রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়
সংসদের উভয় কক্ষে যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দের ভাষণ
Posted On:
29 JAN 2021 12:36PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৯ জানুয়ারি, ২০২১
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
সংসদের এই যৌথ অধিবেশন করোনা ভাইরাস মহামারীর সময় যেহেতু অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাই এর বড় তাৎপর্য রয়েছে। এটা নতুন বছর ও দশকের সূচনা। আমরাও এ বছর ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীতে প্রবেশ করছি। তাই, সংসদের সকল সদস্যই সর্বসম্মতভাবে প্রত্যেক ভারতবাসীর মতো এটাও দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করেন যে, কঠিন থেকে কঠিনতর চ্যালেঞ্জ কোনটিই আমাদের বা ভারতকে বিরত রাখতে পারবে না।
ভারত যখনই ঐক্যবদ্ধ থেকেছে, তখন অনেক অজেয় সমস্যারও সমাধান হয়েছে। এই সহমর্মিতা এবং পূজনীয় বাপু'র অনুপ্রেরণা কয়েকশ' বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে।
ভারতের মহিমা চূড়ান্ত সত্য। এক একক চেতনায়, একক চিন্তাভাবনায়, একক নিষ্ঠায় এবং একক অনুপ্ররণায় আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। ভারতীয়দের এই একতা ও আন্তরিকতা একাধিক প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলায় সক্ষম করে তুলেছে। আমাদের দেশ দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিটি সমস্যা, তা সে করোনা ভাইরাস মহামারীই হোক, বন্যাই হোক, ভূকম্পই হোক বা বিভিন্ন রাজ্যে ঘূর্নিঝড় অথবা পঙ্গপালের আক্রমণ বা পাখির মড়কই হোক না কেন, সবকিছুর মোকাবিলা করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত বরাবর অভাবনীয় উত্তেজনা দেখা গেছে। এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশ একত্রিত হয়েছে, বিভিন্ন দিক থেকে সমস্যার মোকাবিলা করেছে এবং প্রতিটি চ্যালেঞ্জের নিরসন ঘটিয়েছে। এই সময় আমরা এটাও দেখেছি যে, সমগ্র দেশবাসী এক অতুলনীয় সাহসিকতা, সংযম, অনুশাসন ও সেবার মনোভাব দেখিয়েছেন।
করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমরা বহু মানুষকে হারিয়েছি। আমাদের প্রিয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং আমার পূর্বসূরী শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় মহামারীর সময় প্রয়াত হয়েছেন। এমনকি, করোনা ভাইরাসের দরুণ আমরা ছয় সংসদ সদস্যকেও অকালে হারিয়েছি। আমি এঁদের সকলের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করি, তাহলে সাফল্য সুনিশ্চিত। করোনা ভাইরাস মহামারী বিশ্বে প্রতিটি দেশ এবং প্রত্যেক মানুষকে প্রভাবিত করেছে। ভারত এই পরিস্থিতিতে এক নতুন উদ্যম নিয়ে বিশ্বমঞ্চে উপস্থিত হয়েছে। আমার সরকারের সময়োপযোগী ও সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের ফলে আমরা লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর জীবন রক্ষায় সক্ষম হয়েছি। আজ দেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতগতিতে কমছে। একইসঙ্গে, সুস্থতার সংখ্যাও লাগাতার বাড়ছে।
আমরা যখন পূর্ববর্তী বছরটির কথা ভাবি, তখন আমাদের সামনে দুটি চ্যালেঞ্জের কথা মনে আসে। এর একটি হল অগণিত মানুষের জীবন রক্ষা এবং অর্থনীতির সুরক্ষা। অর্থ ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনে রেকর্ড আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার পাশাপাশি আমার সরকার এটা সুনিশ্চিত করেছে যে দরিদ্র কোনও ব্যক্তিই যাতে ক্ষুধায় না থাকেন।
‘প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনা'র আওতায় ৮০ কোটি মানুষকে আট মাস অতিরিক্ত ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য দেওয়া হয়েছে। সরকার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়টিকেও যথোচিত গুরুত্ব দিয়েছে। এই প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থে 'এক দেশ–এক রেশন কার্ড' সুবিধা চালু করেছে। এমনকি সরকার প্রবাসী শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন পরিষেবা দিয়েছে।
মহামারীর সময় নিজ গ্রামে ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য আমার সরকার ছয়টি রাজ্যে 'গরীব কল্যাণ রোজগার অভিযান'-এর সূচনা করেছে। এই কর্মসূচির ফলে ৫০ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। সরকার রাস্তার হকারদের জন্য 'স্বনিধি' কর্মসূচি শুরু করেছে। এছাড়াও, জন ধন অ্যাকাউন্টধারী দরিদ্র মহিলাদের অ্যাকাউন্টে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা হস্তান্তরিত করা হয়েছে। মহামারীর সময় দরিদ্র মহিলা সুফলভোগীদের 'উজ্জ্বলা' কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে ১৪ কোটি গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ করা হয়েছে।
সরকারের জনকল্যাণমুখী এই পদক্ষেপগুলির ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মজবুত করার ক্ষেত্রে আমার সরকার এক অভাবনীয় নজির স্থাপন করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে এই সহযোগিতা না কেবল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করেছে, সেইসঙ্গে সংবিধানের মর্যাদাকেও বাড়িয়েছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে সক্ষম ও উদার ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার আদর্শের সঙ্গে সাযুজ্য রয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারীর সময় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যখন প্রতিটি দেশ তার নিজের প্রয়োজনীয়তার প্রতি অগ্রাধিকার দিয়েছে তখন আমরা এক আত্মনির্ভর ভারত গঠনের তাৎপর্য আরও বেশি করে উপলব্ধি করেছি।
করোনা মহামারীর সময় ভারত বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা, কারিগরি দক্ষতা ও স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রের জন্য এক অনুকূল বাতাবরণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নিজের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দেশে ২,২০০টির বেশি নমুনা পরীক্ষাগার গড়ে তোলা হয়েছে। হাজার হাজার ভেন্টিলেটর উৎপাদিত হয়েছে। পিপিই কিট ও সহায়ক নমুনা পরীক্ষার সরঞ্জাম তৈরি হয়েছে। এই সমস্ত দিক থেকে ভারত আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছে। এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে ভারত এখন বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযান পরিচালনা করছে। টিকাকরণ অভিযানের আওতায় যে দুটি টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে সেগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত। লক্ষাধিক সংখ্যায় করোনা টিকা তৈরি করে ভারত মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার অঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন দেশকে এই টিকা সরবরাহ করছে।
আমার সরকার গত ছয় বছরে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যে কাজ করেছে, করোনা মহামারীর সময় তার প্রতিফলন ঘটেছে। বিগত বছরগুলিতে কেবলমাত্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকীকরণেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি বরং, রোগ প্রতিকারের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সচেতনতা গড়ে তুলতে রাষ্ট্রীয় পুষ্টি অভিযান, ফিট ইন্ডিয়া অভিযান এবং খেলো ইন্ডিয়া অভিযান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আয়ুর্বেদ এবং যোগের প্রসারে আমার সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার উপকারী প্রভাবগুলি এখন নজরে পড়ছে।
আমার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলশ্রুতি হিসেবে দরিদ্র মানুষ এখন স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার সুফল গ্রহণ করেছেন। এমনকি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে খরচ কমছে। আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় দেশে ১.৫ কোটি মানুষ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নগদ ছাড়াই চিকিৎসার সুবিধা পাচ্ছেন। এই কর্মসূচির ফলে দরিদ্র মানুষের ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হয়েছে। আজ আয়ুষ্মান ভারত যোজনার সুবিধা দেশে ২৪ হাজারের বেশি হাসপাতালে পাওয়া যায়। একইভাবে, প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনঔষধি যোজনার আওতায় সারা দেশে ৭ হাজার জনঔষধি কেন্দ্র থেকে দরিদ্র মানুষ সুলভে গুণগত মানের ওষুধ সংগ্রহ করতে পারছেন। লক্ষ লক্ষ রোগী এই কেন্দ্রগুলি থেকে ওষুধ ক্রয় করছেন এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের বার্ষিক ৩,৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে মানোন্নয়নের পাশাপাশি চিকিৎসা-শিক্ষা ক্ষেত্রেও সমান অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ২০১৪-তে দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল ৩৮৭। এখন এই সংখ্যা বেড়ে ৫৬২ হয়েছে। এমনকি, চিকিৎসা-শিক্ষায় স্নাতকোত্তর এবং স্নাতক পর্যায়ে আসন সংখ্যা গত ছয় বছরে ৫০ হাজারের বেশি বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার আওতায় সরকার এইম্স-এর ধাঁচে ২২টি নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনুমতি দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় চিকিৎসা কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে চিকিৎসা-শিক্ষা ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সংস্কারের সূচনা করেছে। এই কমিশন গঠনের পাশাপাশি, চারটি স্বশাসিত পর্ষদ গড়ে তোলা হচ্ছে। বহু দশক পুরনো ভারতীয় চিকিৎসা কাউন্সিলের পরিবর্তে জাতীয় চিকিৎসা কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছে।
আত্মনির্ভর ভারত অভিযান কেবল ভারতে পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের দিকটিতেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি এমন এক অভিযান যার উদ্দেশ্যই হল প্রত্যেক ভারতীয়র জীবনযাপনের মানোন্নয়ন তথা দেশকে স্বনির্ভর করে তোলা।
আত্মনির্ভর ভারত গঠনের লক্ষ্যে আমাদের উদ্দেশ্যই হল কৃষিক্ষেত্রকেও স্বনির্ভর করে তুলে আরও শক্তিশালী করা। এই লক্ষ্যে সরকার গত ছয় বছরে বীজ বপন থেকে কৃষিজ পণ্যের বিপণন পর্যন্ত একাধিক সংস্কার করেছে। আমার সরকার স্বামীনাথন কমিটির প্রস্তাবগুলি রূপায়ণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং কৃষিজ পণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য উৎপাদন খরচের তুলনায় ১.৫ গুণ বাড়িয়েছে। আজ আমার সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্যই সংগ্রহ করছে না, বরং শস্য সংগ্রহ কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়িয়েছে।
কৃষিসেচ ক্ষেত্রেও উন্নয়নের একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি জলবিন্দুতে আরও বেশি শস্য উৎপাদনের মন্ত্রকে সামনে রেখে সরকার না কেবল পড়ে থাকা কৃষিসেচ প্রকল্পগুলির কাজ শেষ করছে, সেইসঙ্গে কৃষকদের কাছে আধুনিক কৃষিসেচ পদ্ধতি পৌঁছে দিচ্ছে। ২০১৩-১৪-তে কেবল ৪২ লক্ষ হেক্টর জমিতে ক্ষুদ্র কৃষিসেচের ব্যবস্থা ছিল। আজ ক্ষুদ্র কৃষিসেচ ব্যবস্থার আওতায় ৫৬ লক্ষ হেক্টরের বেশি জমিকে নিয়ে আসা হয়েছে।
আমি আপনাদের একথা জানাতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমাদের কৃষকরা তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সরকারের প্রয়াসগুলিকেও আরও ত্বরান্বিত করছে। আজ দেশে খাদ্যশস্যের যোগান রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০০৮-০৯ সালে দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৩৪ মিলিয়ন টন। ২০১৯-২০-তে তা বেড়ে হয়েছে ২৯৬ মিলিয়ন টন। এই একই সময়ে ফলমূল ও শাকসব্জির পরিমাণ ২১৫ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ৩২০ মিলিয়ন টন হয়েছে। অভূতপূর্ব এই সাফল্যের জন্য আমি কৃষকদের অভিনন্দন জানাই।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
কৃষিক্ষেত্রে এখন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ওপর আরও অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসেছে। দেশে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা ১০ কোটির বেশি এবং তাঁদের চাষের জমির পরিমাণ কেবল ১-২ হেক্টর। আমার সরকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই লক্ষ্যে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা সরাসরি হস্তান্তরিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার আওতায় দেশের ছোট কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কৃষকদের ৯০ হাজার কোটি টাকা মেটানো হয়েছে। পরিবর্তে কৃষকদের প্রদেয় কিস্তির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা।
দেশে ক্ষুদ্র কৃষকদের একত্রিত করার লক্ষ্যে ১০ হাজার কৃষক উৎপাদক সংগঠন গড়ে তোলা হচ্ছে। এর ফলে ক্ষুদ্র কৃষকরা আরও উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা পাবেন, অতিরিক্ত ঋণ সহায়তা পাবেন, বিপণনের সুবিধা পাবেন, এমনকি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় বিমার সুবিধাও পাবেন। শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে শস্যের ক্ষতি হলে বিকল্প আয়ের সংস্থানও রয়েছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর সাত মাস আগে সংসদে কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি বিলের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিমেষেই ১০ কোটির বেশি ক্ষুদ্র কৃষকের কাছে পৌঁছে যাবে। ক্ষুদ্র কৃষকদের সুবিধার্থে কৃষিক্ষেত্রের সংস্কারের লক্ষ্যে এই বিলগুলি কার্যকর করার জন্য একাধিক রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময়ে তাদের সমর্থন জানিয়েছিল। গত দুই দশক ধরে দেশে কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে বহু আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এমনকি, সংসদের আলোচনাতেও বিভিন্ন পর্যায়ে কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সদস্যরা তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। বর্তমানে সর্বোচ্চ আদালত এই তিনটি বিল কার্যকর করার ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আমার সরকার সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানায় এবং মেনে চলতেও বাধ্য।
আমার সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সাংবিধানিক পবিত্রতা তুলে ধরতে সর্বদাই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। আমার সরকার সর্বদাই মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান দিয়েছে এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছে। অবশ্য, সাধারণতন্ত্র দিবসের দিন জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। সংবিধান যখন আমাদের মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে তখন এটা আশা করাই যায় যে আমরাও সম-আন্তরিকতা নিয়ে আইনের শাসন মেনে চলব।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
কৃষিক্ষেত্রে মুনাফার হার বাড়াতে আমার সরকার আধুনিক কৃষি পরিকাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এই লক্ষ্যে সরকার ১ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি পরিকাঠামো তহবিল গঠন করেছে। ভারতীয় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের নতুন বাজারের সুবিধা আরও বেশি পৌঁছে দিতে সরকার কিষাণ রেল পরিষেবা চালু করেছে। প্রকৃতপক্ষে এই রেল পরিষেবা ভ্রাম্যমান হিমঘরের মতো। এখনও পর্যন্ত ১০০টির বেশি কিষাণ রেল পরিষেবার মাধ্যমে ৩৮ হাজার টনের বেশি খাদ্যশস্য, ফলমূল ও শাকসব্জি দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
কৃষকদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে আমার সরকার গবাদি পশুপালন ক্ষেত্রে উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, দেশে গবাদি পশুর সংখ্যা গত পাঁচ বছরে বার্ষিক ৮.২ শতাংশ হারে বেড়েছে। সরকার ডেয়ারি ক্ষেত্রে মৌলিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে এবং বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রাণীসম্পদ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছে।
আমার সরকার কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা গবাদি পশুপালন ও মৎস্যচাষ ক্ষেত্রেও সম্প্রসারিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রটিতে আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
কৃষকদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার 'অন্নদাতা' থেকে 'উর্জাদাতা' নামে একটি কর্মসূচির সূচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী কুসুম যোজনার আওতায় কৃষকদের ২০ লক্ষ সৌরবিদ্যুৎ বাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি সরকার আখ, ধান ও ভুট্টা থেকে ইথানল উৎপাদনে উৎসাহিত করছে। সরকারের সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার ফলেই গত ছয় বছরে বার্ষিক ইথানল উৎপাদনের পরিমাণ ৩৮ কোটি লিটার থেকে বেড়ে ১৯০ কোটি লিটার হয়েছে। এ বছর ইথানল উৎপাদনের পরিমাণ ৩২০ কোটি লিটারে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
পূজনীয় বাপু আত্মনির্ভর 'আদর্শ গ্রাম' গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাপু'র এই আদর্শকে সর্বাগ্রে রেখে আমার সরকার গ্রামগুলির বহুমাত্রিক উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। গ্রামবাসী মানুষের জীবনযাপনের মানোন্নয়নে আমার সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই অগ্রাধিকারের প্রতিফলন হিসেবে ২০১৪ থেকে এখনও পর্যন্ত দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য ২ কোটি বাড়ি নির্মিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে ২০২২-এর মধ্যে প্রত্যেক দরিদ্র মানুষের জন্য পাকা বাড়ির বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
‘স্বামীত্ব' কর্মসূচি শুরু করে আমার সরকার গ্রামবাসীদেরকে তাঁদের সম্পত্তির আইনি অধিকার সুনিশ্চিত করছে। সম্পত্তির মালিকানার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীরা এখন সহজেই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ সহায়তা নিতে পারছেন এবং সম্পত্তি বন্ধক রেখে আবাসন ঋণ সংগ্রহ করছেন।
বাবা সাহেব আম্বেদকর কেবল ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম মুখ্য স্থপতিই ছিলেন না, বরং দেশে জলনীতির উন্নয়নের দিশা দেখিয়েছিলেন। ১৯৪৫-এর ৮ নভেম্বর কটকে এক সম্মেলনে বাবা সাহেব আম্বেদকর বলেছিলেন, "জলই সম্পদ। জল সাধারণ মানুষের সম্পদ হওয়ার কারণে এবং জলের বন্টন অনিশ্চিত হওয়ার দরুণ সঠিক পদক্ষেপ হল প্রকৃতির প্রতি বিরূপাচরণ না করে জল সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া।" বাবা সাহেবের এই অনুপ্রেরণা থেকে উৎসাহিত হয়ে আমার সরকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী 'জল জীবন মিশন' রূপায়ণে কাজ করে চলেছে। এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি পরিবারে জল সরবরাহের পাশাপাশি জলের সংরক্ষণেও যথাযথ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই কর্মসূচির মাধ্যমে ৩ কোটি পরিবারকে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
একবিংশ শতাব্দীর চাহিদাগুলিকে বিবেচনায় রেখে এবং আমাদের গ্রামগুলিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে আমার সরকার গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণে প্রশংসনীয় কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় গ্রামাঞ্চলে ৬.৪২ লক্ষ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কর্মসূচির তৃতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন জনবসতি, বিদ্যালয়, বাজার ও হাসপাতালগুলির সঙ্গে গ্রামীণ এলাকার যোগাযোগ স্থাপনে ১.২৫ লক্ষ কিলোমিটার সংযোগকারী সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও আমার সরকার মিশন মোড ভিত্তিতে দেশে ৬ লক্ষের বেশি গ্রামকে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে যুক্ত করতে চলেছে। আমাদের ক্ষুদ্র শিল্প, কুটীর শিল্প এবং মাঝারি শিল্প গ্রামে ও ছোট শহরে ছড়িয়ে রয়েছে। এমনকি, এই শিল্পগুলি আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ভারতকে আত্মনির্ভর করে তুলতে এই ক্ষুদ্র শিল্পগুলির প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশই এই শিল্পগুলির উৎপাদিত সামগ্রী। তাই, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্রের ভূমিকা আরও সুবিন্যস্ত করতে আমার সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
সরকারি সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্রগুলির উৎপাদিত সামগ্রীর অংশ বাড়াতে সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এই সমস্ত পদক্ষেপের মধ্যে ৩ লক্ষ কোটি টাকার আপৎকালীন ঋণ সহায়তা নিশ্চয়তা কর্মসূচি, আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলির জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল এবং লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য তহবিল ঘাটতিতে তহবিল সংস্থানের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
দেশে প্রতিটি শ্রেণীর মানুষের কাছে শিল্পোদ্যোগের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে আমার সরকারের লাগাতার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। 'হুনার হাট' এবং 'উস্তাদ'-এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ হস্তশিল্পীর দক্ষতার বৃদ্ধি ঘটিয়ে পারদর্শীই করে তোলা হচ্ছে না, সেইসঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এমনকি এই কর্মসূচির মাধ্যমে মহিলা হস্তশিল্পীরাও লাভবান হচ্ছে।
এক আত্মনির্ভর ভারত গঠনে মহিলা শিল্পোদ্যোগীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই লক্ষ্যে আমার সরকার মহিলাদের স্বনিযুক্তির নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 'মুদ্রা' কর্মসূচির আওতায় এখনও পর্যন্ত ২৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই মহিলা শিল্পোদ্যোগী। 'দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা - রাষ্ট্রীয় গ্রামীণ আজীবিকা মিশন'-এর আওতায় ৭ কোটির বেশি মহিলা শিল্পোদ্যোগী প্রায় ৬৬ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সুবিস্তৃত নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছেন। এই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে গত ছয় বছরে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
গ্রামাঞ্চলে কর্মরত মহিলাদের স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে সরকার 'সুবিধা' কর্মসূচি রূপায়ণ করছে। এই কর্মসূচির আওতায় ন্যূনতম মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করা হচ্ছে, যার প্রতিটির দাম ১ টাকা। রাষ্ট্রীয় পুষ্টি অভিযানের মতো একাধিক উদ্যোগের মাধ্যমে আমার সরকার নবজাতক ও প্রসূতি মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরন্তর কাজ করে চলেছে। সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে মাতৃত্বকালীন মৃত্যু হার ২০১৪-তে প্রতি লক্ষে ১৩০ থেকে কমে এখন ১১৩ হয়েছে। একইভাবে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার এই প্রথম কমে ৩৬ হয়েছে, যা বিশ্ব গড় হার ৩৯-এর তুলনায় কম।
মহিলাদের সমান অংশগ্রহণের বিষয়টি সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও আমার সরকার সমান অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই লক্ষ্যে সরকার আমাদের বোন ও কন্যাদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক নতুন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। আমার সরকার ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধ শাখায় মহিলাদের নিয়োগে অনুমতি দিয়েছে। এমনকি এই প্রথমবার সেনা-পুলিশেও মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি সুনিশ্চিত করা হয়েছে। খোলামুখ খনিগুলিতে নৈশ শিফটেও মহিলাদের কাজে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের সুরক্ষার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে ওয়ান-স্টপ সেন্টার, অপরাধ সংক্রান্ত জাতীয় স্তরের তথ্যভাণ্ডার, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দ্রুত সহায়তা এবং ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গড়ে তোলার মতো একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বব্যাপী চাহিদা ও চ্যালেঞ্জগুলিকে বিবেচনায় রেখে সরকার জাতীয় শিক্ষানীতির কথা ঘোষণা করেছে। এই নীতিতে ছাত্রছাত্রীদেরকেও কোনও একটি কোর্সে অধ্যয়নের মাঝপথেই সাবজেক্ট বা পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় মানোন্নয়নের পাশাপাশি সরকার চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও সরল ও সুবিন্যস্ত করছে। ইতিমধ্যেই গ্রুপ 'সি' এবং গ্রুপ 'ডি' পদগুলিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকার প্রথার অবসান হয়েছে। একাধিক পরীক্ষার পরিবর্তে জাতীয় স্তরে একক পরীক্ষার জন্য সরকার জাতীয় নিয়োগ সংস্থা গঠন করেছে।
‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস'-এর মন্ত্রকে অনুসরণ করে আমার সরকার সমাজের সব স্তরে, সব শ্রেণীর উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ৭০০টি ওয়েবসাইটকে দিব্যাঙ্গদের সুবিধা-বান্ধব করে তোলা হয়েছে। একইভাবে, রূপান্তরকামীদের সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানে রূপান্তরকামী ব্যক্তি (অধিকার সুরক্ষা) আইন কার্যকর হয়েছে। উন্নয়নের যাত্রাপথে পিছিয়ে যাওয়া জেলাগুলিকে উন্নয়নের গতির সঙ্গে সামিল করতে আমার সরকার ১১২টি উন্নয়নে আগ্রহী জেলায় বিশেষ কর্মসূচি রূপায়ণ করছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
করোনা মহামারীর সময় দু'গজের দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি সরকার ডিজিটাল ইন্ডিয়ার প্রসারেও অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গত ডিসেম্বরে ইউপিআই ব্যবস্থার মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। 'উমঙ্গ' অ্যাপের সাহায্যে কোটি কোটি নাগরিক ২ হাজারের বেশি সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন। ৩.৫ লক্ষের বেশি অভিন্ন পরিষেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবার সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের মানুষের যোগসূত্র গড়ে তোলা হয়েছে।
জন ধন অ্যাকাউন্ট, আধার এবং মোবাইল – এই ত্রিমুখী ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। এমনকি এর ফলে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা বেহাত হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবার ডিজিটালকরণে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
আমাদের সম্পূর্ণ নিজস্ব দিক নির্দেশক কৃত্রিম উপগ্রহ প্রযুক্তি 'নাবিক' দেশের মর্যাদা আরও বাড়াচ্ছে। এর ফলে, হাজার হাজার মৎস্যজীবী লাভবান হচ্ছেন।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, আমরা যখন আমাদের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছি ঠিক তখনই একটি নতুন সংসদ ভবন গড়ে তোলার কাজও শুরু হয়েছে। নতুন এই সংসদ ভবনে প্রত্যেক সদস্যই তাঁদের কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে আরও বেশি সুবিধা পাবেন।
মনুষ্য হস্তক্ষেপবিহীন কর মূল্যায়ন ও আপিল ব্যবস্থার পাশাপাশি কোম্পানি আইনে একাধিক সংশোধন করা হয়েছে যেখানে বিভিন্ন অভিযোগকে ফৌজদারি তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। আমার সরকার ২৯টি কেন্দ্রীয় আইন একত্রিত করে চারটি শ্রমবিধি চালু করেছে। শ্রম আইনে এই সংস্কারের ফলে শ্রমিক কল্যাণ ক্ষেত্রের আরও সম্প্রসারণ ঘটবে, শ্রমিকদের সময়মতো মজুরি দেওয়া সম্ভব হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এই প্রথমবার দেশে ১০টি উৎপাদন ক্ষেত্রে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার উৎপাদন সংযুক্ত উৎসাহ ভাতা কর্মসূচি রূপায়ণ করা হচ্ছে। বৈদ্যুতিন সাজসরঞ্জাম উৎপাদন ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই এই কর্মসূচির সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
আমার সরকার সাধারণ মানুষকে দেশীয় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। আজ 'ভোকাল ফর লোকাল' দেশে জন-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকার লাগাতার প্রয়াস নিচ্ছে। এই লক্ষ্যে রাজ্যগুলির মধ্যে এক সুস্থ প্রতিযোগিতার প্রসারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। করোনা মহামারীর মতো জটিল সময়েও ভারত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে থেকেছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ভারতে রেকর্ড ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি হয়েছে।
আমার সরকার এক নতুন ও আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণে অগ্রাধিকার দেয়। এই লক্ষ্যে চেন্নাই থেকে পোর্ট ব্লেয়ার পর্যন্ত সাবমেরিন অপটিক্যাল ফাইবার কেবল বসানো হয়েছে। অটল টানেল তৈরি করা হয়েছে এবং চারধাম সড়ক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিছুদিন আগেই পূর্বাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের কয়েকটি শাখা জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে। এ ধরনের করিডর চালু হলে পরিবহণ ক্ষেত্রে অযাচিত বিলম্ব এড়ানো যাবে।
দেশের পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণে আমার সরকার জাতীয় পরিকাঠামো পাইপলাইন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের আওতায় ১১০ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল সংস্থান করা হয়েছে। ভারতমালা পরিযোজনার আওতায় ছয়টি নতুন এক্সপ্রেসওয়ে এবং ১৮টি নতুন অ্যাক্সেস কন্ট্রোলড করিডর নির্মাণের কাজ চলছে। গুজরাটে হাজিরা থেকে ঘোঘা পর্যন্ত রো-প্যাক্স ফেরি পরিষেবার সূচনা হয়েছে। সবরমতী নদীতে সি-প্লেন পরিষেবা চালু হয়েছে। কেভাডিয়ায় বিশ্বের বৃহত্তম সর্দার প্যাটেলের মূর্তি এখন দেশের একাধিক শহরের সঙ্গে ট্রেনপথে যুক্ত হয়েছে।
দেশকে গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত করতে কয়েকদিন আগেই কোচি-ম্যাঙ্গালুরু গ্যাস পাইপলাইন জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে। 'উর্জা গঙ্গা' কর্মসূচির আওতায় ধোবি-দুর্গাপুর গ্যাস পাইপলাইন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এই পাইপলাইন পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত যাবে এবং রাজ্যটিতে একাধিক শিল্পে জ্বালানির চাহিদা মেটাবে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
আমার সরকার শহরাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়টিকে সুযোগ হিসেবে গণ্য করে থাকে। এই লক্ষ্যে শহরাঞ্চলীয় পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শহরে দরিদ্র মানুষের জন্য ১ কোটি গৃহ মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি গৃহ নির্মিত হয়েছে। সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে শহরাঞ্চলীয় পরিকাঠামোর বিষয়টিও সামিল করেছে। আজ দেশের ২৭টি শহরে মেট্রো রেল পরিষেবা চালু হয়েছে। কিছুদিন আগেই দিল্লি মেট্রোর একটি রুটে চালকবিহীন মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে।
আমার সরকার পূর্ব ভারতের সামগ্রিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির কাছে ব্রহ্মপুত্র নদ 'জীবনরেখা'। তাই, জীবনরেখারূপী এই নদকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি করে তুলতে একাধিক জলপথ পরিবহণ পরিষেবা গড়ে তোলার কাজ চলছে।
ব্রু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের কাজ শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ উপায়ে সম্পন্ন হচ্ছে। একইভাবে, ঐতিহাসিক বোড়ো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি সাক্ষরের পর বোড়ো আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন সফলভাবে শেষ হয়েছে।
আমার সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব ও একতার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া শক্তিগুলি দমনে অঙ্গীকারবদ্ধ। একদিকে যেমন হিংসা অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে হিংসায় মদতদানকারী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে, নকশাল হিংসার ঘটনা লক্ষ্যণীয় হারে কমে এসেছে।
আমার সরকারের উন্নয়নমুখী নীতিগুলি জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ সাদরে সমর্থন করেছেন। কয়েকদিন আগেই জম্মু ও কাশ্মীরে স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার জেলা পরিষদের নির্বাচন সফলভাবে শেষ হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য কর্মসূচি রূপায়ণের পর জম্মু ও কাশ্মীরের প্রতিটি পরিবার নগদবিহীন ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসার সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন। জম্মুতে কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের একটি শাখা গড়ে তোলা হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর লাদাখ স্বশাসিত পার্বত্য পরিষদের নির্বাচন কয়েক মাস আগেই সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়েছে। এখন লাদাখের মানুষ নিজেদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত আরও দ্রুততার সঙ্গে নিতে পারবেন।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
করোনা ভাইরাস মহামারীর সময় সমগ্র দেশ যখন সঙ্কটের মুখোমুখি তখন সীমান্ত অঞ্চলে দেশের সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে একাধিক অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শান্তি বিঘ্নিত করা অপচেষ্টা হয়েছে। অবশ্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এই অপচেষ্টাগুলির বিরুদ্ধে যথোচিত জবাব দিয়েছে এবং সীমান্তে যাবতীয় কু-অভিসন্ধি ব্যর্থ করে দিয়েছে। এই সময় আমাদের সেনা জওয়ানরা যে সংযম, সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। গত জুনে গালওয়ান উপত্যকায় দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের ২০ জন জওয়ান জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাই দেশের প্রতিটি নাগরিক শহীদ এই জওয়ানদের প্রতি সশ্রদ্ধ চিত্তে কৃতজ্ঞ।
আমার সরকার দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় সদা সতর্ক এবং অঙ্গীকারবদ্ধ। ভারতের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে ভারতকে যে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করতে হবে তা বিবেচনায় রেখেই আমার সরকার সেনাবাহিনীর অভিযান প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই লক্ষ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে একাধিক আধুনিক সমরাস্ত্র সামিল করা হয়েছে। কয়েকদিন আগেই সরকার ৪৮ হাজার কোটি টাকার ৮৩টি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত তেজস যুদ্ধবিমান সংগ্রহের জন্য হ্যাল-কে বরাত দিয়েছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্পেস প্রোমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টার – ইন-স্পেস মহাকাশ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারসাধনের কাজ আরও ত্বরান্বিত করবে। আমরা অত্যন্ত গর্বিত যে ইসরোর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা তৃতীয় চন্দ্রযান, গগনযান এবং ছোট মাপের উপগ্রহ উৎক্ষেপণকারী প্রযুক্তির উদ্ভাবনে কাজ করে চলেছেন। মহাকাশ ক্ষেত্রে অগ্রগতির লক্ষ্যে এই পদক্ষেপগুলির পাশাপাশি আমার সরকার পরিবেশের সুরক্ষাতেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই লক্ষ্যে সরকার ২০৩০-এর মধ্যে কার্বন গ্যাস নিঃসরণ জিডিপি-র ৩৩ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্যারিস চুক্তি কার্যকর করার দিক থেকে ভারত অগ্রণী দেশগুলির একটি হয়ে উঠেছে।
কচ্ছ মরু প্রান্তরে বিশ্বের বৃহত্তম হাইব্রিড পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি পার্ক গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। ভারতের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা গত ছয় বছরে ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ১৩ গুণ। বর্তমানে দেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের এক-চতুর্থাংশই পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
কোভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও ভারত অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে তার যোগাযোগ ও সম্পর্ক মজবুত করেছে। এই সময় ভারত একাধিক শিখর সম্মেলন, বহুস্তরীয় সম্মেলন ও সরকারি পর্যায়ে বৈঠক আয়োজন করেছে। অষ্টমবার, ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে এ বছর যোগ দিয়েছে। এছাড়াও ভারত ২০২১ সালের জন্য ব্রিকস-এর সভাপতি পদে দায়িত্ব নিয়েছে।
এ বছর আমরা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছি। এই জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য আমার সরকার একটি উচ্চস্তরীয় কমিটি গঠন করেছে। এমনকি সরকার সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মতিথি ২৩ জানুয়ারিকে 'পরাক্রম দিবস' হিসেবে উদযাপনের কথা ঘোষণা করেছে। আমরা যথাযথ শ্রদ্ধার সঙ্গে গুরু তেগ বাহাদুরের ৪০০তম প্রকাশ পর্ব উদযাপন করব। এই অনুষ্ঠানগুলি উদযাপনের পাশাপাশি, ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ বছর থেকে 'অম্রুত মহোৎসব’-এর সূচনা হয়েছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা প্রত্যাহারের পর জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষকে একাধিক ক্ষেত্রে আরও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাশ হয়েছে। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ গড়ে তোলা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীগুলিতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়দানের পর রাম মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে ভারত লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি করেছে। বিশ্ব পর্যটন সূচকে ভারত ৬৫তম স্থান থেকে ৩৪তম স্থানে উঠে এসেছে। ভারত এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল উৎপাদক দেশ। রিয়েল এস্টেট রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আইনের আওতায় রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি বা রেরা গঠন করা হয়েছে। আমার সরকার ১,৫০০-র বেশি অকেজো আইন বাতিল করেছে। নিখরচায় ২.৫ কোটি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে যাতে প্রতিটি দরিদ্র মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া যায়। সুলভ মূল্যে ৩৬ কোটির বেশি এলইডি বাতি বিতরণ করা হয়েছে এবং এর ফলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের বিদ্যুৎ বিল হ্রাস পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনার সঙ্গে প্রতি মাসে ১ টাকা প্রিমিয়াম হিসেবে ২১ কোটির বেশি দরিদ্র মানুষ যুক্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনার আওতায় প্রায় ৯.৫ কোটি মানুষের বিমা সুনিশ্চিত হয়েছে। মিশন ইন্দ্রধনুষ কর্মসূচির আওতায় ৩.৫ কোটির বেশি শিশুর টিকাকরণ হয়েছে। রেশন কার্ডগুলির ১০০ শতাংশ ডিজিটাইজেশন হয়েছে এবং ৯০ শতাংশ রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্ত হয়েছে। উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় নিখরচায় ৮ কোটির বেশি গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত মিশনের আওতায় ১০ কোটির বেশি শৌচালয় গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মান ধন যোজনার সূচনা হয়েছে যাতে গৃহের পরিচারিকা, চালক প্রভৃতি শ্রেণীর দরিদ্র মানুষ নির্দিষ্ট বয়সের পর পেনশন পেতে পারেন। ৪১ কোটির বেশি জন ধন অ্যাকাউন্ট চালু করা হয়েছে। এগুলি কেবল পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি সংখ্যা একটি জীবন্ত কাহিনীর পরিচায়ক। সংসদের বহু সদস্য একই ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। এই সমস্ত বিষয়গুলিকে বিবেচনায় রেখেই সরকার সাধারণ মানুষের ওপর থেকে বোঝা খানিকটা লাঘব করতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আমার সরকার গত ছয় বছর ধরে সার্বিক কল্যাণে নিরন্তর যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে তার জন্য আমি গর্ববোধ করছি এবং আমার সরকার সঠিক পথেই সততার সঙ্গে দায়বদ্ধতা বজায় রেখে এই সিদ্ধান্তগুলি রূপায়ণ করে চলেছে।
মাননীয় সদস্য / সদস্যাগণ,
গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়দা জ্যোতিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর এক দেশাত্মবোধক গানে লিখেছিলেন -
“চল রে চল সবে ভারত সন্তান,
মাতৃভূমি করে আহ্বান,
বীরদর্পে, পৌরুষ গর্বে,
সাধ রে সাধ সবে দেশেরও কল্যাণ"।
তাই আসুন, আমরা সমস্ত নাগরিক একজোট হয়ে এগিয়ে চলি, দেশ গঠনে আমাদের কর্তব্য ও অবদান রাখি।
আসুন আমরা আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলি।
আপনাদের সকলকে আমার শুভেচ্ছা।
জয় হিন্দ!
***
CG/SB
(Release ID: 1693486)
Visitor Counter : 320