প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
১৭তম সিভিস সার্ভিসেস দিবসে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
Posted On:
21 APR 2025 1:14PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আজ ১৭তম সিভিল সার্ভিসেস দিবস উপলক্ষে সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। সরকারি প্রশাসনে অসাধারণ কাজের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী সম্মান’ও প্রদান করেন তিনি। সমাবেশে তিনি সিভিল সার্ভিসেস দিবস উপলক্ষে সবাইকে অভিনন্দন জানান এবং সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপন এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ বছরের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। ১৯৪৭-এর ২১ এপ্রিল সর্দার প্যাটেলের বিখ্যাত উক্তির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্দার প্যাটেল সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের ভারতের ইস্পাত কাঠামো বলে বর্ণনা করেছিলেন। আমলাতন্ত্র সম্পর্কে প্যাটেলের দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর জোর দিয়ে শ্রী মোদী বলেন, এতে শৃঙ্খলা, সততা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং দেশসেবার পরম নিষ্ঠার দৃষ্টিভঙ্গী প্রতিফলিত হয়। বিকশিত ভারতের পথে দেশের সঙ্কল্পের ক্ষেত্রে সর্দার প্যাটেলের আদর্শ এবং প্রাসঙ্গিকতার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। সর্দার প্যাটেলের দৃষ্টিভঙ্গী এবং তাঁর সেই পরম্পরার প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল বলে মন্তব্য করেন শ্রী মোদী।
লালকেল্লা থেকে তাঁর ভাষণের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী, যেখানে তিনি আগামী এক হাজার বছরের জন্য ভারতের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এই সহস্রাব্দের ২৫ বছর ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। শ্রী মোদী বলেন, আজ যে নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে, যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা আগামী এক হাজার বছরের রূপ গড়ে দেবে। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক চাকায় যেমন একটি রথ চলতে পারে না, প্রচেষ্টা ছাড়া কেবল ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে কখনও সফলতা আসে না। উন্নত ভারতের লক্ষ্য অর্জনে সম্মিলিত প্রয়াস এবং সঙ্কল্পের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি সকলকে এই স্বপ্ন পূরণে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে বলেন।
বিশ্বজুড়ে দ্রুত পরিবর্তনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবারের মধ্যেও যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনায় বোঝা যায় যে এই দ্রুত পরিবর্তনের পথে তাঁরা কতটা এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতি ২-৩ বছর অন্তর যান্ত্রিক সরঞ্জামের দ্রুত বিবর্তন ঘটে চলেছে এবং শিশুরাও এই বর্ধিত পরিবর্তনের সঙ্গে বেড়ে উঠছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতের আমলাতন্ত্র পুরনো কাঠামোর ওপর নির্ভর করে নীতি প্রণয়ন করতে পারে না। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া উল্লেখযোগ্য রূপান্তরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এটা এক বিরাট প্রয়াস। ভারতীয় সমাজ, যুব সম্প্রদায়, কৃষক, মহিলা – এঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, তাঁদের স্বপ্ন অসীম এবং সেই অসাধারণ উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সম্পূর্ণতা দিতে প্রবল গতিতে কাজ করে হবে। জ্বালানি সুরক্ষা, স্বচ্ছ জ্বালানি, ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নতি ও মহাকাশ ক্ষেত্রে সাফল্য সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই আগামী বছরগুলিতে ভারতের পতাকাকে উঁচুতে তুলে ধরতে তিনি আহ্বান জানান। ভারতকে দ্রুত বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের অপরিসীম দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বছরের সিভিল সার্ভিসেস দিবসের বিষয় - ‘ভারতের সর্বাত্মক উন্নয়ন’ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন শ্রী মোদী। তিনি বলেন, এটা কেবলমাত্র একটি বিষয় নয়, বরং দায়বদ্ধতা, দেশবাসীর প্রতি প্রতিশ্রুতি। ভারতের সর্বাত্মক উন্নয়ন মানে কোনো গ্রাম, কোনো পরিবার, কোনো ব্যক্তি পিছিয়ে থাকবে না। প্রকৃত অগ্রগতি বলতে সামান্য পরিবর্তন নয়, বরং তার পূর্ণাঙ্গ প্রভাবকে অর্জন করা। সর্বাত্মক উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গী ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এর অর্থ প্রতিটি গৃহে পরিশ্রুত পানীয় জল, প্রতিটি শিশুর উন্নত শিক্ষা, প্রতিটি উদ্যোগপতির আর্থিক সুযোগ, প্রতিটি গ্রামে ডিজিটাল অর্থনীতির সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। তিনি বলেন, কেবলমাত্র প্রকল্পের শুরুতেই পরিচালন ব্যবস্থার গুণগত দিক ফুটে ওঠে না, বরং দেখতে হবে এইসব প্রকল্প মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে কিনা এবং তাঁদের জীবনকে তা কতখানি প্রভাবিত করছে। রাজকোট, গোমতি, তিনসুকিয়া, কোরাপুট এবং কুপওয়াড়ার মতো জেলাগুলিতে এই পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌরশক্তি কাজে লাগানোয় বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে সামিল হওয়ার জন্য জেলা এবং এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিভিন্ন জেলা যে উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য পুরস্কৃত হয়েছে তারও উল্লেখ করেন শ্রী মোদী।
বিগত ১০ বছরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনের পথ থেকে ভারত প্রভাবমুখী রূপান্তরের পথে এগিয়ে গেছে। দেশের প্রশাসনিক মডেল এখন পরবর্তী পর্যায়ের সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে। সরকারের সঙ্গে জনসাধারণের ব্যবধান কমিয়ে আনতে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনকে যুক্ত করা হচ্ছে। গ্রাম, শহর এমনকি প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে এই সংস্কারের প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির সাফল্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্লকগুলিও অনুরূপ সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩-এর জানুয়ারিতে এই কর্মসূচির সূচনা হয় এবং দু’বছরের মধ্যে তা অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে। এইসব ব্লকগুলিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সামাজিক উন্নয়ন এবং বুনিয়াদি পরিকাঠামো উন্নয়নের সূচকের মধ্য দিয়েই এই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিকে প্রত্যক্ষ করা যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি রাজস্থানের টঙ্ক জেলার পিপলু ব্লকের কথা উল্লেখ করেন। এখানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে শিশুদের গাণিতিক দক্ষতা ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৯ শতাংশ হয়েছে। বিহারের ভাগলপুরের জগদীশপুর ব্লকে গর্ভবতী মহিলাদের প্রথম তিন মাসের নিবন্ধনের সংখ্যা ২৫ থেকে বেড়ে ৯০ শতাংশ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের মারোয়া ব্লকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ৩৩ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন ১০০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ঝাড়খণ্ডের গুরডিহ ব্লকে পাইপবাহিত জলসংযোগ ১৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০০ শতাংশ হয়েছে। তিনি বলেন, এগুলি কেবলমাত্র পরিসংখ্যান নয়, শেষ সীমা পর্যন্ত উন্নয়নকে পৌঁছে দিতে এগুলি সরকারি সঙ্কল্পের রূপদান বলা যেতে পারে। প্রকৃত সদিচ্ছা, পরিকল্পনা এবং তা রূপায়ণের মধ্য দিয়েই প্রত্যন্ত এলাকাতেও রূপান্তর ঘটানো সম্ভব বলে তিনি জানান।
বিগত এক দশকে ভারতের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রূপান্তরমূলক পরিবর্তন এবং দেশের সাফল্য এখন নতুন শিখরে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ভারত এখন কেবলমাত্র তার আর্থিক বৃদ্ধির দিক থেকেই পরিগণিত হয় না, পরিচালন ব্যবস্থা, স্বচ্ছতা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তা নতুন মাইলফলক রচনা করছে। তিনি বলেন, ভারতের জি-২০ সভাপতিত্ব এই উন্নয়নের পথে এক উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্তস্বরূপ। জি-২০-র ইতিহাসে এই প্রথম ৬০টি শহর জুড়ে ২০০টিরও বেশি বৈঠক হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে এক বৃহৎ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনা। জনগণের অংশগ্রহণ কিভাবে জি-২০-কে এক গণ-আন্দোলনের রূপ দিয়েছে তার ওপর আলোকপাত করেন তিনি। বিশ্ব ভারতের নেতৃত্বকে স্বীকার করেছে। ভারত কেবল অংশ নিচ্ছে না, সে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে জানান শ্রী মোদী।
সরকারি প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে যে আলোচনার পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে ভারত অন্যান্য দেশের থেকে ১০-১১ বছর এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বিগত ১১ বছর ধরে বিলম্বকে নির্মূল করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৪০ হাজারেরও বেশি বাধ্যবাধকতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ব্যবসার স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে তাকিয়ে ৩,৪০০-রও বেশি আইনি সংস্থানকে ফৌজদারি বিধির বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। এই সমস্ত সংস্কার করতে গিয়ে যে বাধা এসেছে তার উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমালোচকরা এইসব পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তবে সরকার এই চাপের কাছে নতিস্বীকার করেনি। নতুন সাফল্য পেতে এই জাতীয় নতুন দৃষ্টিভঙ্গীর প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ব্যবসা ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যের ফলে বিশ্বজুড়ে ভারতে বিনিয়োগ করার উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন লক্ষ্য পূরণে রাজ্য, জেলা ও ব্লকস্তরে লালফিতের ফাঁসকে নির্মূল করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১০-১১ বছরের সাফল্য উন্নত ভারতের শক্ত ভিত্তি রচনা করে দিয়েছে। তবে তিনি বলেন যে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশ্বে ভারত এখন সর্বাপেক্ষা জনবহুল দেশ। ১০০ শতাংশ ন্যূনতম সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। উন্নয়নের পথে অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর জোর দিয়ে একেবারে শেষ সীমা পর্যন্ত সরকারি সুবিধাকে পৌঁছে দিতে হবে। সিভিল সার্ভিসকে সব সময়েই এই দ্রুত পরিবর্তন এবং মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিকে তাকিয়ে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে হবে এবং সব সময় প্রাসঙ্গিক থাকতে হবে। তিনি বলেন, উন্নয়নের নতুন মাইলফলক রচনা করতে হবে। ২০৪৭-এর মধ্যে উন্নত ভারতের স্বপ্নকে সাকার করতে অগ্রগতির পরিমাপ করতে হবে। বিগত এক দশকের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, দরিদ্রদের জন্য ৪ কোটি গৃহ নির্মিত হয়েছে এবং আরও ৩ কোটি নির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রাখা হয়েছে। ১২ কোটিরও বেশি গ্রামীণ বাড়িতে ৫-৬ বছরের মধ্যে পাইপবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল নিয়ে আসা হয়েছে। লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে যাতে প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি গৃহ এই পাইপবাহিত পরিশ্রুত জলের সুবিধা পায়। বিগত ১০ বছরে দরিদ্র মানুষদের জন্য ১১ কোটিরও বেশি শৌচালয় নির্মাণ করা হয়েছে। এখন লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং গরিব মানুষদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করার। দেশবাসীর উন্নত পুষ্টির প্রতি সরকারের নতুন সঙ্কল্পের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, মানুষের কাছে সরকারি সুযোগ যাতে ১০০ শতাংশ পৌঁছয় এবং লক্ষ্য রাখতে হবে তাঁদের জীবনযাত্রায় যাতে তার প্রভাব ১০০ শতাংশই পড়ে। বিগত এক দশকে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিয়ে আসাকে এক বিরাট সাফল্য বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে এই সাফল্য আস্থা যোগাচ্ছে।
অতীতের আমলাতন্ত্রের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে তা শিল্পোন্নয়নের উদ্যোগ ও গতিকে নিয়মতন্ত্রে বেঁধে রুদ্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, দেশ এখন এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসেছে। উদ্যোগের নতুন প্রয়াস এবং নতুন বাতাবরণ গড়ে তোলা হচ্ছে যাতে করে নাগরিকরা তাঁদের বাধা কাটিয়ে উঠতে পারেন। সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের নিয়মতন্ত্রের মধ্যে আটকে না রেখে উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য পরিপূরকের ভূমিকা নিতে হবে। এমএসএমই ক্ষেত্রের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মিশন ম্যানুফ্যাকচারিং’-এর সাফল্য লক্ষ্য করা যায় এমএসএমই ক্ষেত্রে। বৈশ্বিক পরিবর্তনের পথে এমএসএমই, স্টার্ট-আপ এবং ভারতের তরুণ উদ্যোগপতিদের সামনে অভূতপূর্ব সুযোগ এসেছে। বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলে আরও বেশি প্রতিযোগিতামুখী মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, এমএসএমই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা এখন ছোট উদ্যোগপতিদেরই নয়, বরং তা বিশ্বস্তরের। তিনি বলেন যে একটা ছোট দেশ যদি শিল্পক্ষেত্রের সহায়ক সরঞ্জাম প্রদান করতে পারে, তাহলে ভারতীয় স্টার্ট-আপকেও তারা টপকে যেতে পারে। বিশ্বস্তরে এই প্রকৃষ্ট পন্থা কি সেদিকে তাকিয়ে ভারতকে ক্রমাগত নিজেদের মানোন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন, ভারতীয় শিল্পের লক্ষ্য যেমন হওয়া উচিত বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট পণ্য উৎপাদন করা, তেমনই আমলাতন্ত্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট সহায়ক বাতাবরণ প্রদান করা।
সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের দক্ষতা অর্জনের প্রতি জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তা কেবল প্রযুক্তিকে বোঝাই নয়, বরং অনেক দক্ষতার সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের ক্ষেত্রে তা ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। নীতি নির্ধারণ এবং প্রকল্প ঘোষণার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি-বান্ধব হয়ে ওঠার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, প্রযুক্তি সহায়তায় তাকে সুগম করে তুলতে হবে। পরিসংখ্যান-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে নীতি-পরিকল্পনা এবং তার রূপায়ণ যাতে ত্রুটিমুক্ত হতে পারে তা নিশ্চিত করা সম্ভব। কৃত্রিম মেধা এবং ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে দ্রুত অগ্রগতির ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, আগামীদিনে যে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে রূপান্তর আসছে, তা ডিজিটাল এবং তথ্য যুগকেও ছাপিয়ে যাবে। শ্রী মোদী সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের প্রযুক্তিগত এই বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত থেকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সর্বাত্মক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের দক্ষতাকে ভবিষ্যৎ-বান্ধব সিভিল সার্ভিসের পথে গড়ে তুলতে তিনি ‘মিশন কর্মযোগী’ এবং ‘সিভিল সার্ভিস ক্যাপাসিটি’ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল এই সময়ে বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি গ্লোবাল সাউথের জন্য খাদ্য, জল এবং শক্তি সুরক্ষা মূল বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন। চলতি সংঘর্ষ, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনধারণ এবং বেঁচে থাকাকে অনেক বেশি কঠিন করে তুলছে বলে তিনি জানান। অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক ক্ষেত্রগুলির মধ্যে আন্তঃযোগের গুরুত্বকে বুঝতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অতিমারী, সাইবার অপরাধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনেক দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং এই সমস্ত চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় ভারতকে ১০ কদম এগিয়ে থাকতে হবে বলে তিনি জানান। স্থানীয় কৌশলগুলিকে গড়ে তুলতে হবে এবং উদ্ভুত বিশ্ব পরিস্থিতিকে যাতে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়, সেক্ষেত্রেও সক্ষম মোকাবিলা করতে হবে বলে তিনি জানান।
লালকেল্লা থেকে যে ‘পঞ্চ প্রাণ’-এর কথা ঘোষণা করা হয়েছিল তা হল - উন্নত ভারত, দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি, ঐতিহ্যের প্রতি গর্ববোধ, ঐক্যের শক্তি এবং সততার সঙ্গে কর্তব্য পালন। এই সমস্ত লক্ষ্য পূরণে সিভিল সার্ভিস আধিকারিকরা নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবেন বলে তিনি জানান। সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করে তরুণ আধিকারিকদের যাত্রাপথে তাঁদের ব্যক্তিগত সাফল্যের পেছনে সামাজিক অবদানের কথাও উল্লেখ করেন শ্রী মোদী। তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই উচিত নিজের সাধ্যমতো সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের সামনে যে সুযোগ রয়েছে, দেশ তাঁদেরকে যে সুযোগ করে দিয়েছে, সেই দেশ ও মানুষের প্রতি তাঁদেরকে দায়বদ্ধ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের সংস্কারের পথে অগ্রবর্তী ভূমিকা নিতে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্রুততার সঙ্গে পরিবর্তনের শরিক হতে হবে। পরিকাঠামো, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির লক্ষ্য, অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা, দুর্নীতি নির্মূল, সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প, ক্রীড়া এবং অলিম্পিক ক্ষেত্রে লক্ষ্যসাধন – প্রতিটি ক্ষেত্রেই নতুন সংস্কারকে রূপায়ণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রযুক্তিচালিত বিশ্বে মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে তিনি সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের আরও বেশি সংবেদনশীল হতে, দরিদ্রদের সমস্যা নিরসনে ব্রতী হতে এবং তাঁদের জীবনের চ্যালেঞ্জগুলির প্রতি অগ্রাধিকার দিতে পরামর্শ দেন। ভাষণ শেষে ‘নাগরিক দেব ভবঃ’র আদর্শকে ‘অতিথি দেব ভবঃ’-র ভাবাদর্শের সঙ্গে যুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের তিনি কেবলমাত্র প্রশাসক হিসেবে নয়, বরং নব-ভারতের স্থপতি হিসেবে ভূমিকা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এই দায়িত্ব পূরণে তাঁদের নিষ্ঠাবান ও সংবেদনশীল হওয়ার আহ্বান জানান শ্রী মোদী।
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় পেনশন, জন-অভিযোগ ও কর্মীবর্গ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিং, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রধান সচিব-২ শ্রী শক্তিকান্ত দাস, ক্যাবিনেট সচিব শ্রী টি ভি সোমানাথন, প্রশাসনিক সংস্কার এবং জন-অভিযোগ দপ্তরের সচিব শ্রী ভি শ্রীনিবাস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
SC/AB/DM.
(Release ID: 2123241)
Visitor Counter : 8
Read this release in:
Malayalam
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Assamese
,
Odia
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Nepali
,
Manipuri
,
Gujarati