প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

তামিলনাড়ুতে ডাঃ এমজিআর চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মূল অংশ

Posted On: 26 FEB 2021 12:14PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
 
নমস্কার,
 
তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য শ্রী বনওয়ারিলাল পুরোহিত, উপাচার্য সুধা সেশায়ন, অধ্যাপক ও অধ্যাপিকা মন্ডলী, কর্মচারীবৃন্দ এবং আমার প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা,
 
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আজ আপনারা চিকিৎসা বিদ্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা শংসাপত্র পেতে চলেছেন। আমাকে বলা হয়েছে, আজ ২১ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা প্রদান করা হবে। কিন্তু এখানে আরও একটা বিষয় রয়েছে, যার কথা আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই। আজ যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ ছাত্র এবং ৭০ শতাংশ ছাত্রী। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী সকলকে আমার অভিনন্দন। ছাত্রীদের সাফল্যে আমি তাঁদের প্রশংসা জানাই। এটা সবসময়েই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন মহিলারা যে কোনও ক্ষেত্রে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দেন। আর এটা যখন হয়, তখন তা নিঃসন্দেহে গর্বের ও আনন্দের মুহূর্ত হয়ে ওঠে। 
 
বন্ধুগণ,
 
আপনাদের এবং এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য দেখে ডাঃ এমজিআর অবশ্যই খুশি হতেন।
 
দরিদ্রদের প্রতি ডাঃ এমজিআর-এর ছিল অশেষ করুণা। স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা ও মহিলাদের ক্ষমতায়নের মতো বিষয়গুলি ছিল তাঁর হৃদয়ের অত্যন্ত কাছের। কয়েক বছর আগে আমি যখন শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলাম, যেখানে ডাঃ এমজিআর – এর জন্ম হয়েছিল, তখন দেখেছিলাম, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কায় আমাদের তামিল ভাইবোনদের জন্য ভারত কাজ করতে পেরে গর্বিত বোধ করছে। সেদেশে তামিল সম্প্রদায়ের কল্যাণে ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া নিঃশুল্ক অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার সদ্ব্যবহার হচ্ছে। ডিকোয়া’তে একটি হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথা আমি কখনই ভুলবো না। আধুনিক এই হাসপাতালটি অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এই সমস্ত উদ্যোগ, বিশেষ করে তামিল সম্প্রদায়ের জন্য যে প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে, তা দেখে ডাঃ এমজিআর অবশ্যই খুশি হতেন। 
 
ছাত্রছাত্রী বন্ধুরা,
 
এখন আপনাদের কাছে জীবনের একটি পর্যায় থেকে আরেকটি পর্যায়ে রূপান্তরের সময় এসেছে। আপনারা এখন জীবনের পঠন-পাঠনের পর্যায় থেকে রোগী কল্যাণ ও উপশমের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে চলেছেন। এখন আপনারা পরীক্ষায় নম্বর তোলার পরিবর্তে সমাজকল্যাণে অবদান রাখার পর্যায়ে এসে পৌঁছেছেন। 
 
কোভিড-১৯ মহামারী সমগ্র বিশ্বের কাছেই ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। এই মহামারী মোকাবিলায় কোনও পূর্বনির্ধারিত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা ছিল না। এরকম পরিস্থিতিতে ভারত না কেবল এক নতুন পথে অগ্রসর হয়েছিল, সেই সঙ্গে যাত্রাপথে অন্যদেরকেও সঙ্গে নিয়েছিল। ভারতে করোনায় মৃত্যু হার সর্বনিম্ন, সুস্থতার হার সর্বাধিক। ভারত সমগ্র বিশ্বের জন্য ওষুধ ও টিকা তৈরি করছে। আপনারা এমন সময় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যখন ভারতীয় চিকিৎসা পেশাদার, বিজ্ঞানী ও ফার্মা বিশেষজ্ঞদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখানো হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে ভারতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গীতে এক স্বতন্ত্র শ্রদ্ধার চোখে এবং নতুন আস্থার সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। অবশ্য, এর আরও একটি অর্থ হ’ল – আপনার কাছ থেকে সমগ্র বিশ্বের অনেক প্রত্যাশাও রয়েছে। আর এই দায়িত্ব আপনাকে নিষ্ঠার সঙ্গে বহন করতে হবে। মহামারীর সময় আমাদের যে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা যক্ষ্মার মতো রোগ দূরীকরণে সাহায্য করতে পারে।
 
বন্ধুগণ,
 
থিরুভাল্লুর বলেছিলেন, চিকিৎসক, ওষুধপত্র, সেবাদানকারী ও চিকিৎসা পরিষেবা – এই ৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ অজানা করোনা মহামারীর মতো শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রভাগে থেকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে। যাঁরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাঁরা সকলেই মানবজাতির কাছে প্রতীক হয়ে উঠেছেন। 
 
বন্ধুগণ,
 
আমরা সমগ্র চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থায় পরিবর্তন নিয়ে আসছি। জাতীয় চিকিৎসা কমিশন সমগ্র ব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা নিয়ে আসবে। নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনে নিয়ম-নীতি শিথিল করবে। এই কমিশন সুদক্ষ ও পর্যাপ্ত সংখ্যায় মানবসম্পদের যোগান সুনিশ্চিত করবে। দেশে গত ৬ বছরে এমবিবিএস স্তরে আসন সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি বাড়ানো হয়েছে, যা ২০১৪’র তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি। একইভাবে, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ২৪ হাজার করা হয়েছে, যা ২০১৪’র তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি। 
 
দেশে ২০১৪ সালে এইমস্ – এর মতো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬। গত ৬ বছরে আমরা সারা দেশে এ ধরনের আরও ১৫টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনুমতি দিয়েছি। চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে তামিলনাডুর সুনাম রয়েছে। এই রাজ্যে আমাদের যুবসম্প্রদায়কে আরও সাহায্যের জন্য আমার সরকার আরও ১১টি নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনে অনুমতি দিয়েছে। রাজ্যের যে সমস্ত জেলায় মেডিকেল কলেজ নেই, সেখানে এগুলি গড়ে তোলা হবে। এই মেডিকেল কলেজগুলি গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকার ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি সাহায্য দেবে। আমরা এ বছরের বাজেটে প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর সুস্থ ভারত যোজনা খাতে ৬৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করেছি। এই কর্মসূচি চালু হলে নতুন ধরনের অসুখ-বিসুখ নির্ণয় ও তার প্রতিকারে প্রাইমারী, সেকেন্ডারী ও টার্সিয়ারী স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে। আমাদের আয়ুষ্মান ভারত কর্মসূচি বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য বিমা উদ্যোগ। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ১ হাজার ৬০০টি চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুণগতমানের পরিষেবা পেয়েছেন। 
 
জনঔষধি কেন্দ্রগুলির পরিষেবা আরও বাড়িয়ে সুলভ মূল্যে ৭ হাজারেরও বেশি ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। স্টেন্ট ও হাঁটু প্রতিস্থাপনের মতো চিকিৎসা সামগ্রীর খরচ অনেক কমানো হয়েছে। এর ফলে, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ লাভবান হচ্ছেন।
 
আমাদের দেশে চিকিৎসা পেশাকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা করা হয়। এখন এই মহামারীর পর চিকিৎসা পেশার প্রতি মানুষের সম্মান ও শ্রদ্ধা আরও বেড়েছে। সাধারণ মানুষ জানেন, এই পেশায় যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের গুরুত্ব কতখানি। এটা হয় তখন, যখন কোনও রোগী জীবনের জন্য লড়াই করছেন। অবশ্য, আন্তরিক হওয়া ও আন্তরিকতা দেখানো দুটি সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়। আমি আপনাদের সকলকে রসবোধ অটুট রাখার অনুরোধ জানাই। আপনারা এই রসবোধকে জীবনের অঙ্গ করে তুলতে পারলে আপনার চিকিৎসাধীন রোগীরাও খুশি হবেন এবং তাঁদের মানসিকতাও থাকবে তুঙ্গে। আমি দেখেছি, এমন অনেক চিকিৎসক রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের পেশার দিক থেকে আপোষহীন, কিন্তু একইসঙ্গে তাঁদের রসবোধকেও জাগিয়ে তুলতে হবে, যাতে ঐ চিকিৎসকরা তাঁদের রোগী ও সহকর্মীদের সঙ্গে খোলা মনে আনন্দ নিয়ে কথা বলে সমগ্র হাসপাতাল চত্বর খুশিতে ভরিয়ে তুলতে পারেন। 
 
আর এ ধরনের পরিবেশ রোগীকে নতুন আশা আলো দেখাতে পারে। পক্ষান্তরে, রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রেও এ ধরনের পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। তাই, আপনি রসবোধ অটুট রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিজের শরীর স্বাস্থ্যের ওপরও খেয়াল রাখুন, যাতে চিকিৎসা পেশার বিপুল চাপ আপনি বহন করতে পারেন। 
 
বন্ধুগণ,
 
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস, গুরু স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, ঈশ্বর বা ভগবান শিবের প্রতি সেবা মানুষ সেবার সমতুল। তাই, মহান এই আদর্শে যদি কেউ উদ্বুদ্ধ হতে চান, তা হলে চিকিৎসা পেশার দ্বিতীয় নেই। আপনাদের সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন। একই সঙ্গে, নিজের অগ্রগতির কথাও ভুললে চলবে না। তাই, নিঃস্বার্থভাবে সাহসী ভূমিকা নিয়ে এই দায়িত্ব পালন করুন।
 
বন্ধুগণ,
 
আজ যাঁরা ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তাঁদের সকলকে আরও একবার অভিনন্দন। এই কথাগুলি বলে আপনাদের সকলকে এক চ্যালেঞ্জপূর্ণ ও ইতিবাচক কর্মজীবনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ভাষণ শেষ করছি। 
 
***
 
 
 
CG/BD/SB


(Release ID: 1701129) Visitor Counter : 184