প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

হিমাচল প্রদেশের লেপচায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দীপাবলি উদযাপনের সময়ে প্রধানমন্ত্রী ভাষণের বাংলা রূপান্তর

Posted On: 12 NOV 2023 4:28PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১২ নভেম্বর, ২০২৩

 

ভারতমাতার জয়! 
ভারতমাতার জয়!

ভারতমাতার জয়ধ্বনির এই প্রতিধ্বনি, ভারতীয় সেনা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর বীরত্বের এই ঘোষণা, এই ঐতিহাসিক ভূমি এবং দীপাবলির এই শুভ উৎসব! এ এক অভাবনীয় সমাপতন। আনন্দে পরিপূর্ণ এই মুহূর্ত আমার, আপনার এবং দেশবাসীর জন্য দীপাবলিতে এক নতুন আলোর বিকিরণ ঘটাবে। দেশের সীমান্তের এই শেষ গ্রাম, যাকে আমি প্রথম গ্রাম বলি, সেখানে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে এই দীপাবলি উদযাপন এক বিশেষ ঘটনা। দীপাবলি উপলক্ষে দেশবাসীকে আমি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

আমার পরিবারের সদস্যরা,

আমি সবেমাত্র লেপচায় এসেছি। এটি অনেক উচ্চতায় অবস্থিত। মনে করা হয় যে উৎসব কেবলমাত্র পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতেই উদযাপন করা যায়। কিন্তু, উৎসবের দিনে পরিবার থেকে দূরে সীমান্তে মোতায়েন হওয়া এক অসাধারণ কর্তব্যবোধের প্রকাশ। তবুও, আপনাদের কারোর মুখে আমি কোনো বিষণ্নতা দেখতে পাচ্ছি না। আপনাদের উৎসাহের মাত্রা একটুও কমেনি, কারণ আপনারা জানেন, ১৪০ কোটি দেশবাসীই আপনাদের পরিবারভুক্ত। তাই, প্রতি দীপাবলিতে আপনাদের মঙ্গলের জন্য প্রতিটি বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানো হয়, প্রতিটি পুজোয় আপনাদের মতো বীরেদের মঙ্গল কামনা করা হয়। প্রত্যেক দীপাবলি আমি উদযাপন করি আমার সশস্ত্র বাহিনীর সেনাদের সঙ্গে। যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী রয়েছে, যেখানে আমার দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর জওয়ানরা মোতায়েন, সেই জায়গা আমার কাছে কোনো মন্দিরের থেকে কম নয়। আপনারা যেখানে থাকেন, সেখানেই আমার উৎসব। আমি যখন প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম না, তখনও আমি ভারতমাতার এক গর্বিত সন্তান হিসেবে দীপাবলি উদযাপন করতে সীমান্তে যেতাম। এই জায়গার নাম ‘সুগার পয়েন্ট’। আপনাদের কাছ থেকে মিষ্টি ভাগ করে খেয়ে আমার দীপাবলি আরও মধুর হয়ে উঠেছে। 

আমার পরিবারের সদস্যরা,

এখানকার মাটির সঙ্গেই বীরত্ব ও সাহসিকতা জড়িয়ে রয়েছে। আমাদের সৈন্যদের মধ্যে এই বীরভূমির উত্তরাধিকার প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের সেনারা বরাবরই প্রমাণ করেছেন যে তাঁরাই সীমান্তে দেশের অটল প্রাচীর। 

আমার বীর বন্ধুরা,

ভারতের সেনা ও প্রতিরক্ষা বাহিনী নিরলসভাবে জাতি গঠনে অবদান রেখে এসেছে। স্বাধীনতার পর আমাদের বীর সেনারা অনেক যুদ্ধ লড়েছেন। তাঁরা আমাদের দেশের হৃদয় জিতে নিয়েছেন।  কঠিনতম পরিস্থিতিতেও আমাদের বীর ছেলে-মেয়েরা বিজয়ী হয়েছে। সুনামির সময় সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত করে এই বীর সন্তানরাই মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। ভারতের সেনারা আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনে যোগ দিয়ে বিশ্বক্ষেত্রে ভারতের সম্মান বাড়িয়েছেন। আমি এ বছর রাষ্ট্রসঙ্ঘে শান্তিরক্ষীদের জন্য একটি স্মারক স্থল নির্মাণের যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর ফলে বিশ্বশান্তি রক্ষায় তাঁদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

বন্ধুরা,

সঙ্কটের সময় আমাদের সেনা ও প্রতিরক্ষা বাহিনী দেবদূতের মতো আবির্ভূত হয়ে শুধু যে ভারতীয়দের উদ্ধার করেছে তাই নয়, বিদেশিদেরও প্রাণ বাঁচিয়েছে। সুদান থেকে ভারতীয়দের যখন নিয়ে আসার দরকার হল, তখন চারিদিকে বিপদ ছিল। কিন্তু, ভারতের বীর সন্তানরা সেই মিশন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। তুরস্কের মানুষ আজও মনে রেখেছেন, মারাত্মক ভূমিকম্পের সময় আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কিভাবে সেখানে গিয়ে তাঁদের নাগরিকদের প্রাণ বাঁচিয়েছিল। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ভারতীয়রা যদি কোনো সমস্যার মধ্যে পড়েন, আমাদের সেনা ও প্রতিরক্ষা বাহিনী সব সময় তাঁদের পাশে ছুটে গেছেন। আমাদের সেনা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়ে আমরা গর্বিত। 

আমার পরিবারের সদস্যরা,

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে ভারতের প্রতি প্রত্যাশা ক্রমশ বাড়ছে। এই সময় দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনারা সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করছেন। যতদিন আপনারা হিমালয়ের মতো সীমান্তে অটল প্রহরায় থাকবেন, ততদিন ভারত সুরক্ষিত থাকবে। গত দীপাবলি থেকে এবারের দীপাবলি - মাঝের এই এক বছর ভারতের অসামান্য সাফল্যের বছর। এক বছরের অমৃতকাল শুরু হয়েছে। এই এক বছরের মধ্যে ভারত চাঁদের তার মহাকাশযান পাঠিয়েছে। তার কয়েকদিনের মধ্যেই ভারত সাফল্যের সঙ্গে ‘আদিত্য এল-১’-এর উৎক্ষেপণ ঘটিয়েছে। আমরা ‘গগনযান’-এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছি। এই একই বছরে ভারতের প্রথম দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত বিমানবাহী রণপোত আইএনএস বিক্রান্ত, ভারতীয় নৌ-বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভারত টুমকুরুতে এশিয়ার বৃহত্তম হেলিকপ্টার নির্মাণের কারখানা শুরু করেছে। এই সময়েই সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলির উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচির সূচনা হয়েছে। খেলাধূলার ক্ষেত্রেও ভারত অসামান্য সাফল্যের নিদর্শন রেখেছে। সেনা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর বহু জওয়ান পদক জিতে আমাদের হৃদয় জয় করেছেন। এশিয়ান এবং প্যারা-গেমস-এ আমাদের খেলোয়াড়রা ১০০-রও বেশি পদক জিতেছেন। আমাদের মেয়েরা অনুর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতেছে। ৪০ বছর পর ভারত আইওসি-র বৈঠকের আয়োজন করেছে। 

বন্ধুরা,

এই এক বছর ভারতীয় গণতন্ত্র ও বিশ্বব্যাপী সাফল্যের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ বছর। এই সময় নতুন সংসদ ভবন নির্মিত হয়েছে। নতুন সংসদ ভবনের প্রথম অধিবেশনে পাশ হয়েছে ‘নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম’। এই বছরেই দিল্লিতে ভারত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সফল আয়োজন করেছে। ভারত এখন রিয়েল টাইম পেমেন্টের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী দেশ হয়ে উঠেছে। ভারতের রপ্তানি ৪০০ বিলিয়ন ডলার পেরিয়ে গেছে। বিশ্ব জিডিপি-র নিরিখে ভারতের স্থান পঞ্চম। ৫জি ব্যবহারকারীদের সংখ্যার ভিত্তিতে আমরা ইউরোপকে পেরিয়ে গিয়েছি।

বন্ধুরা,

গত এক বছর জাতি নির্মাণের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আজ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক নেটওয়ার্কের দেশ। আমরা বিশ্বের দীর্ঘতম রিভার ক্রুজ সার্ভিস চালু করেছি। শুরু হয়েছে দেশের প্রথম র‍্যাপিড রেল পরিষেবা ‘নমো ভারত’। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডরও চালু হয়েছে। দিল্লিতে উদ্বোধন করা হয়েছে বিশ্বমানের দুটি সম্মেলন কেন্দ্র – ‘যশোভূমি’ ও ‘ভারত মণ্ডপম’-এর। ভারতে এখন এশিয়ার মধ্যে সবথেকে বেশি সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কচ্ছের এক সীমান্ত গ্রাম ধরদো রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছ থেকে সেরা পর্যটন গ্রামের শিরোপা পেয়েছে। শান্তিনিকেতন এবং হয়েসালা মন্দির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায়। 

বন্ধুরা,

আপনারা যখন সীমান্তে সতর্ক প্রহরায় নিয়োজিত, তখন দেশ এগিয়ে চলেছে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে। ভারত আজ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছেছে এবং এর সমস্ত কৃতিত্বই আপনাদের ইচ্ছাশক্তি ও ত্যাগের। 

আমার পরিবারের সদস্যরা,

একবিংশ শতাব্দীতে ভারত আজ আত্মনির্ভর হতে চলেছে। এই অমৃতকালের সময় আমাদের সময়। আমাদের স্বপ্ন কেবল স্বপ্ন হয়েই থাকবে না, আমরা সেগুলি পূরণ করব। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত আজ বিশ্বের প্রথম সারিতে উঠে এসেছে। একটা সময় আমাদের সামান্যতম প্রয়োজন পূরণের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী থাকতে হত। কিন্তু, আজ আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিজেরাই তৈরি করি। শুধু তাই নয়, বন্ধু দেশগুলিতে তা রপ্তানিও করি। ২০১৬ সালে এই অঞ্চলে আমি যখন দীপাবলি উদযাপন করতে এসেছিলাম, তখনকার তুলনায় আজ ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি আটগুণেরও বেশি বেড়েছে। আজ ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদনের মূল্য ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। 

বন্ধুরা,

আমরা এমন একটা সময়ের দিকে চলেছি যখন নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে আমাদের আর অন্যের দিকে তাকাতে হবে না। ভারতীয় সেনবাহিনীর আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উন্নতির সময়েও আমি আপনাদের বলব, মানুষের বৌদ্ধিক ক্ষমতাকে প্রযুক্তির ওপরে রাখতে। প্রযুক্তি যাতে কখনও মানুষের সংবেদনশীলতাকে অতিক্রম না করে যায়, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। 

বন্ধুরা,

দেশীয় সম্পদ ও শীর্ষস্তরের সীমান্ত পরিকাঠামো আজ আমাদের শক্তি হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে মহিলারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। গত কয়েক বছরে ৫০০-রও বেশি মহিলা অফিসারকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আজ মহিলা পাইলটরা রাফালের মতো যুদ্ধবিমান ওড়াচ্ছেন। এই প্রথম মহিলাদের যুদ্ধজাহাজে নিয়োগ করা হয়েছে। 

বন্ধুরা,

সরকার আপনাদের এবং আপনাদের পরিবারের সমস্ত চাহিদার দিকে সব সময় খেয়াল রাখছে। এখন সেনাদের জন্য এমন পোশাক তৈরি করা হয়েছে যাতে তাঁরা চূড়ান্ত চরম আবহাওয়াতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আজ দেশে এমন ড্রোন তৈরি হচ্ছে, যা সেনাদের অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠেছে। ‘ওয়ান র‍্যাঙ্ক ওয়ান পেনশন’-এর আওতায় ৯০ হাজার কোটি টাকারও বেশি দেওয়া হয়েছে। 

বন্ধুরা, 

সারা দেশ জানে, আপনাদের প্রতিটি পদক্ষেপই ইতিহাসের দিক নির্ণয় করবে। আপনাদের সমর্থনেই দেশ উন্নয়নের নতুন নতুন শিখর স্পর্শ করবে। সমবেতভাবে আমরা দেশের প্রতিটি উদ্দেশ্য পূরণ করব। এই প্রার্থনার সঙ্গে আমি আরও একবার আপনাদের দীপাবলির আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমার সঙ্গে উচ্চস্বরে বলুন - 

ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!

বন্দে মাতরম,
বন্দে মাতরম,
বন্দে মাতরম,
বন্দে মাতরম,
বন্দে মাতরম,
বন্দে মাতরম,
বন্দে মাতরম,
বন্দে মাতরম,

ভারতমাতার জয়!

আপনাদের সবাইকে আমার দীপাবলির শুভেচ্ছা।

PG/SD/DM



(Release ID: 1982210) Visitor Counter : 62