প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
গুজরাটের কেভাডিয়ায় রাষ্ট্রীয় একতা দিবসের প্যারেডে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
31 OCT 2020 1:54PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৩১ অক্টোবর, ২০২০
আমরা সবাই একটু আগেই লৌহ পুরুষ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বক্তব্যকে প্রসাদরূপে শুনতে পেলাম। আমার কথা বলার আগে আপনাদের সবার মুখে ভারতমাতার জয়ঘোষ শুনতে চাই। আর আপনাদের সবাইকে আমার অনুরোধ, ইউনিফর্ম পরিহিত জওয়ানদেরকেও আমার অনুরোধ, দূরদুরান্তের পাহাড়ে বসে আমার যে আদিবাসী ভাই-বোনেরা এই অনুষ্ঠান দেখছেন, তাঁদেরকেও আমার অনুরোধ যে এক হাত ওপরে তুলে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে সর্দার সাহেবকে স্মরণ করে আমরা সবাই ভারতমাতার জয়জয়কার করব। আমি তিনবার বলব, পুলিশে কর্মরত বীর পুত্র-কন্যাদের নামে - ভারতমাতা কি জয়! করোনার সময়ে সেবারত করোনা ওয়ারিয়র্সদের নামে - ভারতমাতা কি জয়! আত্মনির্ভরতার সঙ্কল্পকে বাস্তবায়িত করতে কর্মরত কোটি কোটি মানুষের নামে - ভারতমাতা কি জয়! আমি বলব, সর্দার প্যাটেল, আপনারা সবাই দু'বার করে বলবেন, অমর রহে! অমর রহে!
সর্দার প্যাটেল - অমর রহে অমর রহে!
সর্দার প্যাটেল - অমর রহে অমর রহে!
সর্দার প্যাটেল - অমর রহে অমর রহে!
সমস্ত দেশবাসীকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিন উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা। দেশের কয়েকশ' দেশীয় রাজ্য রাজরাজদের এক করে দেশের বিবিধতাকে স্বাধীন ভারতের শক্তি করে তুলে সর্দার প্যাটেল ভারতের বর্তমান স্বরূপ গড়ে তুলেছেন।
২০১৪ সাল থেকে আমরা সবাই তাঁর জন্মদিনকে ভারতের ঐক্যের উৎসব রূপে পালন করা শুরু করেছি। এই ছয় বছরে দেশের ছোট ছোট গ্রাম থেকে শুরু করে মহানগর পর্যন্ত, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সবাই 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর সঙ্কল্পকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করে গেছেন। আজ আরেকবার এই দেশ ভারতমাতার এই মহান সুপুত্রকে, দেশের লৌহ পুরুষকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছে। আজ আরেকবার এই দেশ সর্দার প্যাটেলের এই গগণচুম্বী মূর্তির সান্নিধ্যে, তার ছায়ায়, দেশের প্রগতির মহাযজ্ঞে সামিল হওয়ার সঙ্কল্প পুনরুচ্চারণ করছে। বন্ধুগণ, আমি গতকাল দুপুরেই কেভাডিয়া পৌঁছে গিয়েছিলাম। আর কেভাডিয়া পৌঁছনোর পর গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত এখানে এই কেভাডিয়ার জঙ্গল সাফারি পার্ক, একতা মল, চিলড্রেন নিউট্রিশন পার্ক এবং আরোগ্য বন-এর মতো অনেক নতুন নতুন গন্তব্যের উদ্বোধন করেছি। অত্যন্ত কম সময়ে সর্দার সরোবর বাঁধের সঙ্গে যুক্ত এই অসাধারণ নির্মাণ 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর ভাবনার, নতুন ভারতের প্রগতির তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। আগামী দিনগুলিতে মা নর্মদার তটে শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে এই জায়গাটি নিজের আকর্ষণ বাড়িয়েই যাবে। সেই লক্ষণগুলিও আজ স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান।
আজ এখানে সর্দার সরোবর থেকে সবরমতী রিভার ফ্রন্ট পর্যন্ত সি-প্লেন পরিষেবারও উদ্বোধন করা হচ্ছে। এটি দেশের প্রথম এবং একটি অতুলনীয় সি-প্লেন পরিষেবা। সর্দার সাহেবের দর্শনের জন্য, স্ট্যাচু অফ ইউনিটি দেখার জন্য দেশবাসীর সামনে এখন এই সি-প্লেন পরিষেবার বিকল্পও প্রস্তুত। এই সমস্ত প্রচেষ্টা এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পকেও অনেক বেশি উন্নত করবে। এর মাধ্যমে এখানকার জনগণের, আমার প্রিয় আদিবাসী ভাই-বোনেদের কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ খুলে যাবে। এই সাফল্যের জন্যও আমি গুজরাট সরকারকে, গুজরাটের সমস্ত নাগরিককে এবং ভারতের ১৩০ কোটি নাগরিককে শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
গতকাল যখন সারাদিন ধরে আমি এই এলাকায় ঘুরছিলাম, তখন এখানকার গাইড রূপে এই চারপাশের গ্রামের আমাদের মেয়েরা যে প্রত্যয়ের সঙ্গে, যে গভীরতার সঙ্গে, সমস্ত প্রশ্নের জবাব দ্রুততার সঙ্গে দিয়ে আমাকে গাইড করছিলেন, তাঁদের কথা আজ উল্লেখ না করে পারছি না। আমি মন থেকে বলছি, সত্যি বলছি, তাঁদের এই দক্ষতা দেখে আমার মাথা গর্বে উঁচু হয়ে গেছে। আমি দেশের গ্রামীণ আদিবাসী কন্যাদের এই সামর্থ্য, এই ক্ষমতা দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছি। আমি সেই সমস্ত কন্যাদের এত কম সময়ে এই দক্ষতা অর্জন করতে দেখে আপ্লুত। আর, একটি নতুন ধরনের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব তাঁদের চোখে-মুখে লক্ষ্য করেছি। আমি তাঁদের সকলকে হৃদয় থেকে অভিবাদন জানাই, তাঁদের মতো সমস্ত আদিবাসী কন্যাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
এটি একটি সংযোগের বিষয় যে আজ আদি কবি মহর্ষি বাল্মিকীর জন্ম জয়ন্তীও। আজ আমরা ভারতের যে সাংস্কৃতিক ঐক্যকে দেখতে পাচ্ছি, যে ভারতকে অনুভব করতে পারছি, তাকে আরও জীবন্ত এবং প্রাণশক্তিতে ভরপুর করে তোলার কাজ অনেক শতাব্দী আগে আদি কবি মহর্ষি বাল্মিকী করে গেছেন। ভগবান রামের আদর্শ, রামের শিষ্টাচার, আজ যেভাবে ভারতের প্রত্যেক প্রান্তকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করছে, তার কৃতিত্ব তো মহর্ষি বাল্মিকীরই। ভারত রাষ্ট্রকে, মাতৃভূমিকে সর্বোপরি রেখে মহর্ষি বাল্মিকীর যে ঘোষণা ছিল, “জননী জন্মভূমিশ্চ, স্বর্গাদপী গরিয়সী" - এই মন্ত্র, এটি আমাদের দেশের আজকে 'ইন্ডিয়া ফার্স্ট' সঙ্কল্পের মজবুত ভিত্তি।
আমি সমস্ত দেশবাসীকে মহর্ষি বাল্মিকী জয়ন্তী উপলক্ষে অন্তর থেকে শুভকামনা জানাই। বন্ধুগণ, তামিল ভাষার মহাকবি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী সুব্রহ্মনিয়ম ভারতীর একটি কবিতা আজকের দিনে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সুব্রহ্মনিয়ম ভারতীর এই কবিতার ভাবার্থ আমি হিন্দি পড়েছি। এতে ভারতের দূরদুরান্তের বিভিন্ন অঞ্চলের বর্ণনা যেভাবে রয়েছে তা অত্যন্ত প্রেরণাদায়ী। সুব্রহ্মনিয়ম ভারতী যে মনোভাব ব্যক্ত করেছেন, তা তিনি বিশ্বের সর্বপ্রাচীন ভাষা তামিল ভাষায় করেছেন। আর কী সুন্দরভাবে তিনি ভারতমাতার বর্ণনা করেছেন। সুব্রহ্মনিয়ম ভারতীর কবিতার মূল বক্তব্য হল – "দেদীপ্যমান উত্তুঙ্গ হিমালয়, এটি আমাদের রক্ষা করে নগাধিরাজের মতো। বিশ্বে এটি অতুলনীয়। এই নগাধিরাজ আমাদেরই। এই হিমালয় থেকে বেরিয়ে আসা নদীগুলি আমাদেরই। এই গঙ্গা প্লাবিত করে মধুরস ধারা। প্রবাহিত হয় দেশের অনেক স্থানে। এর পবিত্র কলকল ধারা সারা বিশ্বের সমীহ আদায় করে নিয়েছে। এর মহিমা অনেক অমর গ্রন্থে বর্ণিত। এই আমাদের দেশ, এই আমাদের উপনিষদগুলির দেশ। আমরা সর্বদাএই দেশের যশোগাথা গাইব। এটাই আমাদের সোনার দেশ। বিশ্বে এর থেকে এগিয়ে কেউ নেই।"
দাসত্বের সেই সময়কালে সুব্রহ্মনীয়ম ভারতীজির এই বিশ্বাসকে লক্ষ্য করুন। তাঁর মনোভাবকে তিনি কিভাবে প্রকট করেছেন - "এটাই আমাদের সোনার দেশ। বিশ্বে এর থেকে এগিয়ে কেউ নেই।"
ভারতের জন্য এই অদ্ভূত ভাবনাকে আজ আমরা এখানে মা নর্মদার কিনারায় সর্দার সাহেবের সুউচ্চ মূর্তির ছায়ায় ও সান্নিধ্যে দাঁড়িয়ে আরও নিবিড়ভাবে অনুভব করতে পারছি। ভারতের এই শক্তি আমাদের প্রত্যেক বিপদ থেকে, প্রত্যেক বিপত্তি থেকে লড়তে শেখায়, আর জিততেও শেখায়। আপনারা দেখুন, গত বছর থেকেই যখন আমরা আজকের দিনে একতা দৌড়ে সামিল হয়েছিলাম, তখন কেউ কল্পনাও করেননি যে বিশ্বে গোটা মানবজাতিকে করোনার মতো বিশ্বব্যাপী মহামারীর সম্মুখীন হতে হবে। এই বিপদ হঠাৎই এসেছে। এই বিপদ গোটা বিশ্বে মানবজীবনকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছে, আমাদের গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে। কিন্তু এই মহামারীর সামনে আমাদের দেশ, ১৩০ কোটি দেশবাসী যেভাবে নিজেদের সামগ্রিক সামর্থ্য দিয়ে, নিজেদের সামগ্রিক ইচ্ছাশক্তিকে প্রমাণ করেছে তা অভূতপূর্ব। ইতিহাসে এর কোনও তুলনা নেই।
করোনা ওয়ারিয়র্সদের সম্মানে ১৩০ কোটি ভারতবাসী একত্রিত হয়ে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, লেহ থেকে লাক্ষাদ্বীপ, অটক থেকে কটক, কচ্ছ থেকে কোহিমা, ত্রিপুরা থেকে সোমনাথ – ১৩০ কোটি ভারতবাসী এক হয়ে নিজেদের উদ্দীপনা প্রদর্শন করেছেন। বিশ্ববাসীর সামনে আমাদের ঐক্যের বার্তা তুলে ধরেছেন। সেই উদ্দীপনা বিগত আট মাস ধরে এই সঙ্কটে সামনে থেকে লড়াই করার এবং বিজয় পথে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দিয়েছে। দেশ তাঁদের সম্মানে প্রদীপ জ্বালিয়েছে। তাঁদের অভিবাদন জানিয়েছে। আমাদের করোনা ওয়ারিয়র্স, আমাদের অনেক পুলিশের বীর বন্ধুরা অন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। স্বাধীনতার পর মানব সেবার জন্য, নিরাপত্তার জন্য জীবন উৎসর্গ করা এ দেশের পুলিশবাহিনীগুলির একটি বৈশিষ্ট্য। আমার প্রায় ৩৫ হাজার পুলিশ বন্ধু জওয়ানরা স্বাধীনতার পর থেকে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আত্মবলিদান দিয়েছেন। কিন্তু এই করোনাকালে আইন-শৃঙ্খলা নয়, মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়ে অন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য আমাদের পুলিশের জওয়ানরা অনেকেই সেবারত অবস্থাতেই নিজেদের আত্মোৎসর্গ করেছেন। ইতিহাস কখনই এই সোনালী মুহূর্তগুলি ভুলবে না। আর শুধু পুলিশের জওয়ানরাই নয়, ১৩০ কোটি ভারতবাসীও এই পুলিশ বীরদের এই সমর্পণভাবকে সর্বদা নতমস্তকে স্মরণ করবে এবং তাঁদের থেকে প্রেরণা গ্রহণ করবে।
বন্ধুগণ,
এটাই ভারতের ঐক্যের শক্তি। যে মহামারী বিশ্বের বড় বড় দেশগুলিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, অসহায় করে তুলেছে, ভারত একে প্রতিহত করতে এর বিরুদ্ধে প্রাণপণে লড়াই করছে। আজ দেশ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়েও চলেছে। এই সেই ঐক্য, যার কল্পনা লৌহ পুরুষ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল করেছিলেন। আমাদের সকলের এই ঐক্যবদ্ধতাই করোনার এই কঠিন সময়ে লৌহ পুরুষ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রতি আমাদের সত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বন্ধুগন,
বিপর্যয় এবং সঙ্কটের মধ্যেই দেশ এমন কিছু কাজ করেছে যা কখনও অসম্ভব বলে মনে করা হত। এই কঠিন সময়েই আমাদের দেশের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীরে এক বছরে অনেক ভালো কাজ হয়েছে। কাশ্মীরের ভারতভুক্তির পর এই ৩১ অক্টোবরেই এই ধারা চালু হয়েছিল। তখন সর্দার সাহেব জীবিত ছিলেন। বাকি রাজরাজরাদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের কাজও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাচ্ছিলেন। যেভাবে তিনি কাজ করছিলেন, এক্ষেত্রেও সেটা যদি তাঁকে করতে দেওয়া হত তাহলে স্বাধীনতার এত বছর পর এই ধারা বাতিল করার দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তাতো না। কিন্তু সর্দার সাহেবের এই কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। তাঁর কর্মপদ্ধতি থেকে প্রেরণা নিয়েই ১৩০ কোটি ভারতবাসীর ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে সেই কাজকে সম্পূর্ণ করার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে। কাশ্মীরের উন্নয়নে যত ধরনের বাধা আসছিল, সেগুলিকে পেছনে ফেলে এখন কাশ্মীর উন্নয়নের নতুন পথে এগিয়ে চলেছে। তেমনভাবে, উত্তর-পূর্ব ভারতে শান্তি বজায় রেখে সেই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আমরা যে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছি, সেগুলি আজ দেশের ঐক্যকে নতুন মাত্রায় স্থাপিত করছে। সোমনাথ মন্দিরের পুনর্নিমাণের মাধ্যমে সর্দার প্যাটেল ভারতের সাংস্কৃতিক গৌরবকে ফিরিয়ে আনার যে যজ্ঞ শুরু করেছিলেন, তার বিস্তার সম্প্রতি দেশবাসী অযোধ্যায় জারি থাকতেদেখেছেন। আজ দেশ রামমন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের সাক্ষী রয়েছে এবং এই অনিন্দ্যসুন্দর মন্দির তিল তিল করে আমাদের চোখের সামনে গড়ে উঠছে।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা ১৩০ কোটি ভারতবাসী মিলে এমন একটি দেশ গড়ে তুলছি যা যেমন শক্তিশালী তেমনই সক্ষম। যেখানে সাম্য থাকবে এবং সম্ভাবনাও থাকবে। সর্দার সাহেবও বলতেন এবং সর্দার সাহেবের শব্দ অনুযায়ী, “বিশ্বের ভিত্তি কৃষক ও মজুর। আমি ভাবি, এই কৃষক এবং মজুরকে কিভাবে দুর্বল থাকতে দিতে পারি? কিভাবে তাঁদের শক্তিশালী করে তাঁদের মাথা উঁচু করে চলার মতো তৈরি করে দিতে পারব?"
বন্ধুগণ,
কৃষক, মজুর, গরীবের ক্ষমতায়ন তখনই সম্পূর্ণ হবে যখন তাঁরা সম্পূর্ণ আত্মনির্ভর হয়ে উঠবেন। সর্দার সাহেবের স্বপ্ন এটাই ছিল। তিনি বলতেন, “কৃষক, মজুর, গরীবের ক্ষমতায়ন তখনই সম্পূর্ণ হবে যখন তাঁরা সম্পূর্ণ আত্মনির্ভর হয়ে উঠবেন।" আর যখন কৃষক ও মজুররা আত্মনির্ভর হয়ে উঠবেন তখন দেশও আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে। বন্ধুগণ, আত্মনির্ভর দেশই নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে পারে। আর সেজন্য আজ দেশ নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে চলেছে। শুধু তাই নয়, সীমান্তে ভারতের নজর এবং দৃষ্টিভঙ্গি এখন পরিবর্তিত হয়েছে। আজ ভারতের মাটির দিকে যারা কু-নজর দেবে তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার শক্তি আমাদের বীর জওয়ানদের রয়েছে। আজকের ভারত সীমান্তে শত শত কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করছে। কয়েক ডজন সেতু, অনেক সুড়ঙ্গ নিয়মিত নির্মিত হচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব এবং সম্মান রক্ষার জন্য আজকের ভারত সম্পূর্ণরূপে সজাগ, দায়বদ্ধ এবং সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।
কিন্তু বন্ধুগণ, উন্নয়নের এই প্রচেষ্টাগুলির মাঝে এমন অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে যেগুলির সম্মুখীন আজ ভারত তথা সমগ্র বিশ্বকে হতে হচ্ছে। বিগত অনেক বছর ধরে বিশ্বের অনেক দেশের যে অবস্থা, যেভাবে কিছু মানুষ সন্ত্রাসবাদের সমর্থনে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে, তা আজ মানবতার জন্য, বিশ্বের জন্য, শান্তির উপাসকদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। আজকের আবহে বিশ্বের সমস্ত দেশকে, সমস্ত সরকারকে, সমস্ত মতবাদসম্পন্ন সরকারগুলির উচিৎ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করা। শান্তি, সৌভ্রাতৃত্ব এবং পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধই মানবতার প্রকৃত পরিচয়। শান্তি, ঐক্য এবং সদ্ভাবই তার একমাত্র পথ। সন্ত্রাসবাদ, হিংসা থেকে কখনও কারোর কল্যাণ হতে পারে না। ভারত তো বিগত কয়েক দশক ধরে সন্ত্রাসবাদে ভুক্তভোগী এবং পীড়িত। ভারত তার হাজার হাজার বীর শহীদদের হারিয়েছে। ভারত তার নির্দোষ নাগরিকদেরও হারিয়েছে। অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। অনেক বোন তাঁদের ভাইদের হারিয়েছেন। আতঙ্কের পীড়াকে ভারত খুব ভালোভাবে জানে। ভারত সন্ত্রাসবাদকে সর্বদা নিজের ঐক্যবদ্ধতা এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি দিয়ে জবাব দিয়েছে। আজ গোটা বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে এ ধরনের সমস্ত শক্তিকে পরাজিত করতে হবে। যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে রয়েছে, তারাই সন্ত্রাসবাদকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের জন্য একতা শব্দটির অর্থের বিস্তার সর্বদাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেই মানুষ যারা 'স র্বে ভবন্তু সুখিনঃ' - এই মন্ত্র থেকে প্রেরণা গ্রহণ করি। আমরা সেই মানুষ যারা 'বসুধৈব কুটুম্বকম'-এর মন্ত্রকে আপন করে নিয়েছি। আর এটাই হল আমাদের মূল জীবনধারা। ভগবান বুদ্ধ থেকে শুরু করে মহাত্মা গান্ধী পর্যন্ত ভারত গোটা বিশ্বকে শান্তি এবং একতার বার্তা দিয়েছে। বন্ধুগণ, রাষ্ট্রকবি রামধারী সিং দিনকরজি লিখেছিলেন, “ভারত একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা স্বর্গকে মাটিতে নিয়ে আসে। ভারত একটি মনোভাব যা পেলে মানুষ জেগে ওঠে। আমাদের এই রাষ্ট্র, আমাদের ভাবনা দিয়ে, আমাদের চেতনা দিয়ে, আমাদের প্রচেষ্টা দিয়ে আমাদের সবাইকে মিলেমিশে গড়ে তুলতে হবে। আর এর অনেক বড় শক্তি হল ভারতের বৈচিত্র্য। এর অসংখ্য কথ্যভাষা, এতগুলি ভাষা, এত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পরিধান, খাওয়া-দাওয়া এবং রীতি-রেওয়াজ।”
এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি আর কোনও দেশে পাওয়া যাবে না। আমাদের বেদবাক্যেও বলা হয়েছে -
“জনং বিভ্রতি বহুধা বিওয়াচসং নানা ধর্মানং পৃথ্বিবী যশৌকসম্।
সহস্রং ধারা দ্রবিণস্য মে দুহাঁ ধ্রুবেব ধেনুরন-প্রস্ফুরন্তি।।”
অর্থাৎ, আমাদের এই মাতৃভূমি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলা, ভিন্ন আচার, বিচার, ব্যবহারসম্পন্ন মানুষকে একটি বাড়িতে ধারণ করছে। সেজন্য আমাদের এই বৈচিত্র্যই আমাদের অস্তিত্ব। এই বৈচিত্র্যের মধ্যে একতাকে জীবন্ত রাখাই আমাদের রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা এক, সেজন্য আমরা অপরাজেয়। আমরা এক, সেজন্যই আমরা অসাধারণ। আমরা এক, সেজন্যই আমরা অদ্বিতীয়। কিন্তু বন্ধুগণ, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে ভারতের এই ঐক্য, এই শক্তি অন্যদের অনেকের ঈর্ষার কারণ। তারা আমাদের এই বৈচিত্র্যকেই আমাদের দুর্বলতায় পর্যবসিত করতে চায়। আমাদের এই বৈচিত্র্যকে ভিত্তি করে তারা পরস্পরের মধ্যে গভীর খাদ নির্মাণ করতে চায়। এহেন শক্তিগুলিকে চিহ্নিত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই শক্তি থেকে প্রত্যেক ভারতবাসীকে অনেক বেশি সতর্ক থাকারও প্রয়োজন রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ এখানে যখন আমি আধা-সামরিক বাহিনীর প্যারেড দেখছিলাম, আপনাদের সকলের অদ্ভূত কৌশল দেখছিলাম, তখন মনের মধ্যে আরেকটি চেহারা ফুটে উঠছিল। এই চেহারা হল পুলওয়ামা হামলার চিত্র। সেই হামলায় আমাদের অনেক অর্ধ সৈনিক পুলিশ বন্ধু শহীদ হয়েছিলেন। দেশ কখনও তার এই বীর সন্তানদের ভুলতে পারবে না। যারা এই ঘটনায় দুঃখ পাননি, তারাই পুলওয়ামা হামলাকেও নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছিলেন। তারা সেখান থেকেও রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছিলেন। দেশ কখনও ভুলতে পারবে না তখন কী ধরনের কথা বলা হচ্ছিল, কিভাবে একের পর এক বয়ান দেওয়া হচ্ছিল। দেশ ভুলতে পারবে না যখন দেশের শরীরে এতবড় আঘাত লেগেছিল, তখন স্বার্থ ও অহঙ্কারে ভরা নোংরা রাজনীতি কতটা কিভাবে চলছিল। আর সেই সময় ওই বীরদের দিকে তাকিয়ে আমি সমস্তরকম কলহ থেকে দূরে থেকে এই আরোপগুলি, এই গালিগালাজগুলি শুনে গেছি। আমাদের হৃদয়ে পুলওয়ামার বীর শহীদদের প্রতি গভীর ক্ষত ছিল। কিন্তু বিগত দিনে প্রতিবেশী দেশ থেকে যে খবরগুলি এসেছে, যেভাবে সেখানকার সংসদে এই সত্যকে স্বীকার করা হয়েছে, তা আমাদের দেশের এই রাজনীতি করা মানুষদের আসল চেহারাকে দেশের সামনে তুলে ধরেছে। তারা নিহিত স্বার্থের জন্য, রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য কোন পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারে, পুলওয়ামা হামলার পর তারা যে রাজনীতি করেছেন এটা তার অনেক বড় উদাহরণ। আমি এই ধরনের রাজনৈতিক দলগুলির কাছে, এই ধরনের মানুষদের কাছে অনুরোধ জানাই এবং আজকের সময়ে আরও বিশেষভাবে অনুরোধ জানাই। আর সর্দার সাহেবের প্রতি আপনাদের মনে শ্রদ্ধা থাকলে এই মহাপুরুষের এই বিরাট মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে আপনাদেরকে অনুরোধ করব যে দেশের স্বার্থে, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলির মনোবল তুঙ্গে রাখার স্বার্থে অনুগ্রহ করে এরকম রাজনীতি করবেন না। এরকম রাজনীতি থেকে দূরে থাকুন। নিজের স্বার্থের জন্য অজান্তেই আপনারা দেশ বিরোধী শক্তিগুলির হাতের পুতুলে পরিণত হচ্ছেন। তাদের স্বার্থে কথা বলছেন। আপনারা এভাবে দেশের ভালো করতে পারবেন না। নিজের দলেরও ভালো করতে পারবেন না।
বন্ধুগণ,
আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে যে আমাদের সকলের জন্য সবার ওপরে যদি কিছু থেকে থাকে সেটা হল রাষ্ট্রহিত। যখন আমরা সবার ভালো করার কথা ভাবব, তখনই আমাদের প্রত্যেকেরই উন্নয়ন হবে। তখনই আমাদেরও উন্নয়ন হবে। ভাই ও বোনেরা, আজকের এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে, এই বিরাট উঁচু ব্যক্তিত্বের চরণে দাঁড়িয়ে আমরা সেই ভারতের নির্মাণের সঙ্কল্প পুনরুচ্চারণ করব, যার স্বপ্ন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল দেখে গিয়েছিলেন। একটি এমন ভারত যা হবে ক্ষমতায়িত, সমৃদ্ধ এবং আত্মনির্ভর। আসুন, এই পবিত্র অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমরা আরেকবার দেশের প্রতি নিজেদের সমর্পণ ভাবকে তুলে ধরি। আসুন, সর্দার প্যাটেলের পায়ে নতমস্তক হয়ে আমরা এই প্রতিজ্ঞা নিই যে সর্বদা দেশের গৌরব এবং মান বাড়াব, এই দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাব।
এই সঙ্কল্প নিয়ে সমস্ত দেশবাসীকে আজকের একতা পর্ব উপলক্ষে আরেকবার অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আজ আমরা সমাদরে সর্দার সাহেবকে প্রণাম জানিয়ে, শ্রদ্ধা সহকারে, সর্দার সাহেবকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে, দেশবাসীকে বাল্মিকী জয়ন্তী উপলক্ষে শুভকামনা জানাই। সর্দার সাহেবের জন্মজয়ন্তীর শুভকামনার পাশাপাশি, আমার বক্তব্যে ইতি টানছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
CG/SB/DM
(Release ID: 1669194)
Visitor Counter : 236
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam