প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বন্টন ব্যবস্থার সংস্কার করার উদ্বোধন করেছেন


‘উজ্জ্বল ভারত উজ্জ্বল ভবিষ্য – বিদ্যুৎ@২০৪৭’ কর্মসূচির সমাপ্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী এনটিপিসি-র ৫,২০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের বিভিন্ন সবুজ শক্তি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সৌর রুফটপ পোর্টালের উদ্বোধন করেছেন

“বাণিজ্য সরলীকরণ ও জীবনযাত্রার সরলীকরণের মতো বিদ্যুৎক্ষেত্রের সশক্তিকরণও জরুরি”

“দেশে গত আট বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে”

“রাজনীতিতে জনগণের সত্যতা স্বীকার করার সাহস থাকা উচিৎ, কিন্তু আমরা দেখছি বেশ কিছু রাজ্য তা এড়িয়ে যাচ্ছে”

“বিদ্যুৎক্ষেত্র রাজনীতির বিষয় নয়”

Posted On: 30 JUL 2022 3:04PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩০ জুলাই, ২০২২

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ‘উজ্জ্বল ভারত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ-বিদ্যুৎ@২০৪৭’-এর সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে যোগ দেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি বিদ্যুৎক্ষেত্রের বন্টন ব্যবস্থার সংস্কার করা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। তিনি এনটিপিসি-র সবুজ শক্তি ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। জাতীয় সৌর রুফটপ পোর্টালেরও সূচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন। মান্ডি থেকে শ্রী হংসরাজ প্রধানমন্ত্রীকে ‘কুসুম’ প্রকল্পের বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে জানতে চান, অন্য কৃষকরা এই প্রকল্পের বিষয়ে কতটা আগ্রহী। শ্রী হংসরাজ প্রধানমন্ত্রীকে এই প্রকল্পের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং কিভাবে এটি তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপকারে এসেছে সে বিষয়ে বিস্তৃত জানান।

ত্রিপুরার খোয়াইয়ের শ্রী কলহ রিয়াং প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছনোয় কি কি পরিবর্তন এসেছে সে বিষয়ে জানান। তিনি বলেন, সৌরবিদ্যুৎ চালু হওয়ার পরে কেরোসিনের ওপর নির্ভরতা কমেছে। গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছনোয় অন্য আর কি পরিবর্তন এসেছে সে কথা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। জবাবে শ্রী রিয়াং জানান, এখন তাঁরা সহজেই মোবাইল ফোন চার্জ করতে পারেন। এর আগে এই কাজের জন্য তাঁদের অনেকটা দূরে যেতে হত। সৌরবিদ্যুৎ তাঁদের শিশুদের শিক্ষার মান উন্নত করেছে এবং স্থানীয় শিল্পক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে। এছাড়া, সন্ধ্যার পর জীবনযাত্রাতেও পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী রিয়াং-কে সরকার পরিচালিত শিক্ষা বিষয়ক টিভি চ্যানেলগুলির উপকারিতার বিষয়ে জানতে চান। তিনি শ্রী রিয়াং-কে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথাও জিজ্ঞাসা করেন।

‘দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা’র এক সুবিধাভোগী, বিশাখাপত্তনমের বাসিন্দা শ্রী কাগু ক্রান্তিকুমার বিদ্যুৎ তাঁদের জীবনে কতটা সদর্থক প্রভাব এনেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের উন্নতি হলেই দেশ এগিয়ে যাবে। দেশের সব গ্রামে বিদ্যুতায়নের সুবিধা পৌঁছনোয় সন্তোষ প্রকাশ করেন শ্রী মোদী।

সুসংহত বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের এক সুবিধাভোগী বারাণসীর শ্রীমতী প্রমিলা দেবীকে প্রধানমন্ত্রী হর হর মহাদেব বলে শুভেচ্ছা জানান। বারাণসীর সাংসদ প্রধানমন্ত্রী, শ্রীমতী প্রমিলা দেবীকে তাঁর হয়ে বাবা বিশ্বনাথের কাছে প্রণাম জানাতে বলেন। শ্রী মোদী ওভারহেড বিদ্যুতের তারের ব্যবহার ক্রমশ কমিয়ে আনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। আমেদাবাদের শ্রী ধীরেন সুরেশবাহি প্যাটেল সৌর প্যানেল লাগানোর বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রুফটপ প্যানেল লাগানোয় ধীরেন ভাই এখন একজন বিদ্যুৎ বিক্রেতা হয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ২০৪৭ সালের মধ্যে পরিস্থিতি মজবুত করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জন-অংশীদারিত্ব অন্যতম সহায়ক হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৫ বছরে দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত করতে বিদ্যুৎ ও শক্তিক্ষেত্রের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বাণিজ্য সরলীকরণ ও জীবনযাত্রা সহজ করার জন্য বিদ্যুৎক্ষেত্রকেও মজবুত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। দেশে শক্তি নিরাপত্তা ও সবুজ শক্তি ব্যবস্থাপনার দিকে আজকের চালু করার প্রকল্পগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই প্রকল্পগুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রে ভারতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে। লাদাখ এবং গুজরাটে আজ থেকেই দুটি বড় সবুজ হাইড্রোজেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। লাদাখের এই কারখানাটি থেকে দেশের যানবাহনের জন্য সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন হবে। এটি হবে দেশের প্রথম প্রকল্প যা বাণিজ্যিকভাবে সবুজ হাইড্রোজেন-ভিত্তিক যানবাহন চলাচলকে সম্ভব করে তুলবে। লাদাখ খুব শীঘ্রই দেশের প্রথম জায়গা হবে যেখানে ফুয়েল সেল বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল করবে। এটি লাদাখকে এই অঞ্চলের প্রথম কার্বন নিঃসরণহীন অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

শ্রী মোদী জানান, অসামরিক জ্বালানি ক্ষেত্রে পেট্রোলের সঙ্গে ইথানল মেশানোর পর দেশ এখন পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে সবুজ হাইড্রোজেন মেশানোর লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। এর ফলে, প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করার ওপর নির্ভরতা কমবে।

২০১৪ সালের আগে বিদ্যুৎক্ষেত্রে দেশে যে করুণ পরিস্থিতি ছিল সে কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশের বিদ্যুৎক্ষেত্রের মানোন্নয়নের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য চারটি দিশা-নির্দেশে একযোগে কাজ চলছে। তার মধ্যে রয়েছে – উৎপাদন, পরিবহণ, বন্টন এবং সংযোগ।

প্রধানমন্ত্রী জানান, গত আট বছরে দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে। ‘এক দেশ এক পাওয়ার গ্রিড’ ব্যবস্থাপনায় দেশের বিদ্যুৎ বন্টন ব্যবস্থা মজবুত হয়েছে। সারা দেশে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার সার্কিট কিলোমিটার সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ‘সৌভাগ্য’ প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ কোটির বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ।

শ্রী মোদী বলেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির মধ্যেই আমরা ১৭৫ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছিলাম। বর্তমানে আমরা এই লক্ষ্য পূরণের প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছেছি। এখন পর্যন্ত অ-জীবাশ্ম ক্ষেত্র থেকে পাওয়া ১৭০ গিগাওয়াট ক্ষমতার পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন হয়। সৌরবিদ্যুৎ চালু করার বিষয়ে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় ৪-৫টি দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ কারখানাগুলির অনেকক’টি এখন ভারতে। দেশে আজ থেকে আরও দুটি বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হচ্ছে। তেলেঙ্গানা ও কেরলে চালু হওয়া এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি দেশের প্রথম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাড়িতে বাড়িতে সৌর প্যানেল লাগানোর বিষয়েও এখন উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিচ্ছে। “বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা মানে ভবিষ্যৎকে উন্নত করা। ‘প্রধানমন্ত্রী কুসুম যোজনা’ এর বিশেষ উদাহরণ। আমরা কৃষকদের সৌর পাম্প চালুর সুবিধা দিচ্ছি এবং তাঁদের জমির পাশে সৌর প্যানেল লাগানোর সুবিধাও দিচ্ছি” – বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উজালা’ প্রকল্প দেশে বিদ্যুতের ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ বিল কম করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতি বছর দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বিদ্যুৎ বিল থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

শ্রী মোদী বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে এক বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে মানুষের সত্যতা স্বীকার করার সৎ সাহস থাকা উচিৎ। কিন্তু আমরা দেখতে পাই কিছু রাজ্য তা এড়িয়ে চলছে। অল্প সময়ের জন্য এই নীতি-কৌশল ভালো মনে হলেও আজ সত্য লুকিয়ে রাখা মানে আগামীদিনে আমাদের শিশু ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলে দেওয়া। আজকের সমস্যার সমাধান এড়িয়ে গিয়ে আগামীদিনের জন্য তা ফেলে রাখা কখনই দেশের ভবিষ্যতের জন্য সঠিক নয় – বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। বিদ্যুৎক্ষেত্রে এ ধরনের চিন্তাভাবনা বেশ কিছু রাজ্যকে কঠিন সমস্যায় ফেলেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্টন ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ দুই অঙ্কের সংখ্যায় কিন্তু, বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে এই হার ১ অঙ্কের। এর অর্থ হল এই যে বিদ্যুতের অপচয় কমাতে আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে। বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বেশি পরিমাণে করতে হবে। বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা দেখা গেছে। মানুষ জেনে আশ্চর্য হবেন যে অনেক রাজ্যেরই ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বকেয়া রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলিকে তাদের ঐ টাকা দেওয়ার কথা। বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলি বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি পায়।

প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন রাজ্যকে যত শীঘ্র সম্ভব তাদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি, দেশবাসীকে সততার সঙ্গে তাঁদের বিদ্যুৎ বিল মিটিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎক্ষেত্র কোনও ‘রাজনীতি’র বিষয় নয়, এটি ‘রাষ্ট্রনীতি’ এবং দেশ গঠনের বিষয়।

বিদ্যুৎক্ষেত্রের মান রক্ষার দায়িত্ব সকলের – একথা বলে শ্রী মোদী তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার বিদ্যুৎক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য নানা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সকলের জন্য ব্যয়সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুতের সুবিধা এর অন্যতম। এছাড়া, প্রায় ১৮ হাজার গ্রামে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

 

PG/PM/DM/



(Release ID: 1846599) Visitor Counter : 162