প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মহারাস্ট্রের পুণেতে লোকমান্য তিলক পুরষ্কার সমারোহ ২০২৩ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 01 AUG 2023 3:22PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১লা আগস্ট, ২০২৩

লোকমান্য তিলকজির আজ একশো তিনতম প্রয়াণ দিবস। মহারাস্ট্রের মাটি  দেশের অনেক মহানায়কের জন্ম দিয়েছে সেই ভূমিকে আমি কোটি কোটি প্রণাম জানাই।  
অনুষ্ঠানে উপস্থিত শ্রদ্ধেয় শ্রী শরদ পাওয়ার জি, মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রী রমেশ বৈশ্য জি, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী একনাথ শিন্দে জি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ জি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অজিত পাওয়ার জি, লোকমান্য তিলক ট্রাস্টের সভাপতি শ্রী দীপক তিলক জি , প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আমার বন্ধু শ্রী সুশীল কুমার শিন্দে জি, লোকমাণ্য তিলক পরিবারের সকল সম্মানিত সদস্য এবং এখানে উপস্থিত আমার প্রিয়  ভাই ও বোনেরা!
আজকের এই দিনটি আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখানে এসে যতটা উৎসাহিত ততটা আবেগপ্রবণও হয়েছি । আজ আমাদের সকলের আদর্শ এবং ভারতের গর্ব বাল গঙ্গাধর তিলক জির মৃত্যুবার্ষিকী। সেই সঙ্গে আজ অন্নভাউ সাঠে জির জন্মজয়ন্তীও। লোকমান্য তিলক জির অবদান আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কপালের তিলকের মতো উজ্জ্বল। তাঁর পাশাপাশি আন্নাভাউ সাঠ জি-ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে যেসব অবদান রেখেছেন তা অতুলনীয়, অসাধারণ। এই দুই মহাপুরুষের চরণে আমার বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
আজ, এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে, আমি ভাগ্যবান যে মহারাষ্ট্রের পুণে ভূখণ্ডের এই পবিত্র ভূমিতে আসার সুযোগ পেয়েছি। এই পবিত্র ভূমি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের ভূমি, এটি চাপেকর ভাইদের পূণ্যভূমি। এই ভূমির সঙ্গে জ্যোতিবা ফুলে, সাবিত্রী বাই ফুলের অনুপ্রেরণা ও আদর্শ যুক্ত রয়েছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে, আমি দগডু শেঠ মন্দিরে গণপতির আশীর্বাদও নিয়েছি। এটিও পুণে জেলার ইতিহাসের একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় দিক। দগডু শেঠই প্রথম ব্যক্তি, যিনি লোকমান্য তিলক জির আহ্বানে গণেশ মূর্তি স্থাপনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই ভূকে প্রণাম জানানোর সময়, আমি এই সমস্ত মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রণাম জানাই।
বন্ধুগণ,  
আজ পুনেতে আপনাদের সকলের মধ্যে এসে আমি যে সম্মান পেয়েছি তা আমার জীবনের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। যে স্থান এবং যে সংস্থা সরাসরি তিলকজির সঙ্গে যুক্ত, তেমন     একটি স্থান এবং সংস্থা থেকে লোকমান্য তিলক জাতীয় পুরস্কার পাওয়া আমার জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। এই সম্মানের জন্য আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে হিন্দ স্বরাজ্য সংঘ  এবং আপনাদের সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আর আমি এটাও বলতে চাই যে, আমরা যদি একটু উপর থেকে দেখি, তাহলে আমাদের দেশে কাশী এবং পুণে দু’টো নগরীরই একটি বিশেষ পরিচয় রয়েছে। এই দুই শহরেই বুদ্ধিবৃত্তি চিরন্তন, অমরত্ব লাভ করেছে। আর বুদ্ধিবৃত্তিতে যে শহরের স্থান অদ্বিতীয়, সেই ভূমিতে সম্মানিত হওয়ার চাইতে বড় ঘটনা আমার জীবনে আর কিছু হতে পারে না। এই সম্মান আমাকে প্রভূত গর্ব ও তৃপ্তির অনুভূতি দিয়েছে। কিন্তু বন্ধুরা, আমরা যখন কোনও পুরস্কার পাই, তার সঙ্গে আমাদের দায়িত্বও বেড়ে যায়। আর যখন সেই পুরস্কারের সঙ্গে লোকমান্য তিলকজির নাম যুক্ত থাকে, তখন দায়িত্ববোধ বহুগুণ বেড়ে যায়। আমি এই লোকমান্য তিলক জাতীয় পুরস্কার আমার প্রিয় ১৪০ কোটি দেশবাসীর পায়ে উৎসর্গ করছি। আমি দেশবাসীকেও আশ্বস্ত করছি যে, আমি তাঁদের সেবায় এবং তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কোনও ত্রুটি রাখবো না। লোকমান্য তিলক জির নামে গঙ্গাধর আছে, এই পুরস্কারের সঙ্গে আমি যে অর্থমূল্য পেয়েছি তা আমি গঙ্গাজির নামে উৎসর্গ করছি। এই  পুরস্কারের টাকা আমি ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পে দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বন্ধুগণ,  
ভারতের স্বাধীনতায় লোকমান্য তিলকের ভূমিকা, তাঁর অবদানকে কিছু ঘটনার বর্ণনা  ও কিছু শব্দের মাধ্যমে তুলে ধরা যায় না। তিলকজির সময়ে এবং তার পরেও, স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সম্পর্কিত যত ঘটনা ও আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে, সেই সময়ে যত মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামী  হয়েছেন, সেই সংগ্রামে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন,তাঁদের সবার ওপর তিলকজির সুস্পষ্ট ছাপ ছিল। সেজন্যে, এমনকি খোদ ব্রিটিশরাও তিলক জিকে ‘ দ্য ফাদার অফ দ্য ইন্ডিয়ান আনরেস্ট’ বা  'ভারতীয় অশান্তির জনক' বলতেন। তিলক জি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সম্পূর্ণ গতিপ্রকৃতিই বদলে দিয়েছিলেন। ব্রিটিশরা যখন বলত ভারতীয়রা নিজেদের দেশ নিজেরা শাসন করতে সক্ষম নয়, তখন লোকমান্য তিলক বলেছিলেন- 'স্বরাজ্ আমাদের জন্মগত অধিকার'। ব্রিটিশদের একটা ধারণা ছিল যে ভারতের আস্থা, সংস্কৃতি, বিশ্বাস - এগুলো সবই পশ্চাদপদতার প্রতীক। কিন্তু তিলকজি এটাও ভুল প্রমাণ করেন। সেজন্যেই, ভারতের জনগণ    শুধু নিজেরা এগিয়ে এসে তিলককে লোকমান্যতা প্রদান করেননি, তাঁকে লোকমান্য উপাধিও দিয়েছিলেন। আর দীপক জি যেমনটি বলেছেন, স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী লোকমান্য তিলককে 'আধুনিক ভারতের স্রষ্টা' বলেছেন। এ থেকে আমরা কল্পনা করতে পারি, তিলকজির চিন্তাভাবনা কতটা বিস্তৃত ছিল, তাঁর ভাবনাচিন্তা কতটা দূরদর্শী ছিল!
বন্ধুগণ,  
একজন মহান নেতা তিনিই হন, যিনি শুধুমাত্র একটি মহান লক্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করেন না, সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাও তৈরি করেন। এ জন্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়, সবার বিশ্বাসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। লোকমান্য তিলকের জীবনে আমরা এই সব গুণ দেখতে পাই। ব্রিটিশরা তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করে, তাঁকে নির্যাতন করা হয়। তিনি স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠেন, আর একই সঙ্গে তিনি টিম স্পিরিট বা যূথবদ্ধ মনোভাব, সমবায় ও সহযোগিতার অনুকরণীয় উদাহরণও স্থাপন করেছেন। শ্বাস, লালা লাজপত রায় এবং বিপিন চন্দ্র পালের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা, তাঁর বিশ্বাস, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি সোনালী অধ্যায় রচনা করেছে। আজও যখন আলোচনা হয়, তখন এই তিনজনকে, এই তিনজনের নাম ত্রিমূর্তি হিসেবে স্মরণ করা হয় - লাল-বাল-পাল! সেই সময়ে তিলক জি দেশে স্বাধীনতার আওয়াজ ও স্পৃহাকে শক্তিশালী করে তুলতে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের গুরুত্ব অনুধাবন করেছিলেন। একটু আগেই মাননীয় শরদ রাও জি যেমন বলেছেন, তিলকজি তখন ইংরেজিতে 'দ্য মারাঠা' সাপ্তাহিক শুরু করেন এবং গোপাল গণেশ আগরকর এবং বিষ্ণুশাস্ত্রী চিপলুঙ্কর জির সঙ্গে মিলে তিনি মারাঠি ভাষায় 'কেশরী' পত্রিকা শুরু করেন। ১৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আজও কেশরী মহারাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়ে চলেছে, এটি মানুষের প্রিয় সংবাদপত্র। এই দীর্ঘ জনপ্রিয়তাই প্রমাণ যে তিলকজি কত শক্তিশালী ভিত্তির উপর এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন।
বন্ধুগণ,  
এরকম কিছু প্রতিষ্ঠানের মতো লোকমান্য তিলক আমাদের দেশের পরম্পরাগুলিকেও লালন করেছিলেন। তিনি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে সার্বজনীন গণপতি মহোৎসবের ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের সাহস ও আদর্শের প্রাণশক্তিতে সমাজকে পূর্ণ করার জন্য শিব জয়ন্তীর আয়োজন শুরু করেন। এই আয়োজনগুলি ভারতকে সাংস্কৃতিক সুতোয় গাঁথার একটি প্রচেষ্টা যেমন ছিল, তেমনি পূর্ণ স্বরাজের একটি সম্পূর্ণ সংকল্পও ছিল। এটাই ছিল ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার বিশেষত্ব। ভারত সবসময়ই এমন সব নেতৃত্বের জন্ম দিয়েছে, যাঁরা স্বাধীনতার মতো বড় লক্ষ্যের জন্যও লড়াই করেছেন আর  সামাজিক কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন পথও দেখিয়েছেন। আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য এটি একটি বড়ো শিক্ষা।
ভাই ও বোনেরা,
লোকমান্য তিলক আরও জানতেন যে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতি গঠনের অভিযান, ভবিষ্যতের দায় সবসময় তরুণদের কাঁধে বর্তায়। তিনি ভারতের ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষিত এবং যোগ্য যুবকদের তৈরি করতে চেয়েছিলেন। লোকমান্য তিলকের মধ্যে যুবকদের প্রতিভাকে চিহ্নিত করার যে দিব্যদৃষ্টি ছিল, তার উদাহরণ আমরা পাই বীর সাভারকর সম্পর্কিত ঘটনায়। সাভারকরজী তখন তরুণ। তিলকজি তার সম্ভাবনাকে চিনতে পেরেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে সাভারকর বিদেশে গিয়ে ভালো পড়াশোনা করুক এবং ফিরে এসে স্বাধীনতার জন্য কাজ করুক। ব্রিটেনে, এরকম যুবকদের সুযোগ দেওয়ার জন্য  শ্যামজি কৃষ্ণ ভার্মা দুটি বৃত্তি চালাতেন - একটি বৃত্তির নাম ছিল ছত্রপতি শিবাজি বৃত্তি এবং অন্য বৃত্তিটির নাম ছিল - মহারানা প্রতাপ বৃত্তি! তিলকজি বীর সাভারকরের জন্য শ্যামজি কৃষ্ণ ভার্মাকে সুপারিশ করেছিলেন, যাতে এই সুযোগ নিয়ে তিনি লন্ডনে ব্যারিস্টার হতে পারেন। তিলকজি এরকম আরও অনেক যুবককে দেশের স্বার্থে প্রস্তুত করেছিলেন। নিউ ইংলিশ স্কুল, ডেকান এডুকেশন সোসাইটি এবং পুনেতে ফার্গুসন কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান স্থাপন তাঁর স্বপ্নের অংশ। এই প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে এমন অনেক যুবক তৈরি হয়েছিলেন, যাঁরা তিলকজির মিশনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, জাতি গঠনে তাঁদের ভূমিকা পালন করেছিলেন। সিস্টেম বিল্ডিং বা ব্যবস্থা গঠন থেকে প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রতিষ্ঠান গঠন থেকে ব্যক্তির চরিত্র গঠন এবং ব্যক্তির চরিত্র গঠন থেকে জাতি গঠন, এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতির ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে একটি রোডম্যাপের মতো। দেশ আজ কার্যকরভাবে এই রোডম্যাপ অনুসরণ করছে।

বন্ধুগণ,  

যদিও তিলকজি সমগ্র ভারতের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, কিন্তু পুনে ও মহারাষ্ট্রের মানুষের কাছে  তাঁর একটি আলাদা জায়গা রয়েছে, তেমনি গুজরাটের মানুষের সঙ্গেও তাঁর একই রকম সম্পর্ক রয়েছে। আজ, এই বিশেষ উপলক্ষ্যে, আমিও সেসব কথা স্মরণ করছি। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তিনি আহমেদাবাদ সবরমতি জেলে প্রায় দেড় মাস ছিলেন। এর পরে, ১৯১৬ সালে তিলকজি আহমেদাবাদে আসেন, আর আপনারা জেনে খুশি হবেন যে সেই সময়ে যখন প্রতি পদক্ষেপে  ব্রিটিশদের দ্বারা সম্পূর্ণ অত্যাচার ছিল, তখন চল্লিশ হাজারেরও বেশি মানুষ তিলকজিকে স্বাগত জানাতে এবং তাঁর কথা শুনতে আহমেদাবাদে এসেছিলেন। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলও সেই সময় তাঁর কথা শোনার জন্য দর্শকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন । তাঁর বক্তৃতা সরদার সাহেবের মনে আলাদা ছাপ ফেলে।
পরে, সর্দার প্যাটেল আহমেদাবাদ পৌরসভার সভাপতি হন, পৌরসভার সভাপতি হন। আর আপনারা দেখুন, সেই সময়ের মহান ব্যক্তিত্বের চিন্তাভাবনা কেমন ছিল, সর্দার প্যাটেল সেই সময়ে আহমেদাবাদে তিলকজির মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর তিনি শুধু মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেননি, সর্দার সাহেব যে ভবিষ্যতে লৌহমানব হিসেবে পরিচিত হবেন, তার পরিচয়ও পাওয়া যায় তাঁর সেই সিদ্ধান্তে। সর্দার সাহেব লোকমান্য তিল্কের মূর্তি স্থাপ্নের জন্য যে জায়গাটা বেছে নিয়েছিলেন সেটা ছিল ভিক্টোরিয়া গার্ডেন! ব্রিটিশরা রাণী ভিক্টোরিয়ার হীরক জয়ন্তী উদযাপনের জন্য ১৮৯৭ সালে আহমেদাবাদে ভিক্টোরিয়া গার্ডেন তৈরি করেছিল। অর্থাৎ, সর্দার প্যাটেল ব্রিটিশ রানির নামে গড়ে তোলা পার্কের বুকে একজন মহান বিপ্লবী লোকমান্য তিলকের মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। আর সে সময় সর্দার সাহেবের উপর অনেক চাপ আসে, তাকে থামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সর্দার ছিলেন প্রকৃতই একজন সর্দার, সর্দার প্যাটেল বলেছিলেন যে প্রয়োজনে তিনি তাঁর পদ ছেড়ে দিতে রাজি, কিন্তু সেখানেই লোকমান্য তিলকের মূর্তি স্থাপন করা হবে। এবং তিনি সেখানেই সেই মূর্তিটি স্থাপন করেছিলেন, আর ১৯২৯ সালে মহাত্মা গান্ধী সেই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছিলেন। আহমেদাবাদে থাকার সময়, আমি বহুবার সেই পবিত্র স্থানটি দেখার এবং তিলকজির মূর্তির সামনে মাথা নত করার সুযোগ পেয়েছি। সেটি একটি দুর্দান্ত মূর্তি, যেখানে তিলকজি বিশ্রামের ভঙ্গিতে বসে আছেন। মনে হয় যেন তিনি স্বাধীন ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন। আপনি কল্পনা করতে পারেন, দাসত্বের সময়ও সর্দার সাহেব তাঁর দেশের সন্তানের সম্মানে সমগ্র ব্রিটিশ শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। আর আজকের অবস্থা দেখুন। আজ আমরা যদি কোনও বিদেশী হানাদারের নামে রাখা একটি রাস্তার নামও বদলে কোনও ভারতীয় মনীষীর নামে রাখি, তাহলে, কিছু লোক তা নিয়ে হৈচৈ শুরু করেন, তাঁদের রাতের ঘুম নষ্ট হয়।
বন্ধুগণ,  
লোকমান্য তিলকের জীবন থেকে আমরা এমন অনেক কিছু শিখতে পারি। লোকমান্য তিলক ছিলেন একজন গীতার আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি। তিনি গীতার কর্মযোগকে নিজের জীবনে প্রয়োগ করে বেঁচে ছিলেন। তাঁকে থামাতে ব্রিটিশরা তাকে ভারতের সুদূর পূর্বাঞ্চলের মান্ডলে কারাগারে বন্দী করে। কিন্তু, সেখানেও তিলক তাঁর গীতা অধ্যয়ন চালিয়ে যান। 'গীতা রহস্য'-এর মাধ্যমে, তিনি প্রতিটি সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য দেশকে কর্মযোগের সহজ পাঠ উপহার দিয়েছেন, কর্মের শক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

বন্ধুগণ,  
আজ আমি বাল গঙ্গাধর তিলক জির ব্যক্তিত্বের আরেকটি দিকের দিকে দেশের তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তিলকজীর একটি বড় বিশেষত্ব ছিল যে তিনি চাইতেন মানুষ যেন নিজের প্রতি বিশ্বাসকে খুব জোরালো করে, আর তিনি তাঁদেরকে এটা করতে শেখাতেন, তিনি তাঁদের আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে দিতেন। গত শতাব্দীতে, যখন জনগণের মনে এটা গেঁথে গিয়েছিল যে ভারত দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙতে পারবে না, তখন তিলকজী মানুষের মনে স্বাধীনতার আস্থা ও বিশ্বাস জাগান। তিনি আমাদের ইতিহাসে বিশ্বাস করতেন। তিনি আমাদের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করতেন। তিনি তাঁর দেশের জনগণকে বিশ্বাস করতেন। দেশের শ্রমিককর্মীদের প্রতি, শিল্পোদ্যোগীদের প্রতি তাঁর আস্থা ছিল, ভারতের সম্ভাবনায় তাঁর বিশ্বাস ছিল। যে সময়ে ভারতের প্রসঙ্গ উঠতেই বলা হতো যে, এখানকার মানুষগুলো এমনই, আমাদের দ্বারা কিছুই হতে পারে না! কিন্তু তিলকজি এই হীনমন্যতার মিথকে ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন, দেশবাসীর মনে তাঁদের সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাস এনে দিয়েছিলেন।
বন্ধুগণ,  
অবিশ্বাসের পরিবেশে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। গতকাল দেখছিলাম, পুণের এক ভদ্রলোক শ্রী মনোজ পোচাটজি আমাকে টুইট করেছেন। তিনি আমাকে ১০ বছর আগে পুণে আসার কথা মনে করিয়ে দেন। সেই সময়ে, তিলক জি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ফার্গুসন কলেজে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তখনকার ভারতে ‘ট্রাস্ট ডেফিসিট’ বা আস্থার ঘাটতির কথা বলেছিলাম। এখন মনোজজি আমাকে ‘ট্রাস্ট ডেফিসিট’ থেকে ‘ট্রাস্ট সারপ্লাস’ বা উদ্বৃত্ত আস্থার পথে দেশের যাত্রা সম্পর্কে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছেন! এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উত্থাপন করার জন্যে আমি মনোজজির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।
ভাই ও বোনেরা,
আজ, ভারতে এই ‘ট্রাস্ট সারপ্লাস’ দেশের নীতি প্রণয়নে যেমন স্পষ্ট প্রতীয়মান,দেশবাসীর কঠোর পরিশ্রমেও তা সমানভাবে প্রতিফলিত! গত ৯ বছরে, ভারতের জনগণ বড় পরিবর্তনের ভিত্তি স্থাপন করেছে, তাঁরা বড় পরিবর্তন করে দেখিয়েছে। সর্বোপরি, কীভাবে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হল? এটা ভারতের জনগণই করে দেখিয়েছে। আজ আমাদের দেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের উপর নির্ভর করছে, আর তার নাগরিকদের উপরও নির্ভর করছে। করোনার সঙ্কটে ভারত তার বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস করেছিল এবং তাঁরা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ করোনার টিকা তৈরি করে দেখিয়েছে। আর এক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছে আমাদের পুনেও। আমরা স্বনির্ভর ভারতের কথা বলছি, কারণ আমরা বিশ্বাস করি ভারত এটা করতে পারে।
আমরা দেশের সাধারণ মানুষকে কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই মুদ্রা ঋণ দিচ্ছি, কারণ তাঁদের সততা ও কর্তব্যপরায়ণতায় আমাদের বিশ্বাস আছে। আগে ছোটখাটো কাজের জন্য সাধারণ মানুষকে দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো। আজ মোবাইলে এক ক্লিকেই বেশির ভাগ কাজ হয়ে যাচ্ছে। আজ সরকার কাগজপত্র সত্যার্পিত করতে আপনার নিজের স্বাক্ষরের উপর নির্ভর করছে। এ কারণে দেশে ভিন্ন পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। আর আমরা দেখছি কিভাবে বিশ্বাসে পরিপূর্ণ দেশের মানুষ নিজেরাই দেশের উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। এই জনবিশ্বাসই ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’কে একটি গণআন্দোলনে রূপান্তরিত করেছিল। এই জনবিশ্বাসই ‘বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও অভিযান’কে একটি গণআন্দোলনে রূপান্তরিত করেছিল। লাল কেল্লার প্রাকার থেকে উচ্চারিত আমি একবার মাত্র আহ্বান জানিয়েছিলাম, ‘যাঁরা সক্ষম তাঁরা গ্যাস ভর্তুকি ছেড়ে দিন!’ আর লক্ষ লক্ষ মানুষ রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন। কিছুদিন আগে অনেক দেশে একটি জরিপ করা হয়েছিল। এই সমীক্ষায় জানা গেছে, যে দেশের নাগরিকদের তাঁদের সরকারের প্রতি সবচেয়ে বেশি আস্থা রয়েছে তার নাম ভারত। এই পরিবর্তনশীল জনমন, এই ক্রমবর্ধমান জনবিশ্বাস ভারতের জনগণের উন্নতির মাধ্যম হয়ে উঠছে।
বন্ধুগণ,  
আজ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর দেশ তার অমৃত কালকে কর্তব্যকাল হিসেবে দেখছে। আমরা দেশবাসী দেশের স্বপ্ন ও সংকল্পের কথা মাথায় রেখে নিজ নিজ স্তর থেকে কাজ করছি। সেই কারণেই, আজ বিশ্ববাসীও ভারতে তাঁদের ভবিষ্যৎকে দেখছে। আমাদের প্রচেষ্টা আজ ক্রমে সমগ্র মানবতার জন্য একটি নিশ্চয়তার ভিত্তি হয়ে উঠছে। আমি বিশ্বাস করি যে লোকমান্য তিলকের আত্মা আজ যেখানেই আছেন, তিনি আমাদের দেখছেন, আমাদের উপর তাঁর আশীর্বাদ বর্ষণ করছেন। তাঁর আশীর্বাদে, তাঁর চিন্তার শক্তিতে, আমরা অবশ্যই একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করব। আমি নিশ্চিত যে হিন্দ স্বরাজ্য সংঘ এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে থাকবে এবং তিলকের আদর্শের সঙ্গে মানুষকে সংযুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমি আবারও এই সম্মানের জন্য আপনাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই ভূমিকে প্রণাম জানিয়ে, এই ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িত সবাইকে প্রণাম জানিয়ে আমি আমার বক্তব্যকে সম্পূর্ণ করছি। আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
 
*
CG/SB



(Release ID: 1945114) Visitor Counter : 174