প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

বিহারে বিভিধ উন্নয়ণমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 15 SEP 2020 2:31PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২০

 



বিহারের রাজ্যপাল শ্রী ফাগু চৌহানজী, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নীতিশ কুমারজী, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী হরদীপ সিং পুরীজী, শ্রী রবিশঙ্কর প্রসাদজী, কেন্দ্র এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যগণ, মাননীয় সাংসদ এবং বিধায়কগণ এবং আমার প্রিয় বন্ধুরা,


বন্ধুগণ আজ যে চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে, তার মধ্যে পাটনা শহরের বেউর আর করম লিচক এলাকায় সিউরেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ছাড়াও অমরুত যোজনার অন্তর্গত সীওয়ান এবং ছাপড়ায় পানীয় জলের প্রকল্পগুলিও রয়েছে। তাছাড়া মুঙ্গের এবং জামালপুরে জলাভাব দূর করার জন্য জলপূর্তি প্রকল্প এবং মুজফ্ফরপুরে নমামী গঙ্গে প্রকল্পের মাধ্যমে রিভার ফর্ম ডেভেলপমেন্ট স্কীমেরও আজ শিলান্যাস করা হল। শহুরে গরীব এবং শহরে বসবাসকারী মধ্যবিত্ত বন্ধুদের জীবন সহজ করে তোলার জন্যে এই পরিষেবাগুলি চালু করা হচ্ছে। সেইজন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।


বন্ধুগণ, আজকের এই কর্মসূচী একটি বিশেষ দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ আমরা ইঞ্জিনিয়ার দিবস পালন করছি। এই দিন দেশের মহান ইঞ্জিনিয়ার এম. বিশ্বেশ্বরাইয়াজীর জন্মজয়ন্তী। তাঁর স্মৃতিতেই আজকের দিনটি সমর্পিত। আমদের ভারতীয় ইঞ্জিনিয়াররা দেশ নির্মাণে এবং বিশ্বের অনেক দেশের নির্মাণে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। তারা কাজের প্রতি যতই সমর্পিত হন না কেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সামগ্রিকতা ও নিখুঁত খুঁটিনাটি সারা পৃথিবীতে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের একটি আলাদা পরিচয় গড়ে তুলেছে। একথা এতটাই সত্য যে তা নিয়ে আমরা সবাই গর্বিত। আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা দেশের উন্নয়নকে মজবুতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ১৩০ কোটি ভারতবাসীর জীবনকে উন্নত করছেন। আমি এই সুযোগে সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারদের, তাদের নির্মাণশক্তিকে প্রণাম জানাই। দেশ নির্মাণের এই কাজে বিহারের বড় অবদান রয়েছে। বিহারের লক্ষ লক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দেশের উন্নয়নকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিচ্ছেন। বিহারের মাটি আবিস্কার এবং উদ্ভাবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সাফল্য এনে দিয়েছে। বিহারের কত সন্তান প্রতিবছর দেশের সবচাইতে বড় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলিতে তাদের যোগ্যতার মাধ্যমে নির্বাচিত হন। তার পর নিজেদের প্রতিভার জোরে সবার মন জয় করে নেন। আজ যে প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ হয়েছে, এগুলি নির্ধারিত সময়ে সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে বিহারের ইঞ্জিনিয়ারদের বড় ভূমিকা রয়েছে। আজকের এই ইঞ্জিনিয়ার দিবসে আমি বিহারের সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারদেরও বিশেষ শুভেচ্ছা জানাই।


বন্ধুগণ, এই বিহারের মাটিতে অনেকগুলি ঐতিহাসিক নগরী রয়েছে। এখানে হাজার হাজার বছরের নাগরিক সভ্যতার একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। প্রাচীন ভারতে গঙ্গা উপত্যাকার নানা স্থানে অর্থনৈতিক,সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক রূপে সমৃদ্ধ ও সম্পূর্ণ নগর উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু দাসত্বের দীর্ঘ সময়কালে এই ঐতিহ্য অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। স্বাধীনতার পর কয়েক দশক ধরে বিহার, বেশ কয়েকজন বড় এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতার নেতৃত্ব পেয়েছে। যারা দাসত্বের সময়কালে এই রাজ্য যে সব বিকৃতি এসেছিল, সেগুলি দূর করার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার পর এমন একটা সময় এসেছে, যখন বিহারে মূল এবং আধুনিক পরিষেবা প্রদানের বদলে অগ্রাধিকার এবং দায়বদ্ধতা বদলে যায়। ফলস্বরূপ রাজ্যবাসী সুশাসন থেকে বঞ্চিত হয়। এর পরিণাম স্বরূপ বিহারের গ্রামগুলি আরো বেশি করে পিছিয়ে যেতে থাকে। আর যে শহরগুলি একদিন সমৃদ্ধির প্রতীক ছিল, সেগুলির পরিকাঠামো ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক হয়ে উঠতে পারে না। সড়কপথ, গলিপথ, পানীয় জল, প্রয়ঃপ্রণালী এমন অনেক মূল সমস্যাগুলিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয় না, কিংবা এগুলির উন্নয়নকর্মে দুর্নীতির করালগ্রাসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।


বন্ধুগণ, যখন প্রশাসনে স্বার্থের লেনদেন মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, ভোটব্যাঙ্কের চাপে গোটা ব্যবস্থা নষ্ট হতে থাকে। তখন সবচাইতে বেশি প্রভাব সমাজের সেই অংশের উপর পড়ে, যারা প্রতারিত, বঞ্চিত ও শোষিত। দশকের পর দশক কাল ধরে বিহারের মানুষ এই কষ্ট সহ্য করেছে। যখন পানীয় জল এবং প্রয়ঃপ্রণালীর মতো মূল প্রয়োজনগুলির ব্যবস্থা ঠিক মতো হয় না, তখন সবচাইতে কষ্ট সহ্য করেন আমাদের মা ও বোনেরা। বিশেষ করে গরীব, দলিত, পিছিয়ে পড়া, অতি পিছিয়ে পড়া অংশের মা ও বোনেরা। নোংরা পরিবেশে থাকতে হয়, বাধ্য হয়ে নোংরা জল খেতে হয়। ফলে নানা অসুখ – বিসুখ লেগে থাকে। এক্ষেত্রে রোজগারের অনেকটা অংশ চিকিৎসার পিছনে ব্যয় হয়ে যায়। অনেকবার অনেক পরিবার অনেক বছর ধরে ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। তার মানে সরকারের ভুল অগ্রাধিকারের ফলে সমাজের একটি বড় অংশের আত্মবিশ্বাস গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গরীবের সঙ্গে এর থেকে বড় অন্যায় আর কি হতে পারে ? 


বন্ধুগণ, বিগত দেড় দশক ধরে নীতিশজী,সুশীলজী এবং তাদের টিম সমাজের এই সর্বাধিক দূর্বল অংশের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে যেভাবে মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ যোগাচ্ছেন, পঞ্চায়েতীরাজ সহ স্থানীয় প্রশাসনে বঞ্চিত, শোষিত সমাজের বন্ধুদের অংশীদারিত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তাদের আত্মবিশ্বস বেড়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে তো একপ্রকার বুনিয়াদী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রকল্পগুলির প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রাম পঞ্চায়েত কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রকল্পগুলির পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত এবং সেগুলির তদারকির দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবেই স্থানীয় প্রশাসনগুলি, স্থানীয় প্রয়োজনের হিসেবে বাস্তবায়িত করতে পারছে। সেজন্যে এখন এবং বিহার সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় বিহারের শহরগুলিতে পানীয় জল এবং প্রয়ঃপ্রণালীর মতো মৌলিক পরিষেবাগুলির পরিকাঠামো প্রতিনিয়ত উন্নত হয়ে চলেছে। মিশন অমরুত এবং রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির মাধ্যমে বিগত ৪ – ৫ বছরে বিহারের শহর এলাকায় বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ পরিবারকে পানীয় জল পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আগামী বছরগুলিতে বিহার, দেশের সেই রাজ্যগুলির মধ্যে পরিগণিত হবে, যেখানে প্রত্যেক বাড়িতে পাইপের মাধ্যমে জল পৌঁছবে। এটি বিহারের জন্যে অনেক বড় সাফল্য নিয়ে আসবে। বিহারের গৌরব বৃদ্ধি করবে।


আপনারা এই বড় লক্ষ্য প্রাপ্তির জন্য করোনার এই সঙ্কটকালেও বিহারের জনগণ নিরন্তন কাজ করে গেছেন। বিগত কয়েকমাসে বিহারের গ্রামাঞ্চলে ৫৭ লক্ষেরও বেশি পরিবারকে পানীয় জলের সংযোগের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ রোজগার অভিযান। আমাদের হাজার হাজার শ্রমিক বন্ধু যারা করোনার ফলে অন্যান্য রাজ্য থেকে বিহারে ফিরেছেন, তাঁরা এই কাজ করে দেখিয়েছেন। জলজীবন মিশনের এই দ্রুত কাজ আমার বিহারের এই পরিশ্রমী বন্ধুদেরকেই সমর্পণ করছি। বিগত এক বছরে জলজীবন মিশনের মাধ্যমে গোটা দেশে ২ কোটিরও বেশি পানীয় জলের সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। আজ দেশে প্রতিদিন ১ লক্ষেরও বেশি বাড়িতে নতুন পাইপের মাধ্যমে জলের সংযোগ সাধন করা হচ্ছে। স্বচ্ছ জল মধ্যবিত্ত ও গরীবদের জীবন উন্নত করেছে এবং তাদের অনেক বড় রোগ থেকেও রক্ষা করেছে।


বন্ধুগণ, শহুরে এলাকার মধ্যেও বিহারের লক্ষ লক্ষ বাড়িতে শুদ্ধ পানীয় জলের সংযোগ প্রদানের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। গোটা বিহারে অমরুত যোজনার মাধ্যমে প্রায় ১২ লক্ষ পরিবারকে শুদ্ধ পানীয় জল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ পরিবারের ইতিমধ্যেই এই পরিষেবা পৌঁছে গেছে। বাকি পরিবারগুলিতে অতিশিঘ্রই নলের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছতে শুরু করবে। আজ যে প্রকল্পগুলির শিলান্যাস করা হয়েছে, সেটা এই প্রকল্পেরই অংশ।


বন্ধুগণ, নগরায়ন হল আজকের সময়ের সত্যি। আজ গোটা বিশ্বে শহুরে এলাকার সংখ্যা ক্রমবর্দ্ধমান। মূলত এই আন্তর্জাতিক পরিবর্তনকে এড়িয়ে যেতে পারে না। কিন্তু অনেক দশক ধরে আমাদের একটি মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আমরা এটা ধরেই নিয়েছি, যে নগরায়ন নিজেই একটি সমস্যা, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাই কিন্তু আমি মনে করি এমনটাই ঠিক নয়, এরকম কখনই হয় না। বাবাসাহেব আম্মেদকর সেই সময়েই এই সত্যিটাকেই বুঝতে পেরেছিলেন। আর তিনি নগরায়নের বড় সমর্থক ছিলেন। তিনি নগরায়নকে সমস্যা বলে স্বীকার করেন নি। তিনি এমনই এমন সব শহরের কল্পনা করেছিলেন, যেখানে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তিও সুযোগ পাবেন। তাদের জীবনকে উন্নত করার পথ তিনি খুলে দিয়েছেন। আজকের প্রয়োজন হল আমাদের শহরগুলিতে নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি, সমৃদ্ধি, সম্মান, নিরাপত্তা, সমাজের প্রত্যেক নাগরিকের ক্ষমতায়ন এবং আধুনিক পরিষেবাগুলি থাকা। অর্থাৎ শহর এমন হওয়া উচিত যেখানে সবাই বিশেষ করে আমাদের যুব সম্প্রদায়ের এগিয়ে যাওয়ার জন্যে নতুন এবং অসীম সম্ভাবনাগুলি সৃষ্টি হবে। শহর এমন হওয়া উচিত, যেখানে প্রত্যেক পরিবার সমৃদ্ধির সঙ্গে সুখে জীবন-যাপন করতে পারেন। শহর এমন হওয়া উচিত, যেখানে গরীব, দলিত, পিছিয়ে পড়া এবং মহিলারা প্রত্যেকেই সম্মানের জীবন-যাপন করতে পারেন। যেখানে নিরাপত্তা থাকবে, আইনের শাসন থাকবে, যেখানে সমাজ, সমাজের প্রত্যেক অংশের মানুষ একসঙ্গে মিলে মিশে চলতে পারবেন। আর শহর এমন হওয়া উচিত, যেখানে সমস্ত আধুনিক পরিষেবা থাকবে, আধুনিক পরিকাঠামো থাকবে, এটাইতো ইজ অফ লিভিং। এটাই দেশের স্বপ্ন, এই লক্ষ্যেই দেশ এগিয়ে চলেছে।


আর বন্ধুগণ, আজ আমরা দেশে একটি নতুন ধরণের নগরায়ন দেখতে পাচ্ছি। যে শহরগুলি আগে দেশের মানচিত্রে প্রায় ছিলই না, সেগুলি আজ তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, আর সবাইকে অনুভব করাচ্ছে। আমাদের সেই শহরগুলির যুবসম্প্রদায় যারা বড় বড় বেসরকারী স্কুল-কলেজে পড়েন নি, যারা অনেক বড়লোক পরিবারে বড় হন নি, তারাও আজ অসাধারণ সব কাজ করছেন। সাফল্যের নতুন নতুন মাত্রা গড়ে তুলছেন। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত নগরায়নের মানে হত কয়েকটি বড় বড় শহরকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলো, কয়েকটি হাতেগোনা শহরে ২-১টি ক্ষেত্রে উন্নয়ন করে দাও। কিন্তু এখন এই ভাবনা, এই পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। এখন বিহারের মানুষ ভারতের এই নতুন নগরায়নে নিজেদের সম্পূর্ণ অবদান রাখতে পারছেন।


বন্ধুগণ, আত্মনির্ভর বিহার এবং আত্মনির্ভর ভারতের মিশনকে গতি প্রদান করতে বিশেষ করে দেশের ছোট ছোট শহরগুলিকে শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎএ প্রয়োজন অনুসারে গড়ে তোলার অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। এই ভাবনা নিয়ে অমরুত মিশনের মাধ্যমে বিহারের অনেক শহরে জরুরী পরিষেবাগুলি উন্নয়নের পাশাপাশি, ইজ অফ লিভিং এবং ইজ অফ ডুইং বিসনেসের জন্য উন্নত পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। অমরুত মিশনের মাধ্যমে এই শহরগুলিতে জল এবং প্রয়ঃপ্রণানীর পাশাপাশি, গ্রীণজোন, পার্ক, এলইডি স্ট্রিট লাইটের মতো ব্যবস্থাগুলি গড়ে তোলা হচ্ছে। এই মিশনের মাধ্যমে বিহারের নগর এলাকায় লক্ষ লক্ষ পরিবারকে উন্নত প্রয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও অধিকাংশ পরিষেবা এমন বস্তিগুলিতে বিকশিত করা হয়েছে, যেখানে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর পরিবারের মানুষ থাকেন। বিহারের শতাধিক পুরসভা এলাকায় সাড়ে ৪ লক্ষ এলইডি স্ট্রিট লাইট লাগানো হয়েছে। এর ফলে আমাদের ছোট শহরগুলির রাজপথ ও গলিগুলিতে রাতে আলোর ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। পাশাপাশি, কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে এবং মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত ও সহজ হচ্ছে।


বন্ধুগণ, বিহারের জনগণ, বিহারের শহরগুলির সঙ্গে গঙ্গা নদীর অনেক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। রাজ্যের ২০টি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর গঙ্গার তীরেই অবস্থিত। গঙ্গা নদীর পরিচ্ছন্নতা এবং গঙ্গা জলের স্বচ্ছতার প্রভাব সরাসরি এই শহরগুলিতে বসবাসকারী কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে। গঙ্গা নদীর পরিচ্ছন্নতা মাথায় রেখে বিহারে ৬০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে ৫০টির বেশি প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে। সরকারের চেষ্টা করছে, যাতে গঙ্গার দুই তীরে সমস্ত শহরগুলি থেকে বড় বড় নালার মাধ্যমে নোংরা জল সরাসরি গঙ্গায় মেশাকে আটকানো যায়। সেজন্য অনেক জল পরিশোধন প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। আজ পাটনার বেউর এবং করম লীচককে যে প্রকল্পের উদ্বোধন হল, সেগুলির মাধ্যমে এই অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। এর পাশাপাশি, গঙ্গার দুই তীরে যত গ্রাম আছে, সেগুলিকে গঙ্গা গ্রাম রূপে বিকশিত করা হচ্ছে। এই গ্রামগুলিতে লক্ষ লক্ষ শৌচালয় নির্মাণের পর এখন আবর্জনা ব্যবস্থাপনা এবং জৈব চাষের মতো বেশ কিছু পরিবেশ বান্ধব বিষয়কে উৎসাহ যোগানো হচ্ছে।


বন্ধুগণ, গঙ্গার দুই তীরের গ্রাম ও শহরগুলিতে আস্থা এবং আধ্যাত্মের সঙ্গে যুক্ত পর্যটনের প্রধান কেন্দ্রগুলি রয়েছে। গঙ্গা নদীতে নির্মল বাধাহীন করে তোলার অভিযান যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তেমনি এই অঞ্চলির পর্যটনেও আধুনিক মাত্রা যুক্ত করছে। নমামী গঙ্গে মিশনের মাধ্যমে বিহার সহ গোটা দেশে ১৮০টিরও বেশি ঘাটকে নির্মাণের কাজ চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১৩০টি ঘাটের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। তাছাড়া ৪০টিরও বেশি মোক্ষধামগুলিরও কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। দেশের গঙ্গার দু পারে অনেক জায়গায় আধুনিক পরিষেবা যুক্ত রিভার ফ্রন্ট প্রকল্প সম্পূর্ণ হয়েছে। আর মুজাফ্ফরপুরেও এমনই রিভার ফ্রন্ট নির্মাণ প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে। যখন মুজাফ্ফরপুরের আখাড়া ঘাট, সিঁড়ি ঘাট এবং চন্দুয়ারা ঘাটকে বিকশিত করা হবে, তখন এটিও একটি বড় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। বিহারে এত দ্রুত কাজ হচ্ছে, কাজ শুরু হওয়ার পর এত দ্রুত সম্পূর্ণ হচ্ছে, আজ থেকে দেড় দশক আগে এই পরিস্থিতি কল্পনা করা যেত না, কিন্তু নীতিশজীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় কেন্দ্রীয় সরকারের চেষ্টায় এগুলি বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আশাকরি এই প্রচেষ্টাগুলি আগামী ছটিমাইয়ার পুজোর সময় বিহারের জনগণকে বিশেষ করে বিহারের মহিলাদের সমস্যা অনেক সমাধান হবে, তাদের জীবন অনেক সহজ হবে। ছটিমাইয়ার আর্শীবাদে আমরা বিহারের নাগরিক এবং গ্রামীণ এলাকাগুলিকে নোংরা জল, রোগ ও সংক্রমণ বৃদ্ধিকারী জল থেকে মুক্তি দেওয়ার কাজ প্রাণপণে করে যাবো।


বন্ধুগণ, আপনারা হয়তো শুনেছেন, সম্প্রতি সরকার একটি ‘প্রজেক্ট ডলফিন’ ঘোষণা করেছে। এই মিশনের মাধ্যমে গঙ্গার ডলফিনেরাও খুব লাভবান হবে। গঙ্গা নদীর সংরক্ষণের জন্য গাঙ্গেয় ডলফিনের সংরক্ষণও অত্যন্ত জরুরী। পাটনা থেকে শুরু করে ভাগলপুর পর্যন্ত গঙ্গায় অনেক ডলফিন রয়েছে। সেজন্য প্রজেক্ট ডলফিনের মাধ্যমে বিহারবাসী অত্যন্ত লাভবান হবেন। এখানে গঙ্গায় জৈব বৈচিত্রের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় থাকার পাশাপাশি পর্যটনও অনেক শক্তিশালী হবে।


বন্ধুগণ, করোনা সংক্রমণের চ্যালেঞ্জের মাঝে বিহারের উন্নয়ন, বিহারের সুশাসনের এই অভিযান নিরন্তর এগিয়ে যাবে। আমরা সম্পূর্ণ শক্তি, সম্পূর্ণ সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে যাবো। কিন্তু এর পাশাপাশি প্রত্যেক বিহারবাসী, প্রত্যেক দেশবাসী যেন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার সংকল্প না ভোলেন। মাস্ক, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, দুই গজের দূরত্ব এগুলি আমাদের সুরক্ষার সবচাইতে কার্যকরী হাতিয়ার। আমাদের বৈজ্ঞানিকরা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আবিস্কারের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, যতদিন ওষুধ আসবে না, ততদিন অবহেলা চলবে না। এই নিবেদনের পাশাপাশি আর একবার আপনাদের সবাইকে এই উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলির জন্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
ধন্যবাদ !!!

 

 


CG/SB/SFS



(Release ID: 1654781) Visitor Counter : 355