প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

শ্রীলা প্রভুপাদজি-র ১৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 08 FEB 2024 3:52PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

 

সমবেত ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, আচার্য গৌড়ীয় মিশনের ভক্তিসুন্দর সন্ন্যাসীজি, ক্যাবিনেটে আমার সহকর্মী অর্জুন রাম মেঘওয়ালজি, মীনাক্ষ্মী লেখিজি, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা ভগবান কৃষ্ণের ভক্তবৃন্দ, সমবেত অতিথিবৃন্দ!

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ! আপনাদের উপস্থিতির কল্যাণে ভারত মণ্ডপম আরও মহিমান্বিত হল। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভগবান বাসবেদেশ্বর-র অনুভব মণ্ডপমের ধারণা- যা প্রাচীন ভারতে আধ্যাত্মিক আলাপ-আলোচনার পাশাপাশি জনকল্যাণ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণেরও কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। আজ শ্রীলা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারত মণ্ডপে সেই পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে। আমরা ভারতের আধুনিক শক্তির সঙ্গে সনাতন মূল্যবোধের মেলবন্ধন ঘটাতে চাই। কয়েক মাস আগেই এই মঞ্চে জি২০ শিখর সম্মেলনে নতুন ভারতের সম্ভাবনা ও শক্তি প্রত্যক্ষ করেছে সারা বিশ্ব। আজ এখানে ‘বিশ্ব বৈষ্ণব সম্মেলন’-এর আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত। 

আপনাদের মতো প্রাজ্ঞজনের মধ্যে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। ‘কৃষ্ণম বন্দে জগৎগুরুম’-এর আদর্শ স্মরণ করে আমি ভগবান কৃষ্ণকে প্রণাম জানাই। শ্রদ্ধা জানাই শ্রীলা ভক্তিসিদ্ধান্ত প্রভুপাদজিকে। তাঁর স্মরণে একটি ডাক টিকিট এবং মুদ্রা প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি আমি। 

পূজনীয় ঋষিবৃন্দ, 

এমন এক সময় আমরা প্রভুপাদ গোস্বামীজির ১৫০-তম জন্মবার্ষিক উদযাপন করছি যার কিছুদিন আগে দীর্ঘদিন ধরে লালিত রাম মন্দিরের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এইসব সম্ভব হত না আপনাদের আশীর্বাদ না থাকলে।  
    
বন্ধুরা,

আমরা ভগবান কৃষ্ণের অনন্ত ও স্বর্গীয় লীলার মূল সুরটুকু উপলব্ধি করতে পারি। চৈতন্য মহাপ্রভু কৃষ্ণের মতাদর্শ ছড়িয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে। তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র কঠোর তপস্যা নয়, আনন্দের মাধ্যমেও ভগবানকে পাওয়া যায়। 

আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিই। এক সময় ভজন এবং কীর্তনের পরিমণ্ডলে থেকেও আমি নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করতাম। এর কারণ জিজ্ঞাসা করতাম নিজেকেই। এরপর নিজেই অংশ নিতে শুরু করলাম এইসব পরিবেশনায়। উপলব্ধি করলাম চৈতন্য প্রভুর বাণী। অনেকেই হয়তো ভাবেন, প্রধানমন্ত্রী কেবল হাততালি দিচ্ছেন। আসলে প্রধানমন্ত্রী স্বর্গীয় ভাবাবেগে বিভোর। ভাগবতের বাণীর প্রতিফলন রয়েছে চৈতন্য চরিতামৃত এবং ভক্তমালের মধ্যে। 

বন্ধুরা,

শ্রীলা ভক্তিসিদ্ধান্ত প্রভুপাদের জীবনে চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রতিফলন রয়েছে। তিনি সাধনা থেকে সিদ্ধির অভিমুখে যাত্রা করেছেন বার বার। মাত্র ১০ বছর বয়েসে পুরো গীতা মুখস্থ করেছিলেন তিনি। কৈশোরে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি চর্চা শুরু করেন সংস্কৃত, ব্যাকরণ, বেদ এবং বেদান্তের। জ্যোতির্গণিতে সূর্য সিদ্ধান্তের ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সিদ্ধান্ত সরস্বতী। ২৪ বছর বয়েসে প্রতিষ্ঠা করেন একটি সংস্কৃত বিদ্যালয়ের। সারা জীবনে লিখেছেন ১০০-রও বেশি বই এবং অগণিত প্রবন্ধ। লক্ষ লক্ষ মানুষকে দিশা দেখিয়েছেন তিনি। ‘বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিয়ে, পীড় পড়ায়ে জানে রে’-র মন্ত্রের মাধ্যমে শ্রী প্রভুপাদ স্বামী গান্ধীজির অহিংসা ও সত্যের বাণী প্রচার করেছেন দেশে-বিদেশে। 

বন্ধুরা,

আমি গুজরাটের মানুষ। শ্রী কৃষ্ণ এবং চৈতন্য মহাপ্রভুর মতাদর্শ আমার পাথেয়। ২০১৬-য় গৌড়ীয় মঠের শতবর্ষ উদযাপন সমারোহে আমি আপনাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম। সে সময় ভারতের আধ্যাত্মিক চেতনা নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছিলাম আমি। যখনই কোনো সমাজ নিজের মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন তার শক্তি ও ক্ষমতাও যায় হারিয়ে। ভক্তি মার্গের সঙ্গে যুক্তি এবং আধুনিকতার আসলে কোনো বিরোধ নেই। ভক্তি প্রত্যয়ের বার্তা দেয়, পরাজয়ের নয়। 

কিন্তু বন্ধুরা,

আমাদের লক্ষ্য অন্যদের জয় করা নয়, নিজেদের জয় করা। আমাদের লড়াই সমগ্র মানবতার জন্য- যার বার্তা বার্তা হল ‘ধর্ম ক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে’। ভারত বিস্তারবাদে বিশ্বাসী নয়। এই গভীর দর্শনের সঙ্গে যাঁরা পরিচিত নন, তাঁরা বহু ক্ষেত্রেই মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন। সেই ভ্রম সংশোধন করায় এগিয়ে এসেছেন শ্রীলা প্রভুপাদের মতো মানুষ, যার সুবাদে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে দেশের মানুষ দাসত্বের মনোভাব ঝেড়ে ফেলতে উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন। 

বন্ধুরা,

বস্তুত, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রাণ পেয়েছে ভক্তি মার্গের দর্শন থেকে। এসেছেন স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীলা স্বামী প্রভুপাদ এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, মহামনা মালব্যের মতো দেশের কৃতি সন্তানরা। 

বন্ধুরা,

আজ ভারতের উন্নয়নের গতি সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। আধুনিক পরিকাঠামো, পরিষেবার প্রশ্নে আমরা উন্নত দেশগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম। অনেক ক্ষেত্রে তাদের পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছি আমরা। ভারতের যোগ, আর্য়ুবেদ সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর পিছনে রয়েছে আমাদের যুব শক্তির অবদান। আজ ভারতের যুব সমাজ আধুনিক গবেষণা এবং নিজস্ব সংস্কৃতির যথার্থ মেলবন্ধনে প্রস্তুত হয়ে উঠেছে। 

ভাই ও বোনেরা,

সচেতন এই যুব সমাজের কল্যাণে ভারত একই সঙ্গে চন্দ্রযান অভিযান এবং ‘চন্দ্রশেখর মহাদেব ধাম’-এর সফল বাস্তবায়নে সক্ষম। দেশ জুড়ে ছুটছে বন্দে ভারত ট্রেন। বৃন্দাবন, মথুরা এবং অযোধ্যার মতো স্থানগুলি পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠছে। পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুরে নমামী গঙ্গা প্রকল্পের আওতায় গঙ্গা ঘাট নির্মাণের ঘোষণা করতে পেরে আমি গর্বিত। 

বন্ধুরা,

বিকাশ এবং ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে এই যাত্রায় ভারত আগামী ২৫ বছরে হয়ে উঠবে বিকশিত ভারত- যার মূল মন্ত্র অধ্যাত্ম চেতনার মাধ্যমে বিশ্ব কল্যাণ। হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ! অনেক ধন্যবাদ!

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে।

PG/AC/NS…



(Release ID: 2015710) Visitor Counter : 40