অর্থমন্ত্রক

কোভিড – ১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই অর্থবর্ষের মধ্যে গ্রাহকরা যাতে ৭৩,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারেন, সেবিষয়ে অর্থমন্ত্রীর একগুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা


২০১৮ – ২১ সময়কালে একটি এলটিসি-র পরিবর্তে টাকা ও লিভ এনক্যাশমেন্টের সুযোগ

Posted On: 12 OCT 2020 5:06PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১২ই অক্টোবর, ২০২০

 

 

কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমণ আজ কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে লকডাউন জারি করার ফলে অর্থনীতিতে যে শ্লথ অবস্থা দেখা যাচ্ছে তার মোকাবিলায় ৭৩,০০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। যার মাধ্যমে গ্রাহকরা অর্থ ব্যয় করতে উৎসাহী হবেন।  এই প্যাকেজ ঘোষণার সময় দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর, অর্থসচিব ড. অজয় ভূষণ পান্ডে, আর্থিক পরিষেবা দপ্তরের সচিব শ্রী দেবাশিষ পান্ডা, অর্থনৈতিক বিষয়ক দপ্তরের সচিব শ্রী তরুণ বাজাজ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য এই প্যাকেজের ঘোষণা করার সময় শ্রীমতী সীতারমণ জানান, সরকারি এবং সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরা অর্থ সঞ্চয়ের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।  সরকার এই সব লোকেদের ব্যয় করার জন্য উৎসাহিত করতে চাইছে, যাতে তাঁদের জিনিসপত্র কেনাকাটার মাধ্যমে অন্যেরা উপকৃত হন। তিনি জানিয়েছেন, বাজার চাঙ্গা করতে এই বিশেষ পদক্ষেপের ফলে জিনিসপত্র কেনার চাহিদা বাড়বে, এর ফলে কোভিডের কারণে যাদের ব্যবসা বন্ধ হতে বসেছে, তারা উপকৃত হবেন।

অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আজকের সমাধান যাতে আগামী দিনে সমস্যার কারণ না হতে পারে সরকার, তার ওপরেও গুরুত্ব দিচ্ছে। শ্রীমতী সীতারমণ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ যাতে সমস্যায় না পড়েন এবং সরকারের ঋণের বোঝা যাতে অস্থির অবস্থা তৈরি না করে তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে যে প্রস্তাবগুলি আজ অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, সেখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যয়ের বিষয়টি বাজারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকবে আর বাকি ক্ষেত্রে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করবে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার বিস্তারিত তথ্যঃ-

ক) গ্রাহকদের ব্যয় করার সুযোগ

১) লিভ ট্রাভেলস কনসেশন (এলটিসি), ক্যাশ ভাউচার স্কীম, এই প্রকল্প অনুসারে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০২১ সালের মধ্যে যে ৪ বছরের ব্লকে কর্মচারীরা এলটিসি ক্যাশ ভাউচার প্রকল্পের সুবিধা পান, তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা এই সময়ের এলটিসি-র সুযোগ নেন নি, তাঁদের এলটিসি বাতিল হবে না। কর্মচারীরা এই টাকা দিয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারবেন, যাতে তাদের পরিবারের সুবিধে হবে।  

কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীরা ৪ বছরের মেয়াদে এলটিসি পেয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে তাঁরা, তাঁদের বেতন কাঠামো অনুসারে বেড়াতে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে বিমান অথবা ট্রেনের ভাড়া ঐ কর্মচারী পেয়ে থাকেন। এর সঙ্গে ১০ দিনের লিভ এনক্যাশমেন্ট (বেতন ও মহার্ঘ্য ভাতা) দেওয়া হয়। কিন্তু কোভিড – ১৯ এর কারণে অনেক কর্মচারী ২০১৮ – ২১ এর মধ্যে এলটিসি-র সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন নি। তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঐ এলটিসি বাবদ অর্থ কর্মচারীরা পাবেন। এক্ষেত্রে পরিবহণের খরচের কর লাগবে না। কর্মচারীদের ৩১শে মার্চের মধ্যে এই অর্থ ব্যয় করতে হবে। এই অর্থ দিয়ে  তাঁরা যে দ্রব্যগুলির জিএসটি ১২ শতাংশ বা তার বেশি সেই সব সামগ্রী কিনতে পারবেন। তবে, ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় লেনদেন করতে হবে এবং  এই সুবিধা নিতে ইচ্ছুক কর্মীদের ভ্রমণ ভাতা এবং এনক্যাশমেন্টে টাকার যোগফলের তিনগুণ মূল্যে কোনো পণ্য সামগ্রী কেনা বা পরিষেবা বাবদ জিএসটির ইনভয়েস জমা দিতে হবে।কর্মচারীদের জিএসটি ইনভয়েস জমা দিতে হবে।  

কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীরা এই সুযোগ নিলে ৫৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ পাবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলির কর্মচারীরা এই সুযোগ ব্যবহার করলে ১৯০০ কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্প অনুসারে রাজ্য সরকার এবং বেসরকারী ক্ষেত্রে যে সব কর্মচারী এলটিসি-র সুযোগ পান, তাঁরাও কর ছাড়ের বিশেষ সুবিধে পাবেন। এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকারী ও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা / ব্যাঙ্কগুলির কর্মচারীদের মারফৎ প্রায় ১৯০০০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হবে। রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা এই সুযোগ গ্রহণ করলে ৯০০০ কোটি টাকার লেনদেন হবে। সব মিলিয়ে ২৮,০০০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হবে।

২) বিশেষ উৎসব সংক্রান্ত অগ্রিম প্রকল্প

গেজেটেড এবং নন-গেজেটেড কর্মচারীদের জন্য বিশেষ উৎসব সংক্রান্ত অগ্রিম প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে। এককালীন ব্যবস্থাপনায় বাজারকে চাঙ্গা করার জন্য এই সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীরা ১০,০০০ টাকা সুদ ছাড়া অগ্রিম অর্থ পাবেন। এই অর্থ তাঁদের ৩১শে মার্চের মধ্যে ব্যয় করতে হবে। কর্মচারীরা রুপে কার্ডে এই অর্থ পাবেন। সরকার, কার্ডের চার্জ বাবদ ব্যয়ভার বহন করবে। রুপে কার্ডের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন ছাড়াও রাজস্ব আদায় হবে এবং সৎ পথে ব্যবসায় উৎসাহ দেওয়া হবে। এককালীন বিশেষ উৎসব সংক্রান্ত অগ্রিম প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০০০ কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্য সরকারগুলিও যদি একই উদ্যোগ নেয়, তাহলে আরো ৮০০০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের সুযোগ তৈরি হবে।

খ) মূলধন ব্যয়

১) রাজ্যগুলির জন্য বিশেষ সুবিধাঃ – শ্রীমতী সীতারমণ জানিয়েছেন, মূলধন সংক্রান্ত ব্যয়ের মধ্য দিয়ে পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে এবং সম্পদ তৈরিতে অর্থ ব্যয় করা হবে, অর্থনীতিতে যার সুফল দেখা যাবে। এর মাধ্যমে বর্তমান মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের  যেমন উন্নতি হবে, ভবিষ্যতেও তার সুফল পাওয়া যাবে। রাজ্যগুলিকে এবং কেন্দ্রকে মূলধন ব্যয়ের জন্য সরকার, বিশেষ উৎসাহ দিচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে এবং সম্পদ তৈরিতে এই অর্থ ব্যয়ের জন্য কেন্দ্র, রাজ্যগুলিকে ৫০ বছরের মেয়াদে সুদ মুক্ত ১২,০০০ কোটি টাকার ঋণ দেবে। এই প্রকল্পের ৩টি ভাগ রয়েছে।

প্রথম ভাগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যার মোট পরিমাণ ১৬০০ কোটি টাকা। উত্তরখন্ড এবং হিমাচল প্রদেশের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা – অর্থাৎ মোট ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় ভাগে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মূল্যায়ন অনুযায়ী বাকি রাজ্যগুলির জন্য ৭৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সুদ বিহীন যে ঋণ রাজ্যগুলিকে দেওয়া হবে, সেই অর্থ ৩১শে মার্চের মধ্যে ব্যয় করতে হবে। প্রাথমিক ভাবে ৫০ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে। সেই অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারলে, পরবর্তী সময়ে বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে। তবে এই প্রকল্পের অব্যবহৃত অর্থ কেন্দ্রকে দেওয়া হবে।

তৃতীয় ভাগে রাজ্যগুলির জন্য সুদ বিহীন ১২,০০০ কোটি টাকার ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে যে সব রাজ্য ১৭ই মে-র  F.No. 40(06)/PF-S/17-18 Vol. V                   ব্যয় সংক্রান্ত দপ্তরের চিঠি অনুসারে আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজের ৪টি সংস্কারের মধ্যে যে সব রাজ্য ৩টি সংস্কার পূরণ করবে তাদের ২০০০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হবে।

এই অর্থ নতুন অথবা চলতি প্রকল্পগুলিতে ব্যয় করা যাবে। তবে, মূলধন ৩১শে মার্চের মধ্যে ব্যয় করতে হবে। রাজ্যগুলির জন্য অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের যে সুযোগ আগেই দেওয়া হয়েছে, এই অর্থ তার অতিরিক্ত। ৫০ বছর পর এই অর্থ ফেরৎ দেওয়া যাবে। এর জন্য কোনো অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে না।

২) বর্ধিত বাজেটের সংস্থানঃ – ২০২০-র কেন্দ্রীয় বাজেটে ৪ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকার অর্থ সংস্থানের পাশাপাশি অতিরিক্ত ২৫,০০০ কোটি টাকার বাজেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই অর্থ সড়ক নির্মাণ, প্রতিরক্ষা, জল সরবরাহ, নগরোন্নয়ন এবং দেশে তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে ব্যয় করা যাবে। সরকারী কাজকর্ম যাতে নির্বিঘ্নে চালানো যায়, তার জন্য অর্থ মন্ত্রক সংশোধিত প্রস্তাবের বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করবে।

এই প্রসঙ্গে বলা যায়, ২৬শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ প্যাকেজের আওতায় ১ লক্ষ ৭০হাজার কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী, ১২ই মে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের যে ডাক দিয়েছিলেন, সেই উদ্দেশ্য পূরণে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১০ শতাংশ অর্থ – ২০ লক্ষ কোটি টাকার একটি বিশেষ আর্থিক ও সর্বাঙ্গীন প্যাকেজ – আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজের ঘোষণা করা হয়। অর্থনীতি, পরিকাঠামো, ব্যবস্থাপনা ও প্রাণবন্ত গণতন্ত্র এবং চাহিদার ওপর ভিত্তি করে এই প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল।

 

 

CG/CB/SFS


(Release ID: 1663861) Visitor Counter : 329