প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

লক্ষ্ণৌ-এ ইউপি ইনভেস্টর্স সামিটের গ্রাউন্ড ব্রেকিং সেরেমনি @3.0-তে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 03 JUN 2022 3:22PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩ জুন, ২০২২

 

উত্তরপ্রদেশের যশস্বী ও জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথজি, লক্ষ্ণৌ-এর সাংসদ এবং আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রজ মন্ত্রী মাননীয় শ্রী রাজনাথ সিং-জি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অন্যান্য মাননীয় সহযোগীগণ, উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়, রাজ্য সরকারের মন্ত্রীগণ, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা এবং বিধান পরিষদের মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয় ও বিধায়কগণ, এখানে উপস্থিত শিল্প জগতের সকল সাথী, অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!

সবার আগে তো আমি উত্তরপ্রদেশের একজন সাংসদ হিসেবে, কাশীর সাংসদ হিসেবে এ রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের হৃদয় থেকে স্বাগত জানাই, আর বিনিয়োগকারীদের এজন্য ধন্যবাদ জানাই যে তাঁরা উত্তরপ্রদেশের যুবশক্তির ওপর ভরসা রেখেছেন। উত্তরপ্রদেশের যুবশক্তির যে সামর্থ্য রয়েছে তা আপনাদের স্বপ্ন এবং সংকল্পকে নতুন উড়ানে ডানা মেলতে, নতুন উচ্চতা স্পর্শ করতে সামর্থ্য যোগাবে। এই সামর্থ্য উত্তরপ্রদেশের নবীন প্রজন্মের মধ্যে রয়েছে, আর আপনারা যে সঙ্কল্প নিয়ে এসেছেন, উত্তরপ্রদেশের নবীন প্রজন্মের মানুষদের পরিশ্রম, তাঁদের পৌরুষ, তাঁদের সামর্থ্য, তাঁদের বুদ্ধি, তাঁদের সমর্থন, আপনাদের সকলের স্বপ্ন ও সঙ্কল্পগুলিকে অবশ্যই বাস্তবায়িত করবে, এটা আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি।

আপনারা জানেন যে আমি কাশীর সাংসদ। একজন সাংসদ হিসেবে আমি এই লোভ ছাড়তে পারি না, মোহ ছাড়তে পারি না, আমি কিন্তু এটা চাইবই! কাশীর সাংসদ হিসেবে আমার অনুরোধ, আপনারা যত ব্যস্তই হোন না কেন, কখনও সময় বের করে আপনারা অবশ্যই আমার কাশী ঘুরে আসুন। দেখবেন, কাশী আগের থেকে অনেক বদলে গেছে। কাশীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কাশী বিশ্বের এমন একটি নগরী যা পুরনো সামর্থ্যের পাশাপাশি নতুন রং ও রূপে সাজতে পারে। এটি উত্তরপ্রদেশের আত্মিক শক্তির জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ।

বন্ধুগণ,

উত্তরপ্রদেশে ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি এখানে সম্পাদিত হয়েছে। এই রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ উত্তরপ্রদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে হাজার হাজার নতুন সুযোগ তৈরি করবে। এভাবে ভারতের উন্নয়নের সঙ্গেই উত্তরপ্রদেশের গ্রোথ স্টোরিতে ক্রমবর্ধমান বিশ্বাসের ছবি তুলে ধরার প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে। আজকের এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আমি উত্তরপ্রদেশের নবীন প্রজন্মের মানুষদের বিশেষভাবে শুভেচ্ছা জানাব কারণ, আজকের এই অনুষ্ঠান থেকে উত্তরপ্রদেশের যুবক-যুবতীরা, আমাদের নতুন প্রজন্মই সবচাইতে বেশি লাভবান হতে চলেছেন।

বন্ধুগণ,

এই সময় আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি পালন করছি। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছি। এই সময়টি হল আগামী ২৫ বছরের জন্য দেশ গড়ার সময়। এই অমৃতকাল নতুন সঙ্কল্পের সময়, নতুন নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের ও নতুন নতুন লক্ষ্য পূরণের সময়। এই অমৃতকাল, নতুন নতুন লক্ষ্য পূরণের জন্য ‘সবকা প্রয়াস’-এর মন্ত্রকে সম্বল করে পরিশ্রমের পরাকাষ্ঠা স্থাপনের অমৃতকাল। আজ গোটা বিশ্বে যে ধরনের জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আমাদের যেমন সমস্যায় ফেলেছে, তেমনই আমাদের জন্য বড় বড় সুযোগও নিয়ে এসেছে। বিশ্ববাসী আজ যে বিশ্বস্ত বন্ধুর খোঁজে রয়েছে সেই বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার সামর্থ্য শুধুই আমাদের গণতান্ত্রিক ভারতের কাছে রয়েছে। বিশ্ব আজ ভারতের সম্ভাবনাকেও দেখছে, আর ভারতের দক্ষতাকেও প্রশংসা করছে।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সময়েও ভারত থামেনি, বরং নিজের সংস্কারের গতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর পরিণাম আজ আমরা সবাই দেখছি। আমরা এখন জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচাইতে দ্রুতগতিতে উন্নতি করছি। আজ ভারত গ্লোবাল রিটেল ইন্ডেক্স-এ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এনার্জি কনজিউমার দেশ। গত বছর বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ থেকে ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। ভারত গত অর্থবর্ষে ৪১৭ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ, ৩০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মার্কেন্ডাইজ এক্সপোর্ট করে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে।

বন্ধুগণ,

একটি রাষ্ট্র বা দেশ রূপে এখন এই সময় আমাদের মিলিত প্রচেষ্টাগুলিকে অনেকগুণ বেশি বাড়াতে হবে। এটা একটা এমন সময় যখন আমরা নিজেদের সিদ্ধান্তগুলিকে শুধু এক বছর কিংবা পাঁচ বছরের কথা ভেবে সীমিত রাখতে পারি না। ভারতে একটি শক্তিশালী ম্যানুফ্যাকচারিং ইকো-সিস্টেম, একটি শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যময় ‘ভ্যালু অ্যান্ড সাপ্লাই চেন’ বা মূল্যবোধসম্পন্ন সরবরাহ শৃঙ্খল বিকশিত করার জন্য প্রত্যেকের অবদান অপরিহার্য। সরকার নিজের পক্ষ থেকে সুপরিকল্পিতভাবে ক্রমাগত নীতি প্রণয়ন করছে, পুরনো নীতিগুলিতে সংস্কার আনছে।

সম্প্রতি কেন্দ্রের এনডিএ সরকার তার আট বছর পূরণ করেছে। এই আট বছরে আমরা, যেমনটি একটু আগে যোগীজি বলছিলেন যে ‘রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্ম’-এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছি। আমরা পলিসি স্টেবিলিটি বা নীতির স্থায়িত্বের ওপর জোর দিয়েছি। আমরা কো-অর্ডিনেশন বা সার্বিক সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছি, ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর ওপর জোর দিয়েছি। এই আট বছরে আমরা হাজার হাজার ‘কমপ্লায়েন্সেস’ বাতিল করেছি। পুরনো অপ্রয়োজনীয় আইনগুলিকে বাতিল করেছি। আমরা নিজেদের সংস্কারের মাধ্যমে একটি দেশ রূপে ভারতকে শক্তিশালী করার কাজ করেছি। ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ট্যাক্স’ বা এক জাতি এক কর ব্যবস্থা যা জিএসটি রূপে পরিচিত, থেকে শুরু করে ‘ওয়ান নেশন ওয়ান গ্রিড’ বা বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে এক জাতি এক গ্রিড, ‘ওয়ান নেশন ওয়ান মোবিলিটি কার্ড’, ‘ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড’ বা এক দেশ এক রেশন কার্ড – এই সমস্ত প্রচেষ্টা আমাদের প্রধান এবং স্পষ্ট নীতির প্রতিবিম্ব।

যখন থেকে উত্তরপ্রদেশে ডবল ইঞ্জিন সরকার তৈরি হয়েছে তখন থেকে উত্তরপ্রদেশেও এই লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে, উত্তরপ্রদেশে যেভাবে আইন-শৃঙ্খলার দ্রুত উন্নতি হয়েছে, তার ফলে ব্যবসায়ীদের ভরসা ফিরেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সঠিক আবহ তৈরি হয়েছে। বিগত বছরগুলিতে এখানে প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং প্রশাসনেও অনেক সংস্কার হয়েছে। সেজন্য আজ জনগণের বিশ্বাস যোগীজির সরকারের ওপরই রয়েছে। আজ শিল্প জগতের বন্ধুরা নিজেদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশের প্রশংসা করছেন।

আমি উত্তরপ্রদেশের একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে, একজন সাংসদ হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। কখনও আমি আগে উত্তরপ্রদেশের প্রশাসনকে খুব কাছে থেকে দেখিনি। কখনও মুখ্যমন্ত্রীদের মিটিং উপলক্ষে যখন আসতাম, তখন দেখতাম যে এই রাজ্যের এজেন্ডা কিছুটা ভিন্ন। কিন্তু যখন থেকে একজন সাংসদ রূপে এখানে কাজ করতে শুরু করি, তখন আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমার বিশ্বাস অনেকগুণ বেড়ে যায় যে উত্তরপ্রদেশের আমলাতন্ত্র, উত্তরপ্রদেশের প্রশাসনের সেই শক্তি রয়েছে যেমনটি দেশ তাদের কাছে প্রত্যাশা করে।

যে কথা আজ শিল্প জগতের মানুষেরা বলছিলেন, একজন সাংসদ রূপে আমি স্বয়ং এই সামর্থ্যকে অনুভব করেছি, আর সেজন্য আমি এখানকার রাজ্য সরকারের সমস্ত আমলার, সমস্ত ছোট, বড় কর্মচারীদের কাজ করার মেজাজ যেভাবে বদলেছে, সার্বিক কর্মসংস্কৃতি যেভাবে বদলেছে, আমি তাঁদেরকে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই, তাঁদেরকে অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

আজ উত্তরপ্রদেশের জনগণ ৩৭ বছর পর কোনও রাজ্য সরকারকে আরও একবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনে তাঁদের সেবক রূপে একটি দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।

বন্ধুগণ,

উত্তরপ্রদেশে ভারতের এক-পঞ্চামাংশ কিংবা এক-ষষ্ঠাংশ জনসংখ্যা বসবাস করে। অর্থাৎ, উত্তরপ্রদেশের একজন নাগরিকের উন্নতি হলে ভারতের ছয় জনের মধ্যে একজনের উন্নতি হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এটাই উত্তরপ্রদেশ! যে রাজ্যটি একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের গ্রোথ স্টোরিকে নতুন মোমেন্টাম দেবে, আর এই ১০ বছরের দিকে আপনারা তাকিয়ে দেখবেন যে এই উত্তরপ্রদেশ ভারতের একটি অনেক বড় চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। আমি নিশ্চিত যে ১০ বছরে আপনারা এই পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

যে রাজ্যে পরিশ্রমী মানুষেরা থাকেন, যে রাজ্যে দেশের মোট জনসংখার ১৬ শতাংশেরও বেশি কনজিউমার বেস রয়েছে, যে রাজ্যে ৫ লক্ষের বেশি জনসংখ্যাসম্পন্ন এক ডজনেরও বেশি শহর রয়েছে, যে রাজ্যে প্রত্যেক জেলার নিজস্ব কোনও না কোনও বিশেষ পণ্য রয়েছে, যে রাজ্যে এত বড় সংখ্যায় ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ রয়েছে, যে রাজ্যে সর্বাধিক ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন কৃষিপণ্য, শস্য, ফল, সব্জির বৈচিত্র্য রয়েছে, যে রাজ্যে গঙ্গা, যমুনা, সরযু সহ অনেক নদীর আশীর্বাদ রয়েছে, এহেন উত্তরপ্রদেশের দ্রুত উন্নয়নকে কে আটকাতে পারবে?

বন্ধুগণ,

এখন এবারের বাজেটেই আমরা গঙ্গার উভয় কিনারে প্রাকৃতিক কৃষির করিডর গড়ে তোলার ঘোষণা করেছি। আমি কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের কথা বলছি। কেন্দ্রীয় সরকারের এবারের বাজেটে ঠিক করা হয়েছে যে গঙ্গার উভয় তীরে ৫.৫ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত রাসায়নিক মুক্ত প্রাকৃতিক কৃষির করিডর গড়ে তোলা হবে। আপনারা সংবাদমাধ্যমে ডিফেন্স করিডর নিয়ে অনেক আলোচনা পড়েছেন ও শুনতে পেয়েছেন, কিন্তু এই ন্যাচারাল ফার্মিং করিডরের কথা কেউ আলোচনা করে না। উত্তরপ্রদেশে গঙ্গা নদী ১ হাজার ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ, আর তা এই রাজ্যের ২৫ থেকে ৩০টি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে প্রাকৃতিক কৃষির কত বড় সম্ভাবনা উত্তরপ্রদেশে গড়ে উঠতে চলেছে? উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার কয়েক বছর আগে তাদের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নীতিও ঘোষণা করেছিল। আমি কর্পোরেট বিশ্বের কাছে, আর এখানে যে শিল্প জগতের মানুষেরা রয়েছেন তাঁদের কাছে আমি এই বিষয়ে কিছু অনুরোধ রাখতে চাই। কর্পোরেট বিশ্বের জন্য এই সময়ে কৃষিতে বিনিয়োগের গোল্ডেন অপরচুনিটি বা সোনালী সুযোগ এসেছে।

বন্ধুগণ,

দ্রুত উন্নয়নের জন্য আমাদের ডবল ইঞ্জিনের সরকার পরিকাঠামো, বিনিয়োগ এবং উৎপাদন শিল্প – এই তিনটি বিষয়ের ওপর একসঙ্গে কাজ করছে। এ বছরের বাজেটে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকার অভূতপূর্ব ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচারের বরাদ্দ এই লক্ষ্যে গ্রহণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উৎপাদন শিল্পকে উৎসাহ যোগানোর জন্য আমরা বেশ কিছু পিএলআই স্কিম ঘোষণা করেছি যার দ্বারা আপনারা এখানে উত্তরপ্রদেশেও অনেক উপকৃত হবেন।

উত্তরপ্রদেশে নির্মীয়মান ডিফেন্স করিডরও আপনাদের জন্য অনেক অসাধারণ সম্ভাবনা নিয়ে আসছে। ভারতে আজ ডিফেন্স ম্যানুফ্যাকচারিং বা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উৎপাদন শিল্পের ওপর যতটা জোর দেওয়া হচ্ছে তা আগে কখনও দেওয়া হয়নি। আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মাধ্যমে আমরা অত্যন্ত সাহস নিয়ে আমাদের সামরিক বাহিনীগুলির প্রয়োজনীয় এমন ৩০০টি পণ্য চিহ্নিত করেছি, আর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই ৩০০টি পণ্য এখন আর বিদেশ থেকে আমদানি করব না। অর্থাৎ, যাঁরা উৎপাদন শিল্পে আসতে চান, বিনিয়োগ করতে চান, মিলিটারি ইক্যুইপমেন্টস বা সামরিক সাজসরঞ্জাম-সংশ্লিষ্ট ৩০০টি পণ্য উৎপাদন শুরু করতে পারেন। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য এই ৩০০টি পণ্যের অ্যাসিওর্ড মার্কেট বা নিশ্চিত বাজার তো রয়েইছে। এক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করলে আপনারা অনেক বেশি লাভবান হবেন।

বন্ধুগণ,

আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ট্রান্সপোর্টের মতো পরম্পরাগত ব্যবসার চাহিদাকে সম্পূর্ণ করার জন্য, ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে আধুনিক করে তুলছি। এখানে উত্তরপ্রদেশেও আধুনিক পাওয়ার গ্রিড থেকে শুরু করে গ্যাস পাইপলাইনের নেটওয়ার্ক কিংবা মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটি – এই সকল ক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীর প্রয়োজনীয় অনুসারে কাজ শুরু করা হয়েছে। আজ উত্তরপ্রদেশে যত কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে – তা নিজেই একটি রেকর্ড। আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক উত্তরপ্রদেশে সকল ইকনমিক জোনকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করতে চলেছে।

উত্তরপ্রদেশের পরিচিতি দ্রুতই আধুনিক রেলওয়ে পরিকাঠামোর সঙ্গম রূপেও গড়ে উঠতে চলেছে। ইস্টার্ন এবং ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর শুধু উত্তরপ্রদেশেই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে। জেওয়র সহ উত্তরপ্রদেশের পাঁচটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখানকার আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে চলেছে। গ্রেটার নয়ডা এলাকা হোক কিংবা বারাণসী – এখানে দুটি মাল্টি-মডেল লজিস্টিক্স ট্রান্সপোর্ট হাবে নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্র্যাটেজির হিসেবে, লজিস্টিক্সের হিসেবে, উত্তরপ্রদেশের দেশের সর্বাধিক আধুনিক পরিকাঠামোসম্পন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠছে। উত্তরপ্রদেশে ক্রমবর্ধমান এই কানেক্টিভিটি এবং বাড়তে থাকা বিনিয়োগ এই রাজ্যের নবীন প্রজন্মের মানুষের জন্য অনেক নতুন নতুন সুযোগ নিয়ে আসছে।

বন্ধুগণ,

আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণে যাতে গতি আসে তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের সরকার ‘পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’ রচনা করেছে। এই ‘পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’ কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, স্থানীয় নাগরিক প্রশাসনগুলির ভিন্ন ভিন্ন বিভাগ, ভিন্ন ভিন্ন এজেন্সি ছাড়াও, স্থানীয় সমাজের বিভিন্ন সংস্থাগুলিকেও একসঙ্গে যুক্ত করছে। সমস্ত সরকারি প্রশাসনকে একসঙ্গে যুক্ত করে তার সঙ্গে বেসরকারি ক্ষেত্র এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলিকেও একই প্ল্যাটফর্মে আনার কাজ এই ‘পিএম গতি শক্তি’ প্রকল্পের মাধ্যমে হচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যে কোনও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলের রিয়েল টাইম তথ্য পাওয়া যাবে। নিজের নিজের অংশের কাজ তারা কবে অবধি পূর্ণ করেছেন, এই তথ্য প্ল্যানিং-এর সময় খুব কাজে লাগবে। বিগত আট বছরে প্রকল্পগুলি যথাসময়ে সম্পূর্ণ করার যে নতুন কর্মসংস্কৃতি দেশে বিকশিত হয়েছে, তাকেও এই ‘পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’ নতুন মাত্রায় উন্নীত করবে।

বন্ধুগণ,

বিগত বছরগুলিতে ভারত যে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ করছে, তার একটি উদাহরণ হল আমাদের ডিজিটাল বিপ্লব। ২০১৪ সালে আমাদের দেশে প্রায় ৬ কোটি ৫০ লক্ষ ব্রডব্যান্ড সাবস্ক্রাইবার ছিলেন। আজ এর সংখ্যা ৭৮ কোটিরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে ১ জিবি ডেটা প্রায় ২০০ টাকায় কিনতে হত, আজ এর মূল্য হ্রাস পেয়ে ১১-১২ টাকা হয়েছে। ভারত বিশ্বের সেই দেশগুলির অন্যতম যেখানে এত সস্তায় ডেটা পাওয়া যায়। ২০১৪ সালে দেশে ১১ লক্ষ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল পাতা হয়েছিল। এখন দেশে পাতা অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের দৈর্ঘ্য ২৮ লক্ষ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে।

২০১৪ সালে দেশে ১০০টিরও কম গ্রাম পঞ্চায়েত অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত ছিল, আজ দেশে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির সংখ্যাও ১ লক্ষ ৭৫ হাজার পেরিয়ে গেছে। ২০১৪ সালে দেশে ৯০ হাজারের কাছাকাছি কমন সার্ভিস সেন্টার ছিল, আজ দেশে কমন সার্ভিস সেন্টারের সংখ্যাও ৪ লক্ষের বেশি হয়েছে। আজ বিশ্বে ডিজিটাল লেনদেনের প্রায় ৪০ শতাংশ ভারতে হচ্ছে। ভেবে দেখুন, বিশ্বের ৪০ শতাংশ! যে কোনও ভারতবাসী এজন্য গর্ব করতে পারেন। যে ভারতকে মানুষ এক সময় অশিক্ষিত বলত, সেই ভারত এখন নতুন নতুন কীর্তি স্থাপন করে দেখাচ্ছে।

আমরা বিগত আট বছরে ডিজিটাল বিপ্লবের অনুকূলে যে পরিকাঠামোগত ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছি, তারই ফল হল আজ ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য এত সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, আর এগুলির মাধ্যমে আমাদের নবীন প্রজন্মের যুবক-যুবতীরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। ২০১৪ সালের আগে আমাদের দেশে সামান্য কিছু হাতে গোনা স্টার্ট-আপ ছিল, কিন্তু আজ দেশে নথিভুক্ত হওয়া স্টার্ট-আপ-এর সংখ্যাও ৭০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, আর সম্প্রতি ভারত ১০০টি ইউনিকর্ন গড়ে তোলার রেকর্ডও স্থাপন করেছে। আমাদের নতুন অর্থনীতির চাহিদা পূরণ করার জন্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার ফলে আপনারা আরও অনেক লাভবান হবেন।

বন্ধুগণ,

আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নের জন্য, আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণের জন্য যে ক্ষেত্রে যত ধরনের সংস্কার প্রয়োজন হবে সেই সংস্কারগুলি আমরা ক্রমাগত করে যেতে থাকব। আমরা নীতির ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমেও উন্নয়নের সঙ্গে রয়েছি। নিজেদের মনোভাব থেকেও উন্নয়নের সঙ্গে রয়েছি, আর আমাদের স্বভাবেও আমরা উন্নয়নের অনুকূলেই সমস্ত আচরণ করছি।

আমরা সবাই আপনাদের প্রত্যেক প্রচেষ্টায় আপনাদের সঙ্গে থাকব, আর প্রত্যেক পদক্ষেপে আপনাদের পাশে থাকব। আপনারা গোটা সপ্তাহ ধরে উত্তরপ্রদেশের উন্নয়ন যাত্রায় সামিল হবেন, উত্তরপ্রদেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনাদের নিজেদের ভবিষ্যতকেও উজ্জ্বল করে তুলবেন। এটাই আজকের সময়ে ‘উইন উইন সিচুয়েশন’। এই বিনিয়োগ সকলের জন্য শুভ হোক, সবাই যেন এ থেকে উপকৃত হন।

এই কামনা নিয়ে ‘ইতি শুভম’ বলে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1831376) Visitor Counter : 135