প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রাকৃতিক কৃষি নিয়ে আয়োজিতজাতীয় স্তরের “কনক্লেভ” –এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 16 DEC 2021 4:09PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২১

 

নমস্কার,

গুজরাটের রাজ্যপাল শ্রী আচার্য দেবব্রতজি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র এবং সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত ভাই শাহ, কেন্দ্রীয় কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমরজি, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র ভাই প্য়াটেলজি, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথজি, উপস্থিত অন্যান্য মাননীয় ব্যক্তিবর্গ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আমার হাজার হাজার কৃষক ভাই ও বোনেরা,

দেশের কৃষিক্ষেত্র ও চাষবাসের জন্য আজকের দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি সারা দেশের কৃষক বন্ধুদের অনুরোধ জানিয়েছিলাম, যাতে তাঁরা প্রাকৃতিক চাষ নিয়ে আয়োজিত এই জাতীয় স্তরের কনক্লেভের সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হন। আজ একটু আগেই কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী তোমরজি বলছিলেন, আজ প্রায় ৮ কোটি কৃষক বন্ধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে এই কনক্লেভে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমি সমস্ত কৃষক ভাই ও বোনেদের স্বাগত জানাই, অভিনন্দন জানাই। আমি আচার্য দেবব্রতজিকেও হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই। আমি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে একজন শিক্ষার্থীর মতো আজ তাঁর কথা শুনছিলাম। আমি নিজে তো কৃষক নই। কিন্তু অত্যন্ত সহজভাবে বুঝতে পারছিলাম যে প্রাকৃতিক কৃষির জন্য কী চাই, কী করতে হবে, অত্যন্ত সরল ভাষায় তিনি বুঝিয়েছেন। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁর আজকের এই বক্তব্য, এই পথপ্রদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আমি ইচ্ছে করেই তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্য শোনার জন্য বসেছিলাম। কারণ আমি জানতাম যে, এক্ষেত্রে তিনি যে সিদ্ধি অর্জন করেছেন, প্রয়োগকে যেভাবে তিনি সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, আমি নিশ্চিত যে আমাদের দেশের কৃষকরাও তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা শুনে অনেক লাভবান হবেন। তাঁর এই বক্তব্য কখনও ভুলবেন না।

বন্ধুগণ,

এই কনক্লেভের আয়োজন গুজরাটে অবশ্যই হয়েছে।  কিন্তু এর পরিধি, এর প্রভাব গোটা ভারতের জন্য, ভারতের প্রত্যেক কৃষকের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। কৃষির ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় খাদ্য় প্রক্রিয়াকরণ, প্রাকৃতিক কৃষি - এই সমস্ত বিষয় একবিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় কৃষির কায়াকল্প বা  আমূল পরিবর্তনে অত্যন্ত সহায়ক হবে। এই কনক্লেভের সময় এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রেও প্রগতি হয়েছে। এখানেও ইথানল জৈবচাষ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে যে উৎসাহ দেখা গেছে, তা নতুন সম্ভাবনাগুলিকে আরো সম্প্রসারিত করবে। আমি আনন্দিত যে গুজরাটে আমরা প্রযুক্তি এবং প্রাকৃতিক কৃষির মেল বন্ধনে যে প্রয়োগ করেছিলাম, তা আজ গোটা দেশকে পথ দেখাচ্ছে। আমি আরেকবার গুজারাটের রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রতজিকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। যিনি দেশের কৃষকদের প্রাকৃতিক চাষ সম্পর্কে এতো সরল ভাষায় নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে বুঝিয়েছেন।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আজ অতীত অবলোকনের পাশাপাশি তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পথ নির্মাণেরও সময় এসেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী দশকগুলিতে যেভাবে দেশে চাষবাস হয়েছে, যে লক্ষ্যে এগিয়েছে, তা আমরা সবাই অত্যন্ত নিবিড়ভাবে দেখেছি। এখন স্বাধীনতার শততম বর্ষের দিকে আমাদের যে যাত্রাপথ, আগামী ২৫ বছরের যে যাত্রাপথ, তা নতুন প্রয়োজনীয়তা, নতুন নতুন প্রতিকূলতার সমাধানের মাধ্যমে আমাদের কৃষিক্ষেত্রগুলিকে তৈরি করার, কৃষিক্ষেত্রেগুলিতে প্রয়োগ করার যাত্রাপথ। বিগত ৬ - ৭ বছরে বীজ থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য একের পর এক অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাটি পরীক্ষা থেকে শুরু করে কয়েকশো নতুন বীজ তৈরি করা পর্যন্ত, পিএম কিষাণ সম্মান নিধি থেকে শুরু করে, বিনিয়োগের দেড়গুণ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য করা পর্যন্ত, সেচের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে, কিষাণ রেল চালু করা পর্যন্ত অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একটু আগেই কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শ্রী তোমরজি  এগুলি সম্পর্কে তার ভাষণে কিছু উল্লেখও করেছেন। কৃষির পাশাপাশি পশুপালন, মৌ চাষ, মৎস্য চাষ এবং সৌরশক্তি ও  জৈব জ্বালানীর মতো আয় –এর অনেক বিকল্প ব্যবস্থার সঙ্গে কৃষকদের ক্রমাগত যুক্ত করা হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে গুদামজাতকরণের ব্যবস্থা, কোল্ডচেন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণকে জোর দেওয়ার জন্য লক্ষ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সমস্ত প্রচেষ্টা কৃষকদের সমৃদ্ধ করছে। তাঁদের পছন্দ মতো বিকল্প প্রদান করছে। কিন্তু এসব কিছুর পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আমাদের সামনে উঠে দাঁড়িয়েছে। যখন মাটিই প্রত্যখ্যান করবে, তখন কী হবে! যখন আবহাওয়া প্রতিকূল হবে, যখন পৃথিবী মায়ের গর্ভে জল কমে যাবে, তখন কী হবে! আজ সারা পৃথিবীতেই কৃষিকে এই সমস্যাগুলির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এটা ঠিক যে, রাসায়নিক এবং সার সবুজ বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এটাও ততটাই সত্য যে আমাদের এগুলির বিকল্প নিয়েও একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে, এবং সেদিকেও অধিক মনোযোগ দিতে হবে। কৃষিতে ব্যবহার করা কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার আমাদের বড় মাত্রায় আমদানি করতে হয়। বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে আমদানি করতে হয়। এর ফলে কৃষির বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। কৃষকদের খরচ বাড়ে। আর গরীবদের রান্নাঘরের খরচও বাড়ে। এই সমস্যা কৃষক তথা সমগ্র দেশবাসীর স্বাস্থ্যের সঙ্গেও জড়িত। সেজন্যে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সচেতন থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

বন্ধুগণ,

গুজরাটে একটি প্রবাদ আছে, প্রত্যেক বাড়িতে বলা হয় “পানি আওয়ে তে পহেলা পাল বান্ধে। পানী পহেলা বাঁধ বান্ধো!” একথা আমাদের রাজ্যে প্রত্যেকেই বলে। এর তাৎপর্য হল রোগ হলে চিকিৎসা করার চাইতে রোগ যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা। কৃষি সংক্রান্ত সমস্যাগুলি বিকটরূপ নেওয়ার আগেই এক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ নেওয়ার এটাই সময়। আমাদের নিজস্ব চাষবাসকে রাসায়নিক গবেষণাগার থেকে বের করে, প্রকৃতি বা প্রাকৃতিক প্রয়োগশালার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। যখন আমি প্রকৃতির প্রয়োগশালার কথা বলছি, তখন তা যেন সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক হয়, সেটা দেখতে হবে। এটা কিভাবে হবে, সে সম্পর্কে একটু আগেই আচার্য দেবব্রতজি আমাদের বিস্তারিতভাবে বলেছেন। আমরা এখানে একটা ছোট তথ্যচিত্রও দেখেছি। আর যেমনটি তিনি বলেছেন, তাঁর লেখা বই আমরা কিনে পড়তে পারি, ইউটিউবে আচার্য দেবব্রতজির নাম দিয়ে খুঁজলে তাঁর বক্তৃতাও আমরা শুনতে পাবো। যে শক্তি সারের মধ্যে রয়েছে, তা বীজ এবং প্রকৃতির মধ্যেও রয়েছে। আমাদের মাটিতে শুধু সেই জীবাণুগুলির মাত্রা বাড়াতে হবে, যেগুলি উর্বরতা শক্তিকে বাড়ায়। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন যে, এক্ষেত্রে দেশি গরুগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশি গরুর গোবর এবং গোমূত্র থেকেও আপনারা এধরণের সমাধান বের করতে পারেন। তা যেমন ফসল রক্ষা করবে তেমনই উর্বরতা শক্তিও বাড়াবে। বীজ থেকে শুরু করে মাটি পর্যন্ত সবকিছুর চিকিৎসা আপনারা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই করতে পারেন। এই কৃষিতে সারের পেছনে খরচ করতে হয় না, কীটনাশকও কিনতে হয় না। এতে সেচের প্রয়োজনীয়তাও কমে। আর বন্যা ও খরার সমস্যার বিরুদ্ধেও সক্ষম করে তোলে। সেচের সুবিধা নেই তেমন জমি থেকে শুরু করে বেশি জল সম্পন্ন মাটি পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক চাষের মাধ্যমে কৃষকরা বছরে কয়েকবার ফসল ফলাতে পারেন। শুধু তাই নয়, গম, ধান, ডাল ইত্যাদি ফসল তুলে নেওয়ার পর ক্ষেতে যে ফসলের অবশেষ থেকে যায়, সেগুলিকেও এক্ষেত্রে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ কম বিনিয়োগ, বেশি লাভ। এটাই তো প্রাকৃতিক চাষ।

বন্ধুগণ,

আজ বিশ্ব যতটা আধুনিক হয়ে উঠছে, ততটাই ‘ব্যাক টু বেসিক’ –এর দিকে এগুচ্ছে। এই ব্যাক টু বেসিকের মানে কি।  এর মানে হল নিজেদের শেকড়ের সঙ্গে  যুক্ত করা। একথা আপনাদের মতো কৃষক বন্ধুদের থেকে ভালো কে বোঝে! আমরা শেকড়ে যতটা জলসেচ করবো, গাছপালার স্বাস্থ্য ততোই ভালো হবে। ভারত তো একটি কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি ঘিরে  আমাদের সমাজ বিকশিত হয়েছে। পরম্পরা সৃষ্টি হয়েছে, আচার, বিচার, উৎসব, অনুষ্ঠান, রীতি, রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। আজ এখানে দেশের সমস্ত প্রান্ত থেকে কৃষকবন্ধুরা যুক্ত হয়েছেন। আপনারা আমাকে বলুন, আপনাদের এলাকার খাদ্যাভ্যাস আচার, বিচার, উৎসব, অনুষ্ঠান, রীতি, রেওয়াজ এর মধ্যে এমন কিছু আছে, যা আমাদের কৃষি দ্বারা প্রভাবিত নয়। যখন আমাদের সভ্যতা কৃষি নিয়ে এতটা বিকশিত হয়েছে, তখন এবিষয়ে আমাদের জ্ঞান – বিজ্ঞান কতটা সমৃদ্ধ ছিল, কতটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল! সেজন্য ভাই ও বোনেরা, আজ যখন বিশ্ব জৈব চাষের কথা বলছে, প্রাকৃতিক চাষের কথা বলছে, ব্যাক টু বেসিকের কথা বলছে, তখন আমরা দেখছি, এই কৃষির শেকড়গুলি ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত।

বন্ধুগণ,

এখানে অনেক কৃষিবিদ, বৈজ্ঞানিক ও বিদ্যান মানুষেরা উপস্থিত রয়েছেন, যারা এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। আপনারা নিশ্চিয়ই জানেন, আমাদের দেশে ঋগ্বেদ এবং অথর্ববেদ থেকে শুরু করে, আমাদের পৌরাণিক গন্থগুলিতে কৃষি – পারাশর এবং কাশ্বপীয় কৃষি সুক্ত- এর মতো প্রাচীন গ্রন্থ পর্যন্ত, আর  দক্ষিণ ভারতে তামিলনাড়ুর সন্ন্যাসী তিরুভল্লুভরজি থেকে শুরু করে ও উত্তরে  কৃষক কবি ঘাঘ পর্যন্ত আমাদের কৃষি নিয়ে কত নিবিড়ভাবে গবেষণা হয়েছে। যেমন একটি শ্লোক আছে,

গোহিতঃ ক্ষেত্রগামী চ,

কালগ্গো বীজ – তৎপরঃ।

ভিতন্দ্রঃ সর্ব শস্যাদয়ঃ,

কৃষকো ন অওয়োসীদতি।।

অর্থাৎ যাঁরা গোধনের, পশুধনের হিত সম্পর্কে অবগত, আবহাওয়া সময় সম্পর্কে অবগত, বীজ সম্পর্কে যাঁদের জ্ঞান আছে, আর যাঁরা অলস নয়, এরকম কৃষকরা কখনও সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে না - তাঁরা কখনও দরিদ্র হতে পারে না। এই একটি শ্লোককে আমরা প্রাকৃতিক চাষের সূত্র বলতে পারি, শক্তি বলতে পারি। এতে যত সম্পদের উল্লেখ রয়েছে, সব কিছু প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যেতে পারে। এভাবে মাটিকে কেমন করে উর্বর করে তুলবেন, কখন কোন ফসলে জলসেচ করতে পারে, কিভাবে জল সাশ্রয় করবে, এর অনেক সূত্রও রয়েছে। এরকম একটি অত্যন্ত প্রচলিত শ্লোক হল,

নৈরুত্যার্থঁ   হি ধান্যানাং জলং ভাদ্রে ভিমোচয়েৎ।

মূল মাত্রন্তু সংস্থাপ্য কারয়েজ্জজ – মোক্ষণম্।।

অর্থাৎ ফসলকে অসুখ থেকে বাঁচিয়ে পুষ্ট করার জন্য ভাদ্র মাসে জল বের করে দেওয়া উচিত। কেবল শিকড়ের জন্যই সামান্য জল ক্ষেতে থাকতে হবে। এভাবে কবি ঘাঘও লিখেছেন –

গেহূঁ বাহেঁ, চনা দলায়ে।

ধান গাঁহে, মক্কা নিরায়ে।

উখ কসায়ে।

অর্থাৎ বেশি হাল চালালে গম, বেশি খুঁড়লে চানা, বার বার জল পেলে ধান, বার বার নিড়ানি করলে ভুট্টা, জল বের করে দেওয়ার পর আখ চাষ করলে ফসল ভালো হয়। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, প্রায় ২০০০ বছর আগে তামিলনাড়ুর সন্ন্যাসী তিরুভল্লুবরজিও কৃষি নিয়ে কয়েকটা সূত্র দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন,

তোড়ি – পুড়ুডী কছচা উণক্কিন,

পিড়িথেরুভুম ওয়েডাঁদ্ সালক পডুম

অর্থাৎ যদি জমি শুকনো হয়, তাহলে মাটির এক আউন্সকে এক চতুর্থাংশে কমিয়ে দেওয়া যায়, তা এক মুঠো সার ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।

বন্ধুগণ,

কৃষির সঙ্গে যুক্ত আমাদের এই প্রাচীন জ্ঞানকে শুধু শিখলেই হবে না, সেগুলিকে আধুনিক সময়ের নিরিখে বিবর্তিতও করার প্রয়োজন রয়েছে। এই লক্ষ্যে আমাদের নতুন ভাবে গবেষণা করতে হবে, প্রাচীন জ্ঞানকে আধুনিক, বৈজ্ঞানিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এই লক্ষ্যে আমাদের “আইসিএআর” –এর মতো প্রতিষ্ঠান কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্য়ালয়গুলি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের জ্ঞানকে শুধু গবেষণাপত্র এবং তত্ত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। আমাদের একে একটি ব্যবহারিক সাফল্যে রূপান্তরিত করতে হবে। “ল্যাব টু ল্যান্ড”-  এটাই আমাদের যাত্রাপথ। এর সূত্রপাত আমাদের এই প্রতিষ্ঠানগুলি করতে পারে। আপনারা এই সংকল্প নিতে পারেন যে, আপনারা প্রাকৃতিক চাষকে যত বেশি সম্ভব কৃষকদের কাছে নিয়ে যাবেন! আপনারা যখন এটা করে দেখাবেন যে, এটা সাফল্যের সঙ্গে করা সম্ভব, তখন সাধারণ মানুষ – সাধারণ কৃষকরাও দ্রুত এর সঙ্গে যুক্ত হবে।

বন্ধুগণ,

নতুন শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের সেই ভুলগুলিকেও ভুলিয়ে দিতে হবে, যেগুলি চাষের পদ্ধতির মধ্যে রপ্ত হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা এটা বলেন যে, ক্ষেতে আগুন লাগালে মাটি তার উর্বরতা শক্তি হারাতে থাকে। আমরা দেখেছি, কিভাবে মাটিকে নষ্ট করা হচ্ছে। আমরা দেখেছি, কিভাবে মাটিকে পোড়ালে মাটি ইটের রূপ নিতে পারে। আর ইট এতোই নিরেট ও শক্তিশালী হয়, তা দিয়ে দালানবাড়ি তৈরি করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে ফসলের অবশেষ জ্বালানোর পরম্পরা রয়েছে। আমরা জানি যে, মাটি জ্বললে ইট হয়, তবুও আমরা মাটিকে জ্বালাই। তেমনি একটি ভ্রমও সৃষ্টি হয়েছে, যে রাসায়নিক সার না মেশালে ফসল ভালো হবে না। কিন্তু প্রকৃত সত্যটা এর বিপরীৎ। আগেকার দিনে তো এসব রাসায়নিক ছিল না। কিন্তু ফসল ভালোই হতো। মানবতার বিকাশের ইতিহাস এর সাক্ষী। সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কৃষিযুগে মানবতা সর্বাধিক দ্রুত গতিতে বিকশিত হয়েছে, এগিয়ে গেছে। কারণ তখন সঠিক পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক চাষ করা হতো। মানুষ নিয়মিত শিখতেন। আজ শিল্পযুগে আমাদের কাছে প্রযুক্তির শক্তি রয়েছে, নানা রকম উপায় রয়েছে। আবহাওয়া সম্পর্কে নানা তথ্য রয়েছে। এখন তো কৃষকরা একটি নতুন ইতিহাস গড়ে তুলতে পারেন। বিশ্ববাসী যখন বিশ্ব উষ্ণায়ণ নিয়ে চিন্তিত, তখন পথ খোঁজার জন্য ভারতের কৃষকরা তাঁদের ঐতিহ্যগত জ্ঞান থেকে পথ দেখাতে পারে। আমরা সবাই মিলে নতুন কিছু করতে পারি।

ভাই ও বোনেরা,

প্রাকৃতিক চাষ করলে যাঁরা সব চাইতে লাভবান হবেন, তাঁরা হলেন, আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র কৃষক। সেই ক্ষুদ্র কৃষক, যাঁদের কাছে ২ হেক্টর থেকেও কম জমি রয়েছে। অধিকাংশ কৃষকের চাষের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার কিনতেই বেশি খরচ হয়। যদি তাঁরা প্রাকৃতিক চাষের দিকে চলে আসেন, তাহলে তাঁদের অবস্থা উন্নত হবে।

ভাই ও বোনেরা,

প্রাকৃতিক চাষ নিয়ে গান্ধীজি বলেছিলেন, এটা ঠিক ‘যেখানে শোষণ হবে, সেখানে পোষণ হবে না’। গান্ধীজি আরো বলেছেন, ‘মাটিকে উল্টানো, পাল্টানো ভুলে যাওয়া, আবার মাটিকে নিয়মিত নিড়ানি দেওয়া ভুলে যাওয়া এরকম নিজেকেই ভুলে যাওয়ার মতোই ব্যাপার।’ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে বিগত কয়েক বছরে দেশের অনেক রাজ্যে এক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হাজার হাজার কৃষক প্রাকৃতিক কৃষিকে আপন করে নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক স্টার্টআপ রয়েছে। অনেক নবীন প্রজন্মের বন্ধুদের উদ্যোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের শুরু করা ‘পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা’ থেকেই ওরা লাভবান হয়েছেন। এতে কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। আর এরকম চাষের দিকে পা বাড়ানোর জন্য সাহায্যও করা হচ্ছে।

ভাই ও বোনেরা,

যে রাজ্যগুলির লক্ষ লক্ষ কৃষক প্রাকৃতিক চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা উৎসাহজনক। গুজরাটে অনেক আগেই আমরা প্রাকৃতিক চাষ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আজ গুজরাটের অনেক এলাকায় এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এভাবে হিমালচপ্রদেশেও দ্রুত গতিতে এই রকম চাষের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। আমি আজ দেশের প্রত্যেক রাজ্যের কাছে, প্রত্যেক রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ রাখবো, যে তাঁরা যেন প্রাকৃতিক চাষকে গণ আন্দোলনে পরিণত করার জন্যে  এগিয়ে আসেন। এই অমৃত মহোৎসবে প্রত্যেক পঞ্চায়েতের ন্যূনতম একটি গ্রামে অবশ্যই প্রাকৃতিক চাষ শুরু করুন। এই প্রচেষ্টা আমরা সবাই করতে পারি। আর আমি কৃষক ভাইদেরও বলতে চাই, আমি এটা বলছি না যে, আপনার যদি ২ একর বা ৫ একর জমি থাকে, তাহলে সব জমিতেই প্রাকৃতিক চাষের পদ্ধতি প্রয়োগ করুন। কিছুটা জমি নিন, আর নিজে এই চাষের অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। অর্ধেক ক্ষেত্র  বা এক চতুর্থাংশ বা তার থেকেও কম জমি নিয়ে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। যদি লাভবান হন, তাহলে পরের বছর আর একটু বাড়ান। আমি নিশ্চিত যে ২ বছরের মধ্যে আপনারা ধীরে ধীরে সমস্ত ক্ষেতেই প্রাকৃতিক চাষের পদ্ধতি প্রয়োগ করবেন। আমার সমস্ত বিনিয়োগকারী বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ, যে এখন জৈব এবং প্রাকৃতিক চাষকে উৎসাহ যোগানোর সময় এসেছে। এ থেকে উৎপন্ন ফসলকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহার করলে আপনারা অনেক লাভবান হবেন। এর জন্য শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বের বাজার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলির জন্যে আজই কাজ করতে হবে।

বন্ধুগণ,

এই অমৃতকালে বিশ্বের জন্য খাদ্য সুরক্ষা এবং প্রকৃতি থেকেই সমন্বয়ের উন্নত সমাধান আমাদের ভারত থেকে উপহার দিতে হবে। ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ সামিট’ –এ আমি বিশ্ববাসীর কাছে ‘লাইফ স্টাইল ফর এনভায়রমেন্ট’ বা পরিবেশের অনুকূল জীবনশৈলী বা  ‘LIFE’ –কে ‘গ্লোবাল মিশন’ গড়ে তোলার আহ্বান করেছিলাম। একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের নেতৃত্ব করতে চলেছে। ভারতের কৃষকরা এর নেতৃত্ব দিতে চলেছে। সেজন্য আসুন, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে ভারতমাতার মাটিকে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক রাসায়নিক পদার্থগুলি থেকে মুক্ত করার সংকল্প নিই। বিশ্বকে সুস্থ মাটি, সুস্থ জীবনযাপনের পথ দেখাই। আজ দেশে আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন জেগে উঠেছে। আত্মনির্ভর ভারত তখনই গড়ে উঠতে পারে, যখন তার কৃষি আত্মনির্ভর হবে, প্রত্যেক কৃষক আত্মনির্ভর হবে। আর এমনটি তখনই হতে পারে, যখন অপ্রাকৃতিক সার এবং ওষুধের পরিবর্তে আমরা ভারতমাতার মাটিকে গোবর্ধন দিয়ে বিশুদ্ধ করে তুলবো। নানা প্রাকৃতিক উপাদন দিয়ে সমৃদ্ধি করে তুলবো। প্রত্যেক দেশবাসী প্রতিটি বিষয়ের হিতে প্রত্যেক জীবের হিতে প্রাকৃতিক চাষকে আমাদের গণ আন্দোলনে পরিণত করবো। এই বিশ্বাস নিয়েই আমি গুজরাট সরকারকে, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীজিকে এবং তাঁর গোটা টিমকে এই উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই। সমগ্র গুজরাটবাসীকে এই প্রাকৃতিক চাষকে গণ আন্দোলন পরিণত করার জন্য, আর আজ সারা দেশের কৃষকদের এর সঙ্গে যুক্ত করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে হৃদয় থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

CG/SB/SFS



(Release ID: 1782861) Visitor Counter : 830