তার মধ্যে অনেকগুলি ডক্টর কস্তুরীরঙ্গনের তত্ত্বাবধানে লঞ্চ করা হয়েছিল। তার ব্যক্তিত্বে আরো একটি বিশেষ ব্যাপার ছিল যা থেকে নবীন প্রজন্ম শিখতে পারে। উনি সবসময় innovation কে গুরুত্ব দিয়েছেন। নতুন কিছু শেখা, জানা এবং করার vision অতীব প্রেরণাদায়ক। ডক্টর কে.কস্তুরীরঙ্গনজি দেশের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রস্তুত করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত বড় ভূমিকা পালন করেছেন। ডক্টর কস্তুরীরঙ্গন একবিংশ শতকের আধুনিক প্রয়োজনগুলি অনুযায়ী 'ফরওয়ার্ড লুকিং এডুকেশন'-এর ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন। দেশের নিঃস্বার্থ সেবা ও রাষ্ট্র নির্মাণে তার অবদান সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি ডক্টর কে.কস্তুরীরঙ্গনজির প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই এপ্রিল মাসেই আর্যভট্ট স্যাটেলাইট লঞ্চিং এর 50 বছর পূর্তি হয়েছে। আজ যখন আমরা পিছন ফিরে দেখি, ৫০ বছরের এই যাত্রাকে স্মরণ করি, তখন মনে হয় আমরা কতটা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেছি। মহাকাশে ভারতের এই স্বপ্নের উড়ান একসময় কেবল সাহসিকতা থেকে শুরু হয়েছিল। দেশের জন্য কিছু করার আবেগ মনের ভেতর লালন করা কিছু তরুণ বৈজ্ঞানিক ছিলেন, তাদের কাছে না ছিল আজকের মত আধুনিক সরঞ্জাম, না ছিল বিশ্বের টেকনোলজির নাগাল পাওয়ার কোন উপায়। যদি কিছু থেকে থাকে তা হলো প্রতিভা, অধ্যবসায়, পরিশ্রম এবং দেশের জন্য কিছু করার আবেগ। আমাদের বৈজ্ঞানিকরা গরুর গাড়ি আর সাইকেলে ক্রিটিক্যাল ইকুইপমেন্টগুলি নিজেরাই বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এমন ছবি আপনারাও নিশ্চয়ই দেখেছেন। সেই অধ্যবসায় এবং দেশসেবার ভাবনার ফল আজকের এই এত কিছু পরিবর্তন। আজ ভারত এক গ্লোবাল স্পেস পাওয়ার হয়ে উঠেছে। আমরা একসঙ্গে ১০৪টি উপগ্রহ লঞ্চ করে রেকর্ড গড়েছি। আমরা প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণমেরুতে পৌঁছেছি। ভারত Mars Orbiter Mission লঞ্চ করেছে এবং আমরা আদিত্য - এল ওয়ান মিশনের মাধ্যমে সূর্যের খুব কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছেছি। আজ ভারত সারা পৃথিবীতে সর্বাধিক সুলভ মূল্যে অথচ সফল মহাকাশ প্রোগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশ নিজেদের স্যাটেলাইট ও স্পেস মিশনের জন্য ইসরোর সাহায্য নিচ্ছে।
বন্ধুরা, আমি যখনই ISRO-এর তৈরী কোন Satellite launch হতে দেখি, তখনই আমার বুক গর্বে ভরে যায়। 2014 সালে PSLV-C-23 launching এর সময় আমি সাক্ষী ছিলাম এবং আমার এই একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল। 2019 সালে চন্দ্রযান-2 landing এর সময়, আমি বেঙ্গালুরুতে ISRO center এ উপস্থিত ছিলাম। সেই সময়ে চন্দ্রযান প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি, এটি বিজ্ঞানীদের জন্য খুব কঠিন সময় ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধৈর্য্য এবং কিছু করে দেখানোর উদ্যম আমি উপলদ্ধি করেছিলাম। আর কয়েক বছর পর সমগ্র বিশ্ব চাক্ষুষ করেছিল, সেই একই বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান-৩-এর সফল অভিযান করে দেখিয়েছিলেন।
বন্ধুরা, এখন ভারত তার space sector-কে বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্যও খুলে দিয়েছে। আজ অনেক তরুণ space startup-এর ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছে । 10 বছর আগে এই ক্ষেত্রে একটি মাত্র কোম্পানি ছিল, কিন্তু আজ সোয়া তিনশোরও বেশি Space start-up দেশে কাজ করছে। ভবিষ্যত space নিয়ে অনেক নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসছে। নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে চলেছে ভারত। দেশটি গগনযান, SpaDeX এবং চন্দ্রযান-4 এর মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিশনের প্রস্তুতিতে নিযুক্ত রয়েছে। আমরা Venus Orbiter Mission এবং Mars Lander মিশনেও কাজ করছি। আমাদের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা তাদের উদ্ভাবনের এর মাধ্যমে দেশবাসীকে নতুন করে গৌরবান্বিত করতে চলেছেন।
বন্ধুরা, গত মাসে মায়ানমারে যে ভূমিকম্প হয়েছিল তার ভয়ানক ছবি নিশ্চয়ই দেখেছেন। ভূমিকম্পের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল; ধ্বংসাবশেষে আটকে পরা মানুষের কাছে প্রতিটি নিঃশ্বাস, প্রতিটি মুহূর্ত ছিল মূল্যবান। সেজন্য ভারত মায়ানমারে আমাদের ভাই-বোনদের জন্য Operation Brahma শুরু করে l বায়ুসেনার বিমান থেকে শুরু করে নৌবাহিনীর জাহাজও মায়ানমার কে সাহায্যের জন্য রওনা হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় টিম সেখানে একটি Field hospital প্রস্তুত করে। ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল গুরুত্বপূর্ণ ভবন এবং পরিকাঠামো গুলির ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করতে সাহায্য করেছে। ভারতীয় টিম সেখানে কম্বল, তাঁবু, Sleeping Bag, ওষুধ, খাবার সামগ্রী এবং আরও অনেক কিছু সরবরাহ করেছিল। ভারতীয় টিম সেখানকার মানুষের কাছ থেকে প্রচুর প্রশংসাও পেয়েছিল।
বন্ধুরা, এই সংকটের সময় সাহস, ধৈর্য এবং বিচক্ষণতার অনেক হৃদয়স্পর্শী উদাহরণ সামনে এসেছে। টিম ইন্ডিয়া সত্তরোর্ধ এক বৃদ্ধা মহিলাকে উদ্ধার করেছে, যিনি ১৮ ঘন্টা ধরে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে ছিলেন। যারা এখন টিভিতে "মন কি বাত" দেখছেন তারা নিশ্চয়ই সেই বৃদ্ধা মহিলার চেহারাটি দেখতে পাচ্ছেন। ভারত থেকে যে দলটি গিয়েছে, তাঁরা অক্সিজেনের মাত্রা স্থিতিশীল করা থেকে শুরু করে ভাঙা হাড়ের চিকিৎসা- সমস্ত পরিষেবা প্রদান করেছে। বৃদ্ধা মহিলা যখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান, তখন তিনি আমাদের দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ভারতীয় উদ্ধারকারী দলের কারণেই তিনি নতুন জীবন পেয়েছেন। অনেকেই আমাদের দলকে বলেছিলেন যে তাদের কারণেই তাঁরা তাঁদের বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনদের খুঁজে পেয়েছেন। বন্ধুরা, ভূমিকম্পের পর, মায়ানমারের মান্ডলের একটি বৌদ্ধ মঠে অনেক লোকের আটকা পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। আমাদের কর্মীরা সেখানেও ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন। এই কারণে, তাঁরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ কুড়িয়েছেন। অপারেশন ব্রহ্মায় অংশগ্রহণকারী সকলের জন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত। আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের মূল্যবোধ, বসুধৈব কুটুম্বকমের মন্ত্রে আমরা দীক্ষিত---অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব এক পরিবার। সংকটের সময়ে বিশ্ব-বন্ধু হিসেবে ভারতের তৎপরতা এবং মানবতার প্রতি ভারতের অঙ্গীকার, আমাদের পরিচয় হয়ে উঠছে।
বন্ধুরা, আমি আফ্রিকার ইথিওপিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় প্রবাসীদের একটি উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার কথা জানতে পেরেছি। জন্মের পর থেকেই হৃদরোগে ভুগছেন এমন শিশুদের চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইথিওপিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়রা। ভারতীয় পরিবারগুলিও এরকম অনেক শিশুকে আর্থিকভাবে সাহায্য করছে। যদি কোনও শিশুর পরিবার টাকার অভাবে ভারতে যেতে না পারে, তাহলে আমাদের ভারতীয় ভাই-বোনেরা তারও ব্যবস্থা করছেন। এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যই হল, ইথিওপিয়ার সমস্ত অভাবী শিশু যারা গুরুতর রোগে ভুগছে তাদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা। ভারতীয় প্রবাসীদের এই মহৎ প্রয়াস ইথিওপিয়ায় ভরপুর প্রশংসা পাচ্ছে। আপনারা জানেন যে ভারতে চিকিৎসা সুবিধা ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও এর সুবিধা নিচ্ছেন।
বন্ধুরা, কিছুদিন আগেই ভারত আফগানিস্তানের মানুষের জন্য বিপুল মাত্রায় ভ্যাকসিন পাঠিয়েছিলো। এই ভ্যাকসিন জলাতঙ্ক, ধনুষ্টঙ্কার, হেপাটাইটিস-বি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভয়ংকর রোগ থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে। এই সপ্তাহেই ভারত নেপালের অনুরোধে সেখানে বড় মাত্রায় ওষুধ এবং ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। এর থেকে থ্যালাসেমিয়া এবং সিকল সেল ডিজিজ এর রুগীদের আরো ভালো চিকিৎসা সুনিশ্চিত করা যাবে। যখনই মানবতার সেবা করার প্রসঙ্গ আসে, তখন ভারত সবসময়ই এগিয়ে থাকে, এবং ভবিষ্যতেও এরকম প্রত্যেকটি প্রয়োজনীয়তায় ভারত এগিয়েই থাকবে।
বন্ধুরা, একটু আগেই আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সম্বন্ধে কথা বলছিলাম। যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার তৎপরতা, আপনার সচেতন থাকা। এই তৎপরতার জন্য এখন আপনি আপনার মোবাইল ফোনে একটি বিশেষ অ্যাপের সাহায্য নিতে পারেন। এই অ্যাপ আপনাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে পারে, আর এটার নামও হল 'সচেত'। ‘সচেত’ অ্যাপ তৈরি করেছে ভারতের এনডিএমএ অর্থাৎ ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি। বন্যা, সাইক্লোন, ল্যান্ড স্লাইড, সুনামি, দাবানল, হিম স্খলন, ঝড় বা বজ্রপাতের মত বিপর্যয়, সচেত অ্যাপ আপনাদের সর্বদা informed আর সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা করবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনারা আবহাওয়া দপ্তর সংক্রান্ত আপডেটও পাবেন।আরেকটি বিশেষ ব্যাপার হলো যে, সচেত অ্যাপ আঞ্চলিক ভাষায়ও আপনাদের বিভিন্ন তথ্য দিতে সক্ষম। আপনারা এই অ্যাপের সুবিধা নিন এবং আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ভারতবর্ষের প্রতিভার প্রশংসা বিশ্বের সর্বত্র হতে দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় যুবকরা, ভারতবর্ষের প্রতি সারা পৃথিবীর দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টে দিয়েছে| আর যেকোনো দেশের যুবক বৃন্দের রুচি কোন দিকে আছে, কোথায় আছে, সেই দেখে বোঝা যায় যে দেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে এগোচ্ছে? আজ ভারতবর্ষের যুবকেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনের দিকে এগিয়ে চলেছে। এমন কিছু এলাকা যেগুলোকে পিছিয়ে থাকার জন্য এবং অন্যান্য কারণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেখানেও আমাদের যুবকবৃন্দ এমন উদাহরণ প্রস্তুত করেছে যা আমাদের মনে নতুন বিশ্বাস জাগায়। ছত্তিসগড়ের দান্তেওয়াড়ার বিজ্ঞান কেন্দ্র আজ কাল সবার নজর আকর্ষণ করছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত দান্তেওয়াড়ার নাম হিংসা ও অশান্তির জন্য কুখ্যাত ছিল। কিন্তু এখন ওখানকার Science Centre, শিশুদের এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য আশার এক নতুন আলো নিয়ে এসেছে। বাচ্চাদেরও এই Science Centre এ যেতে খুব ভালো লাগছে।
ওঁরা এখন নতুন নতুন মেশিন বানানো থেকে শুরু করে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নতুন নতুন পণ্য তৈরি করাও শিখছেন। তাঁরা 3D প্রিন্টার ও robotic গাড়ির সঙ্গে অন্যান্য উদ্ভাবনী জিনিস সম্পর্কে জানবার সুযোগ পাচ্ছেন। এই কিছুদিন আগেই আমি গুজরাটের সায়েন্স সিটিতে সায়েন্স গ্যালারির উদ্বোধন করেছিলাম। এই গ্যালারি থেকে, আধুনিক বিজ্ঞানের সম্ভাব্য ক্ষমতা ঠিক কতটা ও বিজ্ঞান আমাদের জন্য কত কিছু করতে পারে সেই সম্পর্কে আমরা আভাস পেতে পারি। আমি জানতে পেরেছি যে এই গ্যালারি সম্পর্কে বাচ্চাদের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ রয়েছে। বিজ্ঞান ও তার উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে ঘিরে এই ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ ভারতকে অবশ্যই নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশের সর্বোচ্চ শক্তি আমাদের ১৪০ কোটি নাগরিক, তাঁদের সামর্থ্য, তাঁদের ইচ্ছা শক্তি। যখন কোটি কোটি মানুষ একসঙ্গে কোন প্রচারকার্যে যুক্ত হন তখন তার প্রভাব সুদূর প্রসারী হয়। তেমনই এক উদাহরণ "এক পেড় মা কে নাম"। এই অভিযান সেই সব মায়েদের নামে যাঁরা আমাদের জন্ম দিয়েছেন এবং সেই ধরণী মায়ের জন্যেও যিনি আমাদের নিজের কোলে ধারণ করে রেখেছেন। বন্ধুরা, পাঁচই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এই অভিযানের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এই এক বছরে এই অভিযানের অন্তর্গত সমগ্র দেশে মায়ের নামে ১৪০ কোটিরও অধিক গাছ লাগানো হয়েছে। ভারতে এই উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাইরেও মানুষজন নিজের মায়ের নামে গাছ লাগানো শুরু করেছেন। আপনিও এই অভিযানে অংশগ্রহণ করুন, যাতে এক বছর পর আপনিও নিজের অংশীদারিত্বে গর্ব অনুভব করতে পারেন।
বন্ধুরা, গাছ শীতলতা প্রদান করে, গাছের ছায়ায় গরমের থেকে রেহাই পাওয়া যায়, এ সব কিছুই আমরা জানি। কিছুদিন পূর্বে আবারও এই সংক্রান্ত একটি খবর আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিগত কিছু বছরে গুজরাটের আমেদাবাদ শহরে ৭০ লাখেরও বেশি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। ফলে আমেদাবাদের সবুজে ঘেরা এলাকা অনেকটাই প্রসারিত হয়েছে। একই সঙ্গে সবরমতি নদীতে রিভার ফ্রন্ট তৈরী হওয়ার জন্য এবং কাঙ্কড়িয়া ঝিলের মত বেশ কিছু ঝিলের পুনর্নবীকরণের ফলে এখানে জলাধারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী গত কিছু বছরে আমেদাবাদ বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রধান শহরগুলির মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। এই পরিবর্তনকে, আবহাওয়ায় আসা এই শীতলতাকে ওখানকার মানুষও উপলব্ধি করছেন। আমেদাবাদে সবুজায়ন আনন্দের নতুন উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি আপনাদের কাছে আবারও অনুরোধ করবো যে পৃথিবীর সুস্থতা বজায় রাখতে, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার সমাধানের জন্য, এবং নিজের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে গাছ অবশ্যই লাগান - "এক পেড় মা কে নাম"।
বন্ধুরা, একটি অত্যন্ত প্রাচীন প্রবাদ বাক্য - ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। যখন আমরা নতুন কিছু করার সিদ্ধান্ত নিই, তখন লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আপনারা পাহাড়ি অঞ্চলের আপেল তো নিশ্চয়ই খেয়েছেন। কিন্তু যদি আমি জিজ্ঞাসা করি আপনাদের যে কর্নাটকের আপেলের স্বাদ কেমন? তখন আপনি অবাক হবেন। সাধারণত আমাদের ধারণা যে আপেলের চাষ পাহাড়েই সম্ভব। কিন্তু কর্নাটকের বাগলকোটের শ্রী শৈল তেলিজি সমতলে আপেল ফলিয়েছেন। তাঁর গ্রাম কুলালীতে ৩৫ ডিগ্রীর থেকেও বেশি তাপমাত্রায় আপেল গাছে ফল হয়েছে। আসলে শ্রী শৈল তেলিজি চাষ করতে ভালোবাসেন। আপেলের চাষ করা যায় কিনা তা চেষ্টা করে দেখছিলেন এবং তিনি তা করতে সফলও হয়েছেন।
এখন তাঁর লাগানো আপেল গাছে যথেষ্ট পরিমাণে আপেলের ফলন হচ্ছে, এবং সেটা বিক্রি করে তাঁর ভালো উপার্জন'ও হচ্ছে। বন্ধুরা, এখন, আপেল নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, তখন আপনি ‘কিন্নৌরী’ আপেলের কথা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন। আপেলের জন্য প্রসিদ্ধ কিন্নরে কেশরের উৎপাদনও শুরু হয়েছে। সাধারণত হিমাচলে কেশরের চাষ কমই হতো, কিন্তু এখন কিন্নরের সুরম্য সাংলা উপত্যকাতেও কেশরের চাষ হচ্ছে। এমনই একটা দৃষ্টান্ত মেলে কেরালার বায়নাড-এ (Waynad)। এখানেও কেশর চাষে সাফল্য এসেছে। আর বায়নাড-এ (Waynad-এ) এই কেশর চাষ মাটিতে নয়, তার বদলে Aeroponics technique-এর মাধ্যমে করা হচ্ছে। ঠিক এরকমই কিছু অবাক করার মতো কাজ লিচু উৎপাদনের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। আমরা তো শুনে এসেছি লিচুর ফলন বিহার, পশ্চিমবঙ্গ বা ঝাড়খন্ডে হয়ে থাকে; কিন্তু এখন লিচুর উৎপাদন দক্ষিণ ভারত আর রাজস্থানেও হচ্ছে। তামিলনাড়ুর ‘থিরু বিরা অরাসু’ কফির চাষ করতেন। কোদাইকানালে তিনি লিচু-গাছ লাগিয়েছেন আর তাঁর সাত বছরের পরিশ্রমে সেই গাছগুলোয় এখন ফল ধরেছে। লিচু উৎপাদনের সাফল্য আশপাশের অন্যান্য কৃষকদেরও উৎসাহিত করেছে। রাজস্থানে জিতেন্দ্র সিং রানাওয়াত লিচু উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন। এই সমস্ত উদাহরণ ভীষণ অনুপ্রেরণামূলক। যদি আমরা নতুন কিছু করবো বলে ঠিক করে নিই, এবং বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও অনড় থাকি তাহলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যেতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ এপ্রিলের শেষ রবিবার। কয়েকদিনের মধ্যেই মে মাস শুরু হতে চলেছে। আমি আপনাদের আজ থেকে প্রায় ১০৮ বছর আগের সময়ে নিয়ে যাচ্ছি। সাল ১৯১৭ এপ্রিল এবং মে- এই দুই মাস- দেশে তখন স্বাধীনতার এক অভূতপূর্ব যুদ্ধ লড়া হচ্ছিল।
ইংরেজদের অত্যাচার বেড়ে চলছিল। দরিদ্র, বঞ্চিত এবং কৃষকদের শোষণ অমানবিকতার সীমা অতিক্রম করে ফেলেছিল। বিহারের উর্বর মাটিতে ইংরেজরা কৃষকদের নীল চাষ করতে বাধ্য করছিল। নীলের চাষ করার ফলে কৃষকদের জমি অনুর্বর হয়ে পড়ছিল, কিন্তু ব্রিটিশ শাসকদের এই বিষয়ে কোন মাথাব্যথা ছিল না। এই অবস্থায় ১৯১৭ সালে গান্ধীজি বিহারের চম্পারণে পৌঁছলেন। কৃষকরা গান্ধীজিকে বলল "আমাদের জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, খাওয়ার জন্য ফসলটুকুও পাচ্ছিনা।” লক্ষ লক্ষ চাষীর এই ব্যথায় গান্ধীজির মন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হল। ওখান থেকেই চম্পারণের ঐতিহাসিক সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। চম্পারণের সত্যাগ্রহ আন্দোলন ভারতে বাপুর করা প্রথম বড় প্রচেষ্টা ছিল। বাপুর এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনে পুরো ইংরেজ শাসনব্যবস্থা নড়ে উঠেছিল। কৃষকদের নীলের চাষ করতে বাধ্য করার মত আইন যা ইংরেজরা রূপায়ণ করেছিল তা স্থগিত করতে হয়। এটা এমনই এক জয়যাত্রা যেখানে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি নতুন বিশ্বাস সংযোজিত হয়। আপনারা সকলেই হয়তো জানেন এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনে বিহারের আরো একজন কৃতি সন্তানের অবদান ছিল যিনি স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। সেই মহান ব্যক্তি ছিলেন ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ। উনি চম্পারণ সত্যাগ্রহের ওপর একটি বইও লিখেছিলেন "Satyagraha in Champaran", এই বইটা প্রত্যেক যুবার পড়া উচিত। ভাই-বোনেরা, এপ্রিল মাসের সঙ্গে স্বাধীনতার সংগ্রামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের যোগ রয়েছে। ৬ই এপ্রিল গান্ধীজীর ডান্ডি যাত্রা সম্পন্ন হয়েছিল। ১২ই মার্চে শুরু হয়ে ২৪ দিন পর্যন্ত চলতে থাকা এই যাত্রা ইংরেজদের চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল। এপ্রিল মাসেই জালিয়ানওয়ালাবাগের মত হত্যাকাণ্ড ও সংঘটিত হয়েছিল। পাঞ্জাবের মাটিতে এই রক্তমাখা ইতিহাসের চিহ্ন আজও রয়েছে।
বন্ধুরা, কিছুদিন পরেই, ১০ই মে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের বর্ষপূর্তি ও আসছে। স্বাধীনতার সেই প্রথম লড়াইয়ে যে আগুনের ফুলকি জ্বলেছিল সেই আগুন পরবর্তী কালে লক্ষ লক্ষ সৈন্যের জন্য একটা মশালে পরিণত হয়েছিল। গত ২৬শে এপ্রিল আমরা ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের মহানায়ক বাবু বীর কুঁওরসিং এর জন্মতিথিও পালন করেছি। বিহারের এই মহান যোদ্ধা পুরো দেশের জন্য অনুপ্রেরণা। এভাবেই আমাদের লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অমর প্রেরণাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ওঁদের ভাবনা থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তা অনন্তকাল ধরে আমাদের সমস্ত সংকল্পকে নতুন দৃঢ়তা প্রদান করে চলে।
বন্ধুরা, মন কি বাত এর এই দীর্ঘ পথে আপনারা এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে আত্মীয়তা পাতিয়ে ফেলেছেন। দেশবাসী যে সকল ভাবনা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান তা মন কি বাত এর মাধ্যমে সকলের কাছে পৌঁছে যায়। পরের মাসে আমরা আবার এক সঙ্গে দেশের বিভিন্নতা, গৌরবময় ঐতিহ্য এবং নতুন চিন্তাভাবনার কথা ভাগ করে নেব। আমরা এমন মানুষের কথা জানব যাঁরা নিজেদের সমর্পণ এবং সেবার ভাবনা দিয়ে সমাজের পরিবর্তন নিয়ে আসছেন। প্রত্যেক বারের মতো আপনারা আমায় নিজেদের ভাবনা এবং পরামর্শ পাঠাতে থাকবেন। ধন্যবাদ, নমস্কার।
(Release ID: 2124697)
Visitor Counter : 43
Read this release in:
Gujarati
,
Odia
,
Malayalam
,
Telugu
,
Manipuri
,
Assamese
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Punjabi
,
Tamil
,
Kannada