স্বাস্থ্যওপরিবারকল্যাণমন্ত্রক

কোভিড-১৯এর সর্বশেষ পরিস্থিতি

Posted On: 21 JUN 2020 4:58PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ২১ জুন, ২০২০

 



    সক্রিয় ব্যবস্থাপনা, উপযুক্ত নীতি নির্ধারণ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভারত সরকার কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে একযোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই জোরদার করে তোলার জন্য সময়ে সময়ে বিভিন্ন নির্দেশিকা, পরামর্শ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত নিয়মাবলী তৈরি করেছে এবং সেগুলি বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে।


    বেশ কয়েকটি রাজ্য কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কৌশলগুলি কার্যকর করেছে এবং ভালো ফলও পেয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকার এবং বৃহন্নুম্বাই পৌরসংস্থা (বিএমসি) এক্ষেত্রে যথেষ্ঠ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সুফলও পেয়েছে। তারা সক্রিয়ভাবে ভাইরাস প্রতিরোধ করেছে এবং কোভিড সন্দেহভাজনদের সুনির্দিষ্টভাবে অনুসন্ধান করতে পেরেছে।


    বৃহৎ জন-ঘনত্বপূর্ণ এলাকা মুম্বাইয়ের ধারাভি। এখানে এপ্রিল মাসে ৪৯১টি কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগী সন্ধান  পাওয়া গিয়েছিল। মাত্র ১৮ দিনেই এখানে কোভিড সংক্রমনের ঘটনা দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছিল। এমনকি এপ্রিল মাসে এই সংক্রমনের হার ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। কিন্তু বিএমসি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে মে মাসে ধারাভিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কমে ৪.৩ শতাংশে নেমে আসে। এমনকি সংক্রমণ দ্বিগুন হতেও সময় লাগে ৪৩ দিন। জুন মাসে এখানে সংক্রমণের হার নেমে দাঁড়িয়েছে ১.০২ শতাংশে। একইসঙ্গে সংক্রমণ দ্বিগুন হতে সময় লাগছে এখন ৭৮ দিন।


    ধারাভিতে এই সমস্যার মোকাবিলার করতে বিএমসি-কে বেশ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ এখানে ৮০ শতাংশ মানুষই কমিউনিটি শৌচালয়ের ওপর নির্ভরশীল। ৮ থেকে ১০ জন মানুষের পরিবার একটিমাত্র কুঁড়ে ঘরেই বাস করে। এই কুঁড়ে ঘরের দৈর্ঘ্য ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। সরু গলির মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ২-৩ তলার এই ঘরগুলিতে নিচের তল সাধারণত কারখানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই এখানে হোম কোয়ারেনটাইন কার্যত অসম্ভব ছিল। এমনকি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছিলনা।


    বিএমসি এখানে চারটি বিষয়ের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছিল। এগুলি হল, সংক্রমণ অনুসরণ, অনুসন্ধান, পরীক্ষা এবং চিকিৎসা। এরসঙ্গে কার্যকরীভাবে পর্যবেক্ষণ বা স্ক্রিনিং-এর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। ৪৭ হাজার ৫০০ জন ব্যক্তিকে ঘরে ঘরে গিয়ে  স্ক্রিনিং-এর জন্য চিকিৎসক এবং বেসরকারী ক্লিনিকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রায় ১৪ হাজার ৯৭০ জনকে ভ্রাম্যমান ক্লিনিক ভ্যানের সাহায্যে স্ক্রিনিং করা হয়। বিএমসি-র স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই এলাকায় ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৭৫ জনকে পর্যবেক্ষণ করেছিল। প্রবীণ নাগরিকদের মধ্যে যাঁদের উচ্চ ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁদের জন্য জ্বর নিরাময় চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। এর থেকে প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ সাহায্য পেয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ধারাভিতে ৫ লক্ষ ৪৮ হাজার ২০৭ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছিল। সন্দেহভাজনদের সুসংহত কোভিড কেয়ার সেন্টার এবং কোয়ারেনটাইন সেন্টারে পাঠানো হয়েছিল।


    উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলিতে কার্যকরীভাবে স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া চালানোর জন্য বিএমসি সরকারি, বেসরকারী অংশিদারিত্বেরও সাহায্য নিয়েছিল। বিএমসি বেসরকারী চিকিৎসকদের পিপিই কিটস, থার্মাল স্ক্যনার, মাস্ক এবং গ্ল্যাভস প্রদান করেছিল, যাতে তারা ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্ক্রিনিং-এর কাজ করতে পারেন এবং সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করতে পারেন।


    জনবহুল অঞ্চলে সীমাবদ্ধতার কারণে হোম কোয়ারেনটাইনের বিকল্প হিসেবে বিএমসি বিভিন্ন বিদ্যালয়, বিবাহের জন্য ভাড়া দেওয়া ঘর, ক্রীড়া  প্রাঙ্গনের মতো জায়গাগুলিতে পৃথকীকরণের ব্যবস্থা করেছিল। সেখানে প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজন এবং নৈশভোজের জন্য একটি কমিউনিটি কিচেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাশাপাশি সেখানে থাকা ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য যথাযথ চিকিৎসক এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছিল।


বিএমসি কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রাথমিক তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিল। একটি হল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য কঠোরভাবে নিয়ম পালন, দ্বিতীয়টি ব্যাপক হারে পরীক্ষা চালানো এবং তৃতীয়টি ধারাভি অঞ্চলের মানুষের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ। কেবলমাত্র গুরুতর রোগীদেরই হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য ধারাভির বাইরে বেরতে দেওয়া হতো। ধারভারির ভিতরে ৯০ শতাংশ রোগীকেই চিকিৎসা করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি বিএমসি ২৫ হাজারেরও বেশি মুদিখানার সামগ্রী এবং ২১ হাজারেরও বেশি খাবারের প্যাকেট ওই অঞ্চলে বিতরণের ব্যবস্থা করেছিল যাতে দুপুর এবং রাতের খাবারের জন্য ধারাভি অঞ্চলের লোকেরা ওই এলাকার ভিতরেই থাকে, বাইরে বেরনোর কোনো প্রয়োজন না হয়। স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদ এবং পৌরসংস্থার পক্ষ থেকে বিনামূল্যে খাবার ও মুদিখানার সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একইসঙ্গে এই অঞ্চলে কমিউনিটি শৌচাগারগুলিকে নিয়মিত জীবানুমুক্ত করা হত। এই অঞ্চলে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে স্থানীয় নেতৃত্বদেরকেই "কোভিড যোদ্ধা" হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল, যাতে তারা ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে আশঙ্কা, উদ্বেগ দূর করতে পারেন এবং সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি আস্থা রাখতে সক্ষম হন।
 



CG/SS/NS


(Release ID: 1633351) Visitor Counter : 214