প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মণিপুর জল সরবরাহ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

Posted On: 23 JUL 2020 3:16PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৩ জুলাই, ২০২০

 

 

 

মণিপুরের রাজ্যপাল শ্রীমতী নাজমা হেপতুল্লা মহোদয়া,

 

মণিপুরের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী এন বীরেন সিং,

 

আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, শ্রী জিতেন্দ্র সিং, শ্রী রতনলাল কাটারিয়া,

 

মণিপুরের সাংসদ এবং বিধানসভার সমস্ত জনপ্রতিনিধিগণ,

 

আমার প্রিয় মণিপুরের ভাই ও বোনেরা,

 

আজকের এই কর্মসূচি এটা প্রমাণ করে যে করোনার এই সঙ্কটকালেও আমাদের দেশ থেমে নেই, কোথাও আটকে নেই এবং দেশ ক্লান্ত হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত ভ্যাক্সিন আমাদের হাতে না আসে, ততক্ষণ করোনার বিরুদ্ধে আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়াই করে যেতে হবে এবং জয়ী হতে হবে। পাশাপাশি, উন্নয়নের কাজগুলিকেও পূর্ণ শক্তি দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এবার তো পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতকে একরকম দ্বিগুণ সমস্যার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। এ বছর উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারী বর্ষার ফলে অনেক ক্ষতি হচ্ছে, অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অনেককে বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। আমি সমস্ত সঙ্কটগ্রস্থ পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানাই। এই কঠিন সময়ে আমি আপনাদের সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই যে গোটা দেশ আপনাদের পাশে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সমস্ত রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। প্রয়োজনীয় সব কিছু করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে।

 

বন্ধুগণ,

 

মণিপুরে করোনা সংক্রমণের গতি ও ব্যাপ্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য সরকার দিন-রাত কাজ করছে। লকডাউনের সময় মণিপুরের জনগণের জন্য সমস্ত জরুরি পরিষেবা এবং যাঁরা রাজ্যের বাইরে রয়েছেন তাঁদের ফিরিয়ে আনার বিশেষ ব্যবস্থা করার মতো প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাজ্য সরকার যথাসময়ে নিয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা’র মাধ্যমে মণিপুরের প্রায় ২৫ লক্ষ গরীব ভাই-বোনকে অর্থাৎ, প্রায় ৫-৬ লক্ষ পরিবারকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, এই রাজ্যের ১ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি বোনেদের ‘উজ্জ্বলা’ যোজনার মাধ্যমে বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পগুলি এই সঙ্কটের সময়ে এভাবেই দরিদ্র মানুষদের সাহায্যে কাজ করে যাবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ ইম্ফল সহ মণিপুরের লক্ষ লক্ষ জনগণের জন্য, বিশেষ করে আমাদের বোনেদের জন্য একটি বড় দিন। কিছুদিন পরেই রাখী উৎসব আসছে। তার আগে মণিপুরের বোনেদের জন্য একটি বড় উপহারের সূত্রপাত হতে চলেছে। প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে মণিপুর জল সরবরাহ প্রকল্প এখানকার জনগণের জলের সমস্যা লাঘব করবে। বৃহত্তম ইম্ফল সহ ছোট-বড় ২৫টি শহর এবং ১,৭০০-রও বেশি গ্রামে এই প্রকল্পের মাধ্যমে যে জল পৌঁছে দেওয়া হবে, সেই জলধারা আপামর মানুষের জীবনধারায় পরিণত হবে। সবথেকে বড় কথা হল এই প্রকল্প নিছকই বর্তমানের কথা ভেবে গড়ে তোলা হচ্ছে না, আগামী ২০-২২ বছরের প্রয়োজনকে মাথায় রেখে এর নকশা তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও হবে। আপনারা জানেন, যখন আমরা বিশুদ্ধ পানীয় জল পান করি, তখন আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রোগ প্রতিরোধে অনেক সাহায্য করে, রোগ দূরে থাকে। সেজন্য শুধুই নলের মাধ্যমে জল আসবে এটাই যথেষ্ট নয়, নিশ্চিতভাবে এই প্রকল্প প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার আমাদের লক্ষ্যের বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে। আমি এই জল প্রকল্পের জন্য মণিপুরের জনগণ এবং বিশেষ করে আমার মণিপুরের মা ও বোনেদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

 

বন্ধুগণ,

 

গত বছর যখন দেশে জল জীবন মিশনের সূত্রপাত হয়েছিল, তখন আমি বলেছিলাম, আমাদের পূর্ববর্তী সরকারগুলির তুলনায় অনেক গুণ দ্রুত কাজ করতে হবে। যখন ১৫ কোটিরও বেশি বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছতে হবে, তখন একটি মুহূর্তও থেমে থাকার কথা ভাবা যায় না। সেজন্যই লকডাউনের সময়েও পঞ্চায়েতগুলিকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে গ্রামে পাইপলাইন পাতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ লাগাতার চালিয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

আজ পরিস্থিতি এরকম যে, প্রতিদিন প্রায় দেশের ১ লক্ষ বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রতিদিন ১ লক্ষ মা ও বোনেদের জীবন থেকে জল নিয়ে দুশ্চিন্তা আমরা দূর করতে পারছি। অন্যভাবে বলা যায়, প্রতিদিন ১ লক্ষ পরিবারের মা ও বোনেদের জীবন সহজ করে তোলা হচ্ছে। জল জীবন মিশনকে দেশে একটি গণ-আন্দোলন রূপে পরিণত করতে পারার সাফল্য হিসেবেই এত দ্রুতগতিতে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গ্রামের মানুষ বিশেষ করে, গ্রামের বোনেরা, গ্রামের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করছেন কোথা দিয়ে পাইপলাইন পাতা হবে, কোন উৎস থেকে জল নেওয়া হবে, কোথায় ট্যাঙ্ক তৈরি হবে, আর কোথায় কত টাকা লাগবে।

 

বন্ধুগণ,

 

সরকারি ব্যবস্থায় এতবড় বিকেন্দ্রিকরণ, এতবড় মাত্রায় তৃণমূল স্তরে ক্ষমতায়ন – আপনারা কল্পনা করতে পারেন, জল কতবড় শক্তি হয়ে আমাদের জীবনে আসছে?

 

বন্ধুগণ,

 

‘ইজ অফ লিভিং’ অর্থাৎ, সহজে জীবনধারণ, উন্নত জীবনধারণের একটি প্রয়োজনীয় পূর্ব শর্ত। টাকা-পয়সা কম থাকতে পারে, বেশিও থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের প্রত্যেকেরই ‘ইজ অফ লিভিং’-এর অধিকার রয়েছে বিশেষ করে, আমাদের গরীব ভাই, বোন, মা, দলিত, পিছিয়ে পড়া, আদিবাসী - প্রত্যেকের জীবনে ‘ইজ অফ লিভিং’-এর অধিকার আছে।

 

সেজন্য বিগত ছ’বছরে ভারতে ‘ইজ অফ লিভিং’-এরও একটি বড় আন্দোলন চলছে। ভারত তার নাগরিকদের জীবনে প্রত্যেক প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদানের চেষ্টা করছে। বিগত ছ’বছরে প্রতিটি স্তরে, প্রত্যেক ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যা গরীব সাধারণ মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ যুগিয়েছে। আজ মণিপুর সহ গোটা ভারত উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্মমুক্ত হিসেবে ঘোষিত হয়ে গেছে। আজ ভারতের প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে গেছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আজ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর ব্যক্তির রান্নাঘরেও এলপিজি গ্যাস পৌঁছে গেছে। প্রতিটি গ্রামে পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে। প্রত্যেক গরীব গৃহহীনকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সবচাইতে বড় সমস্যা ছিল পরিশ্রুত পানীয় জলের যা এখন মিশন মোডে সম্পন্ন করার কাজ চলছে।

 

বন্ধুগণ,

 

উন্নত জীবনযাপনের জন্য প্রগতি এবং সমৃদ্ধির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে। উত্তর-পূর্ব ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এখানকার জনগণের ‘ইজ অফ লিভিং’ সুনিশ্চিত করার জন্য যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনই নিরাপদ এবং আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য সম্পূর্ণ করার জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেজন্য একদিকে যেমন মায়ানমার, ভুটান, নেপাল এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সামাজিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালী হবে, অন্যদিকে তেমনই ভারতের ‘পূর্বের জন্য কাজ করো’ নীতিকে শক্তিশালী করবে।

 

আমাদের এই উত্তর-পূর্বাঞ্চল একদিক থেকে দেখতে গেলে পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে আমাদের প্রাচীন সাংস্কৃতিক সম্পর্কের এবং আমাদের ভবিষ্যতের বাণিজ্য, যাতায়াত এবং পর্যটনের সম্পর্কের সিংহদ্বার। এই ভাবনা নিয়ে মণিপুরের সঙ্গে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য প্রতিনিয়ত পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। সড়ক পথ, মহাসড়ক পথ, বিমান পথ, জলপথ এবং আই-ওয়েজের পাশাপাশি, গ্যাস পাইপলাইনেরও আধুনিক পরিকাঠামো, অপটিক্যাল ফাইবার পরিকাঠামো, পাওয়ার গ্রিড ব্যবস্থা - এমনই অনেক কাজ, এমনই অনেক পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জাল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিছানো হচ্ছে।

 

বিগত ছয় বছরে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির প্রতিটি রাজধানীকে চার-লেন সড়ক পথ এবং জেলা শহরগুলিকে দুই-লেন সড়ক পথ ও গ্রামগুলিকে সমস্ত ঋতুতে চলাচলযোগ্য পাকা রাস্তার মাধ্যমে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার সড়ক পথ ইতিমধ্যেই নির্মিত হয়েছে এবং আরও ৬ হাজার কিলোমিটার সড়ক পথ নির্মাণের প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

উত্তর-পূর্ব ভারতে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার ক্ষেত্রে এত কাজ হয়েছে যে প্রত্যেকেই এই পরিবর্তন টের পাচ্ছেন। একদিকে নতুন নতুন স্টেশনগুলিতে রেল পৌঁছচ্ছে, অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রেল নেটওয়ার্ককে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। আপনারা প্রত্যেকেই নিশ্চিতভাবে এই পরিবর্তন অনুভব করছেন। প্রায় ১৪ হাজার কোটি বিনিয়োগে জিরিবাম-ইম্ফল রেল লাইন তৈরি হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ হলে মণিপুরের জনজীবনে অনেক পরিবর্তন আসবে। এভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীকে আগামী দু’বছরের মধ্যে উন্নত রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

সড়ক পথ এবং রেলপথ ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতে বিমান যোগাযোগও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আজ উত্তর-পূর্ব ভারতে ছোট-বড় প্রায় ১৩টি সক্রিয় বিমানবন্দর রয়েছে। ইম্ফল বিমানবন্দর সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে সক্রিয় বিমানবন্দরগুলি সম্প্রসারণের মাধ্যমে সেগুলিতে আধুনিক পরিষেবা গড়ে তুলতে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য আরেকটি বড় প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে, সেটি হল অন্তর্দেশীয় জলপথের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। এক্ষেত্রে আমি একটি বড় বিপ্লব দেখতে পাচ্ছি। উত্তর-পূর্ব ভারতেই এখন ২০টিরও বেশি জাতীয় জলপথ চালু করার কাজ এগিয়ে চলেছে। ভবিষ্যতে এখানকার যোগাযোগ  ব্যবস্থা শুধুই শিলিগুড়ি করিডর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখন সমুদ্র এবং নদীগুলির নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন আমাদের শিল্পপতিরা এবং আমাদের কৃষকরা। এভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতে মাল পরিবহণের সময়ও সাশ্রয় হচ্ছে। আরেকটি লাভ হয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের গ্রামগুলি থেকে কৃষকদের উৎপাদিত দুধ-সব্জি এবং এখানকার নানা খনিজ পদার্থ দেশ-বিদেশের বড় বাজারগুলিতে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারছে।

 

বন্ধুগণ,

 

উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এ দেশের সাংস্কৃতিক শক্তির একটি বড় প্রতীক। এই শক্তি ভারতের সম্মান ও শৌর্য্যের প্রতীকও। এই প্রেক্ষিতে আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে উঠলে এই রাজ্যগুলিতে পর্যটনও শক্তিশালী হবে। মণিপুর সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর্যটন সম্ভাবনা আজও সঠিকভাবে অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। এখন তো আমি দেখছি, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম এবং ভিডিও স্ট্রিমিং-এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশে উত্তর-পূর্ব ভারতের যে ছবি পৌঁছচ্ছে, তা এখানকার পর্যটনের বিকাশের সুফলকে প্রতিটি পরিবারকে উপকৃত করবে। উত্তর-পূর্ব ভারতের পর্যটনের ক্ষেত্রে অনাবিষ্কৃত জায়গাগুলির ভিডিও সবাইকে আশ্চর্য চকিত করে তুলছে। সবাই এটা ভেবে গর্ববোধ করছেন যে এই জায়গা আমাদের দেশে রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারত তার এই শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করুক, এখানকার নবীন প্রজন্মের কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে তুলুক – এই ভাবনা মাথায় রেখে সরকার অনেক কাজ করে চলেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

উত্তর-পূর্ব ভারত একদিন ভারতের উন্নয়নের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। এই বিশ্বাস প্রতিদিন আমার মনে আরও বেশি দৃঢ় হচ্ছে কারণ এখন গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি পুনঃস্থাপিত হয়েছে। যে অঞ্চল থেকে আগে শুধুই নেতিবাচক খবর আসত, সেখানে এখন শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মন্ত্র গুঞ্জরিত হচ্ছে।

 

একদিকে যেখানে মণিপুরে অবরোধ-প্রতিরোধ ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠেছিল। একটু আগেই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মহোদয় বলছিলেন, আমিও আমার পক্ষ থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগরিকদের বিশেষ করে, মণিপুরের জনগণকে হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই। আপনারা আমাদের সঙ্গে থেকেছেন, আমার আওয়াজকে শক্তি দিয়েছেন, আর আজ মণিপুরে প্রতিরোধ-অবরোধ বিগত দিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অসমে কয়েক দশক ধরে যে হিংসার বাতাবরণ গড়ে উঠেছিল তাও এখন স্থিমিত। ত্রিপুরা এবং মিজোরামের যুবকরাও হিংসার পথ ত্যাগ করেছে। এখন ব্রূ-রিয়াং শরণার্থীরা একটি উন্নত জীবনের দিকে এগিয়ে চলেছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

উন্নত পরিকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শান্তি - যখন এই তিনটি জিনিস উন্নত হয়, তখন শিল্পোদ্যোগের জন্য, বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়। উত্তর-পূর্ব ভারতে জৈব ফসল এবং বাঁশ – এই দুটির এমন শক্তি রয়েছে যা আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে শক্তিশালী করে তোলার সামর্থ্য রাখে। আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি এই সুযোগে উত্তর-পূর্ব ভারতের কৃষক ভাই-বোনদের বিশেষভাবে বলতে চাই, আমি দীর্ঘদিন ধরেই লাগাতার বলে আসছি যে উত্তর-পূর্ব ভারত দেশের জৈব রাজধানী হয়ে উঠতে পারে। আজ আমি আরেকটি কথা বলতে চাই। সম্প্রতি কয়েকজন বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। তাঁরা ছিলেন কৃষি বিজ্ঞানী, আর ছিলেন কয়েকজন কৃষি অর্থনীতিবিদ। তাঁরা আমাকে একটি মজার কথা বললেন। তাঁরা আমাকে বললেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের কৃষকরা যদি বেশি করে পামোলিনের চাষ শুরু করেন, তাহলে এখানকার কৃষকরা অনেক বড় সাফল্য পাবেন। আজ ভারতে পামোলিন তেলের নিশ্চিত বাজার রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের কৃষকরা জৈব চাষের মধ্যে পামোলিনকেও যুক্ত করে নিলে আপনারা কল্পনা করতে পারেন, আপনারা ভারতের কত বড় সেবা করবেন? আমাদের অর্থনীতিকে কতটা নতুন গতি দেবেন? আমি উত্তর-পূর্ব ভারতের সমস্ত রাজ্য সরকারকে অনুরোধ জানাই আপনারা নিজের নিজের রাজ্যে পামোলিন অভিযান চালু করুন। কৃষকদের শিক্ষিত করুন, প্রেরণা যোগান এবং ভবিষ্যতে আমাদের পক্ষ থেকে যদি এই কৃষকদের কোন সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তার জন্যও আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কোন প্রকল্প তৈরি করতে পারি। এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারি। একথাই আজ আমি মণিপুরের ভাই-বোনেদের বলতে চাই।

 

আমার উত্তর-পূর্ব ভারতের ভাই-বোনেরা সর্বদাই লোকালের জন্য ভোকাল ছিলেন। আর শুধুই তাঁরা ভোকাল ছিলেন না, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৈশিষ্ট্য হল তাঁরা লোকালের জন্য গর্বিত। আমার মনে আছে, যখন আমি এরকম স্কার্ফ পড়ি, তখন যে রাজ্যের স্কার্ফ পড়ি সে রাজ্যের মানুষ গর্বের সঙ্গে সেটি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। নিজেদের এলাকার উৎপাদিত পণ্য নিয়ে গর্ব হওয়া অনেক বড় ব্যাপার। আর সেজন্য লোকালের জন্য ভোকাল হওয়া নিয়ে উত্তর-পূর্বের মানুষকে বোঝাতে যাওয়া চেষ্টাই আমার করা উচিৎ নয়। কারণ, আপনারা এর থেকে চার পা এগিয়ে আছেন। আপনারা তো লোকালের জন্য অনেক বেশি গর্ব করার মানুষ। আপনারা এর জন্য অহঙ্কার করতে পারেন যে এটা আমাদের। এটাই উত্তর-পূর্ব ভারতের শক্তি।

 

যে পণ্যগুলি উত্তর-পূর্ব ভারতে উৎপাদিত হয় তার মধ্যে অধিকাংশই মূল্য সংযোজন, মুল্য উন্নয়ন এবং বাজারে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে অনেক সময়েই বঞ্চিত থেকে যেত। দেশের অন্যান্য অংশের মানুষ জানতেনই না। এখন আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং বাজারজাত করার জন্য গুচ্ছ বিপণন ব্যবস্থাকে উন্নত করা হচ্ছে। এই গুচ্ছ বিপণন ব্যবস্থার মধ্যে কৃষিজাত পণ্যের স্টার্ট-আপ এবং অন্যান্য শিল্পোদ্যোগগুলিকেও সমস্ত সুবিধা প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের জৈব ফসল দেশ ও বিদেশের বাজারে পৌঁছে দিতে প্রতিটি প্রয়োজনীয় পরিষেবা হাতের কাছেই পাওয়া যাবে।

 

বন্ধুগণ,

 

উত্তর-পূর্ব ভারত দেশের আমদানি করা বাঁশের চাহিদাকে স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করার ক্ষমতা রাখে। ভারতে ধূপকাঠির অনেক বড় চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেজন্য আমাদের কোটি কোটি টাকার বাঁশ আমদানি করতে হয়। এই পরিস্থিতিকে পরিবর্তনের জন্য দেশে অনেক কাজ হচ্ছে। আর এর দ্বারা উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি অনেক উপকৃত হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

উত্তর-পূর্ব ভারতের বাঁশ শিল্পকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আগেই একটি ব্যাম্বু ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-এর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নুমালিগড়ে বাঁশ থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। ন্যাশনাল ব্যাম্বু মিশনের মাধ্যমে বাঁশ চাষি, হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা এবং অন্যান্য পরিষেবার জন্য কয়েকশ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুব সম্প্রদায় এবং এখানকার স্টার্ট-আপগুলি অনেক উপকৃত হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই দ্রুতগতির পরিবর্তনে যে রাজ্যগুলি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হবে, তারাই বেশি উপকৃত হবে। মণিপুরের সামনে অপরিসীম সুযোগ রয়েছে, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মণিপুর এই সুযোগগুলি হাতছাড়া করবে না। এগুলির মাধ্যমে এই রাজ্যের কৃষক ভাই-বোনেরা, এই রাজ্যের নবীন শিল্পোদ্যোগীরা অনেক বেশি লাভবান হবেন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে মণিপুরের যুব সম্প্রদায়ের স্থানীয় স্তরেই কর্মসংস্থান হয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, স্টার্ট-আপ এবং অন্যান্য প্রশিক্ষণের জন্য এখন এ রাজ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।

 

জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বমানের স্টেডিয়াম নির্মাণের ফলে মণিপুর দেশের ক্রীড়া মেধাকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তোলার ক্ষেত্রে একটি বড় হাবে পরিণত হয়ে উঠছে। শুধু তাই নয়, দেশের অন্যান্য অংশেও মণিপুর সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সমস্ত শিক্ষার্থীদের এখন ছাত্রাবাস সহ সমস্ত উন্নত পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। উন্নয়ন এবং বিশ্বাসের এই পথকে আমাদের আরও শক্তিশালী করে যেতে হবে। আরেকবার আপনাদের সবাইকে এই নতুন জল প্রকল্পের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

 

বিশেষ করে, আমাদের মা ও বোনেদের আশীর্বাদ, আমাদের সেই শক্তিতে বলীয়ান করে তুলুক যাতে আমার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের বাড়িতে বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোথাও কোনও বিপত্তি না ঘটে। নির্ধারিত সময়ের আগেই যেন আমরা সমস্ত কাজ করতে পারি। মণিপুরের মা ও বোনেরা আমাদের এই আশীর্বাদ দিন। আমরা কাজ করতে চাই। কাজ করার জন্য আমাদের আশীর্বাদ দিন। আপনাদের আশীর্বাদে অনেক শক্তি রয়েছে। আর সামনেই তো রাখী উৎসব আসছে। আমি আপনাদের অনুরোধ জানাই, আপনাদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। আপনারা সবাই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল থাকবেন। পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ভারত সর্বদাই অত্যন্ত সচেতন এবং সতর্ক। উত্তর-পূর্ব ভারত এক্ষেত্রে সর্বদাই দেশের অন্যান্য অংশের সামনে মডেল হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু আজ যখন আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছি, তখন দুই গজ দূরত্ব, ফেস মাস্ক পড়া এবং বারবার হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজ করা, কখনও যেখানে সেখানে থুতু না ফেলা, পরিবেশকে নোংরা না করার মতো বিধিনিষেধগুলি সযত্নে পালন করতে হবে। আজ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগুলিই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। এগুলিই আমাদের করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে সহায়ক হয়ে উঠবে।

 

অনেক অনেক ধন্যবাদ!!!

 

 

 

CG/SB/DM



(Release ID: 1641109) Visitor Counter : 210