প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ইউএস-আইএসপিএফ-এর ২০২০-র ভারত-মার্কিন শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ মূল ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী


বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারত আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 03 SEP 2020 9:31PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

 



প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারত-মার্কিন ২০২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ মূল ভাষণ দিয়েছেন।

ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্ব ফোরাম (ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরাম – ইউএসআইএসপিএফ) হল একটি অলাভজনক সংস্থা যারা ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারিত্ব নিয়ে কাজ করে। পাঁচদিনের এই সম্মেলনের এবারের মূল বিষয় ছিল 'ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে এগোচ্ছে’। সম্মেলন শুরু হয় ৩১শে আগস্ট।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ব জুড়ে এই মহামারী প্রত্যেকের জীবনে প্রভাব বিস্তার করেছে। এর মাধ্যমে আমাদের স্থিতাবস্থা, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও আর্থিক ব্যবস্থার পরীক্ষা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি মুক্ত চিন্তার দাবী করে। সেটি এমন এক  চিন্তাধারা  যা মানব-কেন্দ্রিক উন্নয়নের দিকে এগোবে,  যখন প্রত্যেকের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ বর্তমানে দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে দরিদ্রদের নিরাপত্তা দান ও আমাদের নাগরিকদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয় উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেছেন, আমাদের নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশে সীমিত মানবসম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভারতে সংক্রমিতদের মৃত্যুর হার প্রতি ১০ লক্ষ জনের হিসেবে বিশ্বে সবচাইতে কম।

ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বিশেষ করে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রায় শূণ্য থেকে শুরু করে তাঁরা আজ দেশকে দ্বিতীয় বৃহত্তম পিপিই কিট প্রস্তুতকারক রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। শ্রী মোদী এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন সংস্কারের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, ১৩০ কোটি ভারতবাসীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা এই মহামারীর কারণে হ্রাস পায়নি। তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সুদূরপ্রসারী সংস্কার গ্রহণ করা হয়েছে যার ফলে, ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধা হবে এবং লালফিতের ফাঁস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বে সর্ববৃহৎ আবাসন কর্মসূচি ভারতে চলছে। এর সঙ্গে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির পরিকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে। তিনি এই প্রসঙ্গে রেল, সড়ক ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কথাও উল্লেখ করেছেন। শ্রী মোদী বলেছেন, একটি জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশন গড়ে তোলার জন্য ভারতে অনন্য একটি ডিজিটাল মডেল তৈরি করা হচ্ছে।

আমরা ব্যাঙ্ক, ঋণদান ব্যবস্থা, ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় লেনদেন এবং বিমা ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ আর্থিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। এই উদ্যোগের ফলে বিশ্বমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং সবথেকে ভালো ব্যবস্থাপনার সাহায্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে।

শ্রী মোদী বলেছেন,  এই মহামারী সারা বিশ্বকে দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে সরবরাহ শৃঙ্খল মূল্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা যায় না। এর জন্য বিশ্বাসের প্রয়োজন। ভৌগোলিক অবস্থানের পাশাপাশি, বিভিন্ন কোম্পানি এখন বিশ্বাসযোগ্যতা ও নীতি গ্রহণের স্থায়িত্বের দিকে গুরুত্ব দেয়। ভারতে এই সব সুবিধাগুলিই রয়েছে। আর, এ কারণেই ভারত বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি - সারা বিশ্ব আমাদের বিশ্বাস করে। এ বছর ২,০০০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি বিনিয়োগ ভারতে এসেছে। গুগল, অ্যামাজন এবং মুবাডালা ভারতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী ভারতে স্বচ্ছ এবং অনুমানযোগ্য পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এই ব্যবস্থার ফলে সৎ করদাতারা উৎসাহী হন এবং তাঁরা বিভিন্ন সহায়তা পান। ভারতের অপ্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থা -  পণ্য ও পরিষেবা কর একটি একক ব্যবস্থা।

প্রধানমন্ত্রী ঋণ খেলাপি বিরোধী নীতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সম্পূর্ণ আর্থিক ব্যবস্থা এর ফলে কম ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি সর্বাঙ্গীণ শ্রম সংস্কারের কথাও উল্লেখ করেছেন যার মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থার ওপর বোঝা কমবে, আবার কর্মচারীদের সামাজিক সুরক্ষাও নিশ্চিত হবে। 

প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নে গতি আনার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন ভারত এই পথ অনুসরণ করে চাহিদা এবং সরবরাহ – দুটি বিষয়কেই সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেছেন, এর ফলে ভারত  বিশ্বে সবথেকে কম কর প্রদানকারী ব্যবস্থা প্রচলন করেছে এবং নতুন নতুন উৎপাদন শিল্পকে আরও উৎসাহব্যঞ্জক ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

মনুষ্যবিহীন বৈদ্যুতিন ব্যবস্থাপনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যার ফলে কর প্রদানের ক্ষেত্রে নাগরিকদের সুবিধা হচ্ছে। বন্ড বাজারের পরিচালন ক্ষেত্রে সংস্কারের ফলে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৯ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ, এই একই সময়ে আন্তর্জাতিক স্তরে এর পরিমাণ ১ শতাংশ কমে গেছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সাফল্য প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি বলেছেন, এইসব ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থায় দৃঢ়তা আনতে ভারত বড় ভূমিকা পালন করবে।

আত্মনির্ভর ভারত গঠনের লক্ষ্যে ১৩০ কোটি ভারতীয় যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্থানীয় পর্যায়কে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হবে যার ফলে, ভারতের শক্তি বিশ্বকে আরও ক্ষমতায়িত করবে।

তিনি বলেছেন, ভারতকে পরোক্ষ বাজার থেকে সক্রিয় উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হবে যেটি আন্তর্জাতিক মূল্য শৃঙ্খলকে প্রভাবিত করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এবং খনি, কয়লা, রেল প্রতিরক্ষা, মহাকাশ ও আণবিক শক্তি ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি মোবাইল, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ উৎপাদনকে উৎসাহব্যঞ্জক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন এবং কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়টিও তুলে ধরেন।

শ্রী মোদী আরও বলেছেন,  ভারত যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সেগুলি মোকাবিলা করার জন্য এমন এক সরকার রয়েছে যারা তাদের কাজের মাধ্যমে ফলাফল প্রদানের ওপর বিশ্বাস করে এবং সহজে জীবনযাত্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

তিনি ভারতকে তরুণদের দেশ বলে বর্ণনা করেছেন যেখানে মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের কম এবং যাঁরা উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগ্রহী। তিনি বলেছেন, ভারত এমন একটি দেশ যেখানে রাজনৈতিক স্থিরতা ও নীতিগত ধারাবাহিকতা রয়েছে এবং যে দেশ বৈচিত্র্য ও গণতন্ত্র রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।

 



CG/CB/DM



(Release ID: 1651183) Visitor Counter : 239