প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

দিল্লিতে দেশের সকল মুখ্যমন্ত্রী এবং সমস্ত উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিদের যৌথ সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 29 APR 2022 1:50PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৯ এপ্রিল, ২০২২

 

অনারেবল চিফ জাস্টিস অফ ইন্ডিয়া শ্রী এন ভি রামান্নাজি, জাস্টিস শ্রী ইউ ইউ ললিতজি, দেশের আইন মন্ত্রী শ্রী কিরেন রিজিজুজি, আইন প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর এস পি সিং বাঘেলজি, দেশের সমস্ত রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীগণ, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মাননীয় লেফটেন্যান্ট গভর্নরগণ, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণ, ভারতের সমস্ত উচ্চ আদালতের মাননীয় প্রধান বিচারপতিগণ, অন্যান্য সম্মানিত অতিথিগণ, উপস্থিত অন্যান্য সকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

সমস্ত রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এবং উচ্চ আদালতগুলির প্রধান বিচারপতিদের এই যৌথ সম্মেলন বরাবরই আমাদের সাংবিধানিক সৌন্দর্যের সজীব চিত্রকে তুলে ধরে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই সুযোগে আমারও আপনাদের সকলের মাঝে কিছু সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছে। আমাদের দেশে যেখানে বিচার বিভাগের আরও একটি ভূমিকা সংবিধান সংরক্ষণও, সেখানে লেজিসলেচার বা আইনসভা নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে সংবিধানের এই দুটি ধারার মধ্যে এই সঙ্গম, এই ভারসাম্য দেশে কার্যকর এবং সময় নির্ধারিত বিচার ব্যবস্থার রোডম্যাপ তৈরি করবে। আমি আপনাদের সবাইকে এই আয়োজনের জন্য হৃদয় থেকে শুভকামনা জানাই।

বন্ধুগণ,

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতিদের এই যৌথ সম্মেলন আগে থেকেই হয়ে আসছে, আর সেই সম্মেলনগুলিতে সর্বদাই দেশের হিতে কিছু না কিছু নতুন ভাবনা উঠে এসেছে। কিন্তু এবারের এই আয়োজনের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আজকের এই সম্মেলন একটি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন দেশ তার স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে। স্বাধীনতার পর থেকে এই ৭৫ বছরে দেশের জুডিশিয়ারি বা বিচার ব্যবস্থা, নিজের এবং একজিকিউটিভ বা শাসন ব্যবস্থা – উভয়েরই ভূমিকা এবং দায়িত্বকে নিরন্তর স্পষ্ট করে এসেছে। যেখানে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, দেশকে পথ দেখানোর জন্য এই সম্পর্ক ক্রমাগত বিবর্তিত হয়েছে। আজ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে যখন দেশ নতুন অমৃত সঙ্কল্পগুলি গ্রহণ করছে, নতুন নতুন স্বপ্ন দেখছে, তখন আমাদেরও ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে। ২০৪৭-এ যখন দেশ তার স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্ণ করবে, তখন আমরা দেশে কিরকম বিচার ব্যবস্থা দেখতে চাই, আমরা কিভাবে আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে এতটা সমর্থ করে তুলতে পারি যে তা ২০৪৭-এ ভারতের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলিকে পূরণ করতে পারে, সেগুলির উপযোগী হয়ে উঠতে পারে -  এই প্রশ্নকেই আজ আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। স্বাধীনতার অমৃতকালে আমাদের দূরদৃষ্টি যেন একটি এমন বিচার ব্যবস্থার দিক নির্দেশ করে -  যেখানে বিচার সুলভ হবে, ন্যায় দ্রুত হবে আর ন্যায় সকলের জন্য হবে। 

বন্ধুগণ,

দেশে ন্যায়ের ক্ষেত্রে বিলম্ব দূর করার জন্য সরকার নিজের দিক থেকে যথাসম্ভব চেষ্টা করছে। আমরা জুডিশিয়াল স্ট্রেংথ বা বিচারক ও সংশ্লিষ্ট আদালত কর্মীদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা করছি,  দ্রুত বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। জুডিশিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা বিচার ব্যবস্থার পরিকাঠামোকে যথাসম্ভব উন্নত করার চেষ্টা করছি, কেস ম্যানেজমেন্টের জন্য আইসিটি-র ব্যবহারও শুরু করা হয়েছে। সাব-অর্ডিনেট কোর্ট বা নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বা জেলা আদালত হয়ে হাইকোর্ট বা উচ্চ আদালত পর্যন্ত সমস্ত শূণ্যপদ পূরণের জন্য প্রচেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, বিচার ব্যবস্থার পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্যও দেশে ব্যাপক কাজ হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজ্যগুলিরও অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।

বন্ধুগণ,

আজ গোটা বিশ্বে নাগরিকদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য, তাঁদের ক্ষমতায়নের জন্য প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে উঠেছে। আমাদের বিচার ব্যবস্থাতেও  প্রযুক্তির উন্নত ব্যবহারের নানা সম্ভাবনার সঙ্গে আপনারা সকলেই পরিচিত। আমাদের মাননীয় বিচারকরা সময়ে সময়ে এই বিষয়গুলিকে নিয়ে আলোচনা করেন ও নানা রকম সুপারিশও করে থাকেন। কেন্দ্রীয় সরকারও বিচার ব্যবস্থায় প্রযুক্তির সম্ভাবনাগুলিকে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশন’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করে। উদাহরণস্বরূপ, আজ ই-কোর্টস প্রোজেক্টকে মিশন মোডে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট ই-কমিটির পথ নির্দেশ মেনে বিচার ব্যবস্থায় টেকনলজি ইন্টিগ্রেশন এবং ডিজিটাইজেশনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আমি এখানে উপস্থিত সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীদের আর দেশের উচ্চ আদালতগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত সমস্ত প্রধান বিচারপতিদের প্রতিও অনুরোধ জানাই যে এই অভিযানকে বিশেষ গুরুত্ব দিন, একে এগিয়ে নিয়ে যান। ‘

‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থার এই সমন্বয়সাধন আজ দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় পরিণত হয়েছে। আপনারা দেখুন, আজ থেকে কয়েক বছর আগেও ডিজিটাল লেনদেনকে আমাদের দেশে অসম্ভব বলে মনে করা হত। জনগণ এটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ভাবত, একে সন্দেহ করত, আরে! আমাদের দেশে এসব কী করে হবে? আর এটাও ভাবা হত যে এর স্কোপ শুধু শহরগুলি পর্যন্তই সীমিত থাকতে পারে, এর বাইরে বেরোতে পারে না। কিন্তু আজ ছোট ছোট মফঃস্বল শহর থেকে শুরু করে এমনকি গ্রামগুলিতেও ডিজিটাল লেনদেন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। আর আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে গোটা বিশ্বে গত বছর যত অর্থ ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন ভারতেই হয়েছে। সরকারের সঙ্গে যুক্ত এরকম অনেক পরিষেবা, যেগুলির জন্য আগে নাগরিকদের মাসের পর মাস বিভিন্ন দপ্তরে চক্কর কাটতে হত, সেগুলিও এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে। কাজেই, যে নাগরিকরা এই পরিষেবা অনলাইন মাধ্যমে পাচ্ছেন, এবং এর মাধ্যমে নিজেদের কাজকর্ম দ্রুত করতে পারছেন, তাঁরা যে প্রকৃত ন্যায়ের অধিকার নিয়েও এ ধরনের দ্রুততার  প্রত্যাশা করবেন এটাই স্বাভাবিক।

বন্ধুগণ,

আজ যখন আমরা প্রযুক্তি এবং ফিউচারিস্টিক অ্যাপ্রোচের কথা বলছি, ভবিষ্যৎমুখী চিন্তাভাবনা করছি, তখন এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হবে টেক-ফ্রেন্ডলি ইউম্যান রিসোর্স বা প্রযুক্তিবান্ধব মানবসম্পদও। প্রযুক্তি আজকের যুব সম্প্রদায়ের প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিক অঙ্গ। এটা আমাদের সুনিশ্চিত করতে হবে যে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, আমাদের যুবক-যুবতীদের এক্সপার্টাইজ বা দক্ষতাকে তাঁদের প্রফেশনাল স্ট্রেংথ বা পেশাগত ক্ষমতায় কিভাবে রূপান্তরিত করা যাবে! আজকাল অনেক দেশে ল’ ইউনিভার্সিটিজ বা আইন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ব্লক-চেন টেকনলজি, ইলেক্ট্রনিক ডিসকভারি, সাইবার সিকিউরিটি, রোবোটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং বায়ো-এথিক্স-এর মতো বিষয়গুলি পড়ানো হচ্ছে। আমাদের দেশেও লিগ্যাল এডুকেশন বা আইন শিক্ষা এই ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডস বা আন্তর্জাতিক মানের সমকক্ষ কিভাবে হয়ে উঠবে, এটা সুনিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। সেজন্য আমাদের সবাইকে মিলেমিশে চেষ্টা করতে হবে।

বন্ধুগণ,

আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে – 
“ন্যায় মুলং সুরাজ্যং স্যাৎ”

অর্থাৎ, যে কোনও দেশে সুশাসনের ভিত্তি হল ন্যায়বিচার। সেজন্য এই ন্যায়বিচার জনগণের সঙ্গে যুক্ত এবং তাঁদের বোধগম্য হওয়া উচিৎ, জনগণের ভাষাতে হওয়া উচিৎ। যতক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়ের ভিত্তিকে সাধারণ মানুষ বুঝবেন না, ততদিন পর্যন্ত তাঁদের কাছে ন্যায় এবং প্রশাসনিক আদেশের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য থাকে না। আমি ইদানিং সরকারের একটি বিষয় নিয়ে কিছুটা চিন্তাভাবনা করছি, পড়াশোনা করছি। বিশ্বে অনেক দেশে এরকম হয়েছে, যেখানে আইন প্রণয়ন করা হয়, সেখানেই তো একটি লিগ্যাল টার্মিনলজিতে বা আইনের পরিভাষায় আইনটি লেখা হয়। কিন্তু তার সঙ্গে আরও একটি আইনের রূপও বিধৃত থাকে যা সেই দেশের বা এলাকার লোকভাষায় ব্যাখ্যা করা থাকে, সাধারণ মানুষের ভাষায় ব্যাখ্যা করা থাকে, আর এই দুটিই বিচারের ক্ষেত্রে মান্যতা পায়। সেজন্য সাধারণ মানুষকে আইনের বিষয়গুলি বুঝতে ন্যায়ের দরজায় কড়া নাড়ার প্রয়োজন পড়ে না। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আগামীদিনে আমাদের দেশেও আইনের একটি সম্পূর্ণরূপে লিগ্যাল টার্মিনলজি বা আইনি পরিভাষা যেমন থাকবে, কিন্তু পাশাপাশি সেই কথাগুলি যেন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন, তেমন ভাষাতেও ব্যাখ্যা করা থাকবে। এই দুটি পরিভাষাকেই একসঙ্গে বিধানসভা বা সংসদে প্রণয়ন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ তার ভিত্তিতে তাঁদের বক্তব্য রাখতে পারেন। বিশ্বের অনেক দেশে এই পরম্পরা রয়েছে। এখন আমি একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করেছি, যারা এই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করছেন।

বন্ধুগণ,

আমাদের দেশে আজও হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের সমস্ত কাজকর্ম এবং কর্ম বিবরণী ইংরেজিতেই লেখা হয়, আর আমার খুবই ভালো লেগেছে যে ভারতের মাননীয় প্রধান বিচারপতি স্বয়ং আজ তাঁর বক্তব্যে এই বিষয়টিকে স্পর্শ করেছেন। ফলে, আগামীকালকের খবরের কাগজগুলিতে এই বিষয় নিয়ে ইতিবাচক খবর লেখার বা বিচার-বিশ্লেষণের সুযোগ পাওয়া যাবে, অবশ্য যদি কেউ করতে চান। কিন্তু এই বিষয়টির প্রতি সুবিচারের জন্য আরও অনেক অপেক্ষা করতে হবে। 

বন্ধুগণ,

একটি বড় জনসংখ্যাকে বিচার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সিদ্ধান্ত পর্যন্ত সবকিছু সহজভাবে বোঝানো খুব কঠিন কাজ। আমাদের এই ব্যবস্থাকে সরল এবং সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের আদালতগুলিতে স্থানীয় ভাষার ব্যবহারকে অধিক উৎসাহ প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের আদালতগুলিতে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার বাড়লে দেশের সাধারণ নাগরিকদের মনে বিচার ব্যবস্থার প্রতি ভরসা বাড়বে, তাঁরা এর সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকাকে অনুভব করবেন। এখন এই সময়ে আমরা চেষ্টা করছি যাতে টেকনিক্যাল এডুকেশন বা প্রযুক্তিগত শিক্ষা আর মেডিকেল এডুকেশন বা চিকিৎসা-শিক্ষা মাতৃভাষাতে প্রদান করা যায়। আর এটা কেন হবে না? আমাদের ছেলে-মেয়েরা যখন বিদেশে পড়তে  যায়, বাধ্য হয়ে বিশ্বের সেই ভাষাগুলি শেখার চেষ্টা করে, সেগুলি পড়ে, তারপর মেডিকেল কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করে। আমরা নিজেদের দেশেও এটা চালু করতে পারি, আর আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে অনেক রাজ্যে ইতিমধ্যেই মাতৃভাষায় টেকনিক্যাল এডুকেশন এবং মেডিকেল এডুকেশন চালু করার জন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের কারণে ভবিষ্যতে গ্রামের গরীব ঘরের ছেলে-মেয়েরাও টেকনিক্যাল এডুকেশন ও মেডিকেল এডুকেশনে শিক্ষিত হতে পারবেন। এখন এগুলির মাধ্যম বিদেশি ভাষা থাকার কারণে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেন। প্রযুক্তিগত শিক্ষা আর চিকিৎসা-শিক্ষা মাতৃভাষাতে প্রদান করা হলে তাঁদের জন্য সমস্ত পথ খুলে যাবে। আর এটাও তো তাঁদের প্রতি একটা বড় ন্যায়, এটাও একটি সামাজিক ন্যায়। এই সামাজিক ন্যায়ের জন্য বিচার ব্যবস্থার দাড়িপাল্লা পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। সামাজিক ন্যায়ের সপক্ষে কখনও মাতৃভাষাও অনেক বড় সুবিধা হয়ে উঠতে পারে। 

বন্ধুগণ,

আইনের মারপ্যাঁচ সাধারণ মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০১৫-তে আমরা প্রায় ১ হাজার ৮০০ টি এরকম অপ্রচলিত ও পরস্পর বিরোধী আইনকে চিহ্নিত করেছিলাম যেগুলি ততদিনে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিল। সেগুলির মধ্যে যতগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের আইন ছিল, তেমন ১ হাজার ৪৫০টি আইনকে আমরা বাতিল ঘোষণা করেছি। কিন্তু রাজ্যগুলির পক্ষ থেকে এরকম মাত্র ৭৫টি আইনই এখন পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। আমি আজ এখানে বসে থাকা সমস্ত মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাই যে আপনারা নিজেদের রাজ্যের নাগরিকদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে, তাঁদের ‘ইজ অফ লিভিং’ বৃদ্ধির জন্য আপনাদের রাজ্যেও এ ধরনের পরস্পর বিরোধী ও অপ্রাসঙ্গিক আইনের জালকে বাতিল করুন। এ ধরনের পরস্পর বিরোধী ও অপ্রাসঙ্গিক আইনের জালে অনেক মানুষ আটকে রয়েছেন। সেই আইনগুলিকে বাতিল করার লক্ষ্যে আপনারা পদক্ষেপ নিন, দেখবেন,  জনগণ আপনাদের দুই হাত তুলে আশীর্বাদ দেবেন। 

বন্ধুগণ,

আইনের সংস্কার শুধুই একটি পলিসি ম্যাটার বা নীতিগত বিষয় মাত্র নয়, দেশে দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকা কোটি কোটি অমীমাংসিত মামলা নিষ্পত্তির জন্য পলিসি পরিবর্তন থেকে শুরু করে নতুন নতুন  টেকনলজি প্রবর্তন পর্যন্ত প্রত্যেক সম্ভাব্য প্রচেষ্টা চলছে, আর আমরা বারবার এগুলির পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনাও করেছি। আমার পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে,এই সম্মেলনেও আপনারা সবাই বিশেষজ্ঞ রূপে এই বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন। আমি সম্ভবত অনেক দীর্ঘ সময় ধরে এই বৈঠকে বসে আছি, হয়তো বিচারপতিদের এ ধরনের বৈঠকে আসার সুযোগ যতটা হয়েছে, তাঁদের থেকেো বেশি আমার হয়েছে। কারণ, আমি অনেক বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী রূপে এই সম্মেলনে নিয়মিত আসতাম, আর এখন প্রধানমন্ত্রী রূপে নিয়মিত অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হচ্ছে,  আর আমি কখনই এই সৌভাগ্যকে হাতছাড়া হতে দিই না, নিয়মিত আসি। তাই এক প্রকার বলতে গেলে এই সভার আমি অন্যতম সিনিয়র মেম্বার বা অগ্রজ সদস্য।

বন্ধুগণ,

এই বিষয় নিয়ে যখন আমি এত কথা বলছি, তখন আমি এটা স্বীকার করি যে এই সমস্ত কাজে অনেক মানবিক সংবেদনা জড়িত রয়েছে। এই মানবিক সংবেদনাগুলিকেই কেন্দ্রে রেখে আমাদের আজ  চিন্তাভাবনা করতে হবে। আজ দেশে প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কয়েদী এমন রয়েছে, যারা আন্ডার-ট্রায়াল বা বিচারাধীন রয়েছে, আর বছরের পর বছর জেলে দিন কাটাচ্ছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই গরীব মানুষ বা সাধারণ পরিবারের সদস্য। আমি জানি যে এখন দেশের প্রত্যেক জেলায় ডিস্ট্রিক্ট জজ বা জেলা জজ-এর সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়,  যেখানে এ ধরনের মামলাগুলির সমীক্ষা ও পর্যালোচনা করা হয়। যথাসম্ভব এই কয়েদীদেরকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আমি সমস্ত মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীদের এবং সকল উচ্চ আদালতের মাননীয় প্রধান বিচারপতিদের প্রতি আবেদন রাখব যে, মানবিক সংবেদনাকে মাথায় রেখে ভারতের সংবিধান এবং আইনের ভিত্তিতে এই মামলাগুলির নিষ্পত্তিকে যথাসম্ভব অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। এভাবে বিচারালয়গুলিতে, আর বিশেষ করে স্থানীয় স্তরে দীর্ঘকাল চলে আসা মামলাগুলির সমাধানের জন্য মধ্যস্থতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। আমাদের সমাজে তো হাজার হাজার বছর পুরনো পরম্পরা রয়েছে, যেখানে মধ্যস্থতার মাধ্যমে যে কোনও বিবাদ সমাধানের চেষ্টা করা হয়। পারস্পরিক সহমত এবং পারস্পরিক অংশীদারিত্ব – এটা ন্যায়ের একটি নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র মানবিক দিক। আমরা যদি খতিয়ে দেখি, তাহলে বুঝতে পারবো যে, আমাদের সমাজে এ ধরনের স্বভাব কোথাও না কোথাও এখনও রয়েছে। আমরা আমাদের সেই পরম্পরাকে এখনও পূর্ণ রূপে হারাইনি। আমাদের এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে, আর যেভাবে শিব সাহেব ললিতজির প্রশংসা করছিলেন, আমিও ঠিক একইভাবে করতে চাইব। তিনি গোটা দেশে ভ্রমণ করেছেন, এ কাজের জন্য প্রত্যেক রাজ্যে গেছেন, আর সব থেকে বড় কথা তিনি করোনা মহামারীর সময়ও সব জায়গায় ছুটে গেছেন। 

বন্ধুগণ,

এভাবে মধ্যস্থতা করলে মামলাগুলি কম সময়ের মধ্যে সমাধানও হয়, বিচারালয়ের বোঝাও কমে, আর সোশ্যাল ফ্যাব্রিক বা সামাজিক বুননও সুরক্ষিত থাকে। আমাদের এই ভাবনা নিয়ে সংসদে মেডিয়েশন বিলকেও একটি ‘আম্ব্রেলা লেজিসলেশন’ রূপে পেশ করেছি, নিজেদের ‘রিচ লিগ্যাল এক্সপার্টাইজ’ বা উন্নত আইনি বিশেষজ্ঞতা নিয়ে আমরা মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতার থেকে সলিউশন বা সমাধানের লক্ষ্যে গ্লোবাল লিডার হয়ে উঠতে পারি। আমরা গোটা বিশ্বের সামনে একটি মডেল পেশ করতে পারি। আপনাদের ক্ষমতার ওপর আমার পূর্ণ ভরসা রয়েছে যে প্রাচীন মানবিক মূল্যগুলির পাশাপাশি আধুনিক অ্যাপ্রোচ নিয়ে এই সম্মেলনে এ ধরনের সকল বিষয় নিয়ে আপনারা সবাই নিজেদের জ্ঞান ও বুদ্ধিকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবেন, আলাপ-আলোচনা এবং ভাবনা মন্থন করবেন। এই অমৃতকে সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলার কাজে লাগাবেন,  যা সম্ভবত আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও কাজে লাগবে। এই সম্মেলন থেকে যা কিছু নতুন আইডিয়া বা ভাবনাচিন্তা বেরিয়ে আসবে, যত নতুন দিক উদ্ভাবিত হবে, তা নতুন ভারতের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলিকে বাস্তবায়িত করার মাধ্যম হয়ে উঠবে। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি আরও একবার আপনাদের সবাইকে পথ দেখানোর জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আর আমি সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে দেশের আইন ব্যবস্থার জন্য সরকারের যা যা করা উচিৎ তা সে কেন্দ্রীয় সরকার হোক কিংবা রাজ্য সরকারগুলি – প্রত্যেকেই যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন, যাতে আমরা সবাই মিলেমিশে দেশের কোটি কোটি নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ করতে পারি আর ২০৪৭-এ যখন দেশ স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করবে, তখন আমরা ন্যায়ের ক্ষেত্রেও আরও অধিক গৌরব নিয়ে, আরও অধিক সম্মানের সঙ্গে, আরও বেশি আনন্দের সঙ্গে এগিয়ে যাব। এটাই আমার ইচ্ছা। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

CG/SB/DM/


(Release ID: 1822886) Visitor Counter : 240