প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

দুর্নীতি বিরোধী এবং সতর্কতার উপর জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 27 OCT 2020 7:38PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৭শে অক্টোবর, ২০২০

 

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুর্নীতি বিরোধী ও সতর্কতার উপর আয়োজিত একটি  জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন। এই সম্মেলনের মূল ভাবনা হল, “সতর্ক ভারত, সমৃদ্ধ ভারত”। কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সতর্কতার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জনজীবনের ইতিবাচক প্রভাব এবং সংহতির ক্ষেত্রে ভারতের অঙ্গীকারকে এই অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হচ্ছে।

সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ ভারত এবং দেশের প্রশাসনিক ব্য়বস্থাকে গড়ে তোলার অন্যতম কারিগর সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল। দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের মানুষের জন্য এমন কিছু ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যেখানে সংহতির উপর ভিত্তি করে নীতিগুলি তৈরি হয়েছিল। শ্রী মোদী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে এমন একটা পরিস্থিতি চলছিল, যেখানে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, শেল কোম্পানী গড়ে উঠেছে,  কর ফাঁকি এবং কর সংক্রান্ত হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৪ সালে দেশ যখন বড় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং নতুন দিশায় চলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, তখন প্রচলিত পরিবেশের পরিবর্তন ঘটানোটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কালো টাকার বিরুদ্ধে কমিটি তৈরি করা যাচ্ছিল না। এই সরকার ক্ষমতায় আসার ঠিক পরে পরেই কমিটি তৈরি করা হয়। যার মধ্য দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ব্যাঙ্কিং, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম, কৃষি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ নানা সংস্কার দেখেছে। তিনি বলেছেন, এই সংস্কারগুলির উপর ভিত্তি করে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে সফল করার জন্য দেশ পূর্ণ শক্তিতে এগিয়ে চলেছে। ভারত, বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে, সেই স্বপ্নই তিনি তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন।  

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ প্রশাসনিক ব্যবস্থা  জনসাধারণের কাছে উত্তর দিতে বাধ্য হবে। এই ধারণার সব থেকে বড় শত্রু হল যে কোনো ধরণের দুর্নীতি। তিনি বলেছেন, একদিকে যেমন দেশের উন্নতি, দুর্নীতির কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়, অন্যদিকে সামাজিক ভারসাম্য ধ্বংস করে এবং প্রচলিত ব্যবস্থার ওপর মানুষ বিশ্বাস হারায়। আর তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর দায়িত্বটা একটি মাত্র সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের উপর বর্তায় না, এটি যৌথ উদ্যোগের ফল হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেছেন, এককভাবে দুর্নীতির মোকাবিলা করা যায় না।

শ্রী মোদী বলেছেন, যখন দেশকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন সতর্কতার প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক হয়ে দাঁড়ায়। দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ, ড্রাগ চক্র, অর্থ তছরুপ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গি গোষ্ঠীকে সাহায্য করা – দেখা গেছে এগুলি সবই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত।

তিনি বলেছেন, আমাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সেগুলিকে যাচাই করা, যথাযথ রক্ষণা-বেক্ষন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, এই সময়ে সব সংস্থাগুলিকে একসঙ্গে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।

সতর্ক ভারত, সমৃদ্ধ ভারত গড়ে তোলার জন্য এই সম্মেলন, নতুন পথ দেখাবে বলে তিনি আশা করেছেন।  

প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে ২০১৬ সালে সতর্কতা  সচেতনতা কর্মসূচীতে তিনি কি বলেছিলেন, তা আবারও স্মরণ করেছেন। শ্রী মোদী বলেছেন, আমাদের দেশে দুর্নীতির কোনো জায়গা নেই। দেশ দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়ছে। দশকের পর দশক ধরে দরিদ্র মানুষেরা তাঁদের প্রাপ্য পান নি। কিন্তু এখন সরাসরি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে অর্থ হস্তান্তরের ফলে দরিদ্র মানুষ তাঁদের প্রাপ্য সরাসরি পাচ্ছেন। এই ব্যবস্থার ফলে ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা ভুল লোকের হাতে যাওয়া বন্ধ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর মানুষের আস্থা আবারও ফিরে আসবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সরকার বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করবে না, আবার সরকারের অনুপস্থিতিও অনুভব করা যাবে না। প্রয়োজন অনুসারে সরকারের ভূমিকা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকবে। জনসাধারণের যেন এটি মনে না হয় যে, সরকার অহেতুক তাদের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছে। আবার যেখানে প্রয়োজন,  সেখানে সরকারকে পাওয়া যাচ্ছে না।  

শ্রী মোদী বলেছেন, বিগত কয়েক বছরে ১৫০০-র বেশি আইন বাতিল করা হয়েছে। অনেক নীতি সরল করা হয়েছে। পেনশন, বৃত্তি, পাশপোর্ট, নতুন উদ্যোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করা যাচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানি কমেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রক্ষালনাদ্ধি পাকস্য

                                    দুরাৎ স্পর্শনম বরম।

অর্থাৎ পরে পরিস্কার করার বদলে  আগে ভাগে কোন জিনিসকে অপরিচ্ছন্ন করে তোলার  প্রয়োজন নেই।  যে পরিস্থিতির জন্য দুর্নীতি বাসা বাধে, তিনি সেই গুলিকে সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন।  

এই প্রসঙ্গে তিনি কৌটিল্যের বাণী উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, যারা সরকারী অর্থ অপচয় হতে দেন না, কিন্তু জনসাধারণের ভালোর জন্যে তা ব্য়য় করতে উৎসাহী হন, দেশের স্বার্থে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো উচিৎ।   

তিনি বলেছেন, আগে বদলি করা এবং নতুন পদে বসানোর ক্ষেত্রে একটি অনৈতিক ব্যবস্থা ছিল। এখন সরকার, অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যার মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে এবং উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপারিশ করার জায়গা থাকছে না। সরকার, গ্রুপ – বি এবং গ্রুপ – সি পদের জন্য সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলিতে উচ্চপদস্থ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক বোর্ড ব্যুরো গঠন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশে সতর্ক ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য নতুন নতুন আইন আনা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, কালো টাকা, বেনামী সম্পত্তি, পলাতক আর্থিক অপরাধ বিরোধী আইনগুলিকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে। তিনি বলেছেন, সরকার, উন্নত প্রযুক্তি, ক্ষমতা বৃদ্ধি, অত্যাধুনিক পরিকাঠামো এবং সতর্কতার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিকে দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে, যাতে ঐ সংস্থাগুলি আরো দক্ষভাবে কাজ করে ভালো ফলাফল নিশ্চিত করে।  

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই লড়াই একদিন বা এক সপ্তাহের ব্যাপার নয়।

তিনি এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘ দশক ধরে দেশে দুর্নীতি ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।  তিনি সাধারণ দুর্নীতি এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, যখন এক প্রজন্মের দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষ যথাযথ শাস্তি পায় না, তখন পরের প্রজন্ম আরো ভয়ঙ্কর ভাবে সেই দুর্নীতি গুলির আশ্রয় নেয়। অনেক রাজ্যে এটি রাজনৈতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যে দুর্নীতি চলে আসছে, তা দেশকে ধীরে ধীরে নিঃস্ব করে তুলছিল। এই পরিস্থিতি দেশের উন্নয়নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সমৃদ্ধ ভারত ও আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এগুলি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আশা করেন, জাতীয় সম্মেলনে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে।  

প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত সংবাদগুলির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, যখন দেখা যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে এই বার্তাই পৌঁছায় যে দুর্নীতিগ্রস্থদের রেহাই মেলা শক্ত।

তিনি বলেছেন, দেশ যদি দুর্নীতিকে মোকাবিলা করতে পারে, তাহলে দেশ শক্তিশালী হবে এবং সর্দার প্যাটেলের সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ হবে।

কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এই জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন এমন একটি সময়ে করেছে যখন, সতর্কতা, সচেতনতা সপ্তাহ দেশজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে। প্রতিবছর ভারতে ২৭শে অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর এই সপ্তাহ পালন করা হয়। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য সেই সব বিষয়গুলিতে সতর্ক থাকা যেগুলির মধ্য দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং সংহতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতের দায়বদ্ধতা প্রকাশ পাবে ও জনসাধারণে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জনজীবনে ন্যায়পরায়নতা প্রতিফলিত হবে।

৩ দিনের এই সম্মেলনে বিদেশে তদন্তের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, অর্থনৈতিক ও ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত বিভিন্ন দুর্নীতির মোকাবিলা করা, হিসেব রক্ষণা-বেক্ষণের ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনগুলির সংশোধন ঘটানো, দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ, তদন্তে গতি আনতে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, আর্থিক অপরাধের নতুন নতুন প্রবণতা, সাইবার অপরাধ এবং অপরাধ অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলির মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানের সাহায্যে সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হবে।

সম্মেলনে নীতি নির্ধারকরা একসঙ্গে বসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কি কি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করবেন। এর মাধ্যমে দায়বদ্ধ ও সুপ্রশাসন নিশ্চিত হবে। ভারতে সহজে ব্যবসা বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।

সম্মেলনে দুর্নীতি বিরোধী, সতর্কতামূলক সংস্থা, আর্থিক অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা, বিভিন্ন রাজ্যের ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সিআইডি-র প্রধানরা ছাড়াও মুখ্য ভিজিল্যান্স অফিসার, সিবিআই-এর  উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা যোগ দিয়েছেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে বিভিন্ন রাজ্যের এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যসচিব ও পুলিশ প্রধানরা অংশ নিয়েছেন।

 

 

CG/CB/SFS


(Release ID: 1668012) Visitor Counter : 2272