প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 21 SEP 2025 6:09PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!

নবরাত্রি, শক্তিপুজোর উৎসব আগামীকাল শুরু হচ্ছে। সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা! নবরাত্রির প্রথম দিন থেকে দেশ আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। আগামীকাল, ২২ সেপ্টেম্বর, সূর্যোদয়ের সঙ্গে নবরাত্রির প্রথমদিনে নেক্সট জেনারেশন জিএসটি সংস্কার লাগু হবে। একদিক দিয়ে জিএসটি সাশ্রয় উৎসব দেশে শুরু হতে চলেছে আগামীকাল থেকে। জিএসটি সাশ্রয় উৎসব আপনাদের সাশ্রয় বৃদ্ধি করবে এবং আপনারা আরও যা কিনতে চান, তা কিনতে পারবেন সহজে। আমাদের দেশের দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যুবা, কৃষক, মহিলা, দোকানদার, ব্যবসায়ী, উদ্যোগপতি – প্রত্যেকে প্রভূত উপকৃত হবেন এই সাশ্রয় উৎসব থেকে। এর অর্থ, প্রত্যেকে এই উৎসবে মিষ্টিমুখ করতে পারবেন এবং দেশের প্রত্যেকটি পরিবার আশীর্বাদধন্য হবে। আমি দেশের কোটি কোটি পরিবারকে এই নেক্সট জেনারেশন জিএসটি সংস্কার এবং এই সাশ্রয় উৎসবের জন্য আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। এই সংস্কার ভারতের গ্রোথ স্টোরিকে গতি দেবে, ব্যবসা করা সহজ হবে, বিনিয়োগ করা আরও আকর্ষণীয় হবে এবং প্রত্যেকটি রাজ্যকে উন্নয়নের দৌড়ে একইরকম সমানভাবে অংশীদার করে তুলবে।

বন্ধুগণ,

যখন ভারত ২০১৭ সালে জিএসটি সংস্কারে প্রথম পা ফেলেছিল, তখন ইতিহাসের পালাবদলের সূচনা হয়েছিল এবং নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল। বহু দশক ধরে আমাদের দেশের মানুষ, আপনারা সকলে, দেশের ব্যবসায়ীগণ নানা ধরনের করের জালে বন্দি হয়ে ছিলেন। অক্ট্রয়, এন্ট্রি-ট্যাক্স, সেলস ট্যাক্স, এক্সাইজ, ভ্যাট, সার্ভিস ট্যাক্স – দেশে তখন ডজনখানেক এমন ধরনের কর ছিল। যদি কোনও জিনিস এক শহর থেকে অন্য শহরে পাঠাতে হত, একজনকে অনেক চেক পয়েন্ট পেরোতে হত, অনেক ফর্ম ভরতে হত, নানা বাধা ছিল এবং সব জায়গায় নানা ধরনের করের বিধি ছিল। আমার মনে আছে, যখন দেশ ২০১৪ সালে আমাকে প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব অর্পণ করেছিল, তখন প্রাথমিক পর্যায়ে, একটা চমকপ্রদ উদাহরণ প্রকাশিত হয়েছিল বিদেশি সংবাদপত্রে, যেখানে একটি কোম্পানির অসুবিধাগুলি উল্লেখ করা হয়েছিল। কোম্পানিটি বলেছিল যে যদি তাদের কোনও জিনিস ব্যাঙ্গালোর থেকে হায়দরাবাদে পাঠাতে হয়, যা ৫৪০ কিলোমিটার দূরে, তখন চিন্তার অতীত এত অসুবিধা ছিল। তখন সেই কোম্পানি  প্রথমে ব্যাঙ্গালোর থেকে ইউরোপে তারপরে আবার তা ইউরোপ থেকে হায়দরাবাদে পাঠানোর পথ বেছে নিয়েছিল।

বন্ধুগণ,

তখন এরকমই পরিস্থিতি ছিল, কর ও শুল্কের জটিলতার কারণে। আর আমি শুধুমাত্র একটি নজির মনে করিয়ে দিচ্ছি, যখন এরকম লক্ষ লক্ষ কোম্পানি, লক্ষ লক্ষ দেশবাসী প্রত্যেকদিন বিভিন্ন ধরনের করের জালে অসুবিধার সম্মুখীন হত। এক শহর থেকে আরেকটি শহরে পণ্য পরিবহণে যে খরচ বাড়ত তা বহন করতে হত সাধারণ মানুষকে এবং আপনাদের মতো খরিদ্দারদের কাছ থেকে তা তুলে নেওয়া হত।

বন্ধুগণ,

দেশকে এই পরিস্থিতি থেকে বার করে আনাই খুব জরুরি ছিল। সেজন্য যখন আপনারা ২০১৪-য় আমাদের সুযোগ দিলেন, আমরা জনস্বার্থে ও দেশের স্বার্থে জিএসটি-তে আমাদের অগ্রাধিকার দিলাম। আমরা সকলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, প্রত্যেক রাজ্যের সব সন্দেহ দূর করেছি, প্রত্যেক প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পেয়েছি; সব রাজ্যকে সঙ্গে নিয়ে, স্বাধীন ভারতের এত বড় কর সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে। এটা কেন্দ্র এবং দেশের সব রাজ্যের প্রয়াসের ফল। যে দেশ ডজনখানেক করের জাল থেকে মুক্ত হয়েছে এবং সমগ্র দেশের জন্য একই ধরনের ব্যবস্থা লাগু হয়েছে। ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ট্যাক্স’-এর স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।

বন্ধুগণ,

সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যত সময় বদলেছে এবং দেশের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে, নেক্সট জেনারেশন সংস্কার একই রকম প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। সেজন্য দেশের বর্তমান চাহিদা এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নকে মাথায় রেখে, এই নতুন জিএসটি সংস্কার রূপায়িত করা হচ্ছে।

নতুন ফরম্যাটে শুধুমাত্র ৫ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ – দুটি মাত্র স্তর থাকবে। এর অর্থ বেশিরভাগ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্য আরও সুলভ হবে। খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ, সাবান, ব্রাশ, টুথপেস্ট, স্বাস্থ্য ও জীবন বিমা – এরকম অনেক পণ্য ও পরিষেবা হয় করমুক্ত হবে বা মাত্র ৫ শতাংশ কর চাপবে। আগে যেসব দ্রব্যে ১২ শতাংশ কর চাপত, ৯৯ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১০০ শতাংশ চলে আসবে ৫ শতাংশ করের আওতায়।

বন্ধুগণ,

গত ১১ বছরে দেশের ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যকে হারিয়ে দিয়েছে, জয় করে নিয়েছে এবং দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে ২৫ কোটির এই বিপুল সংখ্যক মানুষ দেশে বর্তমানে নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণী হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নিজস্ব প্রত্যাশা, নিজস্ব স্বপ্ন আছে। এ বছর সরকার ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত করে তাঁদের একটা উপহার দিয়েছে। আর এটা স্বাভাবিক যে, যখন ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর রেহাই পাওয়া যাচ্ছে, তখন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জীবনে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এটা এত সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যমূলক হয়ে উঠেছে। এবার দরিদ্র মানুষের পালা। নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পালা। এবার দরিদ্র, নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী ডবল বোনানজা পাচ্ছেন। জিএসটি হ্রাসের ফলে দেশের নাগরিকদের কাছে তাঁদের স্বপ্ন সফল করা সহজ হয়ে যাবে। সে বাড়ি তৈরিই হোক কিংবা টিভি, রেফ্রিজারেটর অথবা স্কুটার কেনাই হোক, বা বাইক অথবা গাড়ি – আপনাদের এর জন্য কম খরচ করতে হবে। বেড়ানোও আপনাদের জন্য সস্তা হবে যেহেতু বেশিরভাগ হোটেলে ঘর ভাড়ায় জিএসটি কমানো হয়েছে।

যাই হোক বন্ধুরা,

আমি খুশি যে, দোকানদার ভাই-বোনেরাও খুব উৎসাহী জিএসটি সংস্কার নিয়ে। তাঁরা জিএসটি হ্রাসকে খরিদ্দারের কাছে পৌঁছে দিতে খুব ব্যস্ত। অনেক জায়গায় আগেকার ও বর্তমান দাম লেখা সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমরা যে ‘নাগরিক দেবো ভবঃ’ মন্ত্র নিয়ে এগোচ্ছি, তা সম্পূর্ণ প্রতিফলিত হচ্ছে নেক্সট জেনারেশন জিএসটি সংস্কারে। যদি আমরা আয়কর ছাড় ও জিএসটি ছাড় যোগ করি, তাহলে এক বছরে নেওয়া সিদ্ধান্তে দেশের মানুষের ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সেই কারণে আমি বলছি, এটা সাশ্রয়ের উৎসব।

বন্ধুগণ,

উন্নত ভারতের লক্ষ্য অর্জনে আমাদের স্বনির্ভরতার পথ অবলম্বন করতে হবে। এবং ভারতকে স্বনির্ভর করে তোলার একটা বড় দায়িত্ব বর্তায় আমাদের এমএসএমই-র ওপর, অর্থাৎ, আমাদের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প। দেশের মানুষের যা যা প্রয়োজন, দেশে আমরা যাই-ই তৈরি করি, তা আমাদের দেশেই তৈরি করতে হবে।

বন্ধুগণ,

জিএসটি হার কম এবং রীতি-পদ্ধতির সরলীকরণে আমাদের এমএসএমই, আমাদের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলি অনেক উপকৃত হবে। তাদের বিক্রয় বাড়বে এবং তাদের কর কম দিতে হবে। যার অর্থ, তারাও দু’বার উপকার পাবে। সেজন্য এখন আপনাদের সকলের কাছে আমার অনেক প্রত্যাশা, সে এমএসএমই-ই হোক, ক্ষুদ্র শিল্প, অণু শিল্প অথবা কুটির শিল্প হোক। আপনারা এও জানেন যে, যখন ভারত সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরে ছিল, ভারতের অর্থনীতর মূল ভিত্তি ছিল আমাদের এমএসএমই, আমাদের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলি। ভারতের উৎপাদন শিল্প, ভারতে প্রস্তুত পণ্যের গুণমান, সাধারণত উচ্চমানের হত। আমাদের সেই মর্যাদা ফিরে পেতে হবে। আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পগুলি যাই-ই তৈরি করুক না কেন, তাকে সবদিক দিয়ে বিশ্বের সেরা হতে হবে। সেরার সেরা। যাই-ই আমরা তৈরি করি না কেন, তাকে গর্ব ও সম্মানের সঙ্গে বিশ্বের সেরা সব মানদণ্ড পেরিয়ে যেতে হবে। আমাদের পণ্যের মান বাড়াতে, বিশ্বে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে, ভারতের গরিমা বৃদ্ধি করতে আমাদের সচেষ্ট হতেই হবে।

বন্ধুগণ,

যেমন দেশের স্বাধীনতা শক্তিশালী হয়েছিল স্বদেশী মন্ত্রের দ্বারা, তেমনই দেশের সমৃদ্ধি শক্তিশালী হবে স্বদেশী মন্ত্র নিয়েই। বর্তমানে জেনে বা না জেনে অনেক বিদেশি জিনিস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে, আর আমরা তা এমনকি খেয়ালও করি না। আমরা এমনকি এও জানি না আমাদের পকেটে যে চিরুনিটি আছে সেটি বিদেশি না দেশী। আমাদের এর থেকেও মুক্ত হতে হবে। আমাদের ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ জিনিস কেনা উচিত যার সঙ্গে আমাদের যুবাদের কঠোর শ্রম এবং আমাদের ছেলে-মেয়েদের ঘাম জড়িত। আমাদের প্রত্যেকটি বাড়িকে স্বদেশীর প্রতীক করতে হবে। প্রত্যেকটি দোকানকে স্বদেশী দিয়ে সাজাতে হবে। গর্বের সঙ্গে বলুন এটা স্বদেশী, গর্বের সঙ্গে বলুন আমি স্বদেশী পণ্য কিনি, গর্বের সঙ্গে বলুন আমি স্বদেশী বেচি। যখন এটা হবে ভারত দ্রুত উন্নতি করবে। আজ আমি সব রাজ্য সরকারকে আবেদন করছি, এই আত্মনির্ভর ভারতের অভিযান নিয়ে রাজ্যে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে, এই স্বদেশী অভিযান এবং পূর্ণ উদ্যম ও প্রাণশক্তি নিয়ে যোগ দিতে। বিনিয়োগের অনুকূল পরিমণ্ডল গড়ে তোলা হোক। যখন কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি একসঙ্গে এগিয়ে যাবে, আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন পূরণ হবে। ভারতের প্রত্যেকটি রাজ্য উন্নতি করবে, ভারত উন্নতি করবে। এই মনোভাব নিয়ে আমি বক্তব্য শেষ করছি, আরও একবার এই সাশ্রয় উৎসবের জন্য আমার শুভকামনা জানিয়ে। আরও একবার আমি আপনাদের সকলকে শুভ নবরাত্রি এবং জিএসটি সাশ্রয় উৎসবের শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।

 

 

SC/AP/DM...


(Release ID: 2169491)