প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নয়া দিল্লির ভারত মন্ডপমে সমবায় ক্ষেত্রের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ১১টি প্যাক্স-এর জন্য বিশ্বের বৃহত্তম এক শস্য ভান্ডার পরিকল্পনার সূচনা করলেন তিনি

সমৃদ্ধ ও বিকশিত ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সমবায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করলেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী

Posted On: 24 FEB 2024 12:21PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪


কৃষকদের ব্যক্তিগত সমস্যা নিরসনে সমবায় সংস্থাগুলি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সমবায় সংস্থাগুলি যেহেতু সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠিত হয়, সেই কারণে যে কোন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার মোকাবিলার উপযুক্ত সম্ভাবনা ও পরিকাঠামো সেগুলির রয়েছে। 

আয় নয়া দিল্লির ভারত মন্ডপমে সমবায় ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রকল্প ও কর্মসূচির উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। 'সমবায় ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম শস্য ভান্ডার পরিকল্পনা' সম্পর্কিত একটি বড় ধরনের প্রকল্পের আজ তিনি উদ্বোধন করেন। দেশের ১১টি রাজ্যের ১১টি প্রাথমিক কৃষি ঋণ সমবায় সংস্থা (প্যাক্স) এই পরিকল্পনার অঙ্গীভূত। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আরও ৫০০টি প্যাক্স-এর তিনি শিলান্যাসও করেন। এর আওতায় গুদামঘর সহ অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। প্যাক্সগুলিকে যুক্ত করা হবে খাদ্য শস্যের যোগান শৃঙ্খলের সঙ্গে। এর লক্ষ্য হল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ প্রচেষ্টাকে উৎসাহ দান। এই কাজে বিশেষ ভাবে সহযোগিতা করবে নাবার্ড। সমগ্র কর্মসূচির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে জাতীয় সমবায় উন্নয়ন নিগম অর্থাৎ এনসিডিসি। কৃষি পরিকাঠামো তহবিল (এআইএফ), কৃষি বিপণন পরিকাঠামো (এএমআই) সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মসূচিগুলিকেও এই উদ্যোগের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। দেশের ১৮,০০০ প্যাক্সকে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত করা সম্পর্কিত একটি প্রকল্পেরও আজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের মূল চিন্তা ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির মূলে রয়েছে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধির এই বিশেষ বার্তাটি। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সমবায়ের শক্তি, ক্ষমতা ও ভূমিকার বিষয়টিও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, কৃষি প্রচেষ্টার মূল ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে তোলার মতো ক্ষমতা রয়েছে সমবায়গুলির। এজন্য একটি পৃথক সমবায় মন্ত্রকও গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম যে শস্য ভান্ডারের পরিকল্পনাটি আজ সমবায়ের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হতে চলেছে, তার আওতায় দেশের প্রতিটি অঞ্চলে হাজার হাজার গুদাম ও মজুত ভান্ডার গড়ে উঠবে। অন্যদিকে, প্যাক্সগুলিকে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত করে তোলার মাধ্যমে কৃষি প্রচেষ্টার মাত্রা এবং কৃষি পদ্ধতির আধুনিকীকরণে এক নতুন দিশা খুঁজে পাওয়া যাবে। 

শ্রী মোদী বলেন, সমবায় আন্দোলন ভারতের একটি প্রাচীন ধারণার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এসম্পর্কিত একটি প্রাচীন পুঁথির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, যে কোন বড় ধরনের কাজ ছোট ছোট সহায়সম্পদকে একত্রিত করে সম্পূর্ণ করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর মতে, আত্মনির্ভর সমাজ গঠনের মূল ভিত্তিই হল সমবায় প্রচেষ্টা। এ শুধু একটি ব্যবস্থা বা পদ্ধতি মাত্র নয়, এ হল একটি বিশ্বাস এবং এক বিশেষ শক্তি। তিনি আরও বলেন, সমবায়ের শক্তি বা ক্ষমতা কখনই নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা সহায়সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। একটি সাধারণ ব্যবস্থাকে শ্রমসাধ্য এবং পদ্ধতিগত এক বিশেত বাতাবরণের মধ্যে নিয়ে আসার ক্ষমতা রয়েছে সমবায় প্রচেষ্টাগুলির, যা গ্রামীণ তথা কৃষি অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। প্রসঙ্গত গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষকদের মধ্যে নিজস্ব উদ্যোগ গড়ে তোলার যে ঝোঁক বা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কৃষক তথা কৃষি উৎপাদকদের সংগঠন এফপিও-গুলিকে একটি পৃথক কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই ধরনের ৮,০০০টি এফপিও বর্তমানে চালু রয়েছে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য হল, দেশজুড়ে এই ধরনের মোট ১০,০০০টি সংগঠন গড়ে তোলা। সমবায় প্রচেষ্টার সুফল এখন পৌঁছে গেছে পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের কাছেও। মৎস্য চাষ ক্ষেত্রে দেশে বর্তমানে কাজ করে চলেছে ২৫,০০০টিরও বেশি সমবায় সংস্থা। ভবিষ্যতে মোট ২ লক্ষ সমবায় সংস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকশিত ভারতের স্বপ্নকে সাকার করে তুলতে হলে কৃষি পদ্ধতির আধুনিকীকরণও একান্ত জরুরি। তিনি বলেন, সমবায় সংস্থাগুলি বর্তমানে গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্রের ভূমিকাও পালন করছে। নানা ধরনের সুযোগ সুবিধার প্রসার ঘটছে এর ফলে। প্রযুক্তির বিকাশ এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচিকে আরও বড় আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কৃষক তথা কৃষিজীবীদের মধ্যে। এই প্রচেষ্টার সুবাদে গ্রামে তরুণ ও যুবকদের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মুক্ত হতে চলেছে। 

বিকশিত ভারত গঠনের যাত্রাপথে সমবায় সংস্থাগুলির গুরুত্বের কথা তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন যে আত্মনির্ভর ভারত গঠন ছাড়া বিকশিত ভারত গঠনের লক্ষ্যে উপনীত হওয়া অসম্ভব। 

প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতি এবং 'অন্নদাতা'দের 'জ্বালানি তথা শক্তিদাতা' রূপে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সমবায়গুলির যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে একথাও আজ তাঁর ভাষণে স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রুফটপ সোলার প্যানেল সংস্থাপন করা যেমন সহজসাধ্য একটি বিষয়, তেমনি কৃষি ক্ষেতের সীমানায় সৌর প্যানেল বসানোও অসম্ভব কিছু নয়। সমবায় প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। এমনকি, গোবর্ধন কর্মসূচি, বায়ো সিএনজি উৎপাদন, সারের উৎপাদন এবং বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরিত করতেও সমবায় উদ্যোগগুলির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিলেট তথা শ্রীঅন্নকে নাগরিকরা যাতে আরও বেশি করে তাঁদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন সেজন্য তাঁদের উৎসাহিত করতে সমবায় সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। 

পল্লী অঞ্চলে আয় ও উপার্জন বৃদ্ধিতে সমবায়গুলির ভূমিকার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুগ্ধ উৎপাদন, মধু সংগ্রহ, মধু রপ্তানি ইত্যাদি কাজেও উৎসাহদাতার ভূমিকা পালন করতে পারে সমবায় সংস্থাগুলি। প্রসঙ্গত নাফেড, ট্রাইফেড এবং অন্যান্য রাজ্য সমবায়গুলির ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

সমবায় প্রচেষ্টায় দেশের নারী ও যুবসমাজের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও অংশগ্রহণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সমবায়ের ভিত্তিতে যদি কৃষকদের শিক্ষিত ও সচেতন করে তোলা যায় তাহলে কৃষি ক্ষেত্রে এক নতুন বাতাবরণ গড়ে উঠবে। সমবায় ক্ষেত্রে দক্ষতা বিকাশ ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্যাক্স এবং অন্যান্য সমবায় সংস্থাগুলির উচিত পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা। এজন্য একটি পোর্টাল গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি। 

দেশের সমবায় সংস্থাগুলিকে সমৃদ্ধির এক বিশেষ ভিত রূপে গড়ে তুলতে সরকারি প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, সমবায় সমিতিগুলির ওপর ধার্য সেস-এর মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে, এই সমিতিগুলির মূলধনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

আজকের এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র তথা সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী শ্রী অর্জুন মুন্ডা এবং কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েল। 

 

PG/SKD/AS



(Release ID: 2008951) Visitor Counter : 59