প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

জাতীয় মহিলা কমিশনের ৩০তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 31 JAN 2022 7:51PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ৩১  জানুয়ারি, ২০২২

 

নমস্কার !

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীরা, মন্ত্রী পরিষদে আমার সহকর্মী স্মৃতি ইরানীজি ডঃ মহেন্দ্র ভাই এবং দর্শনা জারদোষজি, জাতীয় মহিলা কমিশনের সভাপতি শ্রীমতী রেখা শর্মাজি, সব রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন এবং সদস্যবৃন্দ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির সদস্য, অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ভাই ও বোনেরা !

জাতীয় মহিলা কমিশনের ৩০তম প্রতিষ্ঠা দিবসে আপনাদের সকলকে অনেক অভিনন্দন। ৩০ বছর পূর্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- তা সে ব্যক্তি জীবনেই হোক কিংবা সংগঠনের। এই সময়কালে নতুন নতুন দায়িত্ব এসে বর্তায় এবং নব নব উদ্যোমে এগিয়ে যেতে হয়। আমি নিশ্চিত জাতীয় মহিলা কমিশনের ৩০তম প্রতিষ্ঠা দিবসে এই সংস্থা আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে, দায়িত্বশীল হবে এবং নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাবে। পরিবর্তনশীল ভারতে আজ মহিলাদের ভূমিকা প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। আর তাই জাতীয় মহিলা কমিশনের কাজের ব্যপ্তিও বাড়ছে।

বন্ধুগণ,

আজ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের এক নতুন ভারত গড়ে তোলার সংকল্প আমরা নিয়েছি। দেশ আজ ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াস’ মন্ত্রে এগিয়ে চলেছে। যখন প্রতিটি ক্ষেত্রের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে তখন দেশ তার উন্নয়নের প্রকৃত লক্ষ্য উপলব্ধি করেছে। আমরা সবাই জানি আগে ব্যবসা-বাণিজ্যের সংজ্ঞা বড় বড় কর্পোরেট সংস্থা এবং মানুষদের ঘিরে আবর্তিত হতো। কিন্তু প্রকৃত বাস্তব হলো যুগ যুগ ধরে আমাদের স্থানীয় স্তরে ছোট ছোট শিল্পের মধ্যে ভারতের শক্তি নিহিত, আজ যাকে আমরা অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ বলে থাকি। এই  শিল্প সংস্থাগুলিতে পুরুষদের মতো মহিলাদেরও সমান ভূমিকা থাকে।

বস্ত্রশিল্প বা মৃৎশিল্পের কথাই ধরুন কিংবা কৃষিকাজ বা দুগ্ধজাত সামগ্রী। এরকম বহু শিল্প আছে যেখানে মহিলাদের ক্ষমতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও এটি সত্যি যে এইসব শিল্পগুলির প্রকৃত ক্ষমতা কখনোই স্বীকার করা হয়নি। যারা পুরনো ভাবনায় বিশ্বাসী তারা মনে করেন মহিলাদের দক্ষতা ঘর গৃহস্থলীর কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে এই পুরনো মানসিকতার পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। আজ মেক ইন ইন্ডিয়া সেই কাজটিই করছে। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে মহিলাদের দক্ষতাকে জুড়ে দিয়ে আত্মনির্ভর ভারত অভিযান শুরু হয়েছে। আর তার ফল তো আমরা হাতেনাতে দেখতে পাচ্ছি। আজ মুদ্রা যোজনার ৭০ শতাংশ সুবিধাভোগী মহিলা। কয়েক কোটি মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে তাঁদের শিল্পোদ্যোগ শুরু করেছেন এবং এরফলে বহু মানুষের কাজের সুযোগ হচ্ছে।

একইভাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে মহিলাদের শিল্পোদ্যোগে দক্ষতা বাড়াতে দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে এতো উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে যে দেশে মহিলা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সংখ্যা বিগত ৬-৭ বছরে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে নতুন শিল্পোদ্যোগের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা নজরে আসছে। ২০১৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে ৫৬টি আলাদা আলাদা ক্ষেত্রে মোট ৬০ হাজারের বেশি নতুন শিল্পোদ্যোগ গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ সংস্থায় অন্তত একজন মহিলা নির্দেশক রয়েছেন।

বন্ধুগণ,

আজ নতুন ভারতের উন্নয়ন যজ্ঞে মহিলাদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজে শিল্পোদ্যোগী হিসেবে মহিলাদের ভূমিকার কথা মহিলা কমিশনের প্রচার করা উচিত। আপনারা দেখবেন বিগত ৭ বছর ধরে এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পদ্ম সম্মানে মহিলাদের ভূষিত করার প্রবণতা আর একটি উদাহরণ। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৮৫ জন মহিলাকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে। এ বছরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৩৪ জন মহিলাকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে- যা একটি রেকর্ড। এর আগে এতোজন মহিলা একসঙ্গে পদ্ম সম্মান পাননি।

একইভাবে ভারতের মেয়েরা খেলাধুলার জগতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছে। আমাদের মেয়েরা অলিম্পিক্সে দেশের জন্য পদক জয় করে নিয়ে এসেছেন। করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের নার্স, চিকিৎসক এবং মহিলা বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

এটিই হলো ভারতের নারীশক্তি। যখনই তাঁরা সুযোগ পান তখনই তাঁরা তাঁদের প্রকৃত ক্ষমতা প্রদর্শন করেন। আর আপনারা সকলেই জানেন ভালো শিক্ষক বা প্রশিক্ষক একজন মহিলাই হতে পারেন। তাই সব মহিলা কমিশনগুলির সামনে বিরাট দায়িত্ব এসে বর্তেছে। দেশে শিল্পোদ্যোগ থেকে ক্রীড়াক্ষেত্র- সর্বত্র নতুন দৃষ্টিভঙ্গী, নতুন ভাবনা গড়ে তুলতে হবে।

বন্ধুগণ,

আপনারা সবাই বিগত ৭ বছর ধরে দেখে আসছেন যে দেশ মহিলাদের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠছে। ভারত বিশ্বে কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম যেখানে মাতৃত্বকালীন ছুটির পরিমাণ সর্বোচ্চ। এখন মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ করার চেষ্টা চলছে, যাতে কম বয়সে বিয়ের কারণে মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় এবং তাদের ক্যারিয়ার নষ্ট না হয়। একটা সময় ছিল যখন মহিলাদের ক্ষমতায়ণকে সংকীর্ণ দৃষ্টিকোন থেকে দেখা হতো। গ্রামের এবং দরিদ্র পরিবারগুলির মহিলারা এই ভাবনার বাইরে ছিলেন। আমরা এই বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করছি। আজ মহিলা ক্ষমতায়ণ ৯ কোটি দরিদ্র মহিলাদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা প্রথমবারের মতো রান্নার গ্যাসের সংযোগ পেয়েছেন এবং ধোঁয়া থেকে তাঁদের মুক্তি মিলেছে। আজ বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণ মহিলাদের ক্ষমতায়ণের নিদর্শন হয়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশে একে ইজ্জতঘর বলা হচ্ছে। সেইসব মায়েরা আজ মহিলাদের ক্ষমতায়ণের স্বাদ পাচ্ছেন যাঁরা প্রথমবারের মতো পাকা ছাদের নীচে বসবাস করছেন। যখন গর্ভাবস্থায় থাকার সময় অথবা সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় মহিলারা নানা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, যখন মহিলারা তাঁদের জন ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পাচ্ছেন, যখন মহিলাদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভর্তুকি গিয়ে পৌঁছাচ্ছে তখন এইসব মহিলারাই ক্ষমতায়ণের প্রতীক হয়ে উঠছেন আর দেশের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আজ মহিলাদের আস্থা বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ তাঁরা নিজেরাই ঠিক করছেন এবং একইসঙ্গে দেশের ভবিষ্যতও নির্ধারিত হচ্ছে। বহু বছর পর লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস পাচ্ছে। স্কুলছুট মেয়েদের সংখ্যা কমছে। দেশের ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ কর্মসূচির সঙ্গে মহিলারও যুক্ত হচ্ছেন। আজ মহিলারা নিজেরাই কোন দিকে এগোবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যে সরকার মহিলাদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়না সেই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মহিলারা দ্বিধান্বিত হননা।

আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন আমি ভাবতাম অন্যান্য জায়গায় এই বিষয়টি নিয়ে কেন কাজ করা হয়না। তাই ২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর মহিলাদের সুরক্ষার বিষয়ে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আজ মহিলারা কোনো অপরাধের শিকার হলে তারজন্য কঠোর আইন রয়েছে। ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধে ফাঁসির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। দেশজুড়ে ফাস্ট ট্রাক কোর্ট গড়ে তোলা হচ্ছে। রাজ্যগুলির সঙ্গে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এই আইনগুলি কার্যকর করা হচ্ছে।

বিভিন্ন থানায় মহিলাদের হেল্প ডেস্কের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে তারা ২৪ ঘণ্টাই সহায়তা পেতে পারেন। সাইবার অপরাধের মীমাংসার জন্য একটি পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। আজ মহিলাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ হলে সরকার সেক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এই সমস্ত উদ্যোগগুলিতে মহিলাদের সঙ্গে সরকারের সেতুবন্ধের কাজটি রাজ্যগুলির মহিলা কমিশনের সহযোগিতায় জাতীয় মহিলা কমিশন করে থাকে। আপনাদের ইতিবাচক ভূমিকা এভাবেই আমাদের সমাজকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে সেই আস্থা আমার রয়েছে।

এই বিশ্বাস নিয়ে আরও একবার প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই !

ধন্যবাদ !

(প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছেন)


CG/CB/NS



(Release ID: 1794843) Visitor Counter : 596