প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মহারাষ্ট্রের পুনেতে একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী


পুনে মেট্রোর সম্পূর্ণ হওয়া অংশের উদ্বোধন করে মেট্রোর যাত্রার সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় নির্মিত বাড়িগুলির হস্তান্তর এবং নির্মিত হতে চলা বাড়িগুলির শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের উদ্বোধন

“পুনে এমন এক প্রাণবন্ত শহর যা দেশের অর্থনীতিকে গতি দেয় এবং সারা দেশের যুব সমাজের স্বপ্নপূরণ করে”

“আমাদের সরকার নাগরিকদের জীবনযাপনের মানোন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”

“আধুনিক ভারতের শহরগুলিতে মেট্রো এক নতুন জীবনরেখা হয়ে উঠছে”

“স্বাধীনতার পর থেকেই মহারাষ্ট্রের শিল্পোন্নয়ন, ভারতের শিল্পোন্নয়নকে পথ দেখাচ্ছে”

“গরিব বা মধ্যবিত্ত, প্রত্যেকের স্বপ্নপূরণ করা মোদীর গ্যারান্টি”

Posted On: 01 AUG 2023 3:11PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১ আগস্ট, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী পুনে মেট্রোর সম্পূর্ণ হওয়া অংশের উদ্বোধন উপলক্ষে কয়েকটি মেট্রোর যাত্রার সূচনার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় পিম্পরি চিঞ্চওয়ার পুর নিগম (পিসিএমসি)-র তৈরি করা ১ হাজার ২৮০টিরও বেশি এবং পুনে পুরসভার তৈরি করা ২ হাজার ৬৫০টিরও বেশি বাড়ি তিনি সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দেন। পিসিএমসি-র উদ্যোগে ১ হাজার ১৯০টি বাড়ি এবং পুনে নগর আঞ্চলিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে তৈরি হতে চলা ৬ হাজার ৪০০টিরও বেশি বাড়ির শিলান্যাস করেছেন তিনি। পিসিএমসি-র উদ্যোগে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্ল্যান্টেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগাস্ট হল বিপ্লব এবং উদযাপনের মাস। স্বাধীনতা সংগ্রামে পুনে শহরের অবদানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শহর বাল গঙ্গাধর তিলক সহ বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীকে উপহার দিয়েছে। আজকের দিনটি ডঃ বাবা সাহেব আম্বেদকরের ভাবনায় অনুপ্রাণিত বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক আন্নাভাউ সাথের জন্মদিন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজও বহু ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষাবিদ আন্নাভাউ সাথের সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর কাজ ও জীবন সকলের কাছে অনুপ্রেরণার এক উৎস হয়ে রয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুনে এমন এক প্রাণবন্ত শহর, যা দেশের অর্থনীতিকে গতি দেয় এবং সমগ্র দেশের যুব সমাজের আশাআকাঙ্খা পূরণ করে। আজ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সূচনা হল, তা পুনের এই অনন্য পরিচয়কে আরও স্পষ্ট করে তুলবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।

দেশের শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনযাপনের মানোন্নয়নের উপর সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুনে মেট্রোর কাজ ৫ বছর আগে শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো নেওয়ার্কে ট্রেন চলাচল করছে। 

প্রতিটি শহরে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শ্রী মোদী গণ পরিবহন পরিকাঠামো উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, মেট্রো নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, নতুন উড়ালপুল গড়ে তোলা হচ্ছে, ট্রাফিক লাইটের সংখ্যা কমানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৪ সালের আগে দেশে মেট্রো নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র আড়াইশো কিলোমিটার। এর অধিকাংশই আবার ছিল দিল্লি কেন্দ্রিক। আজ মেট্রো নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য ৮০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। ১ হাজার কিলোমিটার নতুন মেট্রো লাইন পাতার কাজ চলছে। ২০১৪ সালের আগে যেখানে দেশের মাত্র ৫টি শহরে মেট্রো ছিল, সেখানে আজ পুনে, নাগপুর, মুম্বাই সহ ২০টি শহরে মেট্রো চলাচল করছে। পুনের মতো শহরে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় মেট্রো সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক ভারতের শহরগুলিতে মেট্রো এক নতুন জীবনরেখা হয়ে উঠছে। 

শহুরে জীবনের মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী পরিচ্ছন্নতার ভূমিকার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, স্বচ্ছ ভারত অভিযান কেবল শৌচাগার নির্মাণেই সীমাবদ্ধ নয়, এর একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। মিশন মোডে জঞ্জালের পাহাড় অপসারণ করা হচ্ছে। পিসিএমসি-র অধীনে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে প্ল্যান্ট গড়ে উঠেছে, তিনি তার সুফল ব্যাখ্যা করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই মহারাষ্ট্রের শিল্পোন্নয়ন, ভারতের শিল্পোন্নয়নকে পথ দেখাচ্ছে। রাজ্যে আরও শিল্পোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এই লক্ষ্যে মহারাষ্ট্র সরকার নজিরবিহীন বিনিয়োগ করেছে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে নতুন এক্সপ্রেসওয়ে, রেল রুট ও বিমানবন্দর নির্মাণের নিদর্শন তুলে ধরেন। তাঁর সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর রেলের সম্প্রসারণের জন্য ব্যয় ১২ গুণ বেড়েছে বলে তিনি জানান। মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর প্রতিবেশী রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মুম্বাই-আহমেদাবাদ উচ্চগতি সম্পন্ন রেলের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এর থেকে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট দুই রাজ্যই উপকৃত হবে। দিল্লি-মুম্বাই অর্থনৈতিক করিডর মহারাষ্ট্রকে মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। জাতীয় পণ্য পরিবহণ করিডর মহারাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর ভারতের রেল সংযোগের ছবিটাই পাল্টে দেবে। পরিবহণ লাইন নেটওয়ার্ক মহারাষ্ট্রকে ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করবে, যার ফলে বিভিন্ন শিল্প, তেল ও গ্যাস পাইপ লাইন, ঔরঙ্গাবাদ শিল্প শহর, নভি মুম্বাই বিমানবন্দর এবং শেনড্রা বিদকিন শিল্প পার্ক উপকৃত হবে। এইসব প্রকল্প মহারাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নতুন শক্তির সঞ্চার করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার রাজ্যগুলির উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়নের মন্ত্র গ্রহণ করেছে। মহারাষ্ট্রের উন্নতি হলে ভারতের উন্নতি হবে। ভারত বিকাশ লাভ করলে মহারাষ্ট্রও তার সুফল ভোগ করবে। উদ্ভাবন ও স্টার্ট-আপ –এর কেন্দ্র হিসেবে ভারতের ক্রমবর্ধমান পরিচিতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯ বছর আগে ভারতে মাত্র কয়েকশো স্টার্ট-আপ ছিল। আজ স্টার্ট-আপ –এর সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে দেশের ডিজিটাল পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ। ভারতের ডিজিটাল পরিকাঠামোর ভিত্তি হিসেবে পুনের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, সস্তায় পাওয়া ডেটা, সুলভে পাওয়া ফোন এবং প্রতিটি গ্রামে ইন্টারনেটের সুবিধা এই ক্ষেত্রকে মজবুত করতে সাহায্য করেছে। যেসব দেশ সবথেকে দ্রুত ফাইভ-জি পরিষেবা আনতে চলেছে, তাদের মধ্যে ভারত অন্যতম। আর্থিক প্রযুক্তি, জৈব প্রযুক্তি ও কৃষি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যুব সমাজের অগ্রগতির সুবিধা পুনে ভোগ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

কর্ণাটক ও বেঙ্গালুরুতে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। কর্ণাটক ও রাজস্থানে উন্নয়ন থমকে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক নীতি, সদিচ্ছা এবং সঠিক নিয়ম সমান গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালের আগের ১০ বছরে দুটি প্রকল্পের আওতায় মাত্র ৮ লক্ষ বাড়ি নির্মিত হয়েছিল বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে ২ লক্ষেরও বেশি বাড়ি (যার মধ্যে মহারাষ্ট্রের ৫০ হাজার বাড়ি রয়েছে) এত নিম্নমানের হয়েছিল যে, সুবিধাভোগীরা তা নিতে অস্বীকার করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করতে শুরু করে এবং এসংক্রান্ত নীতিতে পরিবর্তন আনে। গত ৯ বছরে সরকার গরিব মানুষের জন্য গ্রামে ৪ কোটি পাকা বাড়ি এবং শহরে ৭৫ লক্ষেরও বেশি বাড়ি নির্মাণ করেছে। এইসব নির্মাণের ক্ষেত্রে যে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলির গুণমানেরও উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এই প্রথম এইসব বাড়ির অধিকাংশই মহিলাদের মালিকানায় নিবন্ধীভূক্ত হচ্ছে। বাড়িগুলি নির্মাণে খরচ হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। অর্থাৎ দেশের কোটি কোটি মহিলা গত ৯ বছরে লাখপতি হয়েছেন। যাঁরা নতুন বাড়ি পেলেন, তাঁদের প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব বা মধ্যবিত্ত প্রত্যেকের স্বপ্ন পূরণ করা মোদীর গ্যারান্টি। তিনি বলেন, এক স্বপ্নের পূরণ থেকে আরও বহুবিধ আকাঙ্খার সূত্রপাত হয় এবং এগুলিই একজন মানুষের জীবনে চালিকাশক্তির কাজ করে। সরকার নাগরিকদের সন্তান, তাঁদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধ বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। 

বক্তব্যের শেষে এসে একটি মারাঠি প্রবচনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার শুধু আজকের দিনটি ভালো করার প্রয়াসই চালায় না, আগামী দিনকেও আরও ভালো করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে। বিকশিত ভারত গড়ে তোলার সংকল্প এই ভাবনারই প্রকাশ। তিনি বলেন, সকলকে একযোগে মহারাষ্ট্রের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতা পেলে আরও দ্রুত গতিতে মহারাষ্ট্রের উন্নয়ন হবে।

মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রী রমেশ বাইস, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী একনাথ শিন্ডে, উপমুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও অজিত পাওয়ার এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 
 



(Release ID: 1945717) Visitor Counter : 114