প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

কার্গিল বিজয় দিবসে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধার্ঘ্য, লাদাখে শ্রদ্ধাঞ্জলি সমারোহে অংশগ্রহণ

Posted On: 26 JUL 2024 11:33AM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি ২৬ জুলাই ২০২৪


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ লাদাখে ২৫ তম কার্গিল বিজয় দিবস  অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে যুদ্ধে জীবন উৎসর্গীকৃত বীর সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি শ্রদ্ধাঞ্জলি সমারোহে অংশগ্রহণ করেন। কার্গিল যুদ্ধ নিয়ে এনসিও-দের গৌরব গাঁথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্মৃতিস্থল: অমর সংস্মরণ পরিদর্শন করেন। এছাড়াও তিনি বীর ভূমিতেও যান।
প্রধানমন্ত্রী আজ ভার্চুয়াল মাধ্যমে লাদাখে সিংকুন লা টানেল প্রকল্প নির্মাণের কাজের শুভারম্ভ প্রত্যক্ষ করেন। সিংকুন লা টালেন প্রকল্পটি ৪.১ কিলোমিটার লম্বা দ্বৈত টিউব টানেল ১৫,৮০০ ফিট উচ্চতায় নিমু-পাদুম-দারচা সড়কে নির্মিত হবে। এটি সারা বছরের আবহাওয়ার উপযুক্ত লেহ্ যাওয়ার পথ তৈরি করে দেবে।
শ্রদ্ধাঞ্জলি সমারোহে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার্গিল বিজয় দিবসে ২৫ তম বার্ষিকী প্রত্যক্ষ করছে লাদাখের গৌরবময় ভূমি। কার্গিল দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় দেশের জন্য আত্মবলিদান চিরস্মরণীয়। তিনি বলেন, মাস, বছর, দশক, শতক অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও দেশের সীমান্ত রক্ষায় যাঁরা আত্মবলিদান করেছেন, তাঁরা দেশবাসীর মনের মণিকোঠায় চির অম্লান হয়ে থাকবেন। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তিশালী বীর যোদ্ধাদের প্রতি দেশ চির ঋণী ও চির কৃতজ্ঞ থাকবে। 
কার্গিল যুদ্ধের দিনগুলিকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেসময় তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর স্পষ্ট স্মরণে আছে অত উচ্চতাতেও আমাদের সৈনিকরা কী অপরিসীম বীর বিক্রমে কঠিন যুদ্ধ চালাচ্ছিলেন। “মাতৃভূমি রক্ষায় দেশের যেসব বীর সন্তানরা সর্বোচ্চ বলিদান দিয়েছেন, তাঁদের আমি কুর্নিশ জানাই” বলেন প্রধানমন্ত্রী। 
তিনি বলেন, কার্গিল যুদ্ধে কেবলমাত্র যুদ্ধ জয়লাভই নয়, তার মধ্যে দিয়ে আমরা সত্য, সংযম এবং শক্তির এক অবিশ্বাস্য উদাহরণ তুলে ধরেছি। ভারত যখন শান্তি রক্ষায় সর্বতো প্রয়াস চালাচ্ছে, সেইসময় পাকিস্তানের প্রবঞ্চনার প্রতি আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্য দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মিথ্যাচার এবং সন্ত্রাস তাদের নতজানু করেছে। 
সন্ত্রাসকে ধিক্কার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতেও বার বার পাকিস্তানকে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে। তা সত্বেও পাকিস্তান অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি এবং সবসময়ই প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকতে সন্ত্রাস এবং ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী জোরের সঙ্গে বলেন, সন্ত্রাসবাদীদের জঘন্য উদ্দেশ্য কখনোই পূর্ণ হবে না। যাবতীয় সন্ত্রাসের প্রয়াসকে আমাদের বীর যোদ্ধারা পরাস্ত্র করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী পুণরায় বলেন, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে উন্নয়নের পথে যাবতীয় বাধা ভারত কাটিয়ে উঠবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, আর কিছুদিনের মধ্যেই ৫ আগষ্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের ৫ বছর পূর্ণ হবে। আজকের জম্মু-কাশ্মীর স্বপ্নদর্শী নতুন ভবিষ্যতের কথা বলছে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অগ্রগতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে জি-২০ বৈঠক এখানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও পর্যটনের প্রসার হচ্ছে, খুলছে সিনেমা হলগুলি এবং সাড়ে তিন দশক পর তাজিয়া শোভাযাত্রা বের হচ্ছে। পৃথিবীর এই স্বর্গ ভূমি দ্রুত শান্তি এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে বলে তিনি জানান।
লাদাখে যেসব উন্নয়নের কাজ হচ্ছে, তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিংকুন লা টানেলের মধ্যে দিয়ে এই কেন্দ্রশাসিত এলাকাটি সারা বছরের জন্য প্রত্যেক মরশুমেই সমগ্র দেশের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টানেলের উন্নয়ন নতুন সম্ভাবনা এবং লাদাখের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দরজা খুলে দেবে এবং লাদাখের জনসাধারণের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এলাকার চরম আবহাওয়ায় মানুষকে যে কষ্টসঙ্কুল জীবন অতিবাহিত করতে হয়, তা আগামীদিনে অনেক লাঘব হবে যাবে বলে তিনি জানান।
লাদাখের জনসাধারণের প্রতি সরকারের অগ্রাধিকারের দিকটির আলোকপাত করেন প্রধানমন্ত্রী। কোভিড অতিমারির সময় ইরান থেকে কার্গিল এলাকার মানুষদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন যাতে সুনিশ্চিত করা যায়, তা তিনি ব্যক্তিগতভাবে তদারকি করেছিলেন বলেও জানান। তিনি বলেন, কার্গিলে তাদের ফেরত পাঠানোর আগে জয়সলমীরে একটি কোয়ারেন্টাইন জোনে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। গত ৫ বছরে লাদাখের জন্য বাজেট বরাদ্দ ৬ গুণ বৃদ্ধি করে ১১০০ কোটি টাকা থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক, বিদ্যুৎ, জল, শিক্ষা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, কর্মসংস্থান প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই লাদাখ রূপান্তর প্রত্যক্ষ করছে এবং এই প্রথম সর্বাত্মক উন্নয়নের প্রয়োগ দেখছে এই এলাকা।
জল জীবন মিশনের আওতায় লাদাখের ৯০ শতাংশ বাড়িতে পরিশ্রুত পাণীয় জল পৌঁছেছে। লাখাখের তরুণ-তরুণীদের উন্নত উচ্চশিক্ষায় সিন্ধু কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। সমগ্র লাদাখ এলাকায় ফোর-জি নেটওয়ার্ট গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়াও ১ নম্বর জাতীয় সড়ক সবসময়ের আবহাওয়ার উপযোগী যোগাযোগ গড়ে তুলতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ জোজিলা টানেলের কাজও এগিয়ে চলেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। নব ভারতের দিশা এবং সক্ষমতাকে ফুটিয়ে তুলতে শিলা টানেল সহ ৩৩০ টিরও বেশি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করেছে সীমান্ত সড়ক সংগঠন। 
সামরিক প্রযুক্তির আধুনিকীকরণে গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতেও প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকীকরণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাতে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যদিও গত ১০ বছরে প্রতিরক্ষা সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যাতে করে আমাদের বাহিনী আরও বেশি সক্ষম ও স্বয়ম্ভর হয়ে উঠতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক সরঞ্জামের বেশিরভাগ অংশই ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি থেকে কেনা হয়। প্রতিরক্ষা গবেষণা উন্নয়ন বাজেটে এক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ সরঞ্জাম কেনার সংস্থান রাখা হয়েছে বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে। তিনি বলেন, এরফলে ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে গেছে এবং ভারত অতীতের সামরিক অস্ত্র আমদানিকারী দেশের তকমা ঘুচিয়ে বর্তমানে সামরিক অস্ত্র রফতানিকারী দেশ হিসেবে নিজেদের সাক্ষর রাখছে। প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জামের আমদানিকে আমাদের বাহিনী বন্ধ করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কারের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিপথ প্রকল্প এরকমই একটি উল্লেখযোগ্য সংস্কারের দিক। বিশ্ব গড় বয়ঃসীমার থেকে ভারতীয় জওয়ানদের বয়ঃসীমা বেশি হওয়ায় দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার দিকটি অতীতে উপেক্ষিত ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিপথ প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে এই বিষয়টির সমাধানের পথে হাঁটা হয়েছে। তিনি বলেন, অগ্নিপথের উদ্দেশ্যই হল আমাদের বাহিনীকে তারুণ্যে ভরপুর এবং সবসময়ের জন্য যুদ্ধ প্রস্তুত করে গড়ে তোলা। বিমান বাহিনীর আধুনিকীকরণের প্রতি অতীতের অনীহার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিপথ প্রকল্প দেশের শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং দেশের সক্ষম যুব সম্প্রদায়কো কাজে লাগাতে পারবে। বেসরকারি ক্ষেত্র এবং আধাসামরিক বাহিনীতে অগ্নিবীরদের যাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তারও ঘোষণা করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। 
পেনশনের বোঝার হাত থেকে রক্ষা পেতে অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে আসা হয়েছে, এই জাতীয় প্রচারকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ যাঁরা সৈনিক হিসেবে নিযুক্ত হচ্ছেন, ৩০ বছর পর তাঁদের পেনশনের প্রশ্ন দেখা দেব। ফলে, এই প্রকল্পকে কোনোভাবেই পেনশনের বোঝার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কারণ হিসেবে দেখা ঠিক নয়। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দেশের সুরক্ষার সঙ্গে যুক্ত। রাজনীতির থেকেও তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যুব সম্প্রদায়কে যারা ভুল পথে চালিত করছেন, অতীতেও তাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি কোনো শ্রদ্ধা ছিল না। অতীতে সরকার এক পদ এক পেনশনের যে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারই এই প্রকল্প রূপায়ণ করেছে এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৭ দশক পরেও যারা একটি যু্দ্ধস্মারক তৈরি করেনি, সীমান্তে মজুত সৈন্যদের জন্য যারা বুলেট প্রুফ জ্যাকেট দেয়নি, কার্গিল বিজয় দিবসকে যারা উপেক্ষা করে গেছেন, এরাই সেই লোক। 
ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার্গিলের জয় কোনো একটি সরকার বা রাজনৈতিক দলের জয় নয়। এই জয় দেশের ঐতিহ্য। এটি দেশের আত্মসম্মান এবং গর্বের উৎসব বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। কার্গিল বিজয়ের ২৫ বছর পূর্তিতে সমগ্র দেশবাসীর পক্ষ থেকে তিনি বীর সেনাদের কুর্নিশ জানিয়েছেন।
লাদাখের লেঃ গভর্ণর ব্রিগেডিয়ার(ডঃ) বি ডি শর্মা, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী শ্রী সঞ্জয় শেঠ, চীফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহ্বান এবং তিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

 

PG/AB/CS



(Release ID: 2037521) Visitor Counter : 16