প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

ইন্ডিয়া স্টিল ২০২৫ – এ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 24 APR 2025 3:49PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ 

 

সম্মানীয় অতিথিবৃন্দ, মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মীবৃন্দ, শিল্প নেতৃত্ব, আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিবৃন্দ, আমার বন্ধুরা, নমস্কার!

আজ এবং আগামী দু’দিন ভারতের সানরাইজ ক্ষেত্র অর্থাৎ ইস্পাত ক্ষেত্রের সক্ষমতা ও সামর্থের বিভিন্ন দিক নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। এই ক্ষেত্রটি ভারতের অগ্রগতির মেরুদন্ড-স্বরূপ। এটা এমন এক শক্ত ভিত্তি, যা বিকশিত ভারত (উন্নত ভারত), রূপান্তরের নবঅধ্যায় রচনা করছে। ইন্ডিয়া স্টিল ২০২৫ – এ আমি আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমার স্থির বিশ্বাস যে, নতুন ধারণা, নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং উদ্ভাবন প্রসারে এই অনুষ্ঠান এক নতুন লঞ্চপ্যাড হয়ে উঠবে। ইস্পাত ক্ষেত্রের নতুন অধ্যায়ের ভিত্তিপ্রস্তর এর মধ্য দিয়েই স্থাপিত হবে। 

বন্ধুগণ,
বিশ্বের আধুনিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইস্পাত অনেকটা কঙ্কালের মতো। আকাশচুম্বী অট্টালিকা অথবা জাহাজ, মহাসড়ক অথবা দ্রুতগামী রেল, স্মার্টসিটি অথবা শিল্প করিডর – এসবেরই সাফল্যের পেছনে রয়েছে ইস্পাতের শক্তি। ভারত ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হয়ে ওঠার লক্ষ্য পূরণের দিকে এগোচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনে ইস্পাত ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। আমরা গর্বিত যে, ভারত আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদক দেশ। জাতীয় ইস্পাত নীতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা ৩০ কোটি টন ইস্পাত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছি। বর্তমানে মাথাপিছু ইস্পাতের ব্যবহার আনুমানিক ৯৮ কিলোগ্রাম। অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে তা বেড়ে ১৬০ কিলোগ্রামে দাঁড়াবে। ইস্পাত ব্যবহারের এই বর্ধিত চাহিদাই দেশের পরিকাঠামো ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক সুবর্ণ মান হিসেবে চিহ্নিত হবে। এটি দেশের লক্ষ্য এবং সরকারের কার্যকারিতা ও দক্ষতার সাফল্যের এক চিহ্ন-স্বরূপ। 

বন্ধুগণ,
আমাদের ইস্পাত শিল্প এখন নতুন আস্থায় ভরপুর। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধেও তা আশাবাদী। কারণ, পিএম গতিশক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান – এর মতো দেশের বর্তমানে এক শক্ত ভিত্তি রয়েছে। পিএম গতিশক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন উপযোগিতা পরিষেবা এবং লজিস্টিক ক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা হয়েছে। দেশের খনি ও ইস্পাত ক্ষেত্রের মধ্যে মাল্টিমোডাল সংযোগ প্রসারে ম্যাপিং – এর কাজও চলছে। দেশের পূর্বাঞ্চলে বেশিরভাগ ইস্পাত শিল্প রয়েছে। ক্রিটিক্যাল পরিকাঠামোর উন্নতিসাধনে নতুন প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। আমরা ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জাতীয় পরিকাঠামো পাইপলাইনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের শহরগুলিকে স্মার্টসিটি’তে রূপান্তরের বৃহৎ কর্মযজ্ঞ চলেছে। সড়ক, রেলপথ, বিমানবন্দর, বন্দর ও পাইপলাইনে ইস্পাত ক্ষেত্রের নতুন সম্ভাবনায় এক অভূতপূর্ব গতি সঞ্চারিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ বাড়ি তৈরি হচ্ছে। অনুরূপভাবে, জল জীবন মিশন – এর আওতায় দেশের গ্রামাঞ্চলগুলিতে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার বৃহৎ পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রায়শই, এই জাতীয় প্রকল্পগুলিকে দেশের কল্যাণের আতসকাঁচের নীচে দেখা হয়। তবে, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের লক্ষ্য হ’ল – দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন এবং ইস্পাত শিল্পের শক্তি বৃদ্ধি। আমরা স্থির করেছি যে, কেবলমাত্র ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ইস্পাতই সরকারি প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হবে। এইসব প্রয়াসের ফলস্বরূপ, নির্মাণ ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ইস্পাত ব্যবহারের এক বৃহদাংশ সরকার পরিচালিত উদ্যোগগুলি থেকে আসছে। 

বন্ধুগণ,
ইস্পাত হ’ল বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিকাশের প্রাথমিক উপাদান। এই কারণে ইস্পাত শিল্প ক্ষেত্রে সরকারি নীতি বিভিন্ন ভারতীয় শিল্পকে বিশ্ব স্তরে প্রতিযোগিতামুখী করে তুলতে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করছে। আমাদের উৎপাদন ক্ষেত্র, নির্মাণ, যন্ত্রাংশ এবং স্বয়ংক্রিয় যান – এইসবেই শক্তি সঞ্চারিত হচ্ছে ভারতীয় ইস্পাত থেকে। এ বছরের বাজেটে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’য় গতি সঞ্চারে ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং মিশন – এর ঘোষণা করা হয়েছে। এই মিশন ছোট, মাঝারি এবং বড় শিল্প ক্ষেত্রে অনুরূপভাবে সহায়ক সক্ষম হিসেবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্য নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং মিশন আমাদের ইস্পাত শিল্পেরও নতুন সম্ভাবনার দিক খুলে দেবে। 

বন্ধুগণ,
দীর্ঘ সময় ধরে ভারত উন্নতমানের ইস্পাত আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত ক্ষেত্রে বিশেষত, এই অবস্থার পরিবর্তন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। আমরা যে বিষয়ে গর্ববোধ করতে পারি, তা হ’ল – দেশে তৈরি ইস্পাত প্রথম দেশজ যুদ্ধ জাহাজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। চন্দ্রযান মিশনের ঐতিহাসিক সাফল্যের পেছনেও ভারতীয় ইস্পাতের শক্তি নিহিত রয়েছে। আজ আমাদের যে আস্থা ও সক্ষমতা রয়েছে, তা হঠাৎ-ই হয়নি। পিএলআই – এর অধীন (উৎপাদন-ভিত্তিক অনুদান) প্রকল্পে উন্নতমানের ইস্পাত উৎপাদনে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এটি কেবল সূচনা মাত্র। আমাদের এখনও অনেক পথ চলতে হবে। দেশ জুড়ে অনেক বৃহদায়তন প্রকল্প শুরু হচ্ছে। উন্নতমানের ইস্পাতের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। এ বছরের বাজেটে জাহাজ নির্মাণকে আমাদের পরিকাঠামোর লক্ষ্য হিসেবে আমরা যুক্ত করেছি। আমাদের লক্ষ্য হ’ল – বড় মাপের আধুনিক জাহাজ দেশে নির্মাণ করা। এর উদ্দেশ্য হ’ল – ভারতে তৈরি জাহাজ বাইরের দেশগুলি ক্রয় করুক। অনুরূপভাবে, পাইপলাইন - গ্রেড স্টিল এবং মরচে প্রতিরোধক ইস্পাতের চাহিদাও দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দেশের রেল পরিকাঠামোর অভূতপূর্ব প্রসার ঘটছে। এই সমস্ত চাহিদা পূরণে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ‘জিরো আমদানী’ এবং ‘নিট রপ্তানী’! বর্তমানে আমরা ২ কোটি ৫০ লক্ষ টন ইস্পাত রপ্তানীর লক্ষ্য রেখেছি। আমরা আমাদের উৎপাদন ক্ষমতাকে ২০৪৭ সালের মধ্যে ৫০ কোটি টনে নিয়ে যেতে চাইছি। তবে, এইসব লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে আমাদের ইস্পাত ক্ষেত্রকে নতুন প্রক্রিয়া, নতুন মান এবং নতুন চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে উঠতে হবে। একদিকে যেমন আমাদের প্রসারলাভ করতে হবে, অন্যদিকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণে এখনই সক্ষম হয়ে উঠতে হবে। কর্মসংস্থান প্রসারে ইস্পাত শিল্পের অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে। আমি সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রকেই নতুন ধারণা গড়ে তুলতে এবং তা ভাগ করে নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। নির্মাণ ক্ষেত্র,গবেষণা ও উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশের যুবসম্প্রদায়ের আরও বেশি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে তুলতে হবে।

বন্ধুগণ,
ইস্পাত শিল্পের সম্প্রসারণের যাত্রাপথে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এগিয়ে যাওয়ার পথে এসব চ্যালেঞ্জের সমাধান দরকার। এক্ষেত্রে কাঁচামালের সুরক্ষা প্রধান চিন্তার বিষয়। এখনও আমাদেরকে নিকেল, কোকিং কোল এবং ম্যাঙ্গানিজের জন্য আমদানীর উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে, সরবরাহ-শৃঙ্খলকে সুরক্ষিত রাখতে বৈশ্বিক সহযোগিতাকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে। এর পাশাপাশি, প্রযুক্তির আধুনিকীকরণের উপরও নজর দিতে হবে। আমাদের শক্তি সক্ষম, কার্বন নির্গমন হ্রাস এবং ডিজিটাল ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে। ইস্পাত শিল্পের ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে কৃত্রিম মেধা, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা এবং উপজাত দ্রব্যের ব্যবহার। এই কারণে এইসব ক্ষেত্রের উদ্ভাবনের প্রয়াসকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের বৈশ্বিক সহযোগী এবং ভারতীয় কোম্পানীগুলি এই লক্ষ্যে একযোগে কাজ করলে আমরা এইসব চ্যালেঞ্জ অনেক দ্রুততার সঙ্গে জয় করতে পারব। 

বন্ধুগণ,
আপনারা সকলেই জানেন যে, কয়লা আমদানী, বিশেষ করে কোকিং কোল খরচ এবং অর্থনীতি দুইয়েরই উপরই প্রভাব ফেলে। আমাদের এর বিকল্প খুঁজতে হবে। বর্তমানে ডায়রেক্ট রিডিউজড আয়রণ (ডিআরআই) – এর মতো প্রযুক্তি এবং অন্যান্য আধুনিক পন্থা রয়েছে। আমরা এগুলি আরও প্রসারের ব্যবস্থা করছি। কয়লা গ্যাসীকরণের ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে আমাদের দেশের কয়লা সম্পদের আরও ভালো ব্যবহার হতে পারে। এর পাশাপাশি, আমদানীর উপরও নির্ভরতা কমবে। ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলকেই এই প্রয়াসে সামিল হতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি আহ্বান জানাচ্ছি। 

বন্ধুগণ,
আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল – গ্রিনফিল্ড খনি। বিগত ১০ বছর ধরে দেশ খনি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে লৌহ আকরিক এখন অনেক সহজলভ্য। এখন যেটা সবচেয়ে বেশি জরুরি, তা হ’ল – আমাদের জাতীয় সম্পদ এবং বন্টন হওয়া খনিগুলি সময় ধরে যথাযথ ব্যবহার। এক্ষেত্রে বিলম্ব হলে তা রাষ্ট্রের ক্ষতি, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিল্পগুলিও। ফলে, গ্রিনফিল্ড খনিগুলির ব্যবহার বাড়াতে আমি অনুরোধ করছি।

বন্ধুগণ,
আজকের ভারতের লক্ষ্য কেবলমাত্র অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধিই নয়, বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য তৈরি হয়ে ওঠা। আজ সারা বিশ্ব আমাদেরকে উন্নতমানের বিশ্বস্ত সরবরাহকারী বলে চিহ্নিত করেছে। পূর্বে আমি যে কথার উল্লেখ করলাম, সেই সূত্র ধরেই বলছি, ইস্পাতের বিশ্বমান আমাদের বজায় রাখতে হবে এবং আমাদের নিজেদেরকে আরও আধুনিকীকরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। লজিস্টিক্স – এর উন্নতিসাধন, মাল্টিমোডাল যানবাহন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং তা যাতে সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করতে পারলে ভারতকে আমরা বিশ্ব ইস্পাত হাব হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। 

বন্ধুগণ,
এই ইন্ডিয়া স্টিল মঞ্চ আমাদের নিজেদের সক্ষমতা প্রসারে এবং নতুন ধারণা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি মঞ্চ-স্বরূপ। এই উপলক্ষ্যে আপনাদের সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আসুন, এক স্থিতিস্থাপক, বৈপ্লবিক এবং ইস্পাতের ন্যায় দৃঢ় ভারত গড়ে তুলি।

(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে)

 

SC/AB/SB…


(Release ID: 2124284)