PIB Headquarters
azadi ka amrit mahotsav

ভারতের প্রবীণ সমাজ

জনসংখ্যা, সমস্যা এবং সমাধানকল্পে সরকারি উদ্যোগ

Posted On: 28 OCT 2025 11:06AM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি,অক্টোবর ২৮,২০২৫

 

 

 

গুরুত্বপুর্ণ বিষয়

 

ভারতের প্রবীণ নাগরিকের জনসংখ্যা ২০৩৬ সালের মধ্যে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন হবে বলে অনুমান করা হয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫%।

দক্ষিণের রাজ্যগুলি, হিমাচল প্রদেশ এবং পাঞ্জাবের সঙ্গে, প্রবীণ জনসংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে এবং ২০৩৬ সালের মধ্যে এই আঞ্চলিক বৈষম্য আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলির জন্য সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক হল নোডাল মন্ত্রক। এই মন্ত্রক প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণের জন্য আইন, নীতি এবং কর্মসূচি তৈরি ও বাস্তবায়ন করে।

পিতামাতা এবং প্রবীণ নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণ ও কল্যাণ আইন, ২০০৭ এবং পরবর্তীতে সংশোধিত পিতামাতা এবং প্রবীণ নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণ ও কল্যাণ (সংশোধনী) আইন, ২০১৯ আইনগতভাবে সন্তান এবং উত্তরাধিকারীদের পিতামাতার রক্ষণাবেক্ষণ প্রদানের জন্য বাধ্য করে।

 

ভূমিকা

 

ভারত এক দ্রুত জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রবীণ জনসংখ্যা (৬০ বছর বা তার বেশি) ২০১১ সালের ১০০ মিলিয়ন থেকে দ্বিগুণ হয়ে ২০৩৬ সালের মধ্যে ২৩০ মিলিয়ন হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই বিবর্তন ইঙ্গিত করে যে ২০৩৬ সালের মধ্যে প্রায় সাতজন ভারতীয়ের মধ্যে একজন ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের হবেন, যা দেশের জনসংখ্যার গঠনে একটি মৌলিক পুনর্গঠনকে তুলে ধরছে। এই পরিবর্তনকে মাথায় রেখে, ভারত কমে যাওয়া প্রজনন হার এবং ক্রমবর্ধমান জীবনকালের এর ফলে উদ্ভূত সমস্যাগুলির সঙ্গে লড়াই করতে একাধিক নীতি, কর্মসূচি এবং আইনি বিধান গ্রহণ করেছে।

 

প্রবীণদের চাহিদা পূরণের গুরুত্ব

 

গুণমানসম্পন্ন পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যপরিষেবা ভারতে মানুষকে দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করেছে, তবে এর ফলে বার্ধক্যের জন্য নতুন সমস্যা এবং সুযোগও তৈরি হয়েছে। সরকারের উচিত বিশেষত আর্থিকভাবে দুর্বল প্রবীণ ব্যক্তি এবং বিধবাদের জন্য পেনশন, পর্যাপ্ত আবাসন এবং উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

প্রবীণদের সহায়তার ক্ষেত্রে এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ যেখানে পরিবার এবং গোষ্ঠী-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, পাশাপাশি আর্থিক নিরাপত্তা, ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রশিক্ষণ, দীর্ঘমেয়াদী পরিচর্যা বীমা, ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রাপ্তি, সহায়ক প্রযুক্তি এবং যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মগুলি নিশ্চিত করা হয়। বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের ভারতের উদীয়মান 'সিলভার ইকোনমি'তে (অর্থাৎ, ৫০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণদের চাহিদা পূরণের জন্য ডিজাইন করা পণ্য ও পরিষেবার মাধ্যমে চালিত অর্থনীতি) কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এই ব্যবস্থাগুলি অপরিহার্য। এটি এমন কাজের সুযোগও তৈরি করে যা প্রবীণদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা দিয়ে অবদান রাখার সুযোগ দেয়।

 

জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতি

 

বয়স্ক মানুষের সংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে কী অনুমান করা হয়েছে তা জানার জন্য টেকনিক্যাল গ্রুপ অন পপুলেশন প্রোজেকশনস  দ্বারা ২০২০ সালের জুলাই মাসে ভারত ও রাজ্যগুলির জন্য একটি "জনসংখ্যা প্রক্ষেপণ রিপোর্ট" তৈরি করা হয়েছিল। এই রিপোর্ট অনুসারে, ২০৩৬ সালের মধ্যে ভারতের প্রবীণ জনসংখ্যা ২৩০ মিলিয়নে পৌঁছাবে, যা সুদূরপ্রসারী প্রভাব সহ একটি গভীর সামাজিক রূপান্তরকে তুলে ধরে। আমাদের দেশে জনসংখ্যা বার্ধক্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে এবং এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তন সারা দেশে একই রকম নয়।

 

কেরালা, তামিলনাড়ু এবং হিমাচল প্রদেশের মত দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে ইতিমধ্যেই উন্নত দেশগুলির মত বিপুল সংখ্যক প্রবীণ মানুষ আছেন। কেরালার প্রবীণ জনসংখ্যা ২০১১ সালের ১৩% থেকে বেড়ে ২০৩৬ সালের মধ্যে ২৩%-এ পৌঁছবে বলে অনুমান করা হয়েছে, যার ফলে এটি সবচেয়ে বেশি প্রবীণ জনসংখ্যাযুক্ত রাজ্য হয়ে উঠবে।

 

উল্টোদিকে, উত্তর ও পূর্বের অনেক রাজ্যে আপাতত বয়স্ক মানুষের সংখ্যা কম হলেও, তাদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমবয়সী, সেখানে প্রবীণ অংশটি ২০১১ সালের ৭% থেকে বেড়ে ২০৩৬ সালের মধ্যে ১২%-এ পৌঁছবে বলে অনুমান করা হয়েছে। দক্ষিণের রাজ্যগুলি, হিমাচল প্রদেশ এবং পাঞ্জাবে গড়ের থেকে বেশি প্রবীণ জনসংখ্যা রয়েছে, যা ভারতের বিভিন্ন ধরনের জনসংখ্যাগত চিত্রকে তুলে ধরে।

লংগিটিউডিনাল এজিং স্টাডি অফ ইন্ডিয়া  ২০২১ হল একটি সম্পূর্ণ জাতীয় সমীক্ষা এবং ভারতের প্রবীণ জনসংখ্যার অবস্থা নিয়ে করা একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। এই গবেষণাটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম সমীক্ষা।

 

প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে যে, ভারতের জনসংখ্যার ১২% প্রবীণ ব্যক্তি, যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৩১৯ মিলিয়নে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হয়েছে, এবং বার্ষিক বৃদ্ধির হার প্রায় ৩%। প্রবীণদের মধ্যে লিঙ্গ অনুপাত প্রতি ১,০০০ পুরুষের তুলনায় ১,০৬৫ জন মহিলা, যেখানে প্রবীণ জনসংখ্যার ৫৮% নারী, যার মধ্যে ৫৪% বিধবা।

 

এছাড়াও, সামগ্রিক নির্ভরতা অনুপাত হল প্রতি ১০০-জন কর্মক্ষম বয়সের ব্যক্তির জন্য ৬২-জন নির্ভরশীল, যা ভারতে জনসংখ্যা বার্ধক্যের ক্রমবর্ধমান আর্থ-সামাজিক প্রভাবকে তুলে ধরে।

 

প্রবীণদের সম্মুখীন হওয়া সমস্যা

 

ভারতে প্রবীণ ব্যক্তিরা প্রায়শই পর্যাপ্ত সহায়ক ব্যবস্থার অভাবে, তা প্রাতিষ্ঠানিক বা পারিবারিক যাই হোক না কেন, অসহায় পরিস্থিতিতে পড়েন। তাঁরা বহু-মাত্রিক কঠিন পরিস্থিতিগুলির সম্মুখীন হন, যার মধ্যে রয়েছে :

 

স্বাস্থ্য: কলঙ্কিত মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (যেমন ডিমেনশিয়া, অ্যালজাইমার্স), ক্রমবর্ধমান অক্ষমতা, বয়স্ক মানুষদের প্রয়োজনে অপর্যাপ্ত জেরিয়াট্রিক পরিকাঠামো, এবং চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে শহর-গ্রামের মধ্যে পার্থক্য।

অর্থনৈতিক: অপ্রতুল সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জীবনধারণ এবং চিকিৎসার খরচ বৃদ্ধি, এবং সীমিত আর্থিক সংস্থান।

সামাজিক: পারিবারিক সহায়তা ব্যবস্থার দুর্বলতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, অবহেলা, এবং সঙ্গীর অভাব ইত্যাদি।

ডিজিটাল বৈষম্য: প্রযুক্তি গ্রহণে বাধা, প্রশিক্ষণ এবং সহজলভ্য ডিভাইসের অভাব।

 

পরিকাঠামো: অপর্যাপ্ত সাক্ষরতা, প্রবীণদের দুর্বল মানুষ হিসেবে বিবেচনা না করে তৈরি করা জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা। ভারতজুড়ে অনেক অঞ্চলে র‍্যাম্প, হাতল এবং সহজলভ্য শৌচাগার না থাকায় পাবলিক স্পেস ও পরিবহন মূলত প্রবীণ-বান্ধব নয়।

 

ভারতের প্রবীণদের জন্য সরকারি প্রকল্প ও উদ্যোগসমূহ

ভারতের প্রবীণ মানুষদের দ্বারা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা  করার জন্য ভারত সরকার অনেক উদ্যোগ, নীতি এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক  হল নোডাল মন্ত্রক, যার ওপর ভারতের প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে।

 

অর্থ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং আয়ুষ-সহ বিভিন্ন মন্ত্রক, সেইসঙ্গে রাজ্য সরকার, বেসরকারী সংস্থা (এনজিও), সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে, সামাজিক কল্যাণ ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক সারা দেশের প্রবীণ জনসংখ্যার সহায়তার লক্ষ্যে নীতি ও কর্মসূচির ব্যাপক উন্নয়নকে নেতৃত্ব দিয়েছে। সরকার প্রবীণ নাগরিকদের যত্ন, সুস্বাস্থ্য এবং মর্যাদা উন্নীত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে, যার মূল লক্ষ্য হল তাদের সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। মূল উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে:

 

অটল পেনশন যোজনা 

 

অটল পেনশন যোজনা  ভারত সরকারের একটি প্রধান সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প, যা পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি  দ্বারা পরিচালিত হয়। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল ভারতীয়দের, বিশেষ করে দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিতদের, সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করা।২০১৫ সালের ৯ মে চালু হওয়া এই প্রকল্পে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্টযুক্ত নাগরিকরা (১ অক্টোবর ২০২২ থেকে আয়করদাতারা বাদে) যোগ দিতে পারেন। প্রকল্পটি গ্রাহকের বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ন্যূনতম পেনশন নিশ্চিত করে। গ্রাহকের মৃত্যুর পরে একই পরিমাণ অর্থ তাঁর স্বামী বা স্ত্রীকে দেওয়া হয় এবং দুজনের মৃত্যুর পরে মনোনীত ব্যক্তিকে সঞ্চিত পেনশন সম্পদ প্রদান করা হয়। ষাট বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত মাসিক, ত্রৈমাসিক বা অর্ধ-বার্ষিক বিরতিতে অটো-ডেবিটের মাধ্যমে চাঁদা জমা দেওয়া হয়। যদি নিশ্চিত পেনশন দেওয়ার জন্য রিটার্ন অপর্যাপ্ত হয়, তবে ঘাটতিটি সরকার পূরণ করে। অটল পেনশন যোজনা ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ১.৫৪ কোটি নথিভুক্তির থেকে বেড়ে ২০২৫ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৮.২৭ কোটি গ্রাহকে পৌঁছেছে। এর অ্যাসেটস আন্ডার ম্যানেজমেন্ট হল ৪৯,০০০ কোটি টাকারও বেশি।

 

অটল ভায়ো অভূদ্যয় যোজনা 

সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের আওতায় থাকা অটল ভায়ো অভ্যুদয় যোজনা হল ভারতজুড়ে প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করার জন্য ডিজাইন করা একটি ব্যাপক উদ্যোগ। এই প্রকল্পটি সমাজে প্রবীণদের অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দেয় এবং তাঁদের সামগ্রিক সুস্থতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির জন্য নিবেদিত।

 

এই কর্মসূচির মাধ্যমে, সরকার জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তির সুবিধা দিয়ে প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষমতায়ন এবং উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেখায়, যার ফলে দেশের প্রতি তাঁদের আজীবনের সেবাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই প্রকল্পের উপাদানগুলি হল:

ইন্টিগ্রেটেড প্রোগ্রাম ফর সিনিয়র সিটিজেনস অর্থাৎ প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সমন্বিত কর্মসূচি প্রকল্প

 

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে  অনুদান দেওয়া হয়। এই সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন (রেজিস্ট্রার্ড সোসাইটির মাধ্যমে), পঞ্চায়েতি রাজ সংস্থা, বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এবং নেহরু যুব কেন্দ্র সংগঠনের মত স্বীকৃত যুব সংগঠন। এই অনুদানগুলি প্রবীণ নাগরিকদের আবাসন (বৃদ্ধাশ্রম), নিরন্তর পরিচর্যার আবাসন  মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট, ফিজিওথেরাপি ক্লিনিক, এবং আঞ্চলিক সম্পদ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওয়া হয়।

 

২০২৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত, দেশের ২৯-টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ৬৯৬-টি প্রবীণ নাগরিক আবাসন চালু রয়েছে। এই আবাসনগুলিতে অসহায় প্রবীণ নাগরিকদের আশ্রয়, পুষ্টি, চিকিৎসা এবং বিনোদন সহ বিনামূল্যে সুবিধা প্রদান করা হয়। এছাড়াও, বর্তমান অর্থবর্ষ ২০২৫-২৬-এ প্রকল্পের নির্দেশিকা অনুযায়ী আরও ৮৪-টি নতুন প্রবীণ নাগরিক আবাসন নির্বাচন করা হয়েছে, যা প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা ব্যবস্থার পরিধিকে আরও প্রসারিত করবে।

 

রাষ্ট্রীয় বয়শ্রী যোজনা

 

রাষ্ট্রীয় বয়শ্রী যোজনা, যা ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল সূচনা হয়, যারা বার্ধক্যজনিত অক্ষমতায় ভুগছেন এমন প্রবীণ নাগরিকদের সহায়ক জীবনধারণের ডিভাইস প্রদান করে। এই ডিভাইসগুলির মধ্যে রয়েছে হাঁটার লাঠি, কনুই ক্রাচ, ওয়াকার, শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র অর্থাৎ হিয়ারিং এইড বা শ্রবণ যন্ত্র, হুইলচেয়ার এবং দাঁতের পাটি অর্থাৎ ডেনচার, যা শরীরের প্রায় স্বাভাবিক কাজ পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। এই ডিভাইসগুলি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আর্টিফিশিয়াল লিম্বস ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন দ্বারা তৈরি করা হয়।

 

এই প্রকল্পের লক্ষ্য  দারিদ্র্যসীমার নীচে যাঁরা অন্তর্ভুক্ত বা যাঁদের মাসিক আয় ১৫,০০০ টাকার বেশি নয়, সেই প্রবীণ নাগরিকেরা। ডিভাইসগুলি বিভিন্ন শিবিরে বিতরণ করা হয় এবং ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সেগুলি বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে।

 

প্রবীণদের জন্য হেল্পলাইন

 

সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক সারা দেশের প্রবীণ ব্যক্তিদের উদ্বেগগুলি মোকাবিলা করার জন্য একটি জাতীয় হেল্পলাইন চালু করেছে। টোল-ফ্রি নম্বর ১৪৫৬৭-এর মাধ্যমে অ্যাক্সেসযোগ্য ‘এল্ডারলাইন’  সহানুভূতিশীল সহায়তা প্রদান করে এবং প্রবীণদের প্রয়োজনীয় পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করে। ২০২১ সালের ১ অক্টোবর ভারতের মাননীয় উপরাষ্ট্রপতির দ্বারা চালু হওয়া এই উদ্যোগটি ভারতের বয়স্ক জনসংখ্যার সুস্থতা ও মর্যাদা বাড়ানোর লক্ষ্য রাখে।

 

সিনিয়র কেয়ার এজিং গ্রোথ ইঞ্জিন - সেজ পোর্টাল

 

SAGE হল একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ, যার লক্ষ্য হল তরুণ উদ্যোক্তা এবং স্টার্ট-আপদেরকে বিশ্বস্ত প্রবীণ পরিচর্যার সমাধান তৈরি করতে এবং "সিলভার ইকোনমি"-তে প্রবেশ করতে উৎসাহিত করা। এই পোর্টালটি বিশ্বস্ত স্টার্ট-আপগুলির থেকে নির্ভরযোগ্য প্রবীণ পরিচর্যার পণ্য ও পরিষেবাগুলি খুঁজে বের করে, যাচাই করে এবং একত্রিত করে একটি একক প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ করে, যাতে সমস্ত ব্যবহারকারী সহজেই সেগুলি ব্যবহার করতে পারে।

 

এই প্রকল্পের অধীনে, নির্বাচিত স্টার্ট-আপগুলিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে প্রতি প্রকল্পে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ইক্যুইটি সহায়তা দেওয়া হয়। তবে, এটি নিশ্চিত করা হয় যে স্টার্ট-আপটিতে মোট সরকারি ইক্যুইটি যেন ৪৯% অতিক্রম না করে। সরকার এখানে সহায়ক  হিসেবে কাজ করে এবং উদ্ভাবনী পণ্য ও পরিষেবার ভিত্তিতে স্টার্ট-আপগুলি নির্বাচন করা হয়।

 

সিনিয়র এবল সিটিজেনস ফর রি-এমপ্লয়মেন্ট ইন ডিগনিটি পোর্টাল (SACRED)

 

এই পোর্টালটি, ২০২১ সালের ১ অক্টোবর চালু হয়েছিল, একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যা ৬০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের পোর্টালে নিবন্ধের করে কাজ এবং চাকরির সুযোগ খুঁজে নিতে সাহায্য করে। এই পোর্টালটি প্রবীণ নাগরিক এবং বেসরকারি উদ্যোগগুলির মধ্যে বিভিন্ন পদের জন্য পছন্দের ভার্চুয়াল ম্যাচিংয়ের সুবিধা দেয়। এর মাধ্যমে বার্ধক্যে পুনঃনিয়োগ এবং আর্থিক স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করা হয়।

 

বয়স্কদের সেবার জন্য প্রশিক্ষণ

 

এই প্রকল্পটি প্রবীণ পরিচর্যাকারীদের পেশাদার কর্মী বাহিনী প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়, যাঁরা প্রবীণ জনসংখ্যার বিচিত্র ও পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে সক্ষম। প্রশিক্ষণের মডিউল এবং কোর্সগুলি ক্লিনিকাল ও নন-ক্লিনিকাল উভয় দিককে অন্তর্ভুক্ত করে এবং পাশাপাশি প্রবীণ নাগরিকদের সুস্থতা ও সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেয়। এই উপাদানটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল ডিফেন্সের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।২০২৫ সালের ১৮ মার্চ লোকসভায় উত্থাপিত একটি প্রশ্নের লিখিত উত্তরে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের অধীনে মোট ৩২টি সংস্থাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, যা সফলভাবে ৩৬,৭৮৫ জন প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এর ফলে, দেশজুড়ে প্রবীণদের সহায়তার জন্য উপলব্ধ যোগ্য পরিচর্যাকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা 

 

AB-PMJAY প্রকল্প নথিভুক্ত আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলিকে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি কেয়ার পরিষেবা ও হাসপাতালে ভর্তির জন্য স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্তি  প্রদান করে, যার ফলে তাঁদের আর্থিকভাবে মোটা অংকের চিকিৎসার খরচ থেকে সুরক্ষা মেলে।

 

২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর সরকার AB-PMJAY প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রসারণের ঘোষণা করে, যেখানে প্রায় ৪.৫ কোটি পরিবারের ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ৬ কোটি প্রবীণ নাগরিককে তাঁদের আর্থ-সামাজিক পটভূমি নির্বিশেষে প্রতি বছর ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০২৫ সালের ১৫ই জানুয়ারী পর্যন্ত, ৪০ লক্ষেরও বেশি প্রবীণ নাগরিক সফলভাবে এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেছেন, যা ভারতের প্রবীণ জনসংখ্যার জন্য ব্যাপক স্বাস্থ্যসেবার পরিধি প্রদানে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চিহ্নিত করে।

 

ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওল্ড এজ পেনশন স্কীম

 

ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় বার্ধক্য পেনশন প্রকল্প  হল ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী ৬০+ বছর বয়সী নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। যোগ্য সুবিধাভোগীরা মাসিক ২০০ টাকা (৭৯ বছর পর্যন্ত) এবং ৫০০ টাকা (৮০ বছরের বেশি) পেনশন পান।

 

গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত এনএসএপি-র লক্ষ্য হল- জীবনধারণের নিরাপত্তা, জীবনযাত্রার মান এবং জনস্বাস্থ্যকে উন্নত করা, এবং শিক্ষাকে উৎসাহিত করা। ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, ২.২১ কোটিরও বেশি নাগরিক IGNOAPS থেকে সুবিধা পাচ্ছেন।

 

প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য জাতীয় কর্মসূচি (NPHCE)

 

প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য জাতীয় কর্মসূচি (NPHCE) ২০১০-১১ সালে একটি কেন্দ্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কর্মসূচি হিসেবে চালু করা হয়েছিল। এটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং টারশিয়ারি স্তরে ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের সহজলভ্য, সাশ্রয়ী এবং উচ্চ-মানের ব্যাপক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।

 

এই কর্মসূচি বর্তমানে ভারতজুড়ে সমস্ত ৭১৩-টি স্বাস্থ্য জেলাকে কভার করে। জেলা হাসপাতালগুলিতে এবং তার নিচের স্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সুনির্দিষ্ট জেরিয়াট্রিক পরিষেবা প্রদান করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে ওপিডি (বহির্বিভাগ), ১০-শয্যাবিশিষ্ট জেরিয়াট্রিক ওয়ার্ড, ফিজিওথেরাপি, এবং পরীক্ষাগারের সুবিধা।

 

প্রবীণ নাগরিক কল্যাণ তহবিল

 

প্রবীণ নাগরিক কল্যাণ তহবিল  ২০১৫ সালের ফাইন্যান্স এক্টের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতীয় বয়স্ক ব্যক্তি নীতি  এবং জাতীয় প্রবীণ নাগরিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণে সহায়ক বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য এই তহবিল তৈরি করা হয়েছে।

 

ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প, এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড, জীবন ও নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স পলিসি, এবং কোল মাইনস প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট-এর মতো উৎস থেকে যে সমস্ত দাবিবিহীন তহবিল পাওয়া যায়, তা এই SCWF-এ স্থানান্তরিত করা হয়। সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক এই তহবিল পরিচালনার জন্য নোডাল মন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।

 

প্রবীণদের জন্য সামাজিক এবং সমষ্টিগত সহায়তা

 

প্রবীণদের মানসিক সুস্থতা  এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির প্রচারে সামাজিক ও সমষ্টিগত সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগগুলি তাঁদের একাকীত্ব কমায় এবং বার্ধক্যে আপনজন হওয়ার ও উদ্দেশ্য পূরণের অনুভূতিকে লালন করে।

 

পারিবারিক সহায়তা

 

আমাদের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পরিবারই প্রাথমিক সহায়তার ব্যবস্থা হিসেবে রয়ে গেছে, যা আর্থিক, মানসিক এবং পরিচর্যার সহায়তা প্রদান করে। তবে, অভিবাসন, নগরায়ন এবং একক পরিবারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক যত্নের এই নিরাপত্তা জালকে দুর্বল করেছে। এর ফলস্বরূপ, পিতামাতা এবং প্রবীণ নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণ ও কল্যাণ আইন, ২০০৭ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে কার্যকর হয়, যা আইনগতভাবে সন্তান এবং উত্তরাধিকারীদের পিতামাতা ও প্রবীণ নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণ প্রদানের জন্য বাধ্য করে, পারিবারিক দায়িত্বকে শক্তিশালী করে তোলে। এতে উল্লেখ আছে যে:"সংবিধানের অধীনে নিশ্চিত ও স্বীকৃত পিতামাতা এবং প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণের বিধানগুলিকে কার্যকর করার জন্য একটি আইন, যা পিতামাতা ও প্রবীণ নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণ ও কল্যাণ প্রদান, তাঁদের সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা, প্রবীণ নাগরিকদের জন্য প্রতিষ্ঠান এবং তার পরিষেবাগুলির প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ এবং এর সাথে সংযুক্ত বা আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ের জন্য।"

 

পিতামাতা এবং প্রবীণ নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণ ও কল্যাণ (সংশোধনী) বিল, ২০১৯ প্রবীণ জনসংখ্যার সুরক্ষা জোরদার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এনেছে।

 

এই সংশোধনীতে "সন্তান"-এর সংজ্ঞাকে প্রসারিত করে তাতে সৎ-সন্তান, দত্তক সন্তান, পুত্র/কন্যাবধূ এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আইনি অভিভাবককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, "পিতামাতা"-এর সংজ্ঞার মধ্যে এখন শশুর-শাশুড়ি এবং পিতামহ-পিতামহী-ও অন্তর্ভুক্ত।

 

একটি মূল আর্থিক সংস্কার হল, মাসিক ১০,০০০ টাকার রক্ষণাবেক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া, যার ফলে ট্রাইব্যুনালগুলি প্রবীণ নাগরিকের জীবনযাত্রার মান এবং তাঁদের সন্তানদের আয়ের ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করতে পারবে। এই আইনটি প্রবীণ নাগরিকদের কেবল একটি "স্বাভাবিক জীবন" নয়, একটি "মর্যাদার জীবন" যাপন-ও নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়ে পরিচর্যার মানকে উন্নত করেছে। নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য, এই সংশোধনীতে প্রতিটি থানায় প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ এবং প্রতিটি জেলায় প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একটি বিশেষ পুলিশ ইউনিট স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এছাড়াও, বিলটি শারীরিক বা মানসিক দুর্বলতার কারণে দৈনন্দিন কার্যকলাপ প্রভাবিত হয় এমন প্রবীণ নাগরিকদের জন্য হোমকেয়ার পরিষেবা চালু করে; "রক্ষণাবেক্ষণ"-এর সংজ্ঞাকে স্বাস্থ্যসেবা, সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রসারিত করে; এবং "কল্যাণ"-এর সংজ্ঞাকে আবাসন, পোশাক, সুরক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রসারিত করে। একইসাথে, এটি নির্দেশ দেয় যে বেসরকারি সুবিধাসমূহ-সহ সমস্ত হাসপাতালকে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য নির্দিষ্ট শয্যাবিশিষ্ট এবং জেরিয়াট্রিক কেয়ার প্রদান করতে হবে।

 

প্রযুক্তির ভূমিকা

 

ভারতে প্রবীণদের সহায়তায় প্রযুক্তির ভূমিকা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যা তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, যোগাযোগ, স্বাধীনতা এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করছে। ভারতের প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে, তাই এই গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য প্রযুক্তি-সক্ষম সমাধানগুলি অপরিহার্য হয়ে উঠছে।ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর হেলথ কেয়ার অফ দ্য এল্ডার্লি (NPHCE)-এর অধীনে থাকা টেলিমেডিসিন পরিষেবাগুলি ভ্রমণ ছাড়াই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার সুবিধা দেয়, যা বিশেষ করে বাড়িতে আবদ্ধ প্রবীণ বা গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষদের জন্য খুবই উপযোগী। ই-সঞ্জীবনী টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্মটি বিনামূল্যে, গৃহ-ভিত্তিক চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করে, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ সামলাতে সাহায্য করে এবং একাকীত্ব ও মানসিক চাপের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের পরামর্শ দেয়।

 

নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং স্বাধীনতা বাড়িয়ে প্রবীণদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্মার্ট ওয়াচ এবং ফিটনেস ব্যান্ডের মতো  পরিধেয় ডিভাইসগুলি  গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সূচকগুলি ট্র্যাক করতে, শারীরিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে এবং জরুরী পরিস্থিতিতে সতর্কবার্তা পাঠাতে সাহায্য করে, যা সময়মতো চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করে।

অনলাইন ফার্মেসিগুলি বয়স্কদের জন্য বাড়িতে বসেই ওষুধ অর্ডার করা এবং তা হাতে পাওয়া আরও সহজ করে তুলেছে, যার ফলে ঘন ঘন বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন ছাড়াই পরিচর্যার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। ক্যামেরা এবং সেন্সর-সহ স্মার্ট হোম প্রযুক্তিগুলি পরিবার বা পরিচর্যাকারীদের দূর থেকে প্রবীণদের সুস্থতা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেয়, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রেখেও মানসিক শান্তি প্রদান করে।

সব মিলিয়ে, এই উদ্ভাবনগুলি একটি আরও সংযুক্ত, সুরক্ষিত এবং মর্যাদাপূর্ণ বার্ধক্য চেতনা উপলব্ধি করতে সাহায্য করছে।

 

প্রবীণ নাগরিক কল্যাণ পোর্টাল

 

প্রবীণ নাগরিক কল্যাণ পোর্টালটি একটি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেটি সরকারি প্রকল্প, পেনশন কর্মসূচি, হেল্পলাইন এবং পরিষেবাগুলিতে প্রবেশের জন্য ডাউনলোডযোগ্য ফর্মগুলিতে নির্বিঘ্নে প্রবেশাধিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। এটি প্রবীণ নাগরিক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং পরিচর্যাকারীদের জন্য একটি একক বাতায়ন ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। তবে, প্রবীণ ব্যক্তিরা যাতে এটি ব্যবহার করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য এর কার্যকারিতা ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং প্রচারমূলক প্রচেষ্টার ওপর নির্ভরশীল।

 

প্রবীণদের সহায়তার উপায়সমূহ

 

ভারতে প্রবীণদের জীবন উন্নত করার ক্ষেত্রে সামাজিক সহায়তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমষ্টিগত অংশগ্রহণে উৎসাহ দেওয়া এবং আন্তঃপ্রজন্ম কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে তাঁদের বিচ্ছিন্নতা কমানো এবং মানসিক সুস্থতা বাড়ানো যেতে পারে।

 

প্রবীণদের জন্য আবাসন

 

প্রবীণ নাগরিকদের জন্য নগর এলাকা, পরিবহন এবং আবাসনের নকশা বানানো অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর গড়ে তোলার একটি অসাধারণ সুযোগ খুলে দেয়। এর মাধ্যমে সহজলভ্য পরিবহন, সুপরিচালিত সুযোগ-সুবিধা, বাধাহীন ভবন এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব জন সুবিধাগুলি নিশ্চিত করা যায়, যা বার্ধক্যে মর্যাদা এবং স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। অবসরকালীন আবাসনগুলির উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য মডেল নির্দেশিকা, ২০১৯ বয়স-বান্ধব আবাসন এবং গোষ্ঠীগত জীবনযাত্রার বিন্যাসকে উৎসাহিত করার জন্য জারি করা হয়েছিল।

 

আন্তঃপ্রজন্মের বন্ধন বাড়ানো

 

ভারত সরকারের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন বিভাগ আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে 'ন্যায়তিক পতাম'  নামে একটি গেম চালু করেছে, যা আন্তঃপ্রজন্মের বন্ধনকে উৎসাহিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই গেমটি শিশুদের জন্য নৈতিক মূল্যবোধ এবং নীতি এবং প্রবীণদের প্রতি ভালোবাসা, যত্ন ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধনে এর গুরুত্ব তুলে ধরে। এই গেমটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে তা পরিবারের সকলে মিলে একসঙ্গে খেলবে।

 

আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস

 

উপসংহার

 

ভারতের সিলভার ইকোনমি বা রৌপ্য অর্থনীতি-র মূল্য ২০২৪ সালে আনুমানিক ৭৩ হাজার কোটি টাকা, এবং অনুমান করা হচ্ছে যে আগামী বছরগুলিতে এটি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। গবেষণা অনুসারে, প্রবীণ নাগরিকরা এবং ৪৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী পেশাদাররা বিশ্বব্যাপী 'সবচেয়ে ধনী বয়স গোষ্ঠী'। ভারতে প্রবীণ পরিচর্যা বিভাগ স্বাস্থ্য ও সুস্থতা-কেন্দ্রিক উদ্যোগগুলির জন্য বিশাল বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আসে। এই ক্রমবর্ধমান রৌপ্য অর্থনীতি প্রবীণ জনসংখ্যার চাহিদা এবং পছন্দগুলি পূরণে নিবেদিত ব্যবসা ও সংস্থাগুলির জন্য বড় সুযোগ তৈরি করে। অভ্যন্তরীণভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে, এই বাজার দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তুত, যা এই সেক্টরে উদ্ভাবন এবং উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য সুযোগ উপস্থাপন করে।

 

একটি ব্যাপক প্রবীণ পরিচর্যা ব্যবস্থার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বাস্তুতন্ত্র জুড়ে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে প্রবীণদের চাহিদাগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। মৌলিক পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে: প্রবীণ পরিচর্যাকে প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী ও মানদণ্ড-সহ একটি বিশেষ ক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, পরিচ্ছন্ন মূল্যায়ন কাঠামোর উপর ভিত্তি করে নীতি ও নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কারগুলি বাস্তবায়ন করা, এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ও বিভাগগুলির মধ্যে সমন্বিত পদ্ধতি শক্তিশালী করা। কার্যকর, দক্ষ এবং সময়াবদ্ধ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য এই কাঠামোর অবশ্যই বিভিন্ন অংশীদারদের - যেমন পঞ্চায়েতি রাজ সংস্থা, শহরের পৌর সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং বেসরকারি পরিষেবা প্রদানকারী—এর ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে, পাশাপাশি, আন্তঃ-মন্ত্রক সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

তথ্যসূত্র:

Press Information Bureau:

https://www.pib.gov.in/PressReleseDetailm.aspx?PRID=2152593

https://static.pib.gov.in/WriteReadData/specificdocs/documents/2025/may/doc202558551701.pdf

https://www.pib.gov.in/FactsheetDetails.aspx?Id=149101

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2082719

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1942849

Others:

https://www.socialjustice.gov.in/writereaddata/UploadFile/International_Day_of_Older_Persons636011781954563264.pdf (Page 1)

https://socialjustice.gov.in/writereaddata/UploadFile/83211672138255.pdf (Page 3)

https://esanjeevani.mohfw.gov.in/#/

https://scw.dosje.gov.in/

https://mohfw.gov.in/sites/default/files/Population%20Projection%20Report%202011-2036%20-%20upload_compressed_0.pdf

Click here to see PDF

 

SSS/AS.....


(Release ID: 2183445) Visitor Counter : 3