প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

নিউজ১৮ রাইজিং ভারত শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী

Posted On: 08 APR 2025 10:26PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৮ এপ্রিল, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লির ভারত মণ্ডপমে নিউজ১৮ রাইজিং ভারত শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন। এই শীর্ষ সম্মেলনে দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে তাঁকে যুক্ত করায় তিনি নিউজ১৮-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এবারের সম্মেলনের মূল ভাবনা – ‘ভারতের যুব সম্প্রদায়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা’। এই বিষয়টি নির্বাচিত করায় তিনি সংশিষ্ট সকলের প্রশংসা করেন। ‘বিকশিত ভারত যুব নেতৃবৃন্দের আলোচনা’ – এই বিষয় নিয়ে ভারত মণ্ডপমে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে যে আলোচনা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা যুব সম্প্রদায়ের স্বপ্ন, অধ্যবসায় এবং লক্ষ্য। ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ার একটি রূপরেখা তৈরি করা আসলে উন্নয়নের পথে এগোনোর এক নিরন্তর প্রয়াস। অমৃতকালের প্রজন্মের অন্তর্দৃষ্টি সকলকে উদ্দীপিত করে। সফলভাবে এই সম্মেলন আয়োজন করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান।

শ্রী মোদী বলেন, “সারা বিশ্ব অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।” মাত্র বছর কয়েকের মধ্যেই ভারত বিশ্বের একাদশ বৃহত্তম অর্থনীতি থেকে উন্নীত হয়ে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে উঠে এসেছে। “বিশ্বজুড়ে বহু সমস্যা সত্ত্বেও ভারত দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে চলেছে, মাত্র এক দশকে এ দেশের অর্থনীতির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।” যাঁরা বিশ্বাস করতেন ভারতের উন্নয়ন শ্লথ গতিতে হয়, আজ তাঁরা ‘দ্রুত ও অকুতভয় ভারত’কে প্রত্যক্ষ করছেন। তিনি আশা করেন, খুব শীঘ্রই ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হবে। “ভারতের যুব সম্প্রদায়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এই অভূতপূর্ব উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।” এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেই দেশ অগ্রাধিকার দেয়। 

আজ ২০২৫-এর ৮ এপ্রিল, বছরের প্রথম ১০০ দিন শেষ হওয়ার মুখে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সময়ে সরকার যে সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছে তা ভারতের যুব সম্প্রদায়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তৈরি করা হয়েছে। “এই ১০০ দিনের সিদ্ধান্ত শুধু কিছু সিদ্ধান্তই নয়, এগুলি ভবিষ্যতের ভিত গড়ে তুলছে।” বর্তমানে নীতি সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে। ১২ লক্ষ টাকার ওপর আয়কর ছাড়, দেশের তরুণ পেশাদার এবং শিল্পোদ্যোগীদের সহায়ক হবে। ডাক্তারিতে ১০ হাজার নতুন এবং আইআইটি-গুলিতে ৬,৫০০ নতুন আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটছে এবং উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগ ত্বরান্বিত হচ্ছে। দেশজুড়ে ৫০ হাজার নতুন অটল টিঙ্কারিং ল্যাব দেশের প্রতিটি প্রান্তে উদ্ভাবনের সংস্কৃতিকে নিশ্চিত করছে। কৃত্রিম মেধা এবং দক্ষতা বিকাশের যে কেন্দ্রগুলি স্থাপন করা হচ্ছে, সেগুলির মাধ্যমে দেশের যুব সম্প্রদায় ভবিষ্যতে নানা সুযোগ-সুবিধা পাবেন। ১০ হাজার নতুন পিএম রিসার্চ ফেলোশিপ-এর ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধারণাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার যাত্রা আরও সুগম হবে। এখন মহাকাশ ক্ষেত্র এবং পারমাণবিক শক্তিকে উন্মুক্ত করায় উদ্ভাবনের বাধা দূর হয়েছে। গিগ ইকনমির সঙ্গে যুবক-যুবতীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করা হয়েছে। তপশিলি জাতি ও উপজাতি এবং মহিলা শিল্পোদ্যোগীদের জন্য ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলি এখন আর প্রতিশ্রুতির মধ্যে আবদ্ধ নেই, এগুলিকে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। এর ফলে দেশের যুব সম্প্রদায় প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবেন এবং দেশের উন্নয়ন এই যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত হয়েছে। 

শ্রী মোদী বলেন, “গত ১০০ দিন ধরে ভারতের প্রগতি অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং সারা বিশ্ব তা প্রত্যক্ষ করছে।” চতুর্থ রাষ্ট্র হিসেবে কৃত্রিম উপগ্রহের দুটি অংশকে যুক্ত করা এবং পৃথক করার ক্ষমতা ভারত অর্জন করেছে। সেমি-ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনের সফল পরীক্ষা হয়েছে। ১০০ গিগাওয়াটের বেশি সৌরশক্তি উৎপাদিত হয়েছে। ১০০ কোটি টন কয়লা উত্তোলনের পাশাপাশি, ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন-এর সূচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন গঠন ছাড়াও কৃষকদের সারের ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। ছত্তিশগড়ে ৩ লক্ষ পরিবার নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশ করেছেন। স্বামীত্ব প্রকল্পে ৬৫ লক্ষ প্রপার্টি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এই ১০০ দিনে বিশ্বের বৃহত্তম সুড়ঙ্গ সোনমার্গ টানেল জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে। আইএনএস সুরাট, আইএনএস নীলগিরি এবং আইএনএস বাঘশির নৌ-বাহিনীতে যুক্ত করার ফলে বাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে। সেনাবাহিনীর জন্য যুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে এরকম হালকা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ হেলিকপ্টার কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হওয়ায় সামাজিক ন্যায়ের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই ১০০ দিন শুধুমাত্র ১০০টি সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেনি, ১০০টি প্রস্তাবকেও কার্যকর করেছে।

“উদীয়মান ভারতের প্রকৃত শক্তি নিহিত রয়েছে কার্যসম্পাদনের মন্ত্রের মধ্যে।” শ্রী মোদী তাঁর ভাষণে রামেশ্বরমের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, সেখানে ঐতিহাসিক পামবান সেতু উদ্বোধন করার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছে। ১২৫ বছর আগে ব্রিটিশরা এই সেতুটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ঝড় এবং এক ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও পূর্ববর্তী সরকারগুলি কোনো কাজই করেনি। তাঁর সরকারের আমলে নতুন পামবান সেতুর নির্মাণ শুরু হয় এবং দেশ সমুদ্রের ওপর উল্লম্বভাবে খুলে যাওয়া তার প্রথম সেতুটি পেয়েছে। 

যে কোন প্রকল্প দীর্ঘায়িত হলে দেশের উন্নয়নে তার প্রভাব পড়ে। শ্রী মোদী বলেন, “শ্লথতা উন্নয়নের শত্রু এবং আমাদের সরকার এই শত্রুকে পরাজিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি আসামের বোগিবিল সেতুর উদাহরণ তুলে ধরেন। ১৯৯৭ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী দেবেগৌড়া এই সেতুর শিলান্যাস করেন। পরবর্তীতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এই সেতু নির্মাণে উদ্যোগী হন। তবে, পরবর্তী সরকারগুলি সেতু নির্মাণের জন্য কিছুই করেনি। এর ফলে আসাম এবং মণিপুরের লক্ষ লক্ষ মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হয়। ২০১৪ সালে তাঁর সরকার এই প্রকল্পের সূচনা করে। মাত্র চার বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। ১৯৭২ সালে কেরালায় কল্যাণ বাইপাস সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিগত ৫০ বছরে কোনো সরকারই এই প্রকল্প সম্পন্ন করেনি। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়কালে পাঁচ বছরে প্রকল্পটি শেষ হয়েছে।

শ্রী মোদী বলেন, ১৯৯৭ সালে নভি মুম্বাই বিমানবন্দর নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০০৭ সালে এই বিমানবন্দর নির্মাণের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু কংগ্রেস সরকার এর জন্য কিছুই করেনি। তাঁর সরকার দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং সেদিন আর বেশি দেরি নেই যখন নভি মুম্বাই বিমানবন্দর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচল শুরু হবে। 

প্রধানমন্ত্রী ৮ এপ্রিল দিনটির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। আজ প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার দশম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। আগে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে গ্যারান্টার লাগত যা বেশ সমস্যার বিষয় ছিল। সাধারণ পরিবারগুলির কাছে ব্যাঙ্ক ঋণ এক স্বপ্নের বিষয় ছিল। আজ মুদ্রা যোজনা তপশিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী, ভূমিহীন শ্রমিক এবং মহিলা সহ সমাজের পিছিয়ে পড়া শেণীর মানুষদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সমাজের এই পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষদের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্ন কি কম মূল্যবান? গত এক দশকে কোনো গ্যারান্টার ছাড়াই মুদ্রা যোজনায় ৫২ কোটি ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের অভূতপূর্ব অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্র্যাফিক সিগন্যাল সবুজ হতে যতক্ষণ সময় লাগে তার মধ্যে ১০০টি মুদ্রা ঋণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। 

শ্রী মোদী বলেন, “মুদ্রা যোজনা কোনো গ্যারান্টারের দাবি করে না, মানুষের প্রতি এর আস্থা রয়েছে।” এই প্রকল্পের ফলে ১১ কোটি মানুষ প্রথমবারের মতো ঋণ পেয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। এই প্রকল্পে ৩৩ লক্ষ কোটি টাকা গ্রামাঞ্চল এবং ছোট ছোট শহরগুলিতে পৌঁছেছে যা পৃথিবীর বহু দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের থেকে বেশি। “এটি শুধুমাত্র মাইক্রো-ফিনান্সের একটি উদাহরণই নয়, তৃণমূল স্তরে বিশাল এক পরিবর্তনের সাক্ষীও।” 

প্রধানমন্ত্রী উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা এবং ব্লক সম্পর্কে বলেন, পূর্ববর্তী সরকারগুলি দেশের ১০০টিরও বেশি জেলাকে পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে ঘোষণা করে। উত্তর-পূর্ব এবং আদিবাসী অধ্যুষিত বেশিরভাগ জেলাই এই তালিকাভুক্ত হয়। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে ভালো অফিসারদের নিয়োগ না করে সেখানে শাস্তিমূলক পোস্টিং হিসেবে অযোগ্য অফিসারদের পাঠানো হত। এর ফলে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিষয়ে তদানিন্তন সরকারের মানসিকতা প্রতিফলিত হয়। তাঁর সরকার এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে এই অঞ্চলগুলিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা হিসেবে চিহ্নিত করে। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প ঐ অঞ্চলে যাতে দ্রুত বাস্তবায়িত হয়, তার জন্য সবরকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই অঞ্চলের যুবক-যুবতীরা এখন দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “আমরাও অর্জন করতে পারি, আমরাও উন্নয়নের শরিক হতে পারি।” উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা প্রকল্প বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই সাফল্য অর্জনের পর সরকার এখন ৫০০টি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্লক নিয়ে কাজ শুরু করেছে। 

দেশের দ্রুত উন্নয়নে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা থেকে বলেন, “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির”। দশকের পর দশক ভারতে ভয়, জঙ্গীবাদ এবং সংঘর্ষের কারণে যুব সম্প্রদায় সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের তরুণরা বোমা ছোঁড়া, গুলি চালানো এবং পাথর ছোঁড়ার কাজে যুক্ত ছিল। পূর্ববর্তী সরকারগুলির এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানোর সাহস ছিল না। তাঁর সরকারের দৃঢ়চেতা মনোভাব এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণেই জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এসেছে। আজ এই অঞ্চলের যুবক-যুবতীরা সক্রিয়ভাবে উন্নয়নযজ্ঞে সামিল হয়েছেন। 

নকশালবাদের মোকাবিলা করা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময়ে দেশের ১২৫টি জেলা সহিংসতার সমস্যায় জর্জরিত ছিল। বহু যুবক-যুবতী নকশালবাদের সমস্যার শিকার হয়েছেন। তাঁর সরকার এই যুবক-যুবতীদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে। গত এক দশকে ৮ হাজারের বেশি যুবক-যুবতী অস্ত্র সমর্পণ করে হিংসার পথ পরিত্যাগ করেছে। বর্তমানে নকশাল প্রভাবিত জেলার সংখ্যা ২০-তে নেমে এসেছে। একইভাবে, উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তিগুলি যে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালাত, আজ সেই অঞ্চলে তার সরকারের উদ্যোগে ১০টি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ১০ হাজারের বেশি যুবক-যুবতী অস্ত্র ত্যাগ করে উন্নয়নযজ্ঞে সামিল হয়েছেন। অস্ত্র ত্যাগ করানোই এখানে সরকারের সাফল্য নয়, তাঁদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।

শ্রী মোদী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন সমস্যাকে রাজনৈতিক কারণে সমাধান করা হচ্ছিল না। একবিংশ শতাব্দীর জনগণ বিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক ভুল বোঝাগুলিকে বয়ে নিয়ে যেতে চান না। তোষণের রাজনীতি ভারতের উন্নয়নকে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। ওয়াকফ সম্পর্কিত আইনগুলির সংশোধনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলি নিয়ে এখন যে বিতর্ক চলছে, তা আসলে তোষণের কারণে। “ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়েই তোষণের সেই বীজকে বপন করা হয়েছিল।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, অন্যান্য দেশগুলির মত ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করছিল, তখন ভারতকে কেন দেশভাগের মতো শর্ত মানতে হয়েছিল? তখন জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। সেই সময়ে সাধারণ মুসলমান পরিবারগুলি পৃথক রাষ্ট্রের বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না, কিন্তু কংগ্রেসের কিছু নেতা ক্ষমতা দখলের জন্য মুষ্টিমেয় কয়েকজন উগ্রপন্থীকে সমর্থন করায় এই ঘটনাটি ঘটেছিল। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোষণের রাজনীতির মধ্য দিয়ে কংগ্রেস ক্ষমতা পেয়েছিল এবং বেশ কিছু উগ্রপন্থী নেতার সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু, তিনি জানতে চান, এর থেকে সাধারণ মুসলমান কি পেয়েছিলেন? দরিদ্র এবং প্রান্তিক মুসলমানরা অবহেলিত হয়ে থেকেছেন, অশিক্ষা এবং কর্মহীনতার মতো সমস্যায় তাঁরা জর্জরিত ছিল। শাহ বানু মামলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বলেন, মুসলমান মহিলারা অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। এই তোষণের রাজনীতির ফলে তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার খর্বিত হয়েছে। মহিলাদের দমিয়ে রাখার কারণে তাঁরা কোনো প্রশ্ন করতে পারেননি, কিন্তু উগ্রপন্থী শক্তিগুলি মহিলাদের সেই অধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ হওয়া সত্ত্বেও তাদের দমন করা হয়নি।

শ্রী মোদী ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কিছু রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করেন। “তোষণের রাজনীতি ভারতের সামাজিক ন্যায়ের ধারণার পরিপন্থী।” ২০১৩ সালে ওয়াকফ আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও উগ্রপন্থী কিছু গোষ্ঠী এবং জমি মাফিয়াদের তুষ্ট করার জন্য তা বাস্তবায়িত হয়নি। কেরালায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জমি তাদের বলে ওয়াকফ দাবি করে। হরিয়ানায় গুরুদ্বারের জমি নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়। কর্ণাটকে কৃষকদের জমির দাবি জানায় তারা। গ্রামের পর গ্রামের হাজার হাজার হেক্টর জমির এনওসি পেতে সমস্যা হয়। মন্দির, গীর্জা, গুরুদ্বার, কৃষিজমি অথবা সরকারি জমি – এগুলির মালিকানা কার, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। একটিমাত্র নোটিশের কারণে বহু মানুষকে প্রমাণ করার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হয় যে তাঁদের নিজেদের বাড়ি-ঘর এবং জমির মালিক আসলে তাঁরা। যে আইন ন্যায়ের জন্য কার্যকর করা হয়েছে, তা যদি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে এ ধরনের আইনের প্রয়োজন কোথায় বলে তিনি প্রশ্ন তোলেন। 

মুসলমান সহ সমস্ত সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষা হবে এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন কার্যকর করার জন্য শ্রী মোদী সংসদকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন যে ওয়াকফের পবিত্রতা এখন রক্ষা করা হবে। পিছিয়ে পড়া মুসলমান সম্প্রদায়ের জনগণ, মহিলা ও শিশুদের অধিকার রক্ষিত হবে।  ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে ওয়াকফ বিল নিয়ে আলোচনাটি ছিল দ্বিতীয় দীর্ঘতম। সংসদের দুই কক্ষে ১৬ ঘন্টা ধরে এই বিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যৌথ সংসদীয় কমিটি ৩৮টি বৈঠক করেছে, ১২৮ ঘন্টা আলোচনা চালিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১ কোটি পরামর্শ অনলাইনে এসেছে। “ভারতে গণতন্ত্র যে শুধুমাত্র সংসদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তা যে আরও শক্তিশালী হয়েছে, এর মাধ্যমে সেটিই প্রতিফলিত হয়।”

শ্রী মোদী বিনোদন জগতকে বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প বলে উল্লেখ করে বলেন, এটি ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। শিল্প, সঙ্গীত, সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে যন্ত্রের পার্থক্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম মেধার ক্ষেত্রে বিশ্ব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ওয়ার্ল্ড অডিও-ভিস্যুয়াল অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট সামিট – ওয়েভস-এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এটি এক আন্তর্জাতিক মঞ্চ। মুম্বাইয়ে আগামী মে মাসে এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হবে। চলচ্চিত্র, পডকাস্ট, গেমিং, সঙ্গীত, এআর এবং ভিআর-এর মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের প্রাণবন্ত এবং সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। “ক্রিয়েট ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিল্পের আরও উন্নতি ঘটানো হচ্ছে। ভারতীয় শিল্পীরা যাতে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে যুক্ত হন, ওয়েভস সেই বিষয়ে তাঁদের উৎসাহ দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের ভারতে এসে কাজ করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওয়েভসকে আরও জনপ্রিয় করতে এবং সৃজনশীল দুনিয়ার তরুণ পেশাদারদের এই মঞ্চে যুক্ত করার জন্য নেটওয়ার্ক ১৮-কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। “প্রত্যেকের বাড়িতে, প্রত্যেকের হৃদয়ে ওয়েভস-কে পৌঁছে দিতে হবে।”

এই সম্মেলনে ভারতের যুব সম্প্রদায়ের সৃজনশীলতা, বিভিন্ন ভাবনা তুলে ধরার জন্য নেটওয়ার্ক ১৮-এর ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তরুণ-তরুণীদের যুক্ত করতে এই মঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। নিছক একজন শ্রোতা থেকে সৃজনশীল জগতে যুক্ত হতে এই সম্মেলন সাহায্য করছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই প্রক্রিয়ায় সামিল হতে আহ্বান জানান তিনি। এই সম্মেলন যাতে শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, তার জন্য এখানের আলোচিত প্রতিটি বিষয়কে নথিভুক্ত করা, তা নিয়ে পর্যালোচনা করার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। এই সম্মেলনে যুব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ এবং উৎসাহ- উদ্দীপনাই ভারতকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার চালিকাশক্তি। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকলকে – বিশেষত যুব সম্প্রদায়কে তিনি তাঁর শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে ‘সমাধান’ শীর্ষক একটি নথি প্রকাশ করেন। বায়ুদূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নদীর জল পরিষ্কার, সকলের জন্য শিক্ষা এবং বিভিন্ন রাস্তাঘাটকে যানজট মুক্ত করার জন্য যে চ্যালেঞ্জগুলির আমরা সম্মুখীন হই, সেগুলি থেকে বেরিয়ে আসতে কিছু পরামর্শ এই নথিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কিছু কলেজ এবং নির্বাচিত কিছু যুবক-যুবতীর এ বিষয়ের ভাবনাই এই নথিতে স্থান পেয়েছে।

 

SC/CB/DM


(Release ID: 2120351) Visitor Counter : 39