প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

জি২০ বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাস কর্মীগোষ্ঠীর তৃতীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিবের ভাষণ

Posted On: 24 JUL 2023 7:06PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৪ জুলাই, ২০২৩

 

রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি শ্রীমতী মামি মিজুতোরি; ভারতের জি২০ শেরপা শ্রী অমিতাভ কান্ত; জি২০-র সদস্য এবং অতিথি দেশগুলির সহকর্মীগণ; কর্মীগোষ্ঠীর অধ্যক্ষ শ্রী কমল কিশোর; ভারতের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সহকর্মীগণ, ভদ্রমহোদয়া ও মহোদয়গণ,

বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাস কর্মীগোষ্ঠীর তৃতীয় বৈঠকে আপনাদের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এবছরের মার্চ মাসে গান্ধী নগরে আমরা প্রথম মিলিত হয়েছিলাম। তখন থেকে বিশ্ব বেশ কিছু অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। প্রায় সমগ্র উত্তর গোলার্ধের শহরগুলি প্রবল তাপপ্রবাহের কবলে। কানাডায় দাবানল এবং তার কারণে ধোঁয়াশায় উত্তর আমেরিকার অনেক অঞ্চলের শহরই বিপর্যস্ত। এখানে ভারতে আমাদের পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলে বেশ কয়েকটি বড় ঘূর্ণিঝড় দেখা গেছে। দিল্লিতে ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বন্যা হয়েছে। আর আমরা এখন বর্ষার মাঝপথেও আসিনি!

বন্ধুগণ, 

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিপর্যয়গুলির প্রভাব খুব দূরবর্তী নয়। তারা ইতিমধ্যেই এখানে উপস্থিত। এগুলি বিশাল। এগুলি আন্তঃসম্পর্কিত এবং এগুলির প্রভাব পড়ে এই গ্রহের সকলের উপর। বিশ্ব আজ যেসব সমস্যার সম্মুখীন তাতে এই কর্মীগোষ্ঠীর গুরুত্ব বোঝা যায়। মাত্র ৪ মাসেই কর্মীগোষ্ঠী যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটিয়েছে এবং কাজে গতি এনেছে। তবে আমাদের আরও বেশি কিছু করতে হবে। আমরা যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকতে হবে এই কর্মীগোষ্ঠীর লক্ষ্যের। আংশিক পরিবর্তনের সময় চলে গেছে। নতুন বিপর্যয় ঝুঁকি তৈরি রোধে এবং চলতি বিপর্যয়ের ঝুঁকিগুলির কার্যকরী ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের প্রয়োজন স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার আমূল রূপান্তর। এটা ঠিক যে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সক্রিয় প্রয়াসকে সংযুক্ত করতে হবে যাতে তার সম্মিলিত প্রভাব বেশি হয়। সংকীর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক পরিপ্রেক্ষিত দ্বারা চালিত আংশিক প্রয়াস কাম্য নয়। সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য নিয়েই আমাদের চলতে হবে।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিবের ‘সকলের জন্য আগাম সতর্কতা’ উদ্যোগ এরই একটি উদাহরণ। এখানে উল্লেখযোগ্য যে জি২০ তাদের পাঁচটি অগ্রাধিকারের মধ্যে একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘আগাম সতর্কতা এবং আগাম ব্যবস্থা’কে এবং পুরোপুরি জোর দিয়েছে তারই উপর। বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসে আর্থিক অনুদানের বিষয়ে সর্বক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্যের জন্য আমাদের একটি নির্দিষ্ট কাঠামোগত পরিকল্পনা অনুসরণ করা জরুরি। গত কয়েক বছরে ভারতে আমরা বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টির আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছি। শুধুমাত্র বিপর্যয় মোকাবিলা নয়, বিপর্যয় হ্রাস, প্রস্তুতি এবং ঘুরে দাঁড়ানোয় আর্থিক সাহায্যের জন্য বর্তমানে আমাদের একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে। আমরা কি আন্তর্জাতিক স্তরে এই ধরনের সহজ ব্যবস্থাপনা করতে পারি না? বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসের জন্য সম্ভাব্য আর্থিক সাহায্যের বিভিন্ন ধারার মধ্যে আমাদের আরও বেশি করে সমন্বয় ঘটাতে হবে। বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসের জন্য আর্থিক সাহায্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে জলবায়ু সংক্রান্ত অর্থ ব্যবস্থার মধ্যে। বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসের জন্য বেসরকারি অর্থ সাহায্য আনা একটি সমস্যা। কিন্তু এটা ছাড়া আমরা বেশিদুর যেতে পারবো না বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসের প্রয়োজন মেটাতে। বেসরকারি ক্ষেত্রকে অর্থ সাহায্য করতে উৎসাহী করার জন্য সরকারের কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? এই ক্ষেত্রে জি২০ কিভাবে গতি সঞ্চার করতে পারে? বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসে বেসরকারি লগ্নি যে শুধুমাত্র সামাজিক দায় তা নয়, এটাকে বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য করে তোলাও নিশ্চিত করতে জি২০-কে।

বিপর্যয় মোকাবিলায় সক্ষম পরিকাঠামো ক্ষেত্রে আমরা কয়েক বছর আগে রাষ্ট্রসঙ্ঘ, বেশ কয়েকটি জি২০ ভুক্ত দেশ এবং অন্যদের সঙ্গে যে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছি তার সুফল আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি। এই জোটের কাজ হল, বিকাশশীল ক্ষুদ্র দীপপুঞ্জ সহ দেশগুলিকে ঝুঁকির সমীক্ষা এবং মোকাবিলা করার বন্দোবস্ত ভালোভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করা, যাতে তাদের পরিকাঠামো উন্নয়নে লগ্নির পরিমাণ বাড়ে এবং বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনার মানের উন্নতি হয়। এই ভাবনাগুলিকেই আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমাদের কাজ করা জরুরি। আমাদের আরও দূরের বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে এবং সেই মতো পরিকল্পনা করতে হবে। গত কয়েক বছরে বিপর্যয়ের পরে আমাদের পুনর্গঠন কাজে অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, কিন্তু ভালো কাজকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পথ খুঁজতে হবে। ‘মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি’এর মতো আমাদের জোর দিতে হবে ‘ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুতি’-র উপর। যার পিছনে থাকবে আর্থিক ব্যবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা এবং সক্ষমতা। 

বন্ধুগণ, 

আমি খুশি যে, ৫টি অগ্রাধিকারভুক্ত বিষয়ে কর্মীগোষ্ঠী উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটিয়েছে সর্বক্ষেত্রে। আগামী কয়েকদিন আপনারা যে বিবৃতি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছেন, তার খসড়াটি আমি দেখেছি। এতে জি২০ দেশগুলির জন্য বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাস নিয়ে স্পষ্ট এবং কৌশলগত আলোচ্য বিষয় রাখা হয়েছে। আমার আশা গত ৪ মাসে এই গোষ্ঠীর আলোচনা থেকে যে সমন্বয়, সহমত এবং সহসৃষ্টির মনোভাব বেরিয়ে এসেছে তা আগামী ৩ দিন এবং তার পরেও বজায় থাকবে।

এই উদ্যোগে যাঁরা আমাদের সহায়তা করেছেন, তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আমি বিশেষ করে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি শ্রীমতী মামি মিজুতোরি-র কাছে কৃতজ্ঞ এই গোষ্ঠীর কাজে তাঁর আন্তরিক সহায়তার জন্য। এই কর্মীগোষ্ঠীর কর্মসূচিকে রূপ দেওয়ার কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য ত্রইকার ভূমিকায় আমরা অত্যন্ত খুশি। ইন্দোনেশিয়া, জাপান এবং মেক্সিকো সহ পূর্বতন সভাপতিত্বকারী দেশগুলির স্থাপন করা ভিত্তির উপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি এবং আমরা খুশি যে ব্রাজিল এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা বিশেষ করে আনন্দিত এই বৈঠকে ব্রাজিলের সেক্রেটরি ওলনেইকে স্বাগত জানাতে পেরে। আমরা সেক্রেটরি ওলনেই এবং তাঁর দলকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই যে, আপনারা আমাদের পূর্ণ সমর্থন পাবেন এবং এগিয়ে যেতে আমরা একযোগে কাজ করবো।

ভারতের জি২০ সভাপতিত্বকালে গত ৮ মাসে গোটা দেশ অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিয়েছে। এপর্যন্ত দেশের ৫৬টি জায়গায় ১৭৭টি বৈঠক হয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তাঁরা ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের সাক্ষী থেকেছেন। জি২০-র আলোচ্যসূচি অনুযায়ী অনেক অগ্রগতি ঘটেছে। আমি নিশ্চিত যে, দেড় মাস পরে যে শিখর সম্মেলন হবে, তা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হতে চলেছে। এর জন্য আপনাদের সকলের অবদান খুব উল্লেখযোগ্য।

বিশ্বের জন্য বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে একটি অর্থবহ উপসংহার যাতে জি২০-র আগামী দিনগুলির আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে তার জন্য আমি আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। 

AC/AP/SKD



(Release ID: 1948544) Visitor Counter : 106