প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে অত্যাধুনিক বোয়িং ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি সেন্টার ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

দেশের ক্রমবিকাশশীল বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে শিশুকন্যাদের প্রবেশে সহায়তার লক্ষ্যে ‘বোয়িং সুকন্যা কর্মসূচি’র সূচনা

Posted On: 19 JAN 2024 4:30PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে আজ অত্যাধুনিক বোয়িং ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি সেন্টার ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেছেন। ৪৩ একর জায়গা জুড়ে ১,৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ক্যাম্পাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বোয়িং-এর বৃহত্তম বিনিয়োগ। দেশের ক্রমবিকাশশীল বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে শিশুকন্যাদের প্রবেশে সহায়তার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ‘বোয়িং সুকন্যা কর্মসূচি’রও সূচনা করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার ঘুরে দেখেন এবং ‘সুকন্যা’র সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন।

ভারতে বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রের বিকাশের ওপর জোর দেওয়ায় এবং ‘বোয়িং সুকন্যা কর্মসূচি’কে বাস্তবে পরিণত করায় বোয়িং-এর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শ্রীমতী স্টেফানি পোপ, প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শ্রীমতী পোপ বলেন, এই ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্মাণে একসঙ্গে আরও কাজ করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী। বোয়িং-এর নতুন এই ক্যাম্পাস প্রধানমন্ত্রীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর অন্যতম উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘বোয়িং সুকন্যা কর্মসূচি’র ধারণার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই কর্মসূচি ভারতের মেয়েদের সব প্রতিবন্ধকতা অগ্রাহ্য করে বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রকে নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নিতে উৎসাহিত করবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেঙ্গালুরু এমন এক শহর যেখানে আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে উদ্ভাবন ও সাফল্যের মেলবন্ধন ঘটে এবং কারিগরি ক্ষেত্রে ভারতের সম্ভাবনাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেয়। বোয়িং-এর নতুন প্রযুক্তি ক্যাম্পাস এই বিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করে তুলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বোয়িং-এর এই বৃহত্তম ক্যাম্পাস কেবল ভারতকেই নয়, সারা বিশ্বের বিমান পরিবহণের বাজারকে শক্তিশালী করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বমানের কারিগরি-বিদ্যা, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং বিশ্ব বাজারের চাহিদার প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতার উজ্জ্বল উদাহরণ হল এই ক্যাম্পাস। এর মাধ্যমে ভারতের প্রতিভার প্রতি বিশ্বের বিশ্বাস আবারও প্রতিষ্ঠিত হল। এই ক্যাম্পাস থেকে ভারত ভবিষ্যতে একদিন বিমানের নকশা তৈরি করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

গত বছর কর্ণাটকে এশিয়ার বৃহত্তম হেলিকপ্টার উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বোয়িং-এর এই নতুন ক্যাম্পাস আবারও স্পষ্টভাবে বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রের নতুন হাব হিসেবে কর্ণাটককে প্রতিষ্ঠিত করল। ভারতের যুব সম্প্রদায় এখন থেকে বিমান পরিবহণ শিল্পে দক্ষতা অর্জনের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবে। এজন্য তিনি বিশেষভাবে যুব সম্প্রদায়কে অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য তাঁর সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে। ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বকালে মহিলা নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের প্রতি ভারত বিশেষ জোর দিয়েছে। একইভাবে বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রেও মহিলাদের জন্য নতুন নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফাইটার পাইলট হোক বা অসামরিক বিমান পরিবহণ, মহিলা পাইলটদের সংখ্যার নিরিখে ভারত বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে ভারতে বিমান চালকদের ১৫ শতাংশ মহিলা, যা বিশ্ব গড়ের তিনগুণ। ‘বোয়িং সুকন্যা কর্মসূচি’ বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণে উৎসাহ যোগাবে, প্রত্যন্ত এলাকায় থাকা মহিলারাও তাঁদের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন সাকার করতে পারবেন। বিমান চালনাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার জন্য সরকারি স্কুলগুলিকে সঠিক দিশা নির্দেশ দেওয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চন্দ্রযানের ঐতিহাসিক সাফল্য দেশের যুব সমাজের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতার সঞ্চার করেছে। স্টেম শিক্ষার হাব হিসেবে ভারতের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে ছাত্রীরা স্টেম নিয়ে পড়াশোনায় বিপুল আগ্রহ দেখাচ্ছে। ভারত এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিমান পরিবহণ বাজারে পরিণত হয়েছে। এক দশকের মধ্যে দেশীয় উড়ানের যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘উড়ান’-এর মতো প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যাত্রী সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এর ফলে ভারতের আরও বেশি বিমানের প্রয়োজন পড়বে এবং তা বিশ্বের বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রকে উৎসাহ যোগাবে। 

সংযোগ সংক্রান্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে বিনিয়োগের ওপর সরকার বিশেষ জোর দিচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এখন বিশ্বের সবথেকে সুসংযুক্ত বাজারগুলির একটি হয়ে উঠছে। ২০১৪ সালে যেখানে দেশে ৭০টি বিমানবন্দর ছিল, সেখানে এখন এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫০। বিমানবন্দরগুলির দক্ষতাও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিমানে পণ্য পরিবহণের ক্ষমতা বাড়ায় অর্থনীতির সার্বিক বিকাশ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের বিমানবন্দরগুলির ক্ষমতা বাড়ায় বিমান পণ্য পরিবহণ ক্ষেত্রেরও দ্রুত বিকাশ হয়েছে। এর ফলে, দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে খুব সহজে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রের এই বিকাশ যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য সরকার নীতিগত স্তরে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বিমানের জ্বালানি তেলের ওপর কর যাতে কমানো হয় এবং বিমান লিজ দেওয়ার পদ্ধতি যাতে সহজতর হয়, সেজন্য কেন্দ্র রাজ্য সরকারগুলিকে উৎসাহ দিচ্ছে। বিমান লিজ ও অর্থের যোগানের ক্ষেত্রে বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে গিফট সিটিতে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস সেন্টার্স অথরিটি গড়ে তোলা হয়েছে। এর থেকে সারা দেশের বিমান ক্ষেত্র উপকৃত হবে। 

‘ইয়েহি সময় হ্যায়, সহি সময় হ্যায়’ – লালকেল্লা থেকে করা তাঁর এই ঘোষণা ফের স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের দ্রুত বিকাশের সঙ্গে নিজেদের উন্নয়নকে যুক্ত করার জন্য বোয়িং ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কাছেও এটিই সঠিক সময়। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তোলার সঙ্কল্প ১৪০ কোটি ভারতীয় নিয়েছেন। গত ৯ বছরে প্রায় ২৫ কোটি ভারতীয় দারিদ্র্যের করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং কোটি কোটি ভারতীয় এক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সৃষ্টি করছেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। দেশের সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই আয় বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ভারতের পর্যটন ক্ষেত্রের বিকাশের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এই নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার আহ্বান জানান। 

ভারতে বিমান তৈরি করার এক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  এ দেশে এমএসএমই সংস্থাগুলির সুদৃঢ় নেটওয়ার্ক, বিপুল প্রতিভা ও সুস্থিত সরকার রয়েছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে উৎসাহিত করার যে নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গী ভারত নিয়েছে তা প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর কাছেই সুযোগের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ভারতে বোয়িং-এর সম্পূর্ণ ডিজাইন করা বিমান তৈরি করতে আর বেশিদিন অপেক্ষার প্রয়োজন নেই বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভারতের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং বোয়িং-এর সম্প্রসারণ এক শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে।

কর্ণাটকের রাজ্যপাল শ্রী থাওয়ার চাঁদ গেহলট, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সিদ্ধারামাইয়া, বোয়িং-এর সিওও শ্রীমতী স্টেফানি পোপ, বোয়িং ইন্ডিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট শ্রী সলিল গুপ্তে প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

PG/SD/DM



(Release ID: 1998741) Visitor Counter : 68