প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

বিশাখাপত্তনমে বিভিন্ন প্রকল্পের সূচনা ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 12 NOV 2022 1:40PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১২  নভেম্বর, ২০২২

 

অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রী বিশ্বভূষণজি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জগন মোহন রেড্ডিজি, মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী অশ্বিনী বৈষ্ণবজি, মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্টজন এবং অন্ধ্রপ্রদেশের ভাই বোনেরা!

কয়েক মাস আগেই বিপ্লব ভিরুদু সীতারামরাজু জির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আপনাদের সকলের সঙ্গে মিলিত হওয়ার এক সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। আজ আমি অন্ধ্রপ্রদেশে আরও একবার উপস্থিত থাকার সুযোগ লাভ করেছি এমন একটি উপলক্ষে যা অন্ধ্রপ্রদেশ এবং বিশাখাপত্তনমের পক্ষে একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। বিশাখাপত্তনম হল ভারতের একটি বিশেষ শহর। ব্যবসা-বাণিজ্যের এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে এই স্থানটিতে। প্রাচীন ভারতে বিশাখাপত্তনম ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এই বন্দরের মাধ্যমে হাজার হাজার বছর আগে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত পশ্চিম এশিয়া ও রোমের সঙ্গে। আজও ভারতীয় বাণিজ্যের একটি অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু রূপে অবস্থান বিশাখাপত্তনমের।

১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিশাখাপত্তনমের অধিবাসীদের আশা-আকাঙ্খা পূরণে সহায়ক হয়ে উঠবে। পরিকাঠামোর মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পই শুধু এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে না, সেইসঙ্গে জীবনযাত্রার মান সহজতর করে তোলা এবং আত্মনির্ভর ভারত গঠনের সংকল্প আমাদের উন্নয়নের পথে যাত্রাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এজন্য আমি সকল অন্ধ্রপ্রদেশবাসীকে জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন। এই সুযোগে আমি ধন্যবাদ জানাই দেশের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি শ্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু এবং শ্রী হরিবাবুকেও। যখনই আমাদের সাক্ষাৎকারের সুযোগ ঘটে তখনই অন্ধ্রপ্রদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে আমাদের মধ্যে কথা-বার্তা হয়। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রতি তাঁদের নিষ্ঠা ও ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না।

বন্ধুগণ,

অন্ধ্রপ্রদেশবাসীর একটি বিশেষ গুণ হল প্রকৃতিগত দিক থেকে তাঁরা খুবই স্নেহপ্রবণ ও কঠোর পরিশ্রমী। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষজনের মেধা ও প্রতিভার ছাপ রয়েছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই। শিক্ষা বা ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিসা বা প্রযুক্তি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষরা এক স্বতন্ত্র পরিচিতি বহন করেন। তাঁদের পেশাগত গুণ ও দক্ষতার কারণেই শুধু নয়, বন্ধুসুলভ প্রকৃতির জন্য তাঁদের এক বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষজনের সদা প্রফুল্ল এবং প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্বের কারণে প্রত্যেকের কাছেই তাঁরা প্রিয় হয়ে উঠেছেন। আজ এখানে যে সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন বা শিলান্যাস অনুষ্ঠিত হয়েছে তা অন্ধ্রপ্রদেশের অগ্রগতির ধারাকে উন্নততর করে তুলবে বলে আমি মনে করি।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার অমৃতকালে দেশ উন্নয়নের পথে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য হল এক উন্নত ভারত গড়ে তোলা। উন্নয়নের এই যাত্রাপথের অনেকগুলি দিক রয়েছে। সাধারণ নাগরিকদের জীবন যাপনের চাহিদা পূরণ, সর্বশ্রেষ্ঠ আধুনিক পরিকাঠামোর প্রসার ও উন্নয়ন এ সমস্ত কিছুই আমাদের এই কর্মপ্রচেষ্টার এক একটি অঙ্গ হয়ে উঠেছে। পরিকাঠামো সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী আজকের এই কর্মসূচিগুলির মধ্যে দিয়ে সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি হল আমাদের চিন্তা-ভাবনার অন্যতম বিষয়। পরিকাঠামোর ব্যাপারে আমরা কখনই সময় নষ্ট করি না। দেশের কোথায় কোথায় রেল ব্যবস্থা বা সড়ক পরিবহণকে আরও উন্নত করে তুলতে হবে, আবার কোথায় কাথায় বন্দর ও মহাসড়কগুলির উন্নয়নের কাজে আমাদের ব্যস্ত থাকতে হবে- দিনের পর দিন এই সমস্ত চিন্তা-ভাবনা নিয়ে আমরা কালক্ষেপ করি না। কারণ এই ধরনের মানসিকতার জন্য দেশকে অনেক ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে। দেশের যোগান শৃঙ্খল যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনই ব্যয়-বাহুল্য ঘটেছে পরিবহণের ক্ষেত্রেও। 

বন্ধুগণ,

দেশের যোগান শৃঙ্খল এবং পরিবহণের মতো বিষয়গুলি বিভিন্ন ধরণের সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর মূলত নির্ভরশীল। এই কারণে পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করেছি। এক সার্বিক তথা সংহত উন্নয়ন প্রচেষ্টার ওপর আমরা জোর দিয়েছি। যে অর্থনৈতিক করিডর স্থাপনের প্রকল্পটির আজ এখানে শিলান্যাস হল তা রূপায়ণের মধ্য দিয়ে তৈরি হবে ৬ লেনের একটি সড়ক। বন্দরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী একটি পৃথক সড়কও তৈরি করা হবে। একদিকে যেমন বিশাখাপত্তনম রেল স্টেশনের আমরা সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে চলেছি অন্যদিকে তেমনি এক অত্যাধুনিক মৎস্য বন্দর গড়ে তোলার কাজেও আমরা সচেষ্ট হয়েছি।

বন্ধুগণ,

প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি মাস্টার প্ল্যানের কারণেই পরিকাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কে এক সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে। গতিশক্তি পরিকল্পনার সাহায্যে পরিকাঠামো প্রসারের কাজই শুধু ত্বরান্বিত হবে না, সেইসঙ্গে প্রকল্প রূপায়ণের ব্যয়ও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। বিভিন্ন ধরণের পরিবহণ ব্যবস্থা হল প্রত্যেকটি শহরেরই ভবিষ্য। অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যটি এদিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। এই প্রকল্পগুলির জন্য অন্ধ্রপ্রদেশবাসীরা দীর্ঘকাল ধরে অপেক্ষা করে রয়েছেন। তাঁদের সেই প্রতীক্ষার এখন অবসান ঘটতে চলেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ ও উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলি উন্নয়নের এই যাত্রাপথে সামিল হবে এক নতুন শক্তি নিয়ে।

বন্ধুগণ,

বর্তমান বিশ্ব নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কোনো কোনো দেশে যেমন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের অভাব রয়েছে, অন্য কয়েকটি দেশে আবার রয়েছে জ্বালানির সংকট। অর্থনৈতিক অগ্রতির পথে বাধা বা অন্তরায়ের কথা অজানা নয় সংশ্লিষ্ট প্রায় প্রত্যেকটি দেশের কাছেই। এ সমস্ত কিছুর মধ্যেই ভারত কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নীত হচ্ছে নতুন নতুন উচ্চতায়। উন্নয়নের এক বিশেষ অধ্যায় রচিত হচ্ছে ভারতের ইতিহাসে। এ সম্পর্কে আপনারা যেমন অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন, সমগ্র বিশ্ব তা নিশ্চিতভাবেই লক্ষ্য করে চলেছে।

বিশ্বের বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞরা বর্তমানে ভারতের প্রশংসায় যে মুখর হয়ে উঠেছেন তা আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন। সমগ্র বিশ্বের কাছে ভারত এখন হয়ে উঠেছে লক্ষ্যের এক বিশেষ কেন্দ্রবিন্দু। এর কারণ হল, দেশবাসীর প্রত্যাশা ও চাহিদা পূরণের কাজ সাফল্যের সঙ্গেই করে চলেছে ভারত। আমাদের প্রত্যেকটি নীতি ও সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্যই হল সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। পিএলআই, জিএসটি, আইবিসি, জাতীয় পরিকাঠামো পাইপ লাইন এবং গতিশক্তি সম্পর্কিত গৃহীত নীতির সুবাদে ভারতে বিনিয়োগের মাত্রাও দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। একইসঙ্গে দরিদ্র কল্যাণে যে কর্মসূচির কাজ আমরা শুরু করেছি তারও ক্রম প্রসার ঘটছে।

আমাদের এই উন্নয়নের পথে এমন অনেক অঞ্চলকেই আমরা যুক্ত করেছি যেগুলি অতীতে অবহেলিত অবস্থায় পড়েছিল। দেশের সর্বাপেক্ষা অনগ্রসর জেলাগুলিতেও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বন্টনের কর্মসূচিও চালু রয়েছে বিগত আড়াই বছর ধরে। আবার প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনার মাধ্যমে বিগত সাড়ে তিন বছর ধরে কৃষকদের প্রতিটি অ্যাকাউন্টে বছরে ৬ হাজার টাকা করে হস্তান্তর করা হচ্ছে। দেশের তরুণ ও যুবকদের জন্যও নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার দ্বার উন্মুক্ত করা হচ্ছে। ড্রোন প্রযুক্তি, মহাকাশ, স্টার্টআপ প্রতিটি ক্ষেত্রই আরও এগিয়ে চলার সুযোগ পাচ্ছে আমাদের গৃহীত নীতিগুলির জন্য।

বন্ধুগণ,

আমাদের লক্ষ্য যেখানে স্থির তখন উচ্চতা যতই কঠিন হোক না কেন, যতই হোক না তা অতলস্পর্শী আমরা সকল বাধা তুচ্ছ করতে বদ্ধপরিকর। অন্ধ্রপ্রদেশে সমুদ্রের গভীর থেকে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আহরণ করা জলের সাহায্যে আমরা সৃষ্টি করব জ্বালানি শক্তি। নীল অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলিও। তাই এই পথেও আমরা আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করে তুলেছি। দেশে এই প্রথম নীল অর্থনীতির বিষয়টিকে এক বিশেষ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়েছে।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুযোগ এখন পৌঁছে গেছে মৎস্যজীবীদের কাছেও। বিশাখাপত্তনম মৎস্য বন্দরটির আধুনিকীকরণ প্রকল্পের আজ সূচনা হল। এর সাহায্যে আমাদের মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়ে উঠবে। দরিদ্র মানুষের যতো বেশি করে ক্ষমতায়ন আমরা নিশ্চিত করে তুলব ততই তারা আধুনিক পরিকাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধাগুলিতে আরও বেশি মাত্রায় কাজে লাগাতে পারবে। এক উন্নত ভারত গড়ে তোলার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছি তা সফল হয়ে উঠবে আমাদের এই সমস্ত প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে।

বন্ধুগণ,

বহু শতাব্দী যাবৎ আমাদের সম্পদ ও সমৃদ্ধির একটি উৎস হল দেশের সমুদ্র অঞ্চল। আর সেই সমৃদ্ধির পথে প্রবেশদ্বার হল আমাদের উপকূল অঞ্চলগুলি। তাই বন্দর চালিত উন্নয়নের লক্ষ্যে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার প্রকল্প দেশে রূপায়িত হচ্ছে। ২১ শতকের ভারত এক সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে স্থির করে কর্মসূচি রূপায়ণের পথে এগিয়ে চলেছে। দেশের এই অভিযানে অন্ধ্রপ্রদেশ যে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করবে এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

এই সংকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমি আপনাদের সকলকে আরও একবার ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি!

আপনারা দু-হাত তুলে আমার সঙ্গে বলে উঠুন-

ভারত মাতার জয়!

ভারত মাতার জয়!

ভারত মাতার জয়!

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে।

 

PG/SKD/NS



(Release ID: 1876541) Visitor Counter : 186