পেট্রোলিয়ামওপ্রাকৃতিকগ্যাসমন্ত্রক
পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের ২০২৪ বর্ষশেষ পর্যালোচনা
Posted On:
07 JAN 2025 1:24PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ৭ জানুয়ারী, ২০২৫
পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান, উৎপাদন পরিশোধন, বন্টন, বিপণন, আমদানী, রফতানি এবং পেট্রো সামগ্রী সংরক্ষণের সঙ্গে জড়িত। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে তেল ও গ্যাস অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে মন্ত্রক অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ, দক্ষতা, সুস্থায়ীত্ব এবং জ্বালানী সুরক্ষার দিকটি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে হিসেবে চিহ্নিত। মন্ত্রক বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এবং স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধিতে নানাবিধ প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পগুলির অন্যতম হল প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা (পিএমইউওয়াই)। আজ এই যোজনার অধীন ১০.৩৩ কোটি পরিবার। শুরু থেকে এপর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় ২২২ কোটি এলপিজি সিলিন্ডার বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিনের হিসেবে এই সংখ্যা ১৩ লক্ষ। উজ্জ্বলা সুবিধাভোগীদের স্বার্থে সিলিন্ডার পিছু ৩০০ টাকা করে ভর্তুকি দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে এলপিজি সংযোগের সংখ্যা যেখানে ছিল ১৪.৫২ কোটি ২০২৪-এর পয়লা নভেম্বর তা ১০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৩২.৮৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪-এর পয়লা নভেম্বর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী ‘পহল’ স্কিমে ৩০.৪৩ কোটি ক্রেতা নাম লিখিয়েছেন। এপর্যন্ত ‘গিভ ইট আপ’ প্রচারাভিযানে ১.১৪ কোটি গ্রাহক এলপিজি ভর্তুকি ত্যাগ করেছেন। এছাড়াও উল্লেখনীয় দিক হল ৯০ শতাংশেরও বেশি নতুন ডিস্ট্রিবিউটাররা গ্রামীণ এলাকায় এই পরিষেবা দিচ্ছেন।
খুচরো আউটলেটগুলিতে ডিজিটাল পেমেন্ট পরিকাঠামোর প্রসার ঘটায় দেশজুড়ে ই-ওয়ালেট সুবিধা প্রচার করা হচ্ছে। এই আউটলেটগুলির মধ্যে ৮৪ হাজার ২০৩টি ভিম ইউপিআই সক্ষম। এছাড়াও স্বচ্ছ ভারত মিশনের অধীন সমস্ত খুচরো আউটলেট এখন শৌচালয়ের সুবিধা রয়েছে। যাবতীয় তেল বিপণন সংস্থাগুলির আঞ্চলিক অফিসে এখন বৈদ্যুতিক যানের চার্জিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের উল্লেখযোগ্য প্রসার ঘটছে। ২০১৪ সালে ১৫৩৪০ কিলোমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন থেকে ২০২৪- এর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই পাইপলাইন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৯৪৫ কিলোমিটার। এছাড়াও ১০,৮০৫ কিলোমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। এই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের কাজ সম্পূর্ণ হবে এবং দেশে চাহিদা ও সরবরাহ কেন্দ্রগুলির সবকটি এই গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর ফলে সমস্ত এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া একদিকে যেমন সহজ হবে সেইসঙ্গে অভিন্ন অর্থনীতি এবং সামাজিক অগ্রগতির লক্ষ্য অর্জনে তা সহায়ক হবে।
সংযুক্ত পাইপলাইন শুল্কের পেট্রোল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ন্ত্রক পর্ষদ (পিএনজিআরবি) বিধিনিষেধের সংশোধন ঘটিয়েছে। ‘এক দেশ, এক গ্রিড, এক শুল্ক’- র লক্ষ্যপূরণে প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের ক্ষেত্রে অভিন্ন শুল্ক চালু করা হয়েছে।
পিএনজিআরবি ৩০৭ টি ভৌগোলিক এলাকাকে দায়িত্বভার দিয়েছে। সিজিডি পরিকাঠামো গড়ে তুলতে যাতে দেশের শতকরা ১০০ ভাগ এলাকায় ১০০ ভাগ জনগণের কাছেই গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায়। জৈব গ্যাসের উৎপাদন পরিমন্ডল এবং ব্যবহারের স্বার্থে ‘সতত’ উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। ৩০ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ৮০ টি কমপ্রেসড জৈব গ্যাস প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে এবং ২২ টি নির্মাণের নানা স্তরে রয়েছে।
সাধারণ মানুষকে দামের অস্থিরতা থেকে রেহাই দিতে সরকার নতুন সিজিডি সেক্টর গ্যাস বিতরণ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। গৃহস্থলী গ্যাসের দামের ক্ষেত্রেও নতুন নির্দেশিকা জারী হয়েছে, যাতে করে ভারতের কাঁচা তেলের ভান্ডারে ১০ শতাংশ মাসিক গড়ের নিরিখে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হবে এবং তার উর্ধসীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। গ্যাসের এই দাম কমা, নিঃসন্দেহে গৃহস্থলী ক্ষেত্র সহ সার এবং বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উপকারে লাগছে। এছাড়াও নানাবিধ উদ্যোগ রয়েছে। জৈব জ্বালানি এবং ইথানলে মিশ্রণ ঘটানো হচ্ছে। এই বৃদ্ধির হার ২০২৪ –এর ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬.২৩ শতাংশ। দেশের ১৭ হাজার ৪০০ খুচরো আউটলেটে ২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল বিক্রি হয়।
এই ইবিপি কর্মসূচির ফলে দেশের অর্থভাণ্ডারে সদর্থক প্রভাব পড়েছে। ১,০৮,৬০০ কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে। সরকার গ্রীণ হাইড্রোজেন ব্যবহারেরও প্রসার ঘটাতে চাইছে। এজন্য তেল ও গ্যাসের রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলি ২০৩০ সালের মধ্যে ৯০০ কেটিপিএ গ্রীণ হাইড্রোজেন প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। বিমান জ্বালানীর ক্ষেত্রে এসএএফ মিশ্রণ ২০২৭, ২০২৮ এবং ২০৩০ সালে যথাক্রমে ১,২ এবং ৫ শতাংশ করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
পরিশোধনাগারের ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও জোর দিচ্ছে সরকার। দেশের ২২ টি চালু শোধনাগার রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব, ৩ টি বেসরকারী এবং একটি যৌথ উদ্যোগে তৈরি। পরিশোধনের দক্ষতা বর্তমানে ২৫৬.৮০ এমএমটিপিএ থেকে বাড়িয়ে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩০৯.৫০ করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এজন্য ১১ টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শোধনাগারের পরিশোধন দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
দেশের পাললিক অববাহিকায় তেল এবং গ্যাসের বিপুল ভাণ্ডারের অনুসন্ধানের দিকে তাকিয়ে সরকার ওপেন এক্রিজে লাইসেন্সিং কর্মসূচি (ওএএলপি) চালু করেছে। এটি হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধান লাইসেন্সিং নীতির একটি অংশ। এপর্যন্ত ওএএলপি-র আওতায় হাইড্রো কার্বন অনুসন্ধানে বিভিন্ন ব্লক বন্টনের কাজ চলছে। গুজরাটে ইতিমধ্যেই এরকম একটি ব্লক থেকে হাইড্রো কার্বন গ্যাস উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে।
সরকার কৌশলগত কূপ গড়ে তুলছে। ক্যাটাগরি ২ এর আওতায় ৪ টি উপকূলবর্তী কৌশলগত কূপ এবং ক্যাটাগরি ৩ –এ অববাহিকা অঞ্চলে ৩২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহানদী, পশ্চিমবঙ্গ, সৌরাষ্ট্র এবং আন্দামানে কূপ খনন করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে যদিও এগুলি এখনও চালু করা হয়নি।
তেল ও গ্যাসের বৈচিত্রকরণের দিকে তাকিয়ে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ভারতে জ্বালানি সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। কয়েকটি ভৌগোলিক এলাকার ওপরে নির্ভরযোগ্যতা কমাতে অশোধিত তেলের ভাণ্ডারের খোঁজে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জি-২০ শিখর বৈঠকে বিশ্ব জৈব জ্বালানি জোট চালু করেন। এটা বিপুল সাড়া ফেলেছে। ২৮ টি সদস্য দেশ এবং ১২ টি আন্তর্জাতিক সংগঠন এই জোট যোগ দিয়েছে। ক্রমাগতই তা প্রসার লাভ করছে। সেই সঙ্গে ভারতে এর সচিবালয় গড়ে তোলার জন্য বিশ্ব জৈব জ্বালানি জোট ভারত সরকারের সঙ্গে ২০২৪- এর অক্টোবরে সদর কার্যালয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানির লক্ষ্যে বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে ভারতের এই অঙ্গীকার বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।
এছাড়াও ভারত প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক প্রসারের লক্ষ্যে চুক্তি করেছে। যেমন পেট্রোলিয়াম পরিকাঠামোর লক্ষ্যে ২০২৩-এর মে মাসে নেপালের সঙ্গে এক সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এরপর অক্টোবর ২০২৪-এ নেপালের এনওসি এবং ভারতের আইওসিএল- এর মধ্যে বাণিজ্যিক বি২বি চুক্তি হয়েছে। এছাড়াও পেট্রোপণ্য সরবরাহের জন্য ভারত ভূটানের সঙ্গেও সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছে।
স্বচ্ছ জ্বালানি এবং হাইড্রো কার্বন সেক্টরে আন্তর্জাতিক সহযোগিকতার লক্ষ্যে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সমন্বয় গড়ে তুলেছে। ভারত - মার্কিন জলবায়ু এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি কর্মসূচি ২০২৪ – এর সঙ্গে কৌশলগত পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সহযোগিতা (এসসিইপি )কে যুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪-এর নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী সফরে ভারত এবং গায়না হাইড্রো কার্বন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রসারে চুক্তি করেছে। সম্প্রতি জুন ২০২৪ –এ ভারত গ্রীণ হাইড্রোজেন এবং সুস্থায়ী জৈব জ্বালানি ক্ষেত্রে ইতালির সঙ্গে লেটার অফ ইন্টেন্টে স্বাক্ষর করেছে। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী এবং ব্রাজিলের খনি ও শক্তি মন্ত্রী এসএএফ- এর সম্প্রসারণে সুস্থায়ী বিমান জ্বালানির জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
তেল এবং গ্যাস ক্ষেত্র অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, ফলে জাতীয় অর্থনীতির প্রসারে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এবং পরিকাঠামো প্রকল্প প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। ২০২৪ – ২৫ আর্থিক বছরে ৫০ টি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এর সামগ্রিক অর্থমূল্য ৪৫১৯ কোটি টাকা।
জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ভারত সরকার বহুমুখী কৌশল হাতে নিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানী যথাসম্ভব কমিয়ে আনা। সেই লক্ষ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির প্রসার ঘটছে। কম্প্রেসড জৈব গ্যাস, বায়ো ডিজেল এবং ইথানল প্রভৃতির ব্যবহার বৃদ্ধির প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদনও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই মন্ত্রকের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলি স্টার্ট আপ ইন্ডিয়ার অঙ্গ হিসেবে মোট ৫৪৭.৩৫ কোটি টাকার তহবিল গড়ে তুলেছে। বর্তমানে মন্ত্রক ৩০৩ টি স্টার্ট আপকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। হাইড্রো কার্বন ক্ষেত্রে দক্ষতা বিকাশ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মোট ৬ টি শহর ভুবনেশ্বর, ভাইজাক, কোচি, আমেদাবাদ, গুজরাট এবং রায়বেরিলিতে দক্ষতা বিকাশ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত এই সব প্রতিষ্ঠানগুলিতে ৪১ হাজার ৫৪৭ জন প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। পেশাগত দক্ষতা বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রথম সারির কোম্পানির সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি স্থির করা হয়েছে।
SC/AB/SG
(Release ID: 2091044)
Visitor Counter : 15