প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

থানে এবং দিভার মধ্যে নতুন রেললাইন স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 18 FEB 2022 6:31PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

 

নমস্কার!

মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রদ্ধেয় শ্রী ভগৎ সিং কোশিয়ারিজি, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী উদ্ধব ঠাকরেজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবজি, শ্রী রাওসাহেব দানভেজি, মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অজিত পাওয়ারজি, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশজি, উপস্থিত সমস্ত সাংসদ ও বিধায়কগণ, আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

আগামীকাল ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের জন্মজয়ন্তী। সবার আগে আমি ভারতের গৌরব, ভারতের পরিচয় এবং ভারতীয় সংস্কৃতির রক্ষক, দেশের মহান মহানায়ক ছত্রপতি শিবাজীজির চরণে সাদর প্রণাম জানাই। শিবাজী মহারাজের জন্মজয়ন্তীর একদিন আগে থানে ও দিভার মাঝে নবনির্মিত পঞ্চম এবং ষষ্ঠ রেললাইনের শুভারম্ভ উপলক্ষে প্রত্যেক মুম্বাইবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

এই নতুন রেললাইন মুম্বাইবাসীদের জীবনে একটি বড় পরিবর্তন আনবে, তাঁদের ‘ইজ অফ লিভিং’কে বাড়িয়ে দেবে। এই নতুন রেললাইন মুম্বাইয়ের কখনও না থামা জীবনকে আরও বেশি গতি দেবে। এই দুই লাইনের উদ্বোধনের মাধ্যমে মুম্বাইয়ের জনগণের সরাসরি চারটি লাভ হবে।

প্রথমত – এখন থানে ও দিভার মাঝে লোকাল আর এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য আলাদা আলাদা লাইন নির্ধারিত হবে।

দ্বিতীয়ত – অন্যান্য রাজ্য থেকে মুম্বাইয়ে যাতায়াত করা ট্রেনগুলিকে এখন লোকাল ট্রেনের ক্রসিং-এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

তৃতীয়ত – কল্যাণ থেকে কুরলা সেকশনের মেল ট্রেন / এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি এখন কোনও বাধা বা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই চালানো সম্ভব হবে।

আর চতুর্থত – প্রত্যেক রবিবারে হওয়া ব্লকের কারণে কোলাবা এবং মুম্বার যাত্রীদের যাতায়াতের সমস্যাও এখন দূর হবে।

বন্ধুগণ,

আজ থেকে সেন্ট্রাল রেলওয়ে লাইনে ৩৬টি নতুন লোকাল ট্রেন চালু হতে চলেছে। এগুলির মধ্যে অধিকাংশই এসি ট্রেন। এই ট্রেনগুলি লোকাল ট্রেনের পরিষেবাকে সম্প্রসারিত করছে। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের লোকাল ট্রেনগুলিকে আধুনিক করে তোলার প্রতিশ্রুতি পালনের অঙ্গ। বিগত সাত বছরে মুম্বাইয়ে মেট্রো রেলেরও প্রভূত সম্প্রসারণ হয়েছে। মুম্বাইয়ের নিকটবর্তী শহরতলি এলাকাগুলিতে দ্রুতগতিতে মেট্রো নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।

ভাই ও বোনেরা,

অনেক দশক ধরে যে লোকাল ট্রেনগুলি মুম্বাইকে পরিষেবা দিচ্ছে, সেগুলির পরিষেবাকে আরও সম্প্রসারিত করা আর সেগুলিকে আধুনিক করে তোলার দাবি অনেক পুরনো ছিল। ২০০৮-এ এই পঞ্চম এবং ষষ্ঠ লাইনের শিলান্যাসও হয়ে গিয়েছিল। ২০১৫ সালের মধ্যে এগুলির কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ২০১৪ পর্যন্ত এই প্রকল্পগুলির কাজ ভিন্ন ভিন্ন কারণে ঝুলে ছিল। তারপর আমরা দায়িত্ব নিয়ে এগুলির কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার অভিযান চালাই আর এভাবেই এই সমস্যাগুলির সমাধান করি।

আমাকে বলা হয়েছে, ৩৪টি স্থান এরকম ছিল, যে স্থানগুলিতে নতুন রেললাইন পেতে পুরনো রেললাইনগুলিকে যুক্ত করতে হত। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের শ্রমিকরা, আমাদের প্রকৌশলীরা এই প্রকল্পগুলিকে সম্পূর্ণ করেছেন। কয়েক ডজন নতুন সেতু নির্মিত হয়েছে। অনেকগুলি উড়ালপুল তৈরি করা হয়েছে, সুড়ঙ্গও তৈরি করা হয়েছে। দেশ নির্মাণের জন্য আমাদের শ্রমিক ও  প্রকৌশলীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, এমন দায়বদ্ধতাকে আমি হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা জানাই, প্রণাম জানাই, অভিনন্দনও জানাই।

ভাই ও বোনেরা,

মুম্বাই মহানগর গোড়া থেকেই স্বাধীন ভারতের প্রগতিতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এখন এই চেষ্টা করতে হবে যাতে আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণেও মুম্বাইয়ের সামর্থ্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। সেজন্য মুম্বাইয়ে একবিংশ শতাব্দীর পরিকাঠামো নির্মাণে আমরা বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছি। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে এখানে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। মুম্বাইয়ের শহরতলি এলাকাগুলির রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক এবং শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি-নির্ভর করে তোলা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে বর্তমান রেল যোগাযোগ ক্ষমতা যতটা আছে, তার সঙ্গে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত রেলপথ সম্প্রসারণ করতে পারি। সিবিটিসি-র মতো আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থার পাশাপাশি ১৯টি স্টেশনকে আধুনিকীকরণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।

ভাই ও বোনেরা,

শুধু মুম্বাইয়ের মধ্যেই নয়, দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে মুম্বাইয়ের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার ক্ষেত্রেও গতি বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে, আধুনিকীকরণের গতি বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য আমেদাবাদ-মুম্বাই হাইস্পিড রেল আজ মুম্বাই তথা দেশের প্রয়োজনীয়তা পূরণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি মুম্বাইয়ের ক্ষমতাকে, স্বপ্নের শহর রূপে মুম্বাইয়ের পরিচয়কে আরও মজবুত করবে। এই প্রকল্প দ্রুতগতিতে সম্পূর্ণ করার জন্য আমরা সকলেই এটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। একইরকমভাবে, ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরও মুম্বাইকে নতুন শক্তি যোগাতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

আমরা সবাই জানি যে, যত মানুষ প্রতিদিন ভারতীয় রেলে যাতায়াত করেন, বিশ্বের অনেক দেশের জনসংখ্যাই তত নয়। ভারতীয় রেলকে সুরক্ষিতভাবে, সমস্ত সুবিধা যুক্ত করে আধুনিক করে তোলা আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের অন্যতম। আমাদের এই দায়বদ্ধতাকে করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারীও টলাতে পারেনি। বিগত দুই বছরে ভারতীয় রেল ফ্রেট ট্রান্সপোর্টেশন বা পণ্য পরিবহণে নতুন নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। এর পাশাপাশি, ৮ হাজার কিলোমিটার রেললাইনের বৈদ্যুতিকীকরণও করা হয়েছে। প্রায় ৪,৫০০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন পাতা বা পূর্ববর্তী লাইনগুলির পাশাপাশি দ্বিগুণ রেললাইন পাতার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। করোনাকালেই আমরা ‘কিষাণ রেল’ চালু করে এর মাধ্যমে দেশের কৃষকদের সারা দেশের বাজারগুলির সঙ্গে যুক্ত করেছি।

বন্ধুগণ,

আমরা সবাই এটাও জানি যে, রেলওয়েতে সংস্কার হলে আমাদের দেশের পণ্য পরিবহণ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে। সেজন্য বিগত সাত বছরে কেন্দ্রীয় সরকার রেলওয়েতে সব ধরনের সংস্কারকে উৎসাহ যুগিয়ে গেছে। অতীতে পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি বছরের পর বছর ধরে চলত। সেগুলি এতদিন ধরে এজন্য চলত কারণ, পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত ভারসাম্য রক্ষা ও যোগাযোগের অভাব ছিল। ওই দৃষ্টিকোণ থেকে একবিংশ শতাব্দীর ভারতে পরিকাঠামো নির্মাণ সম্ভব ছিল না। সেজন্যই আমাদের যথোচিত সংস্কার আনতে হয়েছে, আমূল পরিবর্তন করতে হয়েছে।

সেজন্যই আমরা ‘পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’ রচনা করেছি। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যেক বিভাগ, রাজ্য সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং বেসরকারি ক্ষেত্র – সবাইকে একটি অভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে পরিকাঠামোর যে কোনও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সমস্ত তথ্য আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। তাহলেই সকলে নিজেদের অংশের কাজ, তাঁদের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সঠিক পদ্ধতিতে করতে পারবেন। মুম্বাই এবং দেশের অন্যান্য রেলওয়ে প্রজেক্টের জন্যও আমরা গতি শক্তির ভাবনা নিয়েই কাজ করতে চলেছি।  

বন্ধুগণ,

অনেক বছর ধরে আমাদের দেশে একটা ভাবনা জোরদার ছিল, যে সম্পদ বা ব্যবস্থা গরীবরা ব্যবহার করেন, মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করেন, সেগুলিতে বিনিয়োগ করতে হবে না। এর ফলেই ভারতের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা গণ-পরিবহণগুলি সব সময়েই চমকহীন ছিল। কিন্তু এখন ভারত সেই পুরনো ভাবনাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে। আজ গান্ধীনগর এবং ভোপালের আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন ভারতীয় রেলের পরিচয় হয়ে উঠছে। আজ ৬ হাজারেরও বেশি রেলওয়ে স্টেশনে ওয়াই-ফাই পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি দেশের রেলযাত্রার গতি বাড়িয়েছে এবং অনেক আধুনিক পরিষেবা প্রদান করছে। আগামী বছরগুলিতে ৪০০টি নতুন বন্দে ভারত ট্রেন দেশবাসীকে পরিষেবা দিতে শুরু করবে।

ভাই ও বোনেরা,

আরও একটি পুরনো ভাবনা যা আমাদের সরকার বদলেছে তা হল, রেলের নিজস্ব সামর্থ্যের ওপর ভরসা। ৭-৮ বছর আগে পর্যন্ত দেশের যে রেল কোচ ফ্যাক্টরিগুলি ছিল, সেগুলি নিয়ে সরকারের মধ্যে অনেক উদাসীনতা ছিল। এই ফ্যাক্টরিগুলি যে পরিস্থিতিতে ছিল তা দেখে কেউ কল্পনাও করতে পারত না যে এই ফ্যাক্টরিগুলি আধুনিক ট্রেন উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু আজ বন্দে ভারত ট্রেন এবং স্বদেশী ভিস্টাডোম কোচ এই ফ্যাক্টরিগুলিতেই তৈরি হচ্ছে। আজ আমরা নিজেদের সিগনালিং সিস্টেমকে স্বদেশী সমাধানের মাধ্যমে আধুনিক করে তোলার ক্ষেত্রেও নিরন্তর কাজ করে চলেছি। এভাবেই সমস্ত ক্ষেত্রে স্বদেশী সমাধান চাই। আমাদের বিদেশি নির্ভরতা থেকে মুক্তি চাই।

বন্ধুগণ,

নতুন নতুন পরিষেবা বিকশিত করার এই প্রচেষ্টাগুলির মাধ্যমে মুম্বাই এবং তার নিকটবর্তী শহরগুলি অনেক উপকৃত হতে চলেছে।

গরীব এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের এই নতুন নতুন পরিষেবা পেয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে আর কর্মসংস্থানের নতুন নতুন উপায়ও খুঁজে পাবেন। মুম্বাইয়ের নিরন্তর বিকাশের দায়বদ্ধতা নিয়ে আরও একবার সমস্ত মুম্বাইবাসীদের আমি অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1799447) Visitor Counter : 205