PIB Headquarters
ভারতে কুষ্ঠ : রোগমুক্ত ভবিষ্যতের পথ
Posted On:
05 OCT 2025 11:12AM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৫ অক্টোবর, ২০২৫
উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ
>১৯৮১-তে ভারতে প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যায় কুষ্ঠ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২.২ জন, ২০২৫-এ তা ০.৫৭-এ নেমে এসেছে।
>নতুন আক্রান্তদের মধ্যে শিশু আক্রান্তের হার ২০১৪-১৫-র ৯.০ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪-২৫-এ ৪.৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
>মার্চ, ২০২৫ অনুযায়ী ভারতে ৩১টি রাজ্য ও ৬৩২টি জেলায় প্রতি ১০ হাজারে আক্রান্তের সংখ্যা ১ জনেরও কম।
কুষ্ঠ কী?
কুষ্ঠ হল একটি সংক্রামক রোগ, যা ব্যাক্টেরিয়া মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রা-র কারণে হয়ে থাকে। স্নায়ু, শ্বাসনালী, চামড়া এবং চোখে এর সংক্রমণ হতে পারে। রোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে – চামড়া বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, চাপ, যন্ত্রণা, গরম ও ঠান্ডার অনুভূতি বুঝতে না পারা, পেশীর দুর্বলতা, অনিরাময়যোগ্য আলসার, অঙ্গ বিকৃতি বিশেষত, হাত, পা ও মুখের এবং চোখ বন্ধ করতে না পারা ও ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি। নাক ও মুখের সর্দির মাধ্যমে এবং আক্রান্ত রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে এই রোগ সংক্রামিত হয়। ১৯৮৩-তে চালু হওয়া মাল্টি-ড্রাগ থেরাপি (এমডিটি)-র মাধ্যমে কুষ্ঠ চিকিৎসায় বিপ্লব আসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মাধ্যমে রোগীদের বিনামূল্যে এমডিটি চিকিৎসার সুযোগ প্রদান করা হয়। এমডিটি চালু হওয়ার পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে থাকে।
স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের পরিস্থিতি
১৯৫১-তে ভারতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩,৭৪,০০০, অর্থাৎ প্রতি ১০ হাজারে ৩৮.১ জন। ১৯৫৪-৫৫-তে জাতীয় কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালু করা হয়। চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৬৯-১৯৭৪) এই কর্মসূচিতে গতি আসে।
বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের মাধ্যমে সংক্রামিত জেলাগুলিতে বিনা খরচে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। গ্রামে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে মাসিক ভিত্তিতে কুষ্ঠ ক্লিনিক চালু করা হয়। ১৯৮৩-তে এমডিটি চালুর পর থেকে জাতীয় কুষ্ঠ দূরীকরণ কর্মসূচির সূচনা হয়। কুষ্ঠ আক্রান্তদের শুধুমাত্র চিকিৎসা নয়, তাঁদের সমাজের মূলস্রোতে সামিল করার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়। দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং বিনা খরচে চিকিৎসাকে রোগমুক্তির কৌশল হিসেবে গণ্য করা হয়।
দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রয়াস
জাতীয় কুষ্ঠ দূরীকরণ কর্মসূচি হল জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতাধীন একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প। এই প্রকল্পে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। ১৯৮১-তে প্রতি ১০ হাজারে কুষ্ঠ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭.২ জন। ১৯৮৪-তে তা ৪৪.৮ এবং মার্চ ২০০৪-এ তা ২.৪-এ নেমে আসে। মার্চ, ২০০৪-এ ১৭টি রাজ্য ও ২৫০টি জেলা কুষ্ঠ দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে এবং ৭টি রাজ্য লক্ষ্যের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছয়। ভারতের কুষ্ঠ দূরীকরণ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে –
(ক) দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং রোগীদের বিনা খরচে চিকিৎসা। ২০২৫-এ পসি (পিবি) এবং মাল্টি-ব্যাসিলারি (এমবি) রোগীদের জন্য তিন ধরনের ওষুধ চালু করা হয়।
(খ) দ্রুত রোগ নির্ণয় – বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা, বিশেষত উচ্চ সংক্রমণ প্রবণ এলাকাগুলিতে; কুষ্ঠ রোগের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান; দুর্গম এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যাবিশিষ্ট এলাকাগুলিতে পৌঁছনোর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা প্রভৃতি
(গ) প্রতিবন্ধীত্ব প্রতিরোধ, চিকিৎসাগত পুনর্বাসন (ডিপিএমআর) এবং কল্যাণমূলক সহায়তা : এর মধ্যে রয়েছে – রোগীর শিক্ষা ও মাইক্রো সেলুলার রাবার জুতো পরিধানের জন্য পরামর্শ, সহায়ক সামগ্রী এবং ১২,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা।
(ঘ) সক্ষমতা নির্মাণ : চিকিৎসক, ল্যাব টেকনিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, স্বাস্থ্যকর্মী সহ অন্যান্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
(ঙ) স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রোগ সম্পর্কে জানানোর ব্যাপারে গোষ্ঠীগত সচেতনতা : কুষ্ঠ বিরোধী দিবসের মাধ্যমে রোগ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা এবং বদ্ধমূল গোড়ামি দূর করা ও দ্রুত রোগ নির্ণয়ের ওপর জোর দেওয়া।
(চ) বৈষম্যমূলক আইনের অবলুপ্তি : কুষ্ঠ রোগীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক সমস্ত আইন অবলুপ্তির জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে উৎসাহিত করছে এনএলইপি।
(ছ) নজরদারি বৃদ্ধি : ২০২৫-এ সরকারি, বেসরকারি, এনজিও, মেডিকেল কলেজ প্রভৃতি সমস্ত ক্ষেত্রে কুষ্ঠ সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি; আশা-ভিত্তিক নজরদারি।
(জ) রিপোর্টিং ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন : ২০২৩-এ রোগীদের রেকর্ড ও ওষুধ মজতু সম্পর্কে তথ্যের জন্য ডিজিটাল রিপোর্টিং ব্যবস্থা ‘নিকুষ্ঠ ২.০’ চালু করা হয়েছে।
জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা (এনএসপি) ও ২০২৩-২৭ পর্যন্ত কুষ্ঠ রোগমুক্তির পথনির্দেশিকা
বিশ্ব কুষ্ঠ কৌশল ২০২১-৩০-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হল, রোগ সংক্রমণ আটকানো এবং আক্রান্তের সংখ্যাকে শূন্যে নামিয়ে আনা।
পথনির্দেশিকার মধ্যে রয়েছে অন্তত পর পর পাঁচ বছর জেলাস্তরে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা, সামগ্রিক সরকারি এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি ডিজিটাল নজরদারি ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এনএলইপি-র আওতায় গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগসমূহ
এই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২০২৭ সালের মধ্যে পুরোপুরি কুষ্ঠ সংক্রমণ আটকানো। আয়ুষ্মান ভারত যোজনায় ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা। সেইসঙ্গে, রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম ও রাষ্ট্রীয় কিশোর স্বাস্থ্য কার্যক্রমের আওতায় শিশুদের (০-১৮ বছর বয়সী) পরীক্ষা। কুষ্ঠ রোগী ও তাঁদের পরিবারের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‘নিকুষ্ঠ ২.০’ পোর্টালে ১৭টি রাজ্য নথিভুক্ত রয়েছে, যেখানে পিএম-জনমন-এর আওতায় বিশেষভাবে দুর্বল আদিবাসী গোষ্ঠীকে এর আওতায় আনা হয়েছে। দেশের ১২১টি জেলায় নজরদারির বিশেষ কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এই জেলাগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি ১০ হাজারে ১ জনের বেশি।
উল্লেখযোগ্য সাফল্য এবং এনএলইপি-র আওতায় কর্মসূচির ফলাফল
মার্চ, ২০০৫-এ ভারত নির্মূলীকরণের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সাফল্য অর্জন করেছে যার অর্থ হল, আক্রান্তের হার প্রতি ১০ হাজারের ১ জনের কম। মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত ৩১টি রাজ্য এবং ৬৩৮টি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি ১০ হাজারে ১-এর নিচে নেমে এসেছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অংশীদারিত্ব
বিনামূল্যে এমডিটি ওষুধ সরবরাহ, কারিগরি সহায়তা, নিরপেক্ষভাবে কর্মসূচির মূল্যায়ন, সক্ষমতা নির্মাণ, কর্মসূচির ওপর নজরদারি ও তদারকির জন্য ভারত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে। বিশ্ব কুষ্ঠ পরিস্থিতি, ২০০৬-এর সাপ্তাহিক এপিডেমিওলজিক্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্মূলীকরণের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ দেশগুলির তালিকা থেকে ভারতের নাম বাদ দেওয়া হয়। ভারতের কুষ্ঠ দূরীকরণ উদ্যোগকে জোরদার করতে হু, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ অ্যান্টি-লেপ্রসি অ্যাসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে।
উপসংহার
ভারতে এখন প্রতি ১০ হাজারে আক্রান্তের সংখ্যা ০.৫৭-এ নেমে এসেছে এবং ০.৮২ লক্ষ রোগীর চিকিৎসা চলছে। এনএলইপি কর্মসূচির সাফল্যের পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, অঙ্গীকার, নতুন রোগী চিহ্নিতকরণের ধারাবাহিক উদ্যোগ, বিনা খরচে চিকিৎসা এবং এমডিটি ওষুধের সরবরাহ। বর্তমানে শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থার পাশাপাশি, ‘নিকুষ্ঠ ২.০’-এর মতো প্রযুক্তিগত হাতিয়ারকেও কাজে লাগানো হচ্ছে। ভারত এখন কুষ্ঠশূন্য লক্ষ্য অর্জনের পথে এগোচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি পর্যাপ্ত অর্থের যোগান এবং সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
তথ্যসূত্র :
Ministry of Health and Family Welfare
https://dghs.mohfw.gov.in/nlep.php
https://dghs.mohfw.gov.in/nlep.php
https://nhm.gov.in/index4.php?lang=1&level=0&linkid=281&lid=348
https://nlrindia.org/wp-content/uploads/2024/03/NSP-Roadmap-for-Leprosy-2023-2027.pdf
Press Information Bureau
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1738154
World Health Oganization
https://www.who.int/activities/monitoring-the-global-leprosy-situation
Other Links
https://documents1.worldbank.org/curated/en/428771468033300814/pdf/320410MukherjiLeprosyFinal.pdf
https://www.who.int/publications/i/item/who-wer8132
পিডিএফ দেখতে নিচে ক্লিক করুন –
https://static.pib.gov.in/WriteReadData/specificdocs/documents/2025/oct/doc2025105657201.pdf
SSS/MP/DM
(Release ID: 2176725)
Visitor Counter : 18