প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

রাজ্যসভায় উপ-রাষ্ট্রপতি শ্রী এম ভেঙ্কাইয়া নাইডুর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 08 AUG 2022 1:26PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৮ অগাস্ট, ২০২২

 

আমরা আজ এখানে মিলিত হয়েছি, এই সদনের চেয়ারম্যান এবং দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি মাননীয় শ্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডুজীর কার্যকালের মেয়াদ শেষে তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য। এই কক্ষের জন্য এটি অত্যন্ত আবেগঘন এক মুহূর্ত। আপনার মর্যাদাপূর্ণ উপস্থিতিতে এই সভা অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। বিভিন্ন সময়ে আপনি বলেছেন যে, আপনি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন ঠিকই, কিন্তু কখনই জনসেবা থেকে সরে আসবেন না। আজ এই সভার নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব থেকে আপনি সরে যাচ্ছেন। কিন্তু, আপনার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে দেশকে এবং আমাদের মতো যাঁরা জনসেবায় নিযুক্ত তাঁদের সহায়তা করবে।

মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,

আজ যখন সারা দেশ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে মেতে উঠেছে এবং আগামী ২৫ বছর তার নতুন যাত্রা নির্ধারণ করছে - সেই সময় দেশের নেতৃত্বের দায়িত্ব নতুন যুগের নেতৃবৃন্দ গ্রহণ করছেন। আমরা সকলেই জানি, এ বছরের ১৫ অগাস্টের একটি তাৎপর্য আছে। এই প্রথম দেশের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, অধ্যক্ষ ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সকলের জন্ম স্বাধীনতার পর। এরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

আপনি এমন একজন উপ-রাষ্ট্রপতি, যিনি জীবনে বিভিন্ন পদের দায়িত্ব সামলানোর সময় যুবসম্প্রদায়ের জন্য কাজ করেছেন। আপনি সংসদে তরুণ সাংসদদের উৎসাহিত করেছেন। আপনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যুবক-যুবতীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রেখেছেন। যুবসম্প্রদায় আপনার থেকে পরামর্শ পেয়েছেন এবং আপনার সঙ্গে তাঁরা সাক্ষাৎ করতে সবসময়ে উৎসাহী হয়ে থাকেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আপনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আমি শুনলাম, উপ-রাষ্ট্রপতি হিসাবে আপনি সংসদের বাইরে যত বক্তৃতা দিয়েছেন, তার ২৫ শতাংশই ছিল যুবসম্প্রদায়ের উদ্দেশে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, বিভিন্ন সময়ে আমি আপনাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। দলের সদস্য হিসাবে আপনার যে আদর্শগত অঙ্গীকার ছিল, একজন বিধায়ক হিসাবে আপনার ভূমিকা, একজন সাংসদ হিসাবে আপনার কর্মতৎপরতা, ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি হিসাবে আপনার ব্যক্তিগত দক্ষতা ও নেতৃত্বদান, পূর্ণ মন্ত্রী হিসাবে আপনার কঠোর পরিশ্রম অথবা বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন – আপনার প্রতিটি ভূমিকাতেই দেশ লাভবান হয়েছে। উপ-রাষ্ট্রপতি অথবা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসাবে আপনি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে আপনার দায়িত্ব পালন করেছেন। কোনও কাজকেই আপনি বোঝা বলে মনে করেননি, বরং সেখান থেকে জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করেছেন। আপনার কর্তব্য ও নিষ্ঠা সবসময়েই প্রতিফলিত হয়েছে। আজ সংসদে আমি সকল মাননীয় সাংসদ ও দেশের প্রত্যেক যুবক-যুবতীকে পরামর্শ দেব – সমাজ, দেশ ও গণতন্ত্র সম্পর্কে যে কোনও ধারণা পেতে তাঁরা আপনাকে অনুসরণ করবে। আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের যুবসম্প্রদায়কে পথ দেখাক ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করুক।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

আপনার বিভিন্ন বইয়ের প্রসঙ্গ আমি এখানে উল্লেখ করছি। এই বইগুলির শিরোনাম থেকে শব্দ নিয়ে আপনার খেলা করার ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আপনার একটা বাক্য থেকে অনেক অর্থ বেরিয়ে আসে। আপনার প্রত্যেকটি শব্দ বিভিন্ন অর্থ বহন করে। ভাষার প্রতি আপনার দক্ষতা এবং যে কোনও পরিস্থিতিকে দক্ষভাবে ভাষার মাধ্যমে সামাল দেওয়ার যে ক্ষমতা আপনার রয়েছে, তা প্রশংসনীয়।

বন্ধুগণ,

আমরা কি বলছি, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তারচেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হ’ল – আমরা কেমনভাবে সেটা বলছি। যে কোনও আলোচনার সাফল্য নির্ভর করে, যেভাবে কথা বলা হচ্ছে, তার প্রভাব কতটা পড়ছে এবং তার মধ্য দিয়ে মানুষ কতটা ভাবনাচিন্তা করছেন। দেশের মানুষ ভেঙ্কাইয়াজীর ভাবনা প্রকাশের এই দক্ষতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এর পরিচয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে পাওয়া গেছে। যেভাবে আপনি আপনার ভাব প্রকাশ করেন, তা অনন্য। আপনার ব্যবহৃত শব্দের গভীরতা ও গুরুত্ব রয়েছে। আপনার ভাষণে কৌতুক যেমন আছে, তেমনই তার ওজনও আছে। সেখানে আপনার প্রকৃত জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। যেভাবে আপনি সকলের সঙ্গে কথা বলেন, তা মানুষের মন ছুঁয়ে যায় এবং শ্রুতিমধুরও বটে।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

দক্ষিণ ভারতের ছাত্র রাজনীতি থেকে আপনি আপনার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। সেই সময়, সকলে বলতেন, যে দলের আদর্শ নিয়ে আপনি কাজ করেন, দক্ষিণে তার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু, আপনি দক্ষিণ ভারতের একজন সাধারণ ছাত্র রাজনীতির কর্মী থেকে সেই দলের জাতীয় সভাপতি হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে কর্তব্যের প্রতি আপনার নিষ্ঠা এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রমাণিত। বিভিন্ন ভাষার বৈচিত্র্য নিয়ে আপনি যতটা গুরুত্ব দিয়েছেন, এর আগে কেউ তা করেননি।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

অনেকেরই হয়তো মনে আছে, আমার তো বিশেষ করে যথেষ্টই মনে আছে, একবার আপনি মাতৃভাষা সম্পর্কে কি দারুন কথা বলেছিলেন। যেভাবে আপনি মত প্রকাশ করে এসেছেন, তা অত্যন্ত সুন্দর। আপনি বলেন, মাতৃভাষা হ’ল চোখের মতো। আর অন্যান্য ভাষার ভূমিকা চশমার মতো। অন্তরের গভীর স্থল থেকেই এ ধরনের অনুভূতি বেরিয়ে আসে। সংসদের কাজকর্ম চলার সময় প্রত্যেকটি ভারতীয় ভাষার যে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, তা আপনিই সকলকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছেন। আমাদের সংবিধান স্বীকৃত ২২টি ভাষার যে কোনও একটিতে যাতে সংসদে কথা বলা যায়, আপনি তা নিশ্চিত করেছেন। আপনার প্রতিভা ভবিষ্যতেও সংসদকে পরিচালনা করতে সাহায্য করবে। সংসদীয় কাজকর্মে আপনি সবসময়েই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

আপনার যোগ্য নেতৃত্ব ও শৃঙ্খলাপরায়ণ জীবনযাত্রা এই সংসদের কার্যকারিতাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আপনার সময়কালে রাজ্যসভার কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাংসদদের উপস্থিতির হার বেড়েছে। এই সময়ে ১৭৭টি বিল হয় পাশ হয়েছে হয় পাশ হয়েছে, নয়তো আলোচনা হয়েছে। এ ধরনের অনেক আইন আপনার পরামর্শক্রমে কার্যকর হয়েছে। আপনার অনেক সিদ্ধান্ত উচ্চ কক্ষের কাজকর্মে ভবিষ্যতেও সকলে মনে রাখবেন। সচিবালয়কে আরও দক্ষভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনি একটি কমিটি গঠন করেছেন। এছাড়াও, উচ্চ কক্ষে কাগজ বিহীন পদ্ধতিতে কাজকর্মের জন্য ই-অফিস ব্যবস্থাপনা, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর মতো বহু উদ্যোগ আপনি নিয়েছেন, যা রাজ্যসভাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

আমাদের শিলালিপিতে বলা আছে, যে কোনও বৈঠকে যখন অভিজ্ঞ মানুষেরা থাকেন, তাঁরা সেখানে ধর্ম অর্থাৎ কর্তব্য সম্পর্কে সকলকে পরামর্শ দেন। রাজ্যসভায় আপনার নেতৃত্বে এই কাজটি হয়েছে। আপনি মাননীয় সদস্যদের নানা পরামর্শ দিয়েছেন, আপনার অভিজ্ঞতার সুফল তাঁরা পেয়েছেন। আবার, শৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে আপনি তাঁদের ভৎর্সনাও করেছেন। আমি নিশ্চিত, কোনও সদস্যই আপনার সেই তিরস্কারকে মনে রাখেননি। আপনি সর্বদাই বলেছেন, সংসদের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটানোর অর্থ সংসদকে অবমাননা করা। আগে কোনও আলোচনা চলার সময় বিঘ্ন ঘটলে সংসদের কাজ স্থগিত রাখা হ’ত। কিন্তু, আপনি আলোচনা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে সংসদের কাজ যেমন পরিচালনা করেছেন, একই সঙ্গে তার কার্যকারিতাও বৃদ্ধি করেছেন। সংসদের কাজকর্ম চলার সময় সদস্যদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে আপনি সবসময়েই বলতেন, “সরকার প্রস্তাব দিক, বিরোধীরা তার বিরোধিতা করুন এবং সংসদ তার নিষ্পত্তি করুক”। এই সংসদের যে কোনও বিলের ক্ষেত্রে মত পার্থক্যের কথা উল্লেখ করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এই সংসদ যে কোনও বিল পাশ করতে পারে, বাতিল করতে পারে বা তাতে সংশোধনী আনতে পারে। কিন্তু, কোনও বিল আটকে রাখা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য উচিৎ নয়।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

আমাদের মধ্যে মিল বা অমিল থাকা সত্ত্বেও আজ এই কক্ষের সব সদস্য আপনাকে বিদায় জানাতে উপস্থিত হয়েছেন। এটাই আমাদের গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। এর মধ্য দিয়ে এই সংসদ আপনাকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতেও আপনার বিভিন্ন উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতা সাংসদদের অনুপ্রাণিত করবে। এই কক্ষ পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনি যে নজির সৃষ্টি করেছেন, তা ভবিষ্যতেও যাঁরা এই পদে আসীন থাকবেন, তাঁদের অনুপ্রাণিত করবে। এই আশা নিয়ে আরও একবার সংসদের সকলের পক্ষ থেকে আমি আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই। আমি আপনার প্রতি অত্যন্ত ঋণী হয়ে থাকবো। দেশ ও এই সংসদের জন্য আপনি যা যা করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছেন

 

PG/CB/SB


(Release ID: 1852347) Visitor Counter : 216