প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

প্রধানমন্ত্রী ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়া ২০২৩ – এর উদ্বোধন করলেন

১ লক্ষেরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে প্রাথমিক মূলধনী সহায়তা প্রদান

Posted On: 03 NOV 2023 12:55PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৩ নভেম্বর, ২০২৩ 


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লির প্রগতি ময়দানে ভারত মন্ডপম – এ দ্বিতীয় পর্বের বিপুলাকার খাদ্যানুষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়া ২০২৩ – এর উদ্বোধন করলেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলতে ১ লক্ষেরও বেশি সদস্যদের হাতে তিনি প্রাথমিক মূলধনী সহায়তা তুলে দেন। এই উপলক্ষে আয়োজিত প্রদর্শনী প্রধানমন্ত্রী ঘুরে দেখেন। ভারতকে বিশ্বের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে তুলে ধরা এবং ২০২৩ আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ হিসেবে উদযাপন করাই এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য। 
সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির স্টার্টআপ প্যাভিলিয়ন এবং ফুড স্ট্রিট-কে অনুষ্ঠানে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তার প্রশংসা করে বলেন, স্বাদের সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয়ে ভবিষ্যৎ অর্থনীতির পথ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের পরিবর্তিত বিশ্বে খাদ্য সুরক্ষা প্রধান চ্যালেঞ্জের বিষয়। এক্ষেত্রে ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়া ২০২৩ – এর প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন তিনি। 
ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, যা উদীয়মান ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত, ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়া তার এক জাজ্জ্বল্যমান দৃষ্টান্ত বলে প্রধানমন্ত্রী বর্ণনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৯ বছরে সরকারের শিল্প ও কৃষক অভিমুখী নীতির ফলে এই ক্ষেত্রে ৫০ হাজার কোটি টাকা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রে উৎপাদন-ভিত্তিক ভর্তুকির উপর আলোকপাত করে বলেন, এতে শিল্প ক্ষেত্রে নবাগতরা প্রভূত সহায়তা পাচ্ছেন। ফসল উত্তোলন পরবর্তী পরিকাঠামোর জন্য কৃষি পরিকাঠামো তহবিলের অধীন কয়েক হাজার প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ হবে। এর পাশাপাশি, হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে মৎস্যচাষ ও পশুপালনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। 
শ্রী মোদী বলেন, গত ৯ বছরে ভারতের কৃষি রপ্তানীতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের ভাগ ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা রপ্তানীকৃত প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে প্রায় ১৫০ শতাংশ সার্বিক বৃদ্ধি। তিনি জানান, কৃষি উৎপাদনে সার্বিক রপ্তানী মূল্যে ভারতের স্থান সপ্তম, যার মূল্য ৫০ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর ফলে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং স্টার্টআপ ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দরজা খুলে যাচ্ছে। 
সরকারের নিরলস প্রয়াসের ফলেই ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, কৃষি রপ্তানী নীতি দেশে এই প্রথম চালু করা হয়েছে। দেশ জুড়ে লজিস্টিকস্ এবং পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। ১০০-রও বেশি জেলা-ভিত্তিক হাব তৈরি করা হয়েছে। এর দ্বারা বিশ্ব বাজারের সঙ্গে জেলাগুলিকে যুক্ত হচ্ছে। মেগা ফুড পার্কের সংখ্যা ২ থেকে বেড়ে এখন ২০ হয়েছে। ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা ১২ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে ২০ লক্ষ মেট্রিক টনে ছাপিয়ে গেছে। গত ৯ বছরে যা ১৫ গুণ বৃদ্ধি হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টান্ত-স্বরূপ বলেন, কৃষি উৎপাদিত ফসল হিসেবে হিমাচল প্রদেশের কালো রসুন, জম্মু ও কাশ্মীরের ড্রাগন ফল, মধ্যপ্রদেশের সয়াবিন পাউডার, লাদাখের কার্কিডচু আপেল, পাঞ্জাবের ক্যাভেন্ডিস কলা, জম্মুর গুচ্চি মাশরুম, কর্ণাটকের মধু – এই প্রথম রপ্তানী করা হচ্ছে। 
ভারতের দ্রুত নগরায়নের প্রতি আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে, প্যাকেটজাত খাদ্য সামগ্রীর চাহিদা অভূতপূর্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের স্টার্টআপ ক্ষেত্র এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিদের সামনে নতুন স্মভাবনার দরজা খুলে যাচ্ছে। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতি তিনটি মূল স্তম্ভ দ্বারা সূচিত হচ্ছে। এগুলি হ’ল – ক্ষুদ্র কৃষক, ক্ষুদ্র শিল্প এবং মহিলা। কৃষক উৎপাদন সংগঠনগুলিকে সফলভাবে কাজে লাগালে ক্ষুদ্র কৃষকদের মুনাফা লাভে তা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। তিনি জানান, ১০ হাজার নতুন কৃষক উৎপাদন সংগঠন গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে ৭ হাজারটির কাজ ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত ক্ষেত্রে বাজার এবং কৃষকদের সুযোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রে প্রায় ২ লক্ষ ক্ষুদ্র উদ্যোগকে সংগঠিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যাতে ক্ষুদ্র শিল্পের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। ‘এক জেলা, এক পণ্য’ ক্ষুদ্র কৃষক ও ক্ষুদ্র শিল্পকে নতুন পরিচিতি দিচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
ভারতে মহিলা চালিত অগ্রগতির পথের উপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি ক্ষেত্রে মহিলাদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণের ফলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। তিনি বলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিতে আজ দেশে ৯ কোটিরও বেশি মহিলা রয়েছেন। তিনি বলেন, হাজার হাজার বছর ধরে ভারতে খাদ্য বিজ্ঞানে মহিলারাই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। ভারতের নানাবিধ খাদ্য এবং খাদ্য বৈচিত্র্য ভারতীয় মহিলাদের জ্ঞান ও দক্ষতার ফল বলে জানান তিনি। আচার, পাপড়, চিপস্, মোরব্বা প্রভৃতি বাড়িতে তৈরি করে মহিলারা এইসব পণ্যের বাজার তৈরি করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের মহিলাদের সহজাত দক্ষতা রয়েছে। মহিলাদের উপর নির্ভর করে কুটির শিল্প এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রসার ঘটছে। আজকের এই অনুষ্ঠানে ১ লক্ষেরও বেশি মহিলাদের হাতে প্রাথমিক মূলধনী সহায়তা তুলে দেওয়া হ’ল বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। 
শ্রী মোদী বলেন, বিশ্বের খাদ্য শিল্পে অনেক কিছু ভারতীয় খাবারের ঐতিহ্য থেকে শেখা বাকি আছে। তিনি জানান, ভারতের সুস্থায়ী খাদ্য সংস্কৃতি হাজার বছরের উন্নয়নের যাত্রাপথের ফল। তিনি বলেন, প্রাচীনকালে ভারতীয়রা খাদ্যাভাসকে আয়ুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। আয়ুর্বেদে একে বলা হয় ‘রিতা-ভুক’। একে বলা হয়, ঋতু-ভিত্তিক খাদ্যাভাস। এছাড়াও রয়েছে মিত-ভুক, অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস। এগুলি ভারতের বৈজ্ঞানিক চেতনার অন্যতম অঙ্গ। সুস্থায়ী এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের ক্ষেত্রে ভারতের প্রাচীন জ্ঞানের পূর্ণাঙ্গ অনুধাবন এবং রূপায়ণ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রয়োজন বলে জানান তিনি। শ্রী মোদী বলেন, ২০২৩-কে আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। সরকার একে ‘শ্রী অন্ন’ বলে পরিচিতি দিয়েছে। কয়েক শতক ধরে বেশিরভাগ সভ্যতাই বাজরাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রাধান্য দিয়ে থাকলেও গত কয়েক দশকে ভারত সহ বেশিরভাগ দেশে এর প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। এর ফলে, বিশ্ব স্বাস্থ্য এবং সুস্থায়ী চাষবাস, এমনকি সুস্থায়ী উন্নয়নেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ভারতের উদ্যোগে বাজরাকে ঘিরে বিশ্ব জুড়ে এক সচেতনতা প্রচারাভিযান গড়ে উঠেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব যোগ দিবসের মতো বাজরাও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়বে। জি-২০ শিখর সম্মেলনে যোগ দিতে আসা অভ্যাগতদের মোটাদানার শস্যের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, বাজারেও মোটাদানার শস্যের থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বাজারেও পাওয়া যায়। 
প্রধানমন্ত্রী ফসলের অবশিষ্টাংশ যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে খাদ্য ভান্ডারের বৈচিত্র্য গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেন। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ফসলের অবশিষ্টাংশ যথাসম্ভব কমানো সম্ভব। পচনশীল খাদ্য পণ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে অপচয় রোধ করা সম্ভব। এর ফলে, চাষীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনই বাজারে ফসলের দামও স্থিতিশীল থাকবে। কৃষক ও ক্রেতার মধ্যে স্বার্থের ভারসাম্য থাকা উচিৎ। এটি সম্ভব হলে সুস্থায়ী ও বিশ্বের খাদ্য সুরক্ষিত ভবিষ্যতে ভিত্তিপ্রস্তর প্রতিষ্ঠিত হবে। 
কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা, খাদ্য ও গণবন্টন মন্ত্রী শ্রী পীযুষ গোয়েল, কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রী শ্রী পশুপতি কুমার পরশ, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শ্রী গিরিরাজ সিং, কেন্দ্রীয় পশুপালন, দুগ্ধ ও মৎস্যচাষ প্রতিমন্ত্রী শ্রী পুরুষোত্তম রুপালা এবং কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রতিমন্ত্রী শ্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। 

PG/AB/SB


(Release ID: 1978171) Visitor Counter : 136