প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

সপ্তদশ সিভিল সার্ভিসেস দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 21 APR 2025 1:52PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

 

মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী ডঃ জিতেন্দ্র সিং জি, শক্তিকান্ত দাস জি, ডঃ সোমনাথন জি, অন্য পদস্থ আধিকারিকগণ, সমগ্র দেশ থেকে যুক্ত হওয়া সিভিল সার্ভিসেস-এর সকল বন্ধুগণ, ভদ্রমহোদয় এবং ভদ্রমহোদয়াগণ !

বন্ধুগণ,

আপনাদের সকলকে সিভিল সার্ভিসেস দিবস উপলক্ষ্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ! এ বছরের সিভিল সার্ভিস দিবস নানা কারণে বিশেষ গুরুত্বপূ্র্ণ। এ বছর আমরা আমাদের সংবিধানের ৭৫-তম বর্ষ পালন করছি এবং এটি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল জির ১৫০-তম জন্মবর্ষও। ১৯৪৭ সালের ২১ এপ্রিল সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আপনাদের সকলকে স্টিল ফ্রেম অফ ইন্ডিয়া বা ভারতের ইস্পাত কাঠামো বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি স্বাধীন ভারতে আমলাতন্ত্রকে নতুন মর্যাদা দিয়েছিলেন। একজন সিভিল সার্ভেন্ট দেশের সেবাকে তাঁর প্রাথমিক কর্তব্য বলে মনে করেন। গণতান্ত্রিকভাবে প্রশাসন চালনা করেন তিনি। সততার সঙ্গে, অনুশাসনের সঙ্গে এবং সমপর্ণে পূর্ণ হয়ে কাজে নিয়োজিত থাকেন তিনি। দেশের লক্ষ্য পূরণের জন্য দিন-রাত কাজ করেন একজন সিভিল সার্ভেন্ট। বর্তমানে আমরা বিকশিত ভারত গড়ে তোলার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছি। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বক্তব্য আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি আজ সর্দার সাহেবের চিন্তা-ভাবনাকে প্রণাম জানাই ও তাঁর স্মৃতিকে সশ্রদ্ধ সম্মান জানাই।  

বন্ধুগণ,

কিছুদিন আগে আমি লালকেল্লা থেকে বলেছিলাম যে, বর্তমান ভারত আগামী এক হাজার বছরের ভিত মজবুত করছে। একভাবে দেখতে গেলে এক হাজার বছরের সময়সীমার মধ্যে ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে। নতুন শতাব্দীর ২৫-তম বছর এটি। আমরা আজ যে নীতির সঙ্গে কাজ করছি, যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি, সেগুলি এক হাজার বছরের ভবিষ্যৎ স্থির করবে। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে, যথার্থ হিকেন চক্রেন ন রথস্য গতির্ভবেত্। এবং পুরষকারেন বিনা দেবম ন সিদ্ধতে। অর্থাৎ, একটি চাকার সঙ্গে যেমন রথ চলতে পারে না, তেমনই কোনো পরিশ্রম ছাড়া কেবল ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে সফলতা পাওয়াও সম্ভব নয়। বিকশিত ভারত গড়তে আমাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য সকল চাকাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে যে প্রতিদিন আমরা এই লক্ষ্য পূরণের জন্যই কাজ করবো। লক্ষ্য অর্জনের জন্যই আমাদের জীবন ধারণ করতে হবে। জীবন অতিবাহিত করতে হবে।  


বন্ধুগণ,

সমগ্র বিশ্ব দ্রুত গতির সঙ্গে বদলে যাচ্ছে। নিজেদের পরিবারেও আপনারা দেখে থাকবেন যে যদি পরিবারে ১০-১৫ বছরের কোনো ছেলে বা মেয়ে থাকে তার সঙ্গে কথা বলে দেখা যায় যে আপনারা পিছিয়ে রয়েছেন। এটি এইজন্য হয় যে সময় অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বদলে যাচ্ছে। প্রতি ২-৩ বছরে দেখতে পাবেন বিভিন্ন গ্যাজেট কীভাবে বদলে যাচ্ছে। কিছু বুঝবেন, শিখবেন, তার আগেই নতুন জিনিস চলে আসছে। আমাদের ছোট ছোট বাচ্চারা এই দ্রুত গতির পরিবর্তনের সঙ্গে বড় হচ্ছে। আমাদের আমলাতন্ত্র, আমাদের কাজকর্ম, আমাদের নীতি নির্ধারণও পুরনো ধাঁচে চলতে পারে না। এজন্য ২০১৪ সালের পর থেকে দেশে সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এই দ্রুত গতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। বর্তমান ভারত, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সমাজ, ভারতে যুবা, ভারতের কৃষক, ভারতের মহিলা এবং তাঁদের স্বপ্নের উড়ানকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছে তা সত্যই অভূতপূর্ব। এই অভূতপূর্ব আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য বিশেষ গতির প্রয়োজন। আগামী কয়েক বছরে ভারত নানা বড় বড় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাবে। শক্তি নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত লক্ষ্য, স্বচ্ছ শক্তির সঙ্গে যুক্ত লক্ষ্য, ক্রীড়া জগৎ, মহাকাশ জগৎ সবকিছু নিয়েই আমাদের অনেক লক্ষ্য রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই দেশকে নতুন নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে হবে। আমি যখন এসব কথা বলি তখন এবং দেশ যখন এ বিষয়ে চিন্তা করে সেই সময় সকলের নজর আপনাদের ওপর থাকে। আপনারা সকলেই আমাদের ভরসা। আপনাদের ওপরেই রয়েছে বড় দায়িত্ব। আপনাদের দ্রুত ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত করতে হবে। এ কাজে যেন দেরি না হয়, তা আপনাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। 

বন্ধুগণ,

আমার অত্যন্ত আনন্দ হচ্ছে যে এবারের সিভিল সার্ভিস দিবসের মূল ভাবনা ভারতের সামগ্রিক উন্নয়ন স্থির করা হয়েছে। এ কেবল ভাবনা নয়, আমাদের প্রতিশ্রুতি। দেশের জনগণের প্রতি আমাদের এই প্রতিশ্রুতি রইল যে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটানো হবে। অর্থাৎ কোনো গ্রাম পিছিয়ে থাকবে না, কোনো পরিবার পিছিয়ে থাকবে না, কোনো নাগরিকও পিছিয়ে থাকবেন না। সত্যিকারের উন্নয়নের অর্থ ছোট ছোট পরিবর্তন নয়, বরং বৃহত্তর ক্ষেত্রে পরিবর্তনকেই বোঝায়। প্রতি বাড়িতে স্বচ্ছ পানীয় জল, প্রতি শিশুর গুণগত মান সম্পন্ন শিক্ষা, সব উদ্যোগপতির আর্থিক সুবিধা এবং সব গ্রামে ডিজিটাল অর্থনীতির সুবিধা পৌঁছে দিতে পারলেই সামগ্রিক উন্নয়ন হবে বলে আমি মনে করি। সুশাসনের অর্থ কেবল প্রকল্প তৈরি করা ও চালু করা নয়। সরকারের গুণগত মান নির্ধারণ হয় প্রকল্প কতটা গভীরে পৌঁছে দেওয়া গেছে তার ওপর নির্ভর করে। যেকোন প্রকল্পের বাস্তব অর্থ কতটা প্রভাব ফেলতে পারল, তার ওপরই নির্ভর করে যথার্থ উন্নয়ন। বর্তমানে রাজকোট হোক বা গোমতি কিংবা তিনশুকিয়া বা কোরাপুট সব  ধরনের জেলাতেই আমরা সরকারের বিভিন্ন নীতির সদর্থক প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করা থেকে শুরু করে সৌর বিদ্যুৎ পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। অনেক জেলা এইসব লক্ষ্য পূরণে ভালো কাজ করেছে এবং এর মধ্যে কয়েকটি জেলাকে পুরস্কৃতও করা হয়েছে। আমি পুরস্কারপ্রাপ্ত সব জেলা এবং প্রকল্পগুলির সঙ্গে যুক্ত সকলকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

বিগত ১০ বছরে ভারতে এক সামগ্রিক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে ভারতে শাসন ব্যবস্থা মডেল হিসেবে মনে করা হয়। পরবর্তী প্রজন্ম সংস্কারের দিকে বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। আমরা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সরকার ও দেশের জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনছি। এর প্রভাব গ্রামীণ এবং শহর এলাকার পাশাপাশি দূরদূরান্তের এলাকাতেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। আপনাদের সঙ্গে আমি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জেলা নিয়ে অনেকবার আলোচনা করেছি। কিন্তু জানেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্লকগুলির সাফল্যও কিন্তু ততটাই উজ্জ্বল। আপনারা জানেন হয়তো এই কর্মসূচি ২ বছর আগে ২০২৩-এর জানুয়ারি মাসে চালু করা হয়েছিল। মাত্র ২ বছরেই ব্লকগুলিতে যে পরিবর্তন এসেছে তা অভূতপূর্ব। এই ব্লকগুলির স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সামাজিক উন্নয়ন এবং মূল পরিকাঠামো সহ বিভিন্ন মান অত্যন্ত বেড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের থেকেও বেশি অগ্রগতি হয়েছে। রাজস্থানে টোক জেলার পিপলু ব্লকে ২ বছর আগে অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে বাচ্চাদের উপস্থিতি কেবলমাত্র ২০ শতাংশ ছিল। বর্তমানে তা ৯৯ শতাংশেরও বেশি। বিহারের ভাগলপুরের জগদীশপুর ব্লকে প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভবর্তী মহিলাদের নাম নথিভুক্ত করানোর হার কেবলমাত্র ২৫ শতাংশ ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে ৯০ শতাংশের বেশি হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে মারবা ব্লকে বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে উপস্থিতির সংখ্যা ১০০ শতাংশ হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের গুরডি ব্লকে নল বাহিত জলের সংযোগের হার ছিল ১৮ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে ১০০ শতাংশ হয়েছে। আমি যা বললাম তা কেবল সংখ্যাভিত্তিক তথ্য নয়। এ হল একেবারে শেষ পর্যন্ত উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের সংকল্পের পরিচয়। এ থেকে লক্ষ্য করা যায় যে যথাযথ পরিকল্পনা ও রূপায়ণ হলে দূর দূরান্তের কোনো স্থানই উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে থাকবে না।  

বন্ধুগণ,

বিগত ১০ বছরে ভারত বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করে দেখিয়েছে। ৬০টির বেশি শহরে ২০০-র বেশি বৈঠক জি২০-র ইতিহাসে প্রথমবার হয়েছে। জন অংশীদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ভারত অন্যান্য দেশ থেকে ১০-১১ বছর এগিয়ে রয়েছে। বিগত ১১ বছরে আমরা ধীরে ধীরে কাজ করে এই ব্যবস্থাকে শেষ করার চেষ্টা করেছি। আমরা নতুন প্রক্রিয়া তৈরি করছি যেখানে প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করার সময় কমানো হচ্ছে। বাণিজ্যের সরলীকরণের মাধ্যমে আমরা ৪০ হাজারের বেশি অভিযোগকে দূর করেছি। আমার মনে আছে, আমরা যখন অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কাজ করছিলাম, তখন বাণিজ্যের সময় কিছু ভুল-ভ্রান্তির জন্য নানা অভিযোগ আসছিল। কিন্তু আমরা তারও নিষ্পত্তি করেছি। অনেকেই বলেন, এখনও পর্যন্ত হয়নি, আপনারা কী করে করছেন? যা চলছে তাই চলতে দিন। আপনাদের কী আসে যায়। অভিযোগ করতে দিন। আপনারা কেন নিজেদের কাজ বাড়াচ্ছেন? চারদিক থেকে এ ধরণের নানা কথা শোনা গেলেও আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণে স্থির ছিলাম। আমরা যখন নতুন কিছু করবো, তখনই আলাদা ফলাফল পাবো। একথা মাথায় রেখেই কাজ চলেছে। আর এই চিন্তা-ভাবনার জন্যই বর্তমানে আমাদের বাণিজ্যে  র‍্যাঙ্কিং-এ অনেকটা উন্নতি হয়েছে। আমরা রাজ্য, জেলা ও ব্লক স্তরে লাল ফিতের ফাঁস মুক্ত করেছি। আপনারা রাজ্য, জেলা ও ব্লক স্তরে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারছেন।

বন্ধুগণ,

বিগত ১০-১১ বছরে দেশের যে সাফল্য, তা বিকশিত ভারতের ভিতকে মজবুত করেছে। বর্তমানে দেশ এই মজবুত ভিতের ওপর নির্ভর করেই বিকশিত ভারত নির্মাণ করবে। নির্মাণকাজের এই প্রক্রিয়ায় আমাদের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় প্রাথমিক সুবিধাগুলি সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের প্রথম লক্ষ্য। একেবারে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের জনগণের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা দুই-ই দ্রুত গতিতে বদলে যাচ্ছে। এখন সিভিল সার্ভিসকে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। তাহলেই যথাযথ কাজ করা সম্ভব হবে। আমাদের নিজেদের জন্য নতুন নতুন লক্ষ্য তৈরি করতে হবে এবং তা পূরণ করতে হবে। সফলতার জন্য সবচেয়ে বড় কথা হল নিজেকে চ্যালেঞ্জ করা। কাল যা পেয়েছি তাতে সন্তুষ্ট না থেকে কালকের কাজ আমাদের আজকের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠুক। বর্তমানে পূর্বপর্তী সরকারের সঙ্গে তুলনা করে আমরা নিজেদের কাজ, নিজেদের ফলাফল স্থির করতে পারবো না। আমার আগে এই জেলায় অমুক ভাই ছিল। তিনি এতটা করেছিলেন। আমি এতটা করে দিয়েছি। না, এখন আমরা নিজেরা নিজেদের লক্ষ্য স্থির করবো। ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার লক্ষ্য থেকে আমরা কতটা দূরে রয়েছি বলুন তো? আমরা কত দূরেই বা পৌঁছেছি? এই হিসেব নিকেশের সময় শেষ হয়েছে। এখন সময় হল আমরা যেখানে রয়েছি, সেখান থেকে যেখানে পৌঁছতে চাই, তার মধ্যে দূরত্ব কতটা তা নির্ণয় করা। এবং সেই দূরত্ব অতিক্রমের জন্য পথদিশা তৈরি করা। ২০৪৭ সালের মধ্যে কীভাবে আমরা আমাদের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছবো, সেটাই আমাদের স্বপ্ন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

আমাদের সব ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছি, তা পূরণের জন্য আমাদের বর্তমান গতি যথাযথ কি না। যদি তা না হয়, তবে আমাদের কাজের গতি বাড়াতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে বর্তমানে যে প্রযুক্তি আমাদের কাছে রয়েছে তা আগে ছিল না। আমাদের প্রযুক্তির সাহায্যে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ১০ বছরে আমরা ৪ কোটির বেশি দরিদ্র মানুষের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করেছি। কিন্তু এখনও ৩ কোটি নতুন বাড়ি তৈরি করার লক্ষ্য আমাদের সামনে রয়েছে। আমরা ৫-৬ বছরে ১২ কোটির বেশি গ্রামীণ বাড়িতে নল বাহিত জল পৌঁছে দিয়েছি। এখন আমাদের দ্রুত থেকে দ্রুততার সঙ্গে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে নল বাহিত জল পৌঁছে দিতে হবে। ১০ বছরে আমরা দরিদ্রদের জন্য ১১ কোটির বেশি শৌচালয় তৈরি করেছি। বর্তমানে আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত লক্ষ্যে দ্রুত পৌঁছতে হবে। কেউ ভাবতেও পারেনি যে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। বর্তমানে আমাদের দেশের জনগণের পুষ্টি নিয়ে নতুন সংকল্প স্থির করা হয়েছে। দ্রুত কাজের মাধ্যমে তা পূরণ করতে হবে। ১০০ শতাংশ প্রভাব এই লক্ষ্যে কাজ করেই ১০ বছরে দেশের ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আর এই চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে কাজই দেশ থেকে দারিদ্র সম্পূর্ণ দূর করবে।

বন্ধুগণ,

এমন একটা সময় ছিল যখন আমলাতন্ত্রের ভূমিকা ছিল নিয়ন্ত্রকের, যা শিল্পায়ন ও উদ্যোগপতিদের মধ্যে গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতো। এই চিন্তাভাবনা থেকে দেশ এখন অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। বর্তমানে আমরা এমন পরিবেশ তৈরি করছি যেখানে নাগরিকরা উদ্যোগ প্রচারের কাজ করছেন। এজন্য সিভিল সার্ভিসকে আরও যথাযথভাবে কাজ করতে হবে। কেবলমাত্র নীতি নির্দেশিকা মেনে বা নীতি নির্ধারক হিসেবে নয়, উন্নয়নের সুবিধাপ্রদানকারী হিসেবে তাঁদের কাজ করতে হবে। আমি আপনাদের এ প্রসঙ্গে এমএসএমই ক্ষেত্রের উদাহরণ দেবো। আপনারা জানেন নিশ্চয়, দেশে মিশন ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু হয়েছে। এর সাফল্যের পিছনে অনেকটাই জুড়ে রয়েছে এমএসএমই ক্ষেত্র। সমগ্র বিশ্বে যে পরিবর্তন হচ্ছে তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমাদের এমএসএমই ক্ষেত্র, স্টার্টআপ এবং যুব উদ্যোগপতিদের সামনে অভূতপূর্ব কাজ করার সুযোগ এসেছে। এ সময়ে দাঁড়িয়ে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে আরও নিজেদের প্রতিযোগিতার যোগ্য করে তোলা। আমাদের এও মনে রাখতে হবে যে এমএসএমই-র প্রতিযোগী কেবলমাত্র ছোট ছোট উদ্যোগক্ষেত্রগুলি নয়, এর প্রতিযোগিতা সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে। ছোট একটি দেশে কোনো শিল্প ক্ষেত্রের যদি এর থেকে ভালো সুবিধা থাকে, তাহলে আমাদের দেশের স্টার্টআপকে আরও শক্তিশালীভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে। তাই আমাদের সর্বদাই নজর রাখতে হবে যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আমরা কোথায় রয়েছি। ভারতের শিল্পক্ষেত্রের লক্ষ্য যদি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সামগ্রী তৈরি করা হয়, তবে ভারতের আমলাতন্ত্রের লক্ষ্য সবচেয়ে ভালো কাজ করার পরিবেশ প্রদান করা হওয়া উচিত।  

বন্ধুগণ,

বর্তমানের প্রযুক্তি পরিচালিত বিশ্বে সিভিল সার্ভেন্টদের এমন দক্ষতা চাই, যা কেবলমাত্র তাঁদের প্রযুক্তি বুঝতে সাহায্য করবে তা নয়, তাঁদের যথাযথভাবে শাসন ব্যবস্থা চালানোর জন্যও তা ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। “প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে শাসন ব্যবস্থার লক্ষ্য কেবলমাত্র ব্যবস্থাপনা নয়, তা হল সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা।” আমাদের প্রযুক্তিবান্ধব হতে হবে যাতে করে সব নীতি ও প্রকল্পকে প্রযুক্তির সাহায্যে আরও কার্যকর করে তোলা যায়। আমাদের তথ্য নির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। এতে করে নীতি নির্ধারণ ও এর রূপায়ণ আরও যথাযথ হবে। বর্তমানে আপনারা দেখবেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কোয়ান্টাম ফিজিক্স কত দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। খুব শীঘ্রই প্রযুক্তির ব্যবহারে এক নতুন বিপ্লব আসবে যা এই ডিজিটাল ও তথ্য নির্ভর যুগের থেকে আরও অনেকটা এগিয়ে থাকবে। আপনাদের ভবিষ্যতের এই প্রযুক্তি বিপ্লবের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। আমরা যেন আমাদের জনগণকে সর্বোত্তম পরিষেবা দিতে পারি ও তাঁদের চাহিদা পূরণ করতে পারি সেজন্য নিজেদের সর্বদাই প্রস্তুত রাখতে হবে। আমাদের সিভিল সার্ভেন্টদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। কেননা আমরা ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে যাচ্ছি। মিশন কর্মযোগী এবং সিভিল সার্ভিস ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কর্মসূচির গুরুত্ব বিশেষ বলে আমি মনে করি। 

বন্ধুগণ,

দ্রুত বদলে যাওয়া সময়ের নিরিখে আমাদের আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলির দিকে গুরুত্বের সঙ্গে নজর দিতে হবে। আপনারা দেখছেন খাদ্য, জল এবং শক্তি নিরাপত্তা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ বিশ্বের দেশগুলির জন্য এ এক বড় সঙ্কট। দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘর্ষের জন্য কিছু দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এর প্রভাব জলগণের ওপর এবং নিত্যদিনের জীবনের ওপর পড়ছে। ঘরোয়া ও বর্হিবিশ্বের এই বিষয়গুলির মধ্যে বিশেষ সংযোগ রয়েছে। এর ওপর নির্ভর করেই আমাদের নীতি পরিবর্তন করতে হবে ও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মহামারী, সাইবার অপরাধের মতো বিপদের মোকাবিলায় ভারতকে সর্বদাই ১০ পা এগিয়ে থাকতেই হবে। আমাদের স্থানীয় স্তরে কৌশল তৈরি করতে হবে। 

বন্ধুগণ,

আমি লালকেল্লা থেকে ৫টি প্রতিজ্ঞার কথা বলেছিলাম। বিকশিত ভারতের সংকল্প দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি, নিজের ঐতিহ্যের ওপর গর্ব, একতার শক্তি এবং সততার সঙ্গে নিজের দায়িত্বপালন। আপনারা সকলে এই ৫টি প্রতিজ্ঞার মূল বাহক। আপনার যখন প্রতিবার অখণ্ডতা, উদ্ভাবন এবং পরিষেবা প্রদানকে প্রাথমিক গুরুত্ব বলে মনে করেন তখনই আপনারা দেশকে কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। আমার আপনাদের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে। সেই তরুণ আধিকারিক যে তাঁর পেশাগত জীবনে পা রাখছেন, তাঁদের সকলকে আমি আর একটি কথা বলতে চাই। সমাজে এমন কোনো মানুষ নেই যার জীবনে বা সাফল্যে সমাজের কোনো ভূমিকা না থাকে। তাদের সাফল্যের পিছনে সমাজের অবদান বিশেষ। সমাজের অংশীদারিত্ব না থাকলে কারো পক্ষেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্যই প্রত্যেকে নিজের নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চায়। আপনারা সকলে তো অত্যন্ত ভাগ্যবান। আপনাদের কাছে সমাজকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এতবড় সুযোগ রয়েছে। আপনাদের দেশ এবং সমাজ অনেক বড় সুযোগ করে দিয়েছে। আপনারা যত বেশি সম্ভব সমাজকে ফিরিয়ে দিন।

বন্ধুগণ,

এইই সময় সিভিল সার্ভিসের সংস্কারকে পুনরায় কল্পনা করার। আমাদের সংস্কারের গতি বাড়াতে হবে। পরিমাণও বাড়াতে হবে। পরিকাঠামো, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, দুর্নীতি দূর করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। সামাজিক সংস্কার, অলিম্পিকের সঙ্গে যুক্ত ক্রীড়া জগতে সাফল্য আমাদের লক্ষ্য। আমরা এখনও পর্যন্ত যা অর্জন করেছি, এখন তার থেকেও কয়েক গুণ বেশি অর্জন করে দেখাতে হবে। আর এই সব কিছুর মধ্যে আমাদের সকলকে একথা মনে রাখতে হবে যে প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে আর যাই হোক না কেন, আমরা কখনই বিচার ভাবনায় মানুষের অবদানের কথা ভুলবো না। সংবেদনশীল হন, দরিদ্রদের বক্তব্য শুনুন। দরিদ্রদের কষ্ট অনুভব করুন। এর সমাধানকে নিজেদের প্রাথমিক লক্ষ্য করে তুলুন। অতিথি দেবো ভবঃ যেমন হয়, তেমনই নাগরিক দেবো ভবঃ। একথা মনে রেখে আমাদের চলতে হবে। আপনারা কেবলমাত্র ভারতে সিভিল সার্ভেন্টস হিসেবে নন, নতুন ভারতের শিল্পকার হিসেবে কাজ করবেন। শিল্পকারের এই দায়িত্ব পূরণের জন্য নিজেরা নিজেদের সক্ষম করে তুলুন। সময়ের কথা মাথায় রেখে লক্ষ্য পূরণের জন্য নিজেদের সমর্পিত করুন। প্রত্যেক সাধারণ মানুষের স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন মনে করে বাঁচুন। দেখুন বিকশিত ভারত আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। আমি যখন আজ বক্তব্য রাখছিলাম, তখন আমার চোখে পড়েছে একটি ছোট্ট মেয়ের ওপর। ওখানে বসে রয়েছে মেয়েটি। কে বলতে পারে ২০৪৭ সালে হয়তো এই মেয়েটি এখানে বসবে। এই স্বপ্নটাই আমাদের হওয়া উচিত। বিকশিত ভারতের জন্য এটাই হওয়া উচিত আমাদের লক্ষ্য। অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেক অনেক ধন্যবাদ ! 


SC/PM/NS…


(Release ID: 2123189) Visitor Counter : 11
Read this release in: Hindi , Gujarati , English , Urdu