প্রতিরক্ষামন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নতুন দিল্লিতে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর কম্যান্ডারদের সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন; সমুদ্রপথে নিরাপত্তার জন্য ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, নজরদারির ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দেশে উৎপাদিত সরঞ্জাম ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি

Posted On: 29 SEP 2025 1:53PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ 

 

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং নতুন দিল্লিতে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদর দফতরে বাহিনীর কম্যান্ডারদের ৪২তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। শ্রী সিং ভারতের ৭,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখা এবং দ্বীপাঞ্চলের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেন। বিভিন্ন সংকটের মোকাবিলায় তারা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, শ্রী সিং সেই বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনদিনের সম্মেলন শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। সামুদ্রিক নিরাপত্তার বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা এবং ভারত-মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে উপকূলরক্ষী বাহিনীর উর্ধতন আধিকারিকরা এই বাহিনীর পরিচালনগত এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে মত বিনিময় করবেন।   

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উপকূলরক্ষী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে ১৫২টি জলযান এবং ৭৮টি বিমান এই বাহিনীর রয়েছে। উপকূলরক্ষী বাহিনী সাধারণ নাগরিকদের যেমন আস্থা অর্জন করতে পেরেছে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরে সদস্যদের পেশাদারিত্বও প্রশংসিত হচ্ছে।  

শ্রী সিং বলেন, গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিয়মিত টহল দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের জলসীমার মধ্যে যারা অবৈধভাবে মাছ ধরা, মাদক এবং অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধেও উপকূল রক্ষী বাহিনীর সদস্যেরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। সমগ্র দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য বাহিনী, অসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলে। এছাড়াও, অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গেও তারা নিয়মিত সমন্বয় বজায় রেখে চলে।   
 
মন্ত্রী বলেন, ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী (আইসিজি)-র আধুনিকীকরণের জন্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। বর্তমানে বাহিনীর জন্য মোট বাজেটের ৯০ শতাংশ অর্থ দেশের তৈরি সরঞ্জাম কেনার জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আত্মনির্ভর ভারতের পথে আমরা অগ্রসর হতে পারব। 

শ্রী সিং বলেন, দেশের স্থল সীমানা চিরস্থায়ী। কিন্তু, জোয়ার ভাটা সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে জলসীমা অস্থায়ী। “চোরাচালানের কাজে ব্যবহৃত একটি নৌযান দেখতে হয়তো মাছ ধরার নৌকার মতো, কিন্তু সেই নৌকাটিকে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি ব্যবহার করতে পারে। তাই বলা যায়, জলসীমা অঞ্চলের নিরাপত্তা স্থলসীমার থেকেও জটিল। এ কারণে জলসীমার চারিদিকে নিরবচ্ছিন্ন নজর চালাতে হবে।” ভারতের ৭,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র তট ছাড়াও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং লাক্ষাদ্বীপ জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আইসিজি-র সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য শ্রী সিং তাঁদের প্রশংসা করেন। এরা অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বহু মানুষের প্রাণ বাঁচে, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিও কম হয়। এই বাহিনীতে মহিলাদের ক্ষমতায়ণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তিনি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, সমুদ্র পথের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য মহিলা সদস্যরা সমানভাবে কাজ করে চলেছেন। বাহিনীর এই পরিবর্তন আসলে তাঁদের নেওয়া পরিকল্পনাই প্রতিফলন, যেখানে মহিলারাও নেতৃত্বদান এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করছেন।

বর্তমানে ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সমুদ্র পথেও নানা ধরণের হুমকি দেখা দিয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতির মোকাবিলায় কৃত্রিম মেধা, মেশিন লার্নিং ভিত্তিক নজরদারি, ড্রোন, সাইবার নিরপত্তা ব্যবস্থাপণার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে সাইবার এবং বৈদ্যুতিণ যুদ্ধ কল্পকাহিনী নয়, বরং এগুলির প্রয়োগ যথেষ্টই নজরে আসছে। আইসিজি-কে উদ্ভুত এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।

শ্রী সিং বলেন. মায়ানমার, বাংলাদেশ, নেপাল সহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে অস্থির অবস্থার প্রতিফলন সমুদ্র পথেও নজরে আসে। মূলত বঙ্গোপসাগরে উদ্বাস্তু, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং অনির্ধারিত জাহাজ চলাচলের মতো সমস্যাগুলি দেখা যায়। আইসিজি-কে উদ্ভুত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থেকে প্রয়োজনীয় নজরদারি চালানোর প্রস্তাব দেন তিনি।

ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশের বন্দর, জলপথ এবং জ্বালানীর পরিকাঠামো জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে সমানভাবে বিবেচনা করতে হবে। বাহিনীর সদস্যদের ভবিষ্যতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনার পরামর্শ দেন তিনি। 

শ্রী সিং বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। এক্ষেত্রে দুটি স্তম্ভের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে- সমৃদ্ধি এবং সুরক্ষা। আইসিজি-র ‘আমরা রক্ষা কর্তা’ এই ভাবনাকে অনুসরণ করে বাহিনীর সদস্যদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক শক্তিশালী, নিরাপদ এবং আত্মনির্ভর ভারত উপহার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আইসিজি-র কম্যান্ডারদের এবারের সম্মেলনে দেশের সামুদ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  সম্মেলনে নৌ-বাহিনীর প্রধান সহ বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আইসিজি-র মহা নির্দেশক পরমেশ শিবমনি।

আইসিজি গঠিত হওয়ার পর থেকে ভারতীয় জল সীমার মধ্যে অনুপ্রবেশ করা ১,৬৩৮ টি বিদেশী জলযান এবং ১৩,৭৭৫ জন বিদেশী মৎস্যজীবীকে আটক করা হয়েছে। বাহিনীর সদস্যরা ৬,৪৩০ কিলোগ্রাম মাদক দ্রব্য উদ্ধার করেছেন, যার বাজার দর আনুমানিক ৩৭,৮৩৩ কোটি টাকা। বাহিনীর সদস্যরা এই সম্মেলনে তাদের বিভিন্ন সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা সচিব শ্রী রাজেশ কুমার সিং, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন বিভাগের সচিব শ্রী সঞ্জীব কুমার সহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উর্ধতন আধিকারিকরা উপস্থিত রয়েছেন।

 

SC/CB/CS


(Release ID: 2172759) Visitor Counter : 7