PIB Headquarters
ভারতের বৈদ্যুতিন ক্ষেত্র ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি
ইসিএমএস–এর অধীনে প্রথম ৭টি প্রকল্প অনুমোদিত - বিনিয়োগ ₹৫,৫৩২ কোটি
Posted On:
27 OCT 2025 6:18PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি,২৭ অক্টোবর, ২০২৫
মূল বিষয়বস্তু
ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং স্কিম-এর অধীনে ₹৫,৫৩২ কোটি টাকার ৭টি প্রকল্প অনুমোদিত।
প্রকল্পগুলি থেকে ₹৪৪,৪০৬ কোটি টাকার উৎপাদনমূল্য ও ৫,১৯৫-টি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা।
ইসিএমএস–এর অধীনে মোট বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি ₹১.১৫ লক্ষ কোটি, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ।
২০২৪–২৫ অর্থবর্ষেবৈদ্যুতিন পণ্য ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
ভূমিকা
ভারতের বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম উৎপাদন ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো, যখন ₹৫,৫৩২ কোটি টাকার প্রকল্পগুলি ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং স্কিম (ECMS)-এর আওতায় অনুমোদন পেল। এই প্রথম সাতটি প্রকল্প দেশের দ্রুতবর্ধনশীল কম্পোনেন্ট ইকোসিস্টেমে নতুন গতি আনবে, যেখানে প্রত্যাশিত উৎপাদনমূল্য ₹৪৪,৪০৬ কোটি এবং ৫,০০০-এরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এই প্রকল্পগুলির ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, যা ভারতের ইলেকট্রনিক্স ভ্যালু চেইন বা বৈদ্যুতিন মূল্য শৃঙ্খলকে মজবুত করার সরকারের অঙ্গীকারকে জোরদার করে।
উদ্যোগটি উচ্চ-মূল্যের বৈদ্যুতিন উপাদান উৎপাদনে এক শক্তিশালী দেশীয় ভিত্তি গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়, যাতে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনকে সমর্থন করা যায়।
গত কয়েক বছরে ভারতের বৈদ্যুতিন ক্ষেত্র অসাধারণ বৃদ্ধি অর্জন করেছে, এবং ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে এটি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ও দ্রুতবর্ধনশীল রপ্তানি ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ইসিএমএস এই গতিশীলতাকে আরও ত্বরান্বিত করে ভারতকে উন্নত বৈদ্যুতিন উৎপাদনের সার্বিক নেতৃত্বে নিয়ে যেতে চায়।
প্রকল্পের সারসংক্ষেপ
ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং স্কিম (ECMS) আনুষ্ঠানিকভাবে ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ঘোষণা করা হয়, যার মোট বরাদ্দ ₹২২,৯১৯ কোটি (প্রায় ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। প্রকল্পটির মেয়াদ ছয় বছর, অতিরিক্ত এক বছরের জেস্টেশন পিরিয়ড-এর সুযোগসহ। এই উদ্যোগের লক্ষ্য একটি শক্তিশালী ও স্বনির্ভর ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট উৎপাদন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা। এর মূল ফোকাস হল, দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ, উৎপাদনে দেশীয় মূল্য সংযোজন বাড়ানো, এবং ভারতকে বিশ্ব বৈদ্যুতিন বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
ইসিএমএস-এর লক্ষ্য দেশের বৈদ্যুতিন শিল্পকে বিশ্বের ভ্যালু চেইনের সঙ্গে সংযুক্ত করা - যাতে প্রয়োজনীয় কম্পোনেন্ট, সাব-অ্যাসেম্বলি এবং কাঁচামালের উৎপাদন দেশে বাড়ানো যায়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত স্কিমটির অধীনে মোট বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দাঁড়িয়েছে ₹১,১৫,৩৫১ কোটি, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ₹৫৯,৩৫০ কোটি-এর প্রায় দ্বিগুণ।
আগামী ছয় বছরে ₹১০,৩৪,৭৫১ কোটি টাকার উৎপাদন প্রত্যাশিত, যা প্রাথমিক অনুমানের ২.২ গুণ। ইনসেনটিভ আউটগো ধরা হয়েছে ₹৪১,৪৬৮ কোটি, যা মূল অনুমানের (₹২২,৮০৫ কোটি) ১.৮ গুণ। প্রকল্পটি থেকে ১,৪১,৮০১-টি প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৯১,৬০০-এর চেয়ে অনেক বেশি। এর পাশাপাশি, বিপুল পরিমাণ পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও রয়েছে।
প্রথম অনুমোদিত প্রকল্পসমূহে অন্তর্ভুক্ত পণ্য
ইসিএমএস-এর প্রথম পর্যায়ের অনুমোদিত প্রকল্পগুলির আওতায় এমন বিভিন্ন উচ্চ-মূল্যের বৈদ্যুতিন উপাদান ও উপকরণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পগুলি স্মার্টফোন, অটোমোবাইল, চিকিৎসা সরঞ্জাম, টেলিযোগাযোগ ও শিল্প-ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য উপাদান উৎপাদনের মাধ্যমে ভারতের বিশ্বজনিন মূল্য শৃঙ্খলে অবস্থান আরও মজবুত করবে।
ক্যামেরা মডিউল সাব-অ্যাসেম্বলি
ক্যামেরা মডিউল সাব-অ্যাসেম্বলি ব্যবহৃত হয় স্মার্টফোন, ড্রোন, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও রোবোটিক ব্যবস্থা। এগুলি ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলিতে উচ্চমানের ছবি ও ভিডিও ধারণে সহায়তা করে। এই মডিউলগুলি স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, সিকিউরিটি ক্যামেরা, অটোমোটিভ সিস্টেম এবং IoT ডিভাইসের ইমেজিং কম্পোনেন্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাল্টি-লেয়ার পিসিবি
মাল্টি-লেয়ার প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড ব্যবহৃত হয় অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, আইসিটি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, টেলিযোগাযোগ, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা খাত এবং শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থায়। এই সার্কিট বোর্ডগুলিতে একাধিক কপার ও ডাইইলেকট্রিক স্তর থাকে, যা থ্রু-হোল দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত। এগুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় ইলেকট্রনিক্স, শিল্প নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও অটোমোবাইল প্রযুক্তিতে।
এইচডিআই পিসিবি
হাই-ডেনসিটি ইন্টারকানেক্ট পিসিবি ব্যবহৃত হয় ইলেকট্রনিক্স, ওয়্যারেবল প্রযুক্তি, অটোমোবাইল ইলেকট্রনিক্স, চিকিৎসা সরঞ্জাম, টেলিযোগাযোগ, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। এগুলি মূলত উন্নত পিসিবি, যেখানে মাইক্রোভায়া, ব্লাইন্ড ও বুরিড ভায়া, ভায়া-ইন-প্যাড স্ট্রাকচার, সূক্ষ্ম ট্র্যাক এবং ঘন বিন্যাসের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এই প্রযুক্তি স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ওয়্যারেবল ডিভাইস, অ্যারোস্পেস সিস্টেম এবং চিকিৎসা সরঞ্জামে কম্প্যাক্ট ও উচ্চ-কার্যক্ষম ডিজাইন সম্ভব করে তোলে।
ল্যামিনেট (কপার ক্ল্যাড ল্যামিনেট)
কপার ক্ল্যাড ল্যামিনেট ব্যবহৃত হয় অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, চিকিৎসা সরঞ্জাম, আইসিটি, টেলিযোগাযোগ, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা, এবং শিল্প উৎপাদনে। এগুলি মাল্টি-লেয়ার পিসিবি তৈরির মূল ভিত্তি উপাদান, যা সার্কিটের স্থিতিশীলতা ও বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা নিশ্চিত করে।
পলিপ্রোপিলিন ফিল্ম
পলিপ্রোপিলিন ফিল্ম ব্যবহৃত হয় ক্যাপাসিটার তৈরিতে, যা ব্যবহৃত হয় ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, আইসিটি, শিল্প উৎপাদন, টেলিযোগাযোগ ও কম্পিউটিং ক্ষেত্রে। এটি ক্যাপাসিটার উৎপাদনের একটি মূল উপাদান, যা বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয় ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইসিএমএস-এর অধীনে অনুমোদিত আবেদনসমূহের সংক্ষিপ্তসার
ইসিএমএস-এর প্রথম দফার আবেদনসমূহে ভারতের শীর্ষস্থানীয় দেশীয় নির্মাতাদের কাছ থেকে উচ্চ-মূল্যের উপাদান উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশজুড়ে বিস্তৃত এই প্রকল্পগুলির মোট বিনিয়োগ ₹৫,৫৩২ কোটি, যার প্রত্যাশিত উৎপাদন ₹৪৪,৪০৬ কোটি, এবং ৫,১৯৫-টি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
ভারতের শীর্ষ রপ্তানি ক্ষেত্র হিসেবে বৈদ্যুতিন পণ্যের উথ্থান
২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে, ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্র ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ও দ্রুতবর্ধনশীল রপ্তানি খাতে পরিণত হয়েছে - ২০২১–২২ সালে সপ্তম স্থান থেকে উঠে এসে।
২০২৫–২৬ অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে, বৈদ্যুতিন পণ্য রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এই ক্ষেত্রটির বৃদ্ধিকে আরও সুসংহত করেছে এবং একে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বিভাগে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের বৈদ্যুতিন পণ্য উৎপাদন ২০১৪–১৫ সালে ₹১.৯ লক্ষ কোটি থেকে ২০২৪–২৫ সালে ₹১১.৩ লক্ষ কোটি-তে পৌঁছেছে - যা ছয় গুণ বৃদ্ধি। একই সময়ে রপ্তানি ₹৩৮,০০০ কোটি থেকে ₹৩.২৭ লক্ষ কোটি-তে উন্নীত হয়েছে - অর্থাৎ আট গুণ বৃদ্ধি। গত এক দশকে বৈদ্যুতিন পণ্য উৎপাদন ক্ষেত্র প্রায় ২৫ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।
মোবাইল উৎপাদন এই রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি। ২০১৪–১৫ সালে ₹১৮,০০০ কোটি-র উৎপাদন বেড়ে ২০২৪–২৫ সালে ₹৫.৪৫ লক্ষ কোটি-তে পৌঁছেছে - অর্থাৎ ২৮ গুণ বৃদ্ধি। ভারত এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদক দেশ, যেখানে বর্তমানে ৩০০-টিরও বেশি ইউনিট কাজ করছে - ২০১৪ সালে যেখানে মাত্র দুটি ইউনিট ছিল।
মোবাইল ফোন রপ্তানিতেও এসেছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য - ₹১,৫০০ কোটি (২০১৪–১৫) থেকে বেড়ে ₹২ লক্ষ কোটি (২০২৪–২৫) হয়েছে— অর্থাৎ ১২৭ গুণ বৃদ্ধি।
শুধু অ্যাপল (Apple) একাই ₹১,১০,৯৮৯ কোটি মূল্যের আইফোন রপ্তানি করেছে, যা এক বছরে ৪২% বৃদ্ধির মাধ্যমে ₹১ লক্ষ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
২০২৫–২৬ অর্থবর্ষের প্রথম পাঁচ মাসে, স্মার্টফোন রপ্তানি পৌঁছেছে ₹১ লক্ষ কোটি, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৫% বেশি।
ভারত এখন প্রায় সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরতা অর্জন করেছে মোবাইল উৎপাদনে - এক দশক আগে যেখানে দেশের প্রয়োজনের বেশিরভাগই আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল, এখন দেশেই প্রায় সব ধরণের ডিভাইস উৎপাদিত হচ্ছে। এই রূপান্তর ভারতের নীতিনির্ভর বাস্তুব্যবস্থার শক্তি এবং বিশ্বজনিন বৈদ্যুতিন পন্য উৎপাদন ও রপ্তানির নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র হিসেবে ভারতের উত্থান স্পষ্ট করে তোলে।
উপসংহার
ভারতের বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম উৎপাদন ক্ষেত্র এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে পৌঁছেছে। ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং স্কিম (ECMS)–এর অধীনে প্রকল্প অনুমোদন কেবল একটি শিল্প নীতি নয়, বরং এটি ভারতের স্বনির্ভরতা আরও গভীর করা ও বৈশ্বিক প্রযুক্তি উৎপাদনে অবস্থান শক্তিশালী করার কৌশলগত পদক্ষেপ। দৃঢ় বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি, রেকর্ড উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এবং স্থিতিশীল কর্মসংস্থানের মাধ্যমে, এই স্কিম ভারতের ইলেকট্রনিক্স ভ্যালু চেইন বৈদ্যুতিন মূল্য শৃঙ্খলের ভিত্তি আরও সুসংহত করতে চলেছে।
উপাদান থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ডিভাইস বা যন্ত্র পর্যন্ত - ভারত এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উৎপাদন ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে। রপ্তানি বৃদ্ধি, দেশীয় উৎপাদনে প্রসার এবং দ্রুতবর্ধনশীল মোবাইল নির্মাণ ক্ষেত্র - এই তিনটি মিলে একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। ভারত এখন শুধু নিজের প্রয়োজন মেটাচ্ছে না, বরং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকেও শক্তি জোগাচ্ছে। এই ধারাবাহিক প্রয়াস ভারতের বৈশ্বিক ইলেকট্রনিক্স কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে।
তথ্যসূত্র
PIB Backgrounders:
Ministry of Commerce and Industry:
Click here for pdf file.
***
SSS/SS
(Release ID: 2183364)
Visitor Counter : 3