প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

জয়সলমীরের লঙ্গেওয়ালায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলি উদযাপনকালে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 14 NOV 2020 4:14PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৪ নভেম্বর, ২০২০

 

ভারতমাতার সেবা এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ২৪ ঘন্টা সতর্ক প্রহরায় থাকা সমস্ত বীরদের আরেকবার আমার পক্ষ থেকে, ১৩০ কোটি দেশবাসীর পক্ষ থেকে দীপাবলির অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দেশের সীমান্ত হোক, আকাশ হোক কিংবা সমুদ্রের অতলান্ত, তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গ হোক কিংবা ঘন অরণ্য, রাষ্ট্র সুরক্ষায় নিবেদিত প্রাণ বীর যুবক-যুবতীরা আমাদের সেনাবাহিনী, বিএসএফ, আইটিবিপি, সিআইএসএফ, প্রত্যেক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, আমাদের পুলিশ জওয়ানদের প্রত্যেককে আমি আজ দীপাবলির এই পবিত্র উৎসব উপলক্ষে সাদর প্রণাম জানাই।

 

আপনারা আছেন বলেই দেশ সুরক্ষিত আছে, দেশের জনগণের আনন্দ আছে, দেশের জনগণের উৎসব আছে। আমি আজ আপনাদের কাছে প্রত্যেক ভারতবাসীর শুভকামনা নিয়ে এসেছি। আপনাদের জন্য কোটি কোটি দেশবাসীর ভালোবাসা নিয়ে এসেছি। প্রত্যেক গুরুজনের আশীর্বাদ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি। আমি আজ সেই বীর মাতা, ভগিনী এবং শিশুদেরকেও হৃদয় থেকে দীপাবলির শুভকামনা জানাই, তাঁদের ত্যাগকে প্রণাম জানাই যাঁরা তাঁদের ছেলে হোক কিংবা মেয়েকে সেনাবাহিনীতে পাঠিয়েছে, যাঁদের সন্তানসন্ততিরা আজ উৎসবের দিনেও সীমান্তে মোতায়েন, সেই পরিবারগুলির সমস্ত সদস্যরাও অভিনন্দনযোগ্য। আরেকবার দু'হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে আমার সঙ্গে বলুন, ভারতমাতা কি জয়,

ভারতমাতা কি জয়,

ভারতমাতা কি জয়।

 

বন্ধুগণ,

 

আমার মনে আছে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবার ২০১৪ সালে দীপাবলির উৎসবে আমি সিয়াচেন গিয়েছিলাম। সেখানকার জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলি পালন করার জন্য যখন গিয়েছিলাম তখন অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। উৎসবের দিনগুলিতে প্রধানমন্ত্রী এটা কী করছেন? কিন্তু এখন তো আপনারাও আমার মনোভাব জানেন। দীপাবলির উৎসবেও যদি আপনজনদের কাছে না যাই, আপনজনদের থেকে দূরে থাকি, তাহলে কেমন করে চলবে! আর সেজন্য আজও দীপাবলির দিনে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। আপনজনদের মাঝে এসেছি। আপনারা তুষারাবৃত পাহাড়ে মোতায়েন থাকুন কিংবা ঊষর মরুভূমিতে, আমার দীপাবলি সব সময় আপনাদের মধ্যে থেকেই কাটে। আমি আপনাদের চোখমুখে উদ্দীপনা দেখতে পাই। আপনাদের চেহারায় আনন্দ দেখতে পাই। এই দৃশ্য দেখে আমার আনন্দ অনেকগুণ বেড়ে যায়। এই আনন্দের জন্য দেশবাসীর উৎসবের উদ্দীপনা আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আজ আমি আরেকবার এই মরুভূমিতে আপনাদের মাঝে এসেছি। আরেকটি কথা, আপনাদের জন্য এই উৎসব উপলক্ষে আমি সামান্য মিষ্টি নিয়ে এসেছি। কিন্তু এই মিষ্টি আমি শুধুই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়ে আসিনি, এই মিষ্টি আমার নয়, সমস্ত দেশবাসীর ভালোবাসা ও আপনত্বের স্বাদ আমার সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এই মিষ্টিগুলিতে আপনারা দেশের প্রত্যেক মায়ের হাতের মিষ্টি স্পর্শ অনুভব করতে পারবেন। এই মিষ্টিতে আপনারা প্রত্যেকের ভাই, বোন এবং বাবার আশীর্বাদ অনুভব করতে পারবেন। আর সেজন্য আমি আপনাদের মাঝে একা আসি না, আমি নিজের সঙ্গে আপনাদের প্রতি দেশবাসীর ভালোবাসা, স্নেহ ও আশীর্বাদ নিয়ে আসি। আর বন্ধুগণ,

 

আজ এখানে যখন লঙ্গেওয়ালার এই সীমান্ত চৌকিতে পৌঁছেছি, গোটা দেশের নজর এখন আপনাদের ওপর। ভারতমাতার আদরের বীরাঙ্গনারা, আমার দেশের গৌরব বৃদ্ধিকারী এই মেয়েরা আমার সামনে বসে আছেন। তাঁদেরকে দেশবাসী দেখছেন। আমার মনে হয় দেশের সীমান্তে কোনও চৌকির নাম যদি দেশের মানুষ সবচাইতে বেশি জানেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জানেন, তাহলে সেই পোস্টের নাম হল লঙ্গেওয়ালা পোস্ট। এই পোস্টের নাম প্রত্যেক ভারতবাসীর মুখে মুখে ফেরে। এটা এমন একটি পোস্ট যেখানে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি অতিক্রম করে, আবার শীতে শূণ্যের নিচে চলে যায়। মে-জুন মাসে এখানে এত ধূলোঝড় হয় যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ পরস্পরের চেহারা দেখতে পায় না। এই পোস্টে আপনাদের পূর্বজ সেনা বন্ধুরা এমন শৌর্যগাঁথা লিখে গেছেন যা আজও প্রত্যেক ভারতবাসীর হৃদয়কে উদ্দীপনায় ভরে দেয়। লঙ্গেওয়ালার নাম উচ্চারণ করতেই হৃদয়ের মনমন্দির থেকে এই জয়ধ্বনি উঠে আসে, "জো বলে সো নিহাল, সৎ শ্রী অকাল", এই জয়ধ্বনি প্রত্যেকের কানে গুঞ্জরিত হতে থাকে।

 

বন্ধুগণ,

 

যখনই সৈন্য দক্ষতার ইতিহাস নিয়ে কেউ পড়াশোনা করেন, যখনই ভারতীয় সৈন্যদের পরাক্রমের কথা ওঠে, তখন এই লঙ্গেওয়ালার যুদ্ধের কথা অবশ্যই স্মরণ করা হয়। এটা সেই সময় ছিল যখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের নির্দোষ নাগরিকদের ওপর অত্যাচার করছিল, জুলুম করছিল, নরসংহার করছিল। মা-বোনেদের অমানুষিক অত্যাচার করছিল। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এই কূকীর্তি, সারা পৃথিবীতে পাকিস্তানের ঘৃণিত চেহারার মুখোশ খুলে দিয়েছিল। ভয়ঙ্কর রূপে বিশ্বের সামনে পাকিস্তান নিন্দিত হচ্ছিল। এইসব কিছু থেকে বিশ্বের নজর সরানোর জন্য পাকিস্তান আমাদের দেশের পশ্চিম সীমান্তে হামলা করে। পাকিস্তান ভেবেছিল ভারতের পশ্চিম সীমান্তে হামলা করে বিশ্বকে ভারত এই করেছে, সেই করেছে বলে কান্না জুড়ে দেব, আর বাংলাদেশের সমস্ত পাপ ধুয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের সৈনিকরা তাদেরকে যে উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন, তাতে পাকিস্তানকে লেজ তুলে পালাতে হয়েছিল।

 

বন্ধুগণ,

 

এখানে এই পোস্টে প্রদর্শিত পরাক্রমের গুঞ্জন, এই গুঞ্জরন শত্রুর মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। তারা জানতেন না যে এখানে তাদের ভারতমাতার শক্তিশালী সন্তানসন্ততিদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। মেজর কুলদীপ সিং চাঁদপুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় বীরেরা অনেক ট্যাঙ্ক ও সাজোয়াঁ বাহিনী সমৃদ্ধ শত্রু সৈনিকদের পরাভূত করে দেয়, তাদের নাস্তানাবুদ করে দেয়। কখনও কখনও আমার মনে হয়, কুলদীপজির বাবা-মা তাঁর নাম অনেক ভাবনা-চিন্তা করেই কুলদীপ রেখেছিলেন। তাঁদের হয়তো মনে হয়েছিল, এই ছেলেটি তাঁদের কুলের দীপক হবে, বংশের প্রদীপ হবে। কিন্তু এই কুলদীপজি তাঁর পরাক্রমের মাধ্যমে সেই নামকে এমন সার্থক করেছেন, এমন সার্থক করেছেন যে তিনি কেবলই কুলদীপ নয়, ভারতের রাষ্ট্রদীপ হয়ে উঠেছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

লঙ্গেওয়ালার সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ ভারতীয় সেনাবাহিনীর শৌর্যের প্রতীক তো বটেই, আমাদের স্থলবাহিনী, বিএসএফ এবং বিমানবাহিনীর অদ্ভূত সংহতিরও প্রতীক। এই লড়াই দেখিয়ে দিয়েছে যে ভারতের সংগঠিত সৈন্য শক্তির সামনে যারাই আসুক না কেন, তারা কোনভাবেই টিঁকে থাকতে পারবেন না। এখন যখন ১৯৭১ সালের যুদ্ধের এবং লঙ্গেওয়ালার যুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি হতে চলেছে, কয়েক সপ্তাহ পরেই আমরা এর ৫০ বছর, এই গৌরবপূর্ণ সোনালী পৃষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব। সেই প্রেক্ষিতে আজ আমার এখানে আসার ইচ্ছে হয়েছে। গোটা দেশ এই বীরেদের বিজয়গাঁথা শুনে নিজেদের গৌরবান্বিত অনুভব করবেন, তাঁদের সাহস বাড়বে, নতুন প্রজন্ম এবং আগামী প্রজন্ম এই পরাক্রম থেকে প্রেরণা নেবেন। লঙ্গেওয়ালা যুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী তাঁদের জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দেবে। এমন বীর সুপুত্রদের স্মৃতির প্রতি রাজস্থানের মাটি থেকে উঠে আসা একজন কবি নারায়ণ সিং ভাটি লিখেছেন, এবং এই গানটি তিনি রাজস্থানের কথ্যভাষায় লিখেছেন। এর মানে হল, আমাদের এই বীর সুপুত্রদের আত্মবলিদানে এই মাটি গর্ববোধ করে, আকাশ গর্ববোধ করে এবং সম্পূর্ণ ইতিহাস গর্ববোধ করে। যতদিন অন্ধকার সরিয়ে সূর্যের আলো এই মাটিকে স্পর্শ করবে, ততদিন আগামী প্রজন্ম এঁদের আত্মবলিদান নিয়ে গর্ববোধ করবে।

 

বন্ধুগণ,

 

হিমালয়ের উত্তুঙ্গ শৃঙ্গগুলিতে, মরুভূমির তপ্ত বালুরাশিতে, ঘন অরণ্যে কিংবা সমুদ্রের অতলান্তে - প্রত্যেক চ্যালেঞ্জে আপনাদের পরাক্রমগাঁথা লেখা রয়েছে। আপনাদের অনেক সাথী আজ এখানে রাজস্থানের ঊষর মরুভূমিতে মোতায়েন, আবার অনেকে হিমালয়ের দুর্গম পোস্টগুলিতে মোতায়েন রয়েছেন। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আপনাদের এই পরাক্রম, আপনাদের এই শৌর্য অতুলনীয়। আপনাদের এই পরাক্রমের ফলে আজ শত্রুরাও এটা বিশ্বাস করে যে ভারতের বীর সেনাবাহিনীর পরাক্রম অতুলনীয়। আপনাদের এই শৌর্যকে প্রণাম জানিয়ে আজ ভারতের ১৩০ কোটি দেশবাসী আপনাদের পেছনে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আজ প্রত্যেক ভারতবাসী তাঁদের সৈনিকদের শক্তি এবং শৌর্য নিয়ে গর্ব করে। তাঁরা আপনাদের অজেয়, অপরাজেয় মনোভাবের জন্য গর্ব করে। বিশ্বের কোনও শক্তি আমাদের বীর জওয়ানদের দেশের সীমান্ত রক্ষা থেকে প্রতিহত করতে পারবে না, কেউ তাঁদের অতিক্রম করে আমাদের দেশের মাটির দিকে কুনজর দিতে পারবে না।

 

বন্ধুগণ,

 

বিশ্বের ইতিহাস আমাদের এটা শেখায়, শুধু সেই রাষ্ট্রই সুরক্ষিত থাকে, সেই রাষ্ট্রই এগিয়ে চলে যাদের আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা থাকে। আজ যদি আমাদের দেশের দিকে তাকান,  এতটা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আগে কোনদিন ছিল না। এই সমীকরণ এত সহজে বদলায়নি। আমরা কখনও ভুলতে পারি না যে সতর্কতাই সুরক্ষার পথ খোলে। সজাগ থাকাই আমাদের সুখ-শান্তির আসল সম্বল। সামর্থ্যই বিজয়ের আত্মবিশ্বাস এনে দেয়। সক্ষমতা থেকেই আসে শান্তির পুরস্কার। ভারত আজ সুরক্ষিত, কারণ ভারত নিজেকে সুরক্ষিত রাখার শক্তি ধারণ করে। ভারতের আসল সম্পদ আপনাদের মতো বীর ও বীরাঙ্গনা সন্তানসন্ততিরা।

 

বন্ধুগণ,

 

যখনই প্রয়োজন হয়েছে ভারত বিশ্বকে দেখিয়েছে যে তার কাছে শক্তিও আছে এবং উপযুক্ত জবাব দেওয়ার রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিও আছে। আমাদের সেনাবাহিনীর শক্তি আজ আমাদের 'নেগোশিয়েটিং পাওয়ার’কে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ক্ষমতা আপনাদের পরাক্রমের ফলে বেড়েছে, আপনাদের সঙ্কল্প শক্তির ফলে বেড়েছে। আজ ভারত সন্ত্রাসবাদীদের এবং সন্ত্রাসে মদতদাতাদের তাদের বাড়িতে ঢুকে মেরে আসে। আজ বিশ্ব এটা জানতে পারছে, বুঝতে পারছে যে দেশ নিজের হিতের জন্য যে কোনও মূল্যে এক বিন্দুও সমঝোতা করার জন্য প্রস্তুত নয়। ভারতের এই অহঙ্কার, এই উচ্চতা আপনাদের শক্তি এবং আপনাদের পরাক্রমের ফলেই গড়ে উঠেছে। আপনারা দেশকে নিরাপদ রেখেছেন সেজন্য আজ ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্পষ্ট ও প্রখরভাবে নিজের বক্তব্য রাখতে পারছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ গোটা বিশ্ব বিস্তারবাদী শক্তিগুলির, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির জন্য অত্যন্ত বিব্রত। এই সাম্রাজ্যবাদ এক ধরনের মানসিক বিকৃতি। এটি অষ্টাদশ শতাব্দীর মনোভাবকে তুলে ধরে। এই মনোভাবের বিরুদ্ধে ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রখর প্রতিবাদ জানাতে সক্ষম হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ ভারত অনেক দ্রুতগতিতে নিজের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে আত্মনির্ভর করে তোলার পথে অনেক দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সম্প্রতি আমাদের সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ১০০টিরও বেশি ভিন্ন ধরনের প্রয়োজনসাধনকারী বিশেষ করে, অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম আর বিদেশ থেকে আমদানি করবে না। ভারতে উৎপন্ন অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জামই কিনবে। এই অস্ত্রশস্ত্র ও আনুষঙ্গিক যুদ্ধ সরঞ্জাম দেশের মধ্যেই উৎপন্ন করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা করা হবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কম কথা নয়। এর জন্য বুকে দম থাকতে হয়, জওয়ানদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস অর্জন করতে হয়। আমি আজ এই সুযোগে ত্যাগ এবং তপস্যার এই পূণ্য ভূমিতে দাঁড়িয়ে আমাদের সেনাবাহিনীর এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলির জন্য সেনা নায়কদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমি জানি, তাঁদের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এত সহজ ছিল না। তবুও আমাদের সেনাবাহিনী আত্মনির্ভর ভারতের পথে একটি অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর এই সিদ্ধান্তে দেশবাসীর কাছে, ১৩০ কোটি ভারতবাসীর কাছেও এই বার্তা চলে গেছে, দূরদুরান্তে চলে গেছে। কী সেই বার্তা? সেই বার্তাটি হল, লোকালের জন্য ভোকাল হতে হবে। সেনাবাহিনীর এই একটি সিদ্ধান্ত ১৩০ কোটি দেশবাসীকে লোকালের জন্য ভোকাল হতে প্রেরণা জুগিয়েছে। আমি আজ দেশের নবীন প্রজন্মের কাছে, দেশের সেনা জওয়ানদের কাছে, দেশের আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের কাছে আমার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানাতে চাই, আপনারা দেখবেন, একের পর এক এই ধরনের সিদ্ধান্তের অনুকূল,  ভারতেই আমাদের দেশের নবীন প্রজন্ম এমন এমন সরঞ্জাম উৎপাদন করবে, এমন এমন জিনিস তৈরি করবে যা আমাদের সেনা জওয়ানদের, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলির জওয়ানদের শক্তি বৃদ্ধি করবে। সম্প্রতি অনেক স্টার্ট-আপ দেশের মধ্যেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রয়োজনসাধনের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নবীন প্রজন্মের এই নতুন স্টার্ট-আপগুলি নিশ্চিতভাবেই দেশকে আত্মনির্ভরতার ক্ষেত্রে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

 

বন্ধুগণ,

 

প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর ভারত, দেশের ক্রমবর্ধমান এই সামর্থ্যের লক্ষ্য হল দেশের প্রতিটি আন্তর্জাতিক সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা। আজ ভারতের রণনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। আজকের ভারত অন্যকে বোঝা এবং বোঝানোর নীতিতে বিশ্বাস করে। কিন্তু যদি কেউ আমাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা করতে চায়, আমাদের সঙ্গে টক্কর নিতে চায়, তাহলে তাদেরকে সেরকমই প্রচণ্ড জবাব দেওয়া হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

দেশের অখণ্ডতা দেশবাসীর ঐক্যের ওপর নির্ভর করে। শান্তি, একতা, সদ্ভাবনা দেশের ভেতর দেশের অখণ্ডতাকে প্রাণশক্তি জোগায়। দেশের সীমান্ত সুরক্ষা নিরাপত্তা বাহিনীগুলির শক্তির ওপর নির্ভর করে। সীমান্তে আমাদের বীর সৈনিকদের সাহস তুঙ্গে রাখার জন্য, তাঁদের মনোবল আকাশচুম্বী রাখার জন্য, তাঁদের প্রতিটি প্রয়োজন মেটানোর কাজকে এখন দেশ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। তাঁদের পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব এখন দেশের। বিগত বছরগুলিতে সৈনিকদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান নিয়েও অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত বছর যখন আমি দ্বিতীয়বার শপথ নিয়েছি, তারপর প্রথম সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শহীদদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা সম্পূর্ণ করার। সেজন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স ফান্ড থেকে তাদের জন্য ছাত্রবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

বিভিন্ন সুবিধার পাশাপাশি, বীরদের সম্মানের জন্য দেশে অভূতপূর্ব প্রয়াস জারি রয়েছে। ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল - জাতীয় সমর স্মারক হোক কিংবা ন্যাশনাল পুলিশ মেমোরিয়াল, এই উভয় স্মারকই দেশের শৌর্যের সর্বোচ্চ প্রতীক হয়ে দেশবাসীকে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে প্রেরণা জোগাচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

 

কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আপনাদের পরাক্রম, আপনাদের টিক ওয়ার্ক দেশকে প্রত্যেক ক্ষেত্রে একইরকম উদ্দীপনা নিয়ে লড়াই করার শিক্ষা দেয়। আজ দেশবাসী এই ভাবনা নিয়েই করোনার মতো মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়ছে। দেশের হাজার হাজার চিকিৎসক, সেবিকা, চিকিৎসা-কর্মী দিন-রাত এক করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশবাসী এই লড়াই আপনাদের মতো ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের থেকে প্রেরণা নিয়েই লড়ছে। এতগুলি মাস ধরে আমাদের দেশবাসী সম্পূর্ণ অনুশাসন পালন করে চলছেন। নিয়মিত মাস্ক পরিধান করে সতর্ক থাকছেন এবং এভাবে নিজেদের ও আপনজনদের জীবন বাঁচাচ্ছেন। কিন্তু আমরা এটাও জানি যে সামান্য মাস্ক পরে থাকতে যদি আমাদের এত সমস্যা হয় তাহলে আপনাদের মতো সেনা জওয়ানদের নিয়মিত সুরক্ষা জ্যাকেট পরে থাকতে না জানি কত কষ্ট হয়! এতকিছু পরে দিনের পর দিন ডিউটি করা কত কঠিন কাজ! আপনাদের এই ত্যাগ থেকে দেশবাসী অনুশাসন শিখছে এবং সেবাধর্ম কিভাবে পালন করতে হয়, তাও শিখছে।

 

বন্ধুগণ,

 

সীমান্তে মোতায়েন থেকে আপনারা যে ত্যাগ ও তপস্যার নিদর্শন তুলে ধরেন তা দেশে একটি আস্থার বাতাবরণ গড়ে তোলে। এই আবহ প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে একটি নতুন আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। এই বিশ্বাস যে সবাই মিলে একজোট হয়ে যে কোনও বড় সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব। আপনাদের থেকে এই প্রেরণা নিয়ে দেশবাসী মহামারীর এই কঠিন সময়ে নিজেদের, প্রত্যেক নাগরিকের জীবন রক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। এতগুলি মাস ধরে দেশ তার ৮০ কোটিরও বেশি দরিদ্র নাগরিকের বিনামূল্যে খাবার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু এর পাশাপাশি, দেশ অর্থনীতিকে আরেকবার গতিশীল করার জন্য পূর্ণ উদ্যমে চেষ্টা করছে। দেশবাসীর এই সাহসের পরিণাম হল, আজ অনেক ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে রেকর্ড পুনরুত্থান এবং বিকাশ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সমস্ত লড়াই, এই সমস্ত সাফল্য – এসব কিছুর কৃতিত্ব আপনাদের মতো সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরায় তটস্থ থাকা সেনা জওয়ানদের থেকে প্রেরণা নিয়েই সম্ভব হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

 

প্রত্যেকবার, প্রত্যেক উৎসবে যখনই আমি আপনাদের মাঝে আসি, যতটা সময় আপনাদের মধ্যে কাটাই, যতটা আপনাদের সুখ-দুঃখে সামিল হই, রাষ্ট্ররক্ষা ও রাষ্ট্রসেবার জন্য আমার সঙ্কল্প ততটাই শক্তিশালী হয়। আমি আপনাদের আরেকবার আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা নিশ্চিন্ত হয়ে নিজেদের কর্তব্য পথে মোতায়েন থাকুন। প্রত্যেক দেশবাসী আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। হ্যাঁ, আজকের দিনে আপনাদের একজন বন্ধুরূপে, একজন সঙ্গী রূপে তিনটি অনুরোধ জানাব আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমার এই অনুরোধগুলি হয়তো আপনাদের জন্য সঙ্কল্পে পরিণত হবে। প্রথমতঃ, প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা করুন, নতুন কিছু ভাবনার চেষ্টা করুন, নতুন অন্বেষণকে জীবনের অংশ করে তুলুন। আমি দেখেছি, এভাবে জীবন কাটানো আমাদের সৈনিকদের সৃষ্টিশীলতা দেশের জন্য অনেক নতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসতে পারে। আপনারা একটু ভাবুন। কিছু না কিছু উদ্ভাবন করুন। দেখুন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলির অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই উদ্ভাবন করুন। যেভাবে আপনারা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করেন, সেক্ষেত্রে যা করলে আপনাদের জীবন সহজ হয়, সেই পথ খুঁজুন। আমার দ্বিতীয় অনুরোধ, যেটি আপনাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, আপনারা যে কোনওভাবেই যোগ ও যোগাসনকে নিজেদের জীবনের অঙ্গ করে তুলুন। আর তৃতীয়তঃ, আমরা সবাই নিজের নিজের মাতৃভাষায় কথা বলি, আমাদের মধ্যে অনেকে হিন্দিতে কথা বলেন, কেউ ইংরেজিতে বলেন। এই ভাষা আমাদের সকলের মধ্যে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু যখন এরকম যৌথ জীবন আমাদের যাপিত করতে হয়, আমার সামনে একটি ক্ষুদ্র ভারত বসে আছে। দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে নবীন সেনারা এখানে রয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন মাতৃভাষায় তাঁরা কথা বলেন। আমি আপনাদের একটি অনুরোধ করি। মাতৃভাষা আপনারা জানেন, হিন্দি জানেন, ইংরেজি জানেন। কিন্তু তাছাড়াও ভারতের অন্য কোনও একটি ভাষা আপনারা ভালোভাবে শেখার চেষ্টা করুন। অবশ্যই শিখুন, তাহলে দেখবেন সেই ভাষা আপনার একটি বড় শক্তি হয়ে উঠবে। একটি নতুন সংস্কৃতির দরজা খুলে যাবে। আপনারা অবশ্যই চেষ্টা করবেন, তাহলে এই ভাষা শিক্ষা আপনাদের মধ্যে একটি নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করবে।

 

বন্ধুগণ,

 

যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা রয়েছেন, আপনাদের এই সাহস রয়েছে, আপনাদের এই ত্যাগ ও তপস্যা রয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ১৩০ কোটি ভারতবাসীর আত্মবিশ্বাসকে কেউ টলাতে পারবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা আছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের দীপাবলির এই আলোকমালা, এই রোশনাই অব্যাহত থাকবে। লঙ্গেওয়ালার এই পরাক্রমী ভূমি থেকে, বীরত্ব এবং সাহসের ভূমি থেকে, ত্যাগ ও তপস্যার ভূমি থেকে আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে এবং দেশবাসীকে দীপাবলির অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে তুলে বলুন – ভারতমাতা কি জয়! ভারতমাতা কি জয়! ভারতমাতা কি জয়!

 

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

***

 

CG/SB/DM



(Release ID: 1672968) Visitor Counter : 781