প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’, (৯০ তম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ

Posted On: 26 JUN 2022 11:49AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৬ জুন, ২০২২

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার ‘মন কি বাত’–এর জন্য আমি আপনাদের কাছ থেকে অনেক চিঠি পেয়েছি, সোশ্যাল মিডিয়া আর নমো অ্যাপেও অনেক বার্তা পেয়েছি, এর জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা এই অনুষ্ঠানে আমাদের সবার চেষ্টা থাকে যে একে অন্যের প্রেরণাদায়ক কীর্তির আলোচনা করা, জনআন্দোলন থেকে শুরু করে পরিবর্তনের কাহিনী, গোটা দেশকে জানানো এই পর্বে আমি আজ আপনাদের সঙ্গে দেশের এমন এক জনআন্দোলনের আলোচনা করতে চাই যার প্রভূত গুরুত্ব রয়েছে দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের জীবনে কিন্তু তার আগে আমি আজকের প্রজন্মের নবযুবাদের, চব্বিশ-পঁচিশ বছর বয়সী তরুণদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই, এই প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ, আর আমার প্রশ্ন নিয়ে অবশ্যই ভাববেন আপনারা কি জানেন যে আপনাদের মা-বাবা যখন আপনাদের মত বয়সে ছিলেন তখন একবার তাঁদের কাছ থেকে এমনকি জীবিত থাকার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল? আপনারা হয়ত ভাবছেন যে এটা কীভাবে সম্ভব? এটা তো অসম্ভব কিন্তু আমার তরুণ বন্ধু, আমাদের দেশে এমন একবার হয়েছিল এটা অনেক বছর আগে, ১৯৭৫ সালের কথা জুন মাসের এমন সময়েই এমার্জেন্সী কার্যকর করা হয়েছিল তাতে দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে সব অধিকার হরণ করা হয়েছিল তার মধ্যে একটা অধিকার, সংবিধানের ধারা একুশ অনুযায়ী সব ভারতীয়র পাওয়া ‘রাইট টু লাইফ অ্যাণ্ড পারসোনাল লিবার্টি’ও ছিল সেই সময় ভারতের গণতন্ত্রকে পদদলিত করার প্রচেষ্টা হয়েছিল দেশের নানা আদালত, প্রত্যেকটা সাংবিধানিক সংস্থা, প্রেস, সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল সেন্সরশিপ এমন কঠোর ছিল যে বিনা অনুমতিতে কিছুই ছাপা যেত না আমার মনে আছে, তখন বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমারজী সরকারের গুণগান করতে অস্বীকার করায় ওঁর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল রেডিওতে ওঁর প্রবেশই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু বহুও চেষ্টা, হাজার গ্রেপ্তার, লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর অত্যাচারের পরও, ভারতের মানুষদের মন থেকে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস টলে নি, এতটুকু টলে নি ভারতের মানুষের মধ্যে, সেই প্রাচীন কাল থেকে, গণতন্ত্রের যে সংস্কার চলে আসছে, আমাদের শিরায়-শিরায় যে গণতান্ত্রিক ভাবনা প্রবাহিত অবশেষে তারই জয় হল ভারতের মানুষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই এমার্জেন্সীকে হটিয়ে দিয়ে, আবার, গণতন্ত্রের স্থাপন করলেন অত্যাচারী জোটের মানসিকতা, অত্যাচারী শাসকের প্রবৃত্তিকে এইভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরাজিত করার এমন উদাহরণ পৃথিবীতে পাওয়া মুশকিল

জরুরি অবস্থার সময়, আমিও, গণতন্ত্রের এক সৈনিক রূপে, দেশবাসীর সংগ্রামের সাক্ষী হওয়ার, অংশীদার হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আজ, যখন দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছে, অমৃত মহোৎসব পালন করছে, তখন জরুরি অবস্থার সেই ভয়ঙ্কর সময়টিকে আমাদের কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আগামী প্রজন্মেরও ভুলে যাওয়া উচিত না। অমৃত মহোৎসব শুধু শত-শত বছরের দাসত্ব থেকে মুক্তির বিজয় গাথাই নয়, স্বাধীনতার পরের ৭৫ বছরের যাত্রাও জুড়ে রয়েছে। ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের মধ্যে কেউ এমন নেই যে কিনা নিজের জীবনে মহাকাশ নিয়ে কল্পনা করেননি। ছোটবেলায় প্রত্যেককে আকাশের চাঁদ তারা আর তার গল্প আকর্ষণ করতো। তরুণদের জন্য মহাকাশকে ছোঁয়া মানে নিজের স্বপ্নপূরণ করার সমান। আজ আমাদের ভারতবর্ষ যখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহাকাশ ছোঁয়া সাফল্য অর্জন করছে তখন মহাকাশ অর্থাৎ অন্তরীক্ষ কী করেই বা বাদ থাকে! বিগত কিছু দিনে আমাদের দেশে স্পেস সেক্টরের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক বড় বড় কাজ হয়েছে। দেশের এই উপলব্ধির অন্যতম হল In-space নামক এজেন্সির নির্মাণ। এটি এমন একটি এজেন্সি যেটি স্পেস সেক্টরে ভারতের প্রাইভেট সেক্টরের জন্য নতুন সম্ভাবনাকে প্রমোট করছে। এই সূত্রপাত আমাদের দেশের যুবকদের নতুন করে আকর্ষণ করেছে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত তরুণদের অনেক খবর আমার কাছে এসেছে। কিছুদিন আগে যখন আমি ইন-স্পেস এর হেডকোয়ার্টার-এর উদ্বোধনে গিয়েছিলাম তখন আমি যুবকদের মধ্যে নতুন start-up নিয়ে আইডিয়া এবং উৎসাহ দেখেছি। আমি তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। আপনিও যখন তাঁদের সম্পর্কে জানবেন, তখন অবাক না হয়ে থাকতে পারবেন না, যেমন, স্পেস start-up-এর সংখ্যা এবং ক্রমশ বেড়ে চলার স্পিডটাই ধরুন। আজ থেকে কিছু বছর আগে পর্যন্ত আমাদের দেশে স্পেস সেক্টরে স্টার্টআপ নিয়ে কেউ ভাবত পর্যন্ত না। আজ সেই সংখ্যা শতাধিক। এইসব start-up এমন এমন আইডিয়ার ওপর কাজ করছে যার ব্যাপারে হয় আগে ভাবা হয়নি অথবা প্রাইভেট সেক্টরের জন্য তা অসম্ভব মনে করা হত।

উদাহরণ স্বরুপ চেন্নাই ও হায়দেরাবাদের দুটি start-up আছে - অগ্নিকুল ও স্কাইরুট। এই start up দুটি এমন launch vehicle তৈরী করছে যেগুলি মহাকাশে ছোটো payload নিয়ে যেতে সক্ষম। অনুমান করা হচ্ছে এর ফলে Space Launching-এর খরচ অনেক কমে যাবে। Dhruva Space নামের এরকমই হায়দেরাবাদের একটি start-up, Satellite Deployer Satellite এর জন্য high technology solar panel এর উপর কাজ করছে। আমি আর এক স্পেস start up দিগন্তরা আর তানবীর আহমেদের সঙ্গে দেখা করে ছিলাম, যিনি মহাকাশের আবর্জনার ম্যাপিং-এর চেষ্টা করেছেন। আমি ওঁকে একটা Challenge ও দিয়েছি। ওরা এমন প্রযুক্তির ওপর কাজ করুক যার ফলে মহাকাশে আবর্জনার সমস্যার সমাধান হয়। দিগন্তরা আর ধ্রুব স্পেস, দুটো start-upই ৩০শে জুন ইসরোর Launch Vehicle থেকে প্রথম Launch করতে চলেছে। এরকমই, ব্যাঙ্গালোরের Space start-up Astrome-এর প্রতিষ্ঠাতা নেহা এক দারুন idea-র উপর কাজ করছে। এই start-up এমন Flat Antenna বানাচ্ছে যা শুধু ছোটোই হবে না, দামেও কম হবে। গোটা দুনিয়ায় এই technology-র চাহিদা তৈরি হতে পারে।

বন্ধুরা, in space কার্যক্রমে, আমি মেহসানার স্কুল ছাত্রী তন্বী প্যাটেলের সাথে দেখা করি। সে খুবই ছোট্ট একটি Satellite নিয়ে কাজ করছে যা আগামী কয়েক মাসে Space-Launch হতে চলেছে। তন্বী গুজরাতি ভাষায় খুব সহজ ভাবে আমাকে তার কাজ সম্পর্কে জানায়। তন্বীর মতনই দেশে স্কুলের প্রায় সাড়ে সাতশো ছাত্র ছাত্রীরা, অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে এমন ৭৫টি Satellite-এর উপর কাজ করছে। আরো আনন্দের কথা এই যে এদের মধ্যে বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রী ছোটো শহরের।

বন্ধুরা, এরা সেই যুবারাই, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত যাদের মনে Space Sector সম্পর্কে ধারণা ছিল যে এগুলো Secret Mission এর মতন কিছু। কিন্তু দেশ Space Reforms নিয়ে এসেছে এবং এখন সেই যুবক যুবতীরা নিজেদের Satellite Launch করছে। যখন আমাদের দেশের যুবরা আকাশ ছুতে তৈরি তখন আমাদের দেশ কি করে পিছিয়ে থাকতে পারে!

আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাত-এ এবার আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে বলব যা শুনলে আপনারা খুশিও হবেন এবং অনুপ্রেরণাও পাবেন। কয়েকদিন আগে আমাদের অলিম্পিকের স্বর্ণপদক বিজেতা নীরজ চোপড়া আবার খবরের শিরোনামে ছিলেন। অলিম্পিকের পরেও উনি সাফল্যের নিত্যনতুন নজির সৃষ্টি করেছেন।

ফিনল্যান্ডে নীরজ পাভো নুরমি গেমসে শুধু রৌপ্যই জিতেননি, তিনি নিজের জ্যাভলিন থ্রো-এর রেকর্ডও ভেঙেছেন। কূয়োরটানে গেমস-এ নীরজ আরও একবার সোনা জিতে দেশকে গর্বিত করেছেন। এই সোনা তিনি এমন একটি পরিস্থিতিতে জিতেছেন যখন সেখানকার আবহাওয়া বেশ প্রতিকূল ছিল। এই সাহসই আজকের যুবাদের বৈশিষ্ট্য। স্টার্টআপ থেকে শুরু করে ক্রীড়া জগতেও, ভারতের যুবকরা নতুন রেকর্ড গড়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমসে, আমাদের খেলোয়াড়রা অনেক রেকর্ড গড়েছেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এই গেমসএ মোট ১২টি রেকর্ড ভাঙা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মহিলা খেলোয়াড়দের নামেও ১১টি রেকর্ড নথিভুক্ত হয়েছে। মণিপুরের এম মার্টিনা দেবী ভারোত্তোলনে ৮টি রেকর্ড গড়েছেন। একইভাবে সঞ্জনা, সোনাক্ষী এবং ভাবনাও বিভিন্ন রেকর্ড গড়েছেন। এই খেলোয়াড়রা তাদের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে বুঝিয়েছেন কীভাবে আগামী দিনে ভারত আন্তর্জাতিক খেলার আঙিনায় কতটা বড়ো হতে চলেছে। আমি এই সমস্ত খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানাই এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদের মঙ্গল কামনা করি।

বন্ধুরা, খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমস-এর আরও একটি বৈশিষ্ট রয়েছে। এমন এমন অনেক প্রতিভা সেখানে উঠে এসেছে যারা খুব সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন। এই খেলোয়াড়রা তাদের জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছেন এবং সাফল্যের এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন। এই সাফল্যে তাদের পরিবার এবং বাবা-মায়েরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। ৭০ কিলোমিটার সাইক্লিং-এ সোনা জয় করা, শ্রীনগরের আদিল আলতাফের বাবা সেলাইয়ের কাজ করেন। কিন্তু তিনি তার ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে সব রকম চেষ্টা করেছেন। আজ আদিল গোটা জম্মু ও কাশ্মীর এবং তার বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। ভারোত্তোলনে সোনা জয়ী চেন্নাইয়ের এল. ধনুশের বাবাও একজন সাধারণ কাঠমিস্ত্রি । সাংলির মেয়ে কাজল সরগার। তার বাবা একজন চা বিক্রেতা। কাজল তার বাবার কাজে তাকে সাহায্যও করেন এবং একইসঙ্গে তিনি ভারোত্তোলন অনুশীলনও করতেন। তার পরিবারের কঠোর পরিশ্রমে ফলে কাজল ভারোত্তোলনে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। একইরকম উৎকর্ষ রোহতকের তনুও দেখিয়েছেন। তনুর বাবা রাজবীর সিং রোহতকের একটি স্কুল-এ বাস ড্রাইভার। কুস্তিতে স্বর্ণপদক জিতে তনু, তার পরিবার ও তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

বন্ধুরা, ক্রীড়া জগতে এখন ভারতীয় খেলোয়াড়দের গুরুত্ব তো বাড়ছেই, সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন খেলারও নতুন পরিচিতি তৈরি হচ্ছে। যেমন এবার 'খেলো ইন্ডিয়া ইউথ গেমস'-এ অলিম্পিকে থাকা খেলাগুলি ছাড়াও পাঁচটি ভারতীয় খেলা যোগ হয়েছে। এই পাঁচটি খেলা হল – গতকা, থাংগতা, যোগাসন, কলারিপায়াত্তু আর মল্লখম্ব।

বন্ধুরা, ভারতে এমন একটি খেলার আন্তর্রাষ্ট্রীয় টুর্নামেন্ট হতে চলেছে, বহু যুগ আগে আমাদের দেশেই যে খেলার জন্ম হয়েছিল। আমাদের ভারতেই এই খেলা প্রথম শুরু হয়েছিল। ২৮শে জুলাই থেকে দাবা অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়েছে। এইবার দাবা অলিম্পিয়াডে ১৮০টিরও বেশি দেশ অংশগ্রহণ করছে। খেলা এবং ফিটনেস নিয়ে আমাদের আজকের এই আলোচনা একটা নাম ছাড়া সম্পূর্ণ হবে না। এই নাম হল তেলেঙ্গানার পর্বতারোহী পূর্ণা মালাবধ। পূর্ণা সেভেন সামিট চ্যালেঞ্জ শেষ করে সাফল্যের শিখর ছুঁয়েছে। সেভেন সামিট চ্যালেঞ্জ অর্থাৎ পৃথিবীর সাতটা সবথেকে কঠিন আর উঁচু পাহাড়ে চড়ার স্পর্ধা দেখিয়েছে পূর্ণা। পূর্ণা নিজের সাহসের সঙ্গে নর্থ আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু এবং ছোট মাউন্ট দেনালি পর্বত আরোহণ করে দেশকে গর্বিত করেছে। পূর্ণা ভারতের সেই মেয়ে, যে ১৩ বছর বয়সে মাউন্ট এভারেস্টে চড়ার অবিশ্বাস্য কাজ সম্পন্ন করেছিল।

বন্ধুরা, খেলার বিষয় যখন কথা হচ্ছে তাহলে আমি আজ ভারতের সবচেয়ে প্রতিভাশালী ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন মিতালি রাজ এর কথা বলতে চাই। উনি এই মাসেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। অনেক ক্রীড়াপ্রেমীরাই এতে কষ্ট পেয়েছেন। মিতালী শুধু এক অসাধারণ খেলোয়াড়ই নয়, উনি অনেক খেলোয়াড়ের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। আমি মিতালীকে ওঁর ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভকামনা জানাতে চাই।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা “মন কি বাত”-waste to wealth এই বিষয়ে সফল প্রচেষ্টার কথা আলোচনা করি। মিজোরামের রাজধানী আইজলের এমনই এক উদাহরণ দেওয়া যাক। আইজলে একটি সুন্দর নদী আছে। 'চিটে লুই', বহু বছরের অবহেলার জন্যে এই নদী নোংরা ও আবর্জনায় পূর্ন ছিল। গত কয়েক বছর ধরে এই নদী বাঁচানোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল। এর জন্য স্থানীয় এজেন্সি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও স্থানীয় মানুষ সকলে মিলে ‘সেভ চিটে লুই’ অ্যাকশন প্ল্যান শুরু করেছিল। নদীটির এই সাফাই অভিযান waste থেকে wealth ক্রিয়েশনের এক অনন্য সুযোগ গড়ে দেয়।

প্রকৃতপক্ষে, এই নদী ও তার তীরে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য জমেছিল। যেসব সংস্থাগুলি নদীর বাঁচানোর এই প্রয়াসে শামিল ছিল তারা পলিথিন থেকে রাস্তা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, অর্থাৎ নদী থেকে যে আবর্জনা বেরিয়েছে তা দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হল মিজোরামের একটি গ্রামে। তৈরি হল রাজ্যের প্রথম প্লাস্টিকের রাস্তা, অর্থাৎ একইসঙ্গে পরিচ্ছন্নতা ও উন্নয়ন।

বন্ধুরা, এমনই এক প্রচেষ্টা পুদুচেরির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণদের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে Beach ও সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। কিন্তু পুদুচেরির সমুদ্র সৈকতেও প্লাস্টিকের দূষণ বাড়ছিল, তাই সেখানকার মানুষ সমুদ্র, Beach Ecology বাঁচাতে Recycling for life প্রকল্প শুরু করেছে। আজ পুদুচেরির করাইকালে প্রতিদিন হাজার হাজার কিলো আবর্জনা collect করা হয় ও পরে Segregate করা হয়। এর মধ্যে জৈব বর্জ্য দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা হয়, বাকি অন্যান্য জিনিসগুলি আলাদা করে পুনর্ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র অনুপ্রেরণাদায়ী নয়, single use plastic-এর বিরুদ্ধে ভারতের এই প্রচেষ্টাকেও ত্বরান্বিত করে।

বন্ধুরা, এই সময়ে যখন আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন হিমাচল প্রদেশে একটি অভিনব Cycling Rally চলছে। আমি আপনাদের এই সম্পর্কে জানাতে চাই। পরিচ্ছন্নতার বার্তা নিয়ে সিমলা থেকে মান্ডিতে বেরিয়েছে একদল সাইকেল সওয়ার। এই সাইকেল আরোহীরা প্রায় পৌনে দু’শো কিলোমিটার দূরত্বের পাহাড়ি রাস্তা শুধু সাইকেল চালিয়েই শেষ করবে। এই দলে নাবালক ও বৃদ্ধ উভয়েই রয়েছে। যদি আমাদের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকে, আমাদের পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। আপনি আমাকে এই ধরনের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবশ্যই লিখে জানাবেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে মনসুন ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে বহু রাজ্যে বৃষ্টি বাড়ছে এই সময়টা জল জল সংরক্ষণের দিকে নজর দেওয়ার বিশেষ প্রচেষ্টা করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ আমাদের দেশে তো বহু শতাব্দী ধরেই সমাজ মিলিত রুপে এই দায়িত্ব পালন করে এসেছে আপনাদের হয়ত মনে আছে, মন কি বাতে একবার আমরা স্টেপ ওয়েল অর্থাৎ ধাপ-ওলা কুয়ার অথবা বাওড়ির ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কথা আলোচনা করেছিলাম বাওড়ি সেই সব কুয়াকে বলে যেখানে পৌঁছানোর জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়

রাজস্থানের উদয়পুরে এরকমই বহু বছরের পুরনো একটি বাওড়ি আছে, যার নাম সুলতান কি বাওড়ি এটি রাও সুলতান সিং নির্মাণ করেন কিন্তু বহু বছরের অবহেলার কারণে জায়গাটি আসতে-আসতে পরিত্যক্ত হতে শুরু করে এবং আবর্জনার স্তুপে পরিনত হয়

একদিন একদল যুবা ঘুরতে-ঘুরতে ওই জায়গায় পৌঁছন এবং কুয়াটির ওরকম অবস্থা দেখে খুব কষ্ট পান ওই যুবার দল সেদিনই সুলতান কি বাওড়ির রুপ ভাগ্য দুটিই বদল করার প্রতিজ্ঞা নেন তাঁরা তাঁদের এই মিশনের নাম দেন – ‘সুলতান থেকে সুর-তান আপনারা হয়ত ভাবছেন, এই সুর-তান টা কী? আসলে এই যুবারা শুধু বাওড়িটিকে পুনরুজ্জীবিত করেননি, একে সঙ্গীতের সুর তানের সঙ্গেও যুক্ত করে দিয়েছেন সুলতান কি বাওড়ি পরিষ্কার করার পর, একে সাজানোর পর, ওখানে সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হয় এই সংস্কারের কাজটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে বিদেশ থেকেও বহু মানুষ এটা দেখতে আসেন

এই সফল প্রচেষ্টার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল যে এই কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন যে যুবকেরা তারা চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। কাকতালীয়ভাবে, কিছুদিন পরেই পয়লা জুলাই Chartered Accountants Dayসেই উপলক্ষে দেশের সকল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আমার অগ্রিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

জলাশয়গুলোকে নিয়ে আমরা সঙ্গীত ও অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে বিশেষ সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। জল সংরক্ষণ তো বাস্তবে জীবন রক্ষা। আপনারা নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন আজকাল কত নদী-মহোৎসব উদযাপিত হচ্ছে। আপনাদের শহরেও এ ধরনের যে জলাশয় রয়েছে সেখানেও এরকম কিছু না কিছু আয়োজন অবশ্যই করবেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের উপনিষদে একটা বীজ-মন্ত্র রয়েছে, সেটা হল- চরৈবেতি-চরৈবেতি-চরৈবেতি। আপনারা এই মন্ত্রটি নিশ্চয়ই শুনেছেন। এর অর্থ হলো এগিয়ে চলো, অগ্রসর হও! এই মন্ত্রটি আমাদের দেশে এত জনপ্রিয় তার কারণ সর্বদা এগিয়ে চলা এবং গতিশীল থাকা আমাদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। একটা দেশ হিসেবে হাজার বছরের উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে আমারা এখানে এসে পৌঁছেছি। একই সমাজের মানুষ হিসেবে, আমরা সর্বদা নতুন চিন্তা ভাবনা, নতুন নতুন পরিবর্তনগুলোকে মেনে নিয়ে অগ্রসর হয়েছি। এর জন্য আমাদের সাংস্কৃতিক প্রবাহমানতা, এবং এই পথ চলার একটা বড় ভূমিকা আছে। সেজন্যই তো আমাদের দেশের মুনি-ঋষিরা তীর্থযাত্রার মত ধর্মীয়-দায়িত্ব আমাদের দিয়ে গেছেন। বিভিন্ন তীর্থযাত্রায় আমরা তো গিয়েই থাকি। আপনারা দেখে থাকবেন, এবছর চারধাম যাত্রায় কী বিপুল সংখ্যক ভক্তের সমাগম হয়েছিল। আমাদের দেশে নানান সময়ে বিভিন্ন দেবযাত্রা বা পরিক্রমা আয়োজিত হয়ে থাকে। দেবযাত্রা অর্থাৎ যেখানে শুধু ভক্তরাই নন, স্বয়ং ভগবানও যাত্রায় অংশ নেন। কয়েকদিন পরেই পয়লা জুলাই থেকে জগন্নাথ দেবের প্রসিদ্ধ রথযাত্রা শুরু হতে চলেছে।

উড়িষ্যার পুরী যাত্রা সম্বন্ধে তো সমস্ত দেশবাসী অবগত। মানুষের প্রচেষ্টা থাকে যে এই সুযোগে যেনো তাদের পুরী যাবার সৌভাগ্য প্রাপ্তি হয়। অন্যান্য রাজ্যেও জগন্নাথ যাত্রা খুব আড়ম্বরের সঙ্গে পালন করা হয়। ভগবান জগন্নাথ যাত্রা আষাঢ় মাসের দ্বিতীয়াতে শুরু হয়। আমাদের গ্রন্থে 'আষাঢ়স্য দ্বিতীয় দিবসে..রথ যাত্রা' এইরকম সংস্কৃত শ্লোক এর বর্ণনা পাওয়া যায়। গুজরাটের আমদাবাদে প্রতিবছর আষাঢ়ের দ্বিতীয়া থেকে রথযাত্রা শুরু হয়। আমি যখন গুজরাতে ছিলাম তখন আমারও এই যাত্রায় সেবা করার সৌভাগ্যপ্রাপ্তি হত। আষাঢ়ের দ্বিতীয় দিন যাকে আষাঢ়ে বিজও বলা হয় হয়ে থাকে, এই দিন থেকেই কচ্ছ-এর নববর্ষও শুরু হয়। আমি আমার সমস্ত কাচ্ছি ভাই-বোনেদের নববর্ষের শুভ কামনা জানাই। আমার জন্য এই দিনটা আরও একটা বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে আছে আষাঢ় দ্বিতীয়ার একদিন আগে অর্থাৎ প্রথম আষাঢ়ে আমরা গুজরাতে একটি সংস্কৃত উৎসবের সূচনা করেছিলাম যেখানে সংস্কৃত ভাষায় গীত-সংগীত এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হত। এই আয়োজনের নাম ছিল 'আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে'। এই উৎসবের এমন নাম দেবার পেছনেও একটি কারণ আছে। আসলে সংস্কৃতের মহান কবি কালিদাস এই আষাঢ় মাসেই বর্ষার আগমনে মেঘদূতম্ লিখেছিলেন। মেঘদূতমে একটি শ্লোক আছে, "আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে মেঘম আশ্লীষ্ট সানুম" অর্থাৎ আষাঢ়ের প্রথম দিনে পর্বত চূড়ায় লেপ্টে থাকা মেঘ, এই শ্লোকই ছিল এই আয়োজনের আধার।

বন্ধুরা, আহমেদাবাদ হোক কিংবা পুরী, ভগবান জগন্নাথ তাঁর এই যাত্রার মাধ্যমে আমাদের বেশ কিছু গভীর মানবিক বার্তা দিয়েছেন। ভগবান জগন্নাথ সমগ্র জগতের স্বামী তো বটেই, কিন্তু তাঁর যাত্রায় দরিদ্ররা, বঞ্চিতরা বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভগবানও সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও ব্যক্তির সঙ্গে চলেন। অনুরূপভাবে আমাদের দেশে যতগুলি যাত্রা হয়, কোনোটিতেই ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ ইত্যাদি কোন বিভেদ নজরে আসে না। সমস্ত বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে সেই যাত্রাটিই স্বয়ং সর্বোচ্চ স্থানে আসীন হয়। যেমন মহারাষ্ট্রের পনঢরপুরের (pandharpur) যাত্রা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন। পনঢরপুরের যাত্রায় কেউ বড় নয়, কেউ ছোট নয়। প্রত্যেকেই বারকারি (Varkari), ভগবান বিঠঠলের সেবক। চার দিন পরেই ৩০শে জুন থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হতে চলেছে। সারা দেশ থেকে ভক্তরা অমরনাথ যাত্রার জন্য জম্মু-কাশ্মীরে পৌঁছচ্ছেন। জম্মু-কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষরাও ততটাই শ্রদ্ধার সঙ্গে এই যাত্রার দায়িত্বভার পালন করেন, তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করেন।

বন্ধুরা, দক্ষিণে অনুরূপ মাহাত্ম্য শবরীমালা যাত্রারও রয়েছে। শবরীমালার পাহাড়ে ভগবান আয়াপ্পার দর্শনের জন্য এই যাত্রা তখন থেকে চলে আসছে, যখন পথ পুরোপুরি জঙ্গলে ঘেরা ছিল। আজও মানুষ যখন এ ধরনের যাত্রায় যান, তখন ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে তাদের বিশ্রাম বা থাকার ব্যবস্থা পর্যন্ত দরিদ্র মানুষদের জন্য কাজের কত সুযোগ তৈরি হয়! অর্থাৎ এই যাত্রাগুলি প্রত্যক্ষভাবে আমাদের কাছে দরিদ্রদের সেবা করার সুযোগ এনে দেয় এবং দরিদ্র মানুষদের জন্যও ততটাই মঙ্গলকারী হয়। তাই তো এখন দেশে আধ্যাত্মিক যাত্রায় ভক্তদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য কত রকম প্রচেষ্টা করা হচ্ছে! আপনারাও যদি এরকম কোন যাত্রায় যান তাহলে আপনাদের আধ্যাত্মিক দর্শনের পাশাপাশি "এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত" এই দর্শনও হবে।

আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রতিবারের মতো এবারও ‘মন কি বাত’ এর মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা খুব সুখকর হল। এতক্ষণ আমরা দেশবাসীর সাফল্য এবং উপলব্ধি নিয়ে আলোচনা করলাম। এসবের মধ্যেও আমাদের করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাবধানতা মাথায় রাখতে হবে। যদিও স্বস্তির কথা এই যে দেশের কাছে এই মুহূর্তে যথেষ্ট পরিমাণে ভ্যাকসিনের সুরক্ষা কবচ মজুত আছে। আমরা ২০০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ-এর দোরগোড়ায় পৌছে গেছি। দেশে খুব দ্রুত গতিতে Precaution Dose লাগানো হচ্ছে। যদি আপনার Second Dose-এর পর Precaution dose-এর সময় হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আপনি এই তৃতীয় Dose-টি অবশ্যই নিন। আপনার পরিবারের সবাইকে, বিশেষ করে বয়স্কদের এই Precaution Dose অবশ্যই লাগান। আমাদের হাত ধোয়া এবং মাস্ক এর ব্যবহারের মতো সতর্কতা মেনে চলা উচিত। আমাদের বর্ষার সময় আশেপাশে ময়লা থেকে সংক্রমিত যাবতীয় রোগ সম্বন্ধে সতর্ক থাকা উচিত। আপনারা সবাই সজাগ থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং এরকমই উদ্দীপনার সঙ্গে এগিয়ে চলুন। সামনের মাসে আবার আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত অসংখ্য ধন্যবাদ, নমস্কার।

************



(Release ID: 1837060) Visitor Counter : 295