প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

গুজরাটের গান্ধীনগরে মহিলা ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত জি২০ মন্ত্রীপর্যায়ের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও বার্তা

Posted On: 02 AUG 2023 12:19PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২ আগষ্ট, ২০২৩

 

মাননীয় ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, নমস্কার!

আমি আপনাদের সবাইকে মহাত্মা গান্ধীর নামাঙ্কিত গান্ধীনগর শহরে স্বাগত জানাই। আজই এই শহরের প্রতিষ্ঠা দিবস। আপনারা আমেদাবাদের গান্ধী আশ্রম ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন শুনে আমার খুব ভালো লেগেছে। আজ সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে কথা বলছে এবং এর সুস্থিত সমাধানের গুরুত্ব উপলব্ধি করছে। গান্ধী আশ্রমে আপনারা গান্ধীজির সরল জীবনযাপন এবং সুস্থিতি, আত্মনির্ভরশীলতা ও সাম্যের বিষয় তাঁর দূরদর্শী ভাবনার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন। এগুলি আপনাদের অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি নিশ্চিত। একইরকমের অনুভূতি হবে ডান্ডি কুটির সংগ্রহালয় দেখলে। এই সুযোগ আপনারা কোনোভাবেই ছাড়বেন না। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, গান্ধীজির বিখ্যাত চরকা তাঁকে দিয়েছিলেন কাছের গ্রামের গঙ্গাবেন নামে এক মহিলা। আপনারা সবাই জানেন, তার পর থেকেই গান্ধীজি সবসময় খাদি পরতেন, যা স্বনির্ভরতা ও সুস্থিতির প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

বন্ধুরা,

মহিলাদের উন্নতি হলে সমগ্র বিশ্বের উন্নতি হয়। তাঁদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নই বিকাশের জ্বালানি। তাঁরা শিক্ষার সুযোগ পেলে বিশ্বের প্রগতি নিশ্চিত হয়। তাঁদের নেতৃত্ব অন্তর্ভুক্তিকরণকে গতি দেয়। আর তাঁদের কন্ঠস্বর ইতিবাচক পরিবর্তনকে প্রাণিত করে। মহিলাদের ক্ষমতায়নের সব থেকে কার্যকর উপায় হল মহিলা নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ। ভারত সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে।

বন্ধুরা,

ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু নিজেই এক প্রেরণাদায়ক উদাহরণ স্থাপন করেছেন। এক সাধারণ উপজাতীয় প্রেক্ষাপট থেকে এসেও তিনি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিনি কম্যান্ডার-ইন-চিফ। গণতন্ত্রের জননী ভারতের সংবিধানে গোড়া থেকেই মহিলা সহ সব নাগরিককে সমানভাবে ‘ভোটের অধিকার’ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত মহিলা জনপ্রতিধিরা অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক পরিবর্তনের মুখ্য দূত হয়ে উঠেছেন। ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে গ্রামীণ স্থানীয় সংস্থাগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধির ৪৬ শতাংশই মহিলা। মহিলাদের নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনও পরিবর্তনের এক শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। অতিমারির সময়ে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং নির্বাচিত মহিলা জনপ্রতিনিধিরা সমাজের সমর্থনের স্তম্ভ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা মাস্ক ও স্যানিটাইজার বানিয়েছেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তুলেছেন। ভারতে ৮০ শতাংশেরও বেশি নার্স ও ধাত্রী হলেন নারী। তাঁরাই অতিমারির সময়ে আমাদের প্রতিরোধের প্রথম সারি হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের সাফল্যে আমরা গর্বিত।

বন্ধুরা, 

ভারতে আমাদের কাছে মহিলা নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন প্রধান অগ্রাধিকারের একটি ক্ষেত্র। প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার ৭০ শতাংশ ঋণই মহিলাদের দেওয়া হয়েছে। অতিক্ষুদ্র স্তরের উদ্যোগগুলির পাশে দাঁড়াতে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়ার ৮০ শতাংশ সুবিধাভোগীই হলেন মহিলা। তাঁরা পরিবেশ সহায়ক বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় গ্রামীণ মহিলাদের প্রায় ১০ কোটির মতো রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। রান্নার জন্য দূষণমুক্ত জ্বালানির এই সরবরাহ সরাসরি প্রভাব ফেলেছে পরিবেশের উপর, মহিলাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলিতে কারিগরি শিক্ষায় মহিলাদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। 

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এঞ্জিনিয়ারিং এবং গণিতে স্নাতকদের প্রায় ৪৩ শতাংশ মহিলা। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের প্রায় এক চতুর্থাংশ মহিলা। চন্দ্রযান, পবনযান এবং মিশন মঙ্গলের মতো আমাদের অগ্রণী কর্মসূচিগুলির সাফল্যের নেপথ্যে এই মহিলা বিজ্ঞানীদের প্রতিভা ও পরিশ্রম রয়েছে। ভারতে আজ উচ্চশিক্ষায় পুরুষের থেকেও মহিলার সংখ্যা বেশি। অসামরিক বিমান ক্ষেত্রে মহিলা পাইলটদের সংখ্যার হার বিশ্বের সর্বোচ্চহারগুলির মধ্যে একটি। ভারতীয় বায়ু সেনার মহিলা পাইলটরা এখন যুদ্ধ বিমান চালাচ্ছেন। সশস্ত্র বাহিনীতে মহিলা অফিসারদের রণাঙ্গনে নিয়োগ করা হচ্ছে। 

বন্ধুরা,

গ্রামীণ কৃষি নির্ভর পরিবারের মেরুদন্ড এবং ছোট ব্যবসায়ী ও দোকানদারের ভূমিকায় ভারত ও দক্ষিণের দেশগুলিতে মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রকৃতির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নিবিড় হওয়ায় মহিলাদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্ভাবনী সমাধানের চাবিকাঠি রয়েছে। আমার মনে পড়ছে, অষ্টাদশ শতকে মহিলারা কীভাবে ভারতে প্রথম সাড়া জাগানো পরিবেশ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। রাজস্থানে অমৃতা দেবীর নেতৃত্বাধীন বিষ্ণোই সম্প্রদায় ‘চিপকো আন্দোলন’ শুরু করেছিল। নির্বিচার গাছ কাটা ঠেকাতে তাঁরা গাছগুলিকে জড়িয়ে ধরে থাকতেন। অন্য অনেক গ্রামবাসীর সঙ্গে শ্রীমতী অমৃতা দেবীও প্রকৃতিকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দেন। ভারতের মহিলারা এখন ‘মিশন লাইফ’ - পরিবেশ সহায়ক জীবনশৈলীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। প্রাচীন প্রথাগত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তাঁরা পরিবেশ দূষণ হ্রাস এবং সামগ্রীর পূনর্ব্যবহারের প্রয়াস চালাচ্ছেন। মহিলাদের এখন সৌর প্যানেল ও সৌর আলো তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণের দেশগুলিতে আমাদের অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘সোলার মামাজ’ প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে চলছে।

বন্ধুরা, 

মহিলা উদ্যোক্তারা বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। উদ্যোগে মহিলাদের অংশগ্রহণ ভারতেও নতুন নয়। বেশ কিছু দশক আগে ১৯৫৯ সালে মুম্বাইয়ের ৭ গুজরাটি মহিলা মিলে শ্রী মহিলা গৃহ উদ্যোগ নামের ঐতিহাসিক সমবায় আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এই উদ্যোগ লক্ষ লক্ষ মহিলা ও তাঁদের পরিবারের জীবন বদলে দিয়েছে। তাঁদের সবথেকে বিখ্যাত পণ্য লিজ্জত পাঁপড়ের স্বাদ আপনারা নিশ্চয়ই গুজরাটে পেয়েছেন! ডেয়ারি ক্ষেত্রেও আমাদের সমবায় আন্দোলন চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছে। এটিও মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত। শুধুমাত্র গুজরাট রাজ্যেই ৩৬ লক্ষ মহিলা ডেয়ারি ক্ষেত্রে কাজ করছেন। ভারত জুড়ে এমন অনেক অনেক প্রেরণাদায়ক ঘটনার কথা বলা যায়। ভারতে ইউনিকর্ন স্টার্ট-আপগুলির প্রায় ১৫ শতাংশেরই অন্তত একজন মহিলা প্রতিষ্ঠাতা রয়েছেন। মহিলা নেতৃত্বাধীন এইসব ইউনিকর্নগুলির সম্মিলিত মূল্য ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আমরা এমন এক জমি প্রস্তুত করতে চাই যেখানে মহিলাদের সাফল্য পাওয়াটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়াবে। বাজার, বিশ্ব মূল্যশৃঙ্খল এবং সুলভে অর্থের যোগানের ক্ষেত্রে তাঁরা যেসব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন তা আমাদের দূর করতেই হবে। একইসঙ্গে বাড়ির কাজে তাঁদের যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, সেগুলিরও যথাযথ নিষ্পত্তি করতে হবে।

মাননীয় ব্যক্তিবর্গ,

আপনারা মহিলা উদ্যোগ, নেতৃত্ব ও শিক্ষার প্রতি যে মনোযোগ দিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। মহিলাদের মধ্যে ডিজিটাল ও আর্থিক সাক্ষরতার প্রসারে আপনারা ‘টেক-ইক্যুইটি প্ল্যাটফর্ম’ চালু করতে চলেছেন জেনে আমি আনন্দিত। ভারতের সভাপতিত্বকালে ‘নারী ক্ষমতায়ন’-এর উপর নতুন কর্মীগোষ্ঠী গঠনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাও অত্যন্ত আনন্দের। গান্ধীনগরে আপনাদের অক্লান্ত প্রয়াস সারা বিশ্বের মহিলাদের মধ্যে বিপুল আশা ও আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করবে। আপনাদের বৈঠক সফল ও ফলপ্রসূ হোক।

ধন্যবাদ।

আপনাদের সবাইকে অজস্র ধন্যবাদ।

CG/SD/SKD



(Release ID: 1945017) Visitor Counter : 213