প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভোপালে লোকমাতা দেবী অহল্যা বাই হোলকরের ৩০০তম জন্মজয়ন্তীতে মহিলাসশক্তিকরণ মহাসম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন

Posted On: 31 MAY 2025 2:05PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ৩১শে মে, ২০২৫

 


লোকমাতা দেবী অহল্যা বাই হোলকরের ৩০০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আজ ভোপালে অনুষ্ঠিত লোকমাতা দেবী অহল্যাবাই মহিলা সশক্তিকরণ মহাসম্মেলনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সময়ে তিনি ভোপালে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসও করেন।

অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘মা ভারতী’-কে প্রণাম জানান এবং ভারতীয় নারীদের শক্তিকে সশ্রদ্ধভাবে স্মরণ করেন। তিনি বিপুল সংখ্যক ভগিনী ও কন্যাদের উপস্থিতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তাঁদের আশীর্বাদে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, আজকের দিনটি ১৪০ কোটি ভারতবাসীর জন্য অনুপ্রেরণার দিন, জাতি গঠনের বিরাট প্রচেষ্টায় অবদান রাখার দিন, কারণ আজ লোকমাতা দেবী অহল্যা বাই হোলকরের ৩০০তম জন্মজয়ন্তী। তিনি দেবী অহল্যা বাই-এর সেই বাণী উদ্ধৃত করেন— “সত্যিকারের শাসন মানে মানুষের সেবা করা এবং তাঁদের জীবনকে উন্নত করা”—এবং বলেন আজকের কর্মসূচি তাঁরই দৃষ্টিভঙ্গি ও আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী ইন্দোর মেট্রোর উদ্বোধন, দাতিয়া ও সাতনা-র বিমান সংযোগ চালুর কথা উল্লেখ করে বলেন, এই প্রকল্পগুলি মধ্যপ্রদেশে পরিকাঠামোকে মজবুত করবে, উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। তিনি এই উপলক্ষে সকলকে অভিনন্দন জানান।

লোকমাতা দেবী অহল্যা বাই হোলকরের নাম শ্রবণ মাত্র শ্রদ্ধায় মন ভরে ওঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর ব্যক্তিত্ব বর্ণনা করার জন্য ভাষা অপর্যাপ্ত। তিনি জানান, দেবী অহল্যা বাই দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক, যিনি প্রতিকূল সময়েও রূপান্তরমূলক কাজ সম্পাদন করেছেন।

ইতিহাস স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই-আড়াই শতাব্দী আগে যখন জাতি শোষণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল, তখন এমন অসাধারণ কর্মযজ্ঞ করা সহজ কাজ ছিল না। দেবী অহল্যা বাই সেই সময়েও শাসনকে মানুষের সেবার সমার্থক করেছিলেন। তিনি শিবলিঙ্গ সর্বদা সঙ্গে রাখতেন, যেটি তাঁর ভক্তি ও নিষ্ঠার প্রতীক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “লোকমাতা অহল্যা বাই ছিলেন ভারতের ঐতিহ্যের মহান রক্ষক”। যখন দেশের সংস্কৃতি, মন্দির ও তীর্থস্থানগুলি আক্রমণের শিকার হচ্ছিল, তখন তিনিই তাঁদের সংরক্ষণের দায়িত্ব নেন। তিনি কাশী বিশ্বনাথসহ বহু মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন, যে শহরের (বারাণসী) তিনি সেবা করার সুযোগ পাচ্ছেন, সেই শহরেই একসময় লোকমাতা অহল্যা বাই ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, মাতা অহল্যা বাই এমন এক প্রশাসনিক মডেল স্থাপন করেছিলেন, যেখানে গরিব ও প্রান্তিক মানুষদের কল্যাণ ছিল মূল লক্ষ্য। কৃষি, বনজ পণ্যের উপর ভিত্তি করে শিল্প, হস্তশিল্প এবং সেচব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে কৃষকদের আয় বাড়িয়েছিলেন। তিনি মাহেশ্বরী শাড়ির শিল্পকে উন্নত করে তন্তুবায় পরিবারগুলির পুনর্বাসন ঘটিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেবী অহল্যা বাই সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী ছিলেন”। তিনি কন্যাদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, নারীর সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষিত করেছিলেন এবং বিধবাদের পুনর্বিবাহকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি মালওয়া সেনায় মহিলা ইউনিট গঠন করেন এবং গ্রামগুলোতে নারীদের নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার নাগরিক সেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নকে জাতীয় অগ্রগতির কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। ৪ কোটি বাড়ি দরিদ্রদের জন্য নির্মিত হয়েছে, যার অধিকাংশেরই মালিকানা পরিবারের মহিলাদের নামে। নলবাহিত পানীয় জলের  সংযোগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, শৌচাগার—এসবই আজ গ্রামীণ মহিলাদের জীবনকে সহজতর করছে।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে মহিলারা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছেন। আর্থিক ক্ষেত্রে, মুদ্রা যোজনার অধীনে ৭৫ শতাংশ সুবিধাভোগী নারী। জনধন যোজনার মাধ্যমে ৩০ কোটিরও বেশি মহিলার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। আজ ১০ কোটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যুক্ত হয়ে নতুন আয়ের পথ তৈরি করছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নমো ড্রোন দিদি’ উদ্যোগ গ্রামীণ নারীদের আত্মবিশ্বাস ও আয় বৃদ্ধি করছে। আজ মহাকাশ গবেষণায় শতাধিক মহিলা বিজ্ঞানী কাজ করছেন। স্টার্টআপ ক্ষেত্রেও ৪৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে অন্তত একজন নারী পরিচালক আছেন।

রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রথম পূর্ণকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী হয়েছেন নারী। বর্তমানে সংসদে ৭৫ জন মহিলা সাংসদ কাজ করছেন। নারী শক্তি বন্দন আইন পাশের মাধ্যমে সংসদ ও বিধানসভায় নারীদের জন্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সিঁদুর নারীর শক্তির প্রতীক এবং আজ তা ভারতের বীরত্বের প্রতীক”। পহলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি শুধু রক্তপাত ঘটায়নি, বরং ভারতের নারীশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। কিন্তু ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রমাণ করেছে যে ভারত সন্ত্রাসকে কঠোর হাতে দমন করে। এতে বিএসএফ-এর বিপুল সংখ্যক মহিলা জওয়ান সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি উল্লেখ করেন, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে আজ নারীরা সামনের সারিতে কাজ করছেন। এনডিএ থেকে প্রথম ব্যাচের নারী ক্যাডেট উত্তীর্ণ হয়েছেন। নারী পাইলট থেকে আইএনএস বিক্রান্তের মহিলা অফিসার পর্যন্ত—সকলেই তাঁদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন।

নৌবাহিনীর দুই সাহসী মহিলা অফিসারের নাভিকা সাগর পরিক্রমার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা প্রমাণ করেছেন ভারতীয় কন্যারা সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জও জয় করতে সক্ষম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেবী অহল্যা বাই যেমন উন্নয়ন ও ঐতিহ্যকে একসঙ্গে রক্ষা করেছিলেন, আধুনিক ভারতও একই পথে চলছে। আজ ইন্দোর মেট্রো চালু হলো, ভোপালে কাজ এগোচ্ছে দ্রুত। রতলাম-নাগদা রেলপথ চার লাইনে সম্প্রসারণ এবং ইন্দোর-মানমাড় রেল প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। দাতিয়া ও সাতনা বিমান যোগাযোগে যুক্ত হয়েছে।

শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত আজ এক ঐতিহাসিক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে আমাদের মাতৃশক্তি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা রাখবে”। তিনি লোকমাতা অহল্যা বাই-এর পাশাপাশি রানি লক্ষ্মীবাই, রানি দুর্গাবতী, রানি কমলাপতি, রানী চেন্নাম্মা, রানী গাইদিনলিউ, বেলু নাচিয়ার ও সাবিত্রীবাই ফুলে'র মতো মহান নারীদের স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, লোকমাতা অহল্যা বাই হোলকরের ৩০০তম জন্মজয়ন্তী প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং সবাই মিলে এক “সশক্ত ভারত”-এর ভিত্তি গড়ে তুলবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রী মঙ্গুভাই ছগনভাই প্যাটেল, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মোহন যাদবসহ অন্যান্য বিশিষ্টজন।

পটভূমি

প্রধানমন্ত্রী লোকমাতা দেবী অহল্যাবাই মহিলা সশক্তিকরণ মহাসম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং লোকমাতা দেবী অহল্যাবাই-কে উৎসর্গ করে একটি স্মারক ডাকটিকিট ও বিশেষ ₹৩০০ মূল্যের মুদ্রা প্রকাশ করেন। তিনি জাতীয় দেবী অহল্যাবাই পুরস্কারও প্রদান করেন, যা এক জন মহিলা শিল্পীকে উপজাতি, লোক ও ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলায় অবদানের জন্য দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী দাতিয়া ও সাতনা বিমানবন্দরের উদ্বোধন করেন, যা শিল্প, পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।

ইন্দোর মেট্রোর হলুদ লাইনের সুপার প্রায়োরিটি করিডোরে যাত্রী পরিষেবা চালু করেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে যানজট ও দূষণ হ্রাস পাবে এবং আরামদায়ক যাতায়াত নিশ্চিত হবে।

এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী ₹৪৮০ কোটিরও বেশি মূল্যের ১,২৭১টি অটল গ্রাম সুশাসন ভবন নির্মাণের প্রথম কিস্তি হস্তান্তর করেন, যা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে স্থায়ী পরিকাঠামো প্রদান করবে।

 


SC/TM


(Release ID: 2159791) Visitor Counter : 4