নয়াদিল্লি, ২৩ জুন, ২০২৫ 

আয়ারল্যান্ডের আহাকিস্তার কর্ক - এ এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ (কণিষ্ক)-র ৪০তম বার্ষিকী স্মরণ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী শ্রী হরদীপ সিং পুরী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এখন উচিত, বিশ্বের একসঙ্গে এগিয়ে আসা। শুধুমাত্র আজকের এই স্মরণসভার মতো বিচ্ছিন্ন অনুষ্ঠানেই নয়, বরং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একযোগে অতিসক্রিয় প্রয়াস নিয়ে এক হওয়া প্রয়োজন”। 
১৯৮৫’র ২৩ জুনের দুঃখজনক সেই ঘটনা যখন এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ মাঝ আকাশেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, কানাডাস্থিত জঙ্গিদের রাখা বোমায়। বিমানের আরোহী ৮০ জনের বেশি শিশু সহ ৩২৯ জনই নিহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনা স্মরণ করে শ্রী পুরী বলেন, ঐ দুঃখজনক ঘটনা কোনও দুর্ঘটনা নয়, বরং ওটা ভারতকে ভাঙার চক্রান্তকারীদের একটি ঘৃণ্য কাজ। 
মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা অতীতের ঘটনা নয়, বরং বর্তমান দিনেরও সমস্যা, যা সারা বিশ্ব জুড়েই নিরীহ মানুষকে আতঙ্কে রাখছে। তিনি বলেন, “ভারত দশকের পর দশক ধরে সন্ত্রাসবাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের শিকার – জম্মু ও কাশ্মীর থেকে পাঞ্জাব থেকে মুম্বাই। বারে বারে আমাদের নাগরিকদের বোমা, হত্যা এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ সহ্য করতে হয়েছে”। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত মৃত্যুর ঘটনা ২০২৪ – এ ২২ শতাংশ বেড়ে গেছে। এতেই বোঝা যায় যে, সারা বিশ্বের দেশগুলি এই সমস্যায় ভুগছে। 
দুই দেশের কাছেই এই একই ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে কানাডা সরকারকে যুক্ত হতে আহ্বান জানিয়ে শ্রী পুরী বলেন, “কানাডা আমাদের মূল্যবান অংশীদার ও বন্ধু। আমরা একে অপরের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভাগ করে নিয়েছি। ভারত ও কানাডা গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের বন্ধনে যুক্ত”। 
গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, চরমপন্থীদের মোকাবিলা এবং জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য বন্ধ করার কাজে দুই দেশের মধ্যে গভীর সহযোগিতার আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, “ভারত আরও কিছু করতে প্রস্তুত। আমাদের নিরাপত্তা সংস্থা, গোয়েন্দা ব্যবস্থা ও কূটনৈতিক চ্যানেল সারা বিশ্বের সঙ্গে পুরোপুরি যোগ দিতে প্রস্তুত, যাতে এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়”।
শ্রী পুরী ১৯৮৫’র দুঃখজনক ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতিতে সমবেদনা জানানোর জন্য আহাকিস্তার মানুষ ও আইরিশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “তাঁরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য বাড়ির দরজা ও হৃদয় খুলে দিয়েছিলেন - এই মানবিক কর্ম চিরকাল অনুপ্রেরণা যোগাবে”।
তিনি আরও বলেন, ঐ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে ভারত ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে একটি অভিনব বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, যা শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক মৈত্রীতে পরিণত হয়েছে। ২০২৩ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে গেছে।
পরিশেষে, মন্ত্রী বিশ্ব শান্তি ও সুরক্ষার কামনা জানিয়ে নিহতদের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে ভারতের অটুট সংকল্প পুনরায় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আজকের এই স্মরণ অনুষ্ঠান হয়ে উঠুক ঐক্যের বার্তা – যারা ঘৃণা ও হিংসা ছড়ায়, তারা কোনও দিনই মানবিকতা, গণতন্ত্র ও বন্ধুত্বকে হারাতে পারবে না”।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন, কানাডার জনসুরক্ষা মন্ত্রী গ্যারি আনন্দসাঙ্গারি, স্থানীয় আইরিশ আধিকারিক, সেদিনের দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা এবং নিহতদের পরিবার-পরিজন। সবাই এক হয়ে ছিলেন এই পবিত্র স্মরণ অনুষ্ঠানে। 

SC/AP/SB…