রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়

৭৭-তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু-র জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 14 AUG 2023 7:40PM by PIB Kolkata

নতুনদিল্লি, ১৪ই জুন, ২০২৩

 

 

আমার প্রিয় দেশবাসী,

 

দেশের ৭৭-তম স্বাধীনতা দিবসে আপনাদের সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা! এই দিনটি আমাদের সকলের জন্য গৌরবময় এবং পবিত্র । চারদিকে উৎসবমুখর আবহ দেখে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে । এটি আনন্দ এবং গর্বের বিষয়ও যে শহর ও গ্রামে,  ভারতের সর্বত্র শিশু,  যুবক-যুবতী থেকে  প্রবীণ নাগরিক – সবাই উৎসাহের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতার এই উৎসব উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাদের দেশবাসী বিপুল উৎসাহ নিয়ে ‘স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব’ উদযাপন করছেন।

 

স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের উৎসব আমাকে আমার শৈশবের দিনগুলোর কথাও মনে করিয়ে দেয়। আমাদের গ্রামের স্কুলে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সময় আমাদের আনন্দ যেন শেষ হতে চাইতো না। যখন ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করা হতো, আমাদের মনে হতো  শরীরে যেন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে। দেশপ্রেমের ভাবনায় আমরা সবাই জাতীয় পতাকাকে প্রণাম করতাম এবং জাতীয় সঙ্গীত গাইতাম। মিষ্টি বিতরণ করা হতো এবং দেশাত্মবোধক গান গাওয়া হতো।  আমাদের মনে বহু দিন পর্যন্ত তার রেশ থাকতো। এটা আমার সৌভাগ্য যে,  আমি যখন স্কুলের শিক্ষিকা হয়েছিলাম,  সেই অনুভূতিগুলোই আবার নতুন করে উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।

 

আমরা যখন বড় হই তখন আমরা হয়তো শিশুদের মতো আমাদের আনন্দ প্রকাশ করতে পারি না,  তবে আমি বিশ্বাস করি,  জাতীয় উৎসবগুলির সঙ্গে জড়িত দেশপ্রেমের গভীর আবেগ কিন্তু বিন্দুমাত্র কমে যায় না।

স্বাধীনতা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা শুধু আলাদা আলাদা মানুষই নই, বরং এমন একটি মহান জনসমষ্টির অংশ, যা এই সময়কালে বৃহত্তম এবং সবচেয়ে প্রাণবন্ত। এটি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের  নাগরিক সমাজ । 

 

আমরা যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করি,  প্রকৃতপক্ষে তখন একটি মহান গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হওয়ার উৎসবও উদযাপন করি। আমাদের প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় রয়েছে । জাতি, ধর্ম, ভাষা ও অঞ্চল ভেদে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা পরিচিতি ছাড়াও আমাদের পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত অন্য ধরণের পরিচিতিও থাকে। কিন্তু সবার উপরে আমাদের একটা পরিচিতি আছে,  আর সেটা হল আমরা সকলে ভারতের নাগরিক । আমরা সবাই, সমানভাবে, এই মহান দেশের নাগরিক। আমাদের সবার সমান সুযোগ সুবিধা ও অধিকার রয়েছে এবং আমাদের কর্তব্যও অভিন্ন।   

 

কিন্তু  সব সময় তো এমন ছিলো না। ভারত গণতন্ত্রের জননী,  আর প্রাচীনকালেও আমাদের তৃণমূল স্তরে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ছিল।  দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন সেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিলো। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট এ দেশ এক নতুন ভোর দেখেছে। সেদিন আমরা যেমন বিদেশি শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি, তেমনি  নিজেদের ভাগ্য পুনর্লিখনের স্বাধীনতাও অর্জন করেছি।

 

আমাদের স্বাধীনতার পাশাপাশি, বিদেশী শাসকদের বিশ্বের বিভিন্ন উপনিবেশগুলি থেকে সরে যাওয়ার নতুন যুগ শুরু হয় এবং উপনিবেশবাদ পরিসমাপ্তির কাছাকাছি চলে আসে।

আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্যপূরণ তো গুরুত্বপূর্ণ ছিলই,  কিন্তু তার থেকেও বেশি উল্লেখযোগ্য ছিল কিভাবে আমরা সেই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। মহাত্মা গান্ধী এবং অনেক অসাধারণ দূরদর্শী মনীষীদের নেতৃত্বে, আমাদের জাতীয় আন্দোলন  অদ্বিতীয় এক আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিল।

গান্ধীজি এবং অন্য মহানায়কেরা ভারতাত্মাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন এবং আমাদের মহান সভ্যতার মূল্যবোধগুলিকে অসংখ্য মানুষের মনে সঞ্চারিত করেছিলেন। ভারতের সাফল্যের উদাহরণ অনুসরণ করে,  আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্র 'সত্য ও অহিংসা'কে গোটা বিশ্বের বহু রাজনৈতিক সংগ্রামে সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। 

 

স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে,  আমি ভারতের সহ নাগরিকদের সঙ্গে মিলিতভাবে সমস্ত জানা-অজানা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি সকৃতজ্ঞ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি। তাঁদের আত্মবলিদানের মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার গৌরবময় স্থান পুনরুদ্ধার করেছে । মাতঙ্গিনী হাজরা এবং কনকলতা বড়ুয়ার মতো মহান বীরাঙ্গনারা ভারতমাতার মুক্তির জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। মা কস্তুরবা, জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে সত্যাগ্রহের কঠিন পথে সমান তালে এগিয়ে গেছেন। সরোজিনী নাইডু,  আম্মু স্বামীনাথন,  রমা দেবী,  অরুণা আসফ আলি এবং সুচেতা কৃপলানির মতো অনেক মহান নেত্রী আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দেশ ও সমাজের সেবায় নিয়োজিত থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মের সমস্ত মহিলাদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক আদর্শ স্থাপন করেছিলেন। আজ আমাদের মহিলারা দেশের উন্নয়ন ও সেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন এবং দেশের গৌরব বৃদ্ধি করছেন। আজ আমাদের মহিলারা এমন অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের বিশেষ স্থান তৈরি করেছেন,  যেখানে কয়েক দশক আগেও তাঁদের অংশগ্রহণ ছিল অকল্পনীয় । 

 

আমি এটা জেনে খুশি যে আজ আমাদের দেশে মহিলাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন পরিবার ও সমাজে নারীর  অবস্থানকে শক্তিশালী করে। আমি সকল নাগরিককে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেবার আর্জি জানাচ্ছি। আমি চাই আমাদের বোন এবং মেয়েরা সাহসের সঙ্গে চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠুন এবং জীবনে এগিয়ে যান। নারীসমাজের বিকাশ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শের অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো।

প্রিয় দেশবাসী,

 

স্বাধীনতা দিবস, আমাদের জন্য আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হওয়ার একটি উপলক্ষও । এটি আমাদের বর্তমানকে মূল্যায়ন করা এবং ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করা নিয়ে ভাবনা-চিন্তার একটি সুযোগও । আজ আমরা দেখছি যে ভারত শুধু বিশ্বমঞ্চে তার যথার্থ স্থানই ফিরে পায়নি,  আন্তর্জাতিক পরিসরে তার অবস্থানকেও সুদৃঢ় করেছে। আমার সাম্প্রতিক সফরগুলিতে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে আলাপচারিতার সময়, ভারতের প্রতি  নতুন এক আস্থা আমি  দেখতে পেয়েছি। ভারত, বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন এবং মানবিক লক্ষ্যপূরণে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । ভারত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে,  জি-টোয়েন্টি গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব তার এক নিদর্শন। 

    

যেহেতু জি-টোয়েন্টি দেশগুলি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে,  তাই বিশ্বজনীন বক্তব্যকে সঠিক দিশায় এগিয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য এটি এক অনন্য সুযোগ। জি-টোয়েন্টি দেশগুলির সভাপতি হিসেবে ভারত বাণিজ্য ও অর্থনীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে ন্যায়সঙ্গত অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। বাণিজ্য ও অর্থনীতির বাইরে মানব উন্নয়নের বিষয়গুলোও কর্মতালিকার অন্তর্ভূক্ত। এমন অনেক বিশ্বজনীন সমস্যা রয়েছে যা সমস্ত মানবজাতির জন্য উদ্বেগের এবং ভৌগোলিক সীমায় আবদ্ধ নয়। আমি আত্মবিশ্বাসী যে বিশ্বজনীন সমস্যা মোকাবিলায় এই ক্ষেত্রগুলিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলি ভারতের দক্ষ প্রমাণিত নেতৃত্বের সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। 

 

ভারতের জি-টোয়েন্টি দেশগুলির সভাপতিত্বে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো কূটনৈতিক তৎপরতাকে তৃণমূলস্তরে পৌঁছে দেওয়া। প্রথমবারের মত জনগণের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য অনন্য প্রচার চালানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে,  জি-টোয়েন্টি সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে ভিত্তি করে স্কুল এবং কলেজগুলিতে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ছাত্রছাত্রীরা উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করছেন । সমস্ত নাগরিক জি-টোয়েন্টি সম্পর্কিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।

প্রিয় দেশবাসী,

 

 আমাদের দেশ সমস্ত ক্ষেত্রে উন্নতি করছে বলেই ক্ষমতায়নের ভাবনায় এই উৎসাহ সঞ্চার সম্ভবপর হয়েছে। কঠিন সময়ে ভারতের অর্থনীতি  নিজেকে শুধু প্রাণবন্তই প্রমাণ করেনি,  একইসঙ্গে অন্যান্য দেশের জন্যেও আশার সঞ্চার করেছে। বিশ্বের অধিকাংশ অর্থনৈতিক শক্তি আজ সংবেদনশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী অতিমারির কারণে সৃষ্টি হওয়া দুনিয়াজোড়া আর্থিক সংকট থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসার আগেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ অনিশ্চয়তার এই পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবুও আমাদের সরকার খুব ভালোভাবেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে । ভারত এই চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে রূপান্তরিত করেছে এবং  জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে গিয়ে নতুন এক রেকর্ড স্থাপন করেছে। আমাদের অন্নদাতা কৃষকরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। দেশ তাঁদের কাছে ঋণী।    

 

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মূদ্রাস্ফীতি এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। সরকার সাধারণ মানুষের উপর ব্যাপক মূদ্রাস্ফীতির প্রভাব পড়তে দেয়নি এবং দরিদ্রদের আরও শক্তিশালী সুরক্ষা কবচ প্রদান করেছে। গোটা বিশ্ব আজ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশায় ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। ভারত আজ বিশ্বের পঞ্চম সর্ববৃহৎ আর্থিক শক্তি হয়ে উঠেছে | বিশ্বের দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারত তৃতীয় সর্ববৃহৎ আর্থিক শক্তি হয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে চলেছে | আমাদের আর্থিক অগ্রগতির এই যাত্রাপথে সমষ্টিগত উন্নয়নের ওপরই জোর দেওয়া হচ্ছে |     

 

নিরন্তর চলতে থাকা অর্থনৈতিক অগ্রগতির দুটি প্রধান মাত্রা রয়েছে । একদিকে, সহজে ব্যবসা করার নিশ্চয়তা এবং রোজগারের সুযোগ তৈরি করে শিল্প গড়ার সংস্কৃতিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে ।  অন্যদিকে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দরিদ্রদের জন্য কার্যকর এবং  কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । আমাদের নীতিপ্রণয়নে ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বঞ্চিতদের অগ্রাধিকারকে সবথেকে গুরুত্ব দেওয়া হয় | ফলস্বরূপ  বিগত এক দশকে বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে আসতে পেরেছেন। একইভাবে, আদিবাসীদের অবস্থার উন্নতি করতে এবং তাঁদেরকে দেশের অগ্রগতির যাত্রায় অংশগ্রহণে উৎসাহ যোগাতে নির্দিষ্ট কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে ।  আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনদের কাছে আমার আবেদন,  আপনারা নিজস্ব ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি আধুনিকতাকে গ্রহণ করুন।

 

আমি এটা জেনে আনন্দিত যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মানব কল্যানের বিষয়টিকেও  অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আমি একজন শিক্ষিকা ছিলাম। শিক্ষাই যে সামাজিক ক্ষমতায়নের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার তা আমি উপলব্ধি করতে পারি। ২০২০-র  জাতীয় শিক্ষা নীতি পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। বিভিন্ন স্তরে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদদের সঙ্গে  আলাপচারিতায় আমি জেনেছি যে,  শেখার প্রক্রিয়াটি আজ আরও নমনীয় হয়ে উঠেছে। প্রাচীন মূল্যবোধকে আধুনিক দক্ষতার সঙ্গে মেশানোর এই দূরদর্শী নীতি আগামী বছরগুলিতে শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনবে, যার ফলে দেশে একটি বড় পরিবর্তন দেখা যাবে । ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আমাদের জনগণের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়ণে শক্তি জোগাচ্ছে |  উন্নয়নের অপরিসীম সম্ভাবনাগুলি দেশবাসীর জন্য অপেক্ষা করে আছে। স্টার্ট-আপ থেকে শুরু করে খেলাধুলা- আমাদের তরুণরা উৎকর্ষের নতুন নতুন দিগন্তে ডানা মেলছেন।

 

আজকের নতুন ভারতের আকাঙ্ক্ষাগুলি অনন্ত অসীম।  ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা -ইসরো নতুন এক উচ্চতা স্পর্শ করেছে এবং শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে শীর্ষস্থানে এগিয়ে চলেছে। এই বছর, ইসরো,  চন্দ্রযান-তিন উৎক্ষেপন করেছে, এবং এর ল্যান্ডার 'বিক্রম'  ও রোভার 'প্রজ্ঞান' আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চাঁদে অবতরণ করবে। এটি আমাদের সকলের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত হবে, আর আমিও এর জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু এই চন্দ্রাভিযান  আমাদের ভবিষ্যত মহাকাশ কর্মসূচীর নিরিখে একটি পদক্ষেপ মাত্র। আমাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।

 

শুধু মহাকাশ অভিযানেই নয়,  বরং পৃথিবীর বুকেও নিজেদের যোগ্যতায় আমাদের বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা দেশের নাম উজ্জ্বল করছেন । গবেষণা, উদ্ভাবন এবং শিল্পোদ্যোগ চেতনাকে উৎসাহিত করতে,  আগামী পাঁচ বছরের জন্য ৫০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে সরকার ‘অনুসন্ধান ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ স্থাপন করছে। এই ফাউন্ডেশন আমাদের বিভিন্ন কলেজ,  বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গবেষণা ও উন্নয়নের ভিত রচনা করবে,  বিকশিত করবে এবং এগিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রিয় দেশবাসী,

 

জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎকর্ষ অর্জনই শুধু আমাদের লক্ষ্য নয়,  আমাদের কাছে তা গোটা মানব সভ্যতার উন্নতির মাধ্যম। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী এবং নীতিনির্ধারকদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আরও বেশি তৎপর হওয়া উচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা অনেক চরম-আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছি। ভারতের কিছু অংশ অস্বাভাবিক বন্যার সম্মুখীন হয়েছে। একই সময়ে,  কোন কোন জায়গা খরা পরিস্থিতির শিকার |  এই পরিস্থিতিগুলির জন্য বিশ্ব উষ্ণায়নকেই  দায়ী করা হয়। তাই পরিবেশের জন্য স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চেষ্টা চালাতে হবে । এই প্রেক্ষাপটে,  গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল  আমরা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। ভারত আন্তর্জাতিক সৌর জোটকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে আমাদের দেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ববাসীকে আমরা L.I.F.E অর্থাৎ পরিবেশ অনুকূল জীবনশৈলীর মন্ত্র দিয়েছি।

প্রিয় দেশবাসী, 

 

চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা সবাইকে প্রভাবিত করে। কিন্তু এর প্রভাব দরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষদের উপর অনেক বেশি পড়ে। বিশেষ করে শহর ও পার্বত্য অঞ্চলে  জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবিলায় আরও ব্যবস্থা নিতে হবে। 

 

আমি এটাও বলতে চাইবো,  লোভের সংস্কৃতি গোটা দুনিয়াকে প্রকৃতি থেকে দূরে নিয়ে যায়। আমরা এখন বুঝতে পারছি, আমাদের শিকড়ে ফিরে আসা খুব জরুরি। এখনও অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে যারা প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থাকেন এবং প্রকৃতির সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রেখে চলেন । তাঁদের জীবনের মূল্যবোধ এবং জীবনশৈলী জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণে  অতুলনীয় শিক্ষা প্রদান করে ।

 

যুগ যুগ ধরে জনজাতি সম্প্রদায়গুলির নিজস্ব অস্তিত্ব বজায় রাখার রহস্যকে একটি মাত্র শব্দে প্রকাশ করা যেতে পারে । সেই শব্দটি হল 'সহমর্মিতা'। জনজাতি মানুষেরা প্রকৃতিকে মা ভাবেন |  আর সেই মায়ের সন্তান-সন্ততি অর্থাৎ,  উদ্ভিদ এবং প্রাণীকুলের জন্য তাঁরা সংবেদনশীল । কখনও কখনও বিশ্বে সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে যে এই ধরনের পরিস্থিতি সামান্য সময়ের জন্যই আসে, কারণ করুণাই আমাদের মৌলিক স্বভাব । আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মহিলারা সহানুভূতির গুরুত্বকে অনেক গভীরভাবে অনুভব করেন এবং যখন মানবজাতি বিপথগামী হয় তখন তাঁরাই সঠিক পথ দেখান।

 

আমাদের দেশ নতুন শপথ নিয়ে 'অমৃত কাল'-এ প্রবেশ করেছে এবং আমরা ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আসুন আমরা সবাই নিজেদের সাংবিধানিক মূল কর্তব্য পালনের শপথ নিই আর  ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত উদ্যোগের সকল ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জনে মনযোগী হই, যাতে আমাদের দেশ নিরন্তর উন্নতির মাধ্যমে দক্ষতা এবং সাফল্যের নতুন নতুন  উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারে । 

প্রিয় দেশবাসী,

 

 

আমাদের সংবিধান আমাদের পথপ্রদর্শনের দলিল। সংবিধানের প্রস্তাবনায় নিহিত রয়েছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শ। আসুন আমরা আমাদের দেশ নির্মাতাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাই ।

 

 

স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে,  আমি আবারও আপনাদের সবাইকে,  বিশেষ করে, সীমান্তে প্রহরারত আমাদের সেনা জওয়ানদের, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রদানকারী সমস্ত বাহিনীর সদস্যদের এবং পুলিশ জওয়ানদের ও বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের অভিনন্দন জানাচ্ছি। প্রিয় দেশবাসী সবাইকে অনেক অনেক শুভ কামনা জানাই।

ধন্যবাদ!

জয় হিন্দ!

জয় ভারত!

AC/SB/CB…….14/7/23

 



(Release ID: 1948739) Visitor Counter : 606