প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ ৯৫ তম পর্ব অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ

Posted On: 27 NOV 2022 11:44AM by PIB Kolkata

আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাত’-এ আবার একবার আপনাদের সবাইকে অনেক-অনেক স্বাগত। এই অনুষ্ঠান পঁচানব্বইতম পর্ব। আমরা খুব দ্রুততার সঙ্গে “মন কি বাত”-এর শততম পর্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এই অনুষ্ঠান আমার জন্য দেশের একশো তিরিশ কোটি দেশবাসীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আর এক মাধ্যম। প্রত্যেক পর্বের আগে, গ্রাম ও শহর থেকে আসা বহু চিঠি পড়া, বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রবীণদের অডিও মেসেজ শোনা, এটা আমার জন্য এক আধ্যাত্মিক অনুভবের মত।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের আরম্ভ আমি এক অনুপম উপহারের আলোচনা দিয়ে করতে চাই। তেলেঙ্গানার রাজন্না সির্সিল্লা জেলার এক তন্তুবায় ভাই হলেন ইয়েলধী হরিপ্রসাদ গারু। উনি নিজের হাতে বুনে আমাকে জি-টুয়েন্টির এই লোগো পাঠিয়েছেন। এই দুর্দান্ত উপহার দেখে তো আমি হতচকিত হয়ে গিয়েছি। হরিপ্রসাদজী নিজের শিল্পে এতটাই নৈপুণ্য অর্জন করেছেন যে উনি সবার নজর কেড়ে নেন। হাতে বোনা জি-টুয়েন্টির এই লোগোর সঙ্গে হরিপ্রসাদজী আমাকে একটা চিঠিও পাঠিয়েছেন। এতে উনি লিখেছেন যে আগামী বছর জি-টুয়েন্টির শিখর সম্মেলনের আয়োজক হওয়া ভারতের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। দেশের এই মর্যাদা পাওয়ার আনন্দে উনি জি-টুয়েন্টির এই লোগো নিজের হাতে তৈরি করেছেন। বয়নের এই অসামান্য প্রতিভা উনি বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার হিসাবে পেয়েছেন আর আজ উনি পুরো প্যাশনের সঙ্গে এই কাজে যুক্ত।

বন্ধুরা, কিছু দিন আগেই জি-টুয়েন্টির লোগো আর ভারতের প্রেসিডেন্সি সংক্রান্ত ওয়াবসাইট উদ্বোধনের সুযোগ হয়েছে আমার। এই লোগোর নির্বাচন এক পাবলিক কনটেস্টের মাধ্যমে হয়েছিল। যখন আমার কাছে হরিপ্রসাদ গারুর পাঠানো এই উপহার পৌঁছল, তখন আমার মনে আর একটা ভাবনা এল। তেলেঙ্গানার কোনও জেলায় বসে থাকা ব্যক্তিও জি-টুয়েন্টির মত সম্মেলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত বলে বোধ করতে পারেন, এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগল। আজ হরিপ্রসাদ গারুর মত অনেক মানুষ আমাকে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন যে দেশ এত বড় সামিট আয়োজনের সুযোগ পাওয়ায় ওঁদের বুক গর্বে ফুলে গিয়েছে। আমি আপনাদের পুণের বাসিন্দা সুব্বা রাও চিল্লারা জী আর কলকাতার তুষার জগমোহনের বার্তার উল্লেখও করব। ওঁরা জি-টুয়েন্টি নিয়ে ভারতের প্রো-অ্যাকটিভ উদ্যোগের খুব প্রশংসা করেছেন। 

বন্ধুরা, জি-টুয়েন্টির বিশ্ব জনসংখ্যায় দুই-তৃতীয়াংশ, বিশ্ব বাণিজ্যে তিন-চতুর্থাংশ আর বিশ্ব জিডিপি-তে পঁচাশি শতাংশ ভাগীদারী রয়েছে। আপনারা ভাবুন – ভারত আজ থেকে তিন দিন পরে অর্থাৎ পয়লা ডিসেম্বর থেকে এত বড় গোষ্ঠীর, এত সামর্থ্যবান গোষ্ঠীর অধ্যক্ষতা করতে যাচ্ছে। ভারতের জন্য, প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য, এটা কত বড় সুযোগ! এটা এই কারণেও আরও বিশিষ্ট যে এই দায়িত্ব ভারত পেয়েছে আজাদীর অমৃতকালে।

বন্ধুরা, G-20 র সভাপতিত্ব আমাদের জন্য এক বড় Opportunity নিয়ে এসেছে। আমাদের এই সুযোগের সম্পূর্ণ রূপে সদ্ব্যবহার করে গ্লোবাল গুড, অর্থাৎ বিশ্ব কল্যাণের প্রতি ফোকাস রাখতে হবে। শান্তি হোক বা ঐক্য, পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা অথবা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট, ভারতের কাছে এই সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের সমাধান আছে।

আমরা One Earth, One Family, One Future - এর যে থিম দিয়েছি, তাতে বসুধৈব কুটুম্বাকাম-এর প্রতি আমাদের অঙ্গীকার প্রকাশ পায়। আমরা সব সময় বলি,

ওম সর্বেষাং স্বস্তির্ভবতু। 
সর্বেষাং  শান্তির্ভবতু।
সর্বেষাং পূর্ণম্ভবতু।
সর্বেষাং মঙ্গলম্ভবতু।
ওম শান্তি: শান্তি: শান্তি:।।

অর্থাৎ সবার কল্যাণ হোক, সবাই শান্তি পাক, সবাই পূর্ণতা পাক এবং সবার মঙ্গল হোক। আগামী দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় G-20 সম্পর্কিত অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। সেই উপলক্ষে পৃথিবীর আলাদা আলাদা জায়গা থেকে আপনাদের রাজ্যে মানুষের আসার সুযোগ মিলবে। আমার বিশ্বাস আছে, যে আপনারা নিজেদের সংস্কৃতির বিবিধ এবং বিশিষ্ট রূপ পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসবেন এবং আপনাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে G-20-তে যারা আসবেন, তারা এখন ডেলিগেট হিসেবে এলেও তারাই কিন্তু ভবিষ্যতের টুরিস্ট। আপনাদের সবার প্রতি, বিশেষ করে আমার যুব বন্ধুদের প্রতি আমার আরো একটি আবেদন যে, হরিপ্রসাদ গারুর মত আপনারাও কোন না কোন ভাবে G-20 র সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হোন। কাপড়ের ওপর G-20র ভারতীয় লোগো, বেশ cool ভাবে, স্টাইলিশ ভাবে বানানো যেতে পারে, ছাপানো যেতে পারে। আমি স্কুল কলেজ, ইউনিভারসিটির প্রতিও আবেদন করব যে আপনারা এখানে G-20 সম্পর্কিত চর্চা, আলোচনা, কম্পিটিশন করানোর সময় বের করুন। আপনারা G20.in ওয়েবসাইটে গেলে আপনাদের রুচি অনুযায়ী অনেক ধরনের জিনিস খুঁজে পাবেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, ১৮ই নভেম্বর সমগ্র দেশ Space Sector-এ নতুন ইতিহাস তৈরি হতে দেখলো। ঐদিন ভারত নিজের প্রথম এমন একটি রকেট মহাকাশে পাঠিয়েছে যেটা ভারতের প্রাইভেট সেক্টর ডিজাইন এবং নির্মাণ করেছে। এই রকেটের নাম ''বিক্রম - S' । শ্রীহরিকোটাতে স্বদেশী Space Start-Up এর এই প্রথম রকেট, যে মুহূর্তে ঐতিহাসিক উড়ান নেয়, প্রত্যেক ভারতীয়র মাথা গৌরবে উচুঁ হয়ে গিয়েছিল।

বন্ধুরা, বিক্রম-এস, এই রকেটটি বহুগুণান্বিত। অন্যান্য রকেটের তুলনায় এটি হালকা এবং সস্তা। এর Development Cost মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলির লগ্নির তুলনায়ও অনেকটাই কম। Space Technology-র ক্ষেত্রে কম খরচায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা  এখন ভারতের অন্যতম পরিচয় হয়ে উঠেছে। এই রকেটটি তৈরি করতে আরও একটি আধুনিক Technology ব্যবহার করা হয়েছে। আপনারা জেনে অবাক হবেন, এই রকেটের কিছু জরুরি অংশ 3D Printing এর সাহায্যে তৈরি হয়েছে। সত্যি, বিক্রম- এস রকেটের লঞ্চ মিশনের একেবারে যথাযথ নাম দেওয়া হয়েছে- 'প্রারম্ভ'। ভারতে প্রাইভেট স্পেস সেক্টরের এক নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত হল। এই দেশে আত্মবিশ্বাসী এক নতুন যুগের সূচনা হল। আপনারা ভাবুন, যে বাচ্চারা হাতে কাগজের উড়োজাহাজ বানিয়ে ঘুরত, তারা আজকে ভারতে সত্যিকারের উড়োজাহাজ বানানোর সুযোগ পাচ্ছে। যে বাচ্চারা আকাশের চাঁদ তারা দেখে শূন্যে ছবি আকত, তারা আজ দেশের মাটিতে রকেট তৈরির সুযোগ পাচ্ছে। স্পেস  প্রাইভেট সেক্টরের জন্য খুলে যাওয়ার ফলে বহু যুবদের স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব হচ্ছে। রকেট বানাতে ব্যস্ত এই যুবরা যেন বলছে - ' sky is not the limit'.

বন্ধুরা, ভারত স্পেস সেক্টরের এই সাফল্য তার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও ভাগ করে নিচ্ছে। কালই ভারত এক Satellite Launch করেছে যা ভারত ভুটানের সাথে তৈরি করেছে। এই উপগ্রহ খুবই উচ্চমানের রেসলিউসনের ছবি তুলে পাঠাবে যা ভুটানকে তার প্রাকৃতিক সম্পদ আরো ভাল ভাবে সামলাতে সাহায্য করবে। এই Satellite Launch ভারত ভুটান সুসম্পর্কের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

বন্ধুরা, আপনারা খেয়াল করে  থাকবেন, বিগত কয়েকটি ' মন কি বাত' এ আমরা  space, tech, innovation নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। এর দুটি কারণ আছে। এক হল আমাদের  যুবরা এই ক্ষেত্রে চমতকার কাজ করছে। They are thinking big and achieving big.  এখন তারা আর অল্পে সন্তুষ্ট থাকবে না। দ্বিতীয় কারণ হল,  innovation এবং value creation, এর এই রোমাঞ্চকর যাত্রায় যুবরা তাদের বাকি বন্ধু ও start upsদেরও encourage  করছে।

বন্ধুরা, আমরা যখন প্রযুক্তি সম্পর্কিত উদ্ভাবনের কথা বলছি, তখন আমরা ড্রোনের কথা কীভাবে ভুলতে পারি? ভারত ড্রোনের ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কিছুদিন আগে, আমরা দেখেছিলাম যে হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌরে কীভাবে ড্রোনের মাধ্যমে আপেল পরিবহন করা হয়েছিল। কিন্নৌর হল হিমাচলের দূরবর্তী জেলা এবং এই মরসুমে সেখানে প্রচন্ড তুষারপাত হয়। এইরকম তুষারপাতের মধ্যে, রাজ্যের বাকি অংশের সঙ্গে কিন্নৌরের যোগাযোগ কয়েক সপ্তাহ ধরে কঠিন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সেখান থেকে আপেল পরিবহন ততধিক কঠিন হয়ে যায়। ড্রোন প্রযুক্তির ফলে হিমাচলের সুস্বাদু কিন্নৌরি আপেল মানুষের কাছে আরও অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছবে। এতে আমাদের কৃষক ভাই-বোনদের খরচ কমবে, আপেল সময়মতো বাজারে পৌঁছাবে, এবং আপেল নষ্টও কম হবে। 

বন্ধুরা, আজকে আমাদের দেশবাসী তাদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে সেই সব জিনিসও সম্ভব করছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না। এটা দেখে কে না খুশি হবে? সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আমাদের দেশ সাফল্যের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। আমার পূর্ণ  বিশ্বাস আছে যে আমরা ভারতীয়রা এবং বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্ম এখন অপ্রতিরোধ্য। প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের জন্য একটি ছোট ক্লিপ প্লে করতে যাচ্ছি।

আপনারা সবাই এই গানটি কখনো না কখনো শুনে থাকবেন। এটি বাপুর প্রিয় গান বলে কথা। কিন্তু আমি যদি আপনাদের বলি যে এই সুরমূর্ছনার গায়ক গ্রিস দেশের নাগরিক, তাহলে আপনি অবশ্যই অবাক হবেন এবং এই তথ্যটি আপনাকে গর্বিতও করবে। এই গানটি গ্রীক গায়ক Konstantinos Kalaitzis গেয়েছেন। তিনি গান্ধীজির সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন সমারোহে এটি গেয়েছিলেন। কিন্তু আজ আমি তাঁর কথা অন্য একটি কারণে আলোচনা করছি। ভারত এবং ভারতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে তাঁর মনে অমোঘ আকর্ষণ রয়েছে। ভারতের প্রতি তাঁর ভালবাসা এতটাই যে গত ৪২ বছর ধরে তিনি প্রায় প্রতি বছর ভারতে এসেছেন। তিনি ভারতীয় সঙ্গীতের উৎস, বিভিন্ন ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতি, বিভিন্ন ধরণের রাগ, তাল এবং রাসের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ঘরানার সম্পর্কে পড়াশোনা করেছেন। ভারতীয় সঙ্গীতের অনেক  মহান ব্যক্তিত্বের অবদান সম্পর্কেও অধ্যয়ন করেছেন।  তিনি ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্যের বিভিন্ন দিকও খুব কাছ থেকে জেনেছেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত এই সব অভিজ্ঞতাগুলিকে তিনি খুব সুন্দরভাবে একটি বইতে তুলে ধরেছেন। তাঁর ইন্ডিয়ান মিউজিক নামক বইটিতে প্রায় ৭৬০টি ছবি রয়েছে।

এরমধ্যে বেশিরভাগ ছবি নিজেই তুলেছেন। অন্য দেশেও ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে এমন উৎসাহ আর আকর্ষণ প্রকৃতপক্ষেই আনন্দদায়ক।

বন্ধুরা, কয়েক সপ্তাহ আগেই এমন একটি খবর পাওয়া গেছে যা আমাদের গর্বিত করে। আপনাদের জেনে ভালো লাগবে যে গত ৮ বছরে ভারত থেকে মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্টসের এক্সপোর্ট সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টস-এর ক্ষেত্রে জানা গেছে যে, এদের এক্সপোর্ট ষাট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।  এর থেকে বোঝা যায় যে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সংগীতের craze সারা বিশ্ব জুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্ডিয়ান মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্টস-এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা USA, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান এবং ইউকের মত উন্নত দেশ। আমাদের সকলের কাছেই এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের যে আমাদের দেশে মিউজিক, ডান্স এবং আর্টের এত সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে।

বন্ধুরা, মহান মনীষী কবি ভর্তৃহরিকে আমরা সকলেই তাঁর রচিত ‘নীতিশতকের’ জন্য চিনি। একটি শ্লোকে তিনি বলেছেন যে শিল্প, সঙ্গীত এবং সাহিত্যর প্রতি আমাদের ভালোবাসাই আমাদের মানবতার আসল পরিচয়, যেটিকে বাস্তবে আমাদের সংস্কৃতি, Humanity র চেয়েও উর্ধে  Divinity তে নিয়ে যায়। বেদের মধ্যে সামবেদকে আমাদের বিভিন্ন সংগীতের স্তোত্র বলা হয়। মা সরস্বতীর বীণা হোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি হোক, বা ভোলানাথের ডমরু, আমাদের দেব দেবীরাও সংগীতের থেকে পৃথক নয়। আমরা ভারতীয়রা প্রত্যেক বিষয়েই সংগীত খুঁজে নিই। তা সেটা নদীর কূলকুল করে বয়ে যাওয়া হোক, বৃষ্টির ফোঁটা হোক, পাখিদের কলরব হোক অথবা বাতাসের গুঞ্জন। আমাদের সভ্যতায় সংগীত সবদিক থেকে অন্তর্নিহিত রয়েছে। সংগীত শুধু আমাদের শরীরকেই শান্তি প্রদান করে না, আমাদের মনকেও আনন্দ দেয়। সংগীত আমাদের সমাজকেও বেঁধে রাখে। যদি ভাংড়া আর লাবনীতে উত্তেজনা আর আনন্দের ভাবনা থাকে তাহলে রবীন্দ্র সংগীত আমাদের আত্মাকে আপ্লুত করে। সারা দেশের আদিবাসীদের ও নানা ধরনের সংগীতের পরম্পরা রয়েছে। এটা আমাদের নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে থাকা ও প্রকৃতির সঙ্গে জুড়ে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়।

বন্ধুরা, আমাদের সংগীতের এই ধারা শুধুমাত্র আমাদের সংস্কৃতিকেই সমৃদ্ধ করেনি বরং সারা বিশ্বের সংগীতে তার নিজস্ব চিরস্থায়ী ছাপ ফেলেছে। ভারতীয় সংগীতের খ্যাতি বিশ্বের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি আপনাদের আরেকটি অডিও ক্লিপ শোনাচ্ছি।

আপনি হয়তো ভাবছেন যে ঘরের পাশে কোন মন্দিরে ভজন কীর্তন চলছে। কিন্তু এই আওয়াজ ও আপনার কাছে ভারত থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থিত সাউথ আমেরিকান দেশ গুয়ানা থেকে আসছে। উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে আমাদের দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গুয়ানা গিয়েছিলেন। ওঁরা এখান থেকে ভারতের অনেক রীতিনীতি নিজেদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ যে রকম আমরা ভারতে হোলি উদযাপন করি, গুয়ানাতেও হোলির উদ্দীপনা প্রবল ভাবে অনুভূত হয়। যেখানে হোলির রং থাকে, সেখানে ফাগওয়া অর্থাৎ ফাগুয়া সঙ্গীতও পাওয়া যায়। গুয়ানার ফাগুয়াতে ভগবান রাম এবং ভগবান কৃষ্ণের সঙ্গে জড়িত বিবাহ সঙ্গীত গাওয়ার বিশেষ পরম্পরা আছে। এই গানগুলোকে চওতাল বলা হয়ে থাকে। এগুলিকে ওই রকমই সুর আর হাই পিচ এই গাওয়া হয়, যে রকম আমাদের এখানে গাওয়া হয়ে থাকে। শুধুমাত্র এতোটাই নয় গুয়ানাতে চওতাল কম্পিটিশনও হয়ে থাকে। এইরকমই বহু সংখ্যক ভারতীয় বিশেষ করে পূর্ব উত্তর প্রদেশ এবং বিহার থেকে ফিজিতেও গিয়েছিলেন। তাঁরা পারম্পরিক ভজন কীর্তন গাইতেন যার মধ্যে মুখ্য রূপে রামচরিত মানস-এর দোহা গাওয়া হত। তাঁরা ফিজিতেও ভজন কীর্তন সঙ্গে জড়িত অনেক দলও বানিয়ে ফেলেছেন। ফিজিতে রামায়ণ মন্ডলী নামে আজও ২০০০ এরও বেশি ভজন কীর্তন দল আছে। এদের আজ প্রত্যেক গ্রামেগঞ্জে দেখতে পাওয়া যায়। আমি তো এখানে কয়েকটা মাত্র উদাহরণই দিয়েছি। যদি আপনি সমগ্র দুনিয়াতে দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন ভারতীয় সংগীতকে ভালোবাসার মানুষের লিস্ট অনেক লম্বা।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা সবাই সব সময় এই ব্যাপারে গর্ব করি যে আমাদের দেশ সমগ্র পৃথিবীতে সবথেকে প্রাচীন ঐতিহ্যের পিঠস্থান। এইজন্য এটা আমাদের দায়িত্ব যে আমরা আমাদের ঐতিহ্য আর পারম্পরিক জ্ঞানকে সংরক্ষিত করি, তার লালন পালন করি, আর সম্ভব হলে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। এরকমই প্রশংসনীয় একটি প্রচেষ্টা আমাদের পূর্বত্তর রাজ্য নাগাল্যান্ড এর কিছু বন্ধুরা করছেন। আমার এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত ভালো লেগেছে, তাই আমি ভাবলাম “মন কি বাত”-এর শ্রোতাদের সঙ্গে এটা ভাগ করে নিই।

বন্ধুরা, নাগাল্যান্ড-এ নাগা সমাজ এর জীবনশৈলী তাদের কলা-সংস্কৃতি আর সংগীত আমাদের সবাইকে আকর্ষিত করে। এটা আমাদের দেশের গৌরবময় ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নাগাল্যান্ডের মানুষদের জীবন আর ওঁদের স্কিলস, সাসটেইনেবল লাইফ স্টাইলের জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই পরম্পরা আর স্কিলসকে বাঁচিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে ওখানকার মানুষেরা একটি সংস্থা বানিয়েছেন যার নাম “লিডি ক্রো ইউ”। নাগা সংস্কৃতির যে সুন্দর আবহ হারাতে বসেছিল “লিডি ক্রো ইউ” সংস্থা সেটাকে পুনর্জীবিত করার কাজ করছে। উদাহরণ স্বরূপ নাগা লোকসংগীত নিজেই অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই সংস্থাটি নাগা সংগীতের অ্যালবাম লঞ্চ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত তিনটি অ্যালবাম লঞ্চ করা হয়ে গিয়েছে। এই মানুষেরা লোকসংগীত, লোকনৃত্যর সঙ্গে জড়িত ওয়ার্কশপও আয়োজন করে থাকেন।

এই সবকিছুর জন্য তরুণদের training-ও দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, নাগাল্যান্ডের পারম্পরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কাপড় তৈরী, সেলাই-বোনাই করার মত যা যা কাজ আছে তারও ট্রেনিং তরুণদের দেয়া হয়। উত্তর-পূর্বে, বাঁশ থেকেও অনেক ধরনের product তৈরি করা হয়। নতুন প্রজন্মের যুব-সমাজকে Bamboo product তৈরি করাও শেখানো হয়। এর ফলে নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে যুব-সমাজের শুধু একটা সুনিবিড় যোগাযোগই তৈরি হয় না, তার সঙ্গে রোজগারেরও নতুন নতুন রাস্তা তৈরি হয়। নাগা লোকসংস্কৃতি সম্পর্কে যাতে আরো বেশি করে মানুষ জানতে পারে সেজন্য লিডি-ক্রো-ইউ'র লোকেরা উদ্যোগ নিয়েছেন।

বন্ধুরা, আপনারা যে অঞ্চলে থাকেন সেখানেও নিশ্চয়ই এরকম কিছু সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ও  পরম্পরা রয়েছে। আপনারাও নিজেদের অঞ্চলে তাই এ ধরনের উদ্যোগ নিতেই পারেন। আর এরকম কোন বিরল উদ্যোগ সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে সেই তথ্য'ও আমার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন।
প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানে বলা হয়ে থাকে-

"বিদ্যাধনং সর্বধনপ্রধানম্"

অর্থাৎ, কেউ যদি বিদ্যাদান করে থাকেন তাহলে তিনি সমাজের মঙ্গলার্থে সবথেকে বড় কাজ করছেন। শিক্ষার অঙ্গনে প্রজ্জ্বলিত ছোট্ট একটি প্রদীপ'ও সমগ্র সমাজকে আলোকিত করতে পারে। আমি এদেখে অনেক অনন্দিত যে জেশজুরে এমন অনেক প্রচেষ্টা চলছে।  উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনৌ থেকে ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরে হরদইয়ে, বাংশা বলে একটা বাঁসা গ্রাম আছে‌! এই গ্রামের যতীন ললিত সিং-জি সম্পর্কে সম্প্রতি আমি জানতে পেরেছি, তিনি শিক্ষার জাগরণে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। যতীন-জি দু’বছর আগে এখানে 'Community Library and Resource Centre' চালানো শুরু করেন। তাঁর সেই centre-এ হিন্দি ও ইংরেজি সাহিত্য, কম্পিউটার, law এবং বহু সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ৩০০০-এরও বেশী পুস্তক রয়েছে। এই লাইব্রেরীতে শিশুদের পছন্দের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে মজুত comics-এর বই হোক বা educational toys, শিশুরা সেগুলো খুবই পছন্দ করেছে। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা খেলার মধ্যে দিয়ে নতুন নতুন বিষয় শেখার জন্য এখানে আসে। পড়াশোনা offline-এই হোক বা online-এ, অন্ততপক্ষে ৪০ জন volunteers এই centre-এ student'দের guide করার কাজে যুক্ত থাকে। প্রতিদিন গ্রামের অন্ততপক্ষে ৮০ জন শিক্ষার্থী এই Library-তে পড়াশোনা করতে আসে।

বন্ধুরা, ঝাড়খণ্ডের সঞ্জয় কশ্যপজীও দরিদ্র শিশুদের স্বপ্নকে নতুন করে ডানা মেলার সুযোগ করে দিচ্ছেন। ছাত্রজীবনে সঞ্জয়জীকে ভালো বইয়ের অভাব জনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এজন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর অঞ্চলের শিশুদের ভবিষ্যৎ বইয়ের অভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে তিনি দেবেন না। নিজের এই মিশনের ফলে আজ ঝাড়খণ্ডের অনেক জেলায় বাচ্চাদের জন্য তিনি "লাইব্রেরি ম্যান" হয়ে উঠেছেন। সঞ্জয়জী নিজের চাকরি জীবন শুরু করার সময় প্রথম গ্রন্থাগার নিজের পৈতৃক ভিটেতে তৈরি করেছিলেন। তারপর চাকরির কারণে তাঁর যেখানেই ট্রান্সফার হত সেখানকার দরিদ্র ও জনজাতি শিশুদের পড়াশোনার জন্য লাইব্রেরি খোলার মিশনে তিনি মগ্ন থাকতেন। এভাবে ঝাড়খণ্ডের বহু জেলায় তিনি বাচ্চাদের জন্য লাইব্রেরী খুলেছেন। তাঁর লাইব্রেরি খোলার এই মিশন আজ এক সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। সঞ্জয়জী, যতীনজীর মত এমন প্রয়াস অনেকেই করছেন। তাঁদের আমি বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই।

আমার প্রিয় দেশবাসী, মেডিকেল সাইন্সের দুনিয়ায় রিসার্চ আর ইনোভেশনের পাশাপাশি অত্যাধুনিক টেকনোলজি ও উপকরণের সাহায্যে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তবুও কিছু রোগ আজও আমাদের জন্য খুব বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়ে গেছে। এমনই একটি রোগ হল মাসকুলার ডিস্ট্রফি। এটি প্রধানত একটি বংশগত রোগ যা যে কোন বয়সেই হতে পারে। এতে দেহের মাংসপেশীগুলি দুর্বল হতে থাকে। রোগীর পক্ষে প্রতিদিনের নিজস্ব ছোট ছোট কাজগুলি করাও দুরূহ হয়ে ওঠে। এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা ও দেখাশোনার জন্য আন্তরিকভাবে সেবাপরায়ণ হওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশে হিমাচল প্রদেশের সোলানে এমন একটি সেন্টার আছে যারা মাসকুলার ডিস্ট্রফির রোগীদের কাছে এক নতুন আশার আলো হয়ে উঠেছে। এই সেন্টারের নাম "মানব মন্দির"। এটি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ মাসকুলার ডিস্ট্রফি দ্বারা পরিচালিত। নিজের নামের প্রতি সুবিচার করে "মানব মন্দির" মানব সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এখানে রোগীদের জন্য ওপিডি এবং অ্যাডমিশনের সুবিধা তিন - চার বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। মানব মন্দিরে প্রায় ৫০ জন রোগীর জন্য বেডের ব্যবস্থা আছে। ফিজিওথেরাপি, ইলেকট্রোথেরাপি ও হাইড্রো থেরাপির পাশাপাশি যোগ-প্রাণায়ামের সাহায্যেও এখানে রোগের চিকিৎসা করা হয়।

বন্ধুরা, সব রকমের hi-tech সুবিধার মাধ্যমে এই কেন্দ্রে রোগীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা রয়েছে। Muscular Dystrophy-র সঙ্গে যুক্ত এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। তাই, এই কেন্দ্র হিমাচল প্রদেশেরই নয়, পুরো দেশের রোগীদের জন্য সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করে। সবচেয়ে বেশি সাহস আমরা এই জেনে পাই যে এই সংস্থার মুখ্য ব্যবস্থাপকরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাই, যেমন সামাজিক কর্মী, উর্মিলা বালদিজি, Indian Association of Muscular Dystrophy-র অধ্যক্ষ আমাদের বোন সঞ্জনা গোয়েল জি, আর এই Association-এর বড় ভূমিকায় ছিলেন শ্রীমান বিপুল গোয়েল জি, এই সংস্থার গঠনে অত্যন্ত বড় ভূমিকা পালন করেছেন। মানব মন্দির কে hospital ও Research  centre হিসেবে বিকশিত করার প্রচেষ্টায় রয়েছেন। এর ফলে এখানে রোগীদের আরো উন্নত পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ হবে। আমি এই বিষয়ে প্রচেষ্টারত সবাইকে আমার হৃদয় থেকে প্রশংসা করছি, সঙ্গে Muscular Dystrophy-র সঙ্গে যারা যুদ্ধ করছে সেইসব রোগীদের সুস্থতা কামনা করি।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ “মন কি বাত”-এ আমরা দেশবাসীর গঠনমূলক ও সামাজিক কর্মের আলোচনা করলাম, তা দেশের শক্তি ও উৎসাহের উদাহরণ। আজ সব দেশবাসী কোন না কোন ক্ষেত্রে, প্রতি পর্যায়ে, দেশের জন্য আলাদা কিছু করার কাজে প্রচেষ্ট। আজকের আলোচনায় আমরা দেখলাম, G-20র মত আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের এক তন্তুবায় বন্ধু নিজের দায়িত্ব বুঝে, তা পূরণ করতে এগিয়ে এলেন। তেমনই, কেউ পরিবেশের জন্য প্রচেষ্ট, কেউ জলের জন্য কাজ করছেন, কেউ কেউ শিক্ষা, চিকিৎসা ও Science Technology থেকে সংস্কৃতি ঐতিহ্য পর্যন্ত, অসাধারণ কাজ করে চলেছেন। এই কারণ আজ আমাদের প্রতিটি নাগরিক নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন, যখন এরূপ কর্তব্য ভাবনা কোন রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়, তখন তার স্বর্ণালী ভবিষ্যৎ অবধারিতরূপে নির্ধারিত হয়ে যায় ও দেশের স্বর্ণালী ভবিষ্যতেই রয়েছে আমাদের সকলের স্বর্ণালী ভবিষ্যৎ। 

আমি, আরো একবার দেশবাসীদের তাদের প্রচেষ্টার জন্য প্রণাম জানাই। পরের মাসে আবার দেখা হবে ও এই ভাবেই আরো অনেক উৎসাহব্যঞ্জক বিষয়ে আমরা অবশ্যই কথা বলব। আপনাদের পরামর্শ ও ভাবনা আমাকে অবশ্যই পাঠাবেন। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।



(Release ID: 1879322) Visitor Counter : 259