প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

১০ই আগস্ট, ২০২৩-এ লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর জবাবী ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 10 AUG 2023 11:12PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১০ ই আগস্ট, ২০২৩ 

 


মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,  
গত তিন দিন ধরে অনেক প্রবীণ গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সম্মানিত সদস্যরা তাঁদের মূল্যবান মতামত জানিয়েছেন। প্রায় সকলের ভাবনা আমার কাছে বিস্তারিতভাবে পৌঁছেছে। আমি নিজেও কিছু বক্তৃতা শুনেছি।  
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,, আমাদের সরকারের প্রতি দেশের মানুষ বারবার যে আস্থা প্রকাশ করেছেন, আমি আজ দেশের সেই কোটি কোটি নাগরিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছি। অধ্যক্ষ মহোদয়, বলা হয় যে, ঈশ্বর অত্যন্ত দয়ালু এবং তিনি কারো না কারো মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেন, কাউকে না কাউকে তাঁর মাধ্যম বানান। আমি একে ঈশ্বরের আশীর্বাদ বলে মনে করি যে, তিনি বিরোধীদের পরামর্শ দিয়েছেন এবং তাঁরা প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। ২০১৮ সালেও,  ঈশ্বরের এরকমই আদেশ ছিল, যখন বিরোধী পক্ষ থেকে আমার সহকর্মীরা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। সে সময়ও আমি বলেছিলাম যে অনাস্থা প্রস্তাব আমাদের সরকারের জন্য ফ্লোর টেস্ট নয়, আমি সেদিন বলেছিলাম, বরং এটা তাঁদের জন্য ফ্লোর টেস্ট, এ কথা সেদিনও বলেছিলাম। আর  এটিই বাস্তবে পরিণত হয়েছিল, এরপর যখন ভোট হয়েছিল, তখন যতজন বিরোধী তখন সভায় ছিলেন, সেই সংখ্যক ভোটও সেদিন তাঁরা সংগ্রহ করতে পারেননি। আর শুধু তাই নয়,তারপর আমরা সবাই যখন জনসাধারণের কাছে ভোট চাইতে গিয়েছিলাম, তখন জনতাও পূর্ণ শক্তি দিয়ে তাঁদের প্রতি অনাস্থা ঘোষণা করেছিলেন। আর নির্বাচনে এনডিএও বেশি আসন পেয়েছে এবং বিজেপিও বেশি আসন পেয়েছে। মানে একদিক থেকে দেখতে গেলে বিরোধীদের আনা এহেন অনাস্থা প্রস্তাব আমাদের জন্য শুভ, এবং আমি আজ দেখতে পাচ্ছি যে আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে এনডিএ এবং বিজেপি সমস্ত পুরানো রেকর্ড ভেঙে দেবে এবং জনগণের আশীর্বাদ নিয়ে একটি দুর্দান্ত বিজয় নিয়ে ফিরে আসবে। 
  
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ফলে এখানে তিন দিন ধরে নানা বিষয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। অধিবেশনের শুরু থেকেই বিরোধীরা যদি গুরুত্ব সহকারে সভার কর্মসূচিতে অংশ নিতেন তাহলে আরও ভালো হতো। বিগত কয়েকদিনে, এই লোকসভায়, আমাদের দুটি সভাতেই পাবলিক ট্রাস্ট বিল, মধ্যস্থতা বিল, ডেন্টাল কমিশন বিল, আদিবাসী সংক্রান্ত বিল, ডিজিটাল তথ্য সুরক্ষা বিল, ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন বিল, কোস্টাল অ্যাকোয়া কালচার সংক্রান্ত বিল, এই জাতীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়েছে। কোস্টাল অ্যাকোয়া কালচার সংক্রান্ত বিলটি ছিল আমাদের মৎস্যজীবিদের অধিকারের জন্য, এতে কেরালা সবচাইতে বেশি উপকৃত হবে। কাজেই কেরালার সাংসদদের কাছ থেকে জোর আলোচনার প্রত্যাশা ছিল। কারণ তাঁরা সাধারণতঃ এধরণের বিল নিয়ে আলোচনায় ভালোভাবে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু রাজনীতি তাঁদের ওপর এমনভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছে যে তাঁরা আজ মৎস্যজীবিদের নিয়ে চিন্তিত নন।    
এখানে ন্যাশানাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিলটি দেশের যুবশক্তির আশা-আকাঙ্খা পূরণের একটি নতুন দিকনির্দেশ করছে। ভারত কিভাবে একটি বৈজ্ঞানিক শক্তিতে পরিণত হবে তা নিয়ে দূরদর্শীতার সঙ্গে ভাবনা চিন্তা করা হয়েছে, এতেও আপনাদের আপত্তি! তারপর ডিজিটাল তথ্য সুরক্ষা বিল; এই বিলটিও দেশের বর্তমান যুব সমাজের আশা আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাঁদের ভবিষ্যৎ হবে প্রযুক্তি চালিত । আজ যেহেতু ‘তথ্য’কে দ্বিতীয় তেল হিসাবে, দ্বিতীয় সোনা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তাই এটি নিয়ে একটি নিবিড় আলোচনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আপনারা রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।  এরকম অনেক বিল ছিল, যেগুলো গ্রামের মানুষের স্বার্থে, গরীব মানুষের স্বার্থে, দলিতদের স্বার্থে, পিছিয়ে পড়াদের  স্বার্থে, আদিবাসীদের উন্নয়নের স্বার্থে, তাঁদের কল্যাণ সংক্রান্ত বিল নিয়ে বিতর্কে অংশগ্রহন  করার প্রয়োজন ছিল। এই আলোচনা তাঁদের ভবিষ্যতের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু আপনারা এ ব্যাপারে আগ্রহী নন। যে কাজের জন্য দেশের মানুষ আপনাদের এখানে পাঠিয়েছে, সেই জনগণের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। বিরোধী পক্ষের কয়েকটি দলের প্রতিনিধি তাঁদের আচার-আচরণ ও ব্যবহারে প্রমাণ করেছেন যে তাঁদের কাছে দেশের থেকে দলের স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের চেয়ে দল বড়, দেশের আগে দলের অগ্রাধিকার। আমার মনে হয়,গরীবের ক্ষুধা নিয়ে আপনারা চিন্তিত নন, আপনাদের মনে রয়েছে ক্ষমতার ক্ষিদে। দেশের যুব সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনাদের মনে কোনও চিন্তা নেই। আপনারা আপনাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। 
আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কয়েকদিনের জন্য সভার কাজ চালাতে দিলেন, কীসের উদ্দেশ্যে? আপনারা কি শুধু অনাস্থার প্রস্তাবের স্বার্থে একত্রিত হয়েছেন? আর আপনি কীভাবে নিজেদের কট্টর দুর্নীতিগ্রস্থ বন্ধুদের সঙ্গে তাঁদের শর্তে বাধ্য হয়ে এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করলেন?  তাই আমরা দেখছি যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাদের সমর্থকরাও অত্যন্ত দুঃখিত, এই তো আপনাদের অবস্থা।
আর অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই বিতর্কের মজা দেখুন,  ফিল্ডিং বিরোধীরা আয়োজন করেছিলেন, কিন্তু চার-ছক্কা এদিক থেকেই শুরু হয়েছিল। আর এখন  বিরোধী দলগুলির অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কে  তো শুধু নো বল, নো বল চলছে। এদিক থেকে সেঞ্চুরি হচ্ছে, ওদিক থেকে শুধুই ’নো বল’ হচ্ছে।
অধ্যক্ষ মহোদয়, 

আমি আমাদের বিরোধী দলগুলির সহকর্মীদের বলতে চাই, আপনারা প্রস্তুতি নিয়ে আসেন না কেন? সামান্য পরিশ্রম করুন, আর আমি আপনাদের পরিশ্রম করতে ৫ বছর সময় দিয়েছিলাম, আমি ২০১৮ তে বলেছিলাম যে আপনারা ২০২৩ য়ে অবশ্যই আসবেন, কিন্তু আপনারা ৫ বছরেও পারেননি। কী অবস্থা আপনাদের, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কত পিছিয়ে আপনারা! 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 

আমাদের বিরোধী দলগুলি থেকে আসা সহকর্মীদের মধ্যে শো-অফ করার একটা প্রবণতা থাকে এবং সেটা স্বাভাবিকও। কিন্তু ভুলে যাবেন না যে দেশবাসীও আপনাদের দেখছেন। দেশবাসী আপনাদের প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। কিন্তু প্রতিবারই আপনারা দেশকে হতাশা ছাড়া কিছুই দেননি। আর বিরোধীদের মনোভাব নিয়েও আমি বলব, যাদের নিজেদের হিসাবপত্র ঠিক নেই, যাদের নিজেদের হিসাবে গড়মিল রয়েছে, তাঁরাও আজ আমাদের কাছ থেকে হিসাব চেয়ে ঘুরে বেড়ায়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
,
এই অনাস্থা প্রস্তাবে এমন অদ্ভুত কিছু জিনিস উঠে এসেছে - যা আমরা আগে কখনও শুনিনি, দেখিনি, এমনকি কল্পনাও করিনি। সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের নেতা বক্তার তালিকায় স্থান পাননি। আপনাদের পূর্ববর্তী উদাহরণ দিচ্ছি। ১৯৯৯ সালে, বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আসে। সেই সময় বিপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন শরদ পাওয়ার সাহেব। তিনি বিতর্কের নেতৃত্ব দেন। ২০০৩ সালেও অটলজির সরকার ছিল, সোনিয়াজি বিরোধী দলের নেতা ছিলেন, তিনি বিতর্কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি বিস্তারিতভাবে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। ২০১৮ সালে খাড়গেজি বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। তিনি বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু এবার অধীর বাবুর কী হলো, তাঁর দল তাঁকে কথা বলারই সুযোগ দেয়নি, গতকাল অমিত ভাই অনেক দায়িত্ব নিয়ে বললেন, ভাই ভালো লাগছে না! আর এটা আপনার উদারতা যে তাঁর সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আপনি তাঁকে আজ একবার বলার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু গুড় থেকে কীভাবে গোবর তৈরি করতে হয় সে বিষয়ে তিনি পারদর্শী। আমি জানি না আপনাদের বাধ্যবাধ্যতা কোথায়? অধীরবাবুকে কেন পাশে সরানো হল? আমি জানি না কলকাতা থেকে কোনও ফোন এসেছে কি না, আর বারবার,  কংগ্রেস তাঁকে বারবার অপমান করছে। কখনো নির্বাচনের নামে তাঁকে সাময়িকভাবে ফ্লোর লিডারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়! আমরা অধীর বাবুর প্রতি আমাদের পূর্ণ সমবেদনা জানাই। সুরেশ জি, একটু জোরে হেসে নিন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

যে কোনো দেশের জীবনে, ইতিহাসে এমন একটা সময় আসে, যখন সে দেশের মানুষ পুরনো বিধিনিষেধ ভেঙে নতুন উদ্যমে, নতুন উদ্যমে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন সংকল্প নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নেয়। একবিংশ শতাব্দীর এই কালখণ্ডটি তেমনই একটি সময়, আর আমি এই পবিত্র গণতন্ত্রের মন্দিরে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলছি, এবং দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলছি যে এই কালখণ্ডটি বর্তমান শতাব্দীর সেই সময়, যখন আমাদের কাছ ভারতের প্রতিটি স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ রয়েছে। আর আমরা সবাই এমন মধ্যে রয়েছি, আমি আছি, আপনি আছেন, দেশের কোটি কোটি মানুষ আছেন। এই সকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিবর্তিত বিশ্বে,  এবং আমি এই কথাগুলি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে চাই যে এই সময়ের প্রভাব আগামী ১০০০ বছর ধরে এই দেশে থাকবে। এই সময়ে ১৪০ কোটি দেশবাসী তাঁদের পরাক্রম, প্রচেষ্টা,শক্তি ও সামর্থ দিয়ে যা করবে, তা আগামী হাজার বছরের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করতে চলেছে। আর তাই এই সময়ে আমাদের সবার একটা বড় দায়িত্ব, একটা বড় কর্তব্য এবং আমাদের সবার একটাই অগ্রাধিকার থাকা উচিত, তা হল দেশের উন্নয়ন।
দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণের সংকল্প এবং সেই সংকল্পকে সফলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করা, এটাই সময়ের দাবি। ভারতের ১৪০ কোটি দেশবাসীর এই সম্মিলিত শক্তি আমাদের সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। আজ বিশ্ব আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের সামর্থকে তাঁদের শক্তি হিসাবে বিবেচনা করছে, আসুন তাঁদের ভরসা করি। আমাদের তরুণ প্রজন্মও যে স্বপ্ন দেখছে, দৃঢ় সংকল্প নিয়ে  কাজ করলে তাঁদের সেই স্বপ্ন পূরণ করার ক্ষমতা আছে।
আর তাই, মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
৩০ বছর পর ২০১৪ সালে দেশের জনগণ পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্পন্ন একটি কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করেছিল, আর ২০১৯ সালেও সেই সরকারের ট্র্যাক রেকর্ড দেখেছে, কোথায় তাঁদের স্বপ্ন লালন করার ক্ষমতা, কোথায় তাঁদের সংকল্প পূরণ করার শক্তি, তা খুব ভালভাবে চিনে নিয়েছে। তাই ২০১৯ সালে, আবারও আমরা সবাই দেশসেবা করার সুযোগ পেয়েছি, আর এবার আমরা এই কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে করেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সংসদের অধিবেশনকে সফল করা আমাদের মতো প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব। ভারতের যুবকদের  স্বপ্ন, তাঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাঁরা যে কাজ করতে চায় তা পূরণ করার সুযোগ দেওয়া  আমাদের মতো প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব। সরকারে থাকাকালীন আমরাও এই দায়িত্ব পালনের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আমরা ভারতের তরুণদের কেলেঙ্কারিমুক্ত সরকার দিয়েছি। আমরা ভারতের যুবকদের, আমাদের আজকের পেশাদারদের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করে খোলা আকাশে উড়তে উত্সাহিত করেছি। আমরা বিশ্বে ভারতের লুণ্ঠিত খ্যাতি পুন্রুদ্ধারের চেষ্টা করেছি এবং আবার একে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছি। এখনও কিছু লোক বিশ্বে আমাদের সুনামকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে, কিন্তু বিশ্ব ইতিমধ্যেই আমাদের দেশকে জানতে পেরেছে, ভারত বিশ্বের উন্নয়নে ভবিষ্যতে কীভাবে অবদান রাখতে পারে, তা নিয়ে ভারতের প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা বাড়ছে, আমাদের উপরে ভরসা বাড়ছে।
আর এই সময়ে আমাদের বিরোধী দলের সহকর্মীরা কী করলেন, চারদিকে যখন এমন অনুকূল পরিবেশ, সম্ভাবনা, তখন তাঁরা অনাস্থা প্রস্তাবের আড়ালে জনগণের আস্থা ভাঙার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। আজ, ভারতের যুবকরা রেকর্ড সংখ্যায় নতুন স্টার্টআপ তৈরি করে বিশ্বকে অবাক করে দিচ্ছে। আজ ভারতে রেকর্ড বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। আজ ভারতের রপ্তানি নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছে। আর আজ যাঁরা ভারত সম্পর্কে কোন ভালো কথা শুনতে পারে না... এই হল তাঁদের অবস্থা! আজ গরীব মানুষের হৃদয়ে তাঁদের স্বপ্ন পূরণের বিশ্বাস জেগেছে। বর্তমানে দেশে দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাস পাচ্ছে। নীতি আয়োগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ১৩.৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
আইএমএফ তার একটি  প্রতিবেদনে লিখেছে যে ভারত চরম দারিদ্র্যকে প্রায় দূর করে ফেলেছে। ভারতের প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর এবং অন্যান্য সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পগুলির জন্য, আইএমএফ একে লজিস্টিক মার্বেল বলে অভিহিত করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, জলজীবন মিশনের মাধ্যমে ভারতে চার লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করা হচ্ছে। কারা সেই চার লক্ষ? – তাঁরা হলেন আমার দেশের দরিদ্র, দুর্দশাগ্রস্ত, শোষিত, বঞ্চিত পরিবারের প্রিয় মানুষেরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  এমন চার লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানোর কথা বলছে, যাঁরা আমাদের সমাজের নিম্ন স্তরে জীবন কাটাতে বাধ্য ছিলেন। তাঁদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ফলেও তিন লক্ষ মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারত পরিচ্ছন্ন হল, তিন লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা পেল! এই তিন লক্ষ মানুষ কারা? – যারা বস্তিতে থাকতে বাধ্য, সেজন্য তাঁদের অনেক অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তাঁরা আমার দেশের দরিদ্র পরিবারের মানুষ, শহুরে বস্তিতে বসবাসকারী, গ্রামে বসবাসকারী এবং যুগ যুগ ধরে নানারকম মৌলিক সুবিধাবঞ্চিত অংশের মানুষ, তাদের জীবন রক্ষা পেয়েছে। ইউনিসেফ যা বলেছে- ইউনিসেফ বলেছে যে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ফলে প্রতি বছর প্রত্যেক দরিদ্র পরিবারের বছরে গড়ে ৫০ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। তবে কংগ্রেসসহ কিছু বিরোধী দলের লোকেরা ভারতের এসব সাফল্যে বিশ্বাস করে না। যে সত্য পৃথিবী দূর থেকে দেখছে, এই মানুষেরা এদেশে বসবাস করেও তা দেখতে পান না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
তাদের শিরায় ধ্মনীতে অবিশ্বাস ও অহংকার নিয়ত প্রবাহিত। তারা কখনো জনগণের বিশ্বাসকে অনুভব করে না। এখন এই উটপাখির মতো যাঁদের দৃষ্টিভঙ্গী, তাঁদের জন্য দেশ কী করতে পারে!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

পুরানো চিন্তাধারার মানুষদের সঙ্গে আমি একমত নই। কিন্তু ওরা বলে, দেখ ভাই, শুভ কিছু হলে, বাড়িতে মঙ্গলজনক কিছু হলে, বাড়ির ছেলেমেয়েরাও ভাল জামাকাপড় পরলে, একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলেই কালো টিকা লাগানো হয়। আজ চারিদিকে যেভাবে দেশের মঙ্গল হচ্ছে, সর্বত্র যেরকম প্রশংসা শোনা যাচ্ছে, দেশের জয়জয়কার হচ্ছে, সেই সময়ে কালো টিকার বলে কালো পোশাক পরে লোকসভায় আসার জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।এই কাজটি করে আপনারা এই লোকসভার মঙ্গল করার পক্ষে কাজ করেছেন, সেজন্যেও আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।
 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গত তিন দিন ধরে, আমাদের বিরোধী সহকর্মীরা অভিধান খুলে যত বেশি সম্ভব অপশব্দ বের করে এনেছেন, মন খুলে তাঁদের ভাষণে ব্যবহার করেছেন। তাঁরা এত খারাপ খারাপ শব্দ ব্যবহার করতে পারেন ! এসব তাঁরা কোথা থেকে পান ? জানি না। কিন্তু এখানে এসে সেগুলি উগরে দেওয়ার পর তাঁদের মন নিশ্চয়ই একটু হালকা হয়েছে, সেজন্যেই এত বাজে বাজে কথা বলেছেন। আর এমনিতেও, এই মানুষেরা আমাকে দিনরাত অভিশাপ দেন, এটাই তাদের স্বভাব। আর তাঁদের প্রিয় স্লোগান কী? – মোদি তেরি কবর খুদেগি, (মোদি তোমার কবর খোদাই করা হবে)মোদি তেরি কবর খুদেগি। এটিই তাঁদের প্রিয় স্লোগান। কিন্তু আমার জন্য, তাঁদের  এই গালিগালাজ, এই অগণতান্ত্রিক ভাষা- এগুলিকেও আমি টনিকে রূপান্তরিত করে ফেলি! আর তাঁরা কেন এসব করেন এবং কেন এতো খাপ্পা? আজ আমি হাউসে কিছু গোপন কথা বলতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বিরোধী দলের লোকেরা একটি গোপন বর পেয়েছেন, হ্যাঁ, তাঁরা একটি গোপন বর পেয়েছেন। সেই গোপন বরটি হল, তাঁরা যাঁর বা যাঁদের মন্দ কামনা করবেন, এটা তাঁদের জন্য মঙ্গলজনকই হবে। একটি উদাহরণ তো আপনার সামনেই রয়েছে! প্রায় ২০ বছর ধরে তাঁরা যে আমার অমঙ্গল কামনা করছেন, তাতে আমার অনিষ্ট কিছুই হয়নি, কিন্তু একের পর এক ভাল কিছু হতে থাকে। সেজন্যেই বললাম, তাঁরা একটি গোপন বর পেয়েছেন। আর এই গোপন বরকে আমি আরও তিনটি উদাহরণ দিয়ে প্রমাণ করতে পারি।
আপনারা হয়তো জানেন যে এই লোকেরা দেশের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের জন্য বলেছিলেন – ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রটি ডুবে যাবে, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রটি ধ্বংস হবে, দেশ শেষ হয়ে যাবে, দেশ ধ্বংস হবে, তাঁরা কত কী না বলেছিলেন! আর তাঁরা দেশ-বিদেশ থেকে বড় বড় পণ্ডিতদের নিয়ে আসতেন, তাঁদেরকে দিয়ে বলাতেন, যাতে কেউ তাঁদের বিশ্বাস না করলে, এই মহাপণ্ডিতদের কথা শুনে হয়তো বিশ্বাস করবেন। তাঁরা আমাদের ব্যাঙ্কগুলির স্বাস্থ্য নিয়ে নানা ধরনের হতাশা ও গুজব ছড়ানোর প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করেছেন। আর যখন তাঁরা ব্যাঙ্কগুলির জন্য অমঙ্গল কামনা করেছিলেন তখন কী হয়েছিল, আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলির নিট মুনাফা দ্বিগুণেরও বেশি হয়। এই মানুষেরা একদিন ফোন ব্যাঙ্কিং কেলেঙ্কারি নিয়ে কথা বলেছিলেন - যা দেশকে একটি গুরুতর  অনুতপাদক সম্পদের সংকটে ডুবিয়ে দিয়েছিল।   
আমরা আগেকার সেই নেতিবাচক দিনগুলির কথা বলছি, কিন্তু আজ আমরা তাদের ফেলে আসা অনুতপাদক সম্পদের স্তূপ অতিক্রম করে নতুন শক্তি নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। আর আজ শ্রীমতি নির্মলা জি বিস্তারিত জানিয়েছেন যে কত লাভ হয়েছে! আরেকটি উদাহরণ – হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড বা HAL, এটি একটি সরকারি কোম্পানি, যারা আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলির জন্য হেলিকপ্টার তৈরি করে। বিরোধীরা এইচএএল সম্পর্কে অনেক ভাল-মন্দ কথা বলেছেন, এবং এমন সব ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল যা বিশ্বে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের ভাবমূর্তির অনেক ক্ষতি করেছিল। তবু তাঁরা এইচএএল ধ্বংস, এইচএএল শেষ, ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্প শেষ! - HAL এর জন্য কত কিছু যে বলে গেছেন!
শুধু তাই নয়, আজকাল যেমন ফসলের ক্ষেতে গিয়ে ভিডিও করা হয়, জানেন নিশ্চয়ই?  আজকাল যেমন ফসলের ক্ষেতে গিয়ে ভিডিও করা হয়, তেমনই সেই সময়ে এইচএএল কারখানার গেটে শ্রমিকদের জমায়েত করে একটি ভিডিও শুট করা হয় এবং সেখানে শ্রমিকদের উস্কানি দিতে বলা হয় যে, এখন আপনার কোনও ভবিষ্যৎ নেই, আপনার সন্তানরা না খেয়ে মরবে, এইচএএল ডুবে যাচ্ছে। দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নিয়ে এত বাজে চাওয়া, এত বাজেভাবে অমঙ্গলকামনা! তাতে এইচএএল-এরও অনিষ্ট কিছুই হয়নি। সেজন্যেই বললাম, তাঁরা একটি গোপন বর পেয়েছেন। সেই বরে আজ এইচএএল সাফল্যের নতুন উচ্চতায়। এইচএএল ইতিমধ্যেই তার সর্বোচ্চ রাজস্ব নিবন্ধিত করেছে। এইচএএল আজ দেশের গর্ব হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, তাঁদের গুরুতর সব অভিযোগ এবং সেখানকার শ্রমিক-কর্মচারীদের উস্কে দেওয়ার নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও।
  
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 

তাঁরা যাঁদের অমঙ্গল কামনা করেন, তাঁরা কিভাবে এগিয়ে যান তার তৃতীয় উদাহরণ দিচ্ছি। আপনি জানেন লাইফ ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন বা এল আই সি নিয়ে কী কী বলা হয়েছিল! এলআইসি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, গরিবের টাকা ডুবে যাচ্ছে, গরীব কোথায় যাবে, বেচারা অনেক চেষ্টা করে এলআইসিতে টাকা রেখেছিল, কী হবে, কী হবে - যতটা তাঁর কল্পনা শক্তি, যত কাগজ তাঁর জনপ্রতিনিধি ধরিয়েছে, যেভাবে ব্যবহার করেছে নেতিবাচক সবকিছু বলার জন্য!  কিন্তু আজ এলআইসি ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। যারা শেয়ার মার্কেটে আগ্রহী তাঁদেরও এই গুরু মন্ত্র আছে যে সরকারি কোম্পানির লোকেরা আপনাকে গালি দেয়, আপনি বাজি ধরুন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এসব মানুষ দেশের যেসব প্রতিষ্ঠানের মৃত্যু ঘোষণা করেন,  প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য অবশ্যই উজ্জ্বল হয়। আর আমি বিশ্বাস করি যে, আজ তাঁরা যেভাবে দেশকে অভিশাপ দিচ্ছেন, যেভাবে গণতন্ত্রকে অভিশাপ দিচ্ছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশ আরও শক্তিশালী হতে চলেছে, গণতন্ত্রও শক্তিশালী হতে চলেছে, এবং আমরাও তেমনই মজবুত হয়ে উঠতে চলেছি।

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এরা তেমন মানুষ যাঁরা দেশের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করে না। এই মানুষেরা দেশবাসীর পরিশ্রমে বিশ্বাস করেন না, দেশের শক্তিতে বিশ্বাস করেন না। কয়েকদিন আগে আমি বলেছিলাম যে আমাদের সরকারের পরবর্তী মেয়াদে, তৃতীয় মেয়াদে, ভারত বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

এখন দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যদি সামান্যতম ভরসা থাকতো, তাহলে আমরা যখন দাবি করছি যে, আগামী পাঁচ বছরে অর্থাৎ তৃতীয় মেয়াদে দেশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত করবো, তখন দায়িত্বশীল বিরোধী দলের কী করা উচিত? - তাঁদের প্রশ্ন করা উচিত, আচ্ছা নির্মলা জী, আমাদের বলুন কিভাবে আপনি এটা করতে যাচ্ছেন! আচ্ছা মোদীজি আমাকে বলুন - আপনি এটি কিভাবে করতে যাচ্ছেন, আপনার রোডম্যাপ কী? দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যদি সামান্যতম চিন্তা থাকতো, তাহলে তাঁরা তাই করতেন। এখন আমাকে এটাও শেখাতে হবে! কিংবা তাঁরা কিছু পরামর্শ দিতে পারতেন! নাহলে বলতেন, আমরা নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে গিয়ে বলব যে তাঁরা তৃতীয় বৃহত্তম হওয়ার কথা বলছেন, আমরা দেশকে এক নম্বরে নিয়ে যাবো, এবং এসব এইভাবে করবো!  কিন্তু এটা আমাদের বিরোধীদের ট্র্যাজেডি এবং তাঁদের রাজনৈতিক বক্তৃতা শুনুন। কংগ্রেসের লোকেরা কী কী বলছেন! এখন দেখুন তাদের কল্পনাশক্তি কতটা দুর্বল। এত বছর ক্ষমতায় থাকার পরও তাঁদের মুখে কী অবর্ণনীয় সব কথা শোনা যাচ্ছে !
তারা কী বলেন? তাঁরা বলেন যে এই লক্ষ্যে পৌঁছতে কিছু করার দরকার নেই, এমনিই আমাদের দেশ তিন নম্বরে পৌঁছে যাবে! আমাকে বলুন, আমার মনে হয় এই ভাবনার কারণেই  তাঁরা এত বছর ধরে ঘুমিয়েছিলেন যে এসব আপনাআপনি হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা আজ  বলছেন যে, তাঁরা কিছু না করেই তৃতীয় স্থানে পৌঁছে যাবেন। আর কংগ্রেসকে যদি বিশ্বাস করেন, যদি সবকিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটতে থাকে, তার মানে কংগ্রেসের কোনো নীতি নেই, কোনো সংকল্প নেই, কোনো দৃষ্টি নেই, বিশ্ব অর্থনীতির কোনো জ্ঞান নেই, আর ভারতের অর্থনীতির শক্তি  সম্পর্কেও তাঁরা অবহিত নন। আর সেজন্যেই তাঁরা ভাবছেন যে ঘুমিয়ে থাকলেও এই সাফল্য আসবে, আসবে। এক্ষেত্রে তাঁদেরকে কী বলবো!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 

এই কারণেই কংগ্রেসের শাসনকালে দারিদ্র্য বাড়তে থাকে। ১৯৯১ সালে তো দেশে চরম দারিদ্র্য  ছিল। কংগ্রেসের শাসনকালে বিশ্বের ক্রমানুসারে ভারতের মতো এত বড় দেশের অর্থনীতি প্রায়ই দশ, এগারো, বারো-র মাঝামাঝি ঢলে পড়ত। কিন্তু ২০১৪ সালের পর ভারত ক্রমে সেরা পাঁচে জায়গা করে নেয়। কংগ্রেসের লোকেরা হয়তো  ভাবছেন, কোনও জাদুকাঠির স্পর্শে এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আমি আজ সংসদকে বলতে চাই, মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, রিফর্ম, পারফর্ম এবং ট্রান্সফর্ম, অর্থাৎ সংস্কার, বাস্তবায়ন এবং রূপান্তর; একটি নিবিড় ব্যবস্থাপনা, সঠিক পরিকল্পনা এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলে দেশ আজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর এই পরিকল্পনা ও পরিশ্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজন অনুযায়ী এতে নতুন সংস্কার করা হবে, বাস্তবায়নের জন্য দক্ষতা ও পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করা হবে এবং এর ফলে আমরা তিন নম্বরে পৌঁছানোর দিকে এগিয়ে যেতে থাকব, এবং একদিন অবশ্যই পৌঁছুব। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

কথায় কথায় আমাদের প্রতি দেশবাসীর বিশ্বাসের কথাও প্রকাশ করতে চাই। আমাদের দেশবাসীর বিশ্বাস আছে যে, ২০২৮ সালে যখন আপনারা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসবেন, ততদিনে এই দেশ বিশ্ব অর্থনীতির নিরিখে প্রথম তিনে থাকবে, এটাই দেশের বিশ্বাস।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

অবিশ্বাস আমাদের বিরোধী বন্ধুদের স্বভাবেই আছে। আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ডাক দিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা সবসময় অবিশ্বাস প্রকাশ করতেন। কিভাবে এটা সম্ভব? গান্ধীজীও তো দেশবাসীর প্রতি পরিচ্ছন্নতার আহ্বান জানিয়েছিলেন, বাস্তবে কী হয়েছে? এখন কিভাবে পরিচ্ছন্নতা আসবে? তাঁদের ভাবনা-চিন্তা ছিল অবিশ্বাসে পরিপূর্ণ। আমরা দেশের মা - বোন মেয়েদের উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করার বাধ্যতা থেকে মুক্ত করতে প্রত্যেক বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলাম! তারপর তাঁরা বলেন, লাল কেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে কি এমন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলা যায়? এটাই কি দেশের অগ্রাধিকার? এমনকি যখন আমরা জন-ধন অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলেছিলাম, তখনও তাঁদের বক্তব্যে আমরা একই হতাশা প্রত্যক্ষ করেছি। জন ধন অ্যাকাউন্ট কী? তাঁদের হাতে টাকা কোথায়? তাঁদের পকেটে কি টাকা আছে? তাঁরা কী নিয়ে আসবেন, কী করবেন? আমরা যখন যোগের কথা বলেছি, আমরা যখন আয়ুর্বেদের কথা বলেছি, যখন আমরা এগুলি নিয়ে প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলেছি, তখনও তাঁরা হাসিঠাট্টা করেছেন। আমরা যখন স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি, তখনও তাঁরা এর সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। স্টার্ট আপ তো কেউ করতেই পারে না! অথচ স্টার্ট আপ ইন্ডিয়ায় দেশ আজ এগিয়ে। আমরা যখন ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে কথা বলি, তখন বিশিষ্ট পণ্ডিতরা কেমন নেতিবাচক বক্তৃতা দিয়েছিলেন – তা নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে! ভারতের মানুষ অশিক্ষিত, ভারতের গরিব মানুষ তো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেও জানে না। ভারতের মানুষ ডিজিটাল কেমন করে হবে? অথচ ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রেও দেশ আজ এগিয়ে। আমরা মেক ইন ইন্ডিয়া নিয়ে কথা বলেছি। তাঁরা যেখানেই গেছেন মেক ইন ইন্ডিয়া নিয়ে মজা করেছেন। তাঁরা যেখানেই মুখ খুলেছেন মেক ইন ইন্ডিয়া নিয়ে মজা করেছেন। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

কংগ্রেস দল এবং তাঁদের বন্ধুদের ইতিহাস রয়েছে যে তাঁরা কখনই ভারতের জনগণের উপর ভরসা করেনি, ভারতের সামর্থ্যে বিশ্বাস করেনি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তবে তাঁরা কাদের উপর বিশ্বাস করেছিলেন? আমি শুধু আজ হাউসকে মনে করিয়ে দিতে চাই। পাকিস্তান নিয়মিত সীমান্তে হামলা চালাতো। প্রায়ই তারা আমাদের দেশে সন্ত্রাসবাদী পাঠাত, আর তারপর পাকিস্তান হাত তুলে অস্বীকার করতো, - আমাদের কোনো দায় নেই! কেউ দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত ছিল না। আর আমাদের শাসকদের মনে পাকিস্তানের প্রতি এত ভালোবাসা ছিল যে, তাঁরা পাকিস্তানের কথাই অবিলম্বে বিশ্বাস করতেন। পাকিস্তান বলতো যে, আতঙ্কবাদী হামলা চলতেই থাকবে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও চলবে। তাঁরা পাকিস্তানকে বিশ্বাস করতেন। এমনই ছিল তাঁদের ভাবনাচিন্তা। সন্ত্রাসবাদের আগুনে দিনরাত পুড়ছিল কাশ্মীর। কিন্তু কংগ্রেস সরকার কাশ্মীর ও কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকদের বিশ্বাস করেনি। তাঁরা হুরিয়াতকে বিশ্বাস করতেন, তাঁরা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিশ্বাস করতেন, তাঁরা বিশ্বাস করতেন পাকিস্তানের পতাকা বহনকারী লোকেদের। আমাদের শাসনকালে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে। পাকিস্তানের চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের জবাবে ভারত যখন বিমান হামলা করেছে, সগর্বে এর কথা জনগণকে জানিয়েছে,তখন কংগ্রেস নেতারা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করেনি।  পাকিস্তানের দাবিতে, শত্রুদের দাবিতে তাঁদের আস্থা ছিল। এই তো ছিল তাঁদের প্রবণতা।
 
অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ বিশ্বের কেউ যদি ভারত সম্পর্কে খারাপ কথা বলে, তাঁরা তাঁদেরকে অবিলম্বে বিশ্বাস করেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বক্তব্যকে কপি করেন। তাঁদের এমন একটা চৌম্বক ক্ষমতা আছে যে তাঁরা ভারতের বিরুদ্ধে সব কিছু অবিলম্বে ধরে ফেলেন। যেমন কিছু বিদেশী সংস্থা বলে যে, ক্ষুধার মুখে থাকা অনেক দেশের মানুষ ভারতের থেকে ভালো আছে! - কেউ এমন মিথ্যা কথা বললেও তাঁরা তা ধরে ফেলেন এবং ভারতে তা প্রচার করতে শুরু করেন। একটা প্রেস কনফারেন্স করে তা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান। ভারতকে বদনাম করার মধ্যে কত মজা! কংগ্রেসের স্বভাবই হল বিশ্বের এমন সব উদ্দেশ্যমূলক অযৌক্তিক প্রচারকে গুরুত্ব দেওয়া এবং অবিলম্বে ভারতে তা প্রচার করার জন্য সবরকম চেষ্টা করা। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সময় ভারতীয় বিজ্ঞানীরা যখন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিষেধক টিকা তৈরি করেন, তখন তাঁরা ভারতের টিকাকে বিশ্বাস করেননি, তাঁরা বিদেশী টিকাকে ভরসা ও বিশ্বাস করার কথা ভাবছিলেন।

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

দেশের কোটি কোটি নাগরিক ভারতে তৈরি টিকার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা ভারতের সামর্থ্যে বিশ্বাস করেন না। ভারতের জনগণের প্রতি তাঁদের আস্থা নেই। কিন্তু আমি এই সদনকে বলতে চাই, এর ফলে এদেশের মানুষের মনেও কংগ্রেসের প্রতি অনাস্থার অনুভূতি ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। কংগ্রেস নিজস্ব অহংকারে এতটাই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, এতটাই ভরে গেছে যে তাঁরা মাটি দেখতে পাচ্ছেন না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের অনেক জায়গায় কংগ্রেসের জয় পেতে কয়েক দশক লেগেছে। তামিলনাড়ুতে শেষবার কংগ্রেস জিতেছিল ১৯৬২ সালে। তামিলনাড়ুর মানুষ ৬১ বছর ধরে বলে আসছেন, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স! তামিলনাড়ুর মানুষ বলছেন, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স! তাঁরা শেষবার পশ্চিমবঙ্গে জিতেছেন ১৯৭২ সালে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ৫১ বছর ধরে বলে আসছেন, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স! উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং গুজরাটে কংগ্রেস শেষবার জিতেছিল ১৯৮৫ সালে, গত ৩৮ বছর ধরে সেসব রাজ্যের মানুষ কংগ্রেসে অনাস্থা জানিয়ে আসছেন, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স! শেষবার তাঁরা ত্রিপুরায় জিতেছিলেন ১৯৮৮ সালে, ৩৫ বছর ধরে ত্রিপুরার মানুষ কংগ্রেসে অনাস্থা দেখিয়ে বলছেন, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স। ওড়িশায়, শেষবার কংগ্রেস ১৯৯৫ সালে জয়লাভ করেছিল, তার মানে ওড়িশাতেও, কংগ্রেস ২৮ বছর ধরে একই উত্তর পেয়ে আসছে, ওড়িশা বলছে,  অনাস্থা, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স!

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
নাগাল্যান্ডে কংগ্রেসের শেষ জয় ১৯৮৮ সালে। সেখানকার মানুষও ২৫ বছর ধরে কংগ্রেসকে অনাস্থা জানিয়ে আসছেন। দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তাঁদের একজন বিধায়কও নেই। জনসাধারণ বারবার কংগ্রেসের প্রতি অনাস্থা ঘোষণা করেছে।কংগ্রেস নো কনফিডেন্স, কংগ্রেস নো কনফিডেন্স!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ, এই উপলক্ষে, আমি আপনাকে একটি কাজের কথা বলব। আমি বিরোধীদের ভালোর জন্য বলছি। নাহলে তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, তাঁরা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। তাঁদের ভালোর জন্যই একথা বলছি। আজ, এই উপলক্ষে, আমি আমার বিরোধী সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনাও জানাতে চাই। মাত্র কয়েকদিন আগে বেঙ্গালুরুতে তাঁরা একসঙ্গে প্রায় দেড় থেকে দুই দশকের পুরনো ইউপিএ-র কর্মসূচি পালন করেছেন। অন্যভাবে বলা যায় যে তাঁরা সেখানে ইউপিএ – র অন্তিম সংস্কার করেছেন। গণতান্ত্রিক আচরণ অনুযায়ী তখনই তাঁদের প্রতি আমার সহানুভূতি প্রকাশ করা উচিত ছিল। সমবেদনা জানানো উচিত ছিল। কিন্তু এই বিলম্বের জন্য আমি দায়ী নই, কারণ একদিকে তাঁরা নিজেরাই ইউপিএ – র অন্তিম সংস্কার করেছেন। অন্যদিকে তাঁরা পুনর্মিলন  উদযাপন করেছেন, ধ্বংসস্তূপের উপর নতুন প্লাস্টারের প্রলেপ দিয়ে উদযাপন করে কী লাভ? তাঁরা পুরনো মেশিনে নতুন রঙের প্রলেপ উদযাপন করেছেন. কয়েক দশক পুরনো ঝরঝরে গাড়িটিকে বৈদ্যুতিক গাড়ি হিসেবে তুলে ধরার জন্য এত বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন, আর মজার ব্যাপার হল সেই সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই এর কৃতিত্ব নিতে নিজেদের মধ্যে কোন্দল শুরু করেছেন। তাঁরা এই জোট নিয়ে জনগণের মধ্যে যাবেন ভেবে আমি অবাক হয়েছি! বিরোধী দলের বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা যাকে অনুসরণ করছেন, তিনি তো এদেশের তরুণ-তরুণীদের আশা আকাঙ্ক্ষা ও দেশের মূল্যবোধ সম্পর্কেই অবগত নন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই মানুষেরাগুলো কাচালঙ্কা আর শুকনো লঙ্কার মধ্যে  পার্থক্য বুঝতে পারেননি। কিন্তু আমি তাঁদের মধ্যে অনেক বন্ধুকে জানি, তাঁরা কিন্তু খুব ভালভাবেই ভারতীয় মনকে চেনেন, তাঁরা ভারতের জনগণের মেজাজকে অনুভব করতে পারেন। ছদ্মবেশ ধারণ করে যাঁরা প্রতারণার চেষ্টা করেন, তাঁদের বাস্তবতাও সহজেই বুঝতে পারেন। যাঁরা কাছে শুধু নামের মাহাত্ম বেশি, তাঁদের জন্যই বলা হয়েছে,যুদ্ধ থেকে পালানো, ‘ 
‘যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যাওয়া 
সৈন্যের নাম রণধীর,
ভাগ্যচাঁদের আজ পর্যন্ত,
ঘুমিয়ে আছে তকদির(ভাগ্য)’

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

তাদের সমস্যা এমন যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এনডিএ-রই শরণ নিতে হয়। কিন্তু অভিমানের অভ্যাস অনুযায়ী ‘আই’ বা ‘আমি’ বা অহং তাঁদের ছাড়ে না। আর সেজন্যই এনডিএ-তে দুটি ‘আই’ ঢুকিয়ে দিয়েছেন। অহংকারের  দুটো ‘আই’ দুদিকে দিয়ে মালা গেঁথেছেন। প্রথম ‘আই’টি ছাব্বিশটি দলের অহংকারের এবং দ্বিতীয় ‘আই’টি একটি পরিবারের অহংকার। এনডিএ অক্ষর গুলিও চুরি করেছেন, আবার নিজেদের বাঁচাতে ভারতকে ‘ফুলস্টপ’ দিয়ে টুকরো টুকরো করে দিয়ে লিখেছেন – আই. এন. ডি. আই. এ. (I.N.D.I.A.)
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একটু আমাদের ডিএমকে-র ভাইদের বলতে চাই, একটু কংগ্রেসের জনপ্রতিনিধিদেরকেও বলতে চাই। মাননীয় অধ্যক্ষ, পুরনো ইউপিএ-র সদস্যরা মনে করেন যে দেশের নাম ব্যবহার করে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু কংগ্রেসের অটুট অংশীদার, কংগ্রেসের মিত্র তামিলনাড়ু সরকারের একজন মন্ত্রী দু’দিন আগে এই কথা বলেছেন, তামিলনাড়ু সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন I.N.D.I.A. তাঁদের জন্য কোনও মানে রাখে না. I.N.D.I.A. এটা তাঁদের কাছে বিশেষ কিছু নয়। তাঁর মতে, তামিলনাড়ু তো ভারতের মধ্যেই নেই!  
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ আমি গর্বের সাথে বলতে চাই যে তামিলনাড়ু এমন একটি রাজ্য যেখান থেকে সর্বদা দেশপ্রেমের স্রোত উঠে এসেছে। যে রাজ্য আমাদের উপহার দিয়েছে রাজাজিকে, যে রাজ্য আমাদের উপহার দিয়েছে কামরাজজিকে,  যে রাজ্য আমাদের দিয়েছে এনটিআরজিকে, যে রাজ্য আমাদের দিয়েছে এপিজে আবদুল কালামজিকে। আজ সেই তামিলনাড়ু থেকে এহেন বিচ্ছিন্নতাবাদী আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যখন তাঁদের জোটের মধ্যে এমন লোক থাকবে, যারা তাঁদের দেশের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করছে, তখন তাঁদের গাড়ি কোথায় গিয়ে থামবে, তাঁরা যদি সামান্য আত্ম- চিন্তন করার সুযোগ পান এবং তাঁদের  আত্মার যদি অবশিষ্ট কিছু থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা  করবেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
নাম নিয়ে তাঁদের একটি চশমা শুধু আজকের নয়, নামের প্রতি তাঁদের যে মুগ্ধতা রয়েছে তা শুধুই আজকের নয়। এটি কয়েক দশকের পুরনো চশমা। তাঁরা মনে করেন যে নাম পরিবর্তন করে তাঁরা দেশ শাসন করতে পারবেন। দেশের বেচারা গরিব মানুষ চারিদিকে তাঁদের নাম দেখতে পায়, কিন্তু তাঁদের কাজ কোথাও দেখা যায় না। হাসপাতালে তাঁদের নাম রয়েছে, কিন্তু চিকিৎসা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁদের নাম ঝুলছে, রাস্তা থেকে শুরু করে পার্ক ও দরিদ্র কল্যাণ প্রকল্পে তাঁদের নাম, ক্রীড়া পুরস্কারে তাঁদের নাম, বিমানবন্দরে তাঁদের নাম, জাদুঘরে তাঁদের নাম, তাঁদের নামে অসংখ্য প্রকল্প শুরু করা হয়েছে এবং তারপর সেসব প্রকল্পে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সমাজের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা তাঁদের উন্নয়নের কাজ দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা যা পেয়েছেন তা শুধু এবং শুধুমাত্রই পরিবারের নাম।
অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেসের পরিচয় নিয়ে যা যা দাবী করা হয় আসলে কোনও কিছুই তাঁদের নিজস্ব নয়। কিছুই তাঁদের নিজস্ব নয়। নির্বাচনী প্রতীক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দর্শন, কংগ্রেস যা যা নিজেদের বলে দাবি করে - সবই অন্য কারও কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে! 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
নিজেদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ঢাকতে এমনকি নির্বাচনী প্রতীক ও রাজনৈতিক দর্শন চুরি করেন, তারপরও যে পরিবর্তন হয়েছে তাতে দলের অহংকারই প্রকট হয়ে ওঠে। এটাও প্রকট হয় যে ২০১৪ সাল থেকে তাঁরা কীভাবে অস্বীকারের মোডে রয়েছেন। তাঁদের দলের প্রতিষ্ঠাতা কে? এ. ও. হিউম ছিলেন একজন বিদেশী যিনি দলটি গঠন করেছিলেন। আপনি জানেন যে ১৯২০ সালে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম একটি নতুন প্রাণশক্তি পেয়েছিল। ১৯২০ সালেই দেশ একটি নতুন পতাকা পায় এবং দেশ সেই পতাকাটি গ্রহণ করে। তারপর রাতারাতি সেই পতাকার শক্তি দেখে, কংগ্রেস সেটি ছিনিয়ে নেয়। আর প্রতীক ? এই খেলাটি ১৯২০ সাল থেকে চলছে। হ্যাঁ মহোদয়, তাঁরা ভেবেছিলেন যে দেশের মানুষ যখন তেরঙ্গা পতাকা দেখবেন তখন তাঁরা ভাববেন যে শুধু তাঁদের কথাই বলছেন। তাঁরা এই খেলা খেলেছেন। ভোটারদের মোহগ্রস্ত করতে গান্ধীর নামও ব্যবহার করা হয়। কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক দেখুন, প্রথমে দুটি বলদ, তারপর একটি গরু একটি বাছুর আর তারপর একটি হাতের থাবা! দেখুন, এই সমস্ত কীর্তি তাঁদের প্রত্যেক ধরণের মনোভাবকে প্রতিফলিত করে, উন্মোচিত করে এবং এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে ইতিমধ্যেই সবকিছু একটি পরিবারের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই I.N.D.I.A. কোনও জোট নয়, এই I.N.D.I.A.জোট নয়, একটি অহংকারী জোট। আর তাঁদের বরযাত্রী হিসেবে যাবার সময় প্রত্যেকেই বর হতে চান। সবাই প্রধানমন্ত্রী হ’তে চান। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,  
এই জোট এটাও ভেবেও দেখেনি যে কোন রাজ্যে তাঁরা কাকে নিয়ে কোথায় পৌঁছেছেন? পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস টিএমসি এবং কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে, আর দিল্লিতে একসঙ্গে আছেন। আর অধীর বাবু, ১৯৯১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে এই একই কমিউনিস্ট পার্টি  আপনার সঙ্গে কী আচরণ করেছিল তা আজও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। ঠিক আছে, ১৯৯১ সালের ব্যাপারটা এখন পুরোনো হয়ে গেছে, কিন্তু যাঁরা গত বছর কেরালার ওয়েনাডে কংগ্রেস অফিস ভাংচুর করেছিল, কংগ্রেসিরা এখন তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছেন। তাঁরা বাইরে থেকে নিজেদের মোড়ক পরিবর্তন করতে পারেন, কিন্তু পুরানো পাপের কী হবে? এই পাপগুলিই তাঁদেরকে নিয়ে ডুববে। জনগণের কাছ থেকে কীভাবে এই পাপ লুকাবেন? তাঁরা লুকাতে পারবেন না এবং তাঁরা আজ যে অবস্থায় আছেন, তাই আমি বলতে চাই,
এখনকার অবস্থা এমনই, এখনকার অবস্থা এমনই
সেজন্যেই হাতে হাত রেখেছেন,
যখনই পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে, তখন ছুরিগুলিও বেরিয়ে আসবে!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই দাম্ভিক জোট দেশে পারিবারিক রাজনীতির সবচেয়ে বড় প্রতিফলন । দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা, আমাদের সংবিধান প্রণেতারা বরাবরই বংশ-পরম্পরাবাদী রাজনীতির বিরোধিতা করেছেন। মহাত্মা গান্ধী, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, বাবা সাহেব আম্বেদকর, ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, গোপীনাথ বরদলোই, লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ, ডক্টর রাম মনোহর লোহিয়া - এঁরা প্রত্যেকেই খোলাখুলিভাবে পরিবারতন্ত্রের সমালোচনা করেছেন, কারণ বংশ-পরম্পরাবাদী রাজনীতির কুফলগুলি দেশের সাধারণ নাগরিককে বিব্রত করে, তাঁদেরকেই সহ্য করতে হয়। বংশ-পরম্পরাবাদী রাজনীতি সাধারণ নাগরিককে তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তাই এই মনীষীরা সবাই জোর দিয়ে বলেছেন যে দেশকে পরিবার, নাম এবং অর্থের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যবস্থা থেকে দূরে রাখতে হবে, কিন্তু কংগ্রেস কোনওদিনই  এই  বিরুদ্ধাচরণ পছন্দ করে নি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা সবসময়ই দেখেছি যে তাঁরা পরিবারতন্ত্রের বিরোধিতাকারীদের ঘৃণা করেন । কংগ্রেস বংশপরম্পরাবাদ পছন্দ করে। কংগ্রেস পারিষদতন্ত্র পছন্দ করে। যেখানে বড় বড় লোকেরা থাকবেন, তাঁদের ছেলে-মেয়েরাও বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হবেন, যাঁরা তাঁদের পরিবারের বাইরে, তাঁদের জন্য একই সূত্র প্রযোজ্য, এই রাজদরবারের পারিষদ না হলে কারও কোনও ভবিষ্যৎ নেই। এটাই তাঁদের মোডাস অপারেন্ডি। এই পারিষদতন্ত্র অনেক উইকেট নিয়েছে। এই লোকেরা অনেকের অধিকার হত্যা করেছে। বাবাসাহেব আম্বেদকর – কংগ্রেস তাঁকে তাঁদের সর্বশক্তি দিয়ে দু'বার পরাজিত করেছিল। কংগ্রেসের লোকেরা বাবা সাহেব আম্বেদকরের পোশাক নিয়ে ঠাট্টা করতেন, এরা সেই লোক। বাবু জগজীবন রাম যখন জরুরী অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন তাঁরা বাবু জগজীবন বাবুকেও রেয়াত করেননি, তাঁকে তাড়িয়েছেন। মোরারজি ভাই দেশাই, চরণ সিং, চন্দ্রশেখর জি, যত মনীষীদের নাম নেবো -প্রত্যেকেই এর  ভুক্তভোগী। তাঁদের বশংবদ না হওয়ায় তাঁরা দেশের অনেক মহান মানুষের অধিকার একবারে নষ্ট করে দিয়েছেন। এমনকি যাঁরা তাঁদের তাবেদার ছিলেন না, যাঁরা তাঁদের দরবারের পারিষদ ছিলেন না, তাঁদের প্রতিকৃতি সংসদে স্থাপন করতেও দ্বিধাবোধ করতেন। ১৯৯০ সালে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন অ-কংগ্রেসী সরকার শাসনক্ষমতায়  আসার সময় তাঁদের প্রতিকৃতি সংসদের কেন্দ্রীয় হলে স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালে অ-কংগ্রেসী সরকার গঠনের পর সংসদে লোহিয়া জির প্রতিকৃতিও স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে জনতা পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সংসদের কেন্দ্রীয় হলে নেতাজির প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছিল। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এবং চরণ সিং, তাঁদের প্রতিকৃতিও ১৯৯৩ সালে অ-কংগ্রেসী সরকারই স্থাপন করেছে। কংগ্রেস বরাবরই সর্দার প্যাটেলের অবদান অস্বীকার করে। সর্দার সাহেবকে উৎসর্গ করে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্ট্যাচু অফ ইউনিটি বানানোর গৌরবও আমরা পেয়েছি। আমাদের সরকার দিল্লিতে পিএম মিউজিয়াম তৈরি করেছে। সেখানে প্রাক্তন সব প্রধানমন্ত্রীকেই সম্মান জানানো হয়েছে। পিএম মিউজিয়ামটি দল নির্বিশেষে সকল প্রধানমন্ত্রীকে উৎসর্গ করা হয়েছে। তাঁরা এটাও জানেন না, কারণ তাঁরা তাঁদের পরিবারের বাইরে যাঁরা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন,তাঁদের কাউকে তাঁরা স্বীকৃতি দেন না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
অনেক সময় খারাপ কিছু বলার উদ্দেশ্য নিয়ে চেষ্টা করা হয়, তখন কিছু সত্যও বেরিয়ে আসে। আর প্রকৃতই আমাদের সকলের এমন অভিজ্ঞতা আছে, মাঝে মাঝে সত্য বেরিয়ে আসে। লঙ্কা দহনের কারণ হনুমান নয়, দহনের কারণ রাবণের অহংকার এবং এটি সম্পূর্ণ সত্য। দেখুন, জনগণও ভগবান রামের রূপ। আর তাই তাঁদের সংখ্যা ৪০০ থেকে ৪০ হয়ে গেছে। হনুমান লঙ্কা পোড়ায়নি, অহংকার পুড়িয়েছিল, আর তাই ৪০০ হয়ে গেছে ৪০।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সত্য তো এটাই যে, দেশের জনগণ গত ত্রিশ বছরে দু'বার পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতাসম্পন্ন সরকারকে নির্বাচন করেছে। কিন্তু গরিবের ছেলে এখানে এসে কিভাবে বসেছে। আপনার যে অধিকার ছিল, আপনার পারিবারিক পুরুষানুক্রমিক অধিকার ভেবেছিলেন, সেখানে এ কেমন করে বসল, এই কাঁটা আজও আপনাকে কষ্ট দেয়, আপনাকে ঘুমাতে দেয় না। আর দেশের মানুষও আপনাকে ঘুমাতে দেবে না, ২০২৪ সালেও ঘুমাতে দেবে না। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একসময় তাঁর জন্মদিনে বিমানে কেক কাটা হতো। আজ সেই বিমানে গরিবদের টিকা যায়, এটাই পার্থক্য।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একটা সময় ছিল যখন ড্রাই ক্লিনিংয়ের জন্য জামাকাপড় বিমানে আসত, আর আজকাল দেশের গরিব মানুষ হাওয়াই চপ্পল পায়ে বিমানে উড়ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এক সময় ছুটির দিনে, মজা করতে, মৌজ-মস্তি করার জন্য নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ডাকা হতো। আজ একই নৌবাহিনীর জাহাজ ব্যবহার করা হয় দূরদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য, দরিদ্রদের তাঁদের বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যাঁদের আচার-আচরণ, চালচলন রাজার মতো, যাঁদের মনও আধুনিক রাজার মতো তৎপর, গরিবের ছেলে এখানে থাকলে তাঁদের কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। সর্বোপরি, তাঁরা নামীদামী মানুষ আর আমরা কর্মী মানুষ।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কিছু কথা বলার জন্য আমি খুব কম সময় ও সুযোগ পাই। এমন অনেক ঘটনা ঘটে, কাকতালীয় ভাবেই ঘটে, দেখুন, এমনকি আমি ভাবনাচিন্তা করেও বসি না! কিন্তু কেমন কাকতালীয় ঘটনা দেখুন- গতকাল এখানে তাঁর মন থেকে কথা বলার কথা বলা হয়েছিল। তাঁর মস্তিষ্কের অবস্থা তো দেশবাসী অনেকদিন ধরেই জানতো, কিন্তু এখন সবাই তাঁর মনের অবস্থাও জেনে গেছেন।
আর অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁদের মোদীর প্রতি ভালবাসা এতটাই প্রবল যে, তাঁরা স্বপ্নেও মোদীকে দিনে চব্বিশ ঘণ্টা দেখতে পান। ভাষণের মাঝখানে আমি যদি জল পান করি তাহলে বলেন, বুক ফুলিয়ে এদিকে দেখুন- মোদীকে জল খাইয়ে দিয়েছি। আমি যদি প্রখর গ্রীষ্মে, প্রখর রোদে জনগ্ণের মাঝে যাই, মাঝে মাঝে আমার ঘাম মুছতে থাকি, তখন তাঁরা বলেন, দেখ, আমরা মোদীকে ঘামিয়ে দিয়েছি। দেখুন, তাঁদের বাঁচার অবলম্বন দেখুন। একটি গানের দুটো লাইন শোনাচ্ছি-
ডুবে যাওয়া ব্যক্তির জন্য খড়কুটোর অবলম্বনই যথেষ্ট।
হৃদয়ে দোলা লাগলে সামান্য ইঙ্গিতই যথেষ্ট।
এতটুকুতেই ঈশ্বর আকাশ থেকে বজ্র হানতে পারে,
কেউ বলে দিন, আমি ডুবে গেলে কী করবো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি কংগ্রেসের সমস্যা বুঝি। বছরের পর বছর ধরে, তাঁরা একই পণ্য বারবার চালু করে ব্যর্থ হয়েছেন। এর ফলে এখন ভোটারদের প্রতি তাঁদের বিদ্বেষও সপ্তম আকাশে পৌঁছেছে। তাঁদের পণ্য বারবার ব্যর্থ হয়,সেজন্যে তাঁরা ঘৃণা করেন জনসাধারণকে। কিন্তু জনসংযোগকারীরা কী প্রচার করেন? তাঁরা প্রেমের দোকানের প্রচার করেন, এর পেছনে গোটা ব্যবস্থা লেগে পড়ে। তাই দেশের মানুষও বলছেন, এটা লুটের দোকান, মিথ্যার বাজার। এটা লুটের দোকান, মিথ্যার বাজার। এতে ঘৃণা আছে, কেলেঙ্কারি আছে, তোষণ আছে, আর তাঁদের মন কালো। যুগ যুগ ধরে পরিবারতন্ত্রের আগুনে পুড়েছে দেশ। আর আপনাদের দোকান বেচেছে জরুরি অবস্থা, দেশভাগ বিক্রি করেছে, শিখদের উপর অত্যাচার বিক্রি করেছে, এত এত মিথ্যাচার বিক্রি করেছে, ইতিহাস বিক্রি করেছে, উরির সত্যতার প্রমাণ বিক্রি করেছে, আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। ঘৃণার দোকানদাররা, আপনারা সেনাবাহিনীর আত্মসম্মান বিক্রি করেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখানে বসে থাকা আমরা অনেকেই গ্রামীণ দরিদ্র পটভূমি থেকে এসেছি। এই সংসদে অনেকেই গ্রাম ও ছোট শহর থেকে আসেন আর গ্রামের কেউ বিদেশে গেলে বছরের পর বছর তার গান গায়। কেউ একবার বিদেশে গেলে, সেখানে কী কী দেখে এসেছেন, বছরের পর বছর সেসব বলে বেড়ান, এটা দেখে এসেছি, ওটা দেখে এসেছি, একথা শুনেছি, দেখেছি - এটাই স্বাভাবিক। গ্রামের মানুষ, যে বেচারা দিল্লি-মুম্বাইও দেখেন নি, আর আমেরিকায় গিয়ে ঘুরে এসেছেন, ইউরোপ ঘুরে এসেছেন – তাঁরা সেসব বর্ণনা করতে থাকেন। যাঁরা কখনও টবেও মুলো চাষ করেননি, তাঁরা তো দিগন্তবিস্তৃত ক্ষেত দেখে অবাক হবেনই।
অধ্যক্ষ মহোদয়,
যাঁরা কখনও মাটিতে পা রাখেননি, গাড়ির কাঁচ নামিয়ে সর্বদা অন্যের দারিদ্র্য দেখেছেন, তাঁদের কাছে এই সবকিছুই বিস্ময়কর লাগছে। এই ধরনের লোকেরা যখন ভারতের অবস্থা বর্ণনা করেন, তখন তাঁরা ভুলে যান যে তাঁদের পরিবার ৫০ বছর ধরে ভারত শাসন করেছে। একভাবে ভারতের এই রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেন, ইতিহাস এর সাক্ষী। আজ তাঁদের কথায় চিঁড়ে ভিজছে না। এজন্য তাঁরা নতুন নতুন দোকান খুলে বসছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

এরা জানেন যে তাঁদের নতুন দোকানটিতেও কিছু দিনের মধ্যে তালা ঝোলাতে হবে। আর আজ এই আলোচনার ফাঁকে আমি এই অহংকারী জোটের অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেশবাসীকে সতর্ক করতে চাই।  এই অহংকারী জোট দেশে এমন একটি অর্থনীতি কায়েম করতে চায়, যা দেশকে দুর্বল করবে, শক্তিশালী করবে না। আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে দেখেছি, যে অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে কংগ্রেস ও তার মিত্র দলগুলি এগিয়ে যেতে চান, যেভাবে তাঁরা রাজকোষের টাকা লুটপাট করে ভোট পাওয়ার খেলা খেলছেন, আমাদের চারপাশের দেশগুলোর অবস্থা দেখুন। বিশ্বে সেসব দেশের অবস্থা দেখুন। আর আমি দেশবাসীকে বলতে চাই, তাঁদের কাছ থেকে আমি কোনও উন্নতি প্রত্যাশা করি না, জনগণই তাঁদের শুধরে দেবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই ধরনের প্রচেষ্টার খারাপ প্রভাব আমাদের দেশকে কলুষিত করছে, আমাদের রাজ্যগুলিকেও কলুষিত করছে ঘটছে। নির্বাচনে জেতার জন্য তাঁরা যত মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেন, সেগুলির ফলে এই রাজ্যগুলিতে জনগণের উপর নতুন নতুন শাস্তি চাপানো হচ্ছে। নতুন নতুন বোঝা চাপানো হচ্ছে এবং উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করা হচ্ছে, আইনসম্মতভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই অহংকারী জোটের অর্থনৈতিক নীতির পরিণাম আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আর তাই দেশবাসীকে সতর্ক করতে চাই, দেশবাসীকে এই সত্যটা বুঝিয়ে বলতে চাই। এই মানুষগুলি, এই অহংকারী জোট, এই মানুষগুলিই ভারতের দেউলিয়া হওয়ার গ্যারান্টি, এঁরা ভারতকে দেউলিয়া করে দেবে। এঁরা দেশের অর্থনীতিকে ডুবিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি, এঁরা সুযোগ পেলে দেশের অর্থনীতিকে ডুবিয়ে দেবে। এঁরা ডাবল ডিজিটের মূদ্রাস্ফীতির গ্যারান্টি, এঁরাই ডাবল ডিজিটের মূদ্রাস্ফীতি নিয়ে আসবে। এঁদের পলিসি প্যারালাইসিসের গ্যারান্টি, এঁরা দেশকে নীতি পক্ষাঘাতে অচল করবে। এঁরা অস্থিরতার গ্যারান্টি, এঁরা দেশে অস্থিরতা এনে দেবে। এঁরা দুর্নীতির গ্যারান্টি, এঁরা সুযোগ পেলে আবার দেশকে দুর্নীতিগ্রস্ত করবে। এঁরা তোষণের গ্যারান্টি, এঁরা ভোটের স্বার্থে তোষণের রাজনীতি কায়েম করে সমাজে বৈষম্য আনবে। এঁরা পরিবারতন্ত্রের গ্যারান্টি, এঁরা পরিবারতন্ত্র কায়েম করবে। এঁরা চরম বেকারত্বের গ্যারান্টি, এঁরা বেকারদের কাজ দিতে পারবে না। এঁরা সন্ত্রাস ও হিংসার গ্যারান্টি, এঁরা সন্ত্রাস ও হিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এঁরা ভারতকে দুই শতাব্দী পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার গ্যারান্টি। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

তাঁরা কখনই ভারতকে তিনটি শীর্ষ অর্থনীতির দেশের অন্যতম করে তোলার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। আমি দেশকে গ্যারান্টি দিচ্ছি যে আমাদের তৃতীয় মেয়াদে আমরা ভারতকে তিনটি শীর্ষ অর্থনীতির দেশের অন্যতম করে তুলবো, এটা দেশবাসীর প্রতি আমার গ্যারান্টি। তাঁরা কখনও দেশকে উন্নত করার কথা ভাবতেও পারে না। এই মানুষেরা এ ব্যাপারে কিছুই করতে পারবে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গণতন্ত্রে যাঁদের আস্থা নেই, তাঁরা ভাষণ দিতে সদাপ্রস্তুত, কিন্তু অন্যের কথা শোনার ধৈর্য নেই। বাজে কথা বলে পালিয়ে যায়, আবর্জনা ফেলে পালিয়ে যায়, মিথ্যা কথা বলে পালিয়ে যায় - এটাই তাদের খেলা। এই দেশ তাঁদের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করতে পারে না। তাঁরা যদি মণিপুর নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনায় সম্মতি দিতেন, তাহলেই মণিপুর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারত। প্রত্যেক দিক নিয়ে আলোচনা করা যেত। আর তিনিও অনেক কিছু বলার সুযোগ পেতেন। কিন্তু তিনি আলোচনায় আগ্রহী ছিলেন না এবং গতকাল যখন অমিত ভাই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বলেন, তখন দেশবাসীও অবাক হয় যে এই মানুষেরা এত মিথ্যা কথা বলতে পারে! তাঁদের শাসনকালে তাঁরা কত পাপ করে গেছেন আর আজ যখন তারা অনাস্থা প্রস্তাব এনে সমস্ত বিষয়ে কথা বলছেন, তখন ট্রেজারি বেঞ্চের দায়িত্ব হলো দেশের সামনে সত্যিটা প্রকাশ করা, দেশের বিশ্বাসে নতুন শক্তি যোগানো। দেশের বিশ্বাসকে যারা নষ্ট করেন, আমাদের দায়িত্ব তাঁদের যোগ্য জবাব দেওয়া। আমরা বলেছিলাম, শুধু মণিপুরের জন্য আলোচনা করি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠি দিয়েছিলেন এই কথা বলে। এটি তাঁর বিভাগ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়। কিন্তু তাঁদের সাহস ছিল না, ইচ্ছেশক্তি ছিল না এবং মনে পাপ ছিল, পেটে ব্যথা হচ্ছিল এবং মাথা ফেটে যাচ্ছিল, এসব হল তাঁদের পাপের পরিণাম।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ গতকাল দু'ঘণ্টা ধরে বিশদভাবে এবং অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে পুরো বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, সরকার ও দেশের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং জনগণকে এবিষয়ে সচেতন করেছেন। এতে সম্পূর্ণ লোকসভার পক্ষ থেকে মণিপুরে বিশ্বাসের বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যও ছিল। সাধারণ মানুষকে এ সম্পর্কে শিক্ষিত করার চেষ্টাও ছিল। এটি ছিল দেশের উন্নতি এবং মণিপুরের সমস্যা সমাধানের নিরিখে একটি আন্তরিক প্রচেষ্টা। কিন্তু তাঁদের রাজনীতি ছাড়া কিছুই করার নেই, সে জন্যই তিনি এই খেলাগুলো খেলেছেন, এসব কি স্থিরতার উদ্দেশ্যে করেছেন!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,  
গতকাল  অমিত ভাইও বিস্তারিত বলেছেন। মণিপুরে একটি আদালতের রায় এসেছে। এখন আমরা জানি আদালতে কী হচ্ছে। আর এর পক্ষে-বিপক্ষে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে হিংসার ঘটনাক্রম শুরু হয়ে যায় এবং তাতে বহু পরিবার অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এমনকি অনেকে তাদের আপনজনদেরও হারিয়েছেন। মহিলাদের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার দোষীদের কঠোর শাস্তি সুনিশ্চিত করতে মিলিত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমি দেশের সকল নাগরিককে আশ্বস্ত করতে চাই, যেভাবে চেষ্টা চলছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে শান্তির সূর্য অবশ্যই উদিত হবে। আবারও নতুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবে মণিপুর। আমি মণিপুরের জনগণকেও আহ্বান জানাতে চাই,মা, বোন এবং কন্যাদের বলতে চাই যে দেশ আপনাদের সঙ্গে আছে, এই সংসদ আপনাদের সঙ্গে আছে। আমরা সবাই মিলে এই চ্যালেঞ্জের সমাধান বের করব,সেখানে আবার শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি মণিপুরের জনগণকে আশ্বস্ত করছি যে মণিপুরকে দ্রুতগতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা হবে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারতমাতা সম্পর্কে এখানে সদনে যা বলা হয়েছে তা প্রত্যেক ভারতবাসীর অনুভূতিকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। অধ্যক্ষ মহোদয়, জানি না কী হয়েছে! ক্ষমতায় না থাকলে কারো কি এমন অবস্থা হয়? ক্ষমতা কি সুখ ছাড়া বাঁচতে পারে না? আর কেমন ভাষায় কথা বলছেন।  
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
কেন জানি না কিছু মানুষকে ভারতমাতার মৃত্যু কামনা করতে দেখা যায়। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? এরা সেই মানুষ, যাঁরা কখনও গণতন্ত্র হত্যার কথা বলে, কখনো সংবিধান হত্যার কথা বলে। আসলে তাঁদের মনে যা রয়েছে, সেটাই তাঁদের কৃতিত্বের সামনে চলে আসে। আমি অবাক। কারা এই কথাগুলো বলছে? এই দেশ কি ভুলে গেছে যে ১৪ই আগস্ট বিভাজন বিভীষিকা, পীড়াদায়ক দিবস, আজও সেই আর্তনাদ নিয়ে, সেই যন্ত্রণা নিয়ে আমাদের সামনে আসে। এরাই ভারতমাতাকে তিন টুকরো করে ফেলেছে।  যখন ভারতমাতাকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করানোর কথা ছিল, ভারতমাতার শৃঙ্খল ভাঙার কথা ছিল, বেড়ি কাটার কথা ছিল, তখন এই মানুষেরা ভারতমাতার হাত দু'টি কেটেছিল,ভারতমাতাকে তিন টুকরো করা হয়েছিল। এখন এই মানুষগুলো কোন মুখে এমন কথা বলার সাহস পায়?  
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সেই মানুষদের কথা ভাবুন, 'বন্দে মাতরম' গান গেয়ে  যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করতে পিছপা হননি ! তখন 'বন্দে মাতরম' ভারতের প্রতিটি কোণে চেতনার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল। তোষণের রাজনীতির কারণে কংগ্রেস শুধু ভারতমাতাকে টুকরো টুকরো করে ফেলেনি, 'বন্দে মাতরম' গানকেও টুকরো টুকরো করে ফেলেছে।  মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, যারা 'ভারত তেরে টুকরে হঙ্গে' স্লোগান তোলে, এই দলগুলি তাদের উৎসাহ দিতে, তাদের কথা প্রচার করতে সেখানে পৌঁছান। এরা তাদেরকেও সাহায্য করেন, যারা বলে যে উত্তর পূর্বের সঙ্গে সংযোগকারী শিলিগুড়ির কাছে ছোট করিডোরটি কেটে দিলে উত্তর পূর্ব ভারত আলাদা হয়ে যাবে; এই স্বপ্ন যারা দেখে এরা তাদের সমর্থন করেন। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখন তাঁরা যেখানেই থাকুন না কেন, আমার পাশে তাঁদের মধ্যে কেউ বসে থাকলে আমার প্রশ্নের জবাব দিন। যাঁরা বাইরে গেছেন, তাঁদেরকে শুধু জিজ্ঞেস করুন কাচ্চাতিভু কী? কেউ তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করুন, কাচ্চাটিভু কী? ওঁরা এত বড় বড় কথা বলেন, আজ আমি বলতে চাই এই কাচ্চাতিভু কী, আর এই কাচ্চাতিভু কোথা থেকে এলো! তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করুন, এত বড় বড় কথা লিখে তাঁরা দেশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। আর এই ডিএমকের নেতারা, তাঁদের রাজ্য সরকার, তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী আমাকে প্রায়ই চিঠি লেখেন, সেদিনও লিখেছেন এবং অনুরোধ করেছেন যে, মোদীজি কাচ্চাতিভু ফিরিয়ে আনুন। এই কাচ্চাতিভু কী? কে এটা দান করেছিলেন? তামিলনাড়ু আর শ্রীলঙ্কার মাঝে অবস্থিত এই কাচ্চাতিভু দ্বীপ কেউ একজন অন্য দেশকে দান করেছিলেন। কবে দেওয়া হয়েছিল,এই দ্বীপ কি ভারতমাতার অংশ ছিল না? এটা কি ভারতমাতার অংশ ছিল না? সেই সময়ে মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে এই দান সম্পন্ন হয়েছিল। কংগ্রেসের ইতিহাস ভারতমাতাকে ভাগ করার ইতিহাস।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
ভারতমাতার প্রতি কংগ্রেসের ভালোবাসা কেমন ছিল? কেমন ছিল ভারতবাসীর প্রতি ভালোবাসা? আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এই সংসদে একটি সত্য তুলে ধরতে চাই। এই পীড়া তাঁরা বুঝতে পারবেন না। আমি দাভণগেরের কোণায় কোণায় ঘুরেছি, যখন রাজনীতিতে ছিলাম না, তখনও ওই এলাকায় পায়ে হেঁটে ঘুরেছি। ওই এলাকার প্রতি আমার একটা আবেগময় আসক্তি রয়েছে। তাঁদের এ সম্পর্কে  কোনও ধারণা নেই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
আমি সদনের সামনে, আপনার সামনে তিনটি প্রসঙ্গ তুলে ধরতে চাই। আর আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, দেশবাসীও আমার কথা শুনছেন। প্রথম ঘটনা, ৫ই মার্চ,১৯৬৬ - এই দিনে কংগ্রেস দেশের বিমানবাহিনীর মাধ্যমে মিজোরামে অসহায় অসামরিক নাগরিকদের আক্রমণ করেছিল। আর তা নিয়ে দেশে তখন তীব্র বিতর্কও হয়েছিল। এই আক্রমণ যারা হেনেছিল তারা অন্য কোনও দেশের বিমান বাহিনী ছিল কি না, তার জবাব দিতে হবে কংগ্রেসকে। তখন মিজোরামের মানুষ কি আমাদের দেশের নাগরিক ছিলেন না? তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কি ভারত সরকারের ছিল না? ৫ই মার্চ, ১৯৬৬ - বিমান বাহিনী আক্রমণ করে, নিরীহ অসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা করা হয়।
আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজও মিজোরামে ৫ মার্চ শোক পালন করা হয়। সেই যন্ত্রণা ভুলতে পারেনি মিজোরাম। তাঁরা কখনও মলম লাগানোর চেষ্টা করেননি, এমনকি ক্ষত নিরাময়ের চেষ্টাও করেননি। এ জন্য তাঁরা কখনও দুঃখ অনুভব করেননি। আর কংগ্রেস এই সত্য দেশের সামনে লুকিয়ে রেখেছে বন্ধুরা। এই সত্য তাঁরা দেশের কাছে লুকিয়ে রেখেছে। আমাদের দেশের নাগরিকদের উপর কি বিমানবাহিনী এমনি অমনি আক্রমণ করতে পারে, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন? – ইন্দিরা গান্ধী। অকাল তখতে যখন সামরিক হামলা হয়েছিল, সেটা তো এখনও আমাদের স্মৃতিতে রয়েছে,কিন্তু এর আগেই তাঁরা মিজোরামে এই উদাহরণ স্থাপন করেছিল। আর সেজন্যেই তিনি অকাল তখত আক্রমণ করতে পিছপা হননি, আমাদের নিজের দেশের মানুষের উপর সেনা আক্রমণ, আর এখানে তিনি আমাদের উপদেশ দিচ্ছেন! 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁরা বারবার উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের বিশ্বাসকে হত্যা করেছেন। আজ সেই ক্ষতগুলোই কোনও না কোনও সমস্যার আকারে উঠে আসে, এগুলি সব তাঁদেরই কৃতকর্মের ফল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
আমি আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করতে চাই। আর সেই ঘটনাটি হল ১৯৬২ সালের সেই ভয়ঙ্কর বেতার সম্প্রচার, যা আজও উত্তর- পূর্ব ভারতের মানুষকে প্রতিনিয়ত শূলের মতো খোঁচায়।  ১৯৬২ সালে পন্ডিত নেহেরু বলেছিলেন, ‘আমার হৃদয় আসামের মানুষের জন্য কাঁদে!’ ১৯৬২ সালে যখন আসাম চীনা আক্রমণের মুখে রক্তাক্ত, তখন দেশের প্রতিটি কোণের মানুষ আশা করেছিল যে ভারত আসামবাসীদের রক্ষা করবে, তাঁরা কিছু সাহায্য পাবেন, তাঁদের জান-মাল রক্ষা হবে, দেশ রক্ষা হবে। দেশের জনগণ হাতে হাত রেখে লড়াই করতে মাঠে নেমেছিল, এমন এক সংকটময় সময়ে, দিল্লির সিংহাসনে বসে সেই সময়ের সর্বগ্রাহ্য নেতা পণ্ডিত নেহেরু রেডিওতে যা বলেছিলেন, বাস্তবে তা করেন নি। সেই সম্প্রচার আজও আসামের জনগণকে ছুরির মতো খোঁচায়। তাঁরা ভাবেন যে, সেই সময় নেহেরুজি কীভাবে তাঁদেরকে তাঁদের ভাগ্যের ভরসায় বাঁচতে বাধ্য করেছিলেন। তাঁরা এখনও আমাদের কাছে তার হিসাব চান।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
লোহিয়াবাদীরাও আজ এখান থেকে চলে গেছেন। আমি তাঁদেরকেও বলতে চেয়েছিলাম, যাঁরা নিজেদেরকে লোহিয়াজির উত্তরাধিকারী বলেন এবং যাঁরা গতকাল লোকসভায় অত্যন্ত ঝাঁঝালো ভঙ্গিতে বক্তৃতা করছিলেন, হাত পা ছুঁড়ে কথা বলেছেন! লোহিয়াজি নেহরুজির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন। লোহিয়াজি বলেছিলেন যে, নেহেরুজি ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়ন করছেন না! আর লোহিয়াজির কথা ছিল, এত অবহেলা কেন? এই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রাখা বিপজ্জনক  হয়ে উঠতে পারে!এই লোহিয়াজিই নেহেরুকে অভিযুক্ত করেছিলেন যে, আপনি কখনই উত্তর-পূর্বের মানুষের হৃদয় ও অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করেননি। আমরা লোহিয়াজির এই বক্তব্য থেকে শিক্ষা নিয়েছি, আমার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা, আমাদের ৪০০ জন সাংসদ উত্তর-পূর্ব ভারতে গিয়ে শুধু রাজ্যগুলির রাজধানী শহর নয়, জেলা সদরগুলিতেও নিয়মিত রাত কাটান। আর আমি নিজে ৫০ বার গিয়েছি। এটি কেবল একটি উদাহরণ নয়, এটি একটি অনুশীলন। এটি আমাদের উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নের প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি আন্তরিক প্রচেষ্টা। 
মাননীয় মহোদয়,
কংগ্রেসের প্রতিটি কাজই দেখবেন রাজনীতি, নির্বাচন এবং সরকারকে ঘিরে আবর্তিত হয়। যেখানে বেশি আসন পাওয়া যায়, যেখানে রাজনীতির নিজস্ব খিচুড়ি রান্না হয়, সেখানেই তাঁরা বাধ্য হয়ে কিছু করেন। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ আজ শুনছেন, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে যেহেতু মাত্র কয়েকটি আসন ছিল,তাঁরা সেই অঞ্চলকে ভারতের ভূখণ্ড বলেই ভাবতেন না। যেখানে কম আসন সেসব এলাকা তাঁদের উন্নয়নের তালিকায় গ্রহণযোগ্য ছিল না, তাঁরা সেদিকে মনোযোগ দেননি। দেশের নাগরিকদের স্বার্থের প্রতি তাঁদের কোনও সহানুভূতি ছিল না। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সেজন্যেই যেসব এলাকায় অল্প কয়েকটি আসন ছিল তাঁদের প্রতি সৎমায়ের মতো আচরণ, এটাই কংগ্রেসের ডিএনএ-তে রয়েছে। এখন গত কয়েক বছরের ইতিহাস দেখুন। উত্তর-পূর্ব ভারতে তাঁদের এই মনোভাব ছিল, কিন্তু এখন দেখুন, আমার গত ৯ বছরের প্রচেষ্টা দেখুন। আমি বলি যে, উত্তর-পূর্ব ভারত আমাদের কলিজার টুকরো। আজ, মণিপুরের সমস্যাগুলিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন সাম্প্রতিক অতীতেই সেখানে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল অমিত ভাই বিস্তারিত জানালেন আসল সমস্যা কী এবং তা কিভাবে হল। কিন্তু আজ আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই যে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই সমস্যাগুলির যদি কোনও মা থাকে, তাহলে কংগ্রেসই সেই মা। এর জন্য উত্তর পূর্ব ভারতের মানুষ দায়ী নয়, কংগ্রেসের এই রাজনীতি দায়ী। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারতীয় সংস্কৃতিতে সম্পৃক্ত মণিপুর, ভক্তির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যসম্পন্ন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আজাদ হিন্দ ফৌজ এর পরাক্রমের সাক্ষী মণিপুরের অসংখ্য মানুষ দেশের জন্য  আত্মাহুতি দিয়েছেন। কংগ্রেসের শাসনকালে আমাদের এত মহান ভূখণ্ডকে বিচ্ছিন্নতার আগুনে জ্বলতে দেখা গেছে। কেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
আমি আপনাদের সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে এখানে উপস্থিত আমার উত্তর-পূর্ব ভারতের ভাইয়েরা সব কিছু জানেন। মণিপুরে একটা সময় ছিল যখন গোটা ব্যবস্থাই বিভিন্ন চরমপন্থী সংগঠনের ইচ্ছানুযায়ী চলত, তারা যা বলত তাই হতো! আর সেই সময় মণিপুরে কাদের সরকার ছিল? কংগ্রেসের সরকার ছিল - কংগ্রেসের। অথচ তখন মণিপুরের সরকারি অফিসে জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর ছবি  লাগানোর অনুমতি ছিল না! মণিপুরে কার সরকার ছিল যখন মোরাঙ্গের আজাদ হিন্দ ফৌজ মিউজিয়ামে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মূর্তির উপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল? কংগ্রেসের সরকার ছিল। হায় কংগ্রেস!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
মণিপুরে কাদের সরকার ছিল যখন মণিপুরের স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? কংগ্রেসের সরকার। যখন লাইব্রেরিতে রাখা বই পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযান চালিয়ে এদেশের অমূল্য জ্ঞানের ঐতিহ্য পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন কাদের সরকার ছিল? কংগ্রেসের সরকার। মণিপুরে যখন সন্ধ্যা ৪টায় মন্দিরের ঘণ্টা থেমে যেত, তালা দেওয়া হত, পূজা করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল, সেনা পাহারায় পুজো দিতে হতো, তখন মণিপুরে কাদের সরকার ছিল? কংগ্রেসের সরকার।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
মণিপুরে কাদের সরকার ছিল যখন ইম্ফলের ইসকন মন্দিরে বোমা নিক্ষেপ করে ভক্তদের হত্যা করা হয়েছিল? কংগ্রেসের সরকার। যখন মণিপুরে আইএএস, আইপিএস অফিসারদের সেরাজ্যে কাজ করতে হলে তাঁদের বেতনের একটি অংশ এই চরমপন্থীদের দিতে হতো, তারপর সেই রাজ্য থেকে পালিয়ে গিয়ে তাঁরা জীবন রক্ষা করেন, তখন সেখানে কাদের সরকার ছিল? কংগ্রেসের সরকার।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁদের পীড়া সিলেক্টিভ, তাঁদের সংবেদনশীলতা বাছাই করা। তাঁদের সীমানা রাজনীতি দিয়ে শুরু হয় আর রাজনীতির মাধ্যমেই এগোয়। তাঁরা রাজনীতির পরিধি অতিক্রম করতে পারতেন না, তাই মানবতার কথা ভাবতে পারতেন না, দেশের স্বার্থে ভাবতে পারতেন না, দেশের দুর্দশা দূর করার উপায় বের করার কথা ভাবতে পারতেন না। তাঁরা রাজনীতি ছাড়া কিছুই বোঝেন না।  
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
মণিপুরের বর্তমান রাজ্য সরকার গত ছয় বছর ধরে এই সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য নিবেদিত মনোভাব নিয়ে ক্রমাগত চেষ্টা করছে। সে রাজ্যে বনধ ও অবরোধের যুগ কেউ ভুলতে পারবে না। তখন মণিপুরে নিয়মিত বনধ ও অবরোধ চলত। আজ তা অতীত হয়ে গেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার প্রত্যয় তৈরির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। আর এক্ষেত্রে আমরা রাজনীতিকে যত দূরে রাখব তত দ্রুত শান্তি আসবে। এটা আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
উত্তর-পূর্ব ভারত আজ আমাদের কাছে অনেক দূরের মনে হতে পারে, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যেভাবে বিকশিত হচ্ছে, যেভাবে আসিয়ান দেশগুলোর গুরুত্ব বাড়ছে, সেই দিন আর বেশি দূরে নয়, আমাদের পূর্বের অগ্রগতির পাশাপাশি উত্তর-পূর্বও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিরিখে কেন্দ্র বিন্দু হয়ে অঠার দিকে এগিয়ে চলেছে। আর আমি এটা দেখছি, আর সেজন্যেই আমি ভোটের জন্য নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নতির জন্য আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছি। আমি জানি যে বিশ্বের নতুন কাঠামো যেভাবে বাঁক নিয়েছে তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আসিয়ানের দেশগুলির জন্য কীভাবে প্রভাব তৈরি করতে চলেছে এবং কীভাবে উত্তর-পূর্বের গুরুত্ব বাড়তে চলেছে এবং কীভাবে উত্তর-পূর্বের গৌরব আবার বৃদ্ধি পাবে। আমি দেখতে পাচ্ছি এটা ঘটতে চলেছে এবং সেজন্যই আমি কাজ করে চলেছি। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সেজন্যেই আমাদের সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নকে প্রথম অগ্রাধিকার দিয়েছে। গত নয় বছরে আমরা উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করেছি। আজ আধুনিক মহাসড়ক, আধুনিক রেলপথ, আধুনিক নতুন নতুন বিমানবন্দরগুলি উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিচয় হয়ে উঠছে। এখন প্রথমবারের মতো আগরতলা রেল মানচিত্রের স্থান পেয়েছে। প্রথমবারের মতো মণিপুরে পৌঁছেছে পণ্যবাহী ট্রেন। প্রথমবারের মতো উত্তর-পূর্বে বন্দে ভারত-এর মতো আধুনিক ট্রেন ছুটছে। অরুণাচল প্রদেশে প্রথমবারের মতো একটি গ্রিন ফিল্ড বিমানবন্দর তৈরি হয়েছে। প্রথমবারের মতো, অরুণাচল ও সিকিমের মতো রাজ্যে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। প্রথমবারের মতো, উত্তর পূর্ব ভারত জলপথের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হয়ে উঠেছে। প্রথমবারের মতো উত্তর-পূর্বে এইমস (AIIMS)-এর মতো একটি মেডিকেল ইনস্টিটিউট খোলা হয়েছে। মণিপুরেই দেশের প্রথম ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে । মিজোরামে প্রথমবারের মতো ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যাস কমিউনিকেশনের মতো প্রতিষ্ঠান খুলছে। প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় উত্তর-পূর্ব ভারতের অংশগ্রহণ এতটা বেড়েছে। প্রথমবার রাজ্যসভায় পৌঁছেছেন নাগাল্যান্ডের কোনও মহিলা সাংসদ। প্রথমবারের মতো উত্তর-পূর্ব ভারতের এত বিপুল সংখ্যক মানুষ পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত হলেন। প্রথমবারের মতো উত্তর-পূর্ব ভারতের লাচিত বোরফুকানের মতো বীরের লেখা একটি নির্বাক নাট্য প্রজাতন্ত্র দিবসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মণিপুরে প্রথমবারের মতো উত্তর-পূর্বের রানি গাইদিনলিউ-এর নামে প্রথম আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর তৈরি হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা যখন বলি সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, এটা আমাদের জন্য নিছকই স্লোগান নয়, আমাদের কথার কথা নয়। এটা আমাদের জন্য 'আর্টিকেল অব ফেইথ' বা বিশ্বাসের একটি মূলমন্ত্র. আমাদের  দায়বদ্ধতা আছে এবং আমরা যারা দেশের জন্য পথে বেরিয়ে পড়া মানুষ, এমন জায়গায় এসে বসার সৌভাগ্য যে কোন দিন পাবো তা আমি জীবনেও ভাবিনি। তবে এটা দেশের জনগণের কৃপা যে তাঁরা আমাদের সুযোগ দিয়েছেন, তাই আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি-
 আমার শরীরের প্রতিটি কণা,
সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত শুধু এবং শুধুমাত্র দেশবাসীর জন্য। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ আমি একটি বিষয়ে আমার বিরোধী সহকর্মীদের প্রশংসা করতে চাই। কারণ যেকারণেই হোক না কেন তাঁরা সংসদের বিরোধী নেতাকে নেতা হিসেবে মানতে রাজি নন। তাঁরা আমাকে কোনও বক্তৃতাই দিতে দেননি, কিন্তু আমার ধৈর্য আছে, সহনশক্তি  আছে আর আমি সহ্যও করে নিই আর তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু আমি তাঁদের একটি কারণে প্রশংসা করি, লোকসভার নেতা হিসাবে ২০১৮ সালে আমি তাঁদেরকে টাস্ক দিয়েছিলাম যে ২০২৩ সালে আপনারা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসবেন! আর তাঁরা আমার কথা মেনেছেন। কিন্তু আমি দুঃখিত যে ২০১৮-র পরে আমি ২০২৩ সালে পাঁচ বছর পেলাম, কিছুটা ভাল করতাম, ভালভাবে করতাম, কিন্তু কোন প্রস্তুতি ছিল না, কোন উদ্ভাবন ছিল না, কোন সৃজনশীলতা ছিল না! তাঁরা সমস্যা খুঁজে পাননি, জানি না যে তাঁরা দেশকে অনেক হতাশ করেছেন!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, যাই হোক না কেন, আমরা ২০২৮ সালে তাঁদের আরেকটি সুযোগ দেব। তবে এবার আমি তাঁদের অনুরোধ করছি যে, আপনারা যখন ২০২৮ সালে আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন, তখন একটু প্রস্তুতি নিয়ে আসুন।   কিছু বিষয় অন্তত জেনে নিন, আপনারা কী এমন বাজে জিনিস নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন?  আর দেশের মানুষের একটু আস্থা তো পাওয়া উচিত যে আপনারা বিরোধী দলে থাকতেও সক্ষম। অন্তত এতটুকু করুন। আপনারা সেই ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছেন। আমি আশা করি, তিনিও কিছু হোমওয়ার্ক করবেন। পরস্পরের উপর দোষারোপ, চিৎকার আর স্লোগানের জন্য দশজন অবশ্যই পাওয়া যাবে, তবে একটু মন দিয়ে কাজ করুন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
রাজনীতি নিজের জায়গায়, সংসদ কোন দলের মঞ্চ নয়। সংসদ দেশের সর্বোচ্চ সম্মানিত প্রতিষ্ঠান। আর সেজন্য সংসদ সদস্যদেরও এ বিষয়ে সিরিয়াস হওয়া দরকার। সংসদ চালাতে দেশ এত অর্থ ব্যয় করছে। এই অর্থে দেশের গরীবদের অধিকার যা এখানে ব্যয় করা হচ্ছে। এখানকার প্রতিটি মুহূর্ত দেশের স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু এই গাম্ভীর্য বিরোধীদের কাজে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সেজন্য অধ্যক্ষ মহোদয়, এই রাজনীতি এখানে এভাবে চলতে পারে না। ‘হাতে কোনও কাজ নেই, তখন চলো সংসদ ঘুরে দেখে আসি, সংসদ কি এজন্যে? এটা কেমন পদ্ধতি?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই 'চলো সংসদে ঘুরে আসি' মনোভাব নিয়ে রাজনীতি চলতে পারে, কিন্তু দেশ চলতে পারে না। এখানে আমাদেরকে দেশ চালানোর কাজ দেওয়া হয়েছে, তাই তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন না করলে তাঁরা ভোটারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন এবং তাঁরা এই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এদেশের মানুষের প্রতি আমার অটুট বিশ্বাস, অগাধ বিশ্বাস আছে এবং আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছি, অধ্যক্ষ মহোদয়, আমাদের দেশের মানুষ একদিক থেকে অটল বিশ্বাসী। হাজার বছরের দাসত্বের সময়েও তাঁরা তাঁদের অন্তরের বিশ্বাসকে কখনও নড়বড়ে হতে দেননি। এটা অটুট বিশ্বাসের সমাজ, অটুট চেতনায় পূর্ণ সমাজ। এটি এমন একটি সমাজ যাঁরা সমাধানের জন্য সমর্পণের ঐতিহ্য অনুসরণ করে। এটাই সেই সমাজ যাঁরা 'ভয়ম রাষ্ট্রং ভুতা' বলে, দেশের জন্য একই সংবেদনশীলতার সঙ্গে কাজ করে।
আর সেজন্যই মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এটা ঠিক যে দাসত্বের  সময়কালে আমাদের উপর অনেক হামলা হয়েছে, আমাদের অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশের বীররা, আমাদের দেশের মহাপুরুষরা, আমাদের দেশের চিন্তাবিদরা, আমাদের দেশের সাধারণ নাগরিকরা কখনোই বিশ্বাসের সেই শিখাকে নিভে যেতে দেননি। সেই শিখা কখনই নিভে যায় না এবং সেই শিখা নেভেনি বলেই আমরা আজও সেই  আলোকপুঞ্জের ছায়ায় আনন্দ উপভোগ করছি। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গত নয় বছরে দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে,  আজ নতুন নতুন আকাঙ্খা জাগছে। আমার দেশের তরুণরা বিশ্বের সমকক্ষ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। আর এর থেকে সৌভাগ্যের আর কী হতে পারে। প্রত্যেক ভারতীয় আজ বিশ্বাসে পরিপূর্ণ।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
আজকের ভারত কোন চাপে পড়ে না, চাপ মেনেও নেয় না। আজকের ভারত মাথা নত করে না, আজকের ভারত ক্লান্ত হয় না, আজকের ভারত থেমে থাকে না। সমৃদ্ধ ঐতিহ্য থেকে পাওয়া বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে, সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে এবং সেজন্যেই দেশের সাধারণ মানুষ যখন  দেশের উপর বিশ্বাস করতে শুরু করে, তখন তা বিশ্বকেও ভারতের উপর বিশ্বাস করতে অনুপ্রাণিত করে। আজ যে ভারত বিশ্ববাসীর বিশ্বাস অর্জন করেছে, তার একটি প্রধান কারণ হল, ভারতের মানুষের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এটাই দেশের সামর্থ্য, অনুগ্রহ করে এই বিশ্বাস ভাঙার চেষ্টা করবেন না। সুযোগ এসেছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার, এটা অনুধাবন না করলে চুপ থাকুন। অপেক্ষা করুন, কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে দেশের আস্থা ভাঙার চেষ্টা করবেন না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বিগত বছরগুলিতে, আমরা উন্নত ভারতের একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপনে সফল হয়েছি এবং ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গঠনের স্বপ্ন দেখেছি, যখন দেশ স্বাধীনতার ১০০ বছর উদযাপন করবে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অমৃতকাল শুরু হয়েছে। আর এই অমৃতকালের গোড়ার দিকের বছরগুলিতেই আমি এই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছি যে আজ যে ভিত্তির শক্তি নিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে, সেই ভিত্তির শক্তিই ২০৪৭ সালে ভারতকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করবে বন্ধুরা। আর তা ঘটবে দেশবাসীর পরিশ্রমে, দেশবাসীর বিশ্বাসে, দেশবাসীর সংকল্পে, আর তা ঘটতে চলেছে দেশবাসীর সম্মিলিত শক্তিতে, দেশবাসীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় - এটাই আমার বিশ্বাস। 
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সম্ভবতঃ এখানে বলা কথাগুলো রেকর্ড হয়ে যাবে, কিন্তু ইতিহাস আমাদের কৃতকর্ম দেখতে চলেছে, যে কাজগুলি একটি সমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়েছে, সেই রূপে দেখা হবে। শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এই বিশ্বাস নিয়ে, আজ আমি কিছু বিষয় স্পষ্ট করতে সংসদের সামনে এসেছি এবং অনেক সংযম রেখে, তাঁদের প্রতিটি গালাগালিতে হেসে, আমার মন খারাপ না করে, আমি ১৪০ কোটি দেশবাসীকে তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করতে উৎহিত করেছি। আর সংকল্পগুলো চোখের সামনে রেখে আমি হাঁটছি, এটাই আমার প্রত্যয়। আর আমি সদনের বন্ধুদের অনুরোধ করব, আপনারা সময়কে চিনুন, একসাথে চলুন। মণিপুরের মত এর আগেও এই দেশে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু আমরা একসঙ্গে পথ খুঁজে পেয়েছি, আসুন একসঙ্গে এগোই, মণিপুরের মানুষকে আস্থা দিয়ে যাই, অন্তত মণিপুরের ভূমিকাকে রাজনীতিতে অপব্যবহার করবেন না। সেখানে যা হয়েছে তা দুঃখজনক। কিন্তু সেই ব্যথা বুঝে ব্যথার ওষুধ হয়ে কাজ করা, এটাই আমাদের পথ হওয়া উচিত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
এই আলোচনায় সরকার পক্ষ থেকে অনেক সমৃদ্ধ আলোচনা হয়েছে। আমরা এক থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে সরকারের কাজের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আর এই অনাস্থা প্রস্তাব না এলে হয়তো আমরা এত কিছু বলার সুযোগ পেতাম না, তাই যাঁরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, কিন্তু এই অনাস্থা প্রস্তাব দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, এটাকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। দেশের জনগণ, এটি এমনই একটি প্রস্তাব ছিল এবং এর সঙ্গে আমি আবারও মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,আপনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

**
AC/SB


(Release ID: 1949870) Visitor Counter : 972