প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

ওড়িশার ভুবনেশ্বরে অষ্টাদশ প্রবাসী ভারতীয় দিবস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 09 JAN 2025 2:11PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫

 

ওড়িশার রাজ্যপাল ডঃ হরিবাবুজি, আমাদের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝিজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী এস জয়শঙ্করজি, জুয়াল ওঁরাওজি, ধর্মেন্দ্র প্রধানজি, অশ্বিনী বৈষ্ণবজি, শোভা কারান্দলাজেজি, কীর্তি বর্ধন সিংজি, পবিত্র মার্গারেটাজি, ওড়িশার উপমুখ্যমন্ত্রী কনক বর্ধন সিং দেওজি ও প্রভাতী পাড়িদাজি, অন্যান্য মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক এবং মা ভারতীর পুত্র কন্যা ও সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত অন্যান্যরা!

ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহোদয়ারা!

প্রভু জগন্নাথ এবং প্রভু লিঙ্গরাজ-এর পবিত্র ভূমিতে আমি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমার যে ভারতীয় পরিবারের সদস্যরা এসেছেন তাঁদের স্বাগত জানাই। যে স্বাগত সঙ্গীতটি অনুষ্ঠানের শুরুতে বাজানো হয়েছে, আমি সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করে যে এই গানটি ভবিষ্যতে আরও বহুবার বাজানো হবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেখানেই ভারতীয় সম্প্রদায়ের কোনো অনুষ্ঠান হবে, সেখানেই এই গানটি বাজানো হবে বলে আমার বিশ্বাস। আপনাদের সকলকে অভিনন্দন। আপনাদের এই দল প্রবাসী ভারতীয়দের চিন্তাভাবনাকে দারুনভাবে তুলে ধরেছে। আবারও আপনাদের সকলকে অভিনন্দন।

বন্ধুগণ,

আমরা এই মাত্র প্রবাসী ভারতীয় দিবসে এবারের প্রধান অতিথির ভাষণ শুনেছি। ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোর রাষ্ট্রপতি খ্রিস্টিন কাংগলুর ভিডিও বার্তা আমাদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনিও ভারতের উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলেছেন। আমি তাঁর এই উষ্ণ ও আন্তরিক বার্তার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

বন্ধুগণ,

ভারতে এক বিশাল সমাবেশের সময় এখন। আর কয়েক দিনের মধ্যেই প্রয়াগরাজে শুরু হচ্ছে মহাকুম্ভ। মহকর সংক্রান্তি, লোহরি, পোঙ্গল এবং মাঘ বিহু উৎসবও আসন্ন। চারদিকেই এখন আনন্দময় পরিবেশ। ১৯১৫ সালে মহাত্মা গান্ধীজি দীর্ঘকাল প্রবাসে বসবাসের পর আজকের দিনে দেশে ফিরে আসেন। ভারতে বর্তমান সময়ে আপনাদের উপস্থিতি এমন একটি সুন্দর সময়ে হচ্ছে, যখন চারদিকেই উৎসবের পরিবেশ। প্রবাসী ভারতীয় দিবসে এবারের অনুষ্ঠান বিশেষমাত্রা যোগ করেছে। কারণ, আমরা অটল বিহারী বাজপেয়ীজির জন্ম শতবর্ষের কয়েক দিনের মধ্যেই এখানে সমবেত হয়েছি। ভারত এবং বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করতে তাঁর বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। আমরা বর্তমানে একত্রে দেশ, দেশাত্মাবোধ এবং আমাদের সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও শেকড়ের সঙ্গে সম্পর্ককে উদযাপন করছি।

বন্ধুগণ,

আজ আপনারা ওড়িশার যে পবিত্র ভূমিতে একত্রিত হয়েছেন, সেখানে ভারতের এক সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ওড়িশার প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের নিরদর্শন পাওয়া যায়। উদয়গিরি, খন্ডগিরির ঐতিহাসিক গুহা, কোনারকের সূর্য মন্দির, তাম্রলিপ্ত, মানিকপাটনা এবং পল্লুর প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন বহন করে। শত শত বছর আগে আমাদের ব্যবসায়ীরা ওড়িশা থেকে সমুদ্র পেরিয়ে বালি, সুমাত্রা এবং জাভা যেতেন বাণিজ্য করার জন্য। তাঁদের ওই সফরের স্মৃতিতে এখনও ওড়িশায় বালি যাত্রা উদযাপিত হয়। ওড়িশায় এমন একটি জায়গা রয়েছে, যার নাম ধৌলি স্ট্যান্ড, যা শান্তির বিশেষ প্রতীক। সমগ্র বিশ্ব যখন তলোয়ারের ক্ষমতায় বলিয়ান হয়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করছিল, তখন আমাদের সম্রাট অশোক এখানে শান্তির পথ বেছে নিয়েছিলেন। আমাদের ঐতিহ্যের অন্যতম মূল শক্তি হলো বর্তমান ভারত আমাদের সমগ্র বিশ্বকে এটাই বলতে অনুপ্রাণিত করে যে, যুদ্ধ নয়, বুদ্ধর বাণীতেই নিহিত আছে ভবিষ্যতের পথ। তাই, ওড়িশার ভূমি থেকে আপনাদের সকলকে স্বাগত জানানো এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মূহূর্ত।

বন্ধুগণ,

আমি সর্বদাই প্রবাসী ভারতীয়দের, ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে মনে করি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভারতীয়দের সঙ্গে যখন আমার সাক্ষাৎ হয়, তখন আমি অত্যন্ত আনন্দিত হই। আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমার এক বিশেষ অনুভূতি হয়। আপনাদের কাছ থেকে আমি যা পাই তা কখনই ভুলতে পারবো না, আপনাদের ভালোবাসা, আশীর্বাদ সর্বতাই আমার সঙ্গে থাকবে।

বন্ধুগণ,

আজ আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আপনাদের বলতে চাই, ধন্যবাদ ধন্যবাদ। আপনাদের জন্যই আমি বিশ্বে গর্বের সঙ্গে আমার মাথা উঁচু করতে পেরেছি। বিগত ১০ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নেতাদের সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করেছি। প্রত্যেক বিশ্ব নেতাই ভারতীয় জনগণের অর্থাৎ আপনাদের সকলের প্রশংসা করেছেন। যেসব দেশে আপনারা বসবাস করেন, সেখানকার সমাজে যে সামাজিক মূল্যবোধ আপনারা রোপণ করেছেন, সেটি এর অন্যতম কারণ। আমরা কেবল মাত্র গণতন্ত্রের ধাত্রীভূমি নই, বরং গণতন্ত্র আমাদের জীবনে অংশ, এভাবেই আমরা আমাদের জীবন অতিবাহিত করি। আমাদের আলাদাভাবে বৈচিত্র্য সেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের জীবন বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হয়। সেজন্যই যেখানেই ভারতীয়রা যান সেখানকার সমাজের সঙ্গে তাঁরা একাত্ম হয়ে যান। আমরা যেখানেই যাই না কেন, সেখানকার নিয়মনীতি ও ঐতিহ্যকে সম্মান জানাই। আমরা দেশ ও সমাজকে নিষ্ঠার সঙ্গে সেবা করি। দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য নিজেদের নিয়োজিত করি। এছাড়াও ভারত আমাদের হৃদয়ে থাকে। দেশের প্রত্যেকটি আনন্দই আমাদের আন্দলিত করে। আমরা ভারতের সব সাফল্য উদযাপন করি।

বন্ধুগণ,

একুশ শতকের ভারত যে গতিতে বর্তমানে এগিয়ে চলেছে এবং বিগত ১০ বছরে এখানে যে হারে উন্নয়ন হয়েছে তা বিশেষ। ২৫ কোটির বেশি মানুষকে আমরা দারিদ্র মুক্ত করেছি। বিগত ১০ বছরে ভারত বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। সেই দিন আর বেশি দূরে নেই, যখন ভারত সমগ্র বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। সমগ্র বিশ্ব এখন ভারতের সাফল্য প্রত্যক্ষ করছে। ভারতের চন্দ্রযান যখন শিব শক্তি পয়েন্টে পৌঁছেছে, তখন আমরা সকলেই গর্ব অনুভব করি। বর্তমানে ভারত প্রতি ক্ষেত্রেই এগিয়ে চলেছে এবং আকাশকে ছুঁতে চলেছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, অসামরিক বিমান চলাচল ক্ষেত্র, বিদ্যুৎ ক্ষেত্র, বিশাল মেট্রো নেটওয়ার্ক বা বুলেট ট্রেন প্রকল্প প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতের উন্নয়ন সব রেকর্ড ভেঙে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে ভারত দেশে তৈরি যুদ্ধ বিমান, পরিবহণ বিমান তৈরি করছে। সেই দিনটি আর বেশি দূরে নেই, যখন আপনারা ভারতে তৈরি বিমানে করে প্রবাসী ভারতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশে আসবেন।

বন্ধুগণ,

ভারতের এইসব সাফল্য বর্তমানে ভারতকে সমগ্র বিশ্বের কাছে বিশেষ স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। সমগ্র বিশ্ব এখন গুরুত্বের সঙ্গে ভারতের কথা শোনে। এখন ভারত কেবলমাত্র দৃঢ়ভাবে নিজের বক্তব্য পেশ করে তাই নয়, তারা দক্ষিণ বিশ্বের অন্যতম দেশ হিসেবে যথেষ্ট মজবুতভাবে নিজের কণ্ঠ উত্থাপন করে। ভারত যখন আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-র স্থায়ী সদস্য করার প্রস্তাব দেয়, তখন অন্য সব সদস্যরাই একে সমর্থন জানায়।

বন্ধুগণ,

ভারতের প্রতিভা এখন সমগ্র বিশ্বেই সমাদৃত। আমাদের পেশাদাররা বিশ্বের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আগামীকাল আমাদের সম্মানীয় রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুজি আপনাদের অনেককেই প্রবাসী ভারতীয় সম্মানে ভূষিত করবেন। যাঁরা এই সম্মান পাবেন তাঁদের জন্য রইলো আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

বন্ধুগণ,

আপনারা জানেন, আগামী বেশ কয়েক দশক ভারত সবচেয়ে দক্ষ জনগণের দেশ হয়ে থাকবে। ভারতই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দক্ষতার চাহিদা মেটাবে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন দু’হাত বাড়িয়ে ভারতের দক্ষ তরুণ প্রজন্মকে স্বাগত জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার এটি নিশ্চিত করছে যে বিশ্বের যেখানেই কোনো ভারতীয় যান না কেন, তাঁরা যেন দক্ষভাবে কাজ করতে পারেন। তাই আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে অবিরাম দক্ষতা উন্নয়ন, পুনরায় দক্ষ করে তোলা এবং আরও বেশি দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার উপর জোর দিচ্ছি। আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন, আপনাদের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। আমাদের জনগণকে বিপদের সময়ে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব বলেই আমরা মনে করি। বর্তমানে ভারতের বিদেশ নীতি এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই কাজ করছে। বিগত এক দশকে আমাদের দূতাবাস এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অফিসগুলি আরও কার্যকর ও সহমর্মী হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

অনেক দেশে এর আগে দূতাবাসের সুবিধা পেতে জনগণকে অনেক দূরে দূরে যেতে হতো। সাহায্যের জন্য তাঁদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। বর্তমানে এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বিগত দু বছরে ১৪টি দূতাবাস ও কনস্যুলেট খোলা হয়েছে। ওসিআই কার্ডের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

বন্ধুগণ,

ভারতীয় প্রবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন এবং তাঁদের উন্নয়ন গাঁথা সেইসব দেশে ভারতের সম্মান বাড়াতে সাহায্য করছে। ভারতীয় ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আপনারা। আপনাদের অনেক অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী কাহিনী রয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই আমার মন কি বাত অনুষ্ঠানে আমি এবিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছি। কয়েক শতক আগে গুজরাটের অনেক পরিবার ওমানে বসবাস করতো। তাঁদের আড়াইশো বছরের বেশি সময়ের সফর সত্যিই অনুপ্রেরণা যোগায়। এনিয়ে সম্প্রতি একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। ওমানে বসবাসকারী গুজরাটিদের সম্পর্কিত নানান তথ্য ও নথি ওই প্রদর্শনিতে তুলে ধরা হয়। আমি আজ অত্যন্ত আনন্দিত যে সেইসব পরিবারের অনেকে আজ এখানে আমাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন।

বন্ধুগণ,

বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য আমরা নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। উদাহরণ হিসেবে আমি বলতে চাই, আমাদের ‘গিরমিত্য’ ভাই বোনেদের কথা। আমাদের এই গিরমিত্য সম্প্রদায়ের বিষয়ে কেন কোনো তথ্যপঞ্জি নেই? ভারতের কোন গ্রাম, শহর থেকে তাঁরা এসেছেন তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাঁরা কোথায় গেলেন, কোথায়ই বা বসবাস করছেন সেইসব জায়গাও খুঁজতে হবে। তাঁরা কিধরণের জীবনযাপন করেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলাই বা কিভাবে করেন, তা চলচ্চিত্র বা তথ্যচিত্রে তুলে ধরতে হবে। গিরমিত্য ঐতিহ্য সম্পর্কে গবেষণা করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এনিয়ে চেয়ার স্থাপন করা যায়। নিয়মিতভাবে বিশ্ব গিরমিত্য সম্মেলনেরও আয়োজন করতে পারি আমরা। আমি আমার দলকে এই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য এবং একে বাস্তবায়িত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।

বন্ধুগণ,

বর্তমান ভারত একযোগে উন্নয়ন ও ঐতিহ্য এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। জি২০-র সময়ে আমরা আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বৈঠক করেছি। আমরা চেয়েছি, সমগ্র বিশ্ব যেন আমাদের বৈচিত্র্যকে সচক্ষে অনুভব করতে পারে। আমরা সফলভাবে কাশী-তামিল সঙ্গমম, কাশী-তেলুগু সঙ্গমম, সৌরাষ্ট্র-তামিল সঙ্গমম-এর আয়োজন করে থাকি। আর কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা সাধু তিরুভল্লুভর দিবস পালন করবো। সাধু তিরুভল্লভরের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে আমাদের সরকার তিরুভল্লুভর সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যেই সিঙ্গাপুরে প্রথম কেন্দ্রটি স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। আমেরিকার হাউসস্টন বিশ্ববিদ্যালয় একটি তিরুভল্লুভর চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে। তামিল ভাষা, তামিল ঐতিহ্য এবং ভারতীয় ঐতিহ্যকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে এইসব প্রচেষ্টা।

বন্ধুগণ,

আমরা আমাদের দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানগুলিকে যুক্ত করার জন্য পদক্ষ গ্রহণ করেছি। উদাহরণ হিসেবে আমি বলতে চাই, ভগবান রাম এবং মাতা সীতার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন জায়গাগুলি ঘুরে দেখার জন্য বিশেষ রামায়ণ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়েছে। ভারত গৌরব ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানগুলি ঘুরে দেখার সুবিধে দিচ্ছে। আমাদের সেমি হাইস্পিড বন্দেভারত ট্রেনের মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যময় কেন্দ্রগুলি যুক্ত করা হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে আমার একটি বিশেষ প্রবাসী ভারতীয় এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্বোধন করার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রায় দেড়শো জন মানুষ এই ট্রেনে করে দেশের ১৭টি পর্যটন ও আস্থা স্থল ঘুরে দেখবেন। ওড়িশার এমন অনেক স্থান রয়েছে, যা আপনাদের অবশ্যই ঘুরে দেখা উচিত। প্রয়াগরাজে শীঘ্রই শুরু হচ্ছে মহাকুম্ভ। জীবনে এই সুযোগ বারে বাসে আসে না। আপনাদের অবশ্যই সেখানেও যাওয়া উচিত।

বন্ধুগণ,

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়। স্বাধীনতা অর্জনে প্রবাসী ভারতীয়দের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে থেকেও দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁরা নিয়োজিত ছিলেন। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪৭। ভারতকে আমাদের উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আপনারা ভারতের এই উন্নয়ন যাত্রার অংশীদার। আপনাদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য জানাই ধন্যবাদ। আপনারা কেবলমাত্র ভারতে বিনিয়োগ করছেন তাই নয়, অন্য একটি দেশেও বিনিয়োগ করছেন। আমাদের গিফট সিটি বাস্তুতন্ত্র আপনাদের অর্থনৈতিক সুবিধা সংক্রান্ত চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। উন্নয়নের পথে ভারতের যাত্রাকে আরও মজবুত করতে আপনাদের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের প্রতিটি পদক্ষেপই একাজে দেশকে সাহায্য করবে।

পর্যটন এমন একটি ক্ষেত্র বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন মেট্রো শহরগুলি বিশ্ব দরবারে প্রাথমিকভাবে পরিচিত। কিন্তু ভারত তো কেবলমাত্র এই বড় শহরগুলিতেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের একটি বৃহত্তম অংশ টিয়ার ২, টিয়ার ৩ শহর এবং গ্রামে বিস্তৃত রয়েছে। সেইসব স্থানে আপনারা ভারতের ঐতিহ্য প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। আমাদের প্রয়োজন সমগ্র বিশ্বকে এই ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত করা। আমি আপনাদের এই ছোট শহর ও গ্রামগুলিতে আপনাদের সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। ঘুরে আসার পর আপনারা যে দেশে বসবাস করেন সেখানে ফিরে গিয়ে আপনাদের বন্ধুদের সঙ্গে ওইসব স্থানে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিন। আমি বলবো, পরবর্তীকালে আপনারা যখন ভারতে আসবেন, তখন ভারতীয় নয় এমন অন্তত ৫ জন বন্ধুকে আপনার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন। আপনারা যেখানে থাকেন সেখানকার জনগণকে ভারত ঘুরে দেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।

বন্ধুগণ,

আমার একটি আবেদন রয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে। আপনারা অনুগ্রহ করে ভারত সম্পর্কে আরও জানতে ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিন। আপনারা ‘স্টাডি ইন ইন্ডিয়া’ বা ভারতে পড়াশুনা কর্মসূচি থেকেও উপকৃত হবেন। আইসিসিআর মেধাবৃত্তি প্রকল্প তরুণদের জন্য এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

বন্ধুগণ,

আপনারা যে দেশে বসবাস করেন, সেখানে ভারতের ইতিহাস ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করুন। বহু দেশে বর্তমান প্রজন্ম আমাদের সমৃদ্ধি সম্পর্কে জানে না। আমাদের দীর্ঘদিনের দাসত্ব, সংগ্রাম সম্পর্কেও তাঁরা অবহিত নয়। ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে সমগ্র বিশ্বকে পরিচিত করতে পারেন আপনারাই।

বন্ধুগণ,

বর্তমান ভারত ‘বিশ্ব বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত। এই আন্তর্জাতিক যোগাযোগকে আরও মজবুত করতে আপনাদের আরও একটু প্রচেষ্টা প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে আমি বলতে চাই, যেসব দেশে আপনারা বসবাস করেন, সেখানে পুরস্কারমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করুন। সেই পুরস্কারগুলি সেখানকার স্থানীয় জনগণের জন্য নির্দিষ্ট থাকুক। আপনারা বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানিত করতে পারেন। শিক্ষা, শিল্প, কলা, চলচ্চিত্র, নাটক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশিষ্ট জনেদের সম্মান জানাতে পারেন। তাঁদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি প্রবাসী ভারতীয়দের তরফে তাঁদের শংসাপত্র দিন। ভারতীয় দূতাবাস ও কনস্যুলেট আপনাদের সানন্দে সাহায্য করবে। এই কাজের ফলে আপনারা যে দেশে বসবাস করেন, সেখানকার জনগণের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

বন্ধুগণ,

স্থানীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক পণ্যে পরিণত করতে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভারতে তৈরি কোনো সামগ্রী অবশ্যই কিনবেন, তা খাবারের কোনো প্যাকেট, জামাকাপড় বা অন্য যে কোনো জিনিস হতে পারে। কোনো জিনিস যদি আপনি যেখানে থাকেন সেখানে উপলব্ধ না হয়, তাহলে অনলাইনে অর্ডার করুন। ভারতে তৈরি সামগ্রীকে আপনার রান্নাঘর, বসার ঘর কিংবা উপহারের অংশ করে তুলুন। উন্নত ভারত গড়ে তুলতে আপনার এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বন্ধুগণ,

আমার আপনাদের কাছে আরও একটি আবেদন রয়েছে, সেটি হলো মা এবং ধাত্রীভূমিকে নিয়ে। কয়েক দিন আগে আমি গায়ানা গিয়েছিলাম। সেখানে সেদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর মায়ের নামে একটি বৃক্ষ রোপণের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। ভারতের লক্ষ লক্ষ জনগণ ইতিমধ্যেই এই কাজ করছেন। আমি আপনাদের কাছে আবেদন জানাবো, আপনারা আপনাদের মায়ের নামে একটি গাছের চারা রোপণ করুন। আপনারা যখন দেশে ফিরে আসবেন তখন উন্নত ভারত গঠনের প্রতিশ্রুতি আপনাদের সঙ্গে থাকবে, এ আমার বিশ্বাস। একসঙ্গে আমরা উন্নত ভারত গড়ে তুলবো।

২০২৫ আপনাদের সকলের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। আপনাদের শারীরিক সুস্থতা ও আর্থিক উন্নতির কামনা করি। আগামী দিন আপনাদের সমৃদ্ধ হোক। আরও একবার আমি আন্তরিকভাবে ভারতে আসার জন্য আপনাদের সকলকে আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাই।

অনেক অভিনন্দন এবং অনেক অনেক ধন্যবাদ।

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে।

 

SC/PM/SKD/


(Release ID: 2091807) Visitor Counter : 4