প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রী নতুন দিল্লিতে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন

Posted On: 20 APR 2023 12:10PM by PIB Kolkata

 

নয়াদিল্লি, ২০ এপ্রিল, ২০২৩


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লির হোটেল অশোক-এ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী চিত্রপ্রদর্শনী ঘুরে দেখেন এবং বুদ্ধ মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। তিনি ১৯ জন বিশিষ্ট ‘শ্রমণ’কে ‘চিবর’ বা সন্ন্যাসীর পবিত্র বস্ত্র দান করেন।


সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত প্রত্যেককে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত জানান। তিনি বলেন যে ‘অতিথি দেব ভবঃ’ অর্থাৎ, অতিথি ভগবানের সমান। বুদ্ধ-র দেশ এই ভারতভূমির এটি একটি ঐতিহ্য। বুদ্ধ-র আদর্শ নিয়ে জীবনযাপন করছেন এমন বহু ব্যক্তির উপস্থিতিতে মনে হচ্ছে যেন স্বয়ং বুদ্ধই আমাদের মধ্যে এসে উপস্থিত হয়েছেন। শ্রী মোদী বলেন, “বুদ্ধ ব্যক্তি-অতীত, এটি একটি ধারণা।” তিনি বলেন, বুদ্ধ একটি সংবেদনা যা একজন ব্যক্তিকে পরিবর্তন করে। তিনি একটি ভাবনা যা অবয়ব দেয় এবং বুদ্ধ প্রতিরূপের ঊর্ধ্বে একটি সংজ্ঞা। তিনি বলেন, “বুদ্ধ সংজ্ঞা চিরায়ত।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত এত মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে বুদ্ধ-র প্রসার কতটা যা সমগ্র মানব সমাজকে একটি সূত্রে গেঁথে রেখেছে। তিনি আরও বলেন, সকল মানুষের মিলিত ইচ্ছা একটি শক্তি। ভগবান বুদ্ধ-র কোটি কোটি অনুগামীর সঙ্কল্প বিশ্বের কল্যাণের জন্য। এই অনুষ্ঠানে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজ বিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, উদ্বোধনী আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলন সব দেশের প্রয়াসের জন্য একটি কার্যকরি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কনফেডারেশনকে প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান।


শ্রী মোদী বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের উল্লেখ করেন। বাধনগরে, যেখানে তিনি জন্মেছিলেন, সেখানকার প্রধান বৌদ্ধ কেন্দ্র সফর করেছিলেন হিউয়েন সাং, সেকথা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী সারনাথের পরিপ্রেক্ষিতে কাশীরও উল্লেখ করেন যা বৌদ্ধ ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযোগ আরও গভীর করেছে।


আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলন ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিকালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন সারা দেশ ‘আজাদি কা অমৃতকাল’ পালন করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ভবিষ্যতের জন্য একটি উদ্দেশ্য রেখেছে এবং বিশ্বকল্যাণে নতুন সঙ্কল নিয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক সাফল্যের পেছনে প্রেরণা হিসেবে আছেন ভগবান বুদ্ধ।


বৌদ্ধ ধর্ম, চর্চা এবং বোধ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ৯ বছরে ভারত এই তিনটি বিষয়ই অনুসরণ করেছে। শ্রী মোদী বলেন, ভগবান বুদ্ধ-র শিক্ষার প্রসারে ভারত উৎসর্গীকৃতভাবে কাজ করেছে। তিনি ভারতে এবং নেপালে বৌদ্ধ সার্কিটগুলির উন্নয়নের কথা বলেন। সারনাথ এবং কুশিনগরের সংস্কার, কুশিনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং আইবিসি-র সহযোগিতায় লুম্বিনীতে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অফ বুদ্ধিস্ট হেরিটজ অ্যান্ড কালচার স্থাপনের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।


প্রধানমন্ত্রী ভারতের মানবিকতার প্রতি সহমর্মিতার জন্য ভগবান বুদ্ধ-র শিক্ষাকেই কৃতিত্ব দেন। তিনি শান্তি মিশনের কথা বলেন এবং তুরস্কের ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুরোদস্তুর প্রয়াসের সঙ্গে উদ্ধার কাজের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “১৪০ কোটি ভারতীয়ের এই অনুভব সারা বিশ্ব বুঝেছে এবং গ্রহণ করেছে।” তিনি আরও বলেন, আইবিসি-র মতো প্ল্যাটফর্ম সম-মনস্ক দেশগুলিকে সুযোগ দিচ্ছে বৌদ্ধ ধম্ম এবং শান্তির প্রসারে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমস্যা থেকে সমাধানে পৌঁছনোর যাত্রাই বুদ্ধ-র প্রকৃত যাত্রা।” ভগবান বুদ্ধ-র যাত্রাপথের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দুর্গ এবং সাম্রাজ্যের জীবন ত্যাগ করেছিলেন কারণ তিনি অন্যের জীবনের দুঃখ অনুভব করতে পেরেছিলেন। সমৃদ্ধ পৃথিবীর লক্ষ্য পূরণের একমাত্র রাস্তা হল আত্মসর্বস্ব হীনবুদ্ধি ত্যাগ করে বুদ্ধ মন্ত্রকে সামগ্রিকভাবে উপলব্ধি করে বিশ্বের ভাবনাকে একাত্ম করে নেওয়া। তিনি জোর দিয়ে বলেন, একটি সুন্দর বিশ্ব তখনই হওয়া সম্ভব যদি আমরা সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার করি। শ্রী মোদী বলেন, “সময়ের দাবি, প্রত্যেক ব্যক্তি এবং দেশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে নিজ দেশের স্বার্থের পাশাপাশি সারা বিশ্বের স্বার্থকে।”


প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময়টি হল এই শতাব্দীর সবচেয়ে সমস্যাসঙ্কুল সময়। চলছে যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ এবং তার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা, বহু প্রাণীর বিলুপ্ত হওয়া ও হিমবাহের গলন। তিনি বলেন, এর মধ্যে এমন মানুষও আছেন যাঁরা বুদ্ধদেবে বিশ্বাস রাখেন ও সমগ্র প্রাণী জগতের জন্য কল্যাণের কথা ভাবেন। এই আশা, এই বিশ্বাসই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি। যখন এই আশা সম্মিলিত হবে, তখন বুদ্ধ ধম্ম বিশ্বের বিশ্বাস হয়ে উঠবে, বুদ্ধ-র অনুভব সারা মানব সমাজের বিশ্বাস হয়ে উঠবে।


বুদ্ধ-র শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে শ্রী মোদী বলেন, বর্তমানের সময়ের সব সমস্যার সমাধান ভগবান বুদ্ধ-র সেই প্রাচীন শিক্ষার মাধ্যমেই পাওয়া। ভগবান বুদ্ধ শান্তির জন্য যুদ্ধ, জয়-পরাজয়কে পরিহার করার শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শত্রুতা দিয়ে শত্রুতাকে জয় করা যায় না, একতাতেই সন্তুষ্টি। একইরকমভাবে ভগবান বুদ্ধ-র শিক্ষা ছিল অপরকে শিক্ষা দেওয়ার আগে নিজের আচরণের দিকেও তাকানো। বর্তমানকালে একের চিন্তা অন্যের ওপর চাপানোর যে ধারা চলছে, তার জবাব হতে পারে এই শিক্ষা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বুদ্ধ-র বাণী ‘অপ্প দীপো ভবঃ’তে ফিরে আসেন। ভগবান বুদ্ধের সেই চিরন্তন বাণী আজ আজও প্রাসঙ্গিকতা। সেটি হল – ‘নিজেই নিজের আলোক হয়ে ওঠ’। কয়েক বছর আগে রাষ্ট্রসঙ্ঘে তিনি যা বলেছিলেন সে কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। “আমরাই সেই দেশ যারা বিশ্বকে বুদ্ধ দিয়েছে, যুদ্ধ নয়।”


প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৌদ্ধ পন্থাই ভবিষ্যতের পন্থা এবং দীর্ঘস্থায়িত্বের পন্থা। যদি বুদ্ধ-র বাণী অনুসরণ করত সারা বিশ্ব, তাহলে আজ এই জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হত না। এটির ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশগুলি একে অপরের কথা, আগামী প্রজন্মের কথা ভাবা বন্ধ করাতেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই ভুল-ত্রুটিগুলি জড়ো হয়ে আজ ভীষণ আকার ধারণ করেছে। বুদ্ধ আত্মস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সু-আচরণের বাণী প্রচার করেছিলেন যে আচরণে সার্বিক ভালো হয়।


প্রধানমন্ত্রী বলেন যে একটি মানুষ যে কোনওভাবেই হোক পৃথিবীর ওপর প্রভাব ফেলে। সেটি তাঁর জীবনযাপন দিয়েই হোক, খাদ্যাভ্যাস দিয়েই হোক বা ভ্রমণেচ্ছা দিয়েই হোক। তেমনই প্রত্যেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে অবদান রাখতে পারে। পরিবেশের জন্য জীবনশৈলীর ওপর আলোকপাত করে অথবা ‘মিশন LIFE’-এর যে উদ্যোগ ভারত নিয়েছে তা বুদ্ধ থেকে অনুপ্রেরণার প্রভাবেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি মানুষ সচেতন হয়ে তাঁদের জীবনশৈলী পরিবর্তন করেন, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিশাল সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।


সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্তুবাদ এবং স্বার্থপরতা থেকে বেরিয়ে এসে ‘ভবতু সব মঙ্গলম’-এর ধারণাকে আত্মস্থ করতে হবে। বুদ্ধ-কে প্রতীক হিসেবে শুধু নয়, জীবনে তাঁর দর্শনের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, এই সঙ্কল্প তখনই পূর্ণ হওয়া সম্ভব যখন আমরা বুদ্ধ-র বাণীগুলি মনে রাখব। পিছু না হেঁটে এগিয়ে যাব। শ্রী মোদী বলেন, এই সঙ্কল্প সফল হবেই, যদি প্রত্যেকে একজোট হয়।


কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী শ্রী জি কিষাণ রেড্ডি, আইন ও বিচার মন্ত্রী শ্রী কিরেন রিজিজু, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী শ্রী অর্জুন রাম মেঘোয়াল ও শ্রীমতী মীনাক্ষী লেখি এবং ইন্টারন্যাশনাল বুদ্ধিস্ট কনফেডারেশনের মহাসচিব ডঃ ধম্মপিয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

PG/AP/DM



(Release ID: 1918361) Visitor Counter : 138